আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৫৫

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৫৫
সালমা খাতুন

মায়া ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। রান্না ঘরে দুপুরের রান্না করছিল এতোক্ষণ। বাড়ির পুরুষ মানুষ গুলো সব অফিসে। মাইশাও বেরিয়ে গেছে কোথায় জানি, সামিরা যাবে তার বন্ধু দের সাথে একটু ঘুরতে। মায়া প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছিল তাই এতোক্ষন রান্না ঘরে রান্না করছিল, এখন ও পরিকল্পনা করেছে আরমানের অফিসে আরমানের জন্য লাঞ্চ নিয়ে গিয়ে, ওকে একেবারে চমকে দেবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, রান্না শেষ করে এসে ওয়াশরুমে ঢুকলো গোসল করার জন্য।

গোসল শেষ করে এসে ও গেলো আরমানের রুমে। ড্রয়ার থেকে ওয়ার্ডরোবের চাবি নিয়ে, আরমানের বিশাল বড়ো ওয়ার্ডরোবের একটা নির্দিষ্ট দরজা খুলল। দরজা খুলতেই মায়ার চোখে পড়লো চোখ ধাঁধানো আধুনিক শাড়ি, ও বিভিন্ন ড্রেস। আর তার সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি, হ্যান্ডব্যাগ এবং সব থেকে নিচের থাকে প্রতিটা শাড়ির ও ড্রেসের সাথে ম্যাচিং জুতো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এগুলো অনেক দিন থেকে আরমান তার মায়াবতীর জন্য সংগ্রহ করে রেখেছে। ওর ফ্যাশন হাউসে যখনি নতুন কোনো কালেকশন লঞ্চ হয়েছে, আর সেটা ওর চোখে ধরেছে, তখনি সেটা সংগ্রহ করে রেখেছে মায়াবতীর জন্য। এছাড়াও বিজনেসের কাজে অনেক বার বিদেশে যেতে হয়েছে ওকে। যেখানে যেটা চোখে ধরেছে, সেটাতে নিজের মায়াবতীকে কল্পনা করে নিয়ে নিয়েছে ও।
মায়া মুচকি হাসলো। শাড়ির কালেকশন গুলো থেকে তুলে নিলো একটা গাঢ় মেরুন রঙের বেনারসি সিল্ক এর শাড়ি। শাড়ির আঁচলের সোনালী জরির ভারী কাজ এবং পুরো মেঝেতে হালকা কাজ। সেই শাড়ির সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি গুলোও নিলো মায়া। জুয়েলারি গুলোও গাঢ় মেরুন রঙের।
প্রয়োজনীয় সবকিছু ওখান থেকে নিয়ে মায়া নিজের রুমে রেখে, এরপর গেলো সাবিনা বেগমের রুমে। রুমে নক করে বলল, “আম্মু আসবো?”

সাবিনা বেগম:- “আরে মায়া! এই রুমে আসার জন্য তোমাকে পারমিশন নিতে হবে কেনো? এসো? কিছু বলবে?”
সাবিনা বেগমও এর আগে মায়ার সাথে রান্না ঘরেই ছিলেন। উনিও কিছুক্ষণ আগে রুমে এসে, এই মাত্র ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছেন।
মায়া আমতা আমতা করে বলল, “হ্যাঁ! মানে বলছিলাম কি আমি একটু অফিসে যেতাম।”
সাবিনা বেগম ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কোন অফিসে?”
মায়া:- “আবার কোন অফিস? উনার অফিসের কথা বলছি আমি।”
সাবিনা বেগম বুঝেও না বোঝার ভান করে জিজ্ঞাসা করলো, “উনার অফিস? উনি টা কে?”
মায়া বিরক্ত হয়ে বলল, “আরে উনি মানে আপনার ছেলে, গম্ভীর মুখো হুলো বিড়াল। শাহরিয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ এ্যান্ড ফ্যাশন হাউসের কথা বলছি আমি।”

হঠাৎই মায়ার মনে পড়ে গেলো ও কি বলে ফেলেছে। জিভ কাটলো ও। ভয় ভয় চোখে তাকালো সাবিনা বেগমের দিকে। সাবিনা বেগমের চোখে মুখে কপট রাগী ভাব। মায়া কাঁদো কাঁদো মুখ করে, এক কানে হাত দিয়ে বলল, “সঅঅরি! ভুল করে বেরিয়ে গেছে।‌ আর হবে না এমন।”
সাবিনা বেগম মুখে মিথ্যা গম্ভীর ভাব বজায় রেখে বলল, “হুম জানি আমার ছেলেটা সব সময় গম্ভীর হয়ে থাকে। তাই তার সাথে গম্ভীর মুখো টা যায় কিন্তু তাই বলে হুলো বিড়াল?”
মায়ার অবস্থা এমন যে ও এবার সত্যি সত্যি কেঁদে ফেলবে। “সত্যি বলছি আর বলবো না কখনো। ভুল হয়ে গেছে।‌ এইবারের মতো মাফ করে দিন।”
হঠাৎই সাবিনা বেগম হেসে ফেললেন। উনি মায়াকে নিজের কাছে টেনে নিলেন। মায়া বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে রইল উনার দিকে।

উনি বললেন, “আরে আমি তো এমনিই তোমার সাথে মজা করছিলাম। তুমি তো দেখছি এবার কেঁদেই ফেলবে। যা ইচ্ছা বলতে পারো তুমি ওকে। আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। শুধু বলবো আমার ছেলেটাকে একটু ভালোবাসা দিও। হ্যাঁ ও অনেক টা রগচটা, জেদি, গম্ভীর স্বভাবের। তবে ওর ভিতর টা অনেক নরম। আর সেই নরম ভাবটা ও সহজে কাউকে দেখাতে পারেনা একমাত্র তোমাকে ছাড়া। তোমার উপরেও অধিকার, জেদ টা একটু বেশি দেখায়। কষ্ট করে একটু মানিয়ে নিও, কখনো ভুল বুঝো না আমার ছেলেটাকে। তুমি হচ্ছো ওর প্রাণ ভোমরা।”
মায়া উনার শেষের কথাই কিছুটা লজ্জা পেলো। সাবিনা বেগম মায়াকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে আছে। উনি কিছুটা শক্ত গলার ভান ধরে বললেন, “কি হলো? কি বললাম বুঝেছো?”

মায়া উনার বুকের কাছে মাথা রেখেই মুখে কিছু না বলে মুখে লজ্জা মিশ্রিত ভাব নিয়ে মাথা নাড়ালো। মানে সে বুঝেছে।
সাবিনা বেগম মিষ্টি হেসে জড়িয়ে ধরলো মায়াকে, “এই তো আমার সোনা আম্মু। আচ্ছা কিন্তু তুমি অফিস একা যাবে? আরমান জানতে পারলে তো বকবে।”
মায়া উনার বুক থেকে সরে এসে বলল, “না না একা যাবো না তো।‌ সামিরা বেরোবে, ওর বন্ধু দের সাথে ঘুরতে যাবে মনে হয়। তো ওকে বলবো আমাকে আগে অফিসে নামিয়ে তারপর যেতে।”
সাবিনা বেগম:- “হ্যাঁ তাহলে ঠিক আছে। যাও তুমি রেডি হয়ে নাও। আমি আরমান দের জন্য লাঞ্চ বক্স রেডি করি।”
মায়া:- “ লাঞ্চ বক্স আমি রুবি কে বলে এসেছি, ও রেডি করে দেবে। আপনি আমার সাথে আসুন আম্মু। আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবেন। আমি শাড়ি পড়তে পারলেও আপনার মতো এতো সুন্দর করে পারি না।”
সাবিনা বেগম:- “পড়িয়ে দিতে পারি তবে একটা শর্ত আছে।”
মায়া:- “কি শর্ত আম্মু?”

সাবিনা বেগম মৃদু রাগ দেখিয়ে বললেন, “আম্মু বলছো অথচ আপনিও বলছো? কেমন যেনো পর পর লাগে আপনি শুনতে। আজ থেকে না এই মুহূর্ত থেকে তুমি বলবে। বুঝেছো?”
মায়া:- “আচ্ছা ঠিক আছে! ঠিক আছে! এবার চলুন..না মানে চলো।”
মিসেস সাবিনা বেগম হেসে ফেললেন। সাথে মায়াও।
সাবিনা বেগম:- “চলো।”

শাহরিয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ এ্যান্ড ফ্যাশন হাউসের সামনে গাড়ি এসে থামতেই, গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো মিসেস আরমান শাহরিয়ার। অফিসে যাতায়াতরত মানুষ গুলো হঠাৎই থেমে গেলো মায়াকে দেখে। কেউ কেউ অবাক তো কেউ কেউ মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল। মায়ার লুক টাই এমন যে কেউ চোখ ফেরাতে পারছে না।
মায়ার পরনে ডার্ক মেরুন শাড়ি। মুখে হালকা মেকআপ এর প্রলেপ। চোখে কাজল, কপালে ছোট্ট মেরুন রঙের টিপ। মায়ার কোমরের মাঝ বরাবর চুলগুলো অর্ধেক পিছনে ও অর্ধেক সামনে ডান পাশে ছড়ানো। ডান পাশে কানের কাছে একটা মেরুন রঙের গোলাপ। গলায় একটা হালকা মেরুন রঙের নেকলেস ও তার সাথে ম্যাচিং কানের দুল রয়েছে কানে। দুই হাতে এক হাত করে মেরুন রঙের ভেলভেটের চুরি। আর সবথেকে আকর্ষনীয় যেটা ওকে করে তুলেছে সেটা হলো ওর চোখে সানগ্লাস। সানগ্লাস টা সামিরার। সামিরা জোড় করে পরিয়ে দিয়েছে।
সামিরাও নেমে এলো গাড়ি থেকে। ওর পরনে স্টাইলিশ কুর্তি, গলায় একটা স্কার্ফ পেঁচানো। মায়া সামিরাকে বলল, “তুমি নামলে যে?”

সামিরা:- “চলো তোমাকে ভিতরে দিয়ে আসি।”
মায়া:- “আরে আমি পারবো যেতে।”
সামিরা:- “হুম, আমি জানি তো তুমি পারবে। কিন্তু আমার হাতে এখনো কিছুটা সময় আছে।‌ আমিও অনেক দিন হয়ে গেলো অফিসে আসিনি, তাই চলো আমিও ভিতরে যাবো।”
মায়া ভ্রু কুঁচকে বলল, “এই তো সেই দিনই রাত্রি বেলা আমার সাথে অফিসে এসেছিলে। আর বলছো অনেক দিন আসোনি?”
সামিরা:- “হুম সেদিন তো রাত্রি বেলা ছিল। এই অফিসের কারোর সাথে দেখা হয়নি।‌ তাই ভাবলাম সবার সাথে দেখা করে যায়।”
মায়া:- “আচ্ছা চলো।”
বলেই মায়া নিজের অ্যাটিটিউড বজায় রেখে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে। পিছু পিছু সামিরাও গেলো। ড্রাইভার লাঞ্চ বক্সের ব্যাগ টা নিয়ে গেলো।

মায়া অফিসের মেন গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই থমকে গেলো। ওকে অবাক করে দিয়ে ওর উপরে ফুলের বর্ষন শুরু হলো। মায়ার ঠিক সামনেই ফ্লোরে লাল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে বড়ো করে লাভ সেপ করা, লাভ সেপের হলুদ গাঁদা দিয়ে বর্ডার করা। আর লাভের মাঝে সাদা রজনীগন্ধা দিয়ে “Welcome Back to our office Ma’am.”
মায়া এতোটাই অবাক যে ও মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। ও আরমানকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল কিন্তু এখন ও নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেলো। তানিশা মায়ার সহকারী ডিজাইনার এগিয়ে এলো হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে।
“ওয়েলকাম ব্যাক ম্যাম।”

মায়া “থ্যাঙ্কস।” জানিয়ে ফুলের তোড়া হাতে নিলো। একে একে বেশ কিছু স্টাফ এগিয়ে এসে মায়াকে ওয়েলকাম জানালো। এরপর একে সবাই সরে যেতেই মায়া দেখতে পেলো বেশ কিছুটা দূরে ওর সোজাসুজি দাঁড়িয়ে আছে আরমান। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে ওরই দিকে। হাতে একটা সাদা গোলাপের তোড়া। ওর এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে আবির আর এক পাশে আয়ান। মায়া ফ্লোরে ফুলের পাপড়ি দিয়ে করা রাস্তার উপর দিয়ে ধীরে এগিয়ে গেলো আরমানের সামনে। আরমান ফুলের তোড়া টা এগিয়ে দিয়ে বলল, “Welcome Back to our office Misses Armaan Shahriyar.”
মায়া তখনো অবাক। অবাক হয়েই হাতে ফুলের তোড়া নিলো। হাসি মুখে বলল, “Thanks Mister Armaan Shahriyar.”
আবির মুখে দুষ্টু হাসি নিয়ে বলল, “কি? আরমানকে সারপ্রাইজ দিতে এসে এখন নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেলে তাই তো?”

মায়া:- “সারপ্রাইজ? না একেবারে বড়ো ধরনের শকড খেলাম। এতো কিছু স্বপ্নেও আশা করিনি। কিন্তু এতো সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে আয়োজন করেছো। আমার তো এখানে আসার কোনো প্ল্যান ছিল না। হঠাৎ করেই আসলাম আমি।”
আয়ান:- “আরমান শাহরিয়ার এর দ্বারা সবকিছুই সম্ভব ভাবী মনি। সামিরা ভাইয়াকে জানাতেই, ভাইয়া সব কাজ বাদ দিয়ে এইসব কিছুর আয়োজন করিয়েছে।”
মায়া কৃতজ্ঞতার চোখে তাকালো আরমানের দিকে। এরপর সামিরাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “দিলে তো আমার সারপ্রাইজ টা নষ্ট করে?”

সামিরা দাঁত দেখিয়ে বলল, “তার জন্য সঅঅরিইই। কিন্তু এর বদলে যে তোমাকে এতো বড়ো একটা সারপ্রাইজ দেওয়া হলো। তার জন্য সবার আমাকে থ্যাঙ্কস জানানো উচিত। এই সবকিছু আমার জন্য সম্ভব হয়েছে। আমি যদি না জানাতাম তাহলে হতই না।”
আয়ান:- “বয়েই গেছে তোকে থ্যাঙ্কস জানাতে। যেখানে যাচ্ছিস সেখানে যা বেশি না বকে।”
সামিরা:- “এই যাহ! আমার তো মনেই নেই। অনেক টা লেট হয়ে গেলো, আমি গেলাম। বাই এভরিওয়ান।”
বলেই সামিরা ছুট লাগালো। আরমান পিছন থেকে চিল্লিয়ে উঠলো, “সামিরা লাঞ্চ টা তো করে যা।”
সামিরা যেতে যেতেই বলল, “ একদম সময় নেই ভাইয়া। আর এখন লাঞ্চ করলে, ফ্রেন্ড দের সাথে খেতে পারবো না।”

এরপর মায়া আগে যাদের সাথে কাজ করতো, তাদের সবার সাথে আরমান মায়ার আবারও পরিচয় করিয়ে দিলো।
আরমানের অফিসে ওদের খাওয়ার জন্য আলাদা একটা রুম আছে।‌ এরপর মায়ার বাড়ি থেকে আনা লাঞ্চ দিয়ে, আয়ান, আবির, আরমান ও মায়া দুপুরের খাওয়া শেষ করলো। এরপর আয়ান আবির নিজের নিজের কাজে চলে গেলো। মায়া খাওয়ার রুম থেকে বেরিয়ে সোজা হাঁটা ধরলো আরমানের কেবিনের দিকে। এরপর কেবিনের দরজা খুলে ঢুকে অ্যাটিটিউড বজায় রেখে সোজা আরমানের চেয়ারে গিয়ে বসলো। মুখে গম্ভীর ভাব। দেখে মনে হচ্ছে এই অফিসের বস হচ্ছে মায়া। আরমান ভিতরে প্রবেশ করতেই মায়া গম্ভীর গলায় বলে উঠলো, “কারো কেবিনে প্রবেশ করার আগে অনুমতি নিতে হয়। সেটা জানা নেই আপনার?”

হঠাৎই থমকে গেলো আরমান। এই একই ধরনের কথা মায়াকে বলেছিল ও। সেই দিন শাহরিয়ার ম্যানশনে মায়ার দ্বিতীয় দিন ছিল। মায়া কফি নিয়ে গিয়েছিল আরমানের জন্য।
মায়া আরমানকে ভাবানায় ডুবে যেতে দেখে জিজ্ঞাসা করলো, “কি হলো। কোন ভাবনার সাগরে হারালেন মিস্টার? আমি কিছু জিজ্ঞাসা করেছি তো?”
আরমান নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, নাটকিয় ভঙ্গিতে বললো, “আচ্ছা তাই বুঝি? সরি ম্যাম ভুল হয়ে গেছে। এমন ভুল আর হবে না।”
মায়া:- “আচ্ছা ঠিক আছে। মনে থাকে যেনো। এখন সারা বছরের কাজের হিসাব দিন আমায়। কত গুলো ডিল সাকসেস হয়েছে? কতটা লস হয়েছে? সবকিছুর হিসাব চাই।”
ইতিমধ্যেই আরমান মায়ার সামনে থাকা চেয়ারে এসে বসেছে।

আরমান:- “ইয়েস ম্যাম। এই বছরের সেরা ডিল হচ্ছে, আরমান শাহরিয়ার তার হারিয়ে যাওয়া মায়াবতীকে ফিরে পেয়েছে। লস হচ্ছে, এই বছরেই মায়াবতী তার গম্ভীর সাহেবকে ভুল বুঝে দূরে সরে গিয়েছিল। কিন্তু খুশির খবর এই যে আবারও মায়াবতী তার গম্ভীর সাহেবের জীবনে ফিরে এসেছে।”
আরমানের কথার মাঝেই মায়া ধীর পায়ে উঠে এসেছে আরমানের কাছে। আরমানের কথা শেষ হতেই মায়া আরমানের দিকে ঝুঁকে এসে আরমানের কোর্টের কলার্ট ধরে বলল, “আপনার কাছে আমি আপনার জীবনের হিসাব চাইনি মিস্টার। আর না মায়াবতী ও গম্ভীর সাহেবের গল্প শুনাতে চেয়েছি।”

আরমান মায়ার কোমর ধরে টেনে মায়াকে নিজের উপর ফেলে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো।
মায়া:- “আরে কি করছেন টা কি? ছাড়ুন কেউ চলে আসবে তো। সবসময় এমন কাছে টানেন কেনো হ্যাঁ?”
আরমান মায়াকে নিজের কোলে ভালো করে বসিয়ে নিয়ে, মায়ার ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে বলল, “তুমিই তো নিজে থেকেই কাছে আসলে তাই আমি আরো কাছে টেনে নিলাম। আর এখন কেউ আসবে না, সবাই জানে আরমান শাহরিয়ার তার বউ নিয়ে ব্যাস্ত আছে। আর বউ যদি এতো আকর্শনীয় রূপে সামনে হাজির হয় তাহলে কি তাকে কাছে না টেনে থাকা যায়। অসম্ভব সুন্দর লাগছে আমার মায়াবতী বউটাকে।”

মায়া প্রচন্ড লজ্জায় মুখ লুকালো আরমানের বুকে। আরমান মায়ার কোমর শাড়ি ভেদ করে, ভালো করে পেঁচিয়ে ধরতেই আরমানের হাত গিয়ে পড়লো মায়ার কোমরে থাকা কোমর বন্ধনীটির উপর। হঠাৎই মায়ার কিছু মনে পড়ে গেলো যেনো। ও কৌতূহল গলায় জিজ্ঞাসা করলো, “আচ্ছা গম্ভীর সাহেব! আমার কোমরে ওটা কিভাবে আসলো?”
আরমান আবারও মায়া ঘাড়ে মুখ গুঁজেছে, ওভাবেই জিজ্ঞাসা করলো, “ওটা বলতে কোনটা?”
মায়া:- “আরে আমার কোমরে যেটা আছে।”
আরমান:- “কি আছে তোমার কোমরে? কই দেখি?”
আরমান মুখ তুলে শাড়ি সরাতে গেলেই মায়া তাড়াতাড়ি শাড়ি দিয়ে নিজের কোমর ঢেকে ফেললো।
আরমান:- “না দেখালেও বুঝবো কি করে?”

মায়া:- “আপনি খুব ভালো জানেন, আমি কিসের কথা বলছি। তারপরেও নাটক করছেন হ্যাঁ? নির্লজ্জ পুরুষ মানুষ। কোমর বন্ধনীটি কিভাবে আসলো কোমরে? ওটা আমি অনেক চেষ্টা করেও খুলতে পারেনি। ওই কোমর বন্ধনীটি কিভাবে আসলো? সেই বিষয়ে জানতে চাই। বলুন আমায়।”
হঠাৎই আরমান মায়াকে উঠে দাঁড় করিয়ে নিজেও দাঁড়ালো। তারপর টেবিল থেকে একটা ফাইল বাঁধার দড়ি তুলে নিলো। এরপর মায়া কিছু বুঝে উঠার আগেই আরমান মায়াকে জানালার কাছে টেনে নিয়ে এসে, ওর হাত দুটো জানালার গ্রিলের সাথে বেঁধে দিলো। ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো যে মায়া কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। যখন বুঝলো তখন ওর হাত বাঁধা হয়ে গেছে।

মায়া অবাক গলায় প্রশ্ন করলো, “আরে কি করছেন?”
আরমান কোনো উত্তর না পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে, মায়ার মুখটাও হালকা করে বেঁধে দিলো। মায়া অবাক চোখে তাকিয়ে রইল আরমানের দিকে। এরপর আরমান ধীরে ধীরে মায়ার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে পড়লো। আলতো স্পর্শে মায়ার পেটের কাছের কাপড় সরিয়ে দিলো। মায়ার পুরো পেট দৃশ্যমান হলো আরমানের চোখের সামনে, ফর্সা ধবধবে পেটে কোমর বন্ধনীটি জ্বলজ্বল করছে। একটা নির্দিষ্ট ডায়মন্ডের পাথরে আরমান তার ডান হাতের বুড়ো আঙুল ছোঁয়াতেই কোমর বন্ধনীটির লক খুলে গেলো। আরমান কোমর বন্ধনীটি মায়ার কোমর থেকে খুলে নিয়ে ওকে দেখিয়ে বলল, “দেখো এবার, কিভাবে তোমার কোমরে এসেছিল। তুমি জানতে চাইলে আর আমি প্রাক্টিক্যালি দেখিয়ে দিচ্ছি।”

বলেই আরমান আবারও কোমর বন্ধনীটি মায়ার কোমরে পরিয়ে দিতে শুরু করলো। আরমানের হাতের ছোঁয়ায় মায়া কেঁপে কেঁপে উঠছে। এরপর পরানো শেষ হতেই, আরমান সেই আগের মতোই, মায়ার পেটের মাঝখানে নাভির কাছে থাকা গাঢ় লাল রঙের রুবি পাথর টার উপর ঠোঁট ছোঁয়াল। সেই স্পর্শ মায়া তার পেটেও অনুভব করলো। চোখ বন্ধ করে নিলো মায়া।
এরপর মায়ার শাড়ি ঠিক করে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো আরমান। মায়ার কপালে ঠোঁট ছোঁয়াল স্নেহ ভরা স্পর্শে। তারপর মায়ার মুখের বাঁধন খুলে দিতে দিতে বলল, “ঠিক এভাবেই ওটা তোমার কোমরে এসেছিল।”
মায়া মুখ খোলা পেতেই বড়ো করে শ্বাস টেনে বলল, “তাই বলে এভাবে বেঁধে রেখে দেখানোর কি আছে? হাত বেঁধেছেন ঠিক আছে তবে মুখটাও বাঁধতে হবে।”

আরমান মায়ার হাতের বাঁধন খুলে দিতে দিতে বলল, “হুম বললাম না, প্রাক্টিক্যালি দেখাচ্ছি। সেদিনও এভাবেই বেঁধে ছিলাম তোমায়। শুধু এই দড়ির জায়গায় ছিল তোমার ওরনা। আর সাথে পা টাও বেঁধে ছিলাম।”
মায়া আবাক গলায় বলল, “মানে? কিছুই বুঝলাম না আমি।”
আরমান মায়াকে চেয়ারে বসিয়ে পানি খাওয়াতে খাওয়াতে, সেদিনের সপিং মলের পুরো ঘটনা খুলে বলল। মায়া সবকিছু শুনে প্রচন্ড অবাক হলো। মৃদু রাগ দেখিয়ে বলল, “আপনি প্রচুর ডেঞ্জারাস মানুষ তো। সেদিন যদি আমি ভয় পেয়ে হার্ট অ্যাটাক করতাম।”
আরমান:- “করতে না। কারণ তখন আমার মায়াবতী মোটেও এতোটা ভীতু ছিল না।”

মায়া:- “কিন্ত কি দরকার ছিল এটা দেওয়ার? দেখে মনে হচ্ছে এটা তো অনেক দামি।আর যখন তখন খোলাও যায় না। এটা তো শুধু আপনার ফিঙ্গার প্রিন্ট এই খুলবে মনে হচ্ছে।”
আরমান:- “তোমার থেকে দামি কিছুই না আমার কাছে মায়াবতী। আমি চাই এটা সবসময় তোমার কোমরে থাকুক। খোলার চেষ্টাও করবে না কখনো, এমনিতে তুমি চাইলেও খুলতে পারবে না।”
আরমানের কথার মাঝেই ওর টেবিলে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো। দুজনেরই চোখ পড়লো ফোনের স্ক্রিনে, আবিরের নাম ভেসে উঠছে সেখানে। আরমান বিরক্ত হয়ে ফোনটা সাইলেন্ট করে দিলো।
মায়া:- “কি হলো? ফোনটা তুলুন। ইমারজেন্সি কিছু হতে পারে।”

আরমান:- “বাদ দাও, ইমারজেন্সি কিছু না। এখন আমি শুধু তোমাকে সময় দিতে চাই।”
কল কেটে গিয়ে আবারও বেজে উঠলো। আরমান বিরক্তিতে চ শব্দ করে, ফোনটা কেটে দিতে চাইলো, কিন্তু তার আগেই মায়া কলটা রিসিভ করে ফোনে স্পিকারে দিয়ে দিলো। সাথে সাথে আবির বলে উঠলো, “জানি ভাই বউকে নিয়ে রোমান্স করতে ব্যাস্ত আছিস তুই। তবে কিছুক্ষণ আগে তুই মায়াকে সারপ্রাইজ দিলো, এখন তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে বাইরে। একজন স্পেশাল মানুষ এসেছে। এখন আমরা দরজার বাইরে অপেক্ষা করছি, দরজা টা খুললে জীবন ধন্য হয়ে যেতো আমাদের।”
ফোন স্পিকারে থাকায় আবিরের কথা গুলো শুনেছে মায়া। আবিরের প্রথম কথাটা শুনেই শুকনো বিষম খেয়েছে ও। কাশতে শুরু করেছে। আরমান তাড়াতাড়ি মায়া পিঠে মাথায় হাত বুলিয়ে পানি খাওয়ালো। এদিকে আবির তখনো বকবক করেই চলেছে।‌

আবির:- “দেখলি তো আমি ঠিকই বলেছি। মানুষ শুকনো বিষম কখন খাইতো বল তো? যখন…”
আবিরকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই ফোন কেটে দিলো আরমান।
আরমান চিন্তিত গলায় বলল, “ঠিক আছো তুমি?”
ততক্ষণে মায়ার কাশি থেমে গিয়েছে। ও মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো। “হুম ঠিক আছি। এখন দরজাটা খুলুন। আমিও দেখতে চাই কোন স্পেশাল মানুষ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।”
আরমান কোনো জবাব না দিয়ে বিরক্ত হয়ে এগিয়ে গেলো দরজা খুলতে। পিছু পিছু মায়াও এলো। দরজা খুলতেই আবিরের সাথে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে বিরক্তির শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলো আরমান। রাগে হাতের মুঠো শক্ত হয়ে গেলো। চোয়ালের পেশি টান টান।

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৫৪

আবিরের সাথে থাকা মানুষটি বলে উঠলো, “হেই মিস মাইহা! খেমন হাছো ঠুমি? ঠুমি হেখানো হাছো ঠাই অফিসে কোঠাও ঢেকলাম না। খিন্তু ঠোমরা ডোর ভন্ড খরে খি খরছিলে?”
শেষের বাক্য টা মানুষটি চিন্তিত সুরে জিজ্ঞাসা করলো। এদিকে মায়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। অতিরিক্ত কৌতুহল মিশ্রিত কন্ঠে আবিরকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করলো মায়া, “ভাইয়া! এই আজব প্রাণীটি কোন গ্রহ থেকে এসেছে?”

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৫৬