আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা শেষ পর্ব 

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা শেষ পর্ব 
সালমা খাতুন

অনেক টা ভোরে রওয়ানা দেওয়ায়, মায়ারা সবাই পৌঁছে গেছে ওদের গ্রামের বাড়িতে। আজ একটা বিশেষ দিন, সমস্ত আয়োজনও করা হয়েছে বিশেষ ভাবে। আরমানের যেখানে যতো আত্মীয় স্বজন আছে, আজ সবাই হাজির হয়েছে গ্রামের বাড়িতে।
সামিরা উদাস মনে দাঁড়িয়ে আছে, পুকুরের পাড়ে। ওদের এই জমিদার বাড়ির পাশেই রয়েছে পুকুর টা। পুকুরের পানির দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে কি যেনো ভাবছে সামিরা, ঠিক তখনি নিজের মেয়ের গলার আওয়াজ পেয়ে ঘুরে তাকালো ও।

আবিরা:- “মাম্মা তুমি এখানে? জানো আমি তোমায় কখন থেকে খুঁজছি।”
বলতে বলতেই গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এলো আবিরাতুন্নেশা রুবি। সামিরা নিজের মেয়েকে কোলে তুলে নিলো তাড়াতাড়ি করে। বলল, “কেনো কি হয়েছে আম্মু? খুঁজছো কেনো? আর তোমার না পায়ে ব্যাথা? এই পা নিয়েই আবার হাঁটা শুরু করেছো?”
আবিরা ঠোঁট ফুলিয়ে বললো, “হাঁটা শুরু করবো না তো কি করবো বলো? তোমাকে তো কখন থেকে খুঁজছি, তুমি তো আসছোই না। সবাইকে বললাম তোমাকে ডেকে দিতে, কিন্তু তোমাকে কেউ খুঁজেই পেলো না। তাই আমি নিজে নিজেই খুঁজতে বের হলাম।”
সামিরা মেয়েকে আদর করে বলল, “ওলে আমার আম্মু টা, খুব সরি মাম্মা। এখন বলো তো কেনো খুঁজছিলে আমাকে? কিছু লাগবে তোমার?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আবিরা:- “হুম! পাপাকে লাগবে। সেই যে পাপা বেড়িয়ে গেলো, আমাকে বসিয়ে দিয়ে, এখনো আসলো না। কোথায় গেছে পাপা? মামু রা তো সবাই এখানে আছে, পাপা নেই কেনো?”
সামিরা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, “তোমার পাপা একটা কাজে গেছে আম্মু, একটু পরেই চলে আসবে।”
আবিরা জেদ দেখিয়ে বলল, “নানু মনিও সেই কখন থেকে এই একই কথা বলছে, একটু পরেই চলে আসবে। কিন্তু পাপা তো আসছেই না। তুমি নিয়ে চলো আমাকে পাপার কাছে, আমি যাবো।”
সামিরা নিজের মেয়েকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু কিছুতেই বুঝলো না আবিরা। বাবা পাগল মেয়ের এখন জেদ উঠেছে বাবার কাছে যাবে। তাই শেষমেশ উপায় না পেয়ে, একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মেয়েকে নিয়ে হাঁটা দিলো। বাড়ি থেকে বেরিয়ে, রাস্তা দিয়ে কিছুটা হেঁটই গন্তব্যে পৌঁছে গেলো ওরা। সামনের দৃশ্য দেখে ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো সামিরার। মেয়েকে নামিয়ে দিলো কোল থেকে।

আবিরা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলো হাঁটু মুড়ে, মাথা নিচু করে বসে থাকা নিজের পাপার দিকে। নিজের পাপার কোলে উঠে পড়লো গলা জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ নিজের মেয়েকে এখানে দেখে চমকে উঠলো আবির। আবিরা নিজের পাপাকে বলল, “পাপা তুমি এখানে কি করছো? জানো আমি কখন থেকে খুঁজছি তোমায়?”
এরপরই আবিরার চোখে পড়লো ওর পাপার চোখে পানি। ও বলল, “পাপা! তুমি কাঁদছো কেনো? মাম্মা যেমন আমাকে পিটুনি দেয়, তেমন তোমাকেও কি কেউ পিটুনি দিয়েছে? তোমার কোথায় কষ্ট হচ্ছে পাপা?”
আবির তাড়াতাড়ি ওর চোখের পানি মুছে ফেললো। বলল, “না মাম্মা কেউ পিটুনি দেয়নি আমায়। চোখে কি যেনো পড়ছে তাই পানি চলে এসেছে। তুমি এখানে কিভাবে এলে মাম্মা?”

আবিরা আঙ্গুল বাড়িয়ে দেখালো, “ওই তো মাম্মার সাথে এসেছি।”
আবির পিছন ফিরে মেয়ের দেখানো আঙ্গুল অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখলো, কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে আছে সামিরা, অসহায় চোখে। আবিরের চোখেও ফুটে উঠলো অসহায়ত্ব। নিজের মেয়ের কথায় চমকে উঠলো আবির।
“পাপা! ওখানে আমার নাম লেখা কেনো? ওটা তো কবর। আমি জানি, মানুষ মারা গেলে ওখানে চলে যায়। আমিও কি ওখানে চলে যাবো?”

আবির তাড়াতাড়ি মুখ চেপে ধরলো আবিরার, চোখ ছলছল করে উঠলো ওর।
“না মাম্মা এমন বলতে নেই, ওটা তোমার নাম নয়। ওটা তোমার একটা অ্যান্টির নাম। ওই অ্যান্টিটা মারা গেছে, উনার কবর ওটা। তোমার নাম তো ‘আবিরাতুন্নেশা রুবি’ আর দেখছো না ওখানে শুধু ‘রুবি’ লেখা আছে।
আবিরা বুঝদার মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে বলল, “ওহ বুঝেছি! আর তুমি ওই অ্যান্টি টার জন্যই কি তাহলে কান্না করছিলে? আমি টিভিতে দেখেছি, কেউ মারা গেলে সবাই কান্না করে। ওই অ্যান্টি টা তোমার কে হয় পাপা?”
আবির এই প্রশ্নের কি উত্তর দেবে ভেবে পেলো না। ঠিক তখনি রুবির কবরের পাশে থাকা আর একটি কবরের উপর পাগলের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো কেউ একজন। বুক ফাটা কান্নায় ভেঙে পড়লো। আবিরা সেই দৃশ্য দেখে ছলছল চোখে জিজ্ঞাসা করলো, “পাপা নানু মনি এভাবে কাঁদছে কেনো? ওটা কার কবর?”

একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আবির, মায়া ও সাবিনা বেগম ছুটে এসে আগলে নিলেন আরমানের ফুপি, আসিফের মা কে। হুম! রুবির কবরের ঠিক পাশেই আসিফের কবর। আবিরের মনে পড়ে গেলো সেই ভয়ঙ্কর অতীতের কথা।
আরমানদের বিয়ের কিছুদিন পরেই, শেষ পর্যন্ত কিছু করতে না পেরে ডাইরেক্ট কিডন্যাপ করে আসিফ মায়াকে। বন্দী করে রাখে এক পরিত্যক্ত গোডাউনে। খুঁজে খুঁজে পৌঁছে যায় আরমান সেখানে। আসিফ সমস্ত রকম ব্যবস্থা করেই রেখেছিল, আরমান প্রথমে সেখানে একাই গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে আসিফ তো আর একা ছিল না, ওর সাথে ছিল ভাড়া করা কিছু গুন্ডা। মায়া ছিল আসিফের কাছে বন্দী, তাই মায়াকে হাতিয়ার বানিয়ে আরমানকেও খুব সহজে বন্দী করে ও। আরমানের সামনে মায়াকে কষ্ট দেয়, আর আরমান ছটফট করতে থাকে।

অতীত……
আবিররা যখন সেখানে পৌঁছায় তখন দেখে, আরমানকে একটা চেয়ারে বসিয়ে হাত ও পা রসি দিয়ে বাঁধা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতের চিহ্ন, দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ নির্মম ভাবে মারা হয়েছে ওকে। আরমানের ঠিক সামনেই একই রকম ভাবে বাঁধা আছে মায়া। মায়ার তো জ্ঞান নেই বললেই চলে, ঠোঁটের কোনে রক্ত শুকিয়ে লেগে আছে।
আবির দের আসার আগে, আসিফ মায়ার গলায় মোটা দড়ির ফাঁস দিয়ে অন্য প্রান্তের দড়ি নিজে ধরে রেখেছে, মায়াকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে একটা টুলে। খেলা করার মতো, একবার করে গায়ের বলে দড়ি টেনে মায়াকে ঝুলিয়ে দিয়েছে, মায়া ছটফট করেছে বাঁচার জন্য। আসিফ তখন কিছুক্ষন রেখে নামিয়ে দিয়েছে, মায়ার দম যাওয়ার আগেই। এই রকম একবার একবার করে বহু বার করেছে এমন, যেনো একটা বাচ্চা খেলা করছে কোনো খেলনা নিয়ে। এবং ভীষণ মজা পাচ্ছে। এইদিকে এই দৃশ্য দেখে গলা কাটা মুরগীর ন্যায় ছটফট করেছে আরমান। চিৎকার করেছে অসহায় এক মানুষের মতো। কতশত অশ্রু ঝড়িয়ে অনুরোধ করেছে আসিফের কাছে মায়াকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তার হিসাব নেই।

আসিফ আবির দের কে দেখতে পেয়ে বলল, “ওহ তোরাও এসে পড়েছিস? ভালোই করেছিস। তোরাও একটু দেখ লাইলা মজনুর প্রেম কাহিনী, না! না একটু ভুল হলো। মায়াবতী আর গম্ভীর সাহেবের প্রেম কাহিনী। মায়াবতী বলে, আমাকে আঘাত করো, আমার গম্ভীর সাহেবকে ছেড়ে দাও। গম্ভীর সাহেব বলে, আমাকে শেষ করে তবুও আমার মায়াবতীর কোনো ক্ষতি করিস না। হা! হা! হা! হা!”
শেষের কথা গুলো নাটকিয় ভঙ্গিতে বলে, হাসতে শুরু করলো আসিফ। ততক্ষণে আবির, সামিরা, আয়ান ওদেরকেও বন্দী করা হয়েছে আসিফের ইশারায়। আরমান নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো আসিফকে, “কেনো এতো রাগ তোর আমার প্রতি? কি ক্ষতি করেছি আমি তোর?”

আসিফ হুংকার ছেড়ে বলে উঠলো, “কি ক্ষতি করেছিস জানিস না বুঝি? নাটক করছিস আমার সাথে? আমার ছোট্ট পাখির মত বোন টার জীবন কেড়ে নিয়েছিস তুই। শেষ করে দিয়েছিস আমার বোনটাকে। শুধু মাত্র তোর জন্য আজ ও এই দুনিয়ায় নেই। মেরে ফেলেছিস আমার বোনটাকে। আর এখন সবকিছু না জানার ভান করছিস?”
আরমান অবাক গলায় বলল, “কি যা তা বলছিস আসিফ? আমি কেনো আসিফাকে মারতে যাবো? তুই তো ভালো করে জানিস, ও নিজের ঘরে ফাঁস লাগিয়ে ছিল গলায়। আর এর কারণ এখনো পর্যন্ত কেউ জানে না।”
আসিফ:- “হ্যাঁ এটা ঠিক কেউ জানে না, কিন্তু তুই তো জানিস। আর সবকিছু তুই আগে থেকেই জানতিস।”
আসিফ কি বলছে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না আরমান। তাই জিজ্ঞাসা করলো ও।
“কি বলতে চাইছিস স্পষ্ট করে বল, তোর কথা কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আমি।”

আসিফ:- “হ্যাঁ এখন তো বুঝতেই পারবি না। আমার বোন আসিফা শুধু মাত্র তোর জন্য নিজের জীবন শেষ করেছে। শুধু মাত্র তোর অপমান আর অবহেলা সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ছিল ও।”
আরমান:- “মানে কি সব বলছিস? ও আমার জন্য কেনো গলায় ফাঁস লাগাবে?”
আসিফ:- “আসিফার ঘর থেকে ওর লাশ টা ঠিক কবে বের করা হয়েছিল বলতো?”
আসিফের প্রশ্নে আরমানের ভ্রু কুঁচকে গেলো। বলল, “আমার আর মায়ার বিয়ের ঠিক পরের দিন।”
নিজের মুখ থেকে উচ্চারণ হওয়া কথাটা নিজের কানে যেতেই চমকে উঠলো আরমান।
আসিফ একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। বলল, “হুম! নানাভাই জোড় করে তোর আর মায়ার যেই বিয়ে দিয়েছিল, ঠিক সেই বিয়ের রাতে আমার ছোট্ট বোনটা গলায় ফাঁস লাগিয়েছিল। আর তারপরের দিন ওর ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল আমার ছোট্ট পাখিটার লা..লাশ।”

গলা টা কেঁপে উঠলো আসিফের। চোখ গুলো ছলছল করছে। ওর বোনের মুখটা মনে পড়লেই কেঁপে উঠছে ভিতর টা।
আসিফ আবারও বলতে শুরু করলো।
“যখন নানাভাই এক সপ্তাহ আগে তোর আর মায়ার বিয়েটা ঠিক করে, তখন আসিফা গিয়েছিল নানাভাই এর কাছে। তোকে আসিফা মনে মনে ভালোবাসতো গভীর ভাবে। নানাভাইকে জানিয়ে ছিল সেই কথা। অনেক অনেক রিকোয়েস্ট করেছিল আমার বোনটা, নানা ভাইকে যেনো এই বিয়ে ভেঙে দেয়। এবং ওর সাথে যেন তোর বিয়ে দেয়। কিন্তু নানাভাই কিছুতেই রাজী হয়নি।”
আসিফের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। কান্নায় গলটা বুঁজে আসছে ওর। আবারও বলল, “এরপর কোনো উপায় না পেয়ে, যাহির করেছিল নিজের ভালোবাসার কথা তোর কাছে। নির্লজ্জ ও বেহায়ার মতো তোর কাছে নিজের ভালোবাসার ভিক্ষা চেয়েছিল। কিন্তু তুই কি করলি? অপমান করে, গায়ে হাত পর্যন্ত তুলে ছিলিস। আর এর কিছুদিন পরেই তুই নানা ভাইয়ের কথায় মায়াকে বিয়ে করে ফেললি। আর আমার বোনটা সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে গেলো।”

কথা গুলো বলেই ধপ করে হাঁটু মুড়ে বসে গেলো আসিফ, মেঝেতে। ওখানে থাকা প্রতিটা ব্যাক্তি অবাক হলো আসিফের কথা গুলো শুনে। এগুলো তাদের সত্যিই অজানা ছিল। আরমান নিজেও অবাক গলায় বলল, “কিন্তু সত্যি আমি জানতাম না যে আসিফা আমাকে ভালোবাসতো। আর তোর কোথাও ভুল হচ্ছে। ও কখনো নিজের ভালোবাসা যাহির করেনি আমার কাছে।”
আসিফ মুখ তুলে তাকালো আরমানের দিকে। চোখ গুলো টকটকে লাল হয়ে গেছে।
“জানি তুই নিজের দোষ কখনো শিকার করবি না। এখনো মিথ্যা বলতে তোর বাঁধছে না? কি ভেবেছিলি সবার কাছে সবকিছু অজানায় থেকে যাবে?”

এটা বলেই আসিফ আবারও একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। এরপর পকেট থেকে ফোন বের করে, একটা ভিডিও চালু করে ধরলো সবার সামনে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, আরমান ঠিক তখনি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে খালি গায়ে। কোমরে শুধু একটা টাওয়েল পেঁচানো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়েছিল ও, ঠিক তখনি আসিফা আসিফের নিজের বোন এবং আরমানের ফুপাতো বোন হয়। সে আরমানকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আরমানের নগ্ন পিঠে মাথা রেখে বলছে, “আরমান ভাইয়া! ভালোবাসি তোমায়। প্লিজ তুমি নানা ভাইয়ের ঠিক করা মেয়েকে বিয়ে করো না।”

সাথে আরমান ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় আসিফা কে। বিছানায় থাকা শার্ট টা তাড়াতাড়ি গায়ে গলিয়ে নেয়। চিৎকার করে উঠে ও, “কি যা তা বলছিস আসিফা পাগল হয়েছিস?”
আসিফা ও চিৎকার করে উঠলো, “হ্যাঁ হ্যাঁ পাগল হয়েছি। শুধু তোমায় ভালোবেসে।”
সাথে সাথে একটা চড় বসিয়ে দেয় আরমান আসিফার গালে। আসিফা হুমরি খেয়ে পড়ে যায় ফ্লোরে। আসিফা কান্না শুরু করে, “তুমি তো মাইশা নামের এক মেয়েকে ভালোবাসতে, তাহলে এখন কেনো ওই মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলে।”

আরমান:- “তুই খুব ভালো করে জানিস, আমি রাজি হয়নি, জোড় করে রাজি করানো হয়েছে। আর হ্যাঁ ভালোবাসি মাইশা কে, সারাজীবন ওকেই ভালোবেসে যাবো। ওর জায়গা কেউ কোনো দিনও নিতে পারবে না।”
আসিফা:- “তাহলে কেনো সেই জায়গায় নানা ভাই এর ঠিক করা মেয়েটি আসছে? সেই জায়গায় যদি মায়া নামের মেয়েটি আসতে পারে, তাহলে আমি কেনো আসতে পারবো না? এতোদিন চুপ ছিলাম শুধু মাত্র, তোমার সেই ভালোবাস মাইশার জন্য পাগলামি দেখে। কিন্তু আজ তো আমি চুপ থাকবো না। মায়া যদি সেই জায়গায় আসতে পারে, তাহলে আমি কি দোষ করলাম?”

এইভাবেই আরো অনেক যুক্তি দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রিকোয়েস্ট করে আসিফা আরমানকে, ওকে বিয়ে করার জন্য। আরমান জানাই এটা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। কারণ আসিফা কে ও নিজের বোনের চোখে দেখে, সামিরা আর আসিফা ছিল সমবয়সী। আসিফা এটাও বলে যে, “মায়ার বদলে আমাকে বিয়ে করো। আমাকে বিয়ে করলে তোমারই লাভ, যেদিন মাইশা তোমার জীবনে ফিরে আসবে সেদিনই আমি তোমার জীবন থেকে সরে যাবো। এটা কিন্তু মায়া নামের মেয়েটি করবে না। নানা ভাই তো চাই তুমি বিয়ে করো, সেটা যেই মেয়েই হোক। কিন্তু তুমি নিজে থেকে কোনো মেয়েকে বিয়ে করছো না বলে, নানা ভাই মায়ার সাথে জোড় করে তোমার বিয়ে দিচ্ছে। তুমি নানা ভাইকে জানাও যে আমাকে বিয়ে করতে চাও।”

আরমান প্রচন্ড রেগে যায় এগুলো আসিফার মুখ থেকে শুনে। ওর এগুলো একদমই সহ্য হচ্ছে না, কারণ ও আসিফা কে একে বারে সামিরার মতোই নিজের ছোটো বোনের চোখে দেখে।
এদিকে আসিফাও কিছুতেই বুঝতে চাই না। পাগলামি করতে শুরু করে, কাঁদতে থাকে পাগলের মতো। আরমান রেগে গিয়ে আবারও মারতে যায় আসিফা কে। ঠিক তখনি সামরি এসে ওর ভাইকে থামিয়ে দিয়ে আসিফা কে সরিয়ে নেয়। এখানেই শেষ আসিফের ফোনে চলা ভিডিওটি।
সামিরা অবাক গলায় বলে উঠে, “কিন্তু এটা তো একটা নাটক ছিল আসিফ ভাইয়া।”
আসিফ:- “হুম জানি তো, আমার বোনের ভালোবাসা টা তোদের সবার কাছে নাটক মনে হয়।”

সামিরা:- “না ভাইয়া তোমার বুঝতে কোথাও ভুল হচ্ছে। এটা একটা নাটক ছিল। সেদিন আসিফা আর আমাদের আরো দুইজন বান্ধবী আমাদের বাড়ি এসেছিল। আমরা ট্রুথ অ্যান্ড ডেয়ার খেলছিলাম ছাদে বসে। আসিফা ডেয়ার নিয়েছিল।‌ ওর ডেয়ার ছিল বাড়ির মেন গেট দিয়ে যেই প্রবেশ করুক না কেনো তাকেই প্রপোজ করতে হবে। সেটা বাড়ির কাজের লোকই হোক বা কোনো গার্ড হোক, বা কোনো মেয়েই হোক। যেই প্রবেশ করবে তাকেই প্রপোজ করতে হবে। সেই অনুযায়ী গেট দিয়ে প্রবেশ করে বড়ো ভাইয়া। আর শর্ত অনুযায়ী ও যায় আরমান ভাইকে প্রপোজ করতে। আমরা ভীষণ ভয় পাই ভাইয়াকে তাই সেদিন ভাইয়ার রুমে যাওয়ার সাহস পাইনি। আসিফা কে মোবাইল এ ভিডিও করে আনতে বলি। তুমি যেই ভিডিও টা দেখালে ওটা আসিফারই করা। ওর আসতে দেরি হচ্ছে বলে আমার ভাইয়ার রুমে যায়, এবং দেখি ভাইয়াকে ওকে মারতে যাচ্ছে তাই, ভাইয়াকে আটকায়।”

আসিফের মোবাইলে থাকা ভিডিও এর পরের দৃশ্য….
সামিরা:- “ভাইয়া! ভাইয়া প্লিজ থামো। আগে আমার কথাটা শোনো, মেরো না প্লিজ।”
আরমান সামিরাকে দেখে থেমে যায়, নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। সামিরা বলে, “ভাইয়া ও নাটক করছে। এটা ডেয়ার ছিল।”
আরমান ভ্রু কুঁচকে বলে, “মানে?”
এরপর সামিরা সবকিছু খুলে বলে আরমানকে। আসিফা চোখের পানি মুছে বলে, “ভাইয়া কেমন‌ লাগলো আমার নাটক? সিনেমায় চান্স পাবো মনে হচ্ছে?”

আরমান:- “দুষ্টু মেয়ে একটা! এরকম কেউ করে? শুধু শুধু আমার হাতে মার খেলি যে?”
আরমান কথাটা আসিফার থাপ্পড় মারা গালে হাত বুলিয়ে বলে। আসিফা বলে, “কি করবো বলো, ডেয়ার যখন নিয়েছি পুরোন তো করতেই হবে।”
এরপর ঠোঁট ফুলিয়ে বলে আসিফা, “কিন্তু আমার সত্যিই খুব ব্যাথা লেগেছে।”
আরমান:- “সরি বনু। আমি তো না বুঝেই মেরেছি। তুই এমন ভাবে কথা গুলো বলছিলি, যে বোঝার উপায়ই নেই যে ওগুলো নাটক ছিল।”
এরপর আরমান ওদের দুজনকে দুটো চকলেট এর বক্স ধরিয়ে দেয়। “এই নে। তোদের জন্য এনেছিলাম, তোদের বান্ধবীদের কেও ভাগ দিতিস। আমি তো জানতাম না ওরা এখানে আছে, জানলে ওদের জন্যেও আনতাম।”

“হুম। সেটা তোদের কাছে সামান্য ডেয়ার পূরন আর নাটক মনে হলেও, ওটা কিন্তু নাটক ছিল না। ওর বলা কথা গুলো ছিল ওর মনের অনুভূতি। ওই ঘটনা টা পুরো সত্য ছিল। আর সেটা এই ডাইরিটা পড়লেই বুঝতে পারবি।”
কথা গুলো বলেই আসিফ একটা ডাইরি ছুঁড়ে দিলো, আরমানের দিকে। আরমান একবার তাকালো আসিফের দিকে, তারপর ডাইরিটা খুলে পড়তে শুরু করলো। পড়তে পড়তে যতো এগিয়ে গেলো আরমান ততই একটু একটু করে অবাকের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলো ও। পুরো ডাইরিটা জুড়ে লেখা আরমানকে নিয়ে আসিফার অনুভূতি আর আবেগ। হ্যাঁ, সেইদিন ওই ডেয়ার পূরনের নামে ঘটনা টাও মিথ্যা ছিলো। আসিফার মনের কথা ছিল ওগুলো, একটাও মিথ্যা নয়, একটুও নাটক নয়। ডাইরিতে লেখা আসিবার শেষ বাক্য গুলো ছিল,

“ভালোবাসি আরমান ভাইয়া। হ্যাঁ এতোদিন ভালোবাসি কথাটা মুখে বলেনি, কারণ তোমার মুখ থেকেও শুনে ছিলাম একই কথা‌। কিন্তু সেটা আমার জন্য ছিল না, ছিল তোমার পিচ্চি মায়াবতীর জন্য। এতোদিন গোপনে ভালোবেসেছি তোমায়, কারণ তোমাকেও যে তোমার ভালোবাসার জন্য ছটফট করতে দেখেছি। কিন্তু আজ আর সহ্য করতে পারলাম না, গিয়েছিলাম তোমার কাছে আমার ভালোবাসার স্বীকারোক্তি জানাতে, ফিরিয়ে দিলে আমাকে। বুঝলাম তুমি আমায় নিজের ছোটো বোনের চোখে দেখো। তুমি কখনোই আমাকে তোমার স্ত্রী এর অধিকার দেবে না। কিন্তু তুমি আমার চোখের সামনে অন্য কোনো মেয়ের সাথে সংসার করবে, সেটা আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারবো না। তাই চলে যাচ্ছি, এই দুনিয়া ছেড়ে। ভালো থেকো ভাইয়া। অনেক অনেক দোয়া রইল, সুখী হও জীবনে। আর কখনো যাবো না, আমার ভালোবাসার দাবী নিয়ে….

আরমানের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। মেয়েটা যে ওকে এতোটা গভীর ভাবে ভালোবাসতো সেটা কখনোই বুঝতে দেয়নি। হ্যাঁ! সেইদিনের সেই ডেয়ার পূরণের নামে করা নাটকটিও ওর কাছে নাটক মনে হয় নি প্রথমে। কারণ ওর বলা কথা গুলোতে এক রকম জোড় ছিল, একটা অধিকার ছিল, অনুভূতি ছিল। কিন্তু এগুলো নিয়ে ও আর মাথা ঘামায়নি, কারণ এমনিতেই ওর মাথাটা পুরো ঘেঁটে ছিল। দাদু তখন জোড়াজুড়ি করছিল মায়াকে বিয়ে করার জন্য। আসিফা সুইসাইড করার পরও ও আর এগুলো ভেবে দেখেনি কোনো দিনও। কারণ এগুলো যে সত্যিই ওর ভাবনার বাইরে ছিল।
এদিকে আসিফ নিজের বোনের কথা ভেবে এতোটাই ভেঙে পড়েছে যে ও খেয়াল করলো না, আরমানের দড়ি দিয়ে বাঁধা থাকা হাত কিভাবে খুললো।
আবির, আয়ান, সামিরা আসিফের গুন্ডা দের হাতে বন্দী। তখনো ছটফট করছে ওরা ছাড়া পাওয়ার জন্য। আবির বলল, “কিন্তু এতে আরমানের কি দোষ? ও কিছুই জানতো না। আর না তো তোর বোন কে সুইসাইড করতে ও বাধ্য করেছিল।”

আসিফ চিৎকার করে উঠলো, “হ্যাঁ হ্যাঁ সব দোষ আরমানের, আজ যদি সেদিন ও আমার বোনকে ফিরিয়ে না দিত, তাহলে আমার বোন সুইসাইড করতো না। যদি সেদিন ওর আর মায়ার বিয়ে টা না হত তাহলে আজ আমার বোন বেঁচে থাকতো। মায়াকে বিয়ে করেছে বলেই আমার বোন বাধ্য হয়েছে সুইসাইড করতে।”
আসিফের চোখেও পানি, আর মুখে এক ভয়ঙ্কর হিংস্রতা। আরমানের চোখের পানি দেখে তাচ্ছিল্য হেসে বলল, “এখন চোখ দিয়ে পানি আসছে তাই না? তবে এই চোখের পানি আমার বোনের জন্য না ফেলে, তোর মায়াবতীর জন্য জমিয়ে রাখ। ঠিক যতটা কষ্ট আমার বোন পেয়েছে, ঠিক ততোটা কষ্ট তোর মায়াবতী কেও দেবো। ঠিক যতটা ছটফট আমি করেছি, ততটা ছটফট তুইও করবি। বুঝবি আপন মানুষ হারানোর কষ্ট। কি ভেবেছিস? আমার বোনকে কষ্ট দিয়ে শেষ করে দিয়ে, তুই নিজে সুখী থাকবি? আর সেটা আমি হতে দেবো? কক্ষনো না।”

এরপর আসিফ একটু ঝুঁকে ধীরে কিন্তু সবার শোনার মতো আওয়াজে বলল, “একটা সিক্রেট বলি? নানা ভাই ও না এমনি এমনি মারা যায় নি। তাকেও আমিই শেষ করেছি। একটু একটু করে পয়জন দিয়ে শেষ করে দিয়েছি তাকে। কারণ নানা ভাই ও ছিল সমান দোষী। আসিফা প্রথমে নানা ভাইয়ের কাছেই গিয়েছিল, কিন্তু নানাভাই ফিরিয়ে দিয়েছিল। অথচ চাইলে নানা ভাই কিন্তু পারতো তোকে আর আসিফা কে মিলিয়ে দিতে, কিন্তু সেটা সে করেনি, তাই তাকেও শেষ করে দিয়েছি আমি। হা হা হা হা”

বলেই পাগলের মতো হেসে উঠলো আসিফ। এরপর আবার বলল, “মনে আছে সেই মায়ার আর তোর ভয়ঙ্কর অ্যাক্সিডেন্ট এর কথা? সেটাও আমি করিয়ে ছিলাম। তারপর ওই যে মায়াকে ড্রাগস দেওয়া, সেটাও আমি দিতে বাধ্য করেছিলাম ছোটো মামিকে, ব্ল্যাকমেইল করে, সবার অজান্তে। ওই যে তোদের বিয়ের আগের দিন রাতে, রুবির জায়গায় মায়ার থাকা কথা ছিল, কিন্তু কাকতালীয় ভাবে মায়ার জায়গায় রুবি চলে আসে এবং আমার সমস্ত প্ল্যান ভেস্তে যায়। কিন্তু এখন? এখন আমি তোর মায়াবতীকে তোরই চোখের সামনে শেষ করবো। তুই শুধু দেখবি আর ছটফট করবি।”

বলেই হেসে উঠলো আসিফ। আরমান ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। আরমানের বসে থাকা চেয়ারের পিছনে ঘাপটি মেরে বসে থাকা, রুবিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো আরমান, “থ্যাঙ্কস রুবি।”
উঠে দাঁড়ালো রুবি। কিছু বলল না শুধু একটু হাসলো। আসিফ হুংকার ছেড়ে উঠলো, “বিশ্বাস ঘাতক! তোর জন্য শুধু মাত্র তোর জন্য আমার প্ল্যান নষ্ট হয়েছিল। আর এখনো তুই আরমানকে হেল্প করছিস, তোকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না।”

আরমান এগিয়ে গেলো, জ্ঞান হীন মায়ার দিকে। ওকে মুক্ত করার জন্য, কিন্তু তার আগেই আসিফ ধরে ফেললো আরমানকে। ওদের দুজনের মধ্যেই হাতাহাতি শুরু হলো। আসিফের পাঁচ জন গুন্ডা ছিল, দুজন আবিরকে, দুজন আয়ানকে আর একজন সামিরাকে ধরে আছে। আসিফ ওর গুন্ডা দের উদ্দেশ্য বলল, “হাঁ করে দেখছিস কি? একজন এই দিকে আয়, হেল্প কর আমায়। আরমানকে আটকাতে হবে। আবিরকে ধরে থাকা একজন এগিয়ে গেলো আসিফকে হেল্প করার জন্য। আরমান একাই যথেষ্ট ওদের দুজনকে কাবু করার জন্য। আরমানের সাথে ওদের দুজনের মারামারি শুরু হলো, ওরা দুজন মিলেও পেরে উঠছে না আরমানের সাথে।

এদিকে গুন্ডা গুলোদের হাতে ছিল বন্দুক, কিন্তু আবির খুব ভালো করে জানে ওটা শুধু ভয় দেখানোর জন্য। ওটা ওরা ব্যাবহার করবে না। আবিরকে ধরে থাকা সেই গুন্ডা সাথেও আবিরের ফাইট শুরু হলো। আবিরও তাকে কাবু করে ফেললো নিমিষেই। এদিকে রুবি একটা মোটা লাঠি নিয়ে এসে আয়ান কে ধরে থাকা একজন গুন্ডার মাথায় বারি দিলো। এতোটাই জোরে বারি দিয়েছে যে, মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত পড়তে শুরু করেছে। সেই গুন্ডা মাথা ধরে মেঝেতে বসে পড়েছে। একজন পড়ে যেতেই আয়ান দ্বিতীয় জন কে কাবু করে ফেললো।

এইদিকে সামিরা সবাইকে ফাইট করতে দেখে, নিজেও কিছু একটা করার কথা ভাবলো। কিন্তু বেচারি পাখির ছানার মতো শরীর নিয়ে এই হাতির মতো মানুষ গুলোর সাথে তো আর ফাইট করতে পারবে না। তাই নিজের দাঁত গুলোর ব্যাবহার করলো। খুব জোড় কামড় বসালো ওকে ধরে থাকা গুন্ডা টির হাতে, এই সুযোগে রুবি তার মাথাতেও দিলো এক বারি। সব গুন্ড গুলোই ইতিমধ্যে কাবু হয়ে গেছে। এখন শুধু আসিফ আর আরমানের মধ্যে ফাইট চলছে। ঠিক তখনি ত্রিশ চল্লিশ টা মতো পুলিশ বিলবিল করে ঢুকে গিয়ে, চারিপাশ ঘিরে ফেললো। ধরে ফেললো আসিফকে ও।
অফিসার নিজে থেকেই বলে উঠলেন, “অনেকক্ষণ আগেই এসেছি আমি। তবে আমার ফোর্স আসেনি ছিল, তাই আমি অ্যাটাক করতে পারছিলাম না। সবকিছু নিজের কানে শুনেছি উনার বলা কথা গুলো। আপনার কোনো চিন্তা নেই, আমি নিজে সাক্ষী দেবো উনার বিরুদ্ধে। কঠিন সাজা হবে উনার।”

আসিফকে বেশ কিছু পুলিশ ধরে আছে। রাগে পুরো ফসফস করছে ও। মনে হচ্ছে ওর শরীরে একসাথে অনেক গুলো দানবের শক্তি ভর করেছে।
“আমি থাকতে, তুই তোর মায়াবতীকে নিয়ে সংসার করবি সেটা কিছুতেই হতে দেবো না। তোর মায়াবতীকে আমি শেষ করেই ছাড়বো।”
কথা টা বলেই কোনো রকমে পুলিশ ধরে থাকা হাতটা একটু সামন্য বাড়িয়েই একজন পুলিশের কোমরে থাকা রিভলবার কোনো রকমে বের করলো। তারপর কোনোকিছু না ভেবেই তাক করলো মায়ার দিকে, সাথে সাথে একটা বিকট আওয়াজ। আর থমকে গেলো চারিপাশ।

চিৎকার করে উঠলো দুইজন। একজন মায়াবতী আর একজন রুবি বলে। আরমান প্রথমে ভেবেছিল, গুলি গিয়ে বিঁধেছে মায়ার শরীরে তাই ও মায়াবতী বলে চিৎকার দিয়েছিল। কিন্তু ওর ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো
হ্যাঁ! রিভলবার মায়ার দিকে তাক করলেও মায়া আর রিভলবার থেকে বেরোনো গুলির মাঝে এসে দাঁড়িয়েছে রুবি। এদিকে আসিফ নিজেই যেনো হতভম্ব হয়ে গেছে। অফিসার তাড়াতাড়ি করে আসিফের হাত থেকে রিভলবার কেড়ে নিলো। এদিকে ততক্ষণে রুবির দেহ লুটিয়ে পড়েছে মেঝেতে।
আবির এই দৃশ্য দেখে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। “রুবিইইইইই” বলে চিৎকার দিয়ে আবির রুবির মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিলো। আবির অনবরত রুবির গাল হাত দিয়ে ঝাঁকাতে থাকলো। রুবির শ্বাস তখন উঠানামা করছে। ক্রমশেই ধীর হয়ে আসছে। গুলিটা সরাসরি রুবির বুকের বাঁ পাশে অর্থাৎ হার্ট বরাবর এসে লেগেছে। আবিরের চোখ বেয়ে অনবরত পানি পড়ছে, হাঁসফাঁস করছে। আবির পাগল প্রায় হয়ে বলতে থাকলো,

“এই বোকাপাখি! তোমার কিচ্ছু হবে না, আমি আবির থাকতে তোমার কিচ্ছু হতে দেব না। তুমি শুধু চোখটা খোলা রাখো। আল্লাহ তোমাকে অন্যের করে দিলো যেটার বিরহে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। আমি তো দূর হতেই তোমার সুখ দেখতে চেয়েছিলাম বোকাপাখি। আমার মনের দুয়ার তোমার জন্য আজীবন খোলা ছিল। তুমি জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও যদি আমার হতে চাইতে তবে আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিতাম না। তুমি যেই অবস্থাতেই থাকো না কেন, আমি ঠিক সেই অবস্থাতেই তোমাকে গ্রহণ করে নিতাম। তোমার কিচ্ছু হবে না বোকাপাখি, আমি তোমার কিচ্ছু হতে দিব না। আমার অপেক্ষা এত সহজে শেষ হতে পারেনা বোকাপাখি।”

তারপর আবির চিৎকার দিয়ে আরমান কে উদ্দেশ্য করে বলল, “আরমান অ্যাম্বুল্যান্স এ খবর দে। আমার বোকাপাখির কিছু হতে পারেনা। ওর কিছু হলে আমি শেষ হয়ে যাবো আরমান, আমি শেষ হয়ে যাবো।”
আরমান আসিফ ও গুন্ডাদেরকে পুলিশের হাতে ছেড়ে দিয়ে দ্রুতই অ্যাম্বুল্যান্স এ খবর দিলো। এদিকে এই অবস্থা দেখে সামিরাও দ্রুত ওদের কাছে ছুটে এসেছে। সামিরাও অনবরত কান্না করে চলেছে। এসে আবিরের কোলে থাকা রুবিরে মাথার কাছে গিয়ে বলল, “কিছু হবে না তোমার আপু। মনোবল রাখো। অ্যাম্বুল্যান্স চলে আসবে এক্ষুনি। জোরে জোরে শ্বাস নাও। তোমাকে ছাড়া আমার আবুল ভাইয়া যে শেষ হয়ে যাবে। তোমাকে বাঁচতে হবে যে কোনো মূল্যে। আমার আবুল ভাইয়ার জন্য তোমাকে বাঁচতেই হবে। এতটা নিষ্ঠুর হত পারোনা তুমি।”

এদিকে রুবির শ্বাস ক্রমশ ই ধীর হয়ে আসছে। অনেক কষ্টে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,” আমাকে ক্ষমা করে দিবেন আবির বাবু। আমি সত্যিই ভাগ্যবতী, তাই তো আপনার মতো মানুষের মনে, একজন সাধারণ মেড হয়েও জায়গা পেয়েছি। ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্ত আমি আপনার যোগ্য না। উপরওয়ালার ইচ্ছায় না চাইতেও কলঙ্কিত হয়ে অন্যের হতে হয়েছে আমাকে, যেখানে বেঁচে থেকে সংসার কখনোই হতো না। তারচেয়ে বরং মায়া ম্যাম এর বেঁচে থাকা জরুরী। স্যার আর ম্যাম যে অনেক সাধনা, ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে এক হতে পেরেছে। আসিফের সাথে বিয়ে হয়ে আমার জীবন নরকে পরিণত হয়েছিল। এর চেয়ে ভালো স্যার আর ম্যাম একসাথে ভালোভাবে বেঁচে থাকুক। আর আরমান স্যার আমাকে যা দিয়েছেন তার ঋণ কীভাবে শোধ করবো বলুন তো আবির বাবু? আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন, পড়াশোনার সুযোগ দিয়েছেন, অসুস্থ বাবা-মাকেও দেখভাল করেছেন। এত এত ঋণ আমি কীভাবে শোধ করবো আবির বাবু? আমার জীবনের তো আর কিছুই নেই তাই এই জীবনের বিনিময়ে যদি স্যারের ঋণ একটুও শোধ করতে পারি তাহলে যে আমি মরেও একটু শান্তি পাবো। আমার চোখের সামনে আপনাকে ভেঙে পড়তে দেখার সাধ্য নেই আবির বাবু। আপনি ক্ষমা করে দিয়েন আমাকে। আমি জানি আমার সময় শেষ। আমার একটা শেষ ইচ্ছে পূরণ করবেন আবির বাবু?”

আবির পাগলের মতো কাঁদছে আর রুবির কথা শুনে তো নিজেকে আটকানো দ্বায় হয়ে পড়ছে। আবির ঐ অবস্থাতেই মাথা ঝুঁকিয়ে বোঝালো যে সে রুবির কথা রাখবে। রুবি তা দেখে ঠোঁটের কোণে একটু হাসি এনে বলল, “আপনি আর পেছন ফিরে থাকবেন না আবির বাবু। আপনি সামনে এগিয়ে যাবেন। আপনার জীবনটাকে নষ্ট করবেন না। আপনার জীবনটাকে সাজাবেন নিজের মতো করে। আমি দূর হতেই আপনার সুখ দেখব। আপনি সুখী থাকলে তা দেখে আমার আত্মা শান্তি পাবে। কথা দিন আপনি আমার কথা রাখবেন। কথা দিন আবির বাবু আপনি আমার শেষ হচ্ছে পূরণ করবেন।”
আবির আরো হাউমাউ করে ডুঁকরে কেঁদে উঠে রুবির মাথাটা আরো শক্ত ভাবে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বলল, “আমি সুখী হবো বোকা পাখি, তবে একা নয়। তোমাকে নিয়ে। একদম উল্টা পাল্টা বলবে না তুমি। কিচ্ছু হবে না তোমার, আমি হতে দেবো না।‌ আমি একটা ছোট্ট সংসার সাজাবো, কিন্তু সেটা তোমাকে নিয়ে হবে বোকা পাখি। তোমাকে নিয়ে।”

রুবি মুখে কোনোরকম শেষ হাসি ফুটিয়ে ফিসফিস করে বলল, “এটা যে আর কোনো ভাবেই সম্ভব নয় আবির বাবু।”
এরপর রুবি সামিরার দিকে তাকিয়ে বলল,”তুমি তো আমায় আপু ডাকো। বড় বোন মনে করে একটা কথা রাখবে সামিরা?”
সামিরা কান্নারত অবস্থাতেই মাথা ঝাঁকিয়ে বোঝালো,”হ্যাঁ”।
রুবির কথা বলতে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। তবুও কোনোরকমে সামিরাকে বলল,” সামিরা কথা দাও আমায়, তুমি তোমার এই আধ পাগল আবুল ভাইয়াকে দেখে রাখবে। কথা দাও আমাকে সামিরা। এই মানুষটা যে বড্ড পাগল। সে যে ভালোবাসার কাঙাল। তাকে তুমি দেখে রাখবে সামিরা, ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখবে। একমাত্র তুমি ছাড়া কেউ বোঝেনা তোমার এই আবুল ভাইয়াকে। যতোই তোমার ঝগড়া করো না কেনো, আমি জানি তোমার দুজন হচ্ছো এক অপরের জান। তোমার আবুল ভাইয়ার বুকে আমার শূন্যতা টা তুমি তা পূরণ করে দিও সামিরা। আমি জানি এটা তুমি ছাড়া আর কেউ পারবে না।

আমি তোমার এই আধ পাগল আবুল ভাইয়াটাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম। আমি তো যত্নে রাখতে পারলাম না। আমার দ্বায়িত্বটা তোমাকে দিয়ে গেলাম সামিরা। আমার শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করো সামিরা। কথা দাও আমাকে, আবির বাবুর প্রতিটা বিপদে তুমি ঢাল হয়ে দাঁড়াবে। কখনো তার হাত ছাড়বে না। তোমার এই ভাঙা আবুল ভাইয়াটাকে একটা নতুন সজীব জীবন ফিরিয়ে দিবে। কথা দাও সামিরা।”
সামিরা এই অবস্থাতে কি করবে কিছু বুঝে উঠতে না পেরেই মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে রুবির হাতটা চেপে ধরলো। রুবি অনেক কষ্টে কাঁপা কাঁপা হাতে সামিরা আর আবিরে হাত মিলিয়ে দিয়ে মুখে কোনোরকম শেষ হাসি ফুটিয়ে ফিসফিস করে বলল, “এবার যে আমি মরেও শান্তি পাবো আবির বাবু” এই বলে আবিরের বুকে ঢলে পড়লো মৃত্যুর কোলে।
আবির রুবির অবস্থাতে বুঝে উঠতেই চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, “নাআআআআআআআ। রুবি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেত পারোনা। তোমার ভালোবাসা এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে না। বোকা পাখি! এই বোকা পাখি! কথা বলো প্লিজ।”

এরপর আবির আরমানের দিকে তাকিয়ে বলল, “এই আরমান, তুই একবার ধমক দিয়ে দে তো রুবিকে। দেখ না ও কথা বলছে না আমার সাথে। ও তোকে ভয় পাই, তোর সব কথা শুনে। তুই ওকে একবার ধমকে দে না, বল আমার সাথে কথা বলতে।”
পাগলের মতো বকতে থাকলো আবির। আরমান সে নিজেও আজ ভেঙে পড়েছে, নিজের বোন সমান রুবিকে হারিয়ে। নিজে ওকে গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছিল, মুখে কখনো প্রকাশ না করলেও ভালোবাসা দিয়েছে আপন বোনের মতো। আজ রাগী গম্ভীর কাঠখোট্টা আরমান শাহরিয়ার এর দুই চোখের অশ্রুর বাঁধ ভেঙেছে।

রুবির লাশ শাহরিয়ার ম্যানশনে আনার পর, গ্রামে নিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা হচ্ছিল। ঠিক তখনি ঘটে যায় আরো একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা। শোনা যায়, আসিফ ও থানায় বন্দী থাকা অবস্থায় বাথরুমে সুইসাইড করেছে। দেওয়ালে ভাঙ্গা ইঁটের টুকরো দিয়ে লেখা, “আমার কবর টা যেনো আমার রুবির পাশেই দেওয়া হয়। এটাই আমার শেষ চাওয়া।”
হুম! সেই প্রথম যেদিন থেকে রুবিকে আসিফ শাহরিয়ার ম্যানশনে দেখেছে সেই দিন থেকেই এক তরফা ভালোবেসে গেছে মনে মনে। কিন্তু ওর নিজের ও লক্ষ্য ছিল শুধু আরমানকে শেষ করা,
কখনো একবারও ভাবেনি নিজেকে নিয়ে, এবং নিজের ভালোবাসাকে নিয়ে। কারণ ও জানতো, আবির রুবি দুজন দুজনকে চাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত
না চাইতেও ভাগ্য ওদেরকে মিলিয়ে দিয়ে ছিল।

তবে প্রতিশোধের খেলায় অন্ধ হয়ে, নিজের ভালাবাসাকেও বিসর্জন দিয়েছিল ও। অবহেলা করেছিল রুবিকে। বিয়ের পর থেকে প্রচন্ড কষ্ট দিয়েছিল ও। তারপরও সব মুখ বুজে সহ্য করেছিল রুবি।
কিন্তু এখন নিজের হাতে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে মেরে ফেললো ও। এটা কিছুতেই সহ্য করতে পারলো না আসিফ। তাই নিজেই নিজেকে শাস্তি দিলো। সুইসাইড করলো আসিফ। আর শেষ চাওয়া হিসাবে চেয়ে নিলো, “রুবির কবরের পাশে নিজের কবর।”
বর্তমান…..

আজ রুবি এবং আসিফের মৃত্যু বার্ষিকী। সেই উপলক্ষে ওদের গ্রামের সকল মানুষজন সহ, আরো আসেপাশের গ্রামের দুঃখি গরীব মানুষদের খাওয়ানো হবে, বস্ত্র দান করা হবে। মিলাদ পড়ানোরও ব্যাবস্থা করা হয়েছে। আর এর অর্ধেক খরচ আবির বহন করে, বাকি অর্ধেক আসিফের বাবা। ওরা এই দুনিয়া ছাড়ার পর থেকে প্রতি বছর এটাই হয়ে আসছে।
রুবির বাবা মারা গেছে কয়েক বছর হলো। মা টা এখনো বেঁচে আছে, তবে আর হাঁটা চলা করতে পারে না। বিছানায় পড়ে আছে তিনি। আবির উনাকে দেখাশোনার জন্য একটা মেয়ে রেখেছে। আবির রুবির বাবা মাকে শহরে নিয়ে গিয়ে নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিল, কিন্তু উনারা এই শেষ বয়সে এসে গ্রাম ছেড়ে আর কোথাও যেতে চাইনি। তাই আবির গ্রাম থাকলেও উনাদেরকে কোনো কষ্ট পেতে দেয়নি কোনোদিনও। নিজের বাবা মা ভেবে আগলে রেখেছে এই আট বছর।
আবির আর সামিরার বিয়েটাও হয়ে ছিল হুট করে। সামিরার বিয়ে ঠিক হয়ে ছিল একজনের সাথে, কিন্তু বিয়ের দিন সেই ব্যক্তি তার প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে যায়। মান সম্মান বাঁচাতে, সাবিনা বেগম ও আনোয়ার সাহেব ছুটে যান আবিরের কাছে। সাবিনা বেগম আবির কে বলেন, “আবির, যেদিন থেকে বাবা তোমায় এই বাড়িতে নিয়ে এসেছিল, সেইদিন থেকে তোমাকে নিজের ছেলের চোখে দেখছি। আজ যদি তোমার কাছে নিজের ছেলে মনে করে কিছু চাই তাহলে দেবে?”

আবির:- “চাইতে হবে না অ্যান্টি, আপনি শুধু আদেশ করুন।”
সাবিনা বেগম হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “তুমি আগে কথা দাও আমায়।”
আবির সাবিনা বেগমের হাতে হাত দিয়ে বললেন, “কথা দিচ্ছি আন্টি, যদি আমার সাধ্যের মধ্যে হয় যা চাইবেন তাই দেবো। আপ কে লিয়ে মেরি জান ভি কুরবান হ্যায়।”
সাবিনা বেগম:- “জান কুরবান করা লাগবে না আব্বু তোমার জীবন টা লাগবে। প্লিজ তুমি তোমার জীবন টা আমার মেয়ে সামিরার নামে করে দাও। ওকে বিয়ে করে ওর জীবন টা বাঁচাও আবির। আমাদের মান সম্মান যে সব শেষ হতে চলেছে।”

আবির এটা শুনে আকাশ থেকে পড়লো যেনো, “মানে? এইসব কি বলছেন অ্যান্টি? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
তখনি আরমান রুমে প্রবেশ করে, “রায়হান অন্য এক মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেছে আবির। রায়হানের বাবা জানতে পেরে, বিয়ের বরযাত্রী মাঝ রাস্তা থেকেই ঘুরিয়ে নিয়ে গেছে। বর আসেনি বিয়ে করতে। আমাদের সমস্ত গেস্ট এসে গেছে। এখন তুই আমাদের শেষ সম্বল। তোর কাছে রিকোয়েস্ট করছি আমি, সামিরাকে বিয়ে টা করে আমাদের মান সম্মান বাঁচিয়ে দে আবির।”
আবিরের অবস্থা এখন এমন যেনো বড়ো ধরনের একটা শক পেয়েছে।
“কিন্তু আমি কিভাবে কি? তুই তো জানিস আমার বিষয়ে আরমান। আর এমনিতেও সামিরাকে আমি আমার ছোটো বোনের নজরে দেখি। এটা কিভাবে সম্ভব?”
আরমান:- “তুই চাইলেই সম্ভব আবির। আর সামিরার জন্য তোর থেকে ভালো ছেলে এই দুনিয়ায় হাজার খুঁজলেও পাবো না। কোনোদিন জোর করে কিছু চাপিয়ে দিইনি তোর উপর, তবে আজ দিচ্ছি। প্লিজ রাজি হয়ে যা আবির। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।”

আবির অসহায় চোখে তাকালো আরমানের দিকে। “তুই কিন্তু জানিস আমার বিষয়ে সবকিছু। আমার মনের কথাও জানিস তুই আরমান তারপরেও এটা কিভাবে বলতে পারছিস?”
আরমান:- “এছাড়া যে উপায় নেই আবির। তোর যদি আমাকে স্বার্থপর মনে হয়, তাহলে হ্যাঁ আমি আমার বোন ও বন্ধুর কথা ভেবে স্বার্থপর হতেও রাজি। তুই বা আর কতদিন এভাবে একা একা থাকবি? আমার কথাটা প্লিজ রাখ। বিয়ে করেনে সামিরাকে। দেখবি খুব সুখী হবি তোরা দুজন, এই আমি আরমান বলে রাখলাম।”
মিসেস সাবিনা বেগম কাঁদতে শুরু করলেন, “তুমি আমাকে কথা দিয়েছো আবির। দয়া করো আমার মেয়েটাকে, বিয়ে টা করে নাও বাবা। আমি তোমার কাছে সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। হাত জোড় করে অনুরোধ করছি তোমায়, তোমার এই মায়ের অনুরোধ রাখো বাবা।”

আবিরের কাছে আর কোনো উপায় ছিল না। সেই ছোটো থেকে ওদের বাড়িতে আছে, ওরা ওকে নিজের ছেলের মতো মানুষ করেছে। কোনোদিন কোনো কিছুর কমতি ওকে বুঝতে দেয়নি। তাই একপ্রকার নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়েই রাজি হয় সামিরাকে বিয়ে করতে। কিন্তু বিয়ে করে নিলেও প্রথম প্রথম সামিরা এবং আবির কেউই সেই বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। সামিরাকে ও জোড় করা হয় আবিরকে বিয়ে করার জন্য। রাগে দুঃখে দেশ ছাড়ে সামিরা। চার বছর পর নিজের দেশে ফিরে সামিরা, “ডক্টর সামিরা শাহরিয়ার” হয়ে। বিদেশে থাকাকালীন সামিরা বুঝতে পারে, আবিরের প্রতি ওর এক অন্য ভালোবাসা আছে। হয়তো সেটা তিন কবুলের জোড়েই।

এরপর সামিরা মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়, ও আবিরের জীবনে ফিরে যাবে। তাই বিদেশ ফিরে এসে, আবিরের মনে নিজের জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা করে। ধীরে সফল হয় ও। আবিরও মেনে নেয় সামিরাকে। হৃদয়ে জায়গা দেয় নিজের অর্ধাঙ্গিনীকে। হয়তো ওদের হালাল সম্পর্কের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। তবুও আবিরের হৃদয়ের কোনো এক কোনে এখনো রয়ে গেছে রুবি নামক মানুষ টি। আর সামিরাও সেটা খুব ভালো করেই জানে। থাক না ওর আবুল ভাইয়ার হৃদয়ের এক পাশে তার বোকা পাখি‌। সামিরা না হয় আর একপাশে থাকবে।
রাতের দিকে….

আবির ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে, দুই হাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে, দৃষ্টি ওর বহু দূরে। তখনি দুটো হাত পিছন থেকে এসে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরলো। মাথা রাখলো ওর পিঠে। আবির মুচকি হাসলো। বলল, “কি ব্যাপার এখনো ঘুমাওনি যে? সারাদিন অনেক খাটা খাটনি হয়েছে, যাও ঘুমিয়ে পড়ো।”
সামিরা:- “তোমার উপরেও তো অনেক চাপ গেছে আজ, তুমিও তো ঘুমাওনি এখনো। আর জানো না তোমার ওই বুকে মাথা না রাখলে ঘুম আসে না আমার, তারপরেও এমন বলছো? ঠিক আছে, গেলাম আমি ঘুমাতে। তবে এই রুমে না, বাচ্চাদের রুমে।”
শেষের কথা গুলো অভিমানী গলায় বলে, গাল ফুলিয়ে আবিরকে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে চাইলো সামিরা। কিন্তু তার আগেই আবির সামিরার হাত ধরে টেনে এক ঝটকায় নিজের কাছে টেনে নিলো। সামিরা তখনো নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। এরপর হঠাৎই ও একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে কামড় বসালো আবিরের বুকে।
আবির:- “আহ!! কি করছিস শামুক?”
সামিরা:- “এটা আমাকে একা ঘুমাতে বলার শাস্তি।”
আবির সামিরাকে বুকে জড়িয়ে রেখেই বলল, “এইভাবে কামড় কিসে দেয় বলতো?”

সামিরা ভ্রু কুঁচকে বলল, “কিসে?”
আবির:- “কুত্তায়।”
আবিরের কথা শেষ হতেই সামিরা ওকে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করলো। আর আবির হু হা করে হাসতে থাকলো। এরপর এক হাত দিয়ে বুকের একপাশে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আবির, “শামুক! ধন্যবাদ তোকে আমার এই অগোছালো ভাঙাচোরা জীবনটাকে সাজিয়ে একটা ছোট্টো পুতুল উপহার দেওয়ার জন্য।”
থেমে গেলো সামিরার ছটফটানি। ও নিজেও আবেগী কন্ঠে মুচকি হেসে বলল, “আমি জানি তুমি রুবি আপুকে এখনো কতটা ভালোবাসো। আপুকে দেওয়া কথা যে আমি রাখতে পেরেছি এটাই আমার বড় সাফল্য। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমার পাশে থাকবো আমার আধ পাগল মিস্টার আবুল ভাইয়া।”
কথাটা বলেই সামিরা আবিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, ওর বুকে মাথা রাখলো।

অন্য দিকে…
মাইশা শাড়ি চেঞ্জ করে নাইট ড্রেস পড়ে ওয়াশ রুম থেকে বেরোতেই আয়ান ওকে কোলে তুলে নিলো, ওর কিছু বুঝে উঠার আগেই।
“আরে কি করছো? পড়ে যাবো তো।”
আয়ান:- “আজ পর্যন্ত কখনো আমার কোল থেকে পড়তে দিয়েছি তোমায়? সারাটা দিন দূরে দূরে থেকেছো আজ, এই বিরহ যে সহ্য হয়না।‌ বুকে আগুন জ্বলে।”
মাইশা:- “মাত্র ১২ ঘন্টা কাছে পাওনি বলে বুকে আগুন জ্বলে তোমার? যাও ওয়াশরুমে গিয়ে বুকে পানি ঢেলে আগুন নিভিয়ে আসো।”
এরপর মাইশা ওর থাকা শাড়িটা দেখিয়ে বলল, “ততক্ষণে আমি শাড়িটা গুছিয়ে আলমারিতে তুলে রাখি।”
আয়ান মাইশাকে কোলে করে নিয়ে এসে, বিছানায় ফেলে দিতে দিতে বলল, “আমার বুকে জ্বলতে থাকা এই আগুন যে ওয়াশরুমের পানি দিয়ে নেভানো যাবে না ডার্লিং। এই আগুন নেভানোর জন্য তোমাকে চাই।”
কথাটা বলেই আয়ান মাইশার হাতে থাকা শাড়িটা কেড়ে নিয়ে সোফায় ছুড়ে মারলো। এরপর এক লাফে বিছানায় উঠে, মুখ ডুবালো মাইশার গলায়। ঠিক তখনি দরজায় নক হওয়ার আওয়াজ হলো। বিরক্ত হলো আয়ান। বিরক্তি গলায় বিড়বিড় করে উঠলো আয়ান, “এই রাতের বেলাতেও একটু শান্তি নেই।”
দরজার ওপাশ থেকে বলে উঠলো আনায়া, “মাম্মা! আদ্রিতা কান্না করছে। রুমে মিমিকে পেলাম না, বড়ো চাচ্চুও নেই।”

মাইশা তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে এলো। বিছানার এক পাশে পড়ে থাকা ওরনা টা গায়ে জড়িয়ে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। আয়ান একটা ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে গেয়ে উঠলো, “তুমি জ্বালায়া গেলা মনের আগুন.. নিভায়া গেলা না….”
মাইশা একটু আগেই সব বাচ্চাদেরকে একটা রুমে ঘুম পাড়িয়ে রুমে এসেছিল। মাইশা জিজ্ঞাসা করলো অনায়াকে, “তোমার শেফালি আন্টি কোথায়? শেফালী তো ছিল ওই রুমে।”
আনায়া:- “আন্টি নিচে গেছে। রুমে খাওয়ার পানি নেই, শেষ হয়ে গেছে। তাই পানি আনতে গেছে।”
মাইশা তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকে দেখলো, ছোট্ট বেডটাতে বসে বসে কাঁদছে আদ্রিতা। তাড়াতাড়ি ওকে কোলে তুলে নিলো মাইশা। আদর করে বলল, “কি হয়েছে, আমার মাম্মা টা কান্না করে কেনো?”
আদ্রিতা ঠোঁট ফুলিয়ে বললো, “মাম্মার কাছে দাবো মিমি। মাম্মা কোথায়?”
মাইশা:- “আচ্ছা চলো দেখি, তোমার মাম্মা কোথায় গেছে। এখন কান্না থামাও।”
তখনি রুমে পানির জগ হাতে প্রবেশ করলো শেফালী। শেফালী শাহরিয়ার বাড়ির বাচ্চা গুলোর দেখাশোনা করে। মাইশা শেফালীকে জিজ্ঞাসা করলো, “আদ্রিয়ান আর আবিরা কোথায় গেলো? ওদেরকে তো একটু আগে আমি রুমেই দেখে গেলাম।”

শেফালী:- “আমি তো জানি না, ছোটো ভাবী। নিচে যাওয়ার আগে ওরা তো রুমেই ছিলো।”
আনায়া:- “রুবির ঘুম আসছে না, এখন ঘুরতে ইচ্ছে করছে। তাই আদি ভাইয়া ওকে নিয়ে ঘুরতে গেছে।”
মাইশা:- “এতো রাতে, কোথায় ঘুরতে গেলো ওরা? এই বাচ্চা গুলোকে নিয়েও শান্তি নেই। আগে এটাকে দিয়ে আসি তার মায়ের কাছে, তারপর ওদেরকে দেখছি।”
বলেই আদ্রিতাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে গেলো মাইশা।
অন্য দিকে….
আবিরা আধো আধো গলায় বলল, “আদি ভাইয়া! আর হাঁটতে পারছি না, পায়ে ব্যাথা করছে তো।”
আদ্রিয়ান:- “এই তো বললি এখন ঘুম আসছে না, হেঁট হেঁট ঘুরতে ইচ্ছে যাচ্ছে। আর এতো তাড়াতাড়ি পায়ে ব্যাথা হয়ে গেলো?”
অবিরাম:- “হুম ব্যাথা করছে তো। তুমিই তো ব্যাথা দিয়েছো কাল, মনে নেই।”
আদ্রিয়ান কিছু বলল না, আবিরার সামনে বসে গেলো হাঁটু মুড়ে। ছোট্ট আবিরা মুখে হাসি ফুটিয়ে আদির গলা জড়িয়ে ধরে পিঠে উঠে গেলো। আদি আবিরাকে আগলে নিয়ে, ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। এরপর গুটি গুটি পায়ে আবিরাকে পিঠে নিয়ে এগিয়ে গেলো, দোতলায় থাকা খোলা ছাদটার দিকে। এই ছাদটাও অনেক সুন্দর করে বিভিন্ন গাছপালা দিয়ে সাজানো। আদ্রিয়ান আবিরাকে পিঠে নিয়ে, ওই ছোট্ট ছাদময় ঘুরে বেড়াতে শুরু করলো।

অন্য দিকে ছাদে…..
জমিদার বাড়ির ছাদে অপরাজিতা ফুলের গাছ দিয়ে জড়ানো দোলনা টাই বসে আছে আরমান আর তার কোলে মাথা বুকে রেখে বসে আছে মায়া। ধীর গতিতে দোলনাটা দুলছে। আরমান মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, “অনেক রাত হয়েছে মায়াবতী, চলো রুমে চলো।”
মায়া আদুরে ভঙ্গিতে দুইদিকে মাথা নাড়িয়ে বলল, “উঁহু! আজকের এই জোৎস্না রাতটা আমি এভাবেই কাটাতে, আপানার বুকে থেকে। ঠিক সেই আমাদের বিয়ের আগের দিন রাতের মতো।”
ঠিক তখনি নিজের হাতে টান অনুভব করলো মায়া। ভ্রু কুঁচকে আরমানের বুক থেকে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো, ওর মেয়ে আদ্রিতা ওর হাত ধরে টানছে।
আদ্রিতা:- “নামো! নামো বলতি। তুমি আমার পাপার তোলে কেনো উঠেতো? পাপা! মাম্মা কি আমাল মতো বাত্তা যে তুমি তোলে নিয়েছো?”
আরমান দুই হাত বাড়িয়ে নিজের মেয়েকেও কোলে তুলে নিলো। বলল, “হুম তোমার মাম্মাও তো একটা বাচ্চা। আমার পিচ্চি মায়াবতী। বাচ্চা না হলে এভাবে আমার কোলে বসে থাকে বলো? কিন্তু তুমি এখানে কিভাবে এলে মাম্মা?”

আদ্রিতা:- “মিমি দিয়ে গেথে। নাহ! মাম্মা বাত্তা নয়। মাম্মা অনেত বড়ো, মাম্মা পচা। তুমি মাম্মাকে এখানেই রেখে যাবে। আমলা আর নিয়ে যাবো না, ঠিক আতে? মাম্মা খালি তোমাকে আমাল থেকে কেড়ে নেয়। কই ভাইয়া তো নেই না? ভাইয়া আমাল তকলেটও ভাগ বসায় না, কিন্তু মাম্মা আমাল তকলেট থেকে ভাগ নেয়।”
মায়া:- “ওরে দুষ্টু, আমি পচা? আমাকে এখানে রেখে যাওয়ার প্ল্যান করা হচ্ছে? তুই এতো হিংসুটে কিভাবে হলি বল তো? আমি তো তোর চকলেট থেকে ভাগ নিই না, তোর পাপা তো যখনি চকলেট আনে তিন বক্স আনে। একটা তোর, একটা আদির, আর একটা আমার।”
আদ্রিতা:- “হুম! তোমাকে এথানে রেখে গেলে, আমাল দুই বক্স তকলেট হবে। হি হি হি।”
মায়া:- “আচ্ছা তাই বুঝি! এই টুকু বয়সে পেটে পেটে এতো? চকলেট এর জন্য নিজের মাম্মাকেও এখানে রেখে চলে যাবে।”

আদ্রিতা মাথা নাড়িয়ে বলল, “শুধু তকলেট এর জন্য নয়, তুমি থাকলে পাপা তোমাকেও অনেক ভালোবাসে। তুমি না থাকলে, আমি বেতি বেতি ভালোবাসা পাবো।”
মায়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর মেয়ের দিকে। এইটুকু মেয়ের এতো পাকা পাকা কথা শুনে। আর এইদিকে আরমান মা মেয়ের ঝগড়া দেখে হেসেই চলেছে।
মায়া:- “এই মেয়ে! তুই ভালোবাসার কি বুঝিস রে?”
আদ্রিতা:- “থব বুঝি আমি। তুমি বুঝবে না ভালোবাসা কি। বাত্তা মেয়ে, দাও ঘুমাও। আমি আল পাপা এখন এথানে বসে দল্প করবো।”
মায়া চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো মেয়ের দিকে। বেশ কিছুক্ষণ চলল আরমানকে নিয়ে মা মেয়ের ঝগড়া। আর আরমান মুগ্ধ চোখে দেখতে থাকলো ওদের। ছেলে মেয়ে আর মায়াবতীকে নিয়ে, আজ ও পরিপূর্ণ। বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্রিতা ঘুমিয়ে পড়ল মায়ার কোলে। গম্ভীর সাহেবের কোলে মায়াবতী…আর মায়াবতীর কোলে তাদের ছোট্ট মেয়ে আদ্রিতা। হালকা ভাবে দুলছে দোলনা, তারা ভরা জোৎস্না রাত ও হালকা শীতল হাওয়া মোহময়ী ও শান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৬৩

আরমানের বুকে মেয়েকে কোলে নিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে মায়া। মুগ্ধ চোখে চেয়ে আছে আরমান তার মায়াবতীর মুখের দিকে। আরমানের চোখের এই মুগ্ধতা কোনোদিনও শেষ হওয়ার নয়। ফিসফিস করে বলে উঠলো আরমান, “তুমি পাশে থাকলে, আমার জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত রঙিন লাগে মায়াবতী। তুমিই আমার শেষ ঠিকানা, আমার বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ। আমার জীবনে তুমি ছাড়া সবটাই অর্থহীন। ভালোবাসি মায়াবতী…ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি তোমায়…”
আজ গম্ভীরসাহেব আর মায়াবতীর ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো….অপেক্ষা, কষ্ট, আকাঙ্ক্ষা সবকিছুর সীমা ছাড়িয়ে। যে ভালোবাসা একদিন ছিল স্বপ্ন, আজ সেটাই হয়ে উঠেছে বাস্তবতার সবচেয়ে সুন্দর সত্যি। ভালোবাসা যে কেবল পাওয়া নয়, সেটা লালন করাও, আজ তার সাক্ষী হলো গম্ভীর সাহেব ও তার মায়াবতী। গম্ভীর সাহেব আর মায়াবতীর গল্প শেষ নয়, এ এক নতুন শুরুর প্রতিশ্রুতি।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here