আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৫৬

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৫৬
সালমা খাতুন

“ভাইয়া! এই আজব প্রাণীটি কোন গ্রহ থেকে এসেছে?”
আবির কিছু বলার আগেই মিস্টার ড্যানিয়েল বোকা বোকা চোখে মায়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “মাইহা! ঠুমি খি হামাকে প্রাণহি ভললে?”
মায়া ভ্রু কুঁচকে বলল, “এখানে কি আরো কেউ আছে নাকি, যে আপনার মতো অদ্ভুত উচ্চারণে কথা বলছে? আর আপনি আমাকে মাইহা! মাইহা! করেছেন কেনো? মায়া! মায়া! আমার নাম মায়া।”
মিস্টার ড্যানিয়েল মাথা নাড়িয়ে বলল, “ইয়েস! হামি ঝানি তো মা.. মাআইয়া। ঠোমার নেম মাইয়া। খিন্তু ঠুমি আমায় প্রাণহি ভললে কেনো?”
মায়া কপাল চাপড়ে বলল, “আরে হাঁদারাম মাইয়া নয়, মায়া। আর আপনি কি প্রাণহীন? আপনার শরীরে কি প্রাণ নেই?”

মিস্টার ড্যানিয়েল:- “হা..হাঁ..ধা..হাঁধারাম!! হোয়াট ইজ হাঁ..আধারাম?”
অনেক কষ্টে হাঁদারাম শব্দটি উচ্চারণ করলেন মিস্টার ড্যানিয়েল।
মায়া:- “বোঝো ঠ্যালা! এখন একে কে বোঝাবে? থাক ভাই আপনাকে আর আমার সঠিক নাম উচ্চারণ করতে হবে না।‌ কিন্তু এটা বলেন আপনি আমায় কিভাবে চিনেন?”
মিস্টার ড্যানিয়েল মুখ ছোটো করে বলল, “হোয়াট! ভাই? মানে Brother? ঠুমি আমায় ব্রাদার ভললে মাইয়া? হার ওই যে হাঁ..ধারাম। মানহে খি ভললে না তো?”
আবির তাড়াতাড়ি হেসে বলল, “আরে মিস্টার ড্যানিয়েল, হাঁদারাম, ভালো বন্ধু, ফ্রেন্ডদের কে বলে। হাঁদারাম মানে ভালো বন্ধু।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মিস্টার ড্যানিয়েল হেসে গদগদ হয়ে বললেন, “ঠাই নাকি? ওহ মাইয়া! শুনে বিশন বালো লাঘলো, ঠুমি হামাকে ঠোমার বালো ফ্রেন্ড মনে করো।”
মায়া:- “আরে আবির ভাইয়া মিথ্যা বলছো কেনো তুমি উনাকে। আমি এই অদ্ভুত প্রাণীটাকে…”
আবির মাঝ পথে মায়াকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “মায়া তুমি জানো কাকে কি বলছো। উনি মিস্টার ড্যানিয়েল। আমাদের কম্পানির একজন বড়ো বিদেশি ক্লাইন্ট। উনার সাথে অনেক বড়ো ডিল সাইন করেছিলাম আমারা।”
এতোটুকু শুনেই মায়া জিভ কাটলো। এতোক্ষণ কত কি না বললো ও এই লোকটাকে। ভয় ভয় চোখে তাকালো আরমানের দিকে।‌ মায়া দেখলো আরমানের মুখ রাগে পুরো লাল হয়ে আছে। চোয়াল শক্ত। মায়া ভাবলো যে ওর জন্যই আরমান হয় তো রেগে আছে। এতো বড়ো বিদেশি ক্লাইন্টকে কত কি বলল ও, এতে তো ওই ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হলে, আরমানের বিজনেস এ লস হতে পারে।

মায়া কাঁদো কাঁদো মুখে করে, এক কানে লতিতে হাত দিয়ে আরমানের দিকে তাকিয়ে বলল, “সঅঅরি গম্ভীর সাহেব, আর আপনার বিদেশি ক্লাইন্টকে উল্টো পাল্টা কিছু বলবো না। এইবারের মতো মাফ করে দিন। উনি তো ঠিক মতো বুঝেননি আমার কথা গুলো। আবির ভাইয়া সামলে নিয়েছে।”
এরপর মায়া মিস্টার ড্যানিয়েলকে উদ্দেশ্য করে বলল, “এই যে অদ্ভুত প্রাণী!! না না সরি সরি, মিস্টার ভ্যানিয়েল…”
আবির মায়ার ভুল শুধরে দিয়ে বলল, “আরে মায়া, ভ্যানিয়েল নয় ড্যানিয়েল।”
মায়া দাঁত দেখিয়ে হেসে বলল, “উপস! সরি মিস্টেক! না ঠিকিই আছে, আপনি আমার নাম ভুল উচ্চারণ করছেন আর আমি আপনার।”

মিস্টার ড্যানিয়েল কিছুটা অবাক গলায় বলল, “ঝানো মাইয়া! ঠুমি না হাগের থেকে হনেক চেঞ্জ হয়ে ঘেছো। এখন হনেক ভেসি কথা ভলছো ঠুমি। খিন্তু ঠুমি হামার সাঠে হচেনার মথো বিহেভ খরছো খেনো ভুজলাম না।‌”
মায়া:- “হ্যাঁ সে আমি জানি যে আমি আগের থেকে অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছি কিন্তু আপনি আমায় কিভাবে চিনেন আমিও সেটা বুঝলাম না।”
আবির বলল, “ওই ডিলের পুরো দায়িত্ব তখন তোমার ছিল। আর সেই থেকেই উনি তোমাকে চেনে। আর একটা সিক্রেট বলি।”

বলেই আবির মায়ার কানের কাছে ঝুঁকে এসে আরমানকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল, “ আর ওই অদ্ভুত প্রাণীটা মনে মনে তোমাকে ভীষন লাইক করে। তোমাকে জীবন সঙ্গিনী বানানোর স্বপ্ন দেখে। তুমি যা বলবে সবকিছু করতে রাজি ওই অদ্ভুত প্রাণীটা। তার বিনিময়ে শুধু তোমাকে চাই ও।”
মায়া চিল্লিয়ে উঠলো:- “হোয়াট!!”

এদিকে আরমান অনেকক্ষণ থেকে সহ্য করছে এসব। এমনিতেই মিস্টার ড্যানিয়েলকে এখানে দেখে রাগে ওর শরীর জ্বলছে, আর এখন আবিরের কথায় আরমানের রাগের মাত্রা দ্বিগুণ হলো। আবিরকে উদ্দেশ্য করে দাঁত কিড়মিড় করে বলল, “স্টপ ইট আবির!! এমনিতেই মাথা গরম আছে, তাই নিজের মুখটা বন্ধ রাখ। এটাই তোর জন্য ভালো।”
এরপর মায়ার দিকে ঘুরে বলল, “আর তুমিও নিজের মুখটা বন্ধ রাখো। না হলে ভালো হবে না কিন্তু।”
এরপর আরমান মিস্টার ড্যানিয়েল এর দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি হঠাৎ এখানে? কোনো দরকার ছিল?”
মিস্টার ড্যানিয়েল:- “হুম ধরকার থো ছিল।‌ খিন্তু হেভাবেই কথা ভলবো? ভিথরে হাসতে ধিবেন না?”

মিস্টার ড্যানিয়েল ও তার অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং তখনো আরমানের কেবিনের বাইরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। আবির চুপচাপ অবলা, ভোলা ভালা ছেলে হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরমানের ধমক খেয়ে। এদিকে মায়ারও একই অবস্থা। কিন্তু ও ওর মুখ খুলতে পারছে না বলে বিরক্ত লাগছে। না হলে ওর এই অদ্ভুত প্রাণী টার সাথে কথা বলতে বেশ ভালোই লাগছিলো। যদিও ও অবাক হয়েছে এটা শুনে যে এই অদ্ভুত প্রাণী ওকে পছন্দ করে। কিন্তু বিষয়টা ভীষণ মজার মনে হচ্ছে ওর কাছে।
আরমান বিরক্ত হয়ে দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলল, “আসুন। ভিতরে আসুন।”

মায়াও আরমানের দেখা দেখি বাধ্য মেয়ের মতো দরজার কাছ থেকে সরে দাঁড়ালো। মিস্টার ড্যানিয়েল ও তার অ্যাসিস্ট্যান্ট ভিতরে প্রবেশ করে চেয়ারে গিয়ে বসলো। আরমান গম্ভীর মুখে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলো।
মায়া আরমানের দিকে চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে বলল, “আমি আর আবির ভাইয়া কোথায় বসবো শুনি?”
আরমান মায়ার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে ঠান্ডা গালায় বলল, “আবির কোথায় বসবে জানি না তবে তুমি চাইলে আমার কোলে বসতে পারো।”

আরমানের কথা শুনে মায়া বোকা বোকা হেসে বলল, “নাহ! ওই তো ওখানে সোফা আছে। আমি সোফায় বসছি।”
বলেই মায়া সোফায় গিয়ে বসলো। আবিরও গিয়ে বসলো সোফায়। এদিকে মিস্টার ড্যানিয়েল কৌতুহল গলায় বলল, “হাপনি এমন ভলছেন খেনো মাইয়াকে। ও হাপনার খোলে খেনো ভসবে।”
এরপর উনি মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “হার মাইয়া থখন থোমরা ধরজা ভন্দ খরে খি খরছিলে? ভললে না থো?”
আবির বিড়বিড় করে বলল, “এমনিতেই আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে। এখন আর আগুনে ঘি ঢালিস না বাপ।”
আরমান দাঁতে দাঁত চেপে গম্ভীর গলায় বলল, “আমারা দরজা বন্ধ করে কি করছিলাম না করছিলাম সেটা আমাদের ব্যাপার মিস্টার ড্যানিয়েল। আপনি কাজের কথায় আসুন। কোনো কাজ থাকলে বলুন না হলে আপনি আসতে পারেন।”

মিস্টার ড্যানিয়েল অপমানিত বোধ করলেও কিছু বললেন না। নিজেকে সামলে নিলেন। বললেন, “হ্যাঁ খাজ তো ছিল। হাপনার সাথে হার এখটা ডিল সাইন খরতে ছাই। থবে হেবারেও মাইয়ার ভানানো ডিজাইন নেভো শুঢু।”

আরমান নির্লিপ্ত কণ্ঠে উত্তর দিলো, “আমি এখন আর আপনার সাথে কোনো ডিল সাইন করতে চাই না মিস্টার ড্যানিয়েল। তাই আপনি আসতে পারেন।”
মিস্টার ড্যানিয়েল প্রচন্ড অবাক হলেন আরমানকে মুখের উপর ডিল নাকোচ করতে দেখে। উনি অবাক গলাতেই বললেন, “হারে কি ভলছেন মিস্টার হারমান? মঝা খরছেন হামার সাথে?”
আরমান:- “আপনার সাথে মজা করার মতো কোনো সম্পর্ক আমার নেই মিস্টার ড্যানিয়েল। আমি যা বলি স্পষ্ট ভাবেই বলি। এখন আমি আপনার সাথে কোনো ডিল সাইন করতে চাই না।”
মিস্টার ড্যানিয়েল এবার সিরিয়াস গলায় বললেন, “যেঠা ভলছেন সেঠা ভেবে ভলছেন থো? হাফনি খিন্তু বালো খরেই ঝানেন হেই ডিল আপনার বিজেনেসে খতটা প্রফিট হেনে ধেবে।”
মায়া তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো, “হ্যাঁ সত্যিই তো। এতো বড়ো ডিল আপনি হাত ছাড়া করছেন কেনো? আমি রাজি আছি উনার জন্য ডিজাইন বানাতে।”

মিস্টার ড্যানিয়েল হেসে বলল, “ইয়েস। হেখোন মাইয়াও রাঝি খাজ খরতে। ঠাহলে ঠো ডিল সাইন খরতে হাফনার হার খোনো হসুবিধা নেই মিস্টার হারমান।”
মায়া:- “হ্যাঁ হ্যাঁ আপনিও রাজি হয়ে যান মিস্টার হারমান..না সরি সরি মিস্টার আরমান। তাহলে আমিও আবার আমার কাজে ফিরতে পারবো।”
মায়া যে নিজে থেকে ওকে হারমান বলেছে সেটা আরমান স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে। তাই ও রাগী চোখে তাকালো মায়ার দিকে। যা দেখে মায়া চুপসে গিয়ে মুখে আঙ্গুল দিয়ে বসে রইল। মানে, ঠিক আছে আমি আর কোনো কথা বলবো না।
আরমান মিস্টার ড্যানিয়েল এর দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল, “মিস মায়ার অসুবিধা না থাকলেও আমার অসুবিধা আছে।‌ এমনিতেও মিস মায়া আর আমার কম্পানিতে কাজ করে না। তাই আমি আপনার সাথে ডিল সাইন করতে চাই না।”

মিস্টার ড্যানিয়েল:- “হোয়াট?? মাইয়া হার হাফনার কম্পানিতে খাজ খরে না? ঠাহলে হেখোন খোন কোম্পানিতে খাজ খরে?”
আবির দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল, “কেনো মিস্টার ড্যানিয়েল আপনি কি তাহলে সেই কোম্পানিতে গিয়ে ডিল সাইন করবেন?”
মিস্টার ড্যানিয়েল বললেন, “অফকোর্স! মাইহার ঝন্ন হামি সেই কোম্পানিতেও যেথে রাঝি হাছি।‌ ঠুমি ভলো মাইহা, হেখোন ঠুমি খোন কোম্পানিতে জব খরছো?”
মায়াও হালকা দুঃখি হওয়ার ভান করে বলল, “এখনো কোনো কোম্পানিতে জব পাইনি মিস্টার ভ্যানিয়েল সরি ড্যানিয়েল।”

এরপর দুষ্টু হেসে বলল, “তবে আমার মাথায় না একটা আইডিয়া এসেছে। চলুন আপনি আর আমি মিলে একটা নতুন কোম্পানি খুলে ফেলি সেই কোম্পানিতে আমি ডিজাইনারের কাজ করব। কি রাজি আছেন?”
মিস্টার ড্যানিয়েল খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন, “আইডিয়া ঠা ঠুমি খারাপ ধাওনি মাইয়া। ঠুমি যঢি হামার কম্পানিতে ডিজাইনার হও ঠাহলে হামি নিউ এখটা বিজনেস ওপেন খরতে রাঝি হাছি। ঝানো মাইয়া হাজকে ঠোমাকে বিশন সুন্ঢর লাঘছে। চোখ সরহানো ঝাচ্ছে নাহ। ঠুমি টো মিস্টার আরমানের কম্পানিতে হার জব খরো না, ঠাহলে হেখানে খি খরছো ঠুমি?”

এগুলোই যথেষ্ট ছিল আরমানের রাগের আগুনে ঘি ঢালার জন্য। হঠাৎই আরমান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। এরপর মায়ার কাছে গিয়ে একটানে মায়াকে উঠে দাঁড় করিয়ে, হাত ধরে টানতে টানতে ওকে ওর এই কেবিনের সাথে অ্যাটাচ রেস্ট রুমে নিয়ে গেলো। এরপর ওর হাত ছেড়ে দিয়ে গটগট পায়ে ওই রুম থেকে বেরিয়ে এসে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো। তারপর সোজা নিজের চেয়ারে এসে বসে গম্ভীর মুখে মিস্টার ড্যানিয়েল এর দিকে তাকিয়ে বলল, “বলুন এবার! কি বলছিলেন?”

এদিকে মায়া তখন দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে চিল্লিয়ে বলছে, “ও গম্ভীর সাহেব! দরজা বন্ধ করলেন কেনো? খুলুন না দরজাটা? মিস্টার অদ্ভুত প্রাণীর সাথে নতুন কম্পানির বিষয়ে প্ল্যান করতে হবে তো। অনেক বড়ো সুযোগ পেয়েছি আমি। এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। ও গম্ভীর!! শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা?”
আরমান দাঁত কিড়মিড় করে মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, “মায়া! তুমি কি চাও ওই বন্ধ দরজার পিছনে আমিও থাকি তোমার সাথে? আমি যদি ভিতরে আসি তাহলে কিন্তু ভালো হবে না।”

মায়া:- “না! না! ঠিক আছে। আমি চুপ থাকছি, আর কিছু বলবো না। আপনাকে ভিতরে আসতে হবে না, কিন্তু আপনি এক কাজ করুন। আমার হয়ে মিস্টার অদ্ভুত প্রাণীর সাথে কথা বলে নিন, উনার নতুন কম্পানিতে আমার জবের বিষয়ে। এতো বড়ো বিজনেস ম্যান আপনি। এইসব বিষয়ে তো আমার থেকে ভালো বুঝবেন।”
রেস্ট রুমের ভিতর থেকে চিল্লিয়ে কথা গুলো বলল মায়া। এরপর কথা গুলো বলা শেষ হতেই হাসতে হাসতে ওই রুমে থাকা বেডে গিয়ে চিত হয়ে শুয়ে পড়লো। তখনো হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে ও। মানুষটাকে এভাবে জ্বালাতে পেরে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে ওর।
এদিকে আরমানের কেবিনে….

মিস্টার ড্যানিয়েল চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে ততক্ষণে। উনি বললেন, “এখি হাফনি হেভাবে মাইয়া কে ধরজা বন্ঢ খরে ডিলেন খেনো? ও ঠো হামার সাঠে কঠা বলথে ছাইছিল। হামারও ওর সাঠে কঠা হাছে।”
আরমান রাগে কটমট করতে করতে বলল, “কোনো কথা নেই আপনার উনার সাথে। আর মায়ার ও কোনো জবের দরকার নেই। তাই আপনি এখন আসতে পারেন। না আসতে পারেন বলা টা ভুল হচ্ছে, আপনাকে যেনো আমার অফিসে আর কোনো দিন না দেখি। এখন যান।”
মিস্টার ড্যানিয়েল:- “মিস্টার হারমান! হাফনি হামাই থারিয়ে ডিচ্ছেন?? হেভাবে ইনসাল্ট খরতে ফারেন না হাফনি হামাই। হামি হাফনার অফিসে ঠাকতে হাসিনি। ভিসেস ভাবে মাইহার ঝন্নহে
এসেছিলাম হেখানে। হেখোন হামি মাইহার সাঠে কঠা না ভলে ঝাবো নাহ।”

বলেই মিস্টার ড্যানিয়েল হাঁটা ধরলো মায়া যেই রুমে আছে সেই রুমের দরজা খোলার উদ্দেশ্যে। আরমানও রাগের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়ে, ওঠে দাঁড়িয়েছে। আরমানের ভাব দেখে মনে হচ্ছে ও এবার মিস্টার ড্যানিয়েলকে মারতে শুরু করবে। মিস্টার ড্যানিয়েল ওই রুমের দরজার কাছে পৌছানোর আগেই, এবং আরমান মিস্টার ড্যানিয়েল এর কাছে পৌছানোর আগেই আবির ছুটে এসে মিস্টার ড্যানিয়েলকে আটকে দিলো। এরপর টানতে টানতে উনাকে বাইরের দিকে নিয়ে যেতো শুরু করলো।
আবির:- “আপনি আমার সাথে আসুন মিস্টার ড্যানিয়েল।‌ আমি আপনাকে সব বুঝিয়ে দিচ্ছি।”

মিস্টার ড্যানিয়েল:- “নাহ! হামি মাইহার সাঠে কঠা না ভলে কোঠাও ঝাবো নাহ হেখোন।”
আবির বিড়বিড় করে বলে উঠলো, “এই অল্প বয়সে মাটির তলায় যাওয়ার শখ জেগেছে মনে হয়। ব্যাটা নিজের জান টা হারাতে না চাইলে পালা এখান থেকে। বেশি মায়া মায়া করিস না তাহলে আরমান মনে হয় জ্যান্ত পুঁতে ফেলবে মাটির নিচে।”
মিস্টার ড্যানিয়েল রাগী গলায় বলল, “ঝেটা ভলার ঝরে ভলুন মিস্টার হাবির। হেভাবে এঠো হাসতে হাসতে খি বলছেন?”

আবির:- “আপনি আগে বাইরে চলুন, হাসতে হাসতে কেনো আমি আপনাকে কাঁদতে কাঁদতে হলেও বোঝাবো। সিংহ যদি খেপে যায় তাহলে আর রেহাই নেই।”
বলতে বলতেই আবির মিস্টার ড্যানিয়েলকে টেনে বাইরে নিয়ে চলে গেলো। পিছু পিছু মিস্টার ড্যানিয়েল এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ও বেরিয়ে গেলো।
এদিকে আরমান রাগে টেবিলে থাকা জিনিস পত্র গুলো ছুড়ে ফেলে দিলো। শেষে টেবিল টাকেই দুই হাতে করে ধরে উল্টিয়ে দিলো। টেবিল টা ছিল কাঁচের তৈরি। শব্দ করে ভেঙে গেলো সেটা। আর এই এতোকিছু ভাঙার আওয়াজ মায়া ওই রুমে থেকেও শুনতে পেলো। ছুটে দরজার কাছে এলো ও।
মায়া বিচলিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “কি হলো? কিসের আওয়াজ এই গুলো? গম্ভীর সাহেব শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা? কিসের আওয়াজ হলো এগুলো?”

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৫৫

নাহ মায়া কোনো উত্তর পেলো না তার গম্ভীর সাহেবের থেকে। যার জন্য ও আরো মরিয়া হয়ে উঠলো। জোড়ে জোড়ে দরজা ধাক্কাতে শুরু করলো ও, “শুনছেন? কোথায় গেলেন আপনি? গম্ভীর সাহেব? দরজা টা খুলুন প্লিজ।”
নাহ এবারো কোনো উত্তর এলো না। মায়া এবার কাঁদতে শুরু করলো, “আবির ভাইয়া!! আবির ভাইয়া!! কোথায় তুমি? দরজাটা খুলে দাও না? কি হলো ওই রুমে? সব ঠিক আছে তো? গম্ভীর সাহেব ঠিক আছে তো? কেউ শুনতে পাচ্ছো আমার কথা?”

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৫৭