আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৫
জান্নাত সুলতানা
-“রাত আড়াই টা বাজে জান।
প্লিজ ঘুমিয়ে পড়ো।”
সাদনান বউয়ের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল।কিন্তু প্রিয়তা কাঠকাঠ কণ্ঠে জবাব দিলো,
-“একদম না।
আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন কি-না বলেন?”
সাদনান এবার এগিয়ে এলো। প্রিয়তার আট মাসের ভরা পেটে এক হাত রেখে আরেক হাত প্রিয়তার গালে রাখে।রাত বাজে আড়াই টা।আর এই মেয়ে?
এই রাতে ছাঁদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে যাওয়ার জন্য সেই কখন থেকে তর্ক করে যাচ্ছে। সাদনান জানে বউ কে সে অনুমতি না দিলে বউ এক পা ও নাড়াবে না।কিন্তু জেদ দেখাচ্ছে।সাদনানের হাত প্রিয়তা ঝট করে সরিয়ে দিলো।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-“যাবেন না তাই তো?”
-“নো, নেভার।”
সাদনান থমথমে কণ্ঠে কথা টা বলেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। প্রিয়তা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। সাদনান মিনিট দশ মিনিট এর মধ্যে ফিরি এলো।হাতে পাস্তা একটা মিনি প্লেট।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
প্রিয়তা তখন উলটো ঘুরে শুয়ে আছে। সাদনান এগিয়ে গেলো।বিছানায় ওঠে বসে বউ কে খুব সাবধানে টেনে তুলে।প্রিয়তা মোচড়ামুচড়ি করেও কোনো লাভ হয় না।বসে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো।সাদনান এক হাতে প্রিয়তার মুখ চেপে ধরে মুখের সামনে খাবার ধরতেই প্রিয়তা মুখ শক্ত করে রইলো।সাদনানের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।মেয়ে টা দিন কি দিন বেশি ঘাড়ত্যাড়া হচ্ছে। ইদানীং বেশি করে হয়তো প্রেগন্যান্সির জন্য। সাদনান রাগ গিলে নিলো।মুখ এগিয়ে বউয়ের কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে মৃদু স্বরে বলে উঠলো,
-“জান আমার।খেতে হবে। আমি জানি তোমার ক্ষুধা পেয়েছে।”
প্রিয়তা টলমল চোখে তাকালো সাদনানের দিকে। সত্যি ওর খিদে পেয়েছে। কিন্তু মন টা বলছে একবার বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে দেখার জন্য।
প্রিয়তার মাথায় চট করে একটা বুদ্ধি এলো।
গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“আপনি জানেন?বাবু পেটে এলে মায়ের মন যা চায় তাই করতে হয়!”
-“অবশ্যই করার মতো হলে।
এমন বেহুদা আবদার এর কোনো মানে নেই।”
সাদনান প্রিয়তা কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মুখে খাবার পুরে দিলো।প্রিয়তা মুখ ভোঁতা করে খাবার খেয়ে নিলো।এখন যত যাই করুক সাদনান যে খাবার পুরো টা শেষ না হওয়া পর্যন্ত দমে যাওয়ার পাত্র নেই।
খাবার শেষ সব গুছিয়ে রাখতে রাখতে তিনটার বেশি সময় বেজে গেলো।প্রিয়তা সহ সাদনান তাহাজ্জত পড়ে নিলো।সকালেও প্রিয়তা ঠিক আগে আগে ওঠে বসে থাকবে।সাথে সাদনান কেও নামাজ পড়তে টেনে তুলবে।
সাদনান ঝটপট জায়নামাজ গুছিয়ে কাবাডে তুলে রাখে।
বিছানায় এসে প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরে।প্রিয়তা নড়েচড়ে মিনমিন করে জানালো,
-“কাল তুরাগ আসবে।”
-“হয়েছে এখন চোখ বন্ধ করো।
আর হ্যাঁ মিশান এর সামনে তুরাগে কে জামাই ডেকো না।”
প্রিয়তা সাদনানের কথা শুনে শব্দ করে হাসতে লাগলো। সাদনান ভ্রু কুঁচকালো।
বউয়ের ঘাড়ে দাঁত চেপে ধরতেই প্রিয়তা ব্যথাতুর শব্দ করে বলে উঠলো,
-“আহ,ছাড়ুন।
আর হ্যাঁ তুরাগ কে তো রিধি আপু জামাই করবে বলেছে।
ওনার মেয়ের জামাই।তাই আমারও জামাই।”
বলেই আবার জোর করে হাসার চেষ্টা করলো।সাদনান হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।
রিধির মেয়ে রুহির মাত্র তিন মাস চলে। আর তুরাগ এর এক বছর এর বেশি সময়। আর এই মহিলারা?এখুনি কি সব অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। হায়।
সাদনান কথা বাড়ালো না।বউ কে চুপ করে ঘুমোতে বলে নিজেও চোখ বন্ধ করে।
সকালে মির্জা বাড়ির সব পুরুষরা সকালে ব্রেকফাস্ট করে যে যার মতো করে কাজে গেলো।শুধু সাদনান গেলো না।অবশ্য সাদনান এখনো নিচেই আসে নি।আজ অনেক দিন হয় সে বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাহিরে পা রাখে না।এর কারণ সবাই জানে।বউয়ের জন্য এই পুরুষ সব করতে পারবে।সকালে প্রিয়তাও নিচে আসে নি। সাদনান এর মা সার্ভেন্ট দিয়ে রুমে ছেলে আর বউয়ের জন্য উপরে রুমে খাবার পাঠালো।
সাদনান তখন ফ্রেশ হয়ে মাত্র রুমে এসছে বউ তখনো ঘুমিয়ে আছে। সকালে নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়েছে। রাতে ঠিকঠাক ঘুমোতে পারে না।এপাশ-ওপাশ করে।সাদনানের তখন কি মায়া না হয় বউয়ের জন্য।
তবে কিছু করার নেই। কিন্তু সাদনান কিছু করার চেষ্টা করে। হাতের নিচে বালিশ দেয় পায়ের নিচে দিয়ে দেয়।একটু আরাম পেলে হাত পা ছড়িয়ে একটু ঘুমায়।যেমন এখন ঘুমোচ্ছে। কিন্তু খাবার খেতে হবে তাই ডেকে তুলে বউ কে।
প্রিয়তা ঢুলতে ঢুলতে ওঠে বসে। সাদনান মগে করে পানি আনে।মিনি টাওয়াল ভিজিয়ে বউয়ের হাত মুখ মুছিয়ে দেয়।সকালে অজু করার সময় ফ্রেশ হওয়ার ফলে এখন আর বেশি কিছু করতে হয় না।
প্রিয়তা কে খাইয়ে দিয়ে মাত্র সাদনান খেতে বসেছে তক্ষুণি দরজায় টোকা পড়ে। সাদনান ভ্রু কুঁচকালো। প্রিয়তা সেদিকে তাকিয়ে বলল,
-“আপনি বসুন আমি দেখ,,
-“একদম নড়বে না।
হাঁটার সময় তো পা ব্যথা করে কাজের সময় করে না?”
সাদনানের তীক্ষ্ণ কণ্ঠের বাক্য শুনে প্রিয়তা ঠাঁই বসে রয়।
সাদনান দরজা খুলতেই একজোড়া হাত সাদনান এর হাঁটু জড়িয়ে ধরলো।একটু হকচকিয়ে নিচে তাকিয়ে হাতের মালিক কে দেখে চমৎকার করে হাসলো।আগলে নিয়ে কোলে তুলে রুমে আসতে আসতে বলল,
-“বাহ।
সুপার আমার জামাই চলে এসছে।”
ছোট মিশান গোল গোল চোখে তাকিয়ে থাকে প্রিয়তার দিকে।তিন বছর মাত্র খুব বেশি বড়ো নয়।প্রিয়তা খুশি হলো মিশান কে দেখে।
হাত বাড়িয়ে ডেকে বলল,
-“সোনা আব্বা।
এসো মনির কাছে।”
সাদনান এগিয়ে গিয়ে মিশান কে কোলে নিয়ে বসলো প্রিয়তার পাশে। মিশান মোচড়ামুচড়ি করে সাদনান এর কোল হতে নেমে বসলো।প্রিয়তা এক হাতে জড়িয়ে ধরে মিশান কে।
মিশান নিজের ছোট হাত টা প্রিয়তার ঢিলাঢালা জামার উপর দিয়ে পেটে রাখলো।চোখ পিটপিট করে বলে উঠলো,
-“তোট বাবাই বলেতে আমার বউ আতে এতানে।”
সাদনান বিস্ময় খেলো।প্রিয়তা চোখ বড়ো বড়ো তাকালো সাদনানের দিকে।সাদনান সহসাই চোর ধরে পরে যাওয়ার অবস্থা হলো।তবে চট করে বলে উঠলো,
-“বিশ্বাস করো জান।আমি এমন কিছু বলি নি।”
মিশান দু’জনের দিকে বারকয়েক তাকালো বুঝতে পারলো না ওরা কি বলছে।মিশান নিজেই আবার জিজ্ঞেস করলো,
-“তবে আতবে আমার বউ?”
প্রিয়তা সাদনান কে কিছু বলে না। মিশান কে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেঁসে বলল,
-“ছোট মনির জন্য দো’আ করবে।
খুব দ্রুত যেনো তোমার বউ কে সুস্থ ভাবে নিয়ে আসতে পারি।”
মিশান হয়তো আরো কিছু জিগ্যেস করতো।কিন্তু সাদনান তড়িঘড়ি করে মিশান কে নিয়ে রুম হতে বেরিয়ে গেলো। বেচারা কখনো আবার কি বলে বউয়ের কাছে তারপর দেখা যাবে বউ বেলুনের ন্যায় ফুলে থাকবে।
নিচে এসে সাদনান সবার সাথে সাক্ষাৎ করলো।শুক্রবার আজ।কবির তিন্নি এসছে।মাইশাও এসছে। আয়ান আসে নি।তবে সন্ধ্যায় এসে বউ আর ছেলে কে নিয়ে ঠিক বাড়ি ফিরে যাবে।
প্রিয়তা গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে সাদনানের বুকে।সাদনান বউয়ের পেটের উপর নিজের একটা রেখে বসে আছে। অনেক সময় হয় এভাবে বসে আছে সাদনান।মূলত বউয়ের জন্য এভাবে বসে থাকা।দুদিনের এর জন্য একটা জরুরি প্রয়োজন বাহিরে যেতে হবে। সব মিলিয়ে চার দিন লাগবে।আর এই কথা প্রিয়তা যেই থেকে শুনেছে সেই থেকে এমন মুখ বন্ধ করে বসে আছে।
এই সাপ্তাহে এর মধ্যে প্রিয়তার ডেলিভারি ডেইট।সেইজন্য মেয়ে টা আরো ভয়ে আছে।কিন্তু বাহিরে যাওয়া টাও ভীষণ জরুরি।যদিও সাদনান এ কয়েকমাসে সব কিছু থেকে নিজে কে সরিয়ে রেখেছিল।কিন্তু এটা থেকে পারে নি।উপর মহল থেকে নোটিশ এসছে।সাদনান চেষ্টা করেও কিছু করতে পারে নি।সময় গড়ালো। সন্ধ্যায় সাদনান এয়ারপোর্টে এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে।এখন বিকেলে।সাদনান এবার মুখ খুলল,
-“টাইম এর আগে চলে আসবো জান।”
প্রিয়তা তবুও টুঁশব্দ করে না। সাদনান নিজেও আর কিছু বলে না। সাদনান জানে এখন কিছু বলেও লাভ হবে না। সাদনান প্রিয়তা কে সরিয়ে ওঠে বসার চেষ্টা করতেই প্রিয়তা সাদনান কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,
-“একটু আদর করুন।
প্লিজ। যদি ফিরে এসে আর আমাকে না পান!”
সাদনান চমকে উঠলো।
বুকের ভেতর অজানা ভয় এসে হানা দিলো।শক্ত করে বউ কে জড়িয়ে ধরে অধর নেড়ে আওড়াল,
-“কিছু হবে না আমার জান।
ভয় কেনো পাচ্ছো তুমি আমি আছি তো।চলে আসবো দ্রুত। প্রমিস।”
আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৪
সাদনান বউয়ের আবদার রাখলো।তবে মনে একটা খুঁতখুঁত থেকেই গেলো।কেনো জানি মন সায় দিচ্ছে না বউ কে ফেলে যেতে। কিন্তু যেতে হবে। পরিস্থিতি আমাদের মর্জি মতো চলে না আমাদের পরিস্থিতির মর্জি মতো চলতে হয়।