আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৪
সালমা খাতুন
মায়া তাড়াতাড়ি ওর হাতে থাকা ব্যাগটা খুলে ফাইলটা বের করে। আর ফাইল থেকে বের করে সেই সাইন করা কাগজ। আর কাগজটা পড়ে দেখতেই মায়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।
এটা একটা ডিল করা হয়েছে। যেখানে মায়াকে 50 লক্ষ্য টাকার বদলে এক মাসের জন্য কিনে নেওয়া হয়েছে মায়ার সম্মতিতে। এই এক মাস আরমান যা যা বলবে মায়াকে সব শুনতে। আর মায়া যদি এই ডিল ক্যান্সেল করতে চাই তাহলে মায়াকে 50 লক্ষ্য টাকা নেওয়ার বদলে এক কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে। মায়া আর ভাবতে পারছে না। মাথা টা যেন পুরো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
মায়া কাঁপা কাঁপা গলায় কোনোমতে বলল, “কি…কিন্তু ওনি তো আমায় মি..মিথ্যা বলে সাইন করিয়েছিল। আর..আর এই 50 লক্ষ্য টাকা তো আমি নিইনি। ফাঁসানো হয়েছে আমাই। আমি এই ডিল মানি না।”
আরমান:- “হ্যাঁ 50 লক্ষ্য টাকা তুমি নাওনি ঠিক আছে কিন্তু তোমার বস তো নিয়েছে। আর তোমার বস তোমাকে কি বলে সাইন করিয়েছে সেটা তোমাদের ব্যাপার। আমি তো কাগজে সব শর্ত লেখেই দিয়েছি এখন তুমি যদি শর্ত না পড়ে সাইন করো এতে তো আমার কিছু করার নেই।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরমান কথা গুলো বলতে বলতে মায়ার হাত থেকে ডিলের পেপার টা কেড়ে নিলো। মায়া তো স্তব্ধ হয়ে গেছে। ওর সাথে কি হচ্ছে ও কিছুই বুঝতে পারছেনা। কিভাবে ও এই লোকটার সাথে থাকবে? যে ওর সাথে সংসার না করেই ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে। আর মায়া তো ভালোবেসে ফেলেছিল এই লোকটা। তাহলে কি করবে ও এখন? না কিছুতেই ও এই লোকটার সাথে থাকতে পারবে না। মায়া আর কোনো কিছু না ভেবেই ওর ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে কল লাগালো ক্লাবের বসকে। ওপাশ থেকে কল রিসিভ হতেই মায়া বলে উঠলো।
মায়া:- “স্যার কিভাবে পারলেন আমার সাথে এভাবে প্রতারণা করতে? কেন আমাকে মিথ্যা বলে সাইন করালেন পেপারে?
ওপাশ থেকে ক্লাবের বস বলে উঠলো, “কিসের কথা বলছো মিস মায়া?”
মায়া গলায় ঝাঁঝ নিয়ে বলল, “যেই কন্ট্রাক্ট পেপারে আমার সাইন নিয়ে আপনি আমাকে বিক্রি করে দিয়েছেন 50 লক্ষ্য টাকার বদলে আরমান শাহরিয়ার এর কাছে তার কথা বলছি।”
ক্লাবের বস:- “ আমি তো বলেছিলাম যে আমাদের এখানে এই কাজ করলে পেপারে সাইন করতে হয়। হ্যাঁ কারোর সাথে এক রাত কাটালে সাইন করতে হয়না তবে কোনো ক্লাইন্ট যদি কাউকে এক সপ্তাহ বা তারো বেশি দিনের জন্য বুকিং করে তাহলে আমারা পেপারে সাইন করিয়ে নিই।”
মায়া অসহায় গলায় বলল,“স্যার আমি এই কাজটা করতে পারবো না। আপনি ওনার টাকা ফিরিয়ে দিন।”
ক্লাবের বস অবাক হয়ে বলল, “হোয়াট?? কি বলছো এটা তুমি? এটা কোনো ভাবেই সম্ভব না। আমি ওনার থেকে টাকা নিয়ে নিয়েছি। আর কাগজটা তুমি পড়ে দেখোনি সেটা তোমার ব্যাপার। আমরা তো আর জোর করে সাইন করায় নি। আর কাগজটা পড়ে দেখেছো তো? ডিল ক্যান্সেল করলে ওনাকে 1 কোটি টাকা ফেরত লাগবে। আর আমি নিয়েছি 50 লক্ষ্য টাকা। তাই ওনাকে আমি এক কোটি টাকা দিতে পারবো না। আর তোমাকেও এই এক মাসের জন্য 50 লক্ষ্য টাকা দেওয়া হবে। তোমার তো ভাগ্য ভালো যে তুমি আরমান শাহরিয়ার এর মতো একজন ক্লায়েন্ট পেয়েছো। সব মেয়েরা এই সুযোগের জন্য মুখিয়ে থাকে আর তুমি পেয়ে হারাতে চাইছো?”
মায়া:- “কিন্তু স্যার তাই বলে আমি ওনার বাড়ির কাজের লোকের মতো কাজ করবো?”
ক্লাবের বস:- “হ্যাঁ কাগজেতো লেখাই আছে ওনি যা বলবেন তোমাকে সব শুনতে হবে। তাই আর বেশি কথা না বাড়িয়ে ওনি যা বলছেন করো।”
মায়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওনি ফোনটা কেটে দিলেন। আরমান এতোক্ষণ সোফায় বসে সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াতে ওড়াতে মায়ার কথা শুনছিল। কল কেটে দিতেই আরমান সিগারেট টা এ্যাস্ট্রেতে গুঁজে দিয়ে মায়ার কাছে উঠে আসলো। তারপর মায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল, “ভয় লাগছে মিস মায়া তালুকদার? ভয় নেই আমি শুধু তোমায় দিয়ে আমার সমস্ত কাজ করাবো। তোমার গায়ে হাত দেবো না। মনে নেই বলেছিলাম, এই আরমান শাহরিয়ার যেই শরীরে একবার হাত দেয় সেই শরীরে দ্বিতীয়বার আর হাত দেয় না। আমি তোমায় কাজের লোক বানিয়ে রাখতে চাই। তাই ভয় নেই। তুমি তো আবার নিজের সখ পূরণের জন্য সবকিছু করতে পারো আর এই কাজ করতে পারবে না। আর এই কাজের জন্য যথেষ্ট পারিশ্রমিক দেওয়া হবে তোমায়।”
মায়া মনে মনে ভাবলো, এই কাজটা করাই ভালো হবে ওর জন্য। এই কাজটা করলে ওকে তো আর বিভিন্ন পূরুষের বিছানায় যেতে হবে না। হ্যাঁ ওর একটু কষ্ট হবে, যেহেতু আরমানকে ও ভালোবাসতো। নাহ ও ওর বাবার জন্য সব কষ্ট সহ্য করে নেবে। এই কাজটাই ভালো হবে ওর জন্য।
মায়া:- “আমি রাজি। আমাই কি করতে হবে বলুন।”
আরমান:- “বাহ!! এই তো এটাই আমি চাইছিলাম। তোমার জন্য আমার এখনো ডিনার করা হয়নি। যাও, গিয়ে আগে রান্না করে আনো। ওয়েট রুবিকে ডাকি ও তোমাকে সব কাজ বুঝিয়ে দেবে।”
এই বলে আরমান ইন্টারকমে রুবিকে কল করে ওর রুমে আসতে বলে, সোফায় গিয়ে ল্যাপটপ কোলে নিয়ে বসলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরমানের ঘরের দরজায় নক হলো। আরমান আসার অনুমতি দিলে রুবি রুমে প্রবেশ করলো। আরমান ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে রুবির দিকে তাকিয়ে বলল,
আরমান:- “রুবি! ওর নাম মায়া। আজ থেকে তোমার জায়গায় ও কাজ করবে। তুমি ওকে সব কাজ বুঝিয়ে দাও।”
রুবি এটা শুনে ভীতু গলায় বলল, “কিন্তু স্যার ওনি আমার জায়গায় কাজ করলে আমার কি হবে? আমি কোথায় যাবো? বাড়িতে আমার অসুস্থ বাবা মা….”
রুবির কথার মাঝে আরমান ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “আরে থামো থামো!! তোমার কাজ কেড়ে নিচ্ছি না আমি। তুমি তোমার মাইনে পেয়ে যাবে। তোমায় আমি এক মাসের জন্য কাজ থেকে ছুটি দিচ্ছি তার জায়গায় ও কাজ করবে। আর তুমি তোমার এই এক মাসের মাইনেও পেয়ে যাবে। চিন্তা নেই।”
রুবি:- “কিন্তু স্যার আমার তো ছুটির দরকার নেই। আমি আমার কাজ গুলো করে নিতে পারবো।”
আরমান কিছুটা রাগান্বিত হয়ে বলল, “রুবি আমার এটা একদম পছন্দ না যে কেউ আমার কথার উপরে কথা বলবে। তোমাকে যেটা বলা হয়েছে সেটা করো। এটা আমার অর্ডার। যাও উনাকে রান্না ঘরটা দেখিয়ে দাও উনি আমার জন্য রান্না করবে।”
তারপর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা মায়ার দিকে ঘুরে বলল, “আর হ্যাঁ মায়া তোমাকে বলছি, তোমার হাতে সময় আছে মাত্র ত্রিশ মিনিট। এই ত্রিশ মিনিটের মধ্যে রান্না করতে হবে। আর রুবি তুমি বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখবে যেনো ওকে কেউ সাহায্য না করে।”
রুবি মাথা নেড়ে সায় জানাই। তারপর মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে, “আপনি আসুন আমার সাথে।”
এই বলে রুবি এগিয়ে যাই দরজার কাছে। মায়াও যাই রুবির পিছনে। আর আরমান তাকিয়ে থাকে ওদের যাওয়ার দিকে। ওরা বেরিয়ে গেলে আরমান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ল্যাপটপ সেন্টার টেবিলে রেখে মাথা এলিয়ে দেয় সোফায়। ও কিছুতেই বুঝতে পারছে না ওর সাথে কি হচ্ছে…
কেন মেয়েটাকে এভাবে কিনে নিলো ও? শুধুই কি শাস্তি দেওয়ার জন্য? কিন্তু কিসের শাস্তি দিতে চাইছে ও মেয়েটাকে…?
এই সবই ভাবছিল আরমান। ঠিক তখনি ওর ফোন বেজে উঠলো। স্ক্রীনে ভেসে উঠলো আবিরের নাম।
(চলুন আবিরের পরিচয় টা দিয়ে দিই)
আবির ওর পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট। আবিরের মা বাবা কেউ নেই। ও অনাথ। কলেজে আরমান আর আবির একই সাথে পড়াশোনা করেছে। তারপর আরমান বিদেশে চলে যাই। কিন্তু আবিরের সাথে যোগাযোগ ছিল। আরমান বিজনেসে জয়েন করলে আবিরকেও ডেকে নেয় ওর সাথে। আবির আগে ভাড়া বাড়িতে থাকতো। এখন আরমানদের বাড়িতেই থাকে। আরমানের দাদুই জোর করে নিয়ে এসেছিল। আবির আরমানের পি.এ কম বন্ধু বেশি।
আরমান ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আবির বলে উঠলো, “কংগ্রাচুলেশন ভাই!! মিটিং টা সাকসেসফুল হয়েছে। ডিলটাও পেয়ে গেছি আমরা।”
আরমান:- “ওকে।”
আবির:- “কি ওকে?? এতো বড়ো একটা ডিল পাইয়ে দিলাম আমি আর শুধু ওকে?? অন্তত একটা থ্যাঙ্কস জানা।”
আরমান মেজাজ দেখিয়ে বলল, “পারবো না থ্যাঙ্কস বলতে। পারলে ডিল ক্যান্সেল করে দে।”
আবির অবাক হয়ে বলল, “আরে কি ব্যাপার?? মেজাজ এতো গরম কেন?”
আরমান:- “রাখতো তোর ফালতু কথা!! কাজের কথা বল। মাইশার কোনো খবর পেয়েছিস??”
আবির:- “আমি এতো বড়ো একটা মিটিং সাকসেসফুল করলাম আর এটা তোর ফালতু কথা মনে হচ্ছে? সব সময় শুধু মাইশা!! মাইশা! আর মাইশা!! তোর মাইশা জাহান্নামে….
আরমান:- “আবির!!! মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ!!”
আবিরকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই আরমান চিল্লিয়ে উঠলো। আবির বুঝতে পারলো ও কি বলতে যাচ্ছিল। তাই ছোটো করে উত্তর দিলো।
আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৩
আবির:- “সরি, আমি আসছি কিছুক্ষণের মধ্যেই।”
আর কিছু না বলেই আবির ফোনটা কেটে দিলো। আরমান রাগে ফোনটা ছুঁড়ে মারলো সোফার উপর। তারপর দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে সোফায় বসে পড়লো।