আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৫৭
সালমা খাতুন
হঠাৎ ওই রুমের দরজাটা খট করে শব্দ তুলে খুলে গেলো। মায়া দেখলো আরমান দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। মুখের ভঙ্গি শক্ত, চুল গুলো কিছুটা এলোমেলো, কেমন যেনো ভয় ভয় লাগছে মায়ার আরমানকে দেখে। মায়া নিজের কান্না থামিয়ে দিয়েছে ইতিমধ্যেই, ও একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল, “ঠিক আছেন আপনি? কিসের আওয়াজ ছিল ওগুলো?”
আরমান এক পা এক পা করে এগিয়ে আসতে শুরু করলো মায়ার দিকে, মায়াও ধীরে পিছাতে শুরু করলো শুকনো ঢোক গিলে। আরমান এগোতে এগোতে ঠান্ডা গলায় বলল, “কেনো মনে হলো তোমার যে, আমি ঠিক থাকবো না?”
মায়া আমতা আমতা করে বলল, “না মানে ভিতরে কিছু ভাঙ্গার আওয়াজ পেলাম আর আপনি সারা দিচ্ছিলেন তাই আর কি…”
ততক্ষণে মায়ার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। মায়া তাড়াহুড়ো করে অন্য দিকে সরে যেতে চাইলে, আরমান আচমকা মায়ার দুই পাশে দেওয়ালে হাত দিয়ে মাঝখানে বন্দী করে নিলো ওকে। মায়া কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল, “প্লিজ এবারের মতো ক্ষমা করে দিন! এমন ভুল আর জীবনেও হবে না।”
আরমান শান্ত চোখে মায়ার দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল, “ক্ষমা? কিন্তু কি ভুল করেছো তুমি যে ক্ষমা চাইছো?”
মায়া একই রকম ভাবে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “আর কখনো আপনার সাথে মজা করবো না। ভুল হয়ে গেছে, বিশ্বাস করুন শুধু মাত্র আপনাকে জ্বালানোর জন্য মিস্টার আজব প্রাণীকে ওই কথা গুলো বলছিলাম। কোনো দরকার নেই আমার উনার কম্পানিতে জব করার।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরমান:- “হুম! তার মানে স্বীকার করছো যে আমাকে জ্বালানোর জন্য বলছিলে ওগুলো?”
মায়া মুখে কিছু না বলে উপর নিচ মাথা নাড়ালো। যার মানে হ্যাঁ ও স্বীকার করছে।
আরমান:- “তাহলে তো এর শাস্তিও তোমায় পেতে মিসেস আরমান শাহরিয়ার। এই বুকে যখন আগুন তুমি জ্বালিয়েছো তাহলে এই আগুন তোমাকেই নিভাতে হবে।”
মায়া বোকা বোকা চোখে আরমানের দিকে তাকিয়ে বলল, “কই কোথায় আগুন জ্বলছে দেখি?”
কথাটা বলেই মায়া আরমানের শার্টের লাগিয়ে রাখা বাকি বোতাম গুলোও তাড়াতাড়ি খুলে দিয়ে দেখতে থাকলো। আসলে আরমান তখন রাগে নিজের কেবিন এলোমেলো করার পর, পরনের কোর্ট, টাই, খুলে ছুঁড়ে ফেলেছিল। তারপর সাদা শার্টের বুকের কাছের তিনটে বোতামও খুলে ফেলেছিল বিরক্তিতে। এখন মায়া বাকি বোতাম গুলোও খুলে ফেলায়, আরমানের জিম করা বুক সহ পেট পুরো উন্মুক্ত হয়ে গেলো।
মায়া নিষ্পাপ বাচ্চার মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বলল, “কই দেখা যাচ্ছে না তো? কোথায় আগুন জ্বলছে?”
আরমান:- “ভিতরে জ্বলতে থাকা আগুন বাইরে থেকে যায় না।”
মায়া:- “ঠিক আছে! আপনার বুকে জ্বলন যখন আমি ধরিয়েছি, তাহলে আমি কমাবো এই জ্বলন।”
কথটা বলেই মায়া আরমান কিছু বুঝে উঠার আগেই মায়া ওর হাতের নিচ দিয়ে বেরিয়ে, এক হাতে শাড়ি ধরে ছুট লাগলো। আরমান চেয়েও আটকাতে পারলো না। হঠাৎই আরমানের শান্ত ও গম্ভীর মুখে হাসি হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠলো। এই রুমে আসার আগে প্রচন্ড রেগে ছিল ও মায়ার উপরে, তবে মায়ার ওই কথা বলার আদুরে ভঙ্গি, কাঁদো কাঁদো মুখ, বোকা চাহনি। আর সব থেকে বড়ো কথা ওর মায়াবতীর মায়া মাখা মুখ, ওর সমস্ত রাগকে একেবারে পানি করে দিয়েছে। কেনো জানি এই মেয়েটার উপর আর রাগই দেখাতে পারে না ও। কঠোর হতে চাইলেও পারে না।
আরমান মনে মনে তার মায়াবতীর কথা ভাবতে ভাবতে ওই রুমে থাকা বেডে শুয়ে পড়েছিল। চোখ বন্ধ করে, চোখের উপর এক হাত রেখে শুয়ে ছিল ও, শার্টের বোতাম তখনও খোলা। কিছুক্ষণ পরেই আরমান নিজের বুকের বাম পাশে, ঠিক ওর হার্টের কাছে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা কিছুর অনুভব করে চমকে উঠলো।
আরমান:- “উফফ! ঠান্ডা!!”
আরমান তাড়াতাড়ি ওর চোখের উপর থেকে হাত সরাতেই দেখতে পেলো, মায়া আরমানের পাশে বেডে বসে, আরমানের বুকে বরফ ঘষছে।
আরমান:- “আরে এটা কি করছো তুমি? বরফ কেনো ঘসছো বুকে? ঠান্ডা লাগছে তো!”
মায়া দাঁত বের হাসি দিয়ে বলল, “আপনিই তো বললেন, আপনার বুকে আগুনে জ্বলছে, জ্বলন ধরিয়েছি আমি। তাই বরফ দিয়ে জ্বলন কমানোর চেষ্টা করছি। এখন আরাম লাগছে তো আপনার?”
আরমান থতমত খেয়ে গেলো যেনো, মায়া তখন বাটি থেকে একটা বরফ নিয়ে চুষতে শুরু করেছে। ওর চোখে মুখে খেলা করছে দুষ্টুমি।
আরমান শান্ত গলায় বলল, “কিন্তু এভাবে তো ভিতরের জ্বলন কমবে না, মায়াবতী।”
মায়া চোখ ছোটো ছোটো করে জিজ্ঞাসা করলো, “তাহলে কিভাবে কমবে?”
আরমান এক ঝটকায় মায়াকে বেডে ফেলে নিজে ওর উপরে চলে এলো। তবে খুব একটা শরীরের ভর মায়ার উপর দিলো না। বিছানায় মায়ার দুই হাত দুই পাশে আরমানের হাতে বন্দী। মায়া কি হচ্ছে ওর সাথে বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লেগে গেলো।
আরমান বাঁকা হেসে, নেশাক্ত কন্ঠে বলল, “তোমার ওই গোলাপের পাঁপড়ির ন্যায় ঠোঁটের স্পর্শ দিতে হবে এই হৃদয়ে। ঠিক গুনে গুনে পঞ্চাশ বার।”
আরমানের কথা শুনে মায়ার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো। আরমানের মনে মনে হাসি পেলেও, মুখে শান্ত ভাব বজায় রাখলো।
মায়া মুখ বেঁকিয়ে বলল, “আমি পারবো না।”
আরমান:- “পারবে না।”
মায়া:- “বললাম তো নাহ।”
আরমান এবার মুখে কিছু বলল না। শুধু একবার বাঁকা হাসি দিলো। পাশেই রাখা ছিল সেই বরফের বাটি টা। আরমান মাথা নিচু করে বরফের বাটিটা থেকে মুখে করে একটা বরফের টুকরো তুলে নিলো। বরফের চৌকো টুকরো টা অর্ধেক টা ওর মুখের ভিতরে এবং অর্ধেক টা বাইরে। সেই বাইরে থাকা অংশটা দিয়ে মায়ার গলায়, কাঁধে বুকের উন্মুক্ত অংশে স্পর্শ দিতে লাগলো। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা এবং সুরসুরি লাগার কারণে মায়া ছটফট করতে শুরু করলো। কিন্তু আরমান নিজের দুই হাত দিয়ে মায়ার হাত ধরে আছে বিছানায় দুই পাশে। আরমানের শরীরের ভরও কিছুটা মায়ার উপর। তার মায়া ছটফট করলে খুব বেশি নড়াচড়া করতে পারছে না।
ও খিলখিল করে হাসছে আর বলছে, “গম্ভীর সাহেব..হি..হি আরে থামুন.. থামুন প্লিজ।”
না কোনো থামাথামির নাম নেই আরমানের। বরফ দিয়ে সুরসুরি দিয়েই চলেছে।
মায়া:- “আরে…থামুন প্লিজ। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।”
মায়াকে বরফ দিয়ে সুরসুরি দেওয়ার ফলে, হাসছে আর কথা গুলো বলছে। আরমান মুখ উঠিয়ে নিলো মায়ার গলা থেকে। ইতিমধ্যেই বরফ অনেকটা গলে গেছে। আরমান বাকিটা নিজের মুখে পুড়ে নিলো। বরফ টা খেতে খেতে বলল, “এখন বলো! আমার শর্তে রাজি কিনা?”
মায়া:- “বললাম তো আমি পারবো না ওটা। অন্য কিছু বলুন।”
আরমান:- “না এটাই করতে হবে।”
মায়া:- “পারবো না।”
আরমান:- “ঠিক আছে! এতোক্ষণ গলায় দিচ্ছিলাম এবার…”
কথাটা শেষ না করেই আরমান মায়ার পেটের দিকে তাকালো। মায়াও আরমানের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো। এরপর আরমান আবারো বাটি থেকে বরফ তুলে নিতে মাথা নোয়ালো। মায়া তৎক্ষণাৎ চিৎকার করে উঠলো, “নাহ! আমি…আমি রাজি।”
আরমান থেমে গেলো এবং বাঁকা হাসলো। আরমান শার্টের বোতামগুলো তখনো খোলা ছিল।
আরমান:- “ওকে! শুরু করো।”
মায়া কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল, “প্লিজ পঞ্চাশ বার নয়। কিছুটা কমিয়ে আনুন।”
আরমান:- “ঠিক আছে! চল্লিশ বার।”
মায়া:- “এটাও অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। প্লিজ আরো কমান।”
আরমান চোখ রাঙিয়ে বলল, “তুমি শুরু করবে? নাকি আমি শুরু করবো?”
মায়া:- “নাহ!! করছি তো।”
বলেই মায়া একটা শুকনো ঢোক গিলল। এরপর বলল, “হাত দুটো তো ছাড়ুন। এভাবে অসুবিধা হবে তো।”
আরমান:- “কোনো অসুবিধা হবে না।”
বলেই আর নিজের বুক বা পাস টা ঠিক মায়ার মুখের কাছে ধরলো। মায়া আরমানের লোমশ হীন বুকের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলল। এরপর মায়া একবার ওর মাথা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তো একবার পিছিয়ে নিয়ে আসছে। অনেকক্ষণ এমন করার পর শুরু শেষমেশ আরমানের বুকে ঠোঁট ছোঁয়াল। আরমান চোখ বন্ধ সেই স্পর্স অনুভব করলো। যতোই হোক ও একটা পুরুষ মানুষ, আর মায়া ওর অর্ধাঙ্গিনী…আরমান কিছুটা আনমনা হয়ে উঠলো। আর সেটারই সুযোগ নিলো মায়া, খুব জোড়ে আরমানের বুকের ঠিক বা পাশে কামড়ে ধরলো। ব্যাথায় চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো আরমান। ওর হাতের বাঁধন কিছুটা আলগা হয়ে এলো। আর সেটা বুঝতে পেরেই মায়া কামড়ে ধরে থাকা ছেড়ে দিয়ে, আরমানকে দিলো এক ধাক্কা। আরমান কিছুটা অন্যমনস্ক ছিল নাকি অজনা এক অনুভূতিতে ডুবে ছিলো জানা নেই। মায়ার ধাক্কায় মায়ার পাশে বেডে পড়ে গেলো ও। আর এই ফাঁকে মায়া দে দৌড়। এক ছুটে পগার পাড়। সোজা রুমে থেকে বেরিয়ে আরমানের কেবিন থেকেও বেরিয়ে গেছে।
আরমান ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপে নিজের কাজ করছে। কেবিন পরিস্কার করা হয়েছে, একটা অন্য ডেস্ক (টেবিল) এর ব্যাবস্থা করা হয়েছে। সামনে আর একটা কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে উঠছে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ, কাজের মাঝেই বার বার করে সেই দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে আরমান। এর কারণ সেই সিসিটিভি ফুটেজ এ মায়াকে দেখা যাচ্ছে। সেই থেকে আর একবারও কেবিনে আসেনি মায়া, পুরো অফিস ঘুরে ঘুরে দেখছে, আর ওর সাথ দিচ্ছে তানিশা। তানিশা আগে মায়ার সহকারী ছিল। আরমান তাকে কল করে বলে দিয়েছে যেনো মায়ার খেয়াল রাখে। কিন্তু তবুও মায়াকে একা ছাড়তে মন সায় দেয় না, তাই মায়া যেখানে যেখানে যাচ্ছে, সিসিটিভি ফুটেজে সেই ফুটেজ বের করে নজর রাখছে ও।
ওদিকে মায়া পুরো অফিসের সকল স্টাফ দের সাথে আগের মতোই মিশে গেছে। বরং আগের থেকে আরো ভালো ভাবে মিশে গেছে। সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। মাঝে মাঝে আবারচারিদিকে তাকিয়ে গভীর ভাবে দেখছে সবকিছু, মাথার দুই পাশে হাত দিচ্ছে, যেনো আগের সবকিছু মনে করার চেষ্টা করছে ও। নিজের কেবিনে ঢুকেও বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকলো ও। অসহায় হয়ে চারিদিক দেখছিল।
আরমান এইসব দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বুকের ভিতর টা মুচড়ে উঠলো।
এরপর মায়াকে কিছুক্ষণ মায়ার মতো করে ছেড়ে দিয়ে সময় কাটাতে দিলো। বিকেলের দিকে আরমান মায়াকে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে এলো।
গাড়িতে….
মায়া:- “কোথায় যাচ্ছি আমরা? আমার মনে হচ্ছে এটা তো বাড়ি যাওয়ার রাস্তা নয়। আসার সময় তো অন্য রাস্তা দিয়ে এসেছিলাম।”
আরমান:- “হুম বাড়ি যাচ্ছি না এখন। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
মায়া ভ্রু কুঁচকে বলল, “কি সারপ্রাইজ?”
আরমান:- “কি সারপ্রাইজ, সেটা বলে দিলে আর সারপ্রাইজ থাকে না পাগলী। তাই চুপচাপ বসে থাকো।”
মায়া:- “আমি পাগলী না, আপনি পাগল।”
আরমান:- “আচ্ছা! ঠিক আছে! আমি মানলাম আমি পাগল।”
মায়া বিরক্ত হয়ে বলল, “এতো তাড়াতাড়ি কেনো মেনে নিলেন?”
আরমান:- “তো মানবো না তো কি করবো শুনি? বউ বলেছে বলে কথা।”
মায়া বিরক্ত গলাতেই বলল, “ না মেনে নিয়ে, একটু ঝগড়া করলে কি ক্ষতি হতো শুনি? ধ্যাত ভালো লাগে না।”
বলেই মুখ ফুলিয়ে বসে রইল মায়া। আরমান মায়ার মুখের মুখভঙ্গি ও কথা শুনে হেসে ফেললো।
আরমান মায়ার ফুলানো গাল টেনে দিয়ে বলল, “জানো মায়াবতী! তুমি না আগের থেকে অনেক আদুরে, দুষ্টু সাথে ঝগড়ুটেও হয়ে গেছো।”
আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৫৬
মায়া:- “হয়েছি তো হয়েছি! তাতে আপনার কি?”
আরমান কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, “আমার আবার কি? কিছুই না।”
বলেই আরমান ড্রাইভিং এ মন দিলো। মায়া বিরক্ত হয়ে বসে রইলো। এখন ওর প্রচন্ড জানতে ইচ্ছে করছে, যে ওরা এখন কোথায় যাচ্ছে। কি সারপ্রাইজ দেবে আরমান ওকে? কিন্তু ও জানে, আরমান যখন একবার বলছে এখন বলবে না, তার মানে হাজার চেষ্টা করলেও আর ওর মুখ থেকে বের করানো যাবে না।