আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ৩০
অবন্তিকা তৃপ্তি
ধ্রুবর জ্বর আবার বাড়ছিল। বাইক চালাতে চালাতেই সেটা ভীষণভাবে টের পাচ্ছিল সে। হুডি পড়া থাকলে হয়তবা এতটা হিম করা ঠান্ডা লাগতো না। হুডির কথা মনে পড়তেই; ধ্রুবর গম্ভীর ঠোঁটে হালকা একটা হাসি দেখা গেল! ধ্রুব বাইকের হ্যান্ডেলে রাখা অদিতির পরা হেলমেটটার দিকে তাকাল! হালকা হেসে হেলমেটটার উইন্ডো বন্ধ করে দিয়ে বিড়বিড় করল——‘অ্যাই গেইজ অ্যাম বিং ডেসপারেট লাভার।!’
একচোট শীতল বাতাস শরীরে ঝাপটে পড়তেই শরীরের ভেতর কাঁপুনি শুরু হলো! শরীরটা যেন ঠান্ডায় হেলে পড়তে চাইছে। ধ্রুব ইয়ামিন বাইকের হ্যান্ডেল শক্ত করে ধরে ধ্রুব লম্বা শ্বাস ফেলে, নিজেকে স্থির রাখার ব্যর্থ চেষ্টাও করে গেল পুরোটা রাস্তা।
বাড়ির সামনে পৌঁছাতেই গেটের বাইরে সৌরভ ইয়ামিনের নিজস্ব টয়োটা গাড়ি দাঁড়ানো দেখতে পেল সে। সামনে টহলরত দুইজন পুলিশ সদস্য একবার তার দিকে তাকিয়ে আবার নিজেদের মধ্যে কথা বলতে লাগল। ধ্রুব বাইক পার্ক করে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই বসার ঘরের আলো তার চোখে এসে লাগলো।
সোফায় সৌরভ ইয়ামিন বসে আছেন। কালচে সাদা শার্ট, কালো কোট পরা। চোখের নিচে গভীর ক্লান্তির ছাপ। তার পাশে কয়েকটি লাগেজ রাখা। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল টেবিলের ওপর এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে আছে। সৌরভের মুখে সেই পুরনো শাসনের ছায়া।
ধ্রুব কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার ঠোঁটের কোণে বিদ্রুপের হাসি খেলে গেল। চোখের দৃষ্টিতে অবজ্ঞা স্পষ্ট। নিশ্চয়ই বিডিতে কাজ ছিলো; আর সেই কাজের কারণে সবাইকে ধ্রুবর অসুখের বাহানা শুনিয়েছেন! এগেইন পুরনো ড্রামা! এক মুহূর্তের জন্য সৌরভের চোখের দিকে তাকিয়ে, ধ্রুব পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগল।
সৌরভ পেছন থেকে কঠোর গলায় ডাকলেন—-‘দাঁড়াও, ধ্রুব!’
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
সৌরভের গম্ভীর কণ্ঠ ঘরের নীরবতাকে ভেঙে দিল। ধ্রুব থেমে গেল, কিন্তু পেছনে ঘুরল না। হাতের আঙুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ হয়ে উঠল। কয়েক সেকেন্ড নীরব থাকার পর ধীরে ধীরে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাল।
সৌরভ এবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। চওড়া কাঁধ সোজা, দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। ধ্রুবর দিকে চেয়ে কঠিন গলায় প্রশ্ন করলেন——‘তুমি এই জ্বর নিয়ে বাইরে কোথায় গিয়েছিলে? আমি পাগলের মতো সবকিছু ফেলে এখানে এসেছি। হারুন বলল তুমি খাওনি কিছু। এখন রেস্ট না নিয়ে কোথায় ছিলে?”
ধ্রুবর ঠোঁট বাঁকা হাসিতে বেঁকে গেল। তার চোখে তীব্র বিদ্রুপ ফুটে উঠল——‘তোমাকে সব বলা লাগবে নাকি?’
সৌরভের চিবুক শক্ত হয়ে গেল। চোখের মণি সংকুচিত হয়ে উঠল। রাগ যেন ধীরে ধীরে জমাট বাঁধছে তার শরীরে——‘বেয়াদবি একদম করবে না ধ্রুব! কোথায় গিয়েছিলে তুমি?”
ধ্রুব কিছু না বলে চোখ সরিয়ে নিল। মুখের অভিব্যক্তি থেকে অবজ্ঞার ছাপ একটুও মুছে যায়নি। ঘরের পরিবেশ থমথমে হয়ে উঠল। রান্নাঘরের ভেতর থেকে হারুন বাপ-ছেলের উত্তেজিত কণ্ঠস্বর শুনে ভয় পেয়ে ছুটে এল।
ধ্রুব-সৌরভ নামক স্বয়ং দু-দুটো বাঘকে একে অপরের মুখোমুখি দাড়িয়ে থাকতে দেখে হারুনের মুখে ভয় আর উৎকণ্ঠার ছাপ খেলে গেল।
সৌরভ হারুনের দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বললেন——‘ও মেডিসিন নিয়েছে?’
হারুন এক মুহূর্ত ধ্রুবর দিকে তাকাল। ধ্রুবের মুখে ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব স্পষ্ট। হারুন দ্বিধা নিয়ে মাথা নাড়াল——‘ওই অদিতি ম্যাডাম এসেছিলেন। রান্না কর—”
সৌরভের ভ্রু কুঁচকে গেল। তার চোখে বিস্ময় ভেসে উঠল,—-‘অদিতি? সন্ধ্যায় এসেছিল?’
হারুন এবার নিচু গলায় বলল——‘ জী! ধ্রুব স্যার কিছু খাচ্ছিলেন না; তাই উনি রান্না করে রেখে গেছেন স্যারের জন্যে। আর এখন ধ্রুব স্যার উনাকে পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন।’
সৌরভের চোখ এবার সরাসরি ধ্রুবর দিকে গিয়ে স্থির হলো। ধ্রুব সেই দৃষ্টি এড়িয়ে চোখ সরিয়ে নিল। কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বাইকের চাবি আঙ্গুলের ডগায় ঘুরাতে ঘুরাতে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে যেতে লাগল।
সৌরভ দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ারে বসলেন। হারুনের দিকে চেয়ে বললেন——-‘মেয়েটাকে কিছু দিয়েছ খেতে?’
হারুন মাথা নিচু করে বলল——‘নুডলস দিয়েছিলাম। খাননি ম্যাডাম।’
সৌরভ এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নিচু করলেন। মনে মনে হয়তো কিছু ভাবলেন। তারপর হাত তুলে ইশারা করে হারুনকে চলে যেতে বললেন। পাশেই সিক্রেটারি রাহুল আইপ্যাড হাতে দাঁড়ানো! আইপ্যাডে কিছু একটা করছে! সৌরভ জিজ্ঞেস করলেন——‘ সমস্যা সলভ হয়েছে?’
রাহুল চিন্তিত গলায় বললেন ——‘ হিসেব এখনো মিলছে না স্যার। চেষ্টা করছি আমরা। টিম লাগিয়েছিলাম, ওরাও পজিটিভ উত্তর দিতে পারছে মা।’
সৌরভ এবার রেগে গেলেন; চিৎকার করে বললেন ——-‘ ঘোড়ার ঘাস কাটো বসে তুমি আর তোমার টিম। একটা খাতার হিসেব মেলাতে পারছ না। যদি কোনোভাবে এটা মিডিয়ার কানে যায়; ভাবতে পারছো কি হবে?’
রাহুল দ্রুত বললো—-‘ স্যা…স্যার আমরা ট্রাই করছি। আপনি প্লিজ শান্ত হোন।’
সৌরভ উঠে দাঁড়ালেন; টেবিল থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে আঙুল উঁচিয়ে রাহুলকে শাসালেন——‘ আজকের মধ্যে সব সলভ করো। করতে পারলে স্যালারি বাড়বে না পারলে চাকরি থেকে রিজাইন দিবে। রাবিশ লোকজন পুষে রেখেছি এতদিন।’
সৌরভ রাগে গজরাতে গজরাতে সিঁড়ির দিকে এগুলেন।
ধ্রুব তার রুমের বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে। ঘরের আলো কমিয়ে রেখেছে। চুলগুলো এলোমেলো, চোখের পাতা ভারী। পাশের টেবিলে রাখা পানির বোতলটা খালি। কিছুক্ষণ পর দরজায় টোকা পড়ল। ডাক্তার আফজাল প্রবেশ করলেন। সাথে সৌরভও। ধ্রুব তাদের দেখামাত্রই বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে ফেলল! শুরু হবে এসের ডাক্তারির নাটক এখন! ভালো লাগে না আর এসব!
ধ্রুবর ভাবনা মতোই; বেশ অনেকক্ষণ ধরে আফজাল পরীক্ষা করলেন ধ্রুবকে। তাপমাত্রা মেপে, কিছুক্ষণ চেকআপ করে বললেন——‘জ্বর একটু কমেছে। প্যারাসিটামল চালিয়ে যেতে হবে। বৃষ্টিতে ভিজে থাকার কারণেই এই অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। তবে বিশ্রাম খুব দরকার।”
সৌরভ হালকা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। ধ্রুবর দিকে এক ঝলক দৃষ্টিতে তাকালেন। সেই দৃষ্টিতে ছিল পিতৃসুলভ যত্ন আর উদ্বেগ। ধ্রুব সেই দৃষ্টি এক মুহূর্তের জন্য এড়াতে পারল না। কিন্তু সাথে সাথেই মুখ ফিরিয়ে নিল। ঠোঁটের কোণে বিদ্রুপের হাসি টেনে বলল—‘যত ন্যাকামো।’
অথচ ধ্রুব জানলোই না; সৌরভ ইয়ামিন এই মুহূর্তে লাইফের সবচেয়ে কঠিন সময়-টুকু পাড় করছেন। তবুও এই সময়েও ছেলের প্রতি নিজের দায়িত্ব-গুলো ঠিকঠাক করে যাচ্ছেন। ধ্রুব যতই উনার থেকে মুখ ফেরাক; সৌরভ ধ্রুবর মা-কে মৃত্যর সময় কথা দিয়েছেন— মা হারা ছেলেকে পুরোটা সময় দুহাতে আগলে রাখবেন। কোনোদিন মায়ের অভাব বুঝতে দেবেন না। তবুও এত চেষ্টা করেও সৌরভ পারেননি। ধ্রুব বরং কয়েক লক্ষ মেইল দূরে সরে গেছে তার থেকে!
ডাক্তার চলে গেলেন। সৌরভ ছেলের ক্লান্তিতে ভেঙ্গে পড়া মুখতার দিকে চেয়ে ধীরে ধীরে বললেন——‘কি খাবে? স্যুপ নাকি অন্য কিছু?’
ধ্রুব চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ল; মাথার উপর কম্বল টেনে বলল——‘আই নিড স্লিপ নাও।’
সৌরভ কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলেন। হাত বাড়িয়ে ছেলের কপালে হাত রাখার ইচ্ছে হলো, কিন্তু ফোনের রিংটোন সেই মুহূর্তটাকে ভেঙে দিল। ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠল— তোফাজ্জল নামটা।
ধ্রুবও দেখলো নামটা। ওর ভ্রু কুঁচকে গেছে মুহূর্তেই। ও তাকালো সৌরভের দিকে। সৌরভ স্বাভাবিক ভাবেই ফোন রিসিভ করলেন।
—‘কি তোফাজ্জল? কেমন আছো? অনেকদিন পর কল দিলে।’
ওপাশ থেকে ভেসে এলো গম্ভীর কণ্ঠ—-‘ ভালো! তোমরা?’
সৌরভ বললেন ——‘ একটু ঝামেলায় আছি। ভাবি-বাচ্চারা ভালো তো?’
তোফাজ্জল উত্তর দিলেন ——‘ হ্যা। আছে ভালোই।’
সৌরভ বললেন ——‘ তোমার মেয়ের কি খবর? বিয়ে হয়ে গেছে?’
তোফাজ্জল থামলেন; বললেন ——‘ না। পাত্রের সমস্যা থাকায় বিয়েটা হয়নি। পাত্র খুঁজছি ওর জন্যে।তোমার জানামতে ভালো পাত্র থাকলে আমাকে বলিও।’
সৌরভ স্বাভাবিক ভাবেই বললেন—-‘নামটা কি যেন তোমার মেয়ের?’
ওপাশ থেকে উত্তর এলো——‘অদিতি হায়াত।’
সৌরভের চোখ বড় হয়ে গেল। ধ্রুবও চমকে তাকাল। দেয়ালের গায়ে ঝোলানো অদিতির ওই নীল শাড়ি পড়া ছবির দিকে এক ঝলক তাকালেন সৌরভ।
সৌরভ আলগোছে ধ্রুবর দিকে চেয়ে বললেন ——‘ ছবি আর বায়োডাটা পাঠিয়ে দাও। আমি দেখছি।’
কল কাটলেন সৌরভ। ফোনের ওপাশে ছবিটা দেখে সৌরভ-ধ্রুবর দুজনের ভ্রু একসঙ্গে কুঁচকে গেল! ধ্রুব হতবম্ব হয়ে সৌরভের দিকে তাকিয়ে রইল। ওর মাথায় কিছুই যেন ঢুকলো না।
সৌরব মজা করে যেসে বললেন বললেন——‘ওহ! তাহলে তোফাজ্জলই তোমার হবু শ্বশুর! বাহ!’
ধ্রুব নিজের বিস্ময়-টুকু লুকিয়ে বলল—-‘কি বলেছে উনি?’
সৌরভ হাসলেন। তার দৃষ্টিতে হালকা মজা যেন ঝিলিক দিল——‘তোমার প্রেমিকার জন্যে পাত্র খুঁজতে বলল।”
ধ্রুব ভ্রু কুচকে ফেলল!সৌরভ হেসে বললেন ——‘ ভালো হয়েছে। বাবা হয়ে আমি তোমাকে শুধরাতে পারিনি: তোফাজ্জল পারবেই।’
ধ্রুব সৌরবের এমন মজা নেওয়াটায় বিরক্ত হয়ে ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে বলল——‘উনার সঙ্গে তোমার কিসের সম্পর্ক? কিভাবে উনি তোমাকে চিনেন?”
ঘরের মধ্যে থমথমে নীরবতা নেমে এলো! সৌরভ শান্ত গলায়, অতীতের স্মৃতির গহ্বরে হারিয়ে যেতে যেতে বলতে শুরু করলেন। তার কণ্ঠ যেন পুরনো স্মৃতিচারনে ভারী হয়ে উঠল———-‘‘তখন আমি উঠতি রাজনীতিবিদ। তোমার মা তখনও জীবিত। তখনও তার ক্যানসার ধরা পড়েনি। একদিন লক্ষ্মীপুর যাই আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে। ওই বাসে তোফাজ্জল ছিল; ওর তখন পায়ে সমস্যা; একটা এক্সিডেন্টের পর হাঁটায় অসুবিধা হতো। পথিমধ্যে ওই বাসে ইঞ্জিন ব্লাস্ট করে আগুন লেগে যায়। আমরা সবাই বেরিয়ে আসতে পারলেও তোফাজ্জল আটকে যায়। সবাই যখন বেঁচে ফিরে যখন স্বস্তির শ্বাস ফেলছিলাম; হঠাৎ আমার মনে হলো গাড়িতে কাউকে দেখা যাচ্ছে। তখন আমরা তোফাজ্জলের চিৎকার শুনি গাড়ির ভেতর থেকে। বাকিরা ভয় পেয়ে যায়; তখন চারপাশে আগুন জ্বলছে। কেউ এগিয়ে যায়নি ভয়ে। আমি তখন যুবক; রক্ত টগবগ করছে! আমি কারো বাধা না মেনে ঝাঁপিয়ে পরি ভেতরে। কোনরকমে তোফাজ্জলকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমার কাঁধের দিকে একটা পোড়ার দাগ আছে না? ওটা তখনকার। তোফাজ্জলের গায়েও আগুন লেগেছিল। ওর পিঠেও আছে পোড়ার দাগ! তারপর থেকে তোফাজ্জলের সঙ্গে আমার ভালো বন্ধুত্ব হয়। ওর ছেলে-মেয়েরা তখন ছোট! আমি নাম জানতাম শুধু। কিন্তু ওখান থেকে ফিরে আমার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ কমে যায়। তোমার মা মারা যাওয়ার পর আমিও একপ্রকার কাজে ডুবে যাই। বাড়িতে না গেলেও দুই তিন বছর আগে ওকে একবার ঢাকায় দেখেছিলাম। আমার সাথে তখনই লাস্ট দেখা হয়েছে। ভাবি-বাচ্চাদের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা হয়নি। তাই জানতাম না; অদিতি এই যে এই অদিতি হায়াত; যাকে তুমি ভালোবাসো।’
ধ্রুব চুপচাপ শুনে গেল। তার মুখের অভিব্যক্তি ধীরে ধীরে বদলাতে লাগল। ভ্রু কুঁচকে আছে। চোখের পাতা কিছুটা ভারী হয়ে এল। সে একপাশে মুখ ফিরিয়ে নিল নিচু গলায় বিড়বিড় করে বলল——‘কো-ইনসিডেন্ট!’
সৌরভ এবার ধ্রুবর দিকে তাকালেন; বললেন ——-‘তুমি চাইলে আমি তোমার কথা তোফাজ্জলকে বলতে পারি।’
ধ্রুব চকিত দৃষ্টিতে সৌরভের দিকে তাকাল। এত সহজ সবকিছু; অদিতিকে বিয়ে করার কত সুন্দর উপায়। অথচ ধ্রুব জেদ দেখালো, ঠোঁট শক্ত করে কামড়ে ধরে বলল—-‘দরকার নেই। আমার লাইফ আমাকে দেখতে দাও।’
সৌরভ এবার চেয়ার থেকে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন। আলো-আঁধারি ঘরে তার মুখটা যেন আরও গম্ভীর দেখাচ্ছে। শান্ত কণ্ঠে বললেন——‘বাবার কাছে হেল্প চাওয়া খারাপ কিছু না। সমস্যা নেই। যেদিন তোমার মনে হবে; আমাকে বাবা বলে হেল্প চাওয়া যাবে; চেও। আমি হেল্প করব! তোমার জীবনটা যদি আমি নিজের হাতে সাজিয়ে দিতে পারি; আমার চেয়ে বোধহয় বেশি খুশি আর কেউ হবে না।’
ধ্রুব তাকিয়ে রইলো সৌরভের দিকে। পরপর মুখ ঘুরিয়ে নিল! সৌরভ বাতি নিভিয়ে দিতে দিতে ধীর গলায় বললেন——‘ঘুমাও; অসুস্থ তুমি।’
তারপরে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। দরজার শব্দ ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল।
ধ্রুব কোকের বোতল হাতে আড্ডাখানায় বসে আছে। জ্বর নিয়েই আজ ও ভার্সিটিতে। তার চোখেমুখে এক অস্থিরতা। বোতলটা হাতের আঙ্গুলের ফাকে বারবার ঘুরাচ্ছে। দাঁত দিয়ে অধর কামড়ে কিছু একটা ভাবছে শুধু!
ইমন পাশ থেকে ঠাণ্ডা গলায় বলল—-‘তুই অযথা এসব প্যাঁচাল পারছিস! আঙ্কেলের কাছে সাহায্য চাইতে আমি কোনো প্রবলেম দেখছি না।’
ধ্রুব কোকের বোতল ঝাকানো বন্ধ করে; বিরক্ত গলায় বলে উঠল—-‘দরকার নেই আমার।’
সুমন এবার পাশ থেকে বোঝানোর চেষ্টা করে বলল—-‘অদিতি ভাবি উনার বাবাকে রাজি না করাতে না পারলে কখনোই আপনাকে লুকিয়ে বিয়ে করবে না ভাই। এটা জানেন?’
ধ্রুব রাগে ফুঁসে উঠল। কোকের বোতলটা মাটিতে এবার ছুড়ে মারলো——-‘অন্য উপায় বের করতে হবে। তবুও তার কাছে গিয়ে আমি নিজেকে ছোট করব না। সে ছাড়া কি এই বিয়ে ইম্পসিবল নাকি?’
ইমন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ধ্রুব অযথাই যে এই ফালতু জেদ-গুলো দেখাচ্ছে এসব ওকে কে বোঝাবে?
হঠাৎ কোথা থেকে রাজন দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে ধ্রুবর সামনে দাঁড়াল। কাপা গলায় বললো——‘ধ্রুব ভাই! আপনার বাবাকে মানি-লন্ডারিং মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। টিভিতে নিউজ হচ্ছে। মোবাইল কোথায় আপনার?’
ধ্রুব হতবাক হয়ে গেল। ধ্রুবর ভ্রু এটা শুনেই কুঁচকে গেল। তার চোখেমুখে স্পষ্ট অবিশ্বাসের ছাপ। কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ হয়ে থাকার পর, হাত দিয়ে ইমনকে ইশারা করে বলল——-‘এমবি আছে? ফেসবুক অন কর।’
ধ্রুবর কণ্ঠে কিছু একটা যেন ছিলো। ইমন ভয়ে ভয়ে দ্রুত পকেট থেকে ফোন বের করে ফেসবুকে ঢুকল। ফোনের স্ক্রিনের আলো ওর থমথমে মুখটা আরও স্পষ্ট করে তুলল। ঢুকেই ইমনের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।
পুরো নিউজফিড জুড়ে একের পর এক পোস্ট, লাইভ ভিডিও আর নিউজ আর্টিকেল! ‘সৌরভ ইয়ামিনের মানি লন্ডারিং কাণ্ড!’ বড় বড় হেডলাইন। সংবাদপত্রের কাটআউটের মতো ভেসে উঠছে স্ক্রিনজুড়ে। কিছু পোস্টে পুলিশের ছবি, কিছু পোস্টে সৌরভ ইয়ামিনের সাদা-অলিভ রঙের বাড়ির সামনে বিশাল পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতি।
ইমন ফাঁকা ঢোক গিলে, ভয়ে কাঁপতে থাকা হাতে নিজের ফোনটা এগিয়ে দিল ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব ধীরে ধীরে ইমনের হাত থেকে ফোনটা নিল। ওর চোখের মণি স্ফীত হয়ে উঠল। আঙুল দিয়ে দ্রুত স্ক্রল করতে লাগল। একের পর এক ভয়াবহ তথ্য ভেসে উঠছে স্ক্রিনে।
তারপর ধ্রুব ইউটিউব খুলল। চোখ-মুখ শক্ত করে একটা ভিডিও ক্লিপ চালু করল। ভিডিওটি মাত্র দশ মিনিট আগে আপলোড করা হয়েছে। নিউজ অ্যানকারের তীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বর ভেসে উঠল——
‘খাদ্য মন্ত্রী সৌরভ ইয়ামিনকে মানি লন্ডারিং এর অভিযোগে আটক করা হয়েছে। এই অবৈধ অর্থ পাচার চক্র চলছে গত দশ বছর ধরে। গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে উঠে এসেছে চমকে দেওয়ার মতো তথ্য। প্রায় ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আজ দুপুরে পুলিশ কমিশনার হিমেল হোসেন চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছেন ইয়ামিন বাড়িতে। মন্ত্রীর ব্যক্তিগত বাংলো থেকে তাঁকে আটক করা হবে। আরও বিস্তারিত জানাবেন আমাদের প্রতিবেদক ফয়াজ।’
ধ্রুব ভিডিওটা শেষ হওয়ার আগেই ফোনটা বন্ধ করে ইমনের দিকে তাকাল। তার চোখে বিস্ময়, রাগ আর হতাশার মিশ্রণ।
ইমন আশপাশে তাকাল; কেউ কি ওদের দেখছে? তারপর ধ্রুবর দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল——‘তুই এসব জানতিস? তুই কি কোনোভাবে এর সঙ্গে জড়িয়ে আছিস?’
ধ্রুব একথা শুনেই ইমনের ফোনটা ছুড়ে মারল তার কোলে। ইমন দ্রুত ক্যাচ করল। ফোনটা শক্ত করে চেপে ধরল যেন সেটা হাত থেকে পড়ে না যায়। ধ্রুব দ্রুত কয়েকটা বড়বড় পা ফেলে বাইকের দিকে এগিয়ে গেল। তার মুখ কঠোর, চোখদুটো আগুনের মতো জ্বলছে।
রাজন আর সুমন একে অপরের দিকে তাকিয়ে উদ্বিগ্ন গলায় বলল——‘ভাই, আমরাও যাচ্ছি। ইমন ভাই, আপনি ভাইয়ের লগে যান।’
ইমন তাড়াতাড়ি ধ্রুবর পেছনে বাইকে চেপে বসল। বাইকটা স্টার্ট দেয়ার পর মুহূর্তেই ধ্রুব গতি বাড়িয়ে দিল।
ইমন বাইকের ১৮০ স্পিড দেখে ভয়ে ধ্রুবর কাঁধে হাত চেপে ধরলো! ধ্রুব অদ্ভুত আচরণ করছে, তার গভীর শ্বাস নিতে থাকা কাঁধগুলো বোঝাচ্ছিল, ভিতরে কী যেন দাউ দাউ করে জ্বলছে। ইমন তার কাঁধে হাত রেখেই ভাবছিল, ‘যে বাবাকে ধ্রুব কখনো বাবা বলে স্বীকারই করেনি, সেই বাবার জন্য ওর আজ এতটা অস্থিরতা কেন?’
অদিতি অনেকদিন পর পড়ার টেবিলে বসেছে। সামনে সেমিস্টার ফাইনাল। বইয়ের পাতাগুলো ওর সামনে খোলা থাকলেও অদিতির মন অন্য কোথাও। সময়ের চাপ, নতুন নতুন প্রেমের দহন,তারমধ্যে পড়ার চাপ— সব মিলিয়ে মাথার ভেতর যেন যুদ্ধ চলছে।
হঠাৎ দরজা ঠেলে তানিয়া দৌড়ে ঢুকল রুমে। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, নিঃশ্বাস দ্রুত। তানিয়া কোনও কথা না বলে সরাসরি ফোনটা অদিতির সামনে ধরল।
অদিতি ভ্রু কুঁচকে তানিয়ার দিকে তাকাল। তানিয়া একশ্বাসে বলে গেলো———‘তোর হবু শ্বশুরকে পুলিশ নিয়ে যাবে আজ; পুরো মিডিয়া ক্ষেপে গেছে।’
অদিতির তানিয়ার দিকে চেয়ে; পরপর অবিশ্বাসের চোখে ফোনের দিকে তাকাল। নিউজফিডে শুধু একটাই নাম ঘুরপাক খাচ্ছে— ‘সৌরভ ইয়ামিন।’
তানিয়া বলল——‘অনেকে তো আন্দাজ করছে ধ্রুব ভাইও এতে জড়িয়ে আছে। পুলিশ প্রমাণ পেলেই উনাকেও নিয়ে যাবে।’
অদিতি অবিশ্বাস নিয়ে বলল——‘ধ্রুব এসব কখনোই করবে না!’
তানিয়া বলে উঠল——‘ধ্রুব ভাই কি আদৌ জানিস? তার বাবার ডান হাত! মন্ত্রী মানুষ; খু/ন-খারাবি; এসব ছোটখাটো মানি লন্ডারিং এসব ওদের কাছে দুধভাত। ধ্রুব ভাই যে আঙ্কেলের সব কাজে হেল্প করে; এটা সবাই জানে। আমার মনে হচ্ছে ধ্রুব ভাইও এই কেইসে ফেসে যাবে। কল করেছিস উনাকে?’
অদিতি তানিয়ার বাকিটা আর শুনল না। দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে ধ্রুবকে কল দিল।
ধ্রুব সবে বাড়ির সামনে বাইক থামিয়ে নামল! বাড়ির সামনে বিশাল ভিড়! আশপাশে মিডিয়ার লোকজন।বাড়ির সামনে মানুষ গিজগিজ করছে। পুলিশের বিশাল বাহিনী লাঠি উঁচিয়ে মানুষদের সামলাচ্ছে। কেউ কেউ মোবাইল তুলে ভিডিও করছে।
ধ্রুব বাইক থেকে নামতেই তার ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল— ‘অদিতি ইজ কলিং…’
ধ্রুব বিরক্ত হয়ে এক মুহূর্তের জন্য ফোনের দিকে তাকাল, তারপর কলটা কেটে দিল।তারপর সে এগিয়ে গেল পুলিশের ব্যারিকেডের দিকে। ঠিক তখনই গোয়েন্দা সংস্থার গাড়ি এসে থামল। দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন তাকবির দেওয়ান। তিনি মোবাইল কানে নিয়ে কথা বলছিলেন। ধ্রুব তার দিকে এগিয়ে গেল। তাকবির দেওয়ান ফোন রেখে ধ্রুবর দিকে তাকালেন।
ধ্রুব উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াল; কিছুটা উদ্বেগ দেখিয়ে বলল——‘আঙ্কেল, এসব কী হচ্ছে?’
তাকবির দেওয়ান ধ্রুবর কাঁধে রাখলেন——‘ডোন্ট ওরি, ধ্রুব। আমরা দেখছি বিষয়টা।’
ধ্রুবর চোখে রাগ; এসব ড্রামা মন্ত্রী জগতে নতুন নয়। দু বছর আগেও সৌরভ ইয়ামিন আরেকটা কেইসে ফেসেছেন। তাকবির দেওয়ান এর সাহায্যে সেই কেইস সলভ করা হয়েছিল।
ধ্রুবর চোখ-মুখ শক্ত; বললো——-‘এগেইন আবার এসব মেলোড্রামা! কে করছে এসব আমাদের এবার বের করাই লাগবে। বড্ড উড়ছে সবাই।’
তাকবির দেওয়ানের কানে ব্লুটুথ; ভীষণ ব্যস্ত এখন। উনি ব্যস্ত ভাবেই বললেন ——‘আমরা দেখব এটা নিয়ে; একসঙ্গে বসবো! কিন্তু তার আগে তোমার বাবাকে নির্দোষ দেখানো লাগবে।’
ধ্রুব হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাড়িয়ে আছে. তাকবির দেওয়ান ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বললেন——‘ষড়যন্ত্রও হতে পারে, আবার সত্যিও হতে পারে।তোমার বাবাকে আমি দুদিন আগেও সতর্ক করেছিলাম। যাই হোক; তোমার নামেও কিন্তু অভিযোগ এসেছে। প্রমাণ পেলে পুলিশ তোমাকেও গ্রেফতার করবে। তুমি কিছুদিন গা ঢাকা দাও। আমি বিষয়টা দেখছি।’
তাকবির দেওয়ান ফোর্স নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন। অদিতির বারবার কল আসছে। খোদা, এই মেয়েটা এত অধৈর্য্য কেন? ধ্রুব ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে অদিতির কল রিসিভ করল। রাগে শুরুতেই দিল ধমক——-‘হোয়াট? বারবার কল দিচ্ছ কেন? কল ধরছি না মানে ব্যস্ত আছি, রাইট?’
অদিতি থেমে গেল; যা বলার ছিলো গিলে নিয়ে নিচু গলায় বললো——-‘সরি।’
সরি শব্দটা শোনামাত্রই ধ্রুবর সব রাগ পরে গেল! ধ্রুব নিজেকে ঠান্ডা করলো; বললো——-‘কি বলবে?’
অদিতি কম্পিত গলায় বললো—-‘ধ্রুব, এসব….আপনার নামেও কি মামলা? প্লিজ, বলুন!’
ধ্রুব চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করল। মৃদু গলায় বলল——‘ডোন্ট ওরি, আই উইল বি ফাইন। এখনো মামলা হয়নি; রাইট? আর হবেও না; প্রমিজ! আর শোনো; টেনশন না নিয়ে চুপ করে বসে থাকো। আমাকে কল দিয়ো না। আমি ব্যস্ত থাকব।’
ধ্রুব আবার হেঁয়ালিতে উত্তর দিচ্ছে। এড়িয়ে যাচ্ছে এত গুরুতর বিষয়টা। অদিতি ভয়ে প্রায় কান্না গলায় বলল——‘ধ্রুব, প্লিজ! রাগের মাথায় কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিবেন না।
ধ্রুব গভীর শ্বাস নিয়ে ভিড়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চোখে তাকাল. চোখ তো নয় যেন সিংহের দৃষ্টি! ধ্রুব হালকা হাসল এবার; তীব্র গলায় রহস্য করে বলল——‘ডোন্ট প্যানিক! ফ্রম নাও, এভরিথিং উইল বি নিট অ্যান্ড ক্লিন! বাই! এন্ড লাভ ইউ!’
অদিতিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ধ্রুব কল কেটে দিল ধ্রুব।
এমন একটা মুহূর্তে ধ্রুবর মুখে ‘লাভ ইউ’ শুনে সম্পূর্ণ গা যেন ঠান্ডা হয়ে গেল অদিতির। অন্যসময় হলে অদিতি লজ্জায় হেসে ফেলত; তবে এখন কেন যেন ওর হাসি বা লজ্জা কিছুই পেল না। ও দ্রুত আঙুল চালিয়ে ইমনকে কল লাগালো! ইমন ভিড়ের মধ্য থেকে পাশ কাটিয়ে ফোন রিসিভ করল। ওপাশ থেকে অদিতি অস্থির কণ্ঠে বলল———‘ভাইয়া, আপনি কোথায়?’
আশপাশে ভিড়ের জন্যে কিছু শোনা যাচ্ছিল না। ইমন চেঁচিয়ে বলল——‘ ধ্রুবদের বাড়িতে আছি আমি।’
অদিতি শুনে; দ্রুত বললো——‘প্লিজ ভাইয়া, ধ্রুবর দিকে খেয়াল রাখবেন। ও রাগের মাথায় কিছু একটা করে বসবে: আমার ভয় হচ্ছে।’
ইমন এবার দীর্ঘশ্বাস ফেললো! অদূরে ধ্রুবকে দেখা যাচ্ছে। যে ভিড়কে নিজের শক্ত-পোক্ত হাতে ঠেলে ইয়ামিন বাড়ির সদর গেইট দিয়ে প্রবেশ করছে। ইমন সেদিকে চেয়ে বলল——‘রিল্যাক্স, অদিতি। আমি আছি। কিন্তু তুমি তো জানো, ধ্রুব যা ভাবে, সেটা করেই ছাড়ে। দেখা যাক কি হয় সামনে।’
আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ২৯
অদিতি চুপ করে গেল। ইমন এবার হুট করে ভাবুক কণ্ঠে বলল———‘কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারছি না, ধ্রুব হঠাৎ করে তার বাবার প্রতি এতটা সফট হলো কীভাবে? এমনটা আগে কখনো দেখিনি। সামথিং ইজ ফিশি মেইবি……