আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ২০
সালমা খাতুন
এদিকে মিস্টার ড্যানিয়েল এর মুখের এমন রিয়্যাকশন দেখে ওই রুমে থাকা সবাই সস্তির শ্বাস ছাড়লো। শুধু আরমান ও মিস দিশা বাদে। আরমান সব সময়ের মতোই ভাব শূন্য হয়ে বসে আছে। আর এদিকে মিস দিশার খুশি খুশি মুখটা চুপসে গেলো, মিস্টার ড্যানিয়েল এর খুশিতে চকচক করা মুখটা দেখে। দিশা যেন অনেক বড়ো একটা ঝটকা খেয়েছে।
দিশা বুঝতে পারছে না এটা কি হলো। সবটা যেন ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ওর এতো সুন্দর করে করা পরিকল্পনা পুরোটাই ভেস্তে গেলো, এটা যেনো ও কিছুতেই মানতে পারছে না। ও কিছুটা মাথা উঁচু করে ডিজাইন গুলো দেখার চেষ্টা করলো। দেখলো সেই একই ডিজাইন গুলো আছে। এটা কিভাবে কি হলো ও কিছুতেই বুঝতে পারছে না।
আরমান মিস দিশাকে এমন করতে দেখে গম্ভীর গলায় বলল, “কি হলো মিস দিশা? কোনো প্রবলেম?”
দিশা জোড় করে মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে বলল, “না না স্যার। নো প্রবলেম। আ..আমি একটু আসছি।”
বলেই দিশা আর এক মুহূর্তও ওখানে থাকলো না। উঠে দাঁড়িয়ে বেরিয়ে গেলো মিটিং রুম থেকে। দিশাকে এভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে সবাই কিছুটা অবাক হলেও কেউ কোনো পাত্তা দিলো না। কিন্তু আরমান একটা বাঁকা হাসি দিলো। তারপর ফোনে কি যেন টাইপ করে ম্যাসেজ দিলো মিরাজের নাম্বারে। মিরাজ ম্যাসেজ এর টোন শুনে ফোন অন করে দেখলো তার সামনে বসে থাকা স্যারের ম্যাসেজ। মিরাজ মুখে তুলে তাকালো তার স্যারের দিকে। আরমানও তাকিয়ে ছিল ওর দিকে। এরপর মিরাজ এক্সকিউজ মি বলে নিজেও বেরিয়ে গেলো মিটিং রুম থেকে।
আর এদিকে মিস্টার ড্যানিয়েল একমনে ডিজাইন দেখতে ব্যাস্ত। উনি একটা ফাইল শেষ করতেই হাঁপিয়ে উঠলেন যেনো। উনি বললেন, “মিস মাইহা, কি ডিজাইন ভানিয়েছেন। যাস্ট হসাধারণ। খিচ্ছু ভলার নেইহ।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আবির:- “আরে এখনো বাকি আছে তো। আপনি একশো ডিজাইন রেডি করতে বলেছিলেন আর মিস মাইহা দুইশো ডিজাইন রেডি করেছে। ওগুলোও একটু দেখুন।”
মিস্টার ড্যানিয়েল:- “হারো ডিজাইন হাছে?”
আবির এগিয়ে এসে অন্য ফাইল টা দেখালো, “হ্যাঁ এটাতে আছে। দাঁড়ান আপনাকে আর কষ্ট করে খুলে দেখতে হবে না। এতে আপনার হাতে ব্যাথা করতে পারে। একটু ওয়েট করুন।”
বলেই আবির এগিয়ে গিয়ে মায়ার দেওয়া মেমোরি কার্ডটি প্রজেক্টরে সংযুক্ত করল। প্রথমেই বড়ো টিভির স্ক্রিনে ভেসে উঠল আরমানের কোম্পানির লোগো। তার ঠিক পরেই একে একে ভেসে উঠতে লাগল মায়ার বানানো নানান ডিজাইন।
রুমের সমস্ত জানালার পর্দা টেনে দেওয়া, চারপাশে নেমে এসেছে এক ধরনের মৃদু অন্ধকার। পুরো রুমে রঙবেরঙের মৃদু আলো। তার সঙ্গে বাজছে হালকা সফ্ট মিউজিক—শান্ত, অনুভবী। ঘরটা আগে থেকেই সাজানো ছিল অত্যন্ত যত্নে, খুব সুন্দর মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।
টিভির স্ক্রিনে মায়ার একের পর এক সৃষ্টিশীল ডিজাইন ভেসে উঠছে। এভাবেই যে কতক্ষন সময় কেটে গেলো কেউ টের পেলো না। সবাই যেন একটা ঘোরের মধ্যে থেকে টিভির স্ক্রিনে তাকিয়ে ছিল। ডিজাইন শেষ হতেই সবাই ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো যেনো।
মিস্টার ড্যানিয়েল উঠে দাঁড়িয়ে হাত তালি দিতে শুরু করলেন। আর উনার দেখা দেখি বাকি সবাই উঠে দাঁড়িয়ে হাত তালি দিতে লাগলো। আরমান নিজেও মুগ্ধ মায়ার ডিজাইন গুলো দেখে। যদিও ও ডিজাইন গুলো আগেই দেখেছে। ও নিজেও উঠে দাঁড়ালো কিন্তু হাত তালি দিলো। চুপচাপ গম্ভীর মুখ নিয়ে দাঁড়ালো।
এদিকে সকলে মায়ার ডিজাইনের ভীষণ প্রশংসা করলো। আরমানের বাবা, চাচা মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর ও দোয়া দিলেন। মায়া যেনো এভাবে আরো এগিয়ে যাই। আর এদিকে তো মিস্টার ড্যানিয়েল প্রশংসায় পঞ্চমুখ। উনি বললেন, “হামি হাগে হান্ড্রেড ডিজাইন অর্ডার খরলেও এখন হামি টু হান্ড্রেড ডিজাইনই নিহতে ছাই মিস্টার হারমান।”
সবার মুখে তখন বিস্ময়ের ছাপ। মিস্টার ড্যানিয়েল শুরুতে যখন বলেছিলেন, তিনি একশো ভিন্ন ডিজাইনের হাজার হাজার ড্রেস কিনতে চান—তখনই সেটাকে কোম্পানির ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো অর্ডার হিসেবে ধরা হয়েছিল। এমন অর্ডার আগে কেউ দেয়নি। সবাই মনে করেছিল, এটাই হবে বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি।
কিন্তু তিনি তখনো চমক দেখাননি।
এখন হঠাৎ করেই তিনি জানালেন—তিনি এখন একশোর জায়গায় দুইশো ডিজাইনই নিতে চান। অর্থাৎ, আগের পরিকল্পনার চেয়েও ডাবল অর্ডার দিতে প্রস্তুত! এই ঘোষণার পর পুরো মিটিংরুমে যেন এক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা নেমে এলো। এরপর শুরু হয় চাপা উচ্ছ্বাস—সবাই একে অপরের সাথে চোখাচোখি করছে।
এই অর্ডার শুধু বড়ো না, এটা কোম্পানির জন্য এক নতুন যুগের সূচনা। মিস্টার ড্যানিয়েলের সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠানটি বিপুল লাভের সম্ভাবনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে পারবে।
এরই মধ্যে মিরাজও হাজির হয়েছে। তার উপস্থিতি যেন ছিল ঠিক সময়মতো— আরমান এগিয়ে এসে ধীরে গলায় মিরাজের উদ্দেশ্য বলে, “মিরাজ, ডিলের কাগজগুলো নিয়ে এসো।”
মিরাজ মাথা নেড়ে সঙ্গে সঙ্গে স্যুটকেস খুলে বের করে আনে গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো। ঘরে তখন নিঃশব্দ উত্তেজনার আবহ। প্রত্যেকে নিঃশ্বাস আটকে তাকিয়ে আছে। আর খানিক পরেই, সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত—ডিল সাইন হয়ে যায়।
ডিল সাইনের পরপরই মিস্টার ড্যানিয়েল চেক বের করে অ্যাডভান্স পেমেন্ট করে দেন। যেন সবকিছু সুনিপুণ এক দৃশ্যপটের মতো একে একে সাজানো হয়ে যাচ্ছে।
এরপর সবাই উঠে দাঁড়ায়। একে একে সবাই আরমানকে অভিনন্দন জানাতে এগিয়ে আসে। মুখে প্রশংসার হাসি, চোখে তৃপ্তির দীপ্তি।
আবির তো আর নিজেকে সামলাতে পারল না—সে হঠাৎ করেই আরমানকে জড়িয়ে ধরে।
ঘরটা তখন উচ্ছ্বাসে ভরে গেছে। সবাই হেসে হেসে কথা বলছে, এক সফল চুক্তির আনন্দ ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে।
ঠিক তখনই,
ফটাস!
একটা আচমকা শব্দে সবাই চমকে তাকায় উপরের দিকে। আর তখনই দেখা যায়—রঙিন কাগজ উড়ে উড়ে নেমে আসছে, যেন বৃষ্টির মতো। লাল, সোনালি, নীল কনফেটি ঘরের বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, মেঝেতে ঝরে পড়ছে ধীরে ধীরে।
সবচেয়ে মজার দৃশ্যটা ছিল আবিরের হাতে—একটা গোল, রঙিন পাইপের মতো কিছু। সেখান থেকেই ওই কনফেটি ছিটিয়ে দিয়েছে সে। মুখে তার হাসি থামতেই চায় না—৩২টা দাঁত যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে আলো ছড়ানোর!
ঘরের বাতাসে তখন কনফেটির ঝরার শব্দ আর বিজয়ের এক আনন্দময় নিঃশ্বাস।
আবির:- “কংগ্রাচুলেশন ব্রো।”
মায়া ভয়ে বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে। সবাই এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলেও পর মুহূর্তেই আবিরের সাথে তাল মিলিয়ে সবাই হাসতে লাগলো।
এরপর মিস্টার ড্যানিয়েল বলে উঠলেন, “হাচ্ছা, হাজ খি মাইহায় রানহা কেতে ফাবো নাহ?”
আবির তাড়াতাড়ি মিস্টার ড্যানিয়েল এর দিকে এগিয়ে এসে বলল, “অবশ্যই খেতে পারবেন মিস মাইহার হাতের রান্না। আপনি জানেন মিস মাইহা আপনার জন্য সেই ভোর বেলা উঠে এতো এতো রান্না করেছে।”
আবিরের কথা শুনে আরমান কটমট করে তাকালো আবিরের দিকে। কিন্তু আবির সেইদিকে কোনো পাত্তা দিলো না। এদিকে আরমান খুব ভালোয় বুঝতে পেরেছে, বছর ত্রিশের মিস্টার ড্যানিয়েল মায়ার মায়ার পড়েছে। আর কেন যানি এটা তার একদম সহ্য হচ্ছে না। কি দরকার ছিল মায়ার এতো রান্না করার? ও তো একজন ডিজাইনার তাহলে ডিজাইনার থেকে রাঁধুনি হতে যাচ্ছে কেনো?? শুধু মাত্র এই ডিল টার জন্য আরমান মিস্টার ড্যানিয়েল কে সহ্য করছে। উনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে আরমান তাকে এই অফিস থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতো। কেন এইভাবে একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকবে উনি? যতোই হোক মায়া ওর একজন কর্মচারী। তাই ও কিছুতেই এটা সহ্য করতে পারছে না।
আরমান জেলাস ফিল করছে। কিন্তু ও সেটা মানতে নারাজ। তাই ও নিজেই নিজের মনকে শান্তনা দিচ্ছি যে মায়া ওর কর্মচারী তাই রাগ ওর হচ্ছে।
মিস্টার ড্যানিয়েল:- “ওহ! তাই নাখি? তাহলে প্লিজ ছলুন হাগে লাঞ্চ টা সেরহে নিই।”
আবির বিরবির করে বলল, “হ্যাঁ আপনি আগে হাগু করে আসুন, তারপর লাঞ্চ করবেন।”
পাশেই তানিশা মায়া দাঁড়িয়ে ছিল, আবিরের এমন কথায় মায়া মুখ টিপে হাসলো, আর তানিশা তো জোড়েই হেসে দিলো।
মিস্টার ড্যানিয়েল:- “খি খিচু ভললেন? থোমরা হেভাবে হাসচো খেন?”
আবির দাঁত দেখিয়ে বলল, “আমি বলছি আমারও পেটে ছুঁচো ইঁদুর সব দৌড়াচ্ছে ক্ষিদে তে তাই ওরা হাসছে।”
মিস্টার ড্যানিয়েল:- “হো হাচ্ছা।”
মায়া মিস্টার ড্যানিয়েল এর উদ্দেশ্যে বলল, “আচ্ছা স্যার আপনি বাংলা কিভাবে বলতে পারেন?”
মিস্টার ড্যানিয়েল হাসি মুখে বলল, “হাসলে ভাংলা ভাষা হামার কুব বালো লাগে। থাই ভাংলা শিখেছি। হার যেহেথু বিজনেস খরি থাই সভ ধেশের ভাষা এট্টু আট্টু ঝানা হাছে। হার হামার হিচ্ছা হাছে থোমার মথো এখটা ভাঙ্গালি মেহেকে ম্যারেজ খরবো।”
তিশা কিছুতেই নিজের হাসি আটকাতে পারছে না। তাই ও ওখান থেকে সরে গেলো। মায়া মুখ টিপে হাসছে। আরমান এদিকে রাগে কটমট করছে। আবির বিরবির করে বলল, “হ্যাঁ বেটা সে তো ভালোই বুঝতে পারছি, তোমার মতো না বলে তোমাকেই বলে।”
আবির মুখ জোড় করে হাসি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে বলল, “আরে চলুন অনেক হয়েছে গল্প, এবার খাওয়া দাওয়া সেরে নিই।”
মিস্টার ড্যানিয়েল:- “ হ্যাঁ হ্যাঁ ছলুন ছলুন, হামি থো মাইহার রানহা খাওয়ার জনহো ওয়েট খরেই হাছি।”
আবির:- “হ্যাঁ তো চলুন।”
বলেই আবির সকলকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো। আর এতে সফলও হলো। সবাই একে একে বেরিয়ে গেলে মায়াও পিছু পিছু বেরোতে গেলো, কিন্তু তখনি ওর কানে ভেসে এলো, একটা গম্ভীর আওয়াজ।
“দাঁড়ও মিস মায়া, কিছু কথা আছে তোমার সাথে।”
মায়া পিছনে ঘুরে হাসি মুখে বলল, “বলুন স্যার।”
আরমান:- “সবাই আমাকে কংগ্রাচুলেশন জানালেও এই ডিলটা তোমার জন্যই পাওয়া সম্ভব হয়েছে। তাই থ্যাঙ্কস। এর জন্য কি চাও বলো? আমি কারো কাছে ঋণী থাকতে পছন্দ করি না।”
মায়া হাসি মুখেই বলল, “কিচ্ছু চাই না স্যার। আমাকে আমার কাজের জন্য মাইনে দেওয়া হবে। তাই আমার কাছে কেউ ঋণী নয়। আর আমি আমার কাজ করেছি শুধু মাত্র। তাই এই নিয়ে আপনাকে অতো ভাবতে হবে না।”
আরমান কিছুটা গম্ভীর গলাতেই বলল, “তুমি তো দেখছি বেশ চালাক।”
মায়া আবারও মুচকি হেসে বলল, “একটু চালাক না হলে নিজের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করতে পারবো না স্যার। তাই একটু চালাক হওয়া অবশ্যই দরকার। আর আমাকে সবাই বোকা সোকা ভাবলেও আমি অতটা বোকা নয়।”
আরমান:- “হ্যাঁ। তা তো দেখতেই পাচ্ছি।”
মায়া একটু আরমানের কাছে এগিয়ে এসে বলল, “আচ্ছা স্যার, আপনি আগে থেকেই জানতেন তাই না? যে ফাইল টা ওখান থেকে সরানো হয়েছে।”
আরমান বাঁকা হাসি দিয়ে বলল, “তুমি ভাবলে কি করে, এই আরমান শাহরিয়ার এর অফিসে আরমানের পিছনে কিছু হবে আর আরমান সেটা জানতে পারবে না?”
মায়া হতাশ গলায় বলল, “তাহলে আপনি আমাকে আগেই জানালেন না কেন? তাহলে তো এতোটা হয়রানি হতে হতো না।”
আরমান মায়ার দিকে আরো কিছুটা এগিয়ে এসে বলল, “তুমি প্রথমেই তোমার আসল ফাইল বের করলে না কেন? তাহলে এতো হয়রানি হতে হতো না।”
এখন ওরা দুজন একদম এক হাত দূরত্বে সামনা সামনি দাড়িয়ে আছে। ওরা দুজন ছাড়া এই রুমে আর কোনো প্রাণী নেই। এখনো হালকা আওয়াজে গান চলছে। কিভাবে যেনো হঠাৎ করেই গানটাও রোমান্টিক হয়ে গেছে। আর মিটিং রুমের দরজাটাও বন্ধ।
এটা আর কারোর কাজ না, এক মাত্র আবির ছাড়া। ও মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে গেছে।
আরমান মায়া চোখের দিকেই তাকিয়ে আছে। মায়া বললে, “ওই কপি ফাইলটাও কিন্তু আমরই কষ্ট করে বানানো ছিল। তাই ওটা অতো সিকিউরিটির পরও গায়েব হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। কিন্তু আপনি সব জেনেও চুপ থাকলেন কেন?”
আরমান মায়ার দিকে চোখের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল, “আমিও দেখতে চেয়েছিলাম এমন পরিস্থিতিতে তুমি কি করো। আর কিছুটা রাগও ছিল তোমার উপর…”
মায়া:- “ভেবেছিলেন আমি আমার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারিনি। দায়িত্বজ্ঞানহীন এর মতো কাজ করেছি আমি তাই না?”
আরমান এই কথার কোনো উত্তর দিলো না। মায়া আবারও আরমানের চোখে চোখ রেখে বলল, “আমি জানতে চাই স্যার, ফাইল দুটো কে সরিয়েছে?”
আরমান মায়ার এই কথার ঠিক মতো পাত্তা না দিয়ে, এগিয়ে গেলো সোফার সামনে থাকা টেবিলের দিকে, ওখান থেকে ওর ফোনটা হাতে নিতে নিতে বলল, “খুব শীঘ্রই জানতে পারবে সেটা।”
মায়া অধৈর্য্য হয়ে আরমানের দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে বলল, “না আমি এক্ষুনি জানতে চাই।”
আরমান মোবাইল নিয়ে মায়ার দিকে ঘুরতেই দুজনের শরীর ছুঁয় ছুঁয় অবস্থা, কিন্তু এতেও মায়ার কোনো হেলদোল নেই। ওর এখন কি হচ্ছে কোথায় আছে সেদিকের কোনো খেয়াল নেই, ওর এখন সব থেকে বড়ো জেদ, ও জানতে চাই ওর ফাইল কে সরিয়েছে।
আরমান গম্ভীর গলায় বলল, “বললাম তো খুব শীঘ্রই সেটা জানতে পারবে। আর শোনো, তুমি না একদম ওই ড্যানিয়েল এর সাথে হেসে হেসে কথা বলবে না। আমি চাইনা কেউ আমার ক্লাইন্ট কে নিজের দিকে আকৃষ্ট করুক। তাই মিস্টার ড্যানিয়েল এর থেকে দূরে থাকবে।”
মায়া রাগে জেদে চিল্লিয়ে উঠলো, “বেশ করেছি উনার সাথে হেসে হেসে কথা বলেছি, আরো বলবো। আমি কার সাথে হেসে হেসে কথা বলবো আর বলবো না, এটা আপনি বলার কে?”
মায়ার এমন কথায়, আরমান মায়ার কোমর পেঁচিয়ে ধরে এক টানে নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে নিয়ে তারপর আর এক হাত দিয়ে মায় থুতনি চেপে ধরে, মায়ার মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে গিয়ে রাগে হিসহিসিয়ে বলল, “ভুলে যেওনা তুমি আমার এক মাসের জন্য কেনা সম্পত্তি। কথা ছিলো এই এক মাস তোমায় আমি যা বলবো তুমি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। কিন্তু না, তুমি আমার কথার অবাধ্য হচ্ছো। এটা তো মানা যাই না মিস মায়া তালুকদার… তোমায় আমি এক মাসের জন্য কিনে নিয়েছি। সেটা কিভাবে ভুলে গেলে?? হ্যাঁ? এই একমাসে যদি আমি তোমায় আমার বিছানায় উঠতে বলি, সেটাও করতে হবে
তোমায় করতে হবে মিস মায়া তালুকদার।”
আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ১৯
এদিকে আরমানের হাতের নোখ কমোরে চেপে বসায় জায়গা টা চিড়বিড় করে জ্বলে উঠলো। অন্যদিকে আবার আর এক হাত দিয়ে এমন ভাবে জোড়ে ওর চিবুক ধরেছে যে, মায়ার মুখের দাঁত নরম চামড়ায় বসে গিয়ে, রক্ত বেরিয়ে এলো। সেই নোনতা তরলের স্বাদ খুব ভালো ভাবেই অনুভব করতে পারলো মায়া। ব্যাথার তীব্রতায় চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো ওর। তবুও নির্দয় আরমান একবারের জন্যও হাত সরালো না।