আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ১৪
সালমা খাতুন
আরমান:- “আবির! মায়ার জন্য আমার কেবিনের সামনে যেই কেবিনটা আছে ওটা রেডি করতে বল। আর মিরাজকে আজকের মধ্যেই সব কাজ বুঝিয়ে দে। আর মায়া! তুমি তোমার কাজের প্রতিটা আপডেট আমাকে দেবে।”
মায়া:- “ঠিক আছে স্যার।”
আরমান ওর কথা শেষ করে উঠে চলে গেলো। আবির, মায়া আর মিরাজের উদ্দেশ্য বলল, “চলো আপতত মায়ার কেবিন রেডি করতে বলে তোমাদের পুরো অফিস ঘুরিয়ে দেখাই।”
ওরা সায় জানিয়ে আবিরের সাথে বেরিয়ে গেলো। আবির প্রথমে আরমানের কেবিনের সামনের ছোটো কেবিনটা খুলে দিলো মায়ার জন্য। তারপর ওদের অফিস যারা পরিস্কার করে তাদের একজনকে বলল, পরিস্কার করে দিতে। এরপর ওদেরকে নিয়ে পুরো অফিস ঘুরতে শুরু করলো।
আবির কিছুটা অবাক হলো, আরমান মায়াকে তার সামনের কেবিন টা দেওয়াই। মিস দিশাও হেড ডিজাইনার হলেও ওকে সকল ডিজাইনারের সাথে বসেই কাজ করতে হয়েছে। মিস দিশাকে কোনো পার্সোনাল কেবিন দেওয়া হয়নি। কিন্তু আরমান মায়াকে পার্সোনাল কেবিন দিলো। আর সবথেকে বড়ো কথা হলো, আরমান আর মায়ার কেবিনের মাঝের দেওয়ালটা কাঁচের তৈরি। যার কারণে আরমান চাইলে নিজের কেবিনে বসে মায়ার কেবিনের পুরো দৃশ্য দেখতে পাবে। কিন্তু মায়ার কেবিন থেকে আরমানের কেবিনের দৃশ্য দেখা যাবে না। আর এই বিষয়টা এই অফিসের কেউ জানে না। কারণ আরমানের কেবিনে ওই কাঁচের দেওয়ালটা সব সময় পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আর এটাই আবিরের মাথায় ঢুকছেনা যে মায়াকে ওই কেবিনটা কেন দিলো। আরমান ওই কেবিনটা এমনিই স্পেশাল ভাবে বানিয়ে ছিল। আজ পর্যন্ত ওই কেবিনটা কাউকে দেয়নি আরমান। তাই বিষয়টা আবিরকে ভীষণ ভাবাচ্ছে।
পুরো অফিস ওদেরকে দেখাতে দেখাতে লাঞ্চ এর সময় হয়ে গেলো। তাই আবির ওদের নিয়ে ক্যান্টিনে গেলো। তারপর যে যার মতো লাঞ্চ অর্ডার দিয়ে খেতে শুরু করলো। খাওয়ার মাঝেই আবিরের ফোন বেজে উঠলো। ফোনের দিকে তাকাতেই দেখলো স্ক্রীনে আরমানের নাম ভেসে উঠছে। আরমান কল করেছে দেখে, আবির জিভ কাটলো। আরমান নিশ্চয় ওকে খেতে ডাকার জন্য কল করেছে। কারণ ওরা অফিসে প্রতিদিন দুজন আরমানের কেবিনে বসেই লাঞ্চ করে। আজ মায়াদের সাথে থাকায় ওর মাথা থেকে একদম আরমানের কথা বেরিয়ে গেছিল।
মায়া আবিরকে জিভ কাটাতে দেখে জিজ্ঞেস করল, “কি হলো ভাইয়া? কোনো সমস্যা? কে কল দিয়েছে?”
আবির:- “না কোনো সমস্যা না। আরমান কল দিয়েছে।”
আবির কল রিসিভ করতেই আরমান গম্ভীর গলায় বলল, “আমাকে ছাড়াই লাঞ্চ শুরু করে দিলি?”
ওরা ক্যান্টিনে কোনার দিকে বসে ছিল। আবির উপড়ে দিকে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় তাকিয়ে বোকা বোকা হেসে বলল, “সরি ভাই, আসলে তোর কথা মনে ছিল না।”
আবির ওই দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে বলল যেনো আরমান ওইখান দিয়ে ওকে দেখতে পাচ্ছে। মায়া আর মিরাজ অবাক হলো এটা দেখে। ওরাও আবিরের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো, কিন্তু একটা খুব সুন্দর ডিজাইনের লাইট ছাড়া কিছু দেখতে পেলো না।
মিরাজ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “স্যার ওখানে কি আছে?”
আবির তাড়াতাড়ি ওখান থেকে চোখ সরিয়ে বোকা হেসে বলল, “কোই কিছু না তো।”
মিরাজ:- “আপনি এমন ভাবে ওইদিকে তাকিয়ে কথা বলছেন যেনো মনে হচ্ছে ওইখান স্যার আছে।”
আবির:- “ওহ কিছু না। আমি এমনিই ওইদিকে তাকিয়ে বললাম।”
আরমান গম্ভীর গলায় বলল, “আমার লাঞ্চ এখনো আসেনি। তাড়াতাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা কর।”
এরপর আবির কলে থাকা আরমানকে বলল, “সরি স্যার, আমি আপনার লাঞ্চ এখনি পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।”
এদিকে আরমান নিজের কেবিনে বসে ওর ল্যাপটপ দিয়ে ক্যান্টিনের ফুটেজ দেখছিল জলন্ত চোখে। এই অফিসের প্রতিটি কোনায় হিডেন ক্যামেরা আছে, যা কেউ জানে না। জলন্ত চোখে দেখার কারণ, মায়া। মায়া আর মিরাজ এমন ভাবে গল্প করছে যেনো ওরা কতদিনের চেনা। মায়াকে ওর ভীষণ গায়ে পড়া স্বভাবের মনে হচ্ছে। তা নাহলে সব ছেলেদের সাথেই এমন হেসে হেসে কথা বলতে হবে কেন? আবির কি কম ছিল যে এখন এই মিরাজ এসে হাজির হলো।
এদিকে আবির কল কেটে একজন ওয়েটারকে ডেকে বলল, আরমানের লাঞ্চ টা ওর রুমে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে। অনেক দেরি হয়ে গেছে, এখনো আরমানের লাঞ্চ দেওয়া হয়নি।
এরপর ওরা তিনজন আবারও গল্প করতে করতে খাওয়া শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর ওই ওয়েটার এসে জানালো আরমানের লাঞ্চ আজকে বাড়ি থেকে আসেনি। আবির কিছুটা অবাক হলো এটা শুনে। ও তাড়াতাড়ি কল লাগালো রুবিকে। রুবিকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে ও বলল, আরমান স্যার ওকে তো এক মাস কাজ থেকে ছুটি দিয়েছিল। তাই ও ছুটিতে বাড়ি গেছে, স্যারের অনুমতি নিয়েই। আর ওর জায়গায় তো মায়া কাজ করছিল তাই এই দায়িত্ব টা তো মায়ারই ছিল।
আবির কাকে কি বলবে বুঝতে পারলো না। মায়ার দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকালো। মায়া সেটা দেখে বলল, “কি হয়েছে ভাইয়া? খাবার আসেনি কেন বাড়ি থেকে?”
আবির:- “রুবি নেই ও ওর গ্রামের বাড়ি গিয়েছে। আর এই দায়িত্ব নাকি তোমার ছিল।”
মায়া অবাক হয়ে বলল, “কিন্তু আমি তো এই বিষয়ে কিছু জানতাম না ভাইয়া। শুধু আমাকে কালকে বলেছিল রান্না করে অফিসে আনতে। আর আজ তো আমি অফিসে আছি।”
আবির কি বলবে বুঝতে পারলো না। এতে মায়ার ও কোনো দোষ নেই। মায়াও এতো কিছু জানেনা।
আবির আরমানকে যে প্রতিদিন খাবার দেয় তাকে ক্যান্টিন থেকে খাবার নিয়ে দিতে বলল। এরপর মায়াকে ওর কেবিন দেখিয়ে দিয়ে ওকে ওর কাজ শুরু করতে বলল। তারপর ও মিরাজ কেও একটা ডেস্ক দেখিয়ে দিয়ে ওকে ওর কাজ করতে বলল। তারপর ও গেলো আরমানের কেবিনে।
তখন খাবার নিয়ে আসা ব্যাক্তি খাবার সার্ভ করছে। খাবার সার্ভ করা হয়ে গেলে সে চলে গেলো। আর আরমান আবিরকে ঢুকতে দেখে ওর দিকে তাকিয়েও কোনো রকম এক্সপ্রেশন দিলো না। চুপচাপ গিয়ে সোফায় বসল। তারপর কোনো রকম এক্সপ্রেশন ছাড়াই আবিরকে বলল, “আজকে বাড়ি থেকে খাবার আসেনি তাই তো?”
আবির মুখে কিছু না বলে শুধু উপড় নীচ মাথা নাড়ালো। আরমান আর কোনো দিকে না তাকিয়ে নিজের খাওয়াই মন দিলো। আবির কি করবে বুঝতে না পেরে বেরিয়ে গেলো।
রাত আটটা….
সন্ধ্যা ৬ টার সময় অফিস ছুটি। সকলের সব কাজ সেরে বেরোতে সাতটা বেজে যাই। মানে সাতটার মধ্যেই পুরো অফিস ফাঁকা হয়ে যাই। আবির নিজের কেবিনে বসে কাজ এতোটাই মগ্ন ছিল যে কখন আটটা বেজে গেছে দেখেনি। ও ওর কাজ শেষ বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে। দেখলো পুরো অফিস এখন ফাঁকা। ও আরমানের কেবিনে যাওয়ার সময় দেখলো মায়া এখনো এক ধ্যানে কাজ করছে। কোনো দিকে খেয়াল নেই। হয়তো কোনো ড্রেসর ডিজাইন করছে। আর ড্রেস ডিজাইনের কাজ এমনই। একবার শুরু করলে শেষ করা না পর্যন্ত অন্য কোনো দিকে খেয়াল থাকে না। আবিরের মাথায় একটা কুবুদ্ধি খেলে গেলো। ও জানে আরমান এখনো অফিসে আছে। তাই ও আর কাউকে না সারিয়ে চুপচাপ বেরিয়ে গেলো অফিস থেকে।
তারপর একাই নিজের গাড়ি নিয়ে রওনা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিছুদূর গিয়ে কল লাগালো আরমানের নাম্বারে। আরমান রিসিভ করতেই ও বলল, “বলছি শোন না। মায়া এখনো কাজ করছে অফিসে, তুই আসার সময় ওকে একটু সাথে করে নিয়ে আসবি প্লিজ। আমার অনেকক্ষন কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল তাই চলে এসেছি। ও তখনো কাজ করছিল না হলে আমি আমার সাথে করেই নিয়ে আসতাম।”
আরমান:- “তুই তো এই একটু আগে গেলি। আমি স্পষ্ট দেখেছি তুই আমার কেবিনে আসছিলি কিন্তু মাঝপথ থেকে ফিরে গেলি। আর এখন নাটক করছিস?”
আবির:- “আরে নাটক কেন করবো? আমি মায়াকেই দেখতে গিয়েছিলাম। ও তখনো কাজ করছিল। তাই ওকে আর সারাইনি। প্লিজ ওকে একটু তোর সাথে করে নিয়ে আসিস, একা একটা মেয়েকে এই রাতে এইভাবে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। তুই তো জানিস বল।”
আবিরের কথা শেষ হতেই আরমান ফোন কেটে দিলো। আর আবির “ইয়েস” বলে চিৎকার করে উঠলো। আবির জানে এখন আরমান কিছুতেই মায়াকে একা ছাড়বে না। আর ও এটাই চাইছিল।
এদিকে আরমান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার সামনের কেবিনে কর্মরত মায়ার দিকে। মায়া কাজ করতে এতোই ব্যাস্ত যে তার কোনো দিকে খেয়াল নেই। আরমান জানে না ও এইভাবে কেন তাকিয়ে আছে। শুধু জানে ওর ইচ্ছে করছে তাই এইভাবে তাকিয়ে আছে। ওই কাঁচের দেওয়ালের পর্দা টা সরানোর পর থেকেই কেন জানি একদম নিজের কাজে মন বসাতে পারছিল না ও। শুধু বার বার মায়ার দিকেই নজর চলে যাচ্ছিল। তাই এখন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
অনেকক্ষন পর আরমান ওই দেওয়ালের পর্দা টা টেনে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর ওর ল্যাপটপ ও জরুরি কিছু ফাইল একটা ব্যাগে ভরে নিয়ে, রুমের লাইট অফ করে দিয়ে, দরজা লক করে বেরিয়ে গেলো। তারপর মায়ার কেবিনের সামনে গিয়ে দরজায় টোকা দিলো।
দরজায় টোকা দেওয়ার শব্দে মায়া মুখ তুলে তাকালো দরজার দিকে। দেখলো সেখানে আরমান দাঁড়িয়ে আছে।
আরমান মায়াকে ওর দিকে তাকতে দেখে বলে উঠল, “কাজের দায়িত্ব নিয়েছো বলে কি সারারাত কাজ করবে? বাড়ি যাবার ইচ্ছে নেই?”
মায়া তাড়াতাড়ি ওর ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ৮:৫০ বাজে। ও অবাক হয়ে বলল, “আল্লাহ এতোটা সময় হয়ে গেছে? আর আমি খেয়ালই করেনি। আজ আর পাপাকে দেখতে যাওয়া হলো না।”
আরমান:- “তাড়াতাড়ি আসো মিস। অনেক লেট হয়ে গেছে আজ, আবার বাইরের আবহাওয়াও ভালো না।”
মায়াও তাড়াতাড়ি ল্যাপটপ বন্ধ করে মোবাইল টা ব্যাগে ভরে উঠে এলো। ও আসতেই আরমান ওর ব্যাগটা “ধরো” বলেই মায়ার হাতে ধরিয়ে দিলো। আর মায়া তাড়াহুড়োই ব্যাগটা সামলে নিয়ে বলল, “এই আপনার ব্যাগ আমি কেন নেবো?”
আরমান সামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলল, “আমি বলেছি তাই নেবো।”
মায়া চেতে গিয়ে আরমানের পিছনে পিছনে যেতে বলল, “বয়েই গেছে আমার আপনার ব্যাগ বোয়াতে। ধরুন আপনি আপনার ব্যাগ।”
আরমান দাঁড়িয়ে গিয়ে পিছনে ঘুরে রাগী গলায় বলল, “একদম চুপ। বেশি কথা বলা আমার একদম পছন্দ না। তাই চুপচাপ আসো।”
মায়া আরমানের রাগী গলার আওয়াজ শুনে একদম চুপসে গেলো। আরমান আবারও সামনের দিকে ঘুরে হাঁটা ধরলো। মায়াও আর কিছু না বলে চুপচাপ আরমানের পিছু নিলো। কিছুটা আসার পর যখন মায়া দেখলো অফিসে ওরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই পুরো অফিস ফাঁকা তখন মায়া কিছুটা ভয় পেলো। কিন্তু তা নিজের চেহেরায় প্রকাশ করলো না।
মায়া:- “আবির ভাইয়া কোথায়? উনাকে তো দেখছি না?”
আরমান লিফটে প্রবেশ করতে করতে বলল, “আবির অনেকক্ষণ হলো চলে গেছে।”
মায়া অবাক গলায় বলল, “আমাকে না নিয়েই চলে গেলো?”
মায়া তখনো লিফটের বাইরে দাঁড়িয়ে আর আরমান লিফটে। লিফটের দরজা বন্ধ হতে যাচ্ছিল কিন্তু আরমান হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল, “হ্যাঁ তোমার আবির ভাইয়া তোমাকে না নিয়েই চলে গেছে। এখন তোমার কি এখানেই থাকার ইচ্ছে আছে?”
মায়া তাড়াহুড়ো করে লিফটে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “নাহ!! এই তো আসছি।”
বলেই লিফটে উঠে গেলো। তারপর নিচে এসে আরমান একজন সিকিউরিটিকে বলল পুরো অফিসের লাইটা অফ করে সবকিছু ঠিক আছে কিনা দেখে নিয়ে তালা দিয়ে দিতে। এই অফিসেও অনেক গার্ড আছে গার্ড দেওয়ার জন্য। তাদের মধ্যে বিশ্বস্ত একজনের কাছে এই অফিসের চাবি থাকে। দুইজন আরমানের কথা মতো গেলো সব কিছু ঠিকঠাক আছে কিনা দেখতে। এটা ওদের রোজকার কাজ।
আরমান মায়াকে দাঁড়াতে বলে গাড়ি আনতে গেলো। আরমান গাড়ি নিয়ে এসে মায়াকে উঠতে বললে মায়া বললে, “আমি আপনার সাথে যেতে পারবো না।”
আরমান রেগে বলল, “আমার সাথে একদম নাটক করবে না। অনেক টা দেরি হয়ে গেছে। আকাশের অবস্থাও ভালো না।”
মায়া আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেঘ গুরগুর করছে। যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে। আর আলমানের অফিস থেকে মেন রোড যেতে অনেকটা। এখানে কোনো ক্যাবই পাবে না। তাছাড়া ক্যাবের ড্রাইভারের থেকে আরমানই বেশি বিশ্বস্ত।
মায়া এসব ভাবতে ভাবতে আবারো আরমানের ধমকানো আওয়াজ শুনতে পেলো, “এই মেয়ে তোমার কানে কথা ঢোকে না? এসো বলছি!!”
মায়া আরমানের ধমকে চমকে উঠে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে বসলো। মায়া উঠে বসতেই আরমান গাড়ি স্টার্ট দিলো। এরপর ওরা রওনা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।
কিছুদূর যেতে না যেতেই বৃষ্টি শুরু হলো। সাথে ঝোড়ো হাওয়া। আস্তে আস্তে বৃষ্টির বেগ বাড়তে লাগলো। সাথে প্রচন্ড জোড়ে বজ্রপাতে। ওরা অর্ধেক রাস্তা চলেই এসেছে। আর অর্ধেক টা গেলেই বাড়ি পৌঁছে যাবে। ঠিক তখনি ওদের গাড়িটা জোড়ে আওয়াজ তুলে বন্ধ হয়ে গেলো। আর এদিকে মায়া ভয়ে সিঁটিয়ে গেছে। রাস্তার ধারের গাছ গুলো এতো দুলছে যেনো মনে হচ্ছে ভেঙে ওদের গাড়ির উপর পড়বে। এদিকে আরমান অনেক চেষ্টা করার পরও গাড়ি স্টার্ট নিলো না। তখনি কিছুটা দূরে জোড়ে বজ্রপাত হল। আর ওদের সামনেই একটা গাছ মরমর করে আওয়াজ তুলে ভেঙে পড়লো। মায়া ভয়ে চিৎকার করে উঠলো। অতিরিক্ত ভয় পেয়ে মায়া কাঁপতে শুরু করলো। এমন পরিস্থিতিতে কখনো পরেনি। আর এমনিতেও বজ্রপাতে ভীষণ ভয় পাই মায়া। আগে যখন বজ্রপাত হতো তখন মায়া ওর পাপার একদম বুকের কাছে বসে থাকতো। ছোটো থেকেই বজ্রপাতে ভীষণ ভয় পাই মায়া। এখন তো আবার ওরা মাঝ রাস্তায় আছে। চারিদিকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আসেপাশে গাছ ভেঙে পড়ছে। এতোকিছু দেখে ভয়ে মায়ার প্যানিক অ্যাটাক শুরু হলো। কেমন থরথর করে কাঁপতে লাগলো ও। মুখ দিয়েও আর কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না।
এদিকে আরমানও মায়ার এমন অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেলো। মায়া সামনের সিটে আরমানের পাশেই বসেছিল। আরমান তাড়াতাড়ি মায়ার কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকে টেনে নিলো। তারপর বলতে লাগলো, “মায়া প্লিজ রিলাক্স। ভয় পেয়ো না। কিচ্ছু হবে না। আমি আছি তো।”
আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ১৩
আরমান বলতে বলতেই মায়া জ্ঞান হারালো।
আরমান:- “ওহ নো। জ্ঞান হারিয়ে ফেলল ও। ড্যাম ইট!! এখন কি করি?”
এখনো চারিদিকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বৃষ্টি থামার বদলে বাড়ছে। আরমান কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। মাথার উপরের গাছ গুলো মনে হচ্ছে ভেঙে পড়বে গাড়ির উপড়ে। না গাড়িতে থাকাটা রিস্কি হয়ে যাবে। দূরে বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় একটা ছোটো চায়ের দোকানের মতো দেখা যাচ্ছে। কিন্তু দোকান টা ভিতরে থেকে বন্ধ। আসেপাশে আর কোনো ঘরবাড়ি নেই। চারিদিকে গাছপালা। আরমান আর কিছু না ভেবে মায়াকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে অনেক কষ্টে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো। তারপর হাঁটা ধরলো ওই চায়ের দোকানের মতো ছোট ঘরটির দিকে। মায়ার মাথা টা ভালো করে বুকে চেপে ধরলো। ঝড়ের এতোটাই বেগ যে হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছে আরমানের। অতো স্বাস্থ্যবান মানুষটাকেও মনে হচ্ছে উড়িয়ে ফেলে দেবে।