আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২৬
জান্নাত সুলতানা
-“রেডি হয়ে নাও জান।
আমাকে বেরুতে হবে।”
মাত্রই সকালের নাস্তা করে রুমে এসছে প্রিয়তা।সাদনান একটু আগে রুমে এসছে।আর প্রিয়তা রুমে আসা মাত্র সাদনান উপরোক্ত আদেশ টা করলো।প্রিয়তা দৃষ্টি এলোমেলো ঘুরালো।তার আজ থাকতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কথা টা বলার মতো সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারছে না। সাদনান প্রিয়তা কে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। বিছানা ছেড়ে ওঠে এগিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে প্রিয়তা কে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। প্রিয়তা মৃদু কেঁপে ওঠে। গলা জড়িয়ে ধরলো সাদনানের।সাদনান এক হাতের তর্জনী আঙ্গুল উঁচিয়ে প্রিয়তার কপালে এলোমেলো চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল,
-“আই নো।তোমার থাকতে ইচ্ছে করছে। বাট সরি জান।আমার বউ আমি শ্বশুর বাড়ি রেখে নিজের বাড়ি থাকতে পারবো না।”
-“আপনি চলে আসবেন।”
প্রিয়তা হঠাৎ কথা টা বলে পরপরই মাথা নিচু করে নিলো।সাদনান যে কিছুতেই রাজি হবে না।ভালোই জানা আছে।
-“একজন মন্ত্রী হয়ে রোজ শ্বশুর বাড়ি পরে থাকা টা ভালো দেখায় না।”
সাদনানের থমথমে কণ্ঠস্বর শুনে প্রিয়তা নিজেও থমথমে খেলো। মানুষ টা বড্ড খুঁতখুঁত টাইপ।দু’দিন এর তো ব্যাপার একটু ম্যানেজ করে নিলে কি এমন ক্ষতি হয়!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সারা আর প্রিয়তা লিভিং রুমের পাশে যে বারান্দায় টা রয়েছে সেখানে বসে আছে। এখন বিকেলে। প্রিয়তা আর সাদনান আজ দু’দিন হয় মির্জা বাড়ি থেকে ফিরে এসছে।প্রিয়তা ঘুম থেকে ওঠে এসছে।এতোক্ষণ আয়না ইনিয়া ও বসে ছিল।কিন্তু ইনিয়া বাইরে যাওয়ার জন্য কান্না করছিল তাই আয়না শাশুড়ী কে ইনিয়া কে নিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য দিতে গিয়েছে।অতঃপর সে রাতের রান্নার কাজে লেগে পড়বে।যদিও সব কাজের লোক করে দিবে।তারউপর সাথে সুফিয়া বেগম থাকবে।প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সারা হঠাৎ হাই তুলে বলে উঠলো,
-“শরীর টা কেমন করছে।
এখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে।শোয়াও যাবে না।”
-“চা করে নিয়ে আসি ভালো লাগবে।”
প্রিয়তার কথায় সারা ভাবলো সত্যি এক কাপ চা হলে হয়তো শরীর টা ভালো লাগবে।তাই আর বারণ করে না। প্রিয়তা চলে গেলে সারা আবার একটা হাই তুলে ওঠে দাঁড়াল। এগিয়ে গিয়ে বারান্দার গ্রীল ধরে বাইরে তাকালো।অদূরে বাগানে ইনিয়া কে দেখা যাচ্ছে। দাদির সাথে গল্প করতে করতে সে দাদি কে এদিক ওদিক নিয়ে ছুটোছুটি করছে।হঠাৎ পেছনে কারোর আসার শব্দ পেয়ে সারা ভাবলো প্রিয়তা এসছে। তাই পেছনে না তাকিয়ে বলল,
-“দেখ প্রিয় কি সুন্দর লাগছে দুই দাদি নাতনি কে।
মাশাল্লাহ কারোর নজর না লাগে।
জানিস আমি ভাবছি বিয়ে টা তাড়াতাড়ি করে নেব।অতঃপর বছর বছর একটা করে বাচ্চা নিয়ে শ্বাশুড়ির কাছে দিয়ে রাখব।আর আমি বসে বসে তাদের কাহিনি দেখবো।”
-“আমিন।
তোর মনের ইচ্ছে আল্লাহ তায়ালা অতিশীঘ্র পূর্ণ করুক।”
চমকালো সারা।বুকের ভেতর ধুম ধুম শব্দ করে হৃদপিণ্ড টা অস্বাভাবিক ভাবে লাফঝাপ শুরু করে দিলো।মস্তিষ্ক জানান দিলো এটা সেই অতিপরিচিত পুরুষের কণ্ঠস্বর। কানে যেনো কথা গুলো ঝংকার তুললো।
মাথা ঘুরিয়ে পেছনে ফিরলো তড়িৎ গতিতে।
কোমড়ে দুই হাত রেখে রাহান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থমথমে খেলো।কি বলবে কোনো শব্দ গলা দিয়ে বেড় করতে পারলো না।
রাহান দু কদম এগিয়ে এলো।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলো সারা কে।পরপরই গম্ভীর কণ্ঠে জানালো,
-“তোর ডজন খানেক বাচ্চার আবদার অতিদ্রুত পূর্ণ করে দেওয়ার ফার্স্ট মিশন আমি আজ থেকে পুরোদমে শুরু করে দেব।বি রেডি।”
সারা বিস্ময় চোখ বড়ো বড়ো হয়ে এলো।মনের কোণে প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দেয় কি করবে এই মানব?
সারা ভাবনায় ভাটা পড়ে প্রিয়তার কণ্ঠ শোনে,
-“ভাইয়া আপনাকে চা দেব?”
-“আরে মন্ত্রীর বউ কি বলে!মন্ত্রী মশাই জানতে পারলে আমার তেরো টা বাজিয়ে দিবে।আমি অন্য কাউ কে বলে কফি নিচ্ছি।”
রাহান মজার ছলে কথা গুলো বলতে বলতে বারান্দা থেকে চলে গেলো।
প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে সারা’র হাতে চায়ের কাপ দিলো।সারা ধন্যবাদ দিয়ে চায়ের কাপে চুমুক বসায়।
তিন্নি ঘুমঘুম চোখে শোয়া থেকে ওঠে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো সদর দরজার দিকে। কলিং বেল বেজেছে দু’বার। কবির আসে এসময়ে।তিন্নি তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে অপরাধী কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“সরি, সরি এত্তো গুলো সরি।
ঘুমিয়ে ছিলামম,,,
কবির এর দিকে তাকিয়ে কথ আর সম্পূর্ণ করতে পারে না তিন্নি। কবির হাতের দু’টো শপিং ব্যাগ আর একটা পলিথিন ব্যাগ এগিয়ে দিলো তিন্নির দিকে। তিন্নি বিস্ময় নিয়ে সেগুলো হাতে নিয়ে কবির এর কাঁধের থেকে কালো ল্যাপটপ এর ব্যাগ টাও খুলে হাতে নিতে নিতে বলল,
-“আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।
আমি কফি নিয়ে আসছি।”
-“না।কফি লাগবে না।
তুমি রুমে এসো।”
কবির কথা শেষ রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ালো।তিন্নি রান্না ঘরে গিয়ে পলিথিন থাকা আইসক্রিম এর বক্স ফ্রিজে রাখে।কবির রোজ আসার সময় কিছু না কিছু হাতে করে নিয়ে আসে। কালাম খাঁন নিজেও আনে।তিন্নির নিকট এসব প্রথম। কখনো এমন আদর ভালোবাসা পায় নি সে।তবে এখন নিজে কে সুখী মনে হয়। তিন্নি কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হাতে থাকা শপিং ব্যাগ গুলো অল্প ফাঁক করে নেড়েচেড়ে দেখলো।একটা ব্যাগে একটা কালো শাড়ী রয়েছে। আরেকটা ব্যাগে একটা বেলি ফুলের মালা আরো কিছু কসমেটিক। তিন্নি এসব দেখে মনে মনে খুশি হলো। আবার অল্পস্বল্প রাগ হলো।বিয়ের পর থেকে কবির এই তিন মাসের মধ্যে না হলেও পনেরো টার বেশি শাড়ির হবে এনে দিয়েছে।রুমে গিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“রোজ কেনো এসব আনতে হবে?
আর আনবেন না।”
-“আমার ইচ্ছে।
বাই দ্য ওয়ে যাও এগুলো পড়ে রেডি হয়ে এসো।”
-“কোথায় যাব?”
-“এতো কোশ্চেন কেনো করো তুমি?
যা বলেছি সেটা করো।”
তিন্নি মুখ ভোঁতা করে কিছু বিড়বিড় করে রুম হতে বেরিয়ে যেতে নিলেই কবির বলে উঠলো,
-“কোথায় যাচ্ছো তুমি রুমে পড়ে নাও।আমি ফ্রেশ হয়ে নেই।”
কবির ওয়াশ রুমে চলে গেলে তিন্নি আস্তে ধীরে তাই করে।একদম তিন্নির শাড়ী পড়া শেষ কবির ওয়াশ রুম হতে বেরিয়ে এসে তিন্নির শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিলো।অতঃপর আলমারি থেকে একটা কালো রঙের পাঞ্জাবি বেড় করে পড়ে নিলো।ড্রেসিং টেবিলের সামনে তিন্নির পাশে দাঁড়িয়ে নিজেও রেডি হয়ে নিলো।তবে রেডি হওয়া শেষ হলেও কবির সেখানে আয়নায় তিন্নির দিকে তাকিয়ে থাকে।তিন্নি বিষয় টা বুঝতে পেরে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
-“চুরি করে কেনো দেখছেন?আমি কি পাশের বাসার ভাবি?”
-“চুরি করে কেনো দেখবো?আমার বউ আমি যেভাবে খুশি দেখবো।দরকার পড়লে কোলে নিয়ে বসে বসে দেখবো।বউ আমার চুরি করে দেখার প্রয়োজন পড়বে না।”
কবিরের অকপটে জবাবে তিন্নি থমথমে খেলো।
রাতে সাদনান বাড়ি ফিরে দেখলো বউ তার আজ ঘুমিয়ে পড়েছে।একটু অবাক হলো।বউ তার তো এমন করে না খুব একটা। ততই রেগে থাকে অভিমান করে সে না আসা অব্ধি ঘুমায় না।সাদনান এসব ভাবতে ভাবতে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে রুমে এসে বিছানায় বসতেই নজর পরে বউয়ের চোখ ফুলে আছে।আর পাশেই ব্যথার ঔষধ দেখে হঠাৎ কিছু মনে পড়লো।ফোনের সাইড বাটন চেপে কিছু দেখে বিড়বিড় করে বলল,
-“শীট।
আমি ভুলে গেলাম কি করে!”
রুমে থাকা ফ্লাক্স থেকে হট ব্যগে পানি নিলো।বিছানায় এসে বউয়ের পাশে বসে প্রিয়তা কে সোজা করে শুইয়ে দিলো।প্রিয়তা নড়েচড়ে অল্প চোখ খুলে সাদনানের দিকে নিবুনিবু চোখে তাকিয়ে মৃদু কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,
-“কখন এসছেন?
খাবার খেয়েছেন?”
-“আমাকে বলো নি কেনো?কখন থেকে হচ্ছে এমন?”
সাদনান প্রিয়তার প্রশ্ন সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে নিজে প্রশ্ন করলো। ততক্ষণে প্রিয়তার জামা সরিয়ে তলপেটে হট ব্যাগ ধরেছে।প্রিয়তা গরম ছোঁয়া পেয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।পরপরই চোখ খুলে বলল,
-“ততটাও গুরুতর নয় বিষয় টা।সবার হয়। স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রতিবারই এতো টা কেনো বিচলিত হোন আপনি?”
সাদনান কোনো জবাব দিলো না। বউয়ের পেটে হট ব্যাগ ধরে বসে থাকে অনেক টা সময় নিয়ে।প্রিয়তা এটাসেটা বলছে।সাদনান হু, হ্যাঁ করে শুধু সঙ্গ দিচ্ছে।সারা দিনের ক্লান্তি তার বউয়ের মুখ দেখলে চলে যায়।আর যখন মেয়ে টা সারাদিনের কথা ঝুলি নিয়ে বসে তখন সারাদিনের টেনশন ভুলে যায়।সুখ সুখ লাগে। অদ্ভুত এক প্রশান্তি লাগে মনের মধ্যে।আর এই সবকিছুর কারণ যে সে যদি কষ্ট পায় অসুস্থ থাকে তাহলে সে কি স্থির থাকতে পারে!
অনেক্ক্ষণ পর প্রিয়তা হট ব্যাগ সাদনানের হাত থেকে টেনে নিয়ে পাশের টেবিলে রেখে দিলো।সাদনান সুইচ টিপে লাইট অফ করে এসে বউ কে বুকে আগলে নিয়ে শুয়ে পড়লো।অনেক সময় সেভাবে থাকার পর প্রিয়তার মাথার তালুতে চুলের ভাঁজে চুমু খেয়ে আওড়াল,
আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২৫
-“আমার তুমি টা আমার পূর্ণতা। আমার মানসিক শান্তি তুমি।তোমার কিছু হলে আমার বুকে তীব্র যন্ত্রণা হয়।সব কিছু এলোমেলো লাগে।এতে আমার কি দোষ!”