আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৬১
সালমা খাতুন
পরের দিন….
আরমান-মায়া ও আয়ান-মাইশার বিয়ে সুন্দরভাবে কোনো ঝামেলা ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। বাড়ির হলরুমেই সুন্দর করে সাজিয়ে স্টেজ করা হয়েছে। তবে অবাক করার বিষয় হল, যেখানে দুই দম্পতির বসে থাকার কথা ছিল সেই জায়গায় এখন তিন দম্পতি বসে আছে। আর সেই আর এক অনাকাঙ্ক্ষিত দম্পতি হচ্ছে, আসিফ আর রুবি।
আয়ান মাইশা ও আরমান মায়ার বিয়ে পড়ানো শেষ করে, এখন আসিফ আর রুবির সামনে বসে আছে কাজী সাহেব। অনেকক্ষণ ধরে কাজী সাহেব রুবিকে কবুল বলতে বললেও সে বলছে না।
গ্রামের মানুষ গুলো আবারও কটু কথা বলতে শুরু করেছে। রুবির পাশেই সামিরা, আনজুমা বেগম, সাবিনা বেগম সহ আসিফেও মা ও দাঁড়িয়ে আছে। তারাও রুবিকে অনেকক্ষণ ধরে বোঝানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু তবুও রুবির মুখ থেকে কবুল শব্দটি বের হচ্ছে না।
একজন রোগা পাতলা, সুতির তবে নতুন ছাপা শাড়ি আটপৌরে করে পড়ে থাকা এক মহিলা এগিয়ে এলেন ঠিক রুবির সামনে। এরপর উনি রুবির মুখ থেকে ঘোমটা টা তুলে দিয়ে, ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলেন, বুক ভাঙ্গা কান্নায় ভেঙে পড়ে বললেন, “আর কত হ্যাঁ? আর কত নিচে নামাবি আমাদের? এইদিন দেখার জন্য তোকে ছোটো থেকে এতো কষ্ট করে মানুষ করলাম? এইদিন দেখার আগে আল্লাহ তায়ালা আমাদের মরন কেনো দিলো না বলতো? এখন কি তুই চাস? তোর অসুস্থ বাপের ভাতে বিষ মিশিয়ে তার সাথে নিজেও খেয়ে এই দুনিয়া ত্যাগ করি?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কথা গুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন উনি। আনজুমা বেগম ছুটে এসে উনাকে ধরে রেখেছেন। রুবি অসহায় চোখে তাকালো সেই মহিলা টির দিকে। উনি আর কেউ নয়, রুবির জন্মদাত্রী মা। রুবির চোখেও তখন বাঁধ ভাঙা অশ্রু।
আনজুমা বেগম অসহায় গলায় বললেন, “নিজেকে সামলান ভাবী। আমাদের রুবি এমন মেয়ে নয়, এতোদিন ধরে আছে আমাদের বাড়িতে। আমারা সবাই ওর স্বভাব চরিত্রের ব্যাপারে অবগত। আমার বিশ্বাস এর পিছনে নিশ্চয় কোনো কারণ আছে, সত্যি কোনোদিনও চাপা থাকে না, আর থাকবেও না। শুধু বিয়েটা হয়ে যেতে দিন, আসল সত্য খুব শীঘ্রই সামনে আসবে।”
রুবির মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “ আর সেই সত্য সামনে এসে কি হবে মেমসাব? আমার মেয়ের গায়ে যে কলঙ্কের দাগ লেগেই গিয়েছে, সেটা কি কোনোদিনও মুছবে। এখন ও বিয়েটাও করতে চাইছে না। আমরা কিভাবে সারাজীবন কাটাবো এই গ্রামে? কলঙ্কিনীর বাপ মা নাম নিয়ে চলতে হবে, গ্রামের সবাই থুতু দিবে আমাদের। এক ঘোরে করে দেবে।”
উনার কথার প্রতিউত্তরে আনজুমা বেগম কি বলবেন ভেবে পেলেন না। শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। কাজী সাহেব আবারও একবার জিজ্ঞাসা করলেন। রুবি নিজের মাথায় কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করে চোখ তুললো এবং দেখলো আরমান ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
মাথায় স্নেহের স্পর্শ, চোখে ভরসা। রুবি আরমানকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে টুপ করে ওর চোখ থেকে পানি ঝড়ে পড়ল।
এরপর রুবি চারিপাশে নজর বুলিয়ে কাউকে যেনো খুঁজতে লাগলো, কিন্তু দেখা পেলো না সেই কাঙ্খিত মানুষটির। অবশেষে, ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে চোখের পানিতে ভিজে নিজেকে আসিফের নামে করে দিলো রুবি। কবুল করলো আসিফকে।
রাতের দিকে…
তিন তলার তিনটে পাশাপাশি রুম বিভিন্ন ফুল ও সুবাস যুক্ত মোমবাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে, তিন দম্পতির বাসর ঘর। তিন বধূকে ফুলের বিছানায় ফুল পরী সাজিয়ে বসিয়ে দিয়ে এসেছে সামিরা ও বাকি কাজিন মহল। আর অবশ্যই তিনটি রুমকেই তাল বদ্ধ করতে ভুলেনি ওরা। এখন ওরা আয়ানের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সামিরার ধারণা সবার প্রথম ওর ছোটো ভাইয়াই তার রুমে আসবে। বেশ অনেকক্ষণ ধরে সামিরা এবং ওর কাজিন মহল দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। কিন্তু তাদের তিন ভাইয়ার মধ্যে কারোর দেখা নেই। অপেক্ষা করতে করতে সবাই ক্লান্ত, দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যাথা শুরু হয়েছে সবার। অনেকেই ফ্লোরেই বসে পড়ছে। শেষ পর্যন্ত সামিরাও আর না দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে দরজার সামনে চাবি হাতে নিয়ে বসে পড়লো।
বিরক্ত গলায় সামিরা বলল, “ধ্যাত! আর কতক্ষন অপেক্ষা করবো? ঘুম পাচ্ছে তো এবার।”
রাইমা, সম্পর্কে সামিরার ফুপাতো বোন বলে উঠলো, “তোর ঘুম পাচ্ছে, আর এইদিকে সুরোজ এর অবস্থা দেখ।”
রাইমার বাড়ানো আঙ্গুল অনুসরণ করে তাকালো সবাই। সুরোজ বয়স ওই ষোলো কি সতেরো, বেচারা দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে ফ্লোরেই বসে পড়েছিল, আর এখন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। দেওয়ালে ঠেস দেওয়া মাথা এক দিকে হেলে পড়েছে, মুখের এক সাইড দিয়ে লালা ঝড়ছে। সবাই সুরোজ এর অবস্থা দেখে হেসে ফেললো।
আর একটা পিচ্চি মেয়ে সুরোজের কাছে গিয়ে, কানের কাছে মুখ নিয়ে চিৎকার করে উঠলো, “ভাইয়া ভূত!! ভূত!! ভূত!!”
সাথে সাথে সুরোজও লাফিয়ে ওঠে চিৎকার করতে শুরু করলো, “ভূউউত?? ভূত!! ভূত!! আম্মু বাঁচাও!! আব্বু বাঁচাও!! আল্লাহ আল্লাহ, বিসমিল্লাহ! বিসমিল্লাহ্! না না আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রজিম….”
চোখ বন্ধ করে লাফাচ্ছে আর নিজের মনে চিল্লাচ্ছে সুরোজ। ওর অবস্থা দেখে সবাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আসলে সুরোজ ভূতে প্রচন্ড ভয় পাই। আর এটারই সুযোগ বারবার ব্যাবহার করে দুষ্টু পিচ্চি তাসনিম।
সবার হাসির আওয়াজে চোখ খুলে থেমে গেলো সুরোজ, প্রথমে কিছু বুঝতে না পেরে বোকার মতো কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। এরপর চারিপাশে নজর বুলিয়ে যখন বুঝতে পারলো কি হয়েছে, তখন প্রচন্ড লজ্জা পেলো বেচারা। মাথা চুলকে লজ্জা মাখা হাসি দিলো। ছোটো বোন তাসনিমকে উদ্দেশ্য করে বলল, “তোকে তো আমি পরে দেখে নেবো।”
হঠাৎই সামিরা বসা থেকে ধরফর করে উঠে দাঁড়ালো, সবাই হাসি থামিয়ে দিলো, আরো যারা বসেছিল তারাও ধরফর করে উঠে বসলো সামিরার চোখ অনুসরণ করে তাকিয়ে। আয়ান আসছে, হাঁটার মাঝেই মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করছে, এরপর শার্টের হাতা গোটাচ্ছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে এইমাত্র ফ্রেস হয়ে এসেছে।
আয়ান সোজা নিজের রুমের সামনে এসে, এতো জনকে রুমের সামনে দেখে, ও অবাক হওয়ার ভান করলো। তারপর কিছুটা নাটকীয় ভঙ্গিতে আঙুলের ইশারায় দেখিয়ে বলল, “আম্মুর কথা অনুযায়ী, ওটা আসিফ ব্রো এর রুম, ওটা বিগ ব্রাদারের রুম, আর এটা আমার রুম। তো এতো জনগণ আমার রুমের সামনে কি করছে? আমি তো কোনো ইলেকশনে দাঁড়ায়নি।”
রাইমা:- “টাকা দাও টাকা। তোমার থেকে টাকা আদায় করার জন্য এতোক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি আমরা।”
আয়ান প্রচন্ড অবাক হওয়ার ভান করে বলল, “ওহ মাই আল্লাহ! তার মানে এত্তগুলা ভিক্ষুক আমার কাছে থেকে ভিক্ষা নেওয়ার জন্য আমার রুমের সামনে অপেক্ষা করছে? এতো গুলো ভিক্ষুককে ভিক্ষা দিতে গিয়ে আমি তো নিজেই ভিখারী হয়ে যাবো মনে হচ্ছে।”
সামিরা চিৎকার করে উঠলো, “ভাইয়া!! একদম আমাদেরকে ভিক্ষুক বলবে না। এটা আমাদের ভাই বোনদের অধিকার।”
রাইমা:- হ্যাঁ! এই টাকা আমাদের পাওনা ভাই বোন হিসাবে। তাই বলে আমরা ভিক্ষুক নয়।”
সামিরার আরেক কাজিন বলে উঠলো, “হ্যাঁ! এমনিতেই অনেক রাত হয়েছে ভাইয়া। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে, আমাদের পাওনা আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়ে নিজের বউয়ের কাছে যাও। টাকা না দিলে আমরাও কিন্তু রুমের চাবি দেবো না, সারারাত বউ ছাড়া থাকতে হবে তোমায়।”
আয়ান হাই তুলে বলল, “আচ্ছা কত দিতে হবে? তাড়াতাড়ি বল আমারও ঘুম পাচ্ছে।”
সুরোজ:- “আজকের রাতেও তুমি ঘুমাবে ভাইয়া?”
আয়ান সুরোজের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “ঘুমাবো না তো কি করবো?”
সুরোজ:- “তুমি জানো না, বাসর রাতে কি করে?”
সুরোজ কথটা বলার সাথে সাথেই সবাই ওর দিকে চোখ ছোটো ছোটো করে তাকালো, হঠাৎই সবকিছু সাইলেন্ট হয়ে যেতে সুরোজ বুঝতে পারলো যে ও কি বলে ফেলেছে, জিভ কাটলো ও। ভয় ভয় চোখে তাকালো সবার দিকে।
সুরোজ:- ইয়ে মানে সবাই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে না থেকে আগে ভাইয়ার কাছে টাকা আদায় করো, এরপর এখনো দুটো ভাইয়া বাকি আছে। তারাও যদি এইসময় চলে আসে?”
রাইমা সুরোজের মাথায় চাটি মেরে বলল, “খুব পেকেছিস না? দাঁড়া ছোটো মাকে বলতে হবে, যেনো তোর বিয়েটাও তাড়াতাড়ি দিয়ে দেয়, তার ছেলে ইঁচড়ে পেকে গেছে।”
সুরোজ:- “মোটেও আমি তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো না, আমারও অনেক ইচ্ছা আমি ভাইয়াদের মতো বড়ো বিজনেস ম্যান হবে।”
সামিরা চিৎকার করে উঠলো, “এই তোমরা থামো তো, কথায় কথায় টাইম ওয়েস্ট করছো। ভাইয়া তুমি টাকা দিবে কিনা বলো, টাকা না দিলে কিন্তু দরজাও খুলবো না বলে দিলাম।”
আয়ান:- “কত লাগবে?”
সামিরা:- “বেশি না, আমরা এমনিতেও ছোটো মানুষ, তার উপর অনেক জন আছি। তাই তুমি এক একজনকে পঞ্চাশ করে দাও।”
আয়ান সিরিয়াস ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে বলল, “ওকে, এই তোরা সবাই লাইন দিয়ে দুই হাত পেতে দাঁড়া, পঞ্চাশ কেনো তার থেকেও বেশি করে দেবো।”
সবাই খুশি হয়ে লাইন দিয়ে দাঁড়ালো, ছেলে মেয়ে মিলে প্রায় ১২-১৩ জন আছে। আয়ান নিজের প্যান্টের পকেট থেকে টেনে টেনে বের করলো একটা প্যাকেট। সবাই লাইন দিয়ে দুই হাত পেতে দাঁড়িয়ে আছে, আয়ান ঝটপট করে প্যাকেটে হাত ঢোকাচ্ছে আর এক মুঠো করে তুলে এক একজনের হাতে দিচ্ছে।
সবাই বোকা বনে গেলো যেনো, নিজেদের হাতের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল। কারণ ওদের হাতে এক হাত করে রয়েছে আয়ানের দেওয়া একটাকার অনেক গুলো কয়েন। রাইমা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “ভাইয়া! তুমি আমাদেরকে সত্যি সত্যি ভিক্ষুক বানিয়ে দিলে?”
আয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল, “ভিক্ষুক কোথায় বানাইলাম? সামিরা তো পঞ্চাশ টাকা করে চাইলো, আমি তার থেকেও বেশি দিয়েছি। গুনে দেখ। আম্মু বলেছিল আজকে তোর ভাই বোনদের টাকা লাগবে, তাই যেনো আমি টাকা রেডি রাখি। তোরা জানিস কত কাঠ খড় পুড়িয়ে আমি এই খুচরা এক টাকার কয়েন গুলো রেডি করেছি?”
সামিরা বিরক্ত গলায় বলল, “ পঞ্চাশ টাকা নয় পঞ্চাশ হাজার বোঝাতে চেয়েছি। এক একজনকে পঞ্চাশ হাজার করে দিতে হবে। তোমার এই খুচরা পয়সা তুমি রাখো।”
বলতে বলতেই সামিরা এক টাকার কয়েন গুলো আয়ানের সেই প্যাকেটে ভরে দিলো।
আয়ান আকাশ থেকে পড়লো যেনো, অবাক হওয়ার ভান করে বলল, “পঞ্চাশ হাজার!! তোরা আছিস ১, ২, ৩, ৪….১৩ জন। আল্লাহ!! তারমানে ছয় লক্ষ পঞ্চাশ হাজার। কিছু মাস আগে আমি বিদেশে থাকাকালীন এই টাকা দিয়ে আমি দুই মাসের আমার খরচ চালিয়েছি, তাও বাপ ভাইয়ের টাকাই।
এরপর আয়ান দুই হাত জোড় করে কপালের কাছে ঠেকিয়ে বলল, “থাক বোন আমার! তোদের দরজা খুলতে হবে না, লাগবে না আমার বউ। চল্লাম আমি আমার রুমে ঘুমাতে।”
কথাটা বলেই আয়ান হাঁটা দিলো নিচের তলায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আয়ানের যাওয়ার দিকে, দেখা গেলো আয়ান সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে।
সুরোজ:- “এটা কি হলো? ভাইয়া তো সত্যি সত্যিই চলে গেলো।”
মুহুর্তের মধ্যে আবারও সিঁড়ির কাছে দেখা গেলো আয়ানের মাথা। সিঁড়ির রেলিং ধরে উঁকি দিয়ে মুখ বাড়িয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে বলছে, “এই বনুরা! কিছু কম কর না। এতো টাকা ক্যাশ তো নেই আমার কাছে।”
সবাই আয়ানের অবস্থা দেখে হু হা করে হেসে ফেললো। একজন মেয়ে কাজিন বলে উঠলো, “খুব তো অ্যাটিটিউড দেখিয়ে চলে গেলে, লাগবে না তোমার বউ। তো যাও গিয়ে ঘুমাও গা। আমাদের ও টাকা লাগবে না।”
আয়ান:- “টাকা লাগবে না তো তাহলে রুমের চাবিটা দিয়ে দে।”
সামিরা বিরক্ত গলায় বলল, “শোনো ভাইয়া! ফালতু বকবক করার সময় নেই, অনেক রাত হয়েছে। টাকা দিয়ে রুমের চাবি নাও, নাহলে আমিও চল্লাম চাবি নিয়ে ঘুমাতে।”
আয়ানের আর কি করার, বেচারা এগিয়ে এসে সামিরার ডিমান্ড অনুযায়ী সকলের হাতে পঞ্চাশ হাজারের একটা করে বান্ডিল ধরিয়ে দিলো। এরপর ওরা চাবি ধরিয়ে দিলে, আয়ান একটা শ্বাস ছেড়ে রুমে প্রবেশ করলো।
এরপর আয়ান ধরাম করে দরজা লাগিয়েও কি মনে আবার দরজা খুলে উঁকি মেরে বলল, “এই তোদেরকে তো তোদের ডিমান্ড অনুযায়ী টাকা দিয়ে দিলাম, কিন্তু তোরা আমার এক টাকার কয়েন গুলো ফেতর দিলি না তো। শুধু সামিরা দিয়েছে।”
সুরোজ দাঁত দেখিয়ে বলল, “টুথপেস্ট এর সাথে ব্রাশ ফ্রি, ঠিক তেমন নোটের সাথে কয়েন ফ্রি। এগুলো দিয়ে একটা দায়ের চকলেট খাওয়া যাবে। যাও তো, টাকার জন্য হাই হুতাশ না করে, বাসর রাতে বউয়ের সাথে রোমান্স করো।”
কথাটা বলেই সুরোজ মারলো ছুট। আয়ান ছোটো বড়ো ভাই বোনদের সামনে সুরোজের এমন কথায় কিছুটা লজ্জা পেলো বটে, তাই ও আবারও ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দিলো। সেই শব্দে কেঁপে উঠলো বিছানায় ফুলের মাঝে বসে থাকা মাইশা।
এদিকে সামিরা সহ পুরো কাজিন মহল হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আরমান ও মায়ার রুমের সামনে। ওদের এতোটা অবাক হওয়ার কারণ, ওরা যেই তালা মেরে গিয়েছিল রুমের দরজায় সেই তালা খোলা অবস্থায় কড়ার সাথে ঝুলছে। অথচ ওই তালার চাবি এখনো সামিরার হাতে, সামিরা একবার নিজের হাতে থাকা চাবির দিক তাকাচ্ছে তো একবার খুলে থাকা বড়ো তালাটার দিকে তাকাচ্ছে। দরজা টা হালাকা করে ঠেসানো। রাইমা দরজাটা ঠেলে খুলে ফেললো। তারপর রুমে প্রবেশ করল, সবাই রাইমার পিছু পিছু একে একে রুমে প্রবেশ করলো।
সবাই প্রচন্ড অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল বেডের দিকে, কারণ যেখানে মায়াকে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছিল সেখানে মায়া নেই। তার জায়গায় আছে বেশ কিছু টাকার বান্ডিল, আর একটা কাগজ। কাগজটা তে সামিরার নাম লেখা। সামিরা অবাক হয়েই সেই কাগজ টা নিজের হাতে তুলে নিলো,
এক পিঠে ওর নাম লেখা বড়ো বড়ো করে, অন্য পিঠে লেখা, “নিয়ে গেলাম আমি আমার মায়াবতীকে, তোদের পাওনা টাও বুঝিয়ে দিয়ে গেলাম। ওখানে ১৩ লক্ষ্য টাকা আছে, তোরাও আছিস ১৩ জন। আশা করছি যা দিয়েছি এতেই তোদের হয়ে যাবে। আর মোস্ট ইম্পর্টেন্ট কথা, আবিরের খেয়াল রাখিস, ওর রুমের দরজা লক করা আছে। চাবি এই রুমের বেড সাইড টেবিলে রেখে গেলাম। ওকে বাড়ি থেকে বেরোতে দিবি না আজ। আবারও বলছি, খেয়াল রাখিস ছেলেটার।”
সামিরা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। রাইমাকে উদ্দেশ্য করে বলল ও, “আপু ভাইয়া এখানে ১৩ লক্ষ্য টাকা দিয়ে গেছে, সবাইকে দিয়ে দাও এক লক্ষ্য করে। এটাই লিখে গেছে এখানে ভাইয়া। ভাইয়া নিয়ে গেছে ভাবি মনিকে। হয়তো ভাবিমনির জন্য স্পেশাল কিছুর ব্যাবস্থা করেছে।”
রাইমা:- “কিন্তু ভাইয়া কখন নিয়ে গেলো ভাবি মনিকে? দেখলাম না তো। আর এই রুমে তো তালা মারা ছিল আর চাবি ছিল তো তোর কাছে।”
সামিরা:- “আপু, এই যে পুরোনো যুগের মোটা মোটা তাল গুলো আমি দাদুর কাছে থেকে এনেছিলাম। আর এই তালা গুলোর আর একটা করে চাবি দাদুর কাছেও ছিল। ভাইয়া নিশ্চয় দাদুর থেকে চাবি নিয়েছে। আর উপরে এসেছে হয়তো উত্তর দিকের সিঁড়িটা দিয়ে। আমরা তো আয়ান ভাইয়াকে নিয়েই ব্যাস্ত ছিলাম, তাই হয়তো খেয়াল করিনি।”
সবাই যখন আয়ানকে নিয়ে ব্যাস্ত ছিল, তখন আরমান উত্তর দিকের সিঁড়ি দিয়ে উপরে এসেছে। এই বিশাল বড়ো জমিদার বাড়িটিতে, উপর তলায় আসার জন্য বাড়ির দুই মাথায় দুটো সিঁড়ি করা আছে। আরমান দাদুর কাছে থেকে নিয়ে আসা চাবি দিয়ে দরজা খুলে নিঃশব্দে প্রবেশ করে রুমের ভিতর। রুমে ঢুকে বেডের দিকে তাকাতেই আরমানের ঠোঁটে খেলে যায় মিষ্টি হাসি। তার পিচ্চি মায়াবতী, ফুলের রাজ্যে ফুল পরী সেজে নিষ্পাপ বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে। সারাদিনের ক্লান্তিতে আর পারেনি আরমানের জন্য অপেক্ষা করতে।
সামিরারা ওকে সাজিয়ে দিয়ে বসিয়ে দিয়েই যেতেই, ও ঢিস করে শুয়ে পড়ছে, খাটের মাঝখানে ফুল দিয়ে আঁকা লাভ সেপটা ঘেঁটে পুরো ঘ হয়ে গেছে। পুরো খাটময় ছড়িয়ে আছে কাঁচা ফুলের পাপড়ি, খাটের চারি পাশেও ফুলের মালা ঝুলছে। মৃদু রঙিন আলোয় ঘরের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে, তার সাথে তো সুগন্ধি যুক্ত ক্যান্ডেল আছেই। এই এতো সৌন্দর্য্যের মাঝে মায়াকে ঘুমন্ত অবস্থায় অনেক কিউট লাগছে।
বেশ কিছুক্ষণ মুগ্ধ চোখে চেয়ে রইল আরমান তার পিচ্চি মায়াবতীর দিকে। আজে সে পরিপূর্ণ, সে তার মায়াবতীকে নিজের করে পেয়েছে। আর কিচ্ছু চাই না ওর।
আরমান বিছানায় টাকা সহ সামিরার জন্য লেখা রাখা কাগজটা বিছানায় রেখে দিলো। এরপর মায়ার কপালে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে, খুব সাবধানে মায়াকে কোলে তুলে নিলো। মায়া কিছুটা নড়েচড়ে উঠে, আরমানের বুকে মুখ গুঁজে আবারও ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো। আরমান মৃদু হেসে নিঃশব্দে ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
ওইদিকে সামিরা সহ কাজিন মহল দাঁড়িয়ে ছিল আসিফের রুমের সামনে। অনেকটা রাত হওয়ার পরেও আসিফের দেখা নেই। আসিফ নিচেও কোত্থাও নেই। বেশ কিছুক্ষণ পর দেখা গেলো, এই বাড়ির দুইজন কাজের লোক নিজেদের কাঁধে আসিফের ভর নিয়ে ছাদের সিঁড়ি দিয়ে নেমে এইদিকেই আসছে। পিছনে আছে আসিফের মা। আসিফ ঠিক মতো পা টাও ফেলতে পারছে না। আসিফের অবস্থা দেখে সবাই অবাক, কেউ কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলো না।
রুমের সামনে এসে দাঁড়াতেই আসিফ চোখ খুলে তাকালো। জড়ানো গলায় বলল, “ক..কি ব্যাপার? ত..ত.তোরা আ..আমার রুমের সা..সামনে ক..কি কর..ছিস? এ..এক মিনিট! এ..এটা তো আ..আমার রুম ন..নয়। এই শা..শালির বা..বাচ্চা শালা!! কো.. কোথায় নিয়ে এ..এসেছিস তোরা আ..আমায়?”
আসিফের গালি শুনে কাজের লোক দুজন অসহায় মুখ করে তাকালো আসিফের মায়ের দিকে। আসিফের মা ওই দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলল, “রুমের ভিতর পৌঁছে দিও ওদের।”
এরপর সামিরাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “এখন ও ওর স্বাভাবিক জ্ঞানে নেই। সব তো বুঝতেই পারছো সামিরা। দরজাটা খুলে দিও, আমি তোমাদের টাকা দিয়ে দেবো।”
কথাটা বলেই উনি ওখান থেকে চলে গেলেন।
আসিফ:- “দ..দরজায় আবার ইয়া মো..মোটা তালা দে..দেওয়া। তোরা ব..বন্দি করে রাখবি না..নাকি আমাকে?”
আসিফের চোখ লাল, মাথার চুল উস্কোখুস্কো। পরনে এখনো সেই বিয়ের পোশাকটাই রয়েছে, তাও আবার এলোমেলো অবস্থায়। আসিফকে দেখে কেমন যেনো ভয়ঙ্কর লাগছে, মুখ থেকে মদের গন্ধ আসছে। ইতিমধ্যেই সেই গন্ধে সবার গা গুলিয়ে উঠেছে, তাই সবাই দূরে সরে গেছে। সামিরা আমতা আমতা করে বলল, “আজ তোমার বাসর রাত ভাইয়া। তোমার বউকে সাজিয়েছি আমরা, তাই তোমার থেকে আগে টাকা নেবো তারপর দরজা খুলবো।”
আসিফ:- “আ..আজ আমার বা..বাসর রাত? ওহ হ্.. হ্যাঁ। আজ আ..আমার বাসত রাত। বি..বিয়ে হয়েছে আ..আমার। কি..কিসের টাকা দে..দেবো তোদের? আ..আমি বলেছিলাম আ..আমার বউকে সা..সাজাতে? চল ভা..ভাগ এখান থেকে।”
শেষের কথাটা বলেই আসিফ চোখ রাঙিয়ে তেড়ে গেলো সামিরার দিকে। আসিফকে তেড়ে আসতে দেখে সামিরা চাবি ফেলে মার দৌঁড়। আসিফকে এই অবস্থায় দেখে ওর কেনো জানি প্রচন্ড ভয় লাগছে। সামিরাকে ছুটে পালিয়ে যেতে দেখে, বাকি সব কাজিনরাও পালিয়ে গেলো।
আসিফ:- “ও..ওই!! তা..তালা খোল শালা। আ.. আমার বউ ব..বন্দী আছে। মু..মুক্ত করবো তা.. তাকে আমি।”
আসিফের কথায় একজন তালা খুলে দিলো। আসিফ অনেক আগেই নিজেকে সেই দুই লোকের থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে। দরজা খুলে দিতেই আসফ তাদেরকে চলে যেতে বলল, আসিফের কথায় ওরা দুইজন একবার একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ওখান থেকে চলে গেলো। আসিফ টলমল পায়ে রুমে প্রবেশ করে ধরাম করে আওয়াজ তুলে দরজা বন্ধ করলো।
রুবি খাটের হেড বোর্ডে মাথা দিয়ে, দুই হাঁটু ভাঁজ করে, দুই হাত দিয়ে হাঁটু জড়িয়ে ধরে, শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ ফুলে লাল হয়ে আছে, গালে শুকিয়ে যাওয়া পানির দাগ। রুমে যে আসিফ প্রবেশ করেছে সেটারও কোনো ভাবান্তর নেই।
আসিফ টলমল পায়ে এগিয়ে এলো রুবির কাছে, নাটকিয় ভঙ্গিতে বলল, “হেই বউ! ক..কষ্ট হচ্ছে বুঝি? কত কান্না ক..করছিলে তখন।”
আবারও রুবির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো, সেই এক ফোঁটা পানি আসিফ রুবির গাল থেকে নিজের আঙুলে নিয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে বলল, “এই দেখো এ..এখনো কাঁদছো। তা এ..এই চোখের পানি কি তো.. তোমার প্রেমিকের জন্য?”
রুবির তখনো কোনো ভাবান্তর নেই, ঠাঁই বসে আছে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
আসিফ প্রচন্ড হিংস্র হয়ে রুবির চুল মুঠো করে ধরলো, “ওই শালী! কথা বলেছিস না কেন হ্যাঁ? কষ্ট হচ্ছে? কষ্ট? এতোই যখন কষ্ট পাচ্ছিস প্রেমিকের জন্য, তাহলে বিয়েতে কেনো রাজি হলি হ্যাঁ? আজ তো তোর প্রেমিক তোকে নিয়ে পালাতেও চেয়েছিল, পালাইলি না কেনো হ্যাঁ? তুই তো মরতেও গিয়েছিলিস, কিন্তু তোর প্রেমিক তোকে ঠিকই বাঁচিয়ে নিলো। মরে গেলি না কেনো তুই? তোর জন্য! শুধু মাত্র তোর জন্য আমার পুরো প্ল্যান ভেস্তে গেলো। আজ এইখানে, ঠিক এই তোর জায়গায় মায়ার থাকার কথা ছিল। আজ মায়া পরি আমার বউ হতো, কিন্তু শুধু মাত্র তোর জন্য হলো না। কেনো ছিলি তুই মায়ার জায়গায়, বল? কেনো ছিলিস মায়ার রুমে? তাও আবার মায়ার বিছানায়?”
পুরো কথাটা রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলল আসিফ। তখনো ও রুবির চুলের মুঠো শক্ত করে ধরে আছে। ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেলেছে রুবি।
রুবি আসিফের কথায় অবাকের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলো, শক্ত গলায় জিজ্ঞাসা করল, “তার মানে এই সবকিছু আপনার প্ল্যান করে সাজানো? আজ আমার জায়গায় মায়া ভাবি থাকতো?”
আসিফ ঝটকা দিয়ে রুবির চুলের মুঠি ধরেই ওকে বিছানায় ফেলে দিলো। চিৎকার করে উঠলো ও, “হ্যাঁ! হ্যাঁ! এই সবকিছু আমার প্ল্যান করে সাজানো ছিল। তোর জায়গায় মায়ার থাকার কথা ছিল। কিন্তু তুই আমার পরিকল্পনা ভেস্তে দিলি, আজও হেরে গেলাম আমি আরমানের কাছে, আজও হেরে গেলাম। শুধু মাত্র তোর জন্য। এর শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে।”
রুবি অবাক গলায় বলল, “আজও হেরে গেলেন? তার মানে আগেও হেরেছেন? আচ্ছা এখন বুঝতে পারছি, তার মানে সবকিছুর পিছনে আপনি ছিলেন? ছোটো আম্মুকে ব্লাকমেইল করে মায়া ভাবিকে ড্রাগস দেওয়া, এগুলো সব আপনি করেছিলেন তাই না?”
আসিফ:- “হ্যাঁ! হ্যাঁ! সব আমি করেছি। সবকিছু আমি করেছি। এমনকি সেই রাতের ভয়ঙ্কর অ্যাক্সিডেন্টে টাও আমিই করিয়েছি।”
কথা গুলো বলতে বলতেই আসিফ প্যান্টের সাথে পড়ে থাকা কোমরের বেল্ট খুলে ফেললো।
রুবি:- “কেনো? কিসের এতো শত্রুতা স্যারের সাথে আপনার? আমার জানামতে স্যার তো কোনো ক্ষতি করেনি আপনার। তাহলে আপনি কেনো এতো ক্ষতি করতে চেয়েছেন স্যারের?”
আসিফ:- “দরদ? এখন প্রমিক ছেড়ে স্যারের উপর দরদ উতলে পড়ছে? তোর জন্যই তো আজ হেরে গেলাম আমি। সে সব কথা থাক। শুনেছি বাসর রাতে বউকে কিছু গিফ্ট দিতে হয়, চল আমার তরফ থেকে দেওয়া গিফ্ট দিয়েই দিই।”
কথটা বলেই হাতে থাকা বেল্ট দিয়ে এক বারি মারলো রুবির গায়ে। ব্যাথায় আহ শব্দ করে উঠলো ও।
আসিফ হেসে বলল, “কেমন লাগলো গিফ্ট? সুন্দর না? দাঁড়া আরো দিই।”
বলেই আসিফ বেল্ট দিয়ে একের পর এক আঘাত দিতে শুরু করলো রুবির শরীরে। ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে ওর, না চাইতেও মুখ দিয়ে চিৎকার বেরিয়ে আসছে রুবির। তাই ও মুখের মধ্যে শাড়ির আঁচল ভরে নিলো, যাতে আসিফের দেওয়া ব্যাথায় করা আর্তনাদ গুলো কেউ শুনতে না পাই।
আসিফ পুরো হিংস্র জন্তু হয়ে উঠেছে যেনো। একের পর এক বেল্ট দিয়ে আঘাত করে চলেছে। মুখে বলছে, “খুব শখ না কিসের শত্রুতা তোর স্যারের সাথে জানার জন্য? তোর স্যার আমার থেকে আমার মূল্যবান সম্পদ টা ছিনিয়ে নিয়েছে। তোর স্যার আমার কলিজাকে কেড়ে নিয়েছে, না না কেড়ে নেয়নি। অনেক দূরে পাঠিয়ে দিয়েছে। যেখান থেকে হাজার চাইলেও ফিরিয়ে আনা যায় না।”
আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৬০
আঘাত করতে করতেই আরো অনেক কিছু বলল হয়তো আসিফ। কিন্তু সেগুলো ওর কানে আর গেলো না। ধীরে ধীরে অস্পষ্ট শোনালো আসিফের গলার আওয়াজ। কারণ সারাদিনের ক্লান্তি, তার উপর না খাওয়া এবং অতিরিক্ত মারের চোটে ধীরে ধীরে জ্ঞান হারালো রুবি। বেশ কিছু জায়গায় কেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে এসেছে রুবির শরীর থেকে, সেই রক্ত মিশে গেলো টাটকা গোলাপ সহ বিভিন্ন ফুলের পাপড়ির সাথে। ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় পড়ে থাকলো, রুবির নিস্তেজ শরীর।