আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৫২
সালমা খাতুন
আরমান মায়াকে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে রুমের দরজা লক করলো। মায়া আরমানকে দরজা লক করতে দেখে বলল, “আরে দরজা লক করছেন কেনো? রান্নার এখনো অনেক কাজ বাকি আছে?”
আরমান:- “রুবি মাইশা সামিরা ওরা আছে তো।
ওরা করে নেবে।”
মায়া বিরক্ত হয়ে বলল, “ধ্যাত। এগুলো কোনো কথা? পিকনিক করছিলাম আমরা, আর আপনি আমাদের পিকনিকের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছেন। আমি নিচে যাবো আপনি তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আসুন।”
বলেই মায়া বিছানা থেকে উঠে চলে যেতে নিলো কিন্তু আরমান আবারও ওর হাত ধরে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিলো। তারপর গম্ভীর গলায় বলল, “চুপচাপ এখানে বসে থাকবে, এক পা ও নড়বে না। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তারপর একসাথে নিচে যাবো।”
মায়া:- “কিন্তু কেনো? আমি এখন গেলে কি হবে?”
আরমান:- “কিচ্ছু হবে না। আমি বলেছি তাই, চুপচাপ বসে থাকবে। বললাম তো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর একসাথে নিচে যাবো।”
মায়া দুই পা বিছানায় তুলে বাবু হয়ে বসে, বিড়বিড় মুখ বেঁকিয়ে করে বলল, “গম্ভীর মুখো হুলো বিড়াল। ধ্যাত!! এভাবে চুপচাপ একা একা বসে থাকতে ভালো লাগে।”
মায়া বিড়বিড় করে বললেও আরমানের কানে ঠিকই গেছে ওর কথা গুলো।
আরমান:- “এই তো এখানে আমার ল্যাপটপ মোবাইল দুটোই আছে। নিয়ে যা ইচ্ছা করতে পারো।”
মায়া চোখ ছোটো ছোটো করে জিজ্ঞাসা করলো, “যা ইচ্ছা তাই?”
আরমান ভ্রু কুঁচকে বলল, “কি দুষ্টু বুদ্ধি আঁটছো এই ছোট্ট মাথায়।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মায়া দাঁত বের করে হেসে বলল, “বেশি কিছু না। ভাবছি আপনার বিজনেসের ইম্পর্টেন্ট ই-মেল গুলোর রিপ্লাই দেবো। এই যেমন, ‘আমি আরমান শাহরিয়ার এখন বউ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত তাই দয়া করে এখন আমাকে ডিসটার্ব করবেন না।’ আর একজনকে বলবো, ‘আপনাদের সাথে করা সমস্ত ডিল আমি ক্যান্সেল করলাম, বউয়ের কথায়। আমার বউ হচ্ছে আমার জীবন। বউয়ের কথা শেষ কথা। তাই এখন সমস্ত কাজ বাদ দিয়ে বউকে নিয়ে টাইম স্পেন্ড করুন। আপনারাও বউ নিয়ে খুশি থাকুন আর আমাকেও খুশি থাকতে দিন।’”
আরমান মায়ার মাথায় হালকা করে চাঁটি মেরে বলল, “এই ছোট্ট মাথায় এতো কুবুদ্ধি কিভাবে আসে হ্যাঁ? আগে তো তুমি এমন দুষ্টু ছিলে না।”
মায়া ঠোঁট ফুলিয়ে, মাথায় আরমানের চাঁটি মারা জায়গাটাই হাত দিয়ে বললো, “এই আপনি আমায় মারলেন? বধু নির্যাতনের মামলা দেবো কিন্তু।”
আরমান ওয়ার্ডরোব থেকে টাওয়েল বের করে গলায় ঝুলিয়ে ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলল, “দিতে পারো যদি তুমি তোমার গম্ভীর সাহেবকে হাজতে দেখতে চাও। আর ই-মেল এর রিপ্লাই ও দিতে পারো যদি চাও তোমার হাসবেন্ডের বিজনেস ডুবে যাক।”
কথাটা বলেই আরমান ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। এদিকে মায়া বিরক্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো আরমানের ফোন টা হাতে নিয়ে। ফোন অন করতেই পাসওয়ার্ড চাইলো, মায়া কোনো কিছু না ভেবেই লিখে দিলো মায়াবতী। আর প্রত্যাশিত ভাবেই ফোন আনলক হয়ে গেলো। তবে ফোনের ওয়ালপেপারে সেট থাকা ছবিটা দেখে অবাক হলো। ছবিটা ওর আর আরমানের কিন্তু ও জানে না কখন কিভাবে তোলা হয়েছে। ছবিটাতে দেখা যাচ্ছে, মায়ার পরনে কালো শাড়ি, জুয়েলারিও ম্যাচিং। আর আরমানের পরনে কালো স্যুট। মায়া আরমানের একটা হাতের উপর পড়ে আছে, আর আরমান মায়ার মুখের কাছে ঝুঁকে আছে। ছবিটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোনো একটা ইভেন্টে ড্যান্সের স্টেপ এটা। দুজনকেই খুব সুন্দর মানিয়েছে। একদম ম্যাচিং ড্রেসে বেস্ট কাপল।
মায়া গ্যালারিতে চলে গেলো ছবি দেখার জন্য। আর গ্যালারিতেও নিজের অনেক ছবি দেখতে পেলো। বেশিরভাগ ছবিই মায়ার অজান্তে তোলা, তা ছবি গুলো দেখেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। একটা ছবি এমন, মায়া অফিসে নিজের কেবিনে বসে একজনকে তার কাজ বোঝাচ্ছে, সেই ফাঁকে ওর মুখের সামনের পড়া চুল গুলো বিরক্তি নিয়ে হাতের আঙ্গুল দিয়ে কানের পিঠে গুঁজছে। ঠিক সেই সময় ছবিটা তোলা হয়েছে তবে কাঁচের দেওয়ালের এপার থেকে। এই ধরনের আরো অনেক ছবি আছে।
ছবি দেখতে দেখতে কত টা সময় পেরিয়ে গেছে খেয়াল নেই মায়ার। ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজে ঘুরে তাকালো ও। আর তাকাতেই ওর দৃষ্টি আরমানের উপরেই থমকে গেলো। হাঁ করে বোকা চোখে তাকিয়ে রইল এক দৃষ্টিতে। আরমান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসছে, অর্ধনগ্ন অবস্থায়। কোমরে শুধু একটা টাওয়েল পেঁচানো। শরীরের বাকি অংশ দৃশ্যমান।
আর একটা টাওয়েল গলায় ঝুলানো। শরীর মাথা এখনো ভিজে, মুছেনি হয় তো। লোমশ হীন বুকে পানির ফোঁটা গুলো মুক্তোর দানার মত জ্বলজ্বল করছে।
আরমান ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো মায়ার একদম কাছে। মায়া তখনো বিছানার একপাশে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। হাতে থাকা ফোনটা কখন যে বিছানায় নামিয়ে রেখেছে তার খেয়াল নেই ওর। আরমান মায়ার কাঁধের দুই পাশে দুই হাত বিছানায় রেখে একদম মায়ার মুখের কাছে মুখ নিয়ে ঝুঁকে এলো। আরমানের চুলের পানি টপটপ করে মায়ার মুখে পড়ে মুখ ভিজিয়ে দিচ্ছে। মায়া তখনো আরমানের নগ্ন বুকের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলেছে।
আরমান নেশাক্ত কন্ঠে ফিসফিস আওয়াজে বলল, “জাআআন এইভাবে তাকিয়ে থাকলে নিজেকে কিভাবে কন্ট্রোল করবো? জানি তোমার হাসবেন্ড ভীষণ হ্যান্ডসাম তাই বলে তাকে এইভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাবে?”
কথাটা বলেই আরমান ওর মাথা টা ঝাঁকিয়ে দিলো। ওর চুল থেকে অনেক গুলো পানির ফোঁটা মায়ার মুখে পড়লো। আরমানের এমন কথায় লজ্জা পেয়ে নাকি চুলের পানি চোখে পড়ায় মায়া সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলো তা আরমানের জানা নেই। মায়ার শ্বাস প্রশ্বাসের গতি ভীষণ ভাবে বেড়ে গেছে। বুক হাপরের মতো ওঠানামা করছে। মায়ার হালকা গোলাপি, গোলাপের পাপড়ির ন্যায় অধরে, আরমানের চুলের এক বিন্দু পানি, ভীষণ ভাবে আকর্ষিত করছে আরমানকে। একটা শুকনো ঢোক গিলল আরমান।
নাহ। আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না ও। অজানা এক মোহের বসে ধীরে ধীরে নিজের দুই পুরুষালী ঠোঁট দিয়ে মায়ার নরম অধর আবদ্ধ করে নিলো। হঠাৎই কেঁপে উঠলো মায়া—কিন্তু বাঁধা দিলো না আরমানকে। যেন এই স্পর্শটুকু ওরও প্রয়োজন ছিল বহুদিন ধরে। এ এক তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় দীর্ঘ মরুভ্রমণের শেষে হঠাৎ স্বচ্ছ ঝরনার কাছে পৌঁছে যাওয়া—যেখানে প্রথম চুমুকেই শুকিয়ে যাওয়া প্রাণে ছড়িয়ে পড়ে অনাবিল শান্তি ও এক সীমাহীন তৃপ্তি।
বেশ কিছুক্ষণ মায়ার ঠোঁটের মিষ্টি সুধা পান করার পর ধীরে ধীরে নিজের ঠোঁট সরিয়ে নিলো আরমান। মায়ার চোখ তখনো বন্ধ, চোখের পাপড়ি গুলো তিরতির করে কাঁপছে। লজ্জায় দুই গালে লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে। আরমান তখনো ঝুঁকে আছে মায়ার উপর, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মায়ার মুখের দিকে।
এরপর হঠাৎই আরমান উঠে পড়লো। তারপর দুই হাত দিয়ে মায়াকেও এক ঝটকায় উঠিয়ে বসিয়ে দিলো। মায়ার নিজেকে ধাতস্থ করার সময় টুকুও দিলো না আরমান। মায়া পিটপিট করে চাইলো আরমানের দিকে। আরমান নিজের গলা থেকে টাওয়েল টা নিয়ে মায়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, “নাও বউয়ের দায়িত্ব পালন করা শুরু করো। ভেজা চুলগুলো মুছিয়ে দাও।”
মায়া নিজের লজ্জা ভুলে মুখে বেঁকিয়ে বলল, “এ্যাহ আমার বয়েই গেছে আপনার বউয়ের দায়িত্ব পালন করতে। কাল রাতেই তো বললাম, আপনার সাথে আমার বিয়ের কোনো কথা মনে নেই, তাহলে আমি আপনার বউ কিভাবে হলাম?”
আরমান বেডের কাছে দাঁড়িয়ে আছে, মায়া বেডের এক পাশে বসে আছে। আরমান মায়ার কাছে কিছুটা ঝুঁকে বলল, “তাই বুঝি? একটু আগে আমার ই-মেল গুলোর রিপ্লাইয়ে কি কি বলবে বলছিলে যেনো? আর এখন যেটা হলো, তুমি কি চাও সেটা….”
আরমানকে আর বলতে দিলো না মায়া। ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই, বিছানায় হাঁটুতে ভর দিয়ে ঠারো হয়ে উঠে, একটা হাত আরমানের মাথার পিছনের দিয়ে আর একটা হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। আরমান তাকালো মায়ার চোখের দিকে, মায়াও কিছুক্ষণ চেয়ে রইল আরমানের চোখের দিকে। এরপর ধীরে ধীরে হাত সরিয়ে নিয়ে বেড থেকে টাওয়েল টা নিয়ে চুপচাপ আরমানের মাথা মুছতে শুরু করলো। আরমান বাঁকা হেসে বলল, “সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল কিভাবে বাঁকাতে হয় তা এই আরমান শাহরিয়ার এর খুব ভালো করে জানা আছে।”
আরমানের এমন কথায় মায়া মুখে কিছু না বলে মুখ বাঁকিয়ে আরো জোড়ে জোড়ে চুল মুছতে শুরু করলো।
আরমান:- “আহহ! আরেহ মায়াবতী কি করছো? মাথা সামনের দিক থেকে পিছন দিকে ঘুরে যাবে মনে হচ্ছে তো।”
মায়া থেমে গেলো। আরমানের মাথা থেকে টাওয়েল সরিয়ে নিলো। বলল, “নিন হয়ে গেছে। এখন তাড়াতাড়ি পোশাক পড়ে রেডি হয়ে নিন। নিচে যাবো অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
আরমান মাথাটা একবার নিচু করে বলল, “জো হুকুম বেগম সাহেবা।”
আরমানের বলার ধরন দেখে মায়া হেসে ফেললো। আরমানও মৃদু হাসলো। এগিয়ে গেলো ওয়ার্ডরোব এর দিকে পোশাক বের করার উদ্দেশ্যে। মায়ার এমন হাসি মাখা মুখ ওর হৃদয়ে প্রশান্তির হাওয়া বইয়ে দিচ্ছে। মায়াকে নিয়ে এই ছোটো ছোটো খুনশুটি ময় দিন গুলোর জন্য কত যে অপেক্ষা করছে তার হিসাব নেই। কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে, এই দিন গুলোর স্বপ্ন সাজিয়েছে মনের ক্যানভাসে। আর সেই স্বপ্ন, কল্পনা গুলো আজ বাস্তবে রূপান্তরিত হচ্ছে, এই অনুভূতি কাউকে বলে বোঝানোর মতো নয়।
আরমান পোশাক পড়তে পড়তে মায়াকে জিজ্ঞাসা করল, “আচ্ছা মায়াবতী! আসিফ কি তোমায় কিছু বলছিল?”
মায়া স্বাভাবিক ভাবেই বলল, “হুম বলছিল তো।”
আরমান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো, “কি বলছিল?”
মায়া:- “সে অনেক কথা। পরে বলবো।”
আরমান:- “না এখনি বলো। কি বলছিল ও?”
মায়া:- “উফফ! আপনি না অনেক জেদি একটা মানুষ। বলছি ওয়েট, মনে করতে দিন।”
এরপর মায়া ধীরে ধীরে তখন কার ওর আর আসিফের সমস্ত কথপোকথন খুলে বলল। আরমানের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠলো।
আরমান:- “হুম। আসিফ তো ঠিকই বলেছে। আমি যে তোমাকে সব কথা এবং ঘটনা সত্যি বলেছি এটা কিভাবে বিশ্বাস করে নিলে? মিথ্যাও তো হতে পারে।”
মায়া:- “আপনার বলা কথাগুলো আমার মস্তিষ্ক বিশ্বাস করতে চায়নি—কারণ সেখানে শুধুই শূন্যতা বিরাজ করছে, কোনো স্মৃতির অস্তিত্ব নেই। কিন্তু আমার মন… আমার হৃদয়… সেগুলো নিঃশব্দে বিশ্বাস করে নিয়েছে—কারণ আপনার কথায় ছিল সেই অনুভূতির ছোঁয়া, যা আমার ভেতরের অনুভূতির সঙ্গে মিশে গিয়ে এক হয়ে গেছে। যা স্মৃতির চেয়েও গভীর।”
মায়ার বলা কথা গুলো শুনে আরমান প্রতিউত্তরে কিছু বলার মতো খুঁজে পেলো না। হৃদয়ে ছুঁয়ে গেলো ওর বলা কথা গুলো। বেডে বসে থাকা মায়ার কাছে এগিয়ে এসে, আলতো ঠোঁটের ছোঁয়ায় কপালে এঁকে দিলো স্নেহের পরশ।
এরপর আরমান নরম গলায় বলল, “আচ্ছা শোনো! আসিফের থেকে দূরে থাকবে সব সময়। আমি যেনো না দেখি ওর সাথে কথা বলতে। ও কথা বলতে চাইলেও ওকে ইগনোর করবে। বুঝছো?”
মায়া:- “কিন্তু কেন? উনি তো খুব ভালো মনের একটা মানুষ। তবে হ্যাঁ উনার বলা কথা গুলো একটু কেমন যেনো।”
আরমান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মায়ার পাশে বসে বললো, “জানো মায়া! তুমি না স্মৃতি হারানোর আগে অনেকটা অন্য রকম ছিলে। চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ, কথার মধ্যে দৃঢ়তা, একেবারে শক্ত পোক্ত আত্মবিশ্বাসে ভরপুর এক কঠিন নারী। আমি ডান দিকে যেতে বললে তুমি বাঁ দিকে যেতে। আমার প্রতিটা কথার দৃঢ় ভাবে উত্তর দিতে। আর এখন? একবারে সহজ সরল বোকা সোকা হয়ে গেছে। সবার মনের প্যাঁচ বোঝার মতো ক্ষমতা তোমার এখন নেই। তাই শুধু এতোটুকু জেনে রাখো, আসিফ তোমাকে বলেছে না? যে তোমার সাথে ওর আগে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, ওটা একেবারে মিথ্যা। ওর সাথে তোমার পরিচয় হয়েছিল তোমার আমার অ্যাক্সিডেন্টের কদিন আগে। তার আগে ও লন্ডনে ছিল। আমাদের বিয়ে উপলক্ষে এসেছিল ও। ও তোমার সাথে মিশতে চাইতো, কথা বলতে চাইতো আর তুমি তখনো ওকে ইগনোর করতে। ও তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছিল কিন্তু তুমি তার সুযোগ দাও নি।”
মায়া মাথা নাড়িয়ে বলল, “ওহ আচ্ছা বুঝেছি। আর তার জন্যই উনি আবারও মিথ্যা বলে আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইছে। আচ্ছা আমার সাথে বন্ধুত্ব করে উনার কি লাভ?”
আরমান মায়ার কথা শুনে আবারও একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মেয়েটা সত্যিই আগের থেকে অনেক টা অবুঝ হয়ে গেছে।
আরমান মায়ার এক গালে হাত রেখে বলল, “বললাম না? তুমি এখন অনেক টা সহজ সরল বোকা সোকা হয়ে গেছো। অন্যের মনের প্যাঁচ বোঝার মতো ক্ষমতা তোমার নেই। বুঝতেও হবে না তোমায়। আমি আছি তো, সবকিছু সামলে নেবো। শুধু আমি যেগুলো বলছি সেগুলো মাথায় রেখো। যেটা বারণ করছি সেটা ভুলেও করবে না ঠিক আছে?”
মায়া মাথা নাড়িয়ে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু আমিও মোটেও সহজ সরল বোকা সোকা নয়। যথেষ্ট চালাক। দেখলেন না? অফিসে কেমন ওই কাঁচের দেওয়াল টা দেখেই বুঝে গেলাম আপনি আপনার জীবনের স্পেশাল মানুষটিকে স্পেশাল ভাবে দেখার জন্য ওই স্পেশাল কেবিন বানিয়েছিলেন। আর সেই কেবিন দিয়েছিলেন ও স্পেশাল মানুষকে।”
আরমান:- “আচ্ছা তাই বুঝি? আর তোমার ভাবানা অনুযায়ী সেই স্পেশাল মানুষটি কে ছিল?
রাতের পুরো ঘটনা আবির আমাকে জানিয়েছে, হুম তুমি এতোটাই চালাক, যে তার জন্য ভেবেছিলে বাড়িতে বউ রেখে আমি গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরছি। তাই না?”
মায়া ওর জিভ কাটল। আমতা আমতা করে বলল, “ওই ভাবনাতে আমার কি দোষ হ্যাঁ? আয়ান ভাইয়াই তো বলেছিল, ওই কেবিন আপনার হেড ডিজাইনার দিশা না ফিসা নামের কারোর ছিল। আমি কি আর জানতাম যে ওই হেড ডিজাইনার আমি নিজেই ছিলাম।”
আরমান মাথা নাড়িয়ে নাটকিয় ভঙ্গিতে বলল, “হুম তাই তো, তোমার কি দোষ? সব দোষ তো ওই আয়ানের।”
মায়া:- “হুম।”
এরপর মায়া কিছু মনে পড়েছে এমন ভঙ্গিতে বলে উঠলো, “এই যাহ! আমার পিকনিক? ধ্যাত! কত দেরি হয়ে গেলো আপনার সাথে কথা বলতে বলতে, আমার খেয়ালই নেই। এই তাড়াতাড়ি চলুন।”
বলেই মায়া তাড়াহুড়ো করে উঠে দাঁড়ালো নিচে যাওয়ার জন্য। আরমানও বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মায়ার হাত টেনে ধরলো। যার কারণে বিরক্ত হয়ে মায়া পিছনে ঘুরে জিজ্ঞাসা করলো, “আবার কি হলো?”
আরমান:- “কি বলেছি মনে আছে তো? আসিফের থেকে একদম দূরে থাকবে।”
মায়া:- “হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে। দয়া করে এবার তো চলুন।”
আরমান:- “হ্যাঁ চলো।”
এরপর আরমান একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “আচ্ছা মায়া? বলছি তুমি তো এখনো শাড়ি পড়ে আছো, হাঁটতে পারবে তো?”
মায়া ঝটকায় আরমানের থেকে দূরে সরে গিয়ে বলল, “এই একদম না। আর নয়। আমি বেশ হাঁটতে পারবো। শুধু কাছে আসার ধান্দা। হুঁ।”
বলেই মায়া দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। আরমান মৃদু হাসলো। এরপর বড়ো বড়ো পা ফেলে এগিয়ে গেল মায়ার কাছে। মায়ার ছোট্ট নরম হাতটা নিজের শক্ত হাতের মুঠোয় ধরে হাঁটা শুরু করলো। মায়া বিরক্ত হয়ে বলল, “উফফ! বাচ্চা নয় আমি। যে হাত না ধরলে পড়ে যাবো।”
আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৫১
“হুম তুমি তো আমার কাছে বাচ্চায়। গুনে গুনে আট বছরের ছোটো আমার থেকে। আমার বাচ্চা বউ। পিচ্চি মায়াবতী। এভাবেই সারা জীবন তোমার হাত ধরে আগলে রাখতে চাই।”