আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩২
জান্নাত সুলতানা
প্রিয়তা রেডি হয়ে নিচে এলো।সাদনান অনেক আগেই রেডি হয়ে নিচে চলে এসছে।বর কনে একই বাড়ি থেকে বিয়ে হচ্ছে বিধায় হুলুস্থুল আয়োজন চলছে।যদিও সাদনান চেয়েছিল বোনের বিয়ে সে তাদের শহরের বাড়ি থেকে হোক।কিন্তু আম্বিয়া মির্জা আর জাফর মির্জা কোনো মতেই রাজি নয়।বাড়ি ভর্তি মানুষ গিজগিজ করছে। তবে এতো মানুষের ভীড়ে রাহানের বোন রিধি আসতে পারে নি। ওয়াজিদ কে সেখানের হসপিটাল থেকে কিছুতেই ছাড়াতে রাজি নয়।
ওয়াজিদ বাধ্য হয়ে থাকতে রাজি হয়েছে।এখন সেখানে সেটেল্ড হওয়া ব্যতিত আর কোনো রাস্তা নেই।যদিও ওয়াজিদ এর মত আছে বলেই হসপিটাল কর্তৃপক্ষ রাখতে পেরেছে।তবে ব্যাপার টা ওয়াজিদ সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়েছে সে চাই ওখানে নিজের ছেলেমেয়ে লেখা পড়া করবে ভবিষ্যতে। বাংলাদেশে পড়াশোনার যা অবস্থা তাই ওখানে পড়াশোনা করার ব্যাপার টা বেশি গুরত্ব দিলো ওয়াজিদ। রিধি আর কিছু বলে নি।এটার অবশ্য একটা কারণ রয়েছে রিধি কনসিভ করেছে তিন মাস চলে।তাই এই অবস্থা ট্রাভেলিং করার টা ভালো হবে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রোজিনা বেগম কিছু টা মন খারাপ বড় মেয়ে রিধি।তারউপর মা হচ্ছে এখন তো মেয়ে ওনার কাছে থাকতো।সেখানে ছেলের বিয়েতেও মেয়ে আসতে পারছে না। তাই মনমরা হয়ে থাকছে। কোনো কাজেই যেনো হাত লাগছে না।
-“মনি!”
রোজিনা বেগম লিভিং রুমের পাশেই বারান্দায় বসে আছে। প্রিয়তা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ডেকে ওঠে।
রোজিনা বেগম কিছু টা হকচকিয়ে প্রিয়তার হাত টেনে সামনে আনলো।প্রিয়তা মুচকি হেঁসে ওনার পাশে বসে শাড়ীর আঁচল আঙ্গুলে পেঁচাতে পেঁচাত ঠোঁট উল্টে বলল,
-“আমি এখনো কিছু খাই নি।”
-“সে কি?
সাদনান কে যে খাবার দিয়ে বলেছিলাম তোকে খাইয়ে দিতে?”
-“ওনার না-কি কাজ আছে।
আমায় খেতে বলে চলে এসছে।”
-“আচ্ছা।
তুই বস।
আমি খাবার টা নিয়ে আসি।সারা টাও খায় নি।একটু পরেই হলুদ তারপর মেহেদী ওকেও খাইয়ে দিতে হবে। নয়তো মেয়ে টার আর খাওয়া হবে না। ”
রোজিনা বেগম কথা শেষ চলে গেলো। প্রিয়তা আয়েশ করে বসে বাহিরে তাকালো।সেখানে হলুদের জায়গায় সহ বিশাল বড় স্টেজ করা হয়েছে।সাদনান সেখানে পাশে বসে আছে। তার আশেপাশে কিছু গার্ড রয়েছে।মানুষ টা কোনো অনুষ্ঠান হলেই শুভ্র পাঞ্জাবি ছেড়ে কালো পাঞ্জাবি পড়ে।এতে আরো ভয়ংকর সুন্দর লাগে।প্রিয়তার পাশে এসেই রোজিনা বেগম সহ সারা বসতেই প্রিয়তা দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
রোজিনা বেগম দু’জন কে খাইয়ে দিলো টুকটাক কথা বলতে বলতে। খাওয়া শেষ এঁটো প্লেট হাতে ছুটলো রান্না ঘরে।
তিন্নি একটা আরামদায়ক চেয়ারে বসে আছে।কবির তিন্নির পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। তিন্নি কাঁচা হলুদ শাড়ী পড়ে অল্পস্বল্প তাজা ফুলের গহনা পড়েছে।মায়াবী দেখতে লাগছে। কবির বারংবারই বউয়ের দিকে তাকাচ্ছে। তবে তিন্নির অল্পস্বল্প মন খারাপ সবাই কত আনন্দ করছে অথচ সে বসে আছে। অবশ্য সবাই আনন্দ করছে বললে ভুল হবে।মাইশা ছেলে কে একটু পরপরই কোলে নিতে হচ্ছে। আর প্রিয়তা আম্বিয়া মির্জার সাথে বসে আছে এটা আম্বিয়া মির্জার আদেশ।
সারা আর রাহান কে পাশাপাশি বসিয়ে হলুদ দেওয়া হচ্ছে।হলুদ সাজে সারা কে চমৎকার দেখতে লাগছে। আস্ত একটা তাজা ফুল বসে আছে যেনো।রাহান সারা’র মুখ দর্শন একবার করেছে আর তাকায় নি।যদিও কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলে?
তারচেয়ে বরং প্রেয়সী কে সে পরে সায়েস্তা করবে।সাদনান দূর থেকে বউ কে পর্যবেক্ষণ করে।হলুদ অনুষ্ঠান এর মধ্যে সারা কে মেহেদী লাগালো দু’জন মেহদি আর্টিস্ট।একে একে সবাই লাগালো।শুধু প্রিয়তা আম্বিয়া মির্জার সাথে বাড়ির ভেতর চলে গেলো। সাদনান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দাদি সহ বউয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।
সারা একটু আগেই রুমে এসছে।হাতের মতো মেহেদী শুঁকিয়েছে।সেগুলো তুলে শাড়ী চেঞ্জ করে নরমাল পোশাক পড়ে নিলো।ফ্রেশ হয়ে ওয়াশ রুম হতে বেরিয়ে এসে।চুল গুলো আঁচড়ে নিলো।অবশ্য চুল গুলো আঁচড়াতে বেশ কসরত করে হলো।চুল আঁচড়ে লাইট অফ করে বিছানায় শোয়ার প্রস্তুতি নিতেই ব্যালকনিতে শব্দ হলো।মনে হলো ঠাশ করে কিছু পড়লো।সারা প্রথমে ভয়ে পেলো সেকেন্ড এর মতো সময় পর কিছু ভেবে চট করে বিছানা ছেড়ে এগিয়ে গেলো।দরজা খুলতেই রাহান সারা কে ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো।
সারা নিজেও পেছনে পেছনে আসতে আসতে কিছু টা চাপাস্বরে বলে উঠলো,
-“আল্লাহ!আপনি আবার আজ পাইপ বেয়ে উপর এসছেন?”
-“নাহ।
তোর বাপ আমায় বরণ করে তোর রুমে পাঠিয়েছে।
ইস্টুপিট।”
রাহান দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো। বিছানায় ততক্ষণে সটান হয়ে শুয়ে পড়েছে। সারা এসে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
-“হয়েছে।
আজ কেনো এতো উঁচু বেয়ে আসতে গেলেন?”
-“সেদিন ভালোবাসা দেখতে এসছি।আর আজ অধরসুধা প্রাণ করতে।”
বলে শোয়া থেকে ওঠে বসে রাহান।পরপরই সারা কে টেনে নিজের পাশে বসালো।সারা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাতেই রাহান নেশাময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে সারা’র দুই গালে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে নিলো।সারা ভয়ে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে এক হাত রাহানের মুখ আলগোছে রেখে বাঁধা প্রদান করলো।
রাহান ভ্রু কুঁচকালো।
থমথমে কণ্ঠে আদেশ করলো,
-“হাত টা সরা।”
-“এতো বছর অপেক্ষা করলেন।
আর কিছু ঘন্টা মাত্র।”
-“প্লিজ বাঁধা দিস না।
রাত একটা বাজে।নিজের সাথে অনেকটা যুদ্ধ করেই এখানে এসছি।ঘুম আসছে না।দিয়ে দে।জাস্ট টু মিনিটস্”
কি করুণ কণ্ঠে আবদার। সারা ফিরে দেয় কি করে? যেখানে ভালবাসার মানুষ সাথে রাত পোহালে মানুষ টাকে পবিত্র এক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ নিজের করে পাবে।
হাত টা এগিয়ে রাহানের গলা জড়িয়ে ধরে।
রাহান সম্মতি পেয়ে সময় ব্যায় করলো না।মূহুর্তে মধ্যে সারা অধর নিজের অধরের মাঝে সন্ধি ঘটালো।
-“মেহেদী কেনো লাগাও নি?”
-“সময় পাই নি।
দাদির সাথে ছিলাম।”
সাদনান কিছু না বলে আবার রুম হতে বেরিয়ে গেলো।প্রিয়তা বেশি কিছু না ভেবে শাড়ী চেঞ্জ করে রাতের পোষাক পড়ে ওয়াশ রুমে হতে বেরিয়ে এলো।এসেই সাদনান কে সোফায় মেহেদীর কোণ হাতে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,
-“আপনি এটা কেনো নিয়ে বসে আছেন?”
সাদনান কোনো জবাব দিলো না। প্রিয়তা বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই সাদনান পেছন থেকে গম্ভীর কণ্ঠে ডেকে বলল,
-“এদিকে এসো।
এসো!”
প্রিয়তা কিছু টা অবাক হয়ে এগিয়ে যেতেই সাদনান বউ কে টেনে পাশে বসিয়ে হাতে মেহেদী লাগাতে শুরু করে।
একদম আঁকাবাঁকা। তবে প্রিয়তার চোখে মনে হলো পৃথিবীতে এরচেয়ে সুন্দর করে কেউ আর মেহেদী আর্ট করতে পারবে না।হয়তো প্রিয় মানুষের এতোটুকু যত্ন অনেকটাই গভীর কোনো আঘাত কে ভুলিয়ে দিতে সক্ষম হবে।প্রিয়তা খুশিতে চোখ চিকচিক করে।সাদনান মেহেদী এমনভাবে দিয়েছে হাতের তালুতে ফাঁকা রয়েছে। সাদনান ইচ্ছে করে রেখেছে। সেখানে সুন্দর করে নিজের নাম টা।লিখে দিলো।অপর হাতেই সেম ডিজাইন তবে সেখানে প্রিয়তার নাম।
প্রিয়তা একটু নড়াচড়া করে না।চুপটি করে সাদনানের মুখের দিকে তাকায় একবার তো হাতের দিকে।সাদনান মেহেদী দিতে বেশ অনেকটাই সময় লাগে।পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার ফলে।প্রিয়তা সাদনান মেহেদী দেওয়া শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাদনানের গালে টুপ করে চুমু খায়।যদিও সাদনান সবসময়ই বউয়ের প্রতি ভীষণ কেয়ারিং। তবে প্রিয়তার কাছে এটা অন্যরকম লাগলো।
সাদনান বউয়ের কোমড় জড়িয়ে ধরতেই প্রিয়তার ধ্যান ভাঙ্গে। নিজে দুই হাত সাদনানের কাঁধের উপর সোজা করে রেখে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই সাদনান চোখে হাসলো।অধর এগিয়ে বউয়ের অধর স্পর্শ করলো। প্রিয়তা ছটফট করে। দম বন্ধ হয়ে আসে।কিন্তু সাদনান ছাড়ার নাম-ই নেই।প্রিয়তা হাতে মেহেদী দেওয়ার ফলে কিছু করতেও পারছে না।প্রিয়তা কে এভাবে ছটফট করতে দেখে সাদনান মিনিট এর মাথায় বউয়ের অধর ছাড়ে।
কোমড় হতে হাত সরিয়ে প্রিয়তার মুখ নিজের দুই হাতের আঁজলে নিয়ে নেশাতুর কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“জাস্ট ফাইভ মিনিটস্ জান।
কষ্ট করে এটুকু সময় থাকো।”
পরপরই আবার বউয়ের অধরে হামলে পড়ে। প্রিয়তা না চাইতেও সঙ্গ দিলো।সাদনান যেনো উন্মাদ গাঢ় হতে প্রগাঢ় হচ্ছে হাতের আর অধর স্পর্শ। প্রিয়তা অনেক টাই জোর করে নিজে কিছু টা পেছনে সরে বসলো।
সাদনান প্রিয়তার দিকে আহত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।মন ভরে নি পুরুষ টার।বউ তো এমন নয়।তবে আজ কেনো এমন রিয়াকশন দিলো সাদনান বুঝতে পারলো না। তবে সময় অপচয় না করে বউ কে কোলে তুলে ওয়াশ রুমের দিকে ছুটলো।
প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছিল।হঠাৎ নিজে কে কারোর দখলে বুঝতে পেরে ঝটপট চোখ খুলে বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো,
-“কোলে কেনো নিয়েছেন?”
সাদনান জবাব দেয় না।বউ কে সোজা ওয়াশ রুম নিয়ে বেসিনের সামনে দাঁড় করিয়ে হাত দু’টো পানির নিচে দিয়ে ধুয়ে নিলো।আবার কোলে তুলে রুমে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে লাইট অফ করে দিলো।প্রিয়তা পুরো টা সময় মুগ্ধ হয়ে দেখলো।তবে সাদনান কে কাছে আসতে দেখেই ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,
-“তাই তো বলি এতো কেনো কেয়ার!”
-“ইইউ মিন আমি নয়তো তোমার কেয়ার করি না?”
সাদনান থমথমে কণ্ঠে এরূপ প্রশ্নে প্রিয়তা ঠোঁট টিপে হেঁসে জবাব দিলো,
-“করেন তো।
খবরদারী।”
আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩১
সাদনান দেখলো।আবছা আলোয়ে বউয়ের চোখে-মুখে হাসির ঝলক দেখতে পেয়ে বুঝতে পারলো প্রিয়তা মজা করছে। সাদনান প্রিয়তা কে এবার নিজের উপর থেকে নিচে ফেলে দিলো।
নিজে বউয়ের উপর চড়ে বসে আগের ন্যায় থমথমে কণ্ঠে জানালো,
-“তোমার যদি এটা মনে হয় তবে তাই।
আমার অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে যতদিন বিদ্যমান ঠিক ততদিন তোমার জীবনেও এসব বিরাজমান।”