আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৭

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৭
সালমা খাতুন

পরের দিন সকালে…..
সকাল ৭ টা…..মায়া অনেক শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে রুবির রুমে।‌ রুবি কিছুক্ষণ আগেই উঠে গেছে। ঠিক তখনি কিছুটা পানি এসে পড়লো মায়ার মুখে। এতে মায়া ধরফড় করে উঠে বসলো বিছানায়।‌ ভয়ে চিৎকার করে উঠলো, “আল্লাহ বাঁচাও বান (বন্যা) এসেছে, বান এসেছে!!”
আরমান ধমক দিয়ে বলে উঠলো, “এই মেয়ে চুপ!! একদম চিৎকার করবে না।”
মায়া অবাক হয়ে বলল, “একি আপনি?? এই আপনি আমায় এই সাত সকালে ভিজিয়ে দিলেন কেন?”
আরমান:- “তোমাকে এখানে পড়ে পড়ে ঘুমানোর জন্য আনা হয়নি মিস মায়া তালুকদার। কটা বাজে খেয়াল আছে? আমার ব্রেকফাস্ট কে বানাবে?”

মায়া চেতে গিয়ে বলল, “এটা তো ভালো ভাবেও বলা যেত মিস্টার আরমান শাহরিয়ার। এতে ভেজানোর কি হলো? ভালো ভাবে ডেকে কি ঘুম থেকে তোলা যেত না?”
আরমান:- “আমি তোমার কাজের লোক নই যে তোমায় ঘুম থেকে ভালো ভাবে ডেকে তুলবো।‌ ফালতু না বকে যাও গিয়ে নিজের কাজ করো।”
বলেই আরমান ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আর মায়া রাগে নিজের মনে বিড়বিড় করতে লাগলো। তখনি রুমে রুবি প্রবেশ করলো। আর মায়াকে এই অবস্থায় দেখে অবাক গলায় বলল, “একি তোমার এই অবস্থা কি করে হলো? ভিজলে কি ভাবে??”
মায়া রাগে গজগজ করতে করতে বলল, “তোমার মিস্টার আরমান শাহরিয়ার এর বাড়ির ছাদ ফুটো হয়ে গেছে। তাই আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ে ভিজে গেছি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বলতে বলতে মায়া বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। আর এদিকে মায়ার কথা গুলো সব রুবির মাথার উপর দিয়ে গেলো। ও বোকা বোকা চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো মায়ার যাওয়ার দিকে। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিছানাটা রোদে শুকানোর ব্যাবস্থা করতে গেলো। বিছানা টাও কিছুটা ভিজে গেছে। এরপর মায়া ওয়াশরুম থেকে এসে রুবির কাছে গেলো আবারো একটা ড্রেস নেওয়ার জন্য। রাতেও রুবির জামা পড়েই ঘুমিয়ে ছিল। এখন সেটা আরমানের পানি দেওয়ার কারণে ভিজে গেছে। রুবি আবারো একটা থ্রি পিস বের করে দিলে মায়া চেঞ্জ করে আসলো।
এরপর রুবিকে নিয়ে রওনা দিলো কিচেনের দিকে। আরমানের জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি করতে। আরমান ব্রেকফাস্ট এ কি খাই তা রুবির থেকে জেনে নিয়ে লেগে পড়লো নিজের কাজে। মায়া রান্না বান্নার কাজটা একটু ভালোই পারে।‌ তাই ওর কোনো অসুবিধা হলো না।

ঠিক সকাল আটটার দিকে আরমান নিচে নেমে এলো ব্রেকফাস্ট করার জন্য। এর মধ্যে মায়ারও কাজ শেষ। এই বাড়িতে অনেক সার্ভেন্ট আছে, যেহেতু এখন এই বাড়ির মানুষ গুলো নেই তাই সবাই এখন ছুটিতে আছে। শুধু এই বাড়ির শেফ দুজন বাদে। কারণ ওরা আবির, আরমান আর রুবির জন্য রান্না করতো। আজকেও করেছে আবির, রুবি, আর মায়ার জন্য। রুবি এই বাড়িতেই থাকে আর এই বাড়িতেই খাই। কিন্তু ডাইনিংএ বসে কখনো খাই না। নিজের রুমে খাই। এই বাড়ির সকলে ওকে অনেক বার বলেছে ওদের সাথেই খেতে কিন্তু ও কখনো ওদের কথা শুনেনি। ওর খালি এক কথা, ও এই বাড়ির সার্ভেন্ট তাই বাড়ির মানুষদের সাথে একসাথে খাওয়া মানাই না। আরমানই ওকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। এই বাড়ির সবাই ওকে এই বাড়ির মেয়ের মতোই দেখে।

আর বাকি সার্ভেন্টরা এই বাড়ির পিছন দিকে সার্ভেন্ট কোয়াটার আছে সেখানেই থাকে। ওখানে আলাদা করে কিচেন আছে সেখানেই এই বাড়ির সার্ভেন্ট আর গার্ড দের জন্য আলাদা করে রান্না করা হয়। (চলুন গল্পে ফেরা যাক)
মায়া একটা একটা করে ডিস এনে টেবিলে রাখছে। আর আরমান তা আড় চোখে দেখছে। কেন জানি মেয়েটার থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোটা চিকচিক করছে। ওরনা এখনো কোমরে বাঁধা। হয়তো মনে নেই খুলতে। না হলে আরমান শুধু ওই ক্লাবে ছাড়া বাকি সব সময়ই মায়ার মাথায় ওরনা দেখেছে। না না কিসব ভাবছে ও? এইভাবে ওর এক্স ওয়াইফের দিকে তাকনো ঠিক না। মাইশা! ওর তো মাইশা আছে। তাহলে এই মেয়েটার দিকে কেন তাকাচ্ছে?? না না তাকাবে না ও ওই অসভ্য নির্লজ্জ মেয়ের দিকে।

এইসবই ভাবছিল আরমান তখনি ওর পাশে কেউ ধপ করে বসার আওয়াজে ঘুরে তাকালো ও। আবির এসে বসেছে। আবির রুবির উদ্দেশ্য বলল, “রুবি আমাকেও খেতে দাও।”
মায়া এখন আরমানের ব্রেকফাস্ট সার্ভ করছে। রুবি মনে মনে বলল, “হ্যাঁ আমি কি আপনার কাজের লোক নাকি?? হ্যাঁ মানছি আমি আরমান স্যারের পার্সোনাল মেড তাই বলে আমি কেনো আপনার কাজ করবো?”
কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারলো না। চুপচাপ রান্না ঘরে গিয়ে আবিরের জন্য খাবার নিয়ে এসে ওকে সার্ভ করে দিলো।
এইদিকে আবিরকে দেখে মায়ার হঠাৎ মনে পড়লো ওর মাথায় ওরনা নেই। তাই ও তাড়াতাড়ি খাবার বেড়ে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে ওরনা কোমর থেকে খুলে মাথায় নিলো।
এদিকে আরমান খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। আবির খেতে খেতেই বলল, “আরে মায়া তুমি দাঁড়িয়ে কেনো? বসো! খেয়ে নাও।”

এটা শুনে আরমান গম্ভীর গলায় বলে উঠলো, “ও এই বাড়ির সার্ভেন্ট হয়ে এসেছে সদস্য নই যে আমাদের সাথে এক টেবিলে বসে খাবে। কাজের লোককে কাজের লোকই থাকতে দে আবির।”
এই কথা শুনে মায়ার মাথাটা নীচু হয়ে গেলো। চোখের কোন থেকে গড়িয়ে পড়লো এক ফোঁটা পানি। ও তো খুব ভালো করেই জানে যে ও এই বাড়ির কাজের লোক। সেটাকে এভাবে বলার কি আছে। মায়াকে ওর বাবা খুব আদরে মানুষ করেছিল। তাই ও অল্পতেই কষ্ট পাই। কিন্তু এই কথাটা কি অল্পের মধ্যে ছিল। ওর তো এই বাড়ির বউ হওয়ার কথা ছিল তার জায়গায় আজ ও এই বাড়ির কাজের লোক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের পানিটা সবার আড়ালে মোছার চেষ্টা করলো কিন্তু সত্যিই কি সবার চোখের আড়াল হলো? তারপর মায় মুখে একটা মিথ্যা হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো,

“আপনি খেয়ে নিন ভাইয়া। চিন্তা করবেন না, আমি ঠিক খেয়ে নেবো। আমি এই বাড়ির কাজের লোক হয়ে এসেছি তাই কাজের লোকই ভাবুন।”
কথাটা বলেই মায়া আবারও মাথাটা নীচু করে নিলো। ওর ইচ্ছে করছে এখান থেকে ছুটে পালাতে, কিন্তু ও যে নিরুপায়। আবিরের আর গলা দিয়ে খাবার নামলো। উঠে গেলো টেবিল ছেড়ে। মায়া কিছু বলতে গিয়েও বলল না। হয়তো গলা থেকে আওয়াজ বের করলেই কান্না চলে আসবে সেই ভয়ে।

আরমান তখনো নির্বাক ভঙ্গিতে খেয়ে চলল। যেনো এখানে কিছুই হয়নি। সব কিছুই স্বাভাবিক। আবির বেসিনে হাত ধুয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। ও যে একজন কে কথা দিয়েছিল, মায়াকে দেখে রাখবে। ওকে কোনোরকম কষ্ট পেতে দেবে না। কিন্তু ও কি ওর কথা রাখতে পারছে?? আরমান ওর হাত দিয়ে ডিভোর্স লেটার পাঠানোর কিছুদিন পরই আবির বিদেশে পাড়ি জমায় বিজনেসের কাজের জন্য। আর এই এক সপ্তাহ হলো ফিরেছে। তাই ও মায়ার কোনো খবর নিতে পারেনি। কিন্তু এখন সবকিছু যেনো এলোমেলো লাগছে আবিরের। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। না ওর এইভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। খোঁজ নিতে হবে মায়ার সম্পর্কে। ওর কেন যেন মনে হচ্ছে মায়া ভালো নেই।

আরমানের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মায়া। দরজায় নক করতে গিয়েও আবারও হাতটা গুটিয়ে নিচ্ছে। ঢুকবে কি ঢুকবে না সেই নিয়ে দ্বিধায় ভুগছে। হসপিটাল থেকে কল এসেছিল। ওর পাপাকে কেমোথেরাপি দেওয়া হবে তাই ওকে যেতে হবে। কিছু টাকাও লাগবে। কিন্তু আরমানের থেকে কিভাবে টাকা চাইবে বুঝতে পারছে না। যদি আবারও অপমান করে?? করে করবে, কিন্তু টাকা ওকে চাইতেই হবে। আগে হসপিটালে টাকা জমা দিতে হবে তবেই ওরা কেমোথেরাপি দেওয়া শুরু করবে। মায়া আর কোনো কিছু না ভেবে দরজায় নক করলো। সাথে সাথে ভেসে এলো গম্ভীর গলার আওয়াজ, “Come in.”

মায়া আসতে করে দরজা খুলে প্রবেশ করলো রুমে। আরমান অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে সোফায় বসে আছে ল্যাপটপ নিয়ে। নয়টা বাজলেই বেরিয়ে যাবে অফিসের উদ্দেশ্যে।
মায়া আরমানের সামনে দাঁড়াতেই আরমান বলে উঠলো, “ওহ তুমি। বলো কিছু বলবে?”
মায়া আমতা আমতা করে বলল, “আসলে আমাকে একবার বাইরে যেতে হবে। আমার বাড়িও যেতে হবে।”
আরমান:- “আমি তো বলেই দিয়েছি এখানেই থাকতে হবে তোমায়। কোথাও যেতে পারবে না তুমি এই এক মাস।”
মায়া:- “এটা হয়না। বাড়িতে আমার অসুস্থ বাবাও আছে। তারও খেয়াল আমাকেই রাখতে হয়। আর আপনি খুব ভালো করে জানেন আমার বাবার আমি ছাড়া আর কেউ নেই।”
আরমান ব্যাঙ্গাত্মক গলায় বলল, “ওহ তোমার তো বাবাও আছে। আমার একদম মনে ছিল না। তা তোমার অসুস্থ বাবাকে কি বলে বেড় হও রাত্রি বেলা।”

মায়া কঠোর গলায় বলল, “আমি আমার বাবাকে কি বলে বাড়ি থেকে বেড় হয়, সেই কৈফিয়ত আপনাকে দিতে আমি বাধ্য নয়। আর এমনিতেও আপনি এখন বাড়িতে থাকবেন না, অফিসে যাবেন। আমার কিছু কাজ আছে তাই আমাকে যেতে হবে। আমি আমার বাবাকে রান্না করে দিয়ে আবার চলে আসবো চিন্তা নেই।”
আরমান জানে মায়ার আর ওর বাবা ছাড়া আর কেউ নেই ওদের। তাই এই বিষয়ে বেশি মাথা ঘামালো না।
আরমান:- “ঠিক আছে তুমি যেতে পারো। তবে দুপুর একটার মধ্যে যেনো আমার লাঞ্চ আমার অফিসে পৌঁছে যাই। আর হ্যাঁ রান্না টা তোমাকেই করতে হবে।”

মায়া:- “ঠিক আছে। আর বলছিলাম যে আমার কিছু টাকার দরকার ছিল। আমার কাজের মাইনে থেকে যদি কিছু দিতেন তাহলে ভালো হতো।”
আরমান এই কথার প্রতিউত্তরে কিছু বলল না। শুধু একটু তাচ্ছিল্য হেসে কোল থেকে ল্যাপটপ নামিয়ে সেন্টার টেবিলে রাখলো। তারপর উঠে গিয়ে ড্রয়ার থেকে একটা চেক বের করে তাতে সাইন করে দিলো। তারপর সেটা নিয়ে এসে মায়ার কাছে ধরলো।
আরমান:- “নাও ধরো।”
মায়া চুপচাপ চেকটা নিয়ে নিলো। দেখলো অ্যামাউন্ট এর জায়গায় 50 লক্ষ্য টাকা লেখা আছে।
মায়া:- “ধন্যবাদ মিস্টার শাহরিয়ার। আমি আসছি তাহলে।”
আরমান:- “ ঠিক আছে। আর সময় মতো খাবার নিয়ে পৌঁছে যেও। লেট করা আমার একদম পছন্দ না।”
মায়া ঠিক আছে বলে বেরিয়ে গেলো। আর আরমান শুধু একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।

মায়া শাহরিয়ার ম্যানশন থেকে বেরিয়ে প্রথমেই ব্যাঙ্ক এ গেলো চেক ভাঙ্গানোর জন্য। তারপর সোজা হসপিটালে গেলো। ডাক্তারের কেবিনে গিয়ে ওর বাবার ব্যাপারে কিছু কথা বলল। ডাক্তার বলল উনার কেমো সেশন চালু করা হয়েছে। আজকের বিলটা জমা করে দিতে। মায়া পুরো এক সপ্তাহের বিল অগ্রিম জমা করে দিলো। তারপর ওর বাবার সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে, নিজের বাড়ি গেলো। ও ঠিক করেছে দুপুরের রান্না টা নিজের বাড়ি থেকেই করে নিয়ে যাবে অফিসে। এতোক্ষণে হয়তো ওই বাড়ির সকলে ফিরে এসেছে। ওই বাড়িতে আবারও কিভাবে ঢুকবে তা বুঝতে পারছে না মায়া।

মায়া বাড়ি আসার সময় বাজার করে এনেছিল। আর ওই বাড়ি থেকে আসার আগে রুবির থেকে জেনে নিয়েছে আরমান কখন কি খাই। আরমান দুপুরে ভাত খাই সাথে হালকা তরকারী। মায়া সেই অনুযায়ী রান্না শুরু করলো। তার সাথে যোগ করলো নিজের স্পেশাল কিছু পদ। খেলে খাবে না খেলে না খাবে। তবুও ওর রাঁধতে ইচ্ছে গেলো। ওর আবির ভাইয়াতো আছেই। ওর আবির ভাইয়া ওর রান্না খেতে খুব ভালোবাসে। যখনি এই বাড়ি আসতো মায়ার হাতের রান্না না খেয়ে যেতো না।
১২ টার মধ্যেই ওর রান্না করা হয়ে গেলো। এরপর মায়া গোসল করতে গেলো। গোসল করে এসে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো আরমানের অফিসের উদ্দেশ্যে। ও আগেই রুবির থেকে অফিসের অ্যাড্রেস নিয়ে নিয়েছিল।

মায়া অটো থেকে নেমেই সামনে বিরাট বিল্ডিং দেখতে পেলো। ১০ তলা তো হবেই। অটোর ভাড়া মিটিয়ে এগিয়ে গেলো অফিসের দিকে। চারিদিকের সৌন্দর্য দেখে মায়ার চোখ ধাঁধিয়ে গেলো। অফিসে প্রবেশ করেই মায়া প্রথমেই রিসেপশনে গেলো। ওখানে একটা মেয়ে বসে আছে। মেয়েটি মায়াকে দেখেই বলল, “বলুন কি সাহায্য করতে পারি??”
মায়া:- “আমি মিস্টার আরমান শাহরিয়ার এর জন্য খাবার নিয়ে এসেছি এটা একটু উনার কাছে পৌঁছে দেবেন প্লিজ।”

রিসেপশনে থাকা মেয়েটি মায়াকে উপর থেকে নিচে অবধি চোখ বুলিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ হাসলো। মায়া বুঝতে পারলো না ও কি এমন হাসির কথা বলেছে। মেয়েটি কিছুটা তাচ্ছিল্য হেসে বলল, “ওই রকম কত এলো আর গেলো। স্যার কারোর খাবার খাই না। তাই যেই রাস্তা দিয়ে এসেছো সেই রাস্তা দিয়ে কেটে পড়ো। স্যারের খাবার প্রতিদিন উনার ড্রাইভার নিয়ে আসে।”
মায়া:- “দেখুন আমি উনার বাড়ি থেকে খাবার টা নিয়ে এসেছি। আজকে ড্রাইভার আসেনি। আপনার স্যার আমায় খুব ভালো করে চেনে। তাই আপনি উনাকে খাবার টা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন, আর না হলে আমাকে বলুন উনার কেবিন টা কোথায়? আমি নিজেই দিয়ে আসছি।”
মেয়েটি:- “আচ্ছা তুমি উনার বাড়ি থেকে এসেছো? কে হও তুমি স্যারের?”

মায়া এই প্রশ্নের কি উত্তর দেবে ভেবে পেলো না। কিছুটা থমকে গেলো ও। তারপর বলল, “আমি যেই হই না কেন তাতে আপনার কি? থাক আপনাকে বলতে হবে না আমি নিজেই খুঁজে নেবো।”
এই বলে মায়া চলে যেতে নিলেই মেয়েটি তাড়াতাড়ি এসে ওর হাত ধরে আটকে দিলো। তারপর বলল, “এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না? তোমার মতো মেয়ে রোজ আসে। তোমার মতো কত মেয়ে স্যারের জন্য পাগল। আর এইরকম নানা বাহানা করে। আর এমনিতেও স্যারের কেবিনে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলছে। উনি এখন ডিস্টার্ব করতে মানা করেছে। তাই সত্যিই যদি তুমি স্যারের বাড়ির কেউ হও তাহলে স্যারকে কল করে নাও। স্যার পারমিশন দিলে আমি যেতে দেবো। নাও কথা বলিয়ে দাও আমায় স্যারের সাথে তোমার ফোন দিয়ে।”
মায়া এবার কি করবে ভেবে পেলো না। এমনিতে দেড়টা বাজতে চলল। অনেক টা দেরি হয়ে গেছে। এদিকে ওকে তো যেতেই দিচ্ছে না। আর ওর কাছে আরমানের নাম্বারও নেই যে উনাকে কল করবে। এরপর মায়ার মনে পড়লো রুবির কথা। মায়া তাড়াতাড়ি রুবিকে কল লাগালো। রুবি কল রিসিভ করতেই মায়া তাড়াতাড়ি বলল, “রুবি আপু!! প্লিজ আবির ভাইয়ার নাম্বার টা দিন। আমাকে স্যারের কেবিনে যেতে দিচ্ছে না।”

রুবি ঠিক আছে ম্যাসেজ করে দিচ্ছি বলে কল কেটে সাথে সাথেই আবির এর নাম্বার পাঠালো। মায়া তাড়াতাড়ি কল লাগালো আবিরকে। প্রথম বার রিং হয়ে কেটে গেলো। রিসিভ করলো না। মায়া আবারো কল লাগালো।
ওদিকে আবির আরমানের কেবিনেই ছিল। ওখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলছে। আবিরের ফোন বেজে উঠতেই আরমান রাগী চোখে তাকালো। আবির প্রথমে ফোনটা সাইলেন্ট করে দিলো। দ্বিতীয় বার আবারো বেজে উঠলো। যেই ক্লাইন্টের সাথে মিটিং চলছিল উনি বললেন, কলটা রিসিভ করতে। আর্জেন্টও হতে পারে। তাই আবির একটু সরে এসে কলটা রিসিভ করলো।

এবার রিসিভ হতেই মায়া আবিরকে কিছু বলতে না দিয়েই মায়া বলে উঠলো, “ভাইয়া আমি অফিসে। আপনার স্যারের জন্য খাবার এনেছি। কিন্তু আমাকে রিসেপশনের উনি ভিতরে যেতে দিচ্ছে না।”
আবির:- “আচ্ছা আমি দেখছি।”
বলেই কল টা কেটে দিলো আবির। তারপর কল লাগালো রিসেপশনে থাকা মেয়েটিকে। মেয়েটি কল রিসিভ করতেই আবির হুমকির সুরে বলে উঠলো, “এই যে মিস, আপনি যাকে দাঁড় করিয়ে রেখে দিয়েছেন তাকে চুপচাপ স্যারের কেবিনে নিয়ে আসুন যদি আপনার চাকরি হারাতে না চান তো। উনি স্যারের খাবার নিয়ে এসেছে।”
বলেই আবির কল কেটে দিয়ে আবারো মিটিং এ জয়েন করলো। এরই মাঝে আরমানকে জানালো মায়া এসেছে খাবার নিয়ে।

এদিকে ওই রিসেপশনের মেয়েটি মায়াকে বার বার সরি বলে নিজে নিয়ে এলো একবারে উপর তলায় তারপর আরমানের কেবিন দেখিয়ে দিলো। মেয়েটি বার বার মায়ার কাছে রিকোয়েস্ট করলো যেনো মায়া স্যারের কাছে ওর নামে কমপ্লেইন না করে। ও ওইরকম ব্যবহার করেছে কারণ ওই একই বাহানা নিয়ে অনেক মেয়েই আসে ওদের স্যারের সাথে দেখা করতে। মায়া মেয়েটিকে জানালো ও কোনো কমপ্লেইন করবে না। নির্ভয়ে থাকতে পারে। মেয়েটি ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেলো। মায়া দরজায় নক করলে আবির ঢোকার অনুমতি দিলো। মায়া দরজা খুলে প্রবেশ করলো। আর সাথে সাথে পাঁচ জোড়া চোখ ওর দিকে গেলো।

কেবিনে এই মুহূর্তে উপস্থিত আছে। আরমান, আবির, আরামানের হেড ডিজাইনার মিস দিশা, আর বিদেশ থেকে আসা আরমানের ক্লাইন্ট মিস্টার ড্যানিয়েল ও তার অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং মায়া। মিস্টার ড্যানিয়েল একটা বিশাল বড়ো ডিল সাইন করার জন্য এসেছে। ওনাকে বিভিন্ন রকম ড্রেসের ডিজাইন দেখানো হচ্ছে। ওনার যদি ডিজাইন পছন্দ হয় তাহলে একেক টা ডিজাইনের হাজার হাজার পোশাক উনি কিনবেন। এই ডিলটা পেলে আরমানের কম্পানি আরো কিছুটা উপড়ে উঠে যাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এটা যে, মিস্টার ড্যানিয়েল এর দুই একটা ছাড়া কোনো ডিজাইন পছন্দ হচ্ছে না। উনি আরো ভালো কিছু দেখাতে বলছেন।
মিস্টার ড্যানিয়েল মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে আরমান বলে উঠলো, “ She is my personal maid. She brought me food.

তারপর মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, “খাবার টা ওই টেবিলে রেখে তুমি চলে যেতো পারো।”
আরমানের কেবিন টা অনেক বড়ো। এক পাশে সোফা রাখা আছে। সেখান কার সেন্টার টেবিলে খাবার টা রেখে দিলো মায়া। তারপর ওখান থেকেই তাকালো মিস্টার ড্যানিয়েল এর সামনে রাখা ল্যাপটপের দিকে। ওনাকে একের পর এক ডিজাইন দেখানো হচ্ছে। আর পাশে বসে একটা মেয়ে ডিজাইন এর ব্যাপারে বলছে। কিন্তু মিস্টার ড্যানিয়েল এর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ডিজাইন ওনার পছন্দ হচ্ছে না। ল্যাপটপে একটা শাড়ির ডিজাইন দেখা যাচ্ছে। মায়া ওদের কাছে গিয়ে বলল, “যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি এই ডিজাইনের ব্যাপারে কিছু বলতে চাই।”

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৬

মায়ার এই কথা শুনে সবাই ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালো। আরমান বিরক্তিতে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “এটা তোমার রান্না ঘর নয় মায়া, যে তুমি আমাদের রান্না করা শেখাবে।”
মায়া এই কথা শুনে মাথা নিচু করে নেয়। তখন মিস্টার ড্যানিয়েল ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বলল, “হুনি কি ভলতে ছাই হামি তা শুনতে ছাই মিস্টার হারমান।” (উনি কি বলতে চাই আমি তা শুনতে চাই মিস্টার আরমান)।

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৮