আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ১৯
সালমা খাতুন
মায়া এবার ছলছল চোখে তাকালো আরমানের দিকে। আরমানও তখন মায়ার চোখের দিকেই তাকিয়ে। যেন বলতে চাইছে, “কি মিস মায়া? কোথায় গেলো তোমার কনফিডেন্স?”
মিস্টার ড্যানিয়েল:- “মিস্টার হারমান খি হচ্ছে এটা? হামার ডিজাইন খোথায়?”
সবাই যেনো থমকে গেছে। কি হচ্ছে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। আবির মিস্টার ড্যানিয়েল কে বোঝানোর চেষ্টা করে বলল, “মিস্টার ড্যানিয়েল আপনি একটু শান্ত হন প্লিজ। আপনার সব ডিজাইন রেডি আছে। আর মায়া নিজে রেডি করেছে সবকিছু। ওই ফাইলের সাথে হয়তো এই ফাইল গুলো পাল্টাপাল্টি হয়ে গেছে কোনো ভাবে। আপনি একটু বসুন প্লিজ। আমরা দেখছি।”
মায়া:- “হ্যাঁ মিস্টার ড্যানিয়েল আপনি প্লিজ একটু শান্ত হয়ে বসুন। আমি নিজে আপনার সব ডিজাইন রেডি করেছি। আপনি আমাকে একটু সময় দিন, আমি এখনি নিয়ে আসছি আপনার ডিজাইন।”
মিস্টার ড্যানিয়েল একটু শান্ত হলো যেন। উনি মায়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “ঠিক হাছে মিস মাইহা। হামি হাফনাকে 20 মিনিটস টাইম দিচ্ছি। হের মধ্যে ডিজাইন হামার সামনে নিইহে হাসুন।”
মায়া বিনয়ী স্বরে বলল, “ অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মিস্টার ড্যানিয়েল। আমি এখনি ডিজাইন এর ফাইল আনার ব্যবস্থা করছি।”
এরপর মায়া আরমানের দিকে তাকিয়ে বলল, “প্লিজ স্যার একটু আসুন না।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরমান মায়ার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর মিরাজকে উদ্দেশ্য করে বলল, “মিরাজ, উনাদেরকে ড্রিঙ্কস, নাস্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করো। আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি। ড্যাড তোমরা থাকো।”
আরমানের বাবাও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। এরপর আরমান, মায়া, আবির তানিশা বেরিয়ে গেলো। ওরা প্রথমেই মায়ার কেবিনে গেলো তারপর পুরো তন্ন তন্ন করে গোটা কেবিন খুঁজলো মায়া আর তানিশা মিলে। কিন্তু কোথাও সেই ফাইল পেলো না। আরমান তখনো নির্বাক। যেনো কিচ্ছু হয়নি। ও চুপচাপ নিজের কেবিনে গিয়ে বসলো। বাকিরাও গেলো ওর পিছন পিছন। আবির বলল, “এখন কি হবে? আর ফাইল দুটোই বা কোথায় গেলো।”
তানিশা কিছুটা দ্বিধা নিয়ে বলল, “স্যার কিছু মনে না করলে আমি একটা কথা বলি?”
আবির:- “হ্যাঁ বলো।”
তানিশা:- “আমার মনে হচ্ছে ফাইল দুটো কেউ ইচ্ছে করেই সরিয়েছে। আর তার জায়গায় ওই একই রকম দেখতে ফাইল দুটো রেখে দিয়েছে। না হলে ওই ফাইল দুটো কোথা থেকে আসবে।”
মায়া:- “কিন্তু ফাইল দুটো আমি কাল আমার টেবিলেই রেখে গেছিলাম। আর আমার কেবিন আমি নিজেই লক করেছিলাম। চাবিও আমার কাছেই ছিল। আবার আজ অফিসে এসে আমি নিজেই কেবিনের দরজা খুলেছি। তখনো সব ঠিকঠাকই ছিল। এরই মধ্যে ফাইল গুলো কি হলো আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।”
তানিশা:- “তাহলে ডিজাইনের ফাইল গুলো কোথায় গেলো? ওই ফাইল দুটোও একই রকম দেখতে, কিন্তু ওতে কোনো ডিজাইন নেই।”
আরমান গম্ভীর গলায় বলল, “এখন এইসব কথা বলে কি হবে মিস তানিশা? যদি ফাইল দুটো কেউ সরিয়েও থাকে তাহলে সেটাও মিস মায়ার দোষ। উনি এতোটা ইরেসপন্সিবল কি করে হতে পারল?”
এরপর আরমান মাথা নিচু করে থাকা মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “কি মিস মায়া? কনফিডেন্স শেষ? পারলে না তো তুমি তোমার দায়িত্ব পালন করতে? শুধু দক্ষতা নয়, দায়িত্ববোধও দরকার—যাতে করা কাজটি যত্ন করে টিকিয়ে রাখা যায়।”
আবির মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে গেলো। ও নিজেও জানে না এখন কি হবে। মায়া আরমানের কথার কোনো উত্তর দিলো না। ও শুধু এগিয়ে এসে আরমানের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “আপনার ওয়ারড্রোবের চাবিটা একবার দেবেন প্লিজ!!”
আরমান মায়ার এমন কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালো। আবির এতক্ষণ সোফায় মাথায় হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসেছিল, মায়ার এমন কথায় ও ও মাথা তুলে মায়ার দিকে তাকালো। এদিকে মায়া তখনো আরমানের দিকে হাত পেতে দাঁড়িয়ে আছে।
এটা দেখে আরমান এগিয়ে গেলো ওর টেবিলে থাকা ড্রয়ারের কাছে। তারপর ওয়ারড্রোবের চাবি ওখান থেকে বের করে মায়ার হাতে দিয়ে দিলো চুপচাপ। আরমানও দেখতে চাই মায়া কি করতে পারে।
এদিকে মায়া ওয়ারড্রোবের দিকে এগিয়ে গিয়ে, ওয়ারড্রোবের লক খুলে দুটো ফাইল বের করলো। আর তার সাথে একটি ছোটো বক্স। ওগুলো বের করে ওয়ারড্রোব আবারও লক করে আরমানের সামনে এসে, ফাইল এগিয়ে দিয়ে বলল, “এই নিন ডিজাইনের আসল ফাইল। আর আমি আমার কেবিনের টেবিলে যেটা অযত্নে রেখে গেছিলাম সেটা ছিল এই ফাইলের কপি। এই ফাইল গুলোতে আসল ডিজাইন গুলো আছে। আর যেই ফাইল দুটো হারিয়ে গেছে সেই গুলোতে এই আসল ডিজাইনের কপি গুলো ছিল। আমি আসল ফাইল এর সাথে কপিও রেডি করে ছিলাম। যদি কোনো অসুবিধা হয় এটা ভেবেই। কিন্তু ভাবতে পারিনি এভাবে কাজে লেগে যাবে।”
আবির তাড়াতাড়ি উঠে এসে মায়ার হাত থেকে ফাইল গুলো নিয়ে খুলে দেখতে শুরু করলো। হ্যাঁ এতে সব ডিজাইন আছে। আবির তো খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।
আবির:- “ওহ থ্যাঙ্ক গড। এই তো সব ডিজাইন এখানে আছে। ওহ আল্লাহ! কি যে বলবো আমি খুঁজে পাচ্ছি না। এতোক্ষণ মনে হচ্ছিল আমার প্রাণ টাই বেরিয়ে যাচ্ছে।”
আরমানও ভীষণ অবাক হলো। ও নিজেও আবিরের থেকে ফাইল নিয়ে দেখতে শুরু করলো। হ্যাঁ! এই তো সব ডিজাইনই ঠিকঠাকই আছে। আরমান নিজেও একটা ঝটকা খেলো যেনো। ও সত্যিই ভাবতে পারিনি মায়া এতোটা বুদ্ধিমতি।
মায়া:- “আসলে এই ফাইল দুটো আমি কালকে ফেরার আগে আপনার কেবিনে এসে রেখে গিয়েছিলাম। আপনি তখন ছিলেন না, হয়তো ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন। এদিকে আমার দেরি হয়ে গিয়েছিল বলে আপনাকে না জানিয়েই, ফাইল দুটো ওয়ারড্রোবে রেখে চলে গিয়েছিলাম।”
এরপর মায়া ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল আবিরের কাছে।
ওর হাতে থাকা বাক্সটা খুলে ভেতর থেকে একটা ছোট মেমোরি কার্ড বের করল।
আবিরের দিকে কার্ডটা এগিয়ে দিয়ে বলল, “ভাইয়া, এটা নিন। মিটিং রুমে যে প্রজেক্টরটা আছে, ওখানে লাগিয়ে দেবেন।
কিছু ভিডিও রেডি করেছি এই মেমোরি কার্ডে।
একেকটা ক্যাটাগরির ড্রেস আলাদা করে ভিডিও বানিয়েছি, সব একসাথে দেখাতে সুবিধা হবে।”
আরমান আর আবির মায়ার কাজ দেখে অবাক হয়ে গেল। মায়া এমন কিছু করবে, ওরা কল্পনাও করেনি। আরমান তো নিজের কাছে নিজেই ভুল প্রমাণিত হলো, কিন্তু তাতেও তার খারাপ লাগছে না—বরং সে ভীষণ খুশি। ও কখনো ভাবেনি মায়া এমন কিছু করতে পারে। সত্যি, মেয়েটার মধ্যে ট্যালেন্ট আছে—আর সেটা ওর কাজের মধ্যেই প্রমাণ করে দিল।
এরপর আবির বলল, “আচ্ছা চলো। দেরি হয়ে যাচ্ছে। মিস্টার ড্যানিয়েল অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।”
এরপর আরমান ফাইল দুটো মায়ার হাতে দিয়ে বেরিয়ে গেলো। পিছু পিছু ওরা তিনজনও গেলো।
আরমান প্রথমে গিয়ে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত সোফায় গিয়ে বসলো। এরপরই মায়ারা রুমে প্রবেশ করলো। মায়াকে ঢুকতে দেখেই মিস্টার ড্যানিয়েল বলে উঠলেন, “মিস মাইহা! খোথায় হামার ডিজাইন?”
মায়া হাসি মুখে হাতে ফাইল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে, মিস্টার ড্যানিয়েল এর সামনে রাখলো।
মায়া:- “এই নিন আপনার ডিজাইন। এতে সব আছে দেখুন।”
আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ১৮
বলেই মায়া নিজের জায়গায় বসলো। এদিকে মিস্টার ড্যানিয়েল একবার সবার দিকে তাকিয়ে নিয়ে, ফাইল হাতে তুলে নিলো। এরপর উল্টে দেখতে শুরু করলো। প্রথম পাতা উল্টাতেই মিস্টার ড্যানিয়েল এর রাগী রাগী মুখটা খুশিতে চকচক করে উঠলো। এদিকে মিস্টার ড্যানিয়েল এর মুখের এমন রিয়্যাকশন দেখে ওই রুমে থাকা সবাই সস্তির শ্বাস ছাড়লো। শুধু আরমান ও মিস দিশা বাদে। আরমান সব সময়ের মতোই ভাব শূন্য হয়ে বসে আছে। আর এদিকে মিস দিশার খুশি খুশি মুখটা চুপসে গেলো, মিস্টার ড্যানিয়েল এর খুশিতে চকচক করা মুখটা দেখে। দিশা যেন অনেক বড়ো একটা ঝটকা খেয়েছে।