আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ১৩

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ১৩
সালমা খাতুন

মায়া প্রথমেই আবিরকে সাথে নিয়ে হসপিটালে গেলো ওর বাবাকে দেখা করতে। মায়ার মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো ওর বাবাকে দেখার পর, কারণ ওর বাবার শরীর টা আরো বেশি খারপ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। ডক্টরও বলেছে ওনার আর সুস্থ হওয়ার কোনো চান্স নেই। তবুও মায়া ওর বাবাকে হসপিটালেই রাখতে চাই। এভাবে যতোদিন থাকে আরকি। মায়া ভীষণ কান্নাও করেছে আজ, ওর বাবাকে দেখার পর। ও খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে ওর বাবা আর বেশি দিন থাকবে না এই দুনিয়ায়।

আবির মায়াকে জোড় করে ডক্টর দেখিয়ে কোমড়ে ব্যাথার লগার জন্য ওষুধ নিয়েছে। তারপর মায়া ওর বাবার সাথে কিছুটা সময় কাটিয়ে ওরা রওয়ানা দিয়েছে অফিসের উদ্দেশ্যে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা অফিসে পৌঁছে যাই। অফিস টাইম ১০:৩০ এ আর এখন বাজে, ১০:৪০। ওরা অফিসে ঢুকেই প্রথমে লিফটে উঠে সব থেকে উপরের ফ্লোরে যাই। ওখানেই আছে আরমান আর আবিরের কেবিন। লিফট থেকে বেরিয়েই কিছুটা গিয়েই দেখা যাই ওখানে অনেকে নিজের ডেস্কে বসে যে যার কাজ করছে।
আবিরকে দেখে সবাই উঠে দাঁড়িয়ে গুড মর্নিং জানালো। আবিরও কোনো দিকে না তাকিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে যেতে যেতেই বলল, “গুড মর্নিং এভরিওয়ান।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আবিরের সাথে মায়াকে দেখে সবাই অবাক হলো। কালকে যখন সবাই আবির আর মায়াকে একসাথে যেতে দেখেছিল তখনো অবাক হয়েছিল। কারণ এই প্রথম আবিরকে কোনো মেয়ের সাথে দেখলো। তাছাড়া আবিরকে কোনো দিনও কোনো মেয়ের সাথে দেখেনি। আর না তো আবির কাজ ছাড়া এই অফিসের কোনো মেয়ের সাথে কোনোদিনও দুটো ভালো করে কথা বলেছে। কোনো মেয়ের দিকে ভালো করে তাকায় না পর্যন্ত। তাই মায়াকে ওর সাথে দেখে সবাই অবাক হয়েছে। আর আবির এমনিতে ওদের সবার সাথে বন্ধুসুলভ আচরণই করে। যদি কেউ কোনো ভুল করে তবেই আবির তার সাথে রুক্ষ ব্যবহার করে তাছাড়া না।
আর আবিরের সাথে মায়াকে দেখে ওদের দুজনকে নিয়ে অফিসে গসিপও শুরু হয়ে গেছে। কেউ কেউ তো বলছে ওই মেয়েটা হয়তো ওদের আবির স্যারের গার্লফ্রেন্ড। আর উনার এই গার্লফ্রেন্ড এর জন্যই হয়তো ওদের আবির স্যার অন্য কোনো মেয়ের দিকে ভালো ভাবে তাকায় না।

আবির গিয়ে আরমানের কেবিনে নক করলে আরমান ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দেয়। আরমান ওদের দুজনকে আগেই দেখেছে আস্তে। কারণ আরমানের কেবিনের সামনে টা কাঁচের তৈরি। আর তাই পুরো ফ্লোরটা ওর নিজের চেয়ারে বসেই দেখতে পাই ভেতর থেকে, বাইরে কি কখন কি চলছে। আর এই কারণেই ওই ফ্লোরের কেউ কাজে ফাঁকি দিতে পারে না। কারণ ওরা সবাই খুব ভালো করেই জানে যে ওদের বসের নজর সব সময় ওদের উপরেই আছে। আরমান কাজের ব্যাপারে ভীষণ স্ট্রিক্ট। কাজে ফাঁকি দেওয়া আরমান একদম পছন্দ করে না। ওর ভয়ে পুরো অফিস তটস্থ হয়ে থাকে। কারণ আরমান সব সময় গম্ভীর ও রাগী গলায় কথা বলে। যেনো মেজাজ সব সময় মাথার উপড়েই আছে। তবুও এই গম্ভীর কাঠখোট্টা মানুষটার জন্য এই অফিসের অনেক মেয়ে পাগল।
আবির আর মায়া ভেতরে ঢুকতেই আরমান গম্ভীর গলায় বলল, “10 মিনিটস লেট।”
আবির ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল, “আসার সময় হসপিটালে গিয়েছিলাম মায়ার বাবাকে দেখতে তাই লেট হয়ে গেছে।”

বলতে বলতে আরমানের সামনে থাকা চেয়ারে গিয়ে বসলো আবির। মায়া তখনো দাঁড়িয়ে আছে। আরমান আড় চোখে একবার তাকালো মায়ার দিকে। মায়ার চোখ মুখ এখনো ফুলে আছে, কান্না করার ফলে। চোখ দুটো এখনো লাল হয়ে আছে। আরমান মায়ার এই অবস্থা দেখে কিছু জিজ্ঞাসা করবে ভেবেও কি জিজ্ঞাসা করবে সেটাই বুঝতে পারলো না। তাই আবিরকে জিজ্ঞাসা করল, “কেমন আছে আঙ্কেল এখন?”
আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, “কোনো ইমপ্রুভমেন্ট নেই। অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।”
আবিরের এই কথায় আরমান বুঝলো মায়ার মুখের এই অবস্থার কারণ। ও নিজেও একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মায়ার উদ্দেশ্য বলল, “দাও তোমার ডকুমেন্টস গুলো।”

মায়া ওর ব্যাগে থেকে সমস্ত ডকুমেন্টস বের করে আরমানকে দিলো। আরমান সমস্ত ডকুমেন্টস, কোর্সের সার্টিফিকেট দেখলো। সবকিছুই ঠিক ঠাকই আছে। আগের কোম্পানিতেও মায়ার কাজের রিভিউ ভালো। মায়া নিজের কিছু করা ডিজাইনও সাথে করে নিয়ে এসেছিল সেগুলোও দেখালো। সবকিছুই ঠিক আছে, একদম প্রফেশনাল ডিজাইনারদের মতোই। কিন্তু মায়াকে দেখলে বোঝাই যাবে না যে ও এতো ভালো একজন ডিজাইনার। আরমান মায়াকে পেপার পড়ে নিয়ে সাইন করতে বলল। এবং অফিসের সব কিছু রুলস গুলোও পড়ে নিতে বলল। মায়া দেখলো কাগজে লেখা আছে, ও কাজে জয়েন করলে এক বছরের আগে এই কাজ ছাড়তে পারবে না। এটাই এখানকার নিয়ম। সব কিছু পড়ে মায়া আবিরের দিকে তাকালে, আবির বুঝলো মায়ার মনের কথা। আবির বলল, “এগুলোই এখানকার নিয়ম। তুমি জয়েন করলে এক বছরের আগে এই জব ছাড়তে পারবে না। আর আপাতত তোমাকে মাসিক 60,000 বেতন দেওয়া হবে। পড়ে বাড়তে পারে। আর যেহেতু মিস্টার ড্যানিয়েল শুধু মাত্র তোমার বানানো ডিজাইন চাই তাই তোমাকে এই প্রজেক্টের জন্য হেড ডিজাইনার বানানো হবে।”

মায়া আবিরের বলা বেতনের পরিমাণ আর ওকে হেড ডিজাইনার বানানো হবে শুনে ভীষন অবাক হলো। ও এতোটাও আশা করেনি। ও কি সত্যিই পারবে এতো বড়ো কাজের দায়িত্ব নিতে? এই নিয়ে চিন্তিত হলো মায়া। তখন পেপারটা ও হাতে ধরে আছে সাইন করেনি।
আরমান মায়ার অবাক ও চিন্তত মুখ দেখে বলল, “কি হলো মিস মায়া? ভয় লাগছে? পারবে তো এতো বড়ো কাজের দায়িত্ব নিতে। এখন কিন্তু কিছু করার ও নেই, মিস্টার ড্যানিয়েল কিন্তু বলেই দিয়েছে তোমার ডিজাইন ছাড়া অন্য কারোর ডিজাইন নেবেন না।”

মায়া এই কথার প্রতিউত্তরে কিছু বলল না। পেপার টা টেবিলে রেখে সাইন করে বুঝিয়ে দিলো ও এই দায়িত্ব নিতে রাজি। পেপারে সাইন করা হয়ে গেলে মায়া পেপারটা আরমানের দিকে এগিয়ে দিলো।
আবির:- “Welcome to our office miss Maya Talukder. আজ থেকে তুমি আমাদের কম্পানির একজন মেম্বার হলে।”
ঠিক তখনি আরমানের কেবিনে নক হওয়ার আওয়াজ হলো। আরমান ভেতরে আসার অনুমতি দিলে একজন ছিমছাম গড়নের 24-25 বছর বয়সী ছেলে রুমে প্রবেশ করলো। আবির তাকে দেখে বলে উঠলো, “ওহ মিরাজ তুমি এসেছো! আসো আসো। তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম আমি।”

তারপর আবির আরমানকে উদ্দেশ্য করে বলল, “এই হচ্ছে তোর নতুন P.A মিরাজ। অনেকের ইন্টারভিউ নিয়ে ছিলাম আমি। তার মধ্যে একেই আমার যোগ্য মনে হয়েছে। অনেক করেছি তোর অ্যাসিস্ট্যান্ট এর কাজ। এবার থেকে ও করবে। এতে আমার কাজ কিছুটা কমবে। দুই দিকে সামলাতে পারছি না আমি।”
আরমানের আগে একজন মেয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিল। কিন্তু সে ছিল খুব গায়ে পড়া স্বভাবের। তাই তাকে বাদ দিয়ে দিয়েছে আরমান। আর সেই জায়গায় কিছুদিনের জন্য আবির ছিল ওর অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে।
মিরাজ বলে ছেলেটার কাজে থেকে জয়েনিং লেটার নিয়ে একই প্রক্রিয়াই সাইন করিয়ে নিলো। আরমানও কিছু প্রশ্ন করলো ছেলেটাকে। ছেলেটি সব উত্তর ঠিক ঠাক দেওয়াই আলমানের ভীষণ পছন্দ হলো। আবির জানালো ও আজকের মধ্যে মিরাজকে সব কাজ বুঝিয়ে দেবে।

এরই মধ্যে ১১ টা বেজে গেছে। এই নতুন প্রজেক্ট নিয়ে একটা মিটিং অ্যারেঞ্জ করা হয়েছে। একজন এসে জানালো সকল ডিজাইনার মিটিং রুমে উপস্থিত হয়েছে। তাই ওরা চারজন বেরিয়ে গেলো মিটিং রুমের উদ্দেশ্যে।
মিটিং রুমে প্রথমেই আরমান প্রবেশ করলো। পিছনে পিছনে আবির, মিরাজ আর মায়াও গেলো। আরমান নিজের অ্যাটিটিউড বজায় রেখে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলো। আরমানকে দেখে সবাই উঠে দাঁড়ালে আরমান সবাইকে হাতের ইশারায় বসতে বলল। আবির, মায়া, মিরাজ আরমানের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
এই রুমে কিছু ছেলে এবং মেয়ে আবার মধ্য বয়সী কজনও আছে। মেয়ে গুলোর পরনে আছে আধুনিক পোশাক। তার উপর আবার মেকআপ করা। আর মায়া পরনে আছে সিম্পল কুর্তি, মাথায় ওরনা। আর মুখে কোনো মেকআপ নেই। ওর কানে আছে হালকা দুল, চোখে একটু কাজল আরে ঠোঁটে হালকা লিপ গ্লস। এতেই যেনো ওকে সব মেয়েদের থেকে বেশি সুন্দর লাগছে।

মায়া এইসব আধুনিক পোশাক পড়া মেয়েদের দেখেও ঘাবড়ালো না। ওর এই সবের অভ্যাস আছে। আগের কম্পানিতেও ও হেড ডিজাইনার হিসেবেই কাজ করতো। তাই ও একদম একজন প্রফেশনাল ডিজাইনারের মতোই ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

আর এদিকে সকলে তো মায়ার ব্যাপারে জানার জন্য উতলা হয়ে উঠছে। কিন্তু মুখে কেউ কিছু বলতে পারছে না কারণ এখানে আরমান আছে। সবাই মায়ার ব্যাপারে জানার জন্য উসখুস করছে। এখানে আবার আগের হেড ডিজাইনার দিশাও আছে। ও তো মায়াকে দেখে রাগে ভিতরে ভিতরে ফুঁসছে। কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারছে না।
আবির সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে বলল, “হেই গাইস, ওহ হচ্ছে মিরাজ, আজ থেকে স্যারের পি.এ।”
তারপর মিরাজকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আর মিরাজ? এনারা হচ্ছে আমদের ডিজাইনার। উনারাই আমাদের কম্পানির সমস্ত ড্রেস ডিজাইন করে।”
সকলে মিরাজকে হাই, হেলো জানালো। তারপর আবির মায়ার পরিচয় দিয়ে বলল, “আর ওর নাম মায়া, আজ থেকে আপনাদের হেড ডিজাইনার হয়ে কাজ করবে।”

তৎক্ষণাৎ একজন ছেলে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “স্যার কিন্তু আমাদের হেড ডিজাইনার তো দিশা ম্যাম।”
আবির:- “আমি এখনো পুরো কথা শেষ করেনি, আমাকে আগে পুরোটা বলতে দিন।”
এটি শুনে ছেলেটি নিজের জায়গায় বসে পড়লো। আবির আবারও বলতে শুরু করলো, “আপনারা সবাই জানেন কাল একজন বিদেশী ক্লাইন্টে মিস্টার ড্যানিয়েল এর সাথে মিটিং ছিল। আর মিস দিশার বানানো কোনো ডিজাইনই উনার পছন্দ হয়নি। উনার মনে হয়েছে এই ডিজাইন এখন অনেক চলতি। উনি কিছু আনকমন ডিজাইন চেয়েছিলেন। আর সেই আনকমন ডিজাইন মিস মায়া দিতে পেরেছে। উনার মিস মায়ার বানানো ডিজাইন ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আর উনি এটাও বলেছেন, যে উনি একমাত্র মায়ার ডিজাইনই নেবেন। অন্য কারো না। তাই আপনাদের সকলকে এই প্রজেক্টের জন্য মিস মায়ার আন্ডারে কাজ করতে হবে। মিস মায়া যেমন ডিরেকশন দেবেন আপানাদের সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এতে কারোর কিছু বলার আছে?”

সকলে একে অপরের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো। তার মানে এতে কারোর কোনো আপত্তি নেই। ঠিক তখনি মিস দিশা উঠে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো, “আমার সকলকে কিছু বলার আছে। এই মিস মায়া হচ্ছে আমাদের স্যারের….”
আর বলতে পারলো না দিশা। ওকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে আবির রেগে বলল, “মিস দিশা!! এখানেই থামুন। এখানে কাজের কথা চলছে। তাই এমন কিছু বলবেন না যাতে আপনাকে আপনার কাজটা হারাতে হয়। তাই ভালো হবে নিজের মুখটা বন্ধ রাখুন।”

আরমান আবিরকে রেগে যেতে দেখে ওর দিকে তাকালো। আরমান, মায়া এবং আবির ভালোই বুঝতে পেরেছে দিশা কি বলতে চাইছিলো। কালকে আরমান মিস্টার ড্যানিয়েলকে প্রথমে মায়ার পরিচয় হিসাবে জানিয়ে ছিল মায়া ওর সার্ভেন্ট। আর সেটা দিশাও শুনেছিল। আর এমনিতেও দিশা মায়ার উপরে রেগে আছে। রেগে থাকারই তো কথা‌, মায়া যেহেতু ওর জায়গাটা নিয়ে নিয়েছে তাই ও মায়ার প্রতি হিংসায় জ্বলছে। কিন্তু ও বুঝতে পারেছে না যে মায়া ও ওর যোগ্যতাই ওর জায়গাটা পেয়েছে। আর দিশা নিজের কাজের জন্য নিজের জায়গাটা হারিয়েছে।
দিশা রাগে অপমানে নিজের কথা শেষ না করেই বসে পড়লো। আবির দিশাকে উদ্দেশ্য করে আবারও বলে উঠলো, “মিস দিশা! আপনাকেও মিস মায়ার আন্ডারেই কাজ করতে হবে। মিস মায়ার সাথে আপনাকে কোঅপারেট করে চলতে হবে। এটা একটা অনেক বড়ো একটা ডিল। তাই আমরা চাই না এই প্রজেক্ট টাতে কোনো রকম ভুল বা ত্রুটি থাকুক। আশা করি কথা গুলো সবার মাথায় ঢুকেছে।”

সকলে মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। আবার কেউ “ইয়েস স্যার” বলে উঠল।
মিস দিশা মায়ার প্রতি ক্ষোভ নিয়ে মনে মনে বলল, “কক্ষনো না। এই মেয়ের আন্ডারে কাজ করা তো দূরে থাক এই মেয়ে কিভাবে এই ডিল সাকসেস করে তাই আমি দেখবো। খুব শক না আমরা পোস্ট ছিনিয়ে নেওয়া। ওর এই শক আমি ঘুচিয়ে দেবো। আমিও দেখবো এই মেয়ে আমি থাকতে কিভাবে এই কোম্পানিতে কাজ করে। এই মেয়েকে যদি আমি না তাড়িয়েছি তাহলে আমার নামও দিশা নয়।
এতোক্ষণ আরমান চুপ ছিল। এবার ও নিজের অ্যাটিটিউড বজায় রেখে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো, “আবির তো সব কিছু বলেই দিলো। আমি শুধু এটুকু বলবো, সবাই এই প্রজেক্টে নিজেদের বেস্ট টা দিবেন। আর মিস মায়া নতুন তাই উনার সাথে ভালোভাবে মিলেমিশে কাজ করবেন। এটা কোটি কোটি টাকার ডিল। আর এই ডিলটা সাকসেস হলে আমাদের কম্পানি আরো কিছুটা উপড়ে উঠে যাবে। তাই আমি চাইনা এই প্রজেক্টে কোনো রকম সমস্যা হোক। এই ডিলটা সাকসেসফুল হলে আপানাদের মাইনের কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়া হবে সাথে বোনাস তো আছেই। আশা করছি সবাই নিজের বেস্ট টা দিয়ে কাজ করবেন।”

সকলে সমস্বরে ইয়েস স্যার বলে উঠলো। এরপর আরমান মিশ দিশাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “মিস দিশা! জানি হয়তো আপনার খারাপ লাগছে, যেহেতু আপনার পোস্ট অন্য কাউকে দেওয়া হলো তাই খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক। কিন্তু আপনার চিন্তা নেই। আপনাকে যেই মাইনে দেওয়া হতো সেটাই দেওয়া হবে। আর আশা করি আপনি আমাদের কম্পানির খারাপ চাইবেন না? আর আপনি তো জানেনই, মিস্টার ড্যানিয়েল উনার বানানো ডিজাইন চেয়েছেন। তাই আশা করছি আপনিও আমাদের কম্পানির ভালোর জন্য মিস মায়ার সাথে মিলেমিশে কাজ করবেন।”
দিশা কিছুটা ঘাবড়ে গেলো আরমানের কথা শুনে। আচ্ছা স্যারের কি মন পড়ার ক্ষমতা আছে নাকি? নাহলে ওকে হঠাৎ এভাবে বললো কেন? না না কি সব ভাবছে ও? স্যার কিভাবে ওর মনের কথা জানবে? ওর মাথাটাই গেছে মনে হচ্ছে।

মনে মনে এগুলো ভেবে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে উঠলো দিশা,“ইয়েস স্যার।”
আরমান আবারও গম্ভীর গলায় বলে উঠলো, “আজ থেকে সবাই মিস মায়ারও অর্ডার মেনে চলবেন এটাই আমার অর্ডার।”
সকলে আবারও সমস্বরে “ইয়েস স্যার” বলে উঠলো।
এরপর আবির মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো, “মায়া! তুমি কিছু বলতে চাও? চাইলে বলতে পারো।”
মায়া সায় জানিয়ে বলল, “আমি আমার কাজ বুঝে নিয়ে সকল ডিজাইনারের সাথে মিটিং করতে চাই। আর সকলকে কাজ বুঝিয়ে দিতে আমার এই মিটিং রুমটা প্রয়োজন হবে।”
আরমান:- “মিস মায়া! আপনি আপনার সকল কাজের আপডেট দিয়ে আপনি আপনার মতো কাজ করতে পারেন কোনো অসুবিধা নেই।”

মায়া:- “ঠিক আছে স্যার। আমি আজকের দিনটা সময় চাই। আমি আমার কাজ আজকেই শুরু করবো। আর কালকে সকলের সাথে মিটিং সেরে কালকেই সকলের কাজ বুঝিয়ে দেবো।”
আবির:- “ঠিক আছে? সবাই শুনে নিয়েছেন? তো অফিস টাইম ১০:৩০ এ তো সবাই ঠিক ১১ টা সময় মিটিং রুমে উপস্থিত থাকবেন। কাল মিস মায়া আপনাদের সকলকে আপনাদের কাজ বুঝিয়ে দেবে। আজকের মিটিং এখানেই শেষ হলো। আপনারা সবাই যে যার কাজে যেতে পারেন।”

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ১২

আবিরের কথা শেষ হতেই সবাই একে একে বেরিয়ে গেলো মিটিং রুম থেকে। মিস দিশা বেরোনোর সময় মায়ার দিকে ঘুরে একবার জলন্ত চোখে তাকালো। তা কারোর চোখে না পড়লেও আরমানের চোখে ঠিকই পড়লো।
সবাই বেরিয়ে যেতেই মিটিং রুমে এখনো রয়ে গেলো আবির, আরমান, মিরাজ আর মায়া।

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ১৪