আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৫৪
সালমা খাতুন
রুবি দরজা খুলে দিতেই একে একে ভেতরে প্রবেশ করল আবির, আয়ান, আরমান আর মাইশা। তবে মাইশার বাহুডোরে আবদ্ধ মানুষটিকে দেখে মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে গেল সকলে। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো সবাই।
মাইশা এক হাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আনজুমা বেগমকে। অথচ এ যেন সেই আগের আনজুমা বেগম নন। শরীর অর্ধেকের মতো ক্ষীণ হয়ে গেছে, চোখের কোনে জমেছে কালি। মাত্র দু’মাসের ব্যবধানে যেন মানুষটার বয়স দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। মাথা নিচু করে নীরবে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।
সামিরা ছুটে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তাঁকে। বুকে মাথা রেখে কাঁপা গলায় উচ্চারণ করল, “ছোটো আম্মু…”—বাক্য শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়ল কান্নায়। আনজুমা বেগমও কেঁপে ওঠা হাতে জড়িয়ে ধরলেন সামিরাকে। দু’চোখ বেয়ে নেমে এলো নীরব অশ্রুধারা।
আবির তাড়াতাড়ি বলল, “শামুক তোর এই ফ্যাচফ্যাচ কান্নাকাটি পড়ে করিস। ছোটো আম্মু অসুস্থ, আগে উনাকে বসতে দে।”
সামিরা উনার বুক থেকে মাথা তুলে, তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে বলল,“হ্যাঁ হ্যাঁ, এসো ছোটো আম্মু! কী অবস্থা করেছো নিজের?”
আরমান দৃঢ় গলায় জানাল, “না, এখানে বসার দরকার নেই। মাইশা, সামিরা! ছোটো আম্মুকে রুমে নিয়ে যাও। অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছে, রেস্টের দরকার।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তারপর রুবিকে উদ্দেশ করে বলল, “রুবি, ছোটো আম্মুর জন্য কিছু হালকা খাবারের ব্যবস্থা করো। অনেকক্ষণ খালি পেটে আছে, মেডিসিনও নিতে হবে।”
ড্রয়িংরুমে বসা আয়ানের আব্বু কিছু বলতে চাইলেন, “আরমান…”
কিন্তু আরমান হাত তুলে উনাকে থামিয়ে দিলো। সামিরা এগিয়ে গেলো আনজুমা বেগমকে ধরে, সাবিনা বেগমও আনজুমা বেগমকে এগিয়ে এসে ধরলেন আর এক পাশ থেকে । আনজুমা বেগম অসহায় চোখে একবার তাকালেন, তারপর ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে রুমে উঠে গেলেন দু’জনের ভরসায়।
রুমে পৌঁছে তাঁকে বেডে বসাতেই আনজুমা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “এত কিছুর পরও একবারও কিছু জিজ্ঞাসা করলে না যে? এত সহজে কিভাবে মেনে নিলে?”
সাবিনা বেগম হালকা হাসলেন, “আমার ছেলের উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে। ও কারণ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না।”
অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলেন আনজুমা বেগম।
সাবিনা বেগম আবার বললেন, “তুই রেস্ট কর। আমি দেখি রুবিকে হেল্প করি।”
বলেই উনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। সামিরা নিঃশব্দে এসে বসল তাঁর পাশে। আয়ান রুমে এসে ধীরে ধীরে আনজুমা বেগমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। তারপর তাঁর কাঁপা হাতটা নিজের মাথায় টেনে নিল। সামিরাও আয়ানের অনুকরণে মাথা রাখল ছোটো আম্মুর কোলে, অন্য হাতটা নিয়ে রাখল নিজের মাথায়।
আনজুমা বেগম হাসলেন বটে, অথচ সেই হাসি যেন চাপা কষ্টে রূপ নেওয়া এক দীর্ঘশ্বাস।
আয়ান:- “ওই? আমার নকল করছিস কেনো? এতোক্ষণ তো বেশ বসে ছিলি?”
সামিরা:- “ওহ! তুমি বুঝি একা একা আদর খাবে ছোটো আম্মুর থেকে? আর আমি কি বানের জলে ভেসে এসেছি।”
আয়ান:- “নাহ! তুই তো ড্রেনের পচা পানিতে ভেসে এসেছিস। আমি আর আরমান তুলে নিয়ে এসেছিলাম।”
সামিরা চিৎকার করে উঠলো, “আয়ান ভাইয়া!!!”
বলেই উঠে আয়ানের চুল ধরে ঝাকাতে শুরু করলো।
আনজুমা বেগম ওদেরকে থামানোর চেষ্টা করছে, “আরে থাম তোরা। আবার সেই আগের মতো চুলোচুলি শুরু করেছিস?”
ঠিক তখনি বাইরে দরজার কাছ থেকে শোনা গেলো ফিক করে হেসে ফেলার শব্দ। মায়া দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে।
মায়া নিজের দিকে ওদেরকে তাকাতে দেখে ধীরে ধীরে ওর মুখের হাসি বিলীন হয়ে গেলো। মায়া বেশ কিছুক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে। এক অজানা টানে উপরে এসে ছোটো আম্মুর রুমের সামনে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ভিতরে যায়নি, দূর থেকেই দেখছিল। কেনো জানি মানুষটাকে বড্ড আপন আপন লাগছে ওর। কিন্তু চিনতে পারছে না। তবে ও ধারণা করেছে এটাই আয়ানের আম্মু। আরমান ওকে সবকিছু বলেছিল, ছোটো আম্মুর বিষয়টাও বাদ দেয়নি। কিন্তু কেনো জানি উনার প্রতি মায়ার মনে কোনো রাগ আসছে না, বরং প্রচন্ড মায়া লাগছে। একটা অজানা টান আসছে উনার প্রতি। বাড়ির পরিবেশ থমথমে, তাই কাউকে কিছু জিজ্ঞাসাও করতে পারছে না মায়া।
আনজুমা বেগম হাতের ইশারায় মায়াকে কাছে ডাকলেন। মায়ার চোখে মুখে দ্বিধার ছাপ। ইতিমধ্যেই সামিরা আয়ানের চুল ছেড়ে দিয়েছে। ও মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, “ভাবী মনি বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ভিতরে আসো।”
পিছন থেকে মাইশা মায়ার কাঁধে হাত রেখে বলল, “এখানে দাঁড়িয়ে কেনো? আই আমার সাথে।”
মাইশা মায়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো আনজুমা বেগমের কাছে।
আয়ান:- “ভাবী মনি তুমি বসো। আমি নিচে যাচ্ছি।”
বলেই এক লাফে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো। তারপর সামিরার চুলে জোড়ে টান দিয়ে রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে গেলো কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।
সামিরা ব্যাথায় আহ শব্দ করে উঠলো।
“তোমাকে আমি পরে দেখে নেবো ভাইয়া।”
আনজুমা বেগম হেসে বললেন, “এরা আর জীবনেও শুধরাবে না।”
মাইশাও মুচকি হাসলো। ও জানে, ও রুমে এসেছে তাই আয়ান বেরিয়ে গেলো। আর কত যে ইগনোর করবে আয়ান ওকে সেটা আল্লাহ ভালো জানেন। ও তো আয়ানের অবহেলা সহ্য করতে না পেরে চলেই গিয়েছিল এই বাড়ি থেকে। মাত্র কিছুদিন হয়েছে আরমান ওকে নিয়ে এসেছে এই বাড়িতে। ও আসতে চাইনি, আরমানের জোড়াজুড়িতে বাধ্য হয়েছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মাইশা। মায়াকে ছোটো আম্মুর পাশে বসিয়ে দিলো। নিজেও এক পাশে বসলো।
আনজুমা বেগম অসহায় গলায় মায়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “ভয় পাচ্ছো ছোটো আম্মুকে? পাওয়ারই কথা।”
মায়া ধীরে ধীরে দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। আনজুমা বেগম চোখের পানি ছেড়ে দিলেন। কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলেন, “জানি আমি যেটা তোমার সাথে করেছি সেটা ক্ষমার অযোগ্য। তবুও হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছি। আমকে ক্ষমা করে দিও মায়া। নাহলে যে মরেও শান্তি পাবো না।”
আনজুমা বেগম দুই হাত জোড় করে ধরেছিল মায়ার সামনে। মায়া উনার হাত ধরে ফেললো।
মায়া:- “এমন বলবেন না। আমি আপনার ছোটো। উনি আমাকে বলেছে আপনার এমন করার পিছনে নিশ্চয় কোনোদিন কারণ আছে।”
আনজুমা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “কারণ তো আছে। তবে নিজের অজান্তে তোমার কত বড়ো ক্ষতি করে ফেলেছি সেটা তুমি জানো না। জানলে হয়তো আমার মুখও দেখতে চাইতে না।”
মাইশা উনাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “এখন এইসব কথা থাক না আম্মু।”
ছোটো আম্মু ছলছল চোখে মাইশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, “তুমি জানো না মাইশা, আমার করা অপরাধ, প্রতিটা মুহূর্ত আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাই। প্রতিটা মুহূর্তে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে।”
নিচে ড্রয়িংরুমের পরিবেশ থমথমে। সবাই কেমন রিয়্যাকশন দেবে বুঝতে পারছে না। আরমান সবাইকে সবকিছু জানালো। আনজুমা বেগমকে ব্লাকমেইল করা হয়েছিল, আয়ানের বিদেশি মেয়ের সাথে কিছু ফটো আর ভিডিও পাঠিয়ে। ফটো ভিডিও গুলো ছিল আয়ানের বিদেশি মেয়ের সাথে নগ্ন অবস্থায়। অল্প শিক্ষিত, সহজ সরল আনজুমা বেগম বোঝেননি যে ওগুলো এডিট করা।
আনজুমা বেগম জানতেন যে ওই ওষুধে মায়া আরমানকে ভুলে যাবে। উনি প্রথমে রাজি হয়নি, কিন্তু বিভিন্ন রকম ভাবে ব্লাকমেইল করা হয়। এইদিকে মায়ার প্রেগন্যান্সির ব্যাপারেও কেউ কিচ্ছু জানতো না। তাই উনান অজান্তেই বাচ্চাটিও মারা যায়।
খুব নিখুঁত ভাবে প্ল্যান সাজানো হয়েছিল। আরমান আগেই বুঝেছিলো, এই সবকিছুর পিছনে অন্য কেউ আছে। আর সে খুব কাছ থেকে নজর রাখছে সবকিছুর উপর, তাই আরমানও সেই অজানা শত্রুর খেলায় সাথ দিয়ে নিজেও প্ল্যান সাজিয়েছিল। তাকে বুঝিয়ে ছিল, তার পরিকল্পনা মতোই কাজ হয়েছে। সে জানতো আরমান খুব সহজেই ধরে ফেলবে সবটা, তাই ছোটো আম্মুকে হাতিয়ার বানিয়ে ছিল। আর তার প্ল্যান অনুযায়ী নিজে আড়ালে থেকে ছোটো আম্মুকে ফাঁসিয়ে দেয়।
ছোটো আম্মুকে আগেই সবকিছু জানিয়ে রেখেছিল আরমান। এর পর ওর প্ল্যান অনুযায়ী পুলিশ এসে নিয়ে যায় সেই অজানা শত্রুকে দেখানোর জন্য। এতোদিন আনজুমা বেগম আরমানের এক গোপন ফ্ল্যাটে ছিলো।
কিছুদিন পরেই মাইশা এই বাড়ি থেকে চলে যায় আয়ানের অবহেলা সহ্য করতে না পেরে। আনজুমা বেগম আত্মগ্লানিতে নিজেকে শেষ করে দিতে চাই। তবে ফ্ল্যাটের কেয়ার টেকার এর জন্য পারে না। এরপর কিছুদিনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ে উনি। তখন আরমান মাইশাকে নিয়ে গিয়ে উনার কাছে রাখে।
আর সেই অজানা শত্রু প্রচন্ড চালাক। নিজের বিরুদ্ধে একটুও প্রমাণ রাখেনি, তাই চেয়েও আরমান তাকে ধরতে পারছে না। এখন আনজুমা বেগম দিন দিন আরো ভেঙে পড়ছে তাই আরমান উনাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনলো।
সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে, আনজুমা বেগমও আছেন এখানে। রুমে উনার দম বন্ধ হয়ে আসছিল, তাই নিচে এসে বসেছে সবার সাথে। সবাই উনার সাথে আগের মতোই স্বাভাবিক আচরণ করছে। সবাই মিলে আলোচনা করছে মাইশা, আয়ান আর মায়া, আরমানের বিয়ে নিয়ে। খুব তাড়াতাড়ি ওদের বিয়ে টা সেরে ফেলতে চাই সবাই।
আবির:- “আচ্ছা বিয়ের অনুষ্ঠান টা গ্রামের বাড়িতে করলে কেমন হয়?”
সামিরা লাফিয়ে উঠলো খুশিতে, “হ্যাঁ এটা ভীষণ ভালো বলেছো আবুল ভাইয়া, থুক্কু আবির ভাইয়া। বিয়ের অনুষ্ঠান গ্রামের বাড়ি থেকে করলে ভীষণ মজা হবে।”
ঠিক তখনি ওখানে মায়া উপস্থিত হলো। ও এতোক্ষণ নিজের রুমে ছিলো। ও খুশি মনে জিজ্ঞাসা করলো, “কাদের বিয়ের কথা হচ্ছে?”
কেউ কিছু বলার আগেই আরমান বলে উঠলো, “আয়ান আর মাইশার।”
আয়ান আর মাইশার বিয়ের কথা শুনে হঠাৎ মুখ ছোটো করে ফেললো মায়া। ও ভেবেছিল ওর আরমানের বিয়ের কথা বলছে হয়তো। ঠিকিই ভেবেছিল ও, কিন্তু আরমান বেচারির মনটাই ভেঙে দিলো। সবাই মায়াকে মুখ ছোটো করে নিতে দেখে মুখ চেপে হাসলো। তবে আরমান যেহেতু মায়াকে সত্যিটা জানালো না, তাই কেউ আর সাহস পেলো মায়াকে পুরোটা জানানোর। সাবিনা বেগম মায়াকে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে বলল, “কি হলো আম্মু? মন খারাপ কেনো?”
আবির মজা করে বলে উঠলো, “মায়া মনে হয় খুশি নয় আয়ান আর মাইশার বিয়েতে।”
মায়া তাড়াহুড়ো করে বলে উঠলো, “আরে সেটা কেনো হতে যাবে? আমি তো ভীষণ খুশি।”
আরমান গম্ভীর গলায় বলল, “তাহলে মন খারাপ হয়ে গেলো কেনো?”
মায়া বিড়বিড় করে বললো, “সেটা যদি আপনি বুঝতেন তাহলে তো হয়েই যেতো। হুঁ।”
বলেই মুখ বেঁকালো মায়া। মায়া বিড়বিড় করলেও পাশে বসা সাবিনা বেগম আর সামিরা ঠিকই শুনতে পেয়েছে।
সামিরা:- “বিড়বিড় করে কি বলছো আপু? আমরা তো শুনতেই পেলাম না।”
মায়া বিরক্ত গলায় বলল, “তোমরা শোনার জন্য তো বলিনি, বললে ঠিকই শুনতে পেতে।”
মায়ার হঠাৎ করেই এমন মেজাজ বিগড়াতে দেখে সবাই মুখ চেপে হাসছে। মেয়েটা সেই অ্যাক্সিডেন্টের পর থেকে এমন হয়ে গেছে। সবাই খুব ভালো ভাবে বোঝে মায়াকে, আর ওর সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এখন এমন করার কারণটাও সবাই খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে।
ডিনার করার পর মায়া নিজের রুমে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎই কেউ একজন পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো ওকে, মায়া বিরক্ত হয়ে ছাড়াতে চাইলো, কিন্তু পারছে না। কারণ আরমান নিজের হাত দিয়ে শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ করেছে নিজের বুকে।
আরমান:- “আমার বউ টা মনে হচ্ছে ভীষণ সাহসী হয়ে উঠেছে। অন্ধকারে হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরার পরেও সে চমকে উঠলো না যে?”
মায়া আরমানের উপস্থিতি আগেই টের পেয়েছে। এখন খুব ভালো ভাবে অনুভব করতে পারে ও আরমানকে। আরমান ওর কাছাকাছি থাকলে বা পিছনে থাকলে, ঘুরে দেখার প্রয়োজন পড়ে না। আরমানের এই ছোঁয়াটাও স্পষ্ট ভাবে চিনে গেছে এই দুই দিনে। আরমানের কথায় মায়া আরো ছটফট করতে শুরু করলো।
ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল, “একদম বউ বলবেন না আমায়। আমি আপনার বউ নয়। আর এভাবে ধরেছেন কেনো ছাড়ুন।”
আরমান ভ্রু কুঁচকে বলল, “বউকে বউ বলবোনা, বউকে জড়িয়ে ধরবো না, তো কাকে বউ বলবো? কাকে জড়িয়ে ধরবো?”
মায়া:- “যাকে ইচ্ছা বউ বলুন, যাকে ইচ্ছা জড়িয়ে ধরুন, তবে আমাকে নয়।”
আরমান:- “আচ্ছা বউ বলবোনা, মায়াবতী ডাকবো তাহলে। এটা আমার খুব পছন্দের ডাক। আর তোমার কথা মতো যাকে ইচ্ছে হয়েছে তাকেই তো জড়িয়ে ধরেছি।”
মায়া তখনো ছটপট করছিলো নিজেকে ছাড়ানোর উদ্দেশ্য। কিন্তু এই স্বাস্থ্যবান পুরুষটার কাছে ও একটা পাখির ছানার মতো। তাই আরমানের সাথে পেরে না উঠে বিরক্ত হয়ে হার মেনে নিলো। আরমান ওকে ওইভাবেই জড়িয়ে ধরে রেখে টেনে নিয়ে গেলো বারান্দায় থাকা কাউচের কাছে। নিজে কাউচে বসে মায়াকে নিজের কোলে বসিয়ে নিলো। শক্ত করে দুই হাত দিয়ে মায়ের পেট জড়িয়ে ধরে রাখলো।
আরমান:- “চলো তোমাকে আজ মায়াবতীর সাথে প্রথম দেখা হওয়ার পুরো গল্পটা শোনাই।”
হঠাৎই মায়া সবকিছু ভুলে গিয়ে, খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। “সত্যি শোনাবেন?”
আরমান:- “হুম।”
মায়া নড়েচড়ে ভালো করে বসলো আরমানের কোলের উপর। আরমান মনে মনে হাসলো কিছুটা। এরপর সেই পিচ্চি মায়াবতীর সাথে প্রথম দেখা হওয়ার ঘটনা বলতে শুরু করলো। আরমান একটু একটু করে বলছে আর মায়া এটা ওটা জিজ্ঞাসা করছে। এই যেমন, ওরা দার্জিলিং কেনো গিয়েছিল? কে কে গিয়েছিল? সেইদিন ভোর সকালে আরমান কেনো একা গাড়ি নিয়ে বের হলো? ও নিজেই বা একা কেনো অতো সকালে বেরিয়ে গেলো? কেউ আটকায়নি কেনো?
আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৫৩
এমন অনেক প্রশ্ন করছে মায়া আরমানকে বলার মাঝখানে থামিয়ে। আরমানও বিরক্ত না হয়ে খুশি মনে মায়ার সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এইভাবে অনেক টা রাত কেটে গেলো। মায়া নিজের শরীর টাকে আরমানের বুকে এলিয়ে দিয়েছিল। ধীরে ধীরে ওইভাবেই ঘুমিয়ে পড়লো। আরমান বেশ কিছুক্ষণ ওইভাবেই নিজের মায়াবতীর মুখের দিকে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো। এরপর ওকে খুব সাবধানে নিজের কোলে তুলে, রুমে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিলো। এসির টেম্পারেচার ঠিক করে, একটা হালকা চাদর গায়ে দিয়ে দিলো যত্ন সহকারে। শেষে মায়ার কপালে ভালোবাসা পরস দিয়ে, রুমের লাইট অফ করে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।