আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৩৭
সালমা খাতুন
অবিচল পায়ে, দৃঢ় ভঙ্গিতে আরমান মায়াকে কোলে তুলে নিল। চারপাশের শত চোখের ভ্রুকুটি, ফিসফাস, ফ্ল্যাশ—কোনো কিছুই যেন তাকে দমাতে পারলো না। গোটা ইভেন্ট হল জুড়ে মুহূর্তে নেমে এলো শোরগোল। কে এই নারী? কেনো বিয়ের আসরে কনের সাজে দু’জন? যদিও মায়ার সাজ কনের মতো নয় কিন্তু ওকে আরমানের পাশে একজন বিয়ের কনে ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না।
হলে থাকা প্রতিটি মানুষের চোখে প্রশ্ন—কে আসল কনে? যে মেয়ে আরমানের কোলে, সে? নাকি যে মেয়ে লেহেঙ্গা পরে ব্রাইডাল সাজে দাঁড়িয়ে ছিল, সেই? ইভেন্ট হলের অন্য দরজা দিয়ে কয়েক মুহূর্ত আগেই ছুটে এসে ধাক্কা দিয়েছিল এই অচেতন নারীর গায়ে, সবাইকে চমকে দিয়ে একদম ব্রাইডাল সাজে। অথচ এখন, তার সেই সাজের চাকচিক্যও যেন ফিকে।
আরমানের বাহুতে অচেতন মায়া। পরনে বিয়ের শাড়ি নয়, অথচ অপার এক সৌন্দর্যে মোড়া। গা জুড়ে সবুজ রঙা জামদানী, যার উপর সূক্ষ্ম গোল্ডেন সুতোর কাজ; ঝলমল করছে শরীর জুড়ে ডায়মন্ডের গয়না। চুল খোঁপা করে বাঁধা, তাতে গাঁথা গাজরার কোমল সুগন্ধ। চোখে সূক্ষ্ম কাজলরেখা, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, হাতে এক হাত করে চুড়ি। এক অপার শ্রদ্ধা ও সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি যেন সে—নির্জীব অথচ সম্মোহিত করে রাখা।
আরমান নিজেও পড়েছে গোল্ডেন রঙের শেরওয়ানি, যেনো তারই জন্য তৈরি। মায়ার শাড়ির রঙে রঙে গাঁথা এক নিখুঁত সামঞ্জস্য। একসাথে দু’জনকে দেখে মনে হচ্ছিল, যেনো দু’টি চরিত্র উঠে এসেছে কোনও রাজকীয় কাহিনির পাতা থেকে। নিঃসন্দেহে, একে অপরের পরিপূরক।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরমানের মুখে কোনো আবেগ নেই, কেবল এক তীব্র গাম্ভীর্য। কোনো প্রশ্নের উত্তর নয়, কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন নয়—শুধু নিজের বিশ্বাসে অটল হয়ে হাঁটছে সে, যেন পৃথিবীর সমস্ত কণ্ঠরোধ করে নিজের হৃদয়ের ভাষা সে নিজেই উচ্চারণ করছে।
পিছনে দাঁড়িয়ে আছে মাইশা। চোখে হাহাকার, মুখে একরাশ অসহায়তা। গা ভরা ব্রাইডাল সাজ, ভারী মেকআপ এর নিচে চাপা পড়া এক বিপর্যস্ত মুখ। যে কেউ দেখলে বলবে—এই তো কনে! অথচ উপস্থিত জনতার চোখ আজ দ্বিধায় বিভ্রান্ত। তাদের চোখের ভাষায় প্রশ্ন—কে আসল কনে?
সবকিছুকে ছাপিয়ে, আজ এখানে সবচেয়ে উজ্জ্বল চিত্র—একজন গাম্ভীর্যভরা পুরুষ ও তার বাহুতে শুয়ে থাকা এক অপূর্ব নারী। বাকিরা যেনো কেবল আবছা আলোর ছায়া।
আরমান মায়াকে কোলে নিয়ে এগিয়ে গেলো রেস্ট রুমের দিকে। ওকে রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলো বেডে। তারপর কল করলো ওর জানাশোনা একজন ফিমেল ডক্টরকে, তারপর কল দিলো আবিরকে সেই ডক্টরকে নিয়ে আসার জন্য। আরমান বসলো মায়ার পাশে, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মায়ার মুখের দিকে।
এদিকে হলে হইচই শুরু হয়ে গেছে, ভেসে আসছে মিডিয়ার লোকের একের পর এক প্রশ্ন। হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত আছে এখানে। সবাই বিভ্রান্ত মুখে কৌতুহলের ছাপ। আরমানের বাবা, চাচা, আয়ান সহ আরো ওদের কিছু কাছের মানুষ সকলকে শান্ত করার চেষ্টা করছে, বিশেষ করে মিডিয়ার লোকগুলোকে।
ঠিক তখনি মাইকে ভেসে উঠলো এক গম্ভীর, অথচ মার্জিত নারী কণ্ঠ। পুরো হলে মুহূর্তেই নেমে এলো নিরবতা।
মিসেস সাবিনা বেগম হলের মাঝে দাঁড়িয়ে মাইক মুখের কাছে নিয়ে বললেন— “আপনারা সবাই একটু শান্ত হোন, প্লিজ। আমি সাবিনা বেগম, শাহরিয়ার পরিবারের বড় বউ এবং আরমান শাহরিয়ারের মা। আমরা খুবই দুঃখিত, আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তাই আপনাদের সামনে গোটা ঘটনা পরিষ্কার করে বলার প্রয়োজন মনে করছি।
আমাদের আজকের কনে—মানে এই বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য যাঁর সঙ্গে আমাদের পুত্র আরমানের বিয়ে ঠিক হয়েছে—তিনি হচ্ছেন মাইশা তালুকদার।”
ইতিমধ্যেই মাইশা উনার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। উনি শেষের কথটা মাইশাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন।
আবারও শোনো গেলো উনার আওয়াজ—মাইশা একজন শিক্ষিতা ও সংস্কারসম্পন্ন মেয়ে। ওকেই আজকের কনে হিসেবে সাজানো হয়েছে, এবং সব প্রস্তুতি তার জন্যই ছিল।
কিন্তু একটি ভুল বোঝাবুঝির কারণে মাইশার জায়গায় মায়া তালুকদার—যিনি মাইশার চাচাতো বোন—অনিচ্ছাকৃতভাবে কনের জায়গায় চলে আসে। ওর পরনে বিয়ের শাড়ি না থাকলেও, হয়তো ওর সৌন্দর্য, গয়না এবং পরিবেশের চাপে সকলেই ধরে নিয়েছেন যে উনি-ই কনে। ফলে অনেকেই ভুল করে ওকেই শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করেন।
আমার ছেলে আরমান, যেহেতু মায়া অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে ওকে সাহায্য করেছে। কিন্তু এটাকে কোনো রকম ভিন্ন অর্থ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ঘটনাটা সম্পূর্ণ একটা দুর্ঘটনামূলক বিভ্রান্তি—এর পেছনে কোনো রহস্য নেই।
আমি আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করবো, অযথা গুজব না ছড়িয়ে বরং আমাদের পাশে থাকুন, এবং এই বিয়েটিকে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করুন। মিডিয়ার কাছেও আমার বিনীত অনুরোধ, আপনারা বিষয়টি পজিটিভলি কভার করুন। আপনাদের মাধ্যমে এই ভুল বোঝাবুঝি যাতে অন্যভাবে ছড়িয়ে না পড়ে, সেটাই আমরা চাই।
ধন্যবাদ সবাইকে। আশা করছি, আপনারা আমাদের পরিবারের এই ছোট্ট ভুলকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, এবং আমাদের আনন্দঘন মুহূর্তকে অটুট রাখবেন।”
মাইক বন্ধ করার পরও মিসেস সাবিনার কণ্ঠের দৃঢ়তা আর স্পষ্টতা যেনো পুরো হলে অনুরণন তুললো। কিছুটা স্তব্ধ, কিছুটা বোঝার চেষ্টা—হলে উপস্থিত মানুষের চোখে এবার আর আগের মতো কৌতূহল নেই, বরং একটা ধীরে শান্ত হয়ে আসা আশ্বস্ত ভাব। কিন্তু অনেকের মুখেই হতাশার ছাপ, মায়া কনে নয় এটা শুনে। তারা নিজের মনের কোনে কোথাও একটু, একটু না অনেক টা আশা করেছিল যে, মায়াই হচ্ছে বিয়ের কনে।
এবার আরমানের ড্যাড মাইক হাতে নিয়ে বলল, “আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য। যে ঘটনা কিছুক্ষণ আগে ঘটেছে, সেটা অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত এবং আকস্মিক ছিল। আমাদের পরিবারের একজন প্রিয় মানুষ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা কিছু সময়ের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।
তবে চিন্তার কিছু নেই—ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে, এবং আমরা আশা করছি খুব শীঘ্রই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এখন আপনারা অনুগ্রহ করে আতিথেয়তা গ্রহণ করুন, খাবার-দাবার, গান-বাজনা ও পরিবেশ উপভোগ করুন।
এই ছোট্ট সময়ের অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং আপনারা যে ভালোবাসা ও ধৈর্যের সঙ্গে আমাদের পাশে আছেন, তাতে আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা চাই আজকের দিনটা আনন্দময় থাকুক সবার জন্যই। খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে, ততোক্ষণ আপনারা পার্টি ইনজয়। ধন্যবাদ।”
এদিকে আবির ঝড়ের গতিতে গাড়ি ড্রাইভ করে ডক্টর নিয়ে এসেছে। ভাগ্য ভালো ছিল তাই ডক্টর তার চেম্বারেই ছিল, এবং এখান থেকে তার চেম্বার পায়ে হেঁটে পাঁচ মিনিটের পথ।
ডক্টর চেকআপ করে জানালো, সারাদিন খাওয়া দাওয়া না করাই প্রেশার ফল্ট করেছে। কিছু মেডিসিন লিখে দিলেন। আবির জানালো কিছু দিন আগেই মায়াকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছিল দূর্বলতার জন্য। ডক্টর কথা শুনালেন, মায়ার শারীরিক অবস্থা জেনেও, ওরা খেয়াল রাখেনি তাই। কিছুক্ষন পরেই জ্ঞান ফিরে আসবে মায়ার। ওর জ্ঞান ফিরলে যেনো ওকে কিছু খাইয়ে মেডিসিন গুলো খাইয়ে দেয়। এবং ডক্টর এটাও বললেন যে, মায়াকে যেনো একবার হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চেকআপ করাই। কিছু টেস্ট করা দরকার। মায়াকে দেখে কিছুটা সন্দেহ হলো উনার। ডক্টরের মনোভাব বুঝে আরমান ও আবিরের মুখেও চিন্তার ছাপ পড়লো।
আজ সারাদিন একটাও খাবার মুখে দেয়নি মায়া। শুধু এখানে আসার আগে এক গ্লাস দুধ পান করেছিল ও। রুবি প্রতিদিন রাতে মায়াকে দুধ দিয়ে যাই খাওয়ার জন্য। সেই মায়ার হসপিটাল থেকে বাড়ি আসার পর থেকে। আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি।
আরমানের বাড়ির সবাই হাজির হয়েছে ওই রুমে। আবির গেলো ডক্টর কে দিয়ে আসতে এবং মেডিসিন গুলো আনতে।
আরমানের মা আরমানকে উদ্দেশ্য করে বলল, “তুমি ওই মেয়েকে নিয়ে এতোটা বাড়াবাড়ি না করলেও পারতে আরমান। এতে প্রতিটা মানুষের সামনে আমাদের এবং মাইশা বেটা কে ছোটো হতে হলো।”
আরমান কোনো উত্তর দিলো না। মাইশা বলল, “হ্যাঁ মম্! আর উনাকে জিজ্ঞাসা করো উনি আমার লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচিং শেরওয়ানিটা পড়েনি কেন? আর উনার পাশে মায়া কেন এলো? ওখানে তো আমার থাকার কথা ছিল।”
আরমান বিরক্ত গলায় বলল, “মম তুমি খুব ভালো করেই জানো, আমি ওই ধরনের রঙের ড্রেস পড়তে পছন্দ করি না। এখন এসব বাদ দাও তো ভালো লাগছে না আমার।”
আরমানের ড্যাড বলল, “আরে এইসব এখন থাক। চলো আগে রেজিস্ট্রির কাজ গুলো সেরে নিই। অনেক দেরি হয়ে গেছে এমনিতেই।”
মিসেস সাবিনা বেগম— “হ্যাঁ চলো। এসো আরমান আব্বু। মাইশা বেটা তুমি রাগ করো না। আসলে সত্যিই আরমান ওই কালারের ড্রেস পছন্দ করে না।”
মাইশা— “ঠিক আছে মম।”
আনজুমা বেগম— “বলছি কি তোমরা সবাই যাও। একজনের তো থাকা দরকার মায়ার কাছে, আমিই বরং থাকি।”
রুবি বলল, “ছোটো আম্মু তুমি যাও। আমি থাকছি।”
রুবির কথায় সবাই সাই জানালো। আনজুমা বেগম প্রথমে রাজি হলো না কিন্তু সবার কথাই আর কিছু বলল না। সবাই চলে গেলো।
হলরুমে অ্যানাউস করা হলো, বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে। বিয়ের অনুষ্ঠান বলতে শুধু ওই রেজিস্ট্রি পেপারে সই করা। উকিল বাবু সমস্ত কাগজ পত্র টেবিলে রাখলেন। মাইশা বসে আছে রাজকীয় ফুলের সাজে সজ্জিত সোফায়। আরমান গম্ভীর মুখে উঠে এলো মঞ্চে। মাইশার থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসে গেলো সোফায়। হল রুমে থাকা প্রতিটি ব্যাক্তির দৃষ্টি এখন ওদের দিকে। প্রতিটা ফোটোগ্রাফার ও মিডিয়ার লোকেরা ছবি ভিডিও করতে ব্যস্ত।
উকিল বাবু মাইশার দিকে পেপার এগিয়ে দিলো। মাইশা ফুল দিয়ে সাজানো থালা থেকে সুন্দর ডিজাইনের পেনটা তুলে নিলো। তাকালো একবার ওর মায়ের দিকে। মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি। ধীরে ধীরে সই করে দিলো উকিল বাবুর দেখানো জায়গাতে।
মাইশার সই করা হয়ে গেলে উকিল বাবু পেপার নিয়ে আরমানের দিকে এগিয়ে দিলো। আরমান তাকালো একবার আয়ানের দিকে। আয়ানের মুখে কোনো অনুভূতি নেই। যেনো পাষাণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আরমানের দিকে মাইশা পেনটা হাসি মুখে এগিয়ে দিলো। আরমান সেটাকে উপেক্ষা করে উকিলের কাছে থাকা পেনটা নিয়ে সই করতে শুরু করলো। সই প্রায় শেষের দিকে, কিন্তু তখনি একটা আওয়াজে থমকে গেলো চারিপাশ।
“তুই বিবাহিত হয়েও আবার কিভাবে বিয়ে করতে পারিস আরমান? এই বিয়ে হবে না।”
আবিরের বলা কথাটি বাড়ি খেলো হল রুমের দেওয়ালে দেওয়ালে। সবার কানে বারে বারে প্রতিধ্বনিত হলো যেনো। এই একটা কথায় যথেষ্ট ছিল পুরো হল রুমকে স্তব্ধ করার জন্য।
মিসেস সাবিনা বেগম গম্ভীর গলায় বললেন, “আবির!! এই কথাটা এখন না বললেও হতো।”
আবির— “না আন্টি! এই কথাটা বলার সঠিক সময় হচ্ছে এটা। তাই না বললে হবে না।”
সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি হচ্ছে বুঝতে পারছে। সবার মুখেই কৌতুহলের ছাপ।
ভেসে এলো আরমানের গম্ভীর গলার আওয়াজ— “আবির! ভালো হবে এখন চুপ থাক।”
আবির তাচ্ছিল্য হেসে বলল, “হুম এতোক্ষণ চুপই ছিলাম। কারণ ভেবেছিলাম তুই নিশ্চই কিছু না কিছু করবি। কিন্তু ওটা আমার ভুল ধারণা ছিল। আমি ভেবেছিলাম হয়তো তুই মায়াকে ভালোবেসে ফেলেছিস। তুই এই বিয়েটা করবি না। কিন্তু আমি ভুল ভেবেছিলাম।”
সাবিনা বেগম চিল্লিয়ে ধমকে উঠলেন আবিরের উপর— “আবির!!!! কি সব শুরু করেছো তুমি? তুমি খুব ভালো করে জানো আরমান মাইশাকে ভালোবাসে। আর তোমাকে রিকোয়েস্ট করছি, এখানে এতো লোকের সামনে আরমানের অতীত টেনে না এনো না প্লিজ।”
আবির তাচ্ছিল্য হেসে বলল, “কোন অতীতের কথা বলছেন আপনি? আপনি যেই অতীতের কথা বলছেন সেই অতীত এখনো অতীত হয়নি, বর্তমান হয়ে রয়ে গেছে সকলের অজান্তেই।”
সবাই অবাক হলো। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। পুরো হল রুমে শুরু হয়েছে গুঞ্জন।
আবারো ভেসে এলো আরমানের গম্ভীর গলার আওয়াজ— “আবির! স্টপ ইট!! আগে রেজিস্ট্রি টা শেষ হতে দে। তারপর তোর সব কথা শুনবো”
সাবিনা বেগম— “দাঁড়াও আরমান, আগে ও কি বলছে শুনতে দাও। আবির তুমি কি বলতে চাইছো স্পষ্ট করে বলো। তুমি কিন্তু খুব ভালো করে জানো আরমান এবং মায়ার ডিভোর্স হয়ে গেছে।”
আবির চিল্লিয়ে বলল, “ না হয়নি!! আরমান এবং মায়ার ডিভোর্স এখনো হয়নি। ওরা এখনো স্বামী স্ত্রী। তাই বউ থাকার শর্তেও আবার বিয়ে করা আইনত অপরাধ।”
এই কথটাই যথেষ্ট ছিল পুরো হল রুমে ঝড় তোলার জন্য। কিসের অতীত? কিসের ডিভোর্স? কিছুই বুঝতে পারছে না কেউ।
কিন্তু আরমানের পরিবারের সবার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। সবার জানা মতে ওদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। কিন্তু এখন আবিরের এমন কথা বিশ্বাস হচ্ছে না।
আরমান আবিরের কথায় পাত্তা না দিয়ে সই করতে শুরু করলো। আবির আরমানকে সই করতে দেখে রাগে এগিয়ে গেলো পেপার টা কেড়ে নেওয়ার জন্য, কিন্তু আরমানের ইশারায় কিছু গার্ড এসে আবিরকে ধরে ফেললো।
আবির রাগে চিল্লিয়ে বলল, “আরমান তুই এটা করতে পারিস না। মায়াকে নিয়ে খেলতে পারিস না তুই। আমি তোর এই কয়দিনের ব্যবহার দেখে ভেবেছিলাম তুই মায়াকে ভালোবেসে ফেলেছিল, কিন্তু না। তুই খেলেছিস মায়াকে নিয়ে। আর এখনো খেলছিল।”
আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৩৬
না আবিরের কোনো কথায় পাত্তা দিলো না আরমান। নিজের মনে সই করে উঠে দাঁড়ালো। এদিকে পুরো হলে তখন যেনো ঝড় চলছে। সকল মানুষের একে অপরের সাথে ফিসফিস করছে। সবাই যেনো একটা বড়ো রকমের ধাক্কা খেলো।