আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ৩৭

আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ৩৭
অবন্তিকা তৃপ্তি

রুমটা ধ্রুব ইয়ামিনের। আজ থেকে এই রুমে অদিতির অধিকারও। বলা হয়, এটা নতুন দম্পতির নিজেদের রুম। যেখানে ওরা আশা রেখেছে— কাটিয়ে দেবে পুরোটা জীবন; একসঙ্গে, একসাথে মৃত্যু অবধি।
সেই রুমটার দরজার সামনে অদিতি বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পুরো রুম যেন ফুলের রাজ্য! বেডের ওপরে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে রাখা। দেয়ালে অদিতির ওই নীল শাড়ি পরা ছবিটা সরিয়ে রেখে ধ্রুব-অদিতির রিলেশনকালের কাপল ছবি টাঙানো হয়েছে। এই ছবিটা তানিয়া তুলে দিয়েছিল! ধ্রুব অদিতির পাশে দাঁড়িয়ে আছে; গম্ভীর মুখে; জিন্সের পকেটে হাত গুঁজে, দম্ভভরে দাড়িয়ে আছে। ছোট্টমটো অদিতি তার পাশে হাসিমুখে ধ্রুবর দিকে মাথা তুলে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কী অসম্ভব সুন্দর লাগছে দুজনকে এই ছবি ফ্রেমে!
অদিতি এবার ফ্লোরের দিকে তাকাল। ফ্লোরে মোমবাতি দিয়ে সাজানো; পুরো রুমে একটা মিষ্টি সুঘ্রাণ ভাসছে। সম্পূর্ণ রুমে চোখ বুলিয়ে হঠাৎ হেসে ফেলল অদিতি; হয়তো ইমন-ধ্রুবর মধ্যে একটু আগে এসব নিয়েই ঝগড়াটা লেগেছিল।

অদিতি চুপচাপ রুমে ঢুকল। ফ্লোরে অনেক ফুলের পাপড়ি একের পর এক ছড়ানো। অদিতি সেগুলো আলতো করে সাবধানে পা ফেলে, এড়িয়ে এড়িয়ে ঢুকলো রুমে। ধ্রুব নিচে; সৌরভ ইয়ামিনের কাছে। সামনের ইলেকশন, তাই এটা নিয়ে বাবা-ছেলের আলাপ চলছে। ধ্রুব ওই আলাপে যেতে চায়নি; তবুও সৌরভের বহু পীড়াপীড়িতে যেতে হয়েছে। যখন অদিতি সিড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠছে; ধ্রুবর মুখটা তখন দেখার মতো হয়ে গিয়েছিল! কল্পনায় ওই অসহায়; বেচারা মুখটা ভাসলে, অদিতি শব্দ করে দুহাতে মুখ ঢেকে হেসে উঠল।
তারপর শাড়ির আঁচল সামলে বেডের ফুল সরিয়ে ওখানে বসলো। ওর বুক কাঁপছে! বারবার বেডের দিকে তাকালেই, মনে হচ্ছে— আজ বুঝি সব শেষ হবে! অদিতিকে পাগল করে ধ্রুব নিজেও পাগলামিতে মত্ত হবে। হয়তবা রাতটুকু দুজনের স্বপ্নের মতো কাটবে। সবকিছু প্রথমবার….প্রথমবারের মতো ধ্রুবকে আরো নতুনভাবে চিনবে ও! ইশ!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অদিতির বেডের সামনেই বিশাল আয়না। ও বিছানায় বসে, আয়নায় নিজের দিকে তাকাল। একটা সাধারণ লাল রঙের সুতি শাড়ি পরা ওর। মুখে একটা তৈলাক্ত ভাব ফুটে আছে, নাকে ঝলমল করছে ডায়মন্ডের নাকফুল। অদিতি আয়না থেকে চোখ সরিয়ে নিজের শাড়ির দিকে ঠোঁট উল্টে তাকাল,শাড়িটা কি পাল্টাবে? সিল্কের শাড়ি আছে ওর ব্যাগে, ওর চাচাতো বোন দিয়েছে শেষমুহূর্তে ধ্রুবর সামনে পড়ার জন্যে। ওটা কি ব্যাগ থেকে বের করে পরবে? পরমুহূর্তে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো। ওসব আকর্ষণীয় মনোভাব ধ্রুবর সামনে কি আদৌ প্রকাশ করতে পারবে ও কখনো? লজ্জায় শেষ হয়ে যাবে না?
অবশ্যই করা উচিত; পড়া উচিত— এসব ভেবে ভেবে অদিতির মুখ যখন চিন্তা; অস্থিরতায় লাল হয়ে উঠেছে ঠিক তখন দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে ও মুখ তুলে সামলে তাকাল। ধ্রুব এসেছে; দরজা লকও করে দিয়েছে ততক্ষণে। দরজা লাগিয়ে ধ্রুব বুকে আড়াআড়ি হাত রেখে ওভাবেই দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওকেই দেখতে ব্যস্ত! চোখে কী তীব্র নেশা! একহার অদিতিকে দেখছে, তো আরেকবার ভ্রু কুঁচকে নিজেদের বাসর সাজানো ঘরটায় চোখ বুলাচ্ছে।

অদিতি ধ্রুবর চোখের ওই মারাত্মক নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে, কুকড়ে বিছানার চাদর খামচে ধরে চোখ নামিয়ে নিলো। ধ্রুব…ধ্রুব ওর সামনে পাগলামি করলে অদিতি লজ্জায় মরে যাবে। খোদা; রহম করো!
ধ্রুব ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে; ওর হাতে একটা হলুদ রঙা প্যাকেট। ধ্রুব হেঁটে; ধীরেসুস্থে অদিতির পাশে এসে বসলো। অদিতির বুক হঠাৎ যেন কেঁপে উঠল।মনে হলো; ধ্রুব যত এগুচ্ছে; ততই যেন কল্পনায় কিছু স্থির দৃশ্য ভেসে উঠছে! তখনও পাশে বসে ধ্রুব ওর দিকে ওভাবেই চেয়ে; স্থির-নেশা-মুগ্ধতায়!
অদিতি অন্যপাশে চেয়ে; অস্থির শ্বাস ফেলছে। ধ্রুব সবই দেখে; নিশব্দে হাসেও। তারপর আলতো করে বিছানার চাদর থেকে অদিতির হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে হাতটা নিজের দুহাতে পুড়ে নিলো। আলতো গলায় ডাকল———‘মিসেস ধ্রুব? এদিকে একটু তাকাবেন? প্লিজজ!’

ওমন ঢং করা দেখে অদিতি ওভাবেই অন্যপাশে চেয়ে হেসে ফেলল। তারপর মাথা ঘুরিয়ে তাকাল ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব ওর কোমল হাতটা সেভাবেই হাতে রেখেছে; একটু পর পর হাতের উপরিভাগে নিজের আঙুল দিয়ে ছুয়ে দিচ্ছে! অদিতি ধ্রুবর দিকে চেয়ে আছে; হেসে বললো ———‘রুম সাজানোর প্ল্যান আপনার না ইমন ভাইয়ার?’
ধ্রুব কথা শুনে আরো একবার রুমের দিকে তাকাল; সেভাবেই রুম দেখতে দেখতে জবাব দিল——-‘টেকনিক্যালি ইমনের; কিন্তু আমি একটু ইনস্ট্রাকশন দিয়েছি আরকি! ই‍্যয়ু নো, ম্যাই ওয়ান এন্ড ওনলি ওয়াইফ লাভস রোজ! সো; বেড এর আইডিয়া আমার!’
অদিতি লজ্জা পেল; মিনমিন করে বললো——-‘সু-সুন্দর হয়েছে!’
ধ্রুব ভ্রু কুচকে বললো——‘বেড না রুম?’
অদিতি মাথা হেলালো——-‘দু…দুটোই!’
ধ্রুব মাথার পেছনটা চুলকে নিশব্দে হাসল! তারপর পাশ থেকে প্যাকেট নিলো। সেটা অদিতির হাত টেনে ওর হাতে প্যাকেট ধরিয়ে দিল। অদিতি প্যাকেট হাতে প্রশ্নবোধক চোখে ধ্রুবর দিকে তাকাল। ধ্রুব চোখের ইশারায় বলল——‘ওপেন ইট।’

‘কি আছে এটাতে?’ ——-অদিতি প্রশ্ন করতেই ধ্রুব অধৈর্য্য হয়ে বললো———‘আগে খুলেই দেখো না রে বাবা।’
অদিতি ভ্রু কুচকে তাকাল; পরপর মাথা নামিয়ে প্যাকেট খুলতে শুরু করলো। ধ্রুব ধৈর্য‍্য ধরে ওর দিকে চেয়ে রয়েছে; ওর প্যাকেট খোলা দেখছে। প্যাকেট খুলতেই, নীল রঙের সিল্কের একরঙা শাড়ি বেরিয়ে এলো। অদিতি অবাক হয়ে ধ্রুবর দিকে তাকাল। ধ্রুব স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিল———‘পছন্দ হয়েছে?’
অদিতি তখনও অবাক; ওর মনের কথা ধ্রুব কীভাবে পড়ে ফেলতে পারে সবসময়! একবার-দুবার না; সবসময়ই। অদিতি যে কথাগুলো মুখে বলতে পারে না, হয় সংকোচে নাহয় লজ্জায়— ধ্রুব সেসব মুখে না বলা কথা এত সহজে বুঝে ফেলে! আশ্চর্য‍ হয় অদিতি, ভীষণরকমভাবে। এটা কি আদৌ কাকতালীয়? কিন্তু সবসময় কিভাবে?
ধ্রুব ওর দিকে স্বাভাবিকভাবে তাকিয়ে আছে; অদিতি শাড়িটা ছুঁয়ে দিতে দিতে উচ্ছাস নিয়ে খুশি হয়ে বলল——-‘ ভীষণ সুন্দর। কিন্তু নীল রং কেন?’

ধ্রুব অদিতির হাতটা ছুলো; সেভাবেই জবাব দিল——-‘ তোমাকে নীল শাড়িতে ওইদিন কালচারাল প্রোগ্রাম দেখে আমার মাথা ঘুরে গেছিল। তাই আজও নিয়ে এসেছি। ই‍্যয়ু নো হোয়াই?’
বলে চোখ টিপলো ধ্রুব! অদিতি হা হয়ে গেল। পরমুহূর্তে লজ্জায় নুইয়ে গেল। ধ্রুব ওসবের দিকে গেল না। ওর লজ্জা দেখতে গেলে আজ রাত ফুরাবে! এখন তো সময়টা ওদের! ধ্রুব চোখ ছোট ছোট করে, অনুরোধ কণ্ঠে বললো———‘এখন পরবা এটা? আমার জন্যে? প্লিজ?’
অদিতি তাকাল ধ্রুবর দিকে। ওমন অনুরোধ-টুকু কি আদৌ ফেলা যায়? অদিতি আস্তে করে মাথা হেলিয়ে বলল——-‘আমি চেঞ্জ করে আসছি!”

বলে বিছানা থেকে উঠতেই, ধ্রুব ওর হাত চেপে ধরল। হাতে বাধা পেয়ে পেছন ফিরে তাকাল অদিতি। ধ্রুব যেন নিজের মধ্যে নেই। ধ্রুব বিছানায় বসে অদিতির দিকে মাথা উঁচু করে তাকিয়ে, অদিতি পেছনে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে ধ্রুবর দিকে চেয়ে আছে। ধ্রুব সেভাবেই হঠাৎ বলে ফেলল——‘শাড়িটা আমি পরিয়ে দেই?’
অদিতি চোখ বড়বড় করে তাকাল। ওর পুরো শরীরেই যেন হিম এক স্রোতে বইয়ে গেল হঠাৎ! ধ্রুবর চোখে অনুরোধ; গলায় কাতরতা! শিউরে উঠলো ওমন চাওনিতে! হাতের শাড়ি শক্ত করে চেপে ধরে মুখ ফুটে কিছু বলতে চাইলো ——-‘আ..আমি পারব পড়তে!’
ধ্রুব সেখানেই বসে থেকে হাত ধরা অবস্থাতেই ব্যাকুল গলায় বলে উঠলো——‘আমি জানি তুমি পারবা। তবুও আমি চাইছি। প্লিজ?’

অদিতি ধ্রুবর দিকে তাকাল। ধ্রুবর চোখে-মুখে অদ্ভুত নার্ভাসনেস; চোখ ছোটছোট; কাতর কণ্ঠ। অদিতি না বললেই যেন ভীষণ রকমভাবে আহত হবে সে। অদিতিও মানা করলো না। স্বামীই তো। অদিতি লজ্জা পাবে; মরেই যাবে লজ্জায়; তবুও! স্বামীর মনটুকু ভাঙল না ও। আলগোছে মাথা নামিয়ে নিলো; ধ্রুবর চেপে রাখা হাতটা টেনে অস্ফুটে বলল——-‘দু’কাপড় পরে আসি?’
ধ্রুবর চোখে-মুখে হঠাৎ উজ্জ্বলতা খেলে গেল! কিছু না পেয়েও পেয়ে যাওয়ার খুশি ওর চোখে-মুখে খেলে গেল। ও দ্রুত অদিতির চেপে ধরা হাত ছেড়ে হাসিহাসি মুখে বলল———‘ইয়াহ; প্লিজ! ওয়াশরুমে চেঞ্জিং এরিয়া আছে।’
অদিতির রীতিমত হা হয়ে গেল। ‘হ্যাঁ’-বলে দেওয়াতে এত খুশি? তবুও ধ্রুবর এই খুশিটুকু ওরও ভালো লাগল। আলগোছে সিল্কের শাড়িটা বিছানার উপর রেখে, মৃদু হেসে দু’কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।

দু’কাপড় পরে নিজের দিকে তাকিয়ে কিছুটা হকচকিয়ে গেল অদিতি! ব্লাউজ পুরোটাই ব্যাকলেস; স্লিভলেস! পেট, পিঠ পুরোটাই দেখা যাচ্ছে। এভাবে ধ্রুবর সামনে যাওয়া লাগবে এখন? আর ধ্রুবর প্রতিও রাগ হচ্ছে! কতটা বেহায়া হলে এমন একটা ব্লাউজ নিয়ে আসতে পারে। অদিতি কি এসব পরে কোনদিন? ধ্রুব বুঝেনা এসব?
ছিঃ! লজ্জায় অদিতির মুখ লাল হয়ে গেল। ইচ্ছে হলো, ধ্রুবকে বকা দেয়———‘এসব ব্লাউজ তো হিরোইনরা পরে। আমার জন্য এসব শাড়ি কেন এনেছে? নাকি ভুল করে দোকানি এই ব্লাউজ দিয়ে দিয়েছে? ধ্রুবতো এসব সম্পর্কে তেমন আইডিয়া রাখে না! তাই বোধহয় ভুলে এটা নিয়ে চলে এসেছে। খোদা আমি এখন এই অবস্থায় কিভাবে তার সামনে যাব?’

পরমুহূর্তে ধ্রুবর হাসিখুশি মুখটা মনে করে থেমে গেল। থাক, কী আর হবে? স্বামীই তো! নিজেকে নিজেই প্রবোধ দিয়ে খুলে ফেলা সুতির শাড়ি দু’কাপড়ের ওপর জড়িয়ে নিয়ে বের হলো ওয়াশরুম থেকে।
ধ্রুব বিছানায় বসা ছিল। অদিতি ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই ধ্রুব উঠে দাঁড়াল। অদিতির পুরো শরীর ঢাকা সুতির শাড়িতে। ধ্রুব ওর দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে; ভ্রু উঁচিয়ে অবাক চোখে অদিতির আগগোড়া দেখতে আছে! অদিতি ধীর পায়ে ওভাবেই এগিয়ে এলো; ধ্রুবর ওই নেশালো চোখে চোখ মেলাল না আর। বরং ঢোক গিলে, অন্যপাশে চেয়ে অস্ফুটে বলল——‘ব্লাউজটা বেশি রি-রিভিলিং। আপনি বোধহয় ভুলে এটা নিয়ে এসেছেন। এসব তো আমি পড়িনা।’

ধ্রুব ওর গা ঢাকা সুতির শাড়িটার দিকে হাত বাড়ালো, স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল———‘আমি ভেবেই এনেছি। আমার সামনে পড়লে লজ্জা পাবে, কিন্তু রাগ হবে না। যদি আমার প্রতি রাগ ফিল করো, তাহলে চেঞ্জ করে আসতে পারো! চেঞ্জ করবে?’
অদিতি মাথা তুলে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে রইল! ধ্রুব ধৈর্য্য দেখাল;অপেক্ষা করলো বউয়ের রাগ দেখিয়ে চেঞ্জ করার। অথচ তেমন কিছুই করতে দেখা গেল না ধ্রুবর বধূকে! ধ্রুব নিশব্দে হাসে; তারপর আলগোছে সুতির শাড়িটা গা থেকে খুলতেই উন্মুক্ত হলো স্ত্রীর গায়ের নিষিদ্ধ অংশের অনেকখানি! অদিতি লজ্জায় দ্রুত কোমরসমান চুল বুকের সামনে এনে ফেলে দিল, পেট ঢেকে দিল দুহাত দিয়ে! মাথাটা নামিয়ে ফেলেছে লজ্জায়; যেন থুতনি গিয়ে চিবুকে ঠেকবে।

ধ্রুব দেখল এসব।ওমন লজ্জায় নাস্তানাবুদ অবস্থা দেখে নিশব্দে হেসে বলল———‘বেশি লজ্জা হচ্ছে? আমি কি আমার চোখ কাপড়ে ঢেকে দেব?’
অদিতি বলতে চাইল— করুন! কিন্তু ওর বলা আর হলো না। তার আগেই ধ্রুব বলল———‘হাসবেন্ডের সামনে লজ্জা পেতে নেই। লুক, এটা আমাদের বেড! ফিল করছো কিছু? একটু পর…’
পুরোটা বলতে দিল না অদিতি, তার আগেই হকচকিয়ে বলে ফেলল——‘শা-শাড়িটা বিছানার উপর রাখা।’
অযথা একটা কথা! ধ্রুবর নির্লজ্জ; বেহায়া কথার তীর থেকে বাঁচতেই অদিতির বলা অজুহাত শব্দ! ধ্রুব নিশব্দে হাসল;——-‘জানি আমি!’
বলে পেছন ফিরে বিছানা থেকে শাড়ি নিল। ধ্রুব শাড়ি হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ ঠোঁট কামড়ে সেটাকে উল্টেপাল্টে দেখল। চিন্তিত ভঙ্গিতে শাড়ির সবকিছুর মাপ দেখছে। অদিতি শুধু তাকিয়ে আছে ওর দিকে! ধ্রুব শাড়ি হাতে নিয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল——‘আচ্ছা, কুচির আর আঁচলের দিকে টোটাল কত রাখবো? অ্যাই মিন কতটুকু বড় রাখব আঁচল?’
অদিতি হেসে ফেলল; তারপর বলে দিল শাড়ির মাপ! ধ্রুব সব বুঝেছে, এমন মাথা নেড়ে শাড়ি পরানো শুরু করলো!
হাঁটুগেড়ে বসে শাড়ির কুচি বানানো শেষ হলে; ধ্রুব মাথা তুলে বললো——‘কুচি গুজব; পেটের উপর থেকে হাত সরাও।’

অদিতি লজ্জায় আই-ঢাই করে উঠে দ্রুত বলে উঠল——-‘আ-আমি গু-গুঁজে দিচ্ছি; দিন।
এ কথায় ধ্রুবকে মহা বিরক্ত হতে দেখা গেল। ও ভ্রু কুচকে অদিতির দিকে চেয়ে; মাথা নিচু করে শাড়ির কুচি একহাতে অভিজ্ঞর ন্যায় ধরল; অপরহাতে পেটের উপর থেকে অদিতির হাত সরিয়ে নিল। তারপর চোখ অদিতির উন্মুক্ত পেটের দিকে নজর এলো, এতেই যেন ধ্রুবর শ্বাস আটকে এলো! একপ্রকার স্থির; থমকে গিয়ে এক দৃষ্টিতে চেয়েই রইলো! আজ অব্দি কখনো এভাবে দেখেনি ও অদিতিকে। অদিতির এই নতুন সৌন্দর্য ওর চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে রীতিমতো! এভাবে ধ্রুবকে চেয়ে থাকতে দেখে অদিতি লজ্জায় শেষ; মরিমরি অবস্থা। দুহাতে পেট ঢেকে নিল তাৎক্ষণিক। ধ্রুবর বোধহয় এতে মনোযোগ বিঘ্ন হলো। ওকে কিছুটা বিরক্ত হতেও দেখা গেল।ধ্রুব আলগোছে বিরক্তিটুকু লুকিয়ে রাখল, পেটের উপর থেকে আবারও হাত টেনে সরিয়ে নিল অদিতির।

একহাতে শাড়ির কুচি চেপে ধরা অবস্থায়, আরেকহাত ওর কোমরের ডান পাশটা চেপে ধরলো! তারপর মুখ বাড়িয়ে হঠাৎ স্ত্রীর মসৃণ, মখমলে পেটটায় শব্দ করে চুমু খেল। এ কি করছে ধ্রুব? দম-টুকু বন্ধ হয়ে এলো রীতিমতো অদিতির। দুহাতে ধ্রুবর মাথার ঘন চুল খামচে ধরে, চোখ শক্ত করে বন্ধ করে ফেলল!
ধ্রুব ঠোঁট সরিয়ে, আরেকবার চুমু খেতে যাবে পেটের উপর, অদিতি ওর মাথার চুল খামচে ধরে ঠেলে সরিয়ে দিল ধ্রুবকে। অস্থির শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল———‘আ..আমি শাড়ি নিয়ে ওয়া…ওয়াশরুমে চলে যাই?’
ধ্রুব হাঁটু গেড়ে বসে আছে, মাথা তুলে সেভাবেই তাকিয়ে রইল অদিতির অস্থির, এলোমেলো মুখটার দিকে। ধ্রুবর চোখ চেনাই যাচ্ছে না এখন! ওর চোখদুটোতে যেন রেড ওয়াইন মিশিয়ে দিয়েছে কেউ! চোখে-মুখে কি প্রবল ঘোর! অন্যসময়ে ধ্রুবর সঙ্গে এই বন্ধ দরজার ভেতর ধ্রুব ইয়ামিনের বড্ড পার্থক্য!

বরাবরের মতো অদিতির ওই চোখেই মরণ হলো! ও কাপতে কাপতে ধ্রুবর থেকে কুঁচি নিজের হাতে নিয়ে নেবে, ধ্রুব দিল না! আলগোছে কুঁচি নিয়ে গুঁজে দিল।পেটের কাছে ধ্রুবর হাতের স্পর্শ অনুভব হতেই, সারা গা মুহূর্তেই ভয়াবহ কেঁপে উঠল অদিতির। ডান হাতে খামচে ধরল ধ্রুবর কুঁচি ধরা হাতটা! ধ্রুব ওর হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়াল! আঁচলটুকু গায়ে মেলে দেবার সময় এখন। ও আলগোছে অদিতির বুকের উপর থেকে হাত সরিয়ে দিল। স্লিভলেস ব্লাউজ, পুরোটাই ধ্রুবর আইকিউ অনুযায়ী বানিয়ে আনা।
অদিতি স্পষ্ট লক্ষ্য করছে—ধ্রুবর হাত কাঁপছে! ধ্রুব অনুভব করছে, ওর মাথা ঘুরছে ভীষণভাবে। সামলাতে পারছে না অদিতির এই নিগূঢ় সৌন্দর্য! ইচ্ছা করছে— সবটাই, সবকিছু উলটপালট করে দিতে এক নিমেষে। ধ্রুব অদিতির বুকের উপর কাপা হাতে আঁচল-টুকু মেলে দিল। ধ্রুবর চোখে তখন নেশা! ও দেখে, অদিতি ঠোঁট কামড়ে অন্য পাশে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। চোখদুটো খিচে রাখা, জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে. এটুকু দৃশ্য দেখামাত্রই হঠাৎ কী হলো ছেলেটার কে জানে?

আচমকা অদিতির দু’কাঁধ ঠেলে ওকে আচমকা দেয়ালের সঙ্গে মিশিয়ে নিল। অদিতির চোখ খুলে বড়বড় চোখে তাকিয়ে রইল! ধ্রুব আর এক মুহূর্ত দেরি করল না। দুহাতে অদিতির হাতদুটো উঁচু করে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে, ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ করল! অদিতি থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে দেয়ালের সঙ্গে মিশে গেছে ততক্ষণে। ধ্রুব বেপরোয়া; এতক্ষণ চেপে রাখা অনুভূতিগুলো উথলে উঠেছে যেন। উন্মত্ত ওর সমগ্র সত্তা; সেটাই মাতাল করে তুলছে স্বয়ং অদিতিকেও।
অনুভূতির আঁচড় যখন একের পর এক জখম দিচ্ছে অদিতির ঠোঁটে ক্রমাগত; তখন আবেশে হারিয়ে যাচ্ছে দুজন। অদিতি ছটফট করে উঠতেই, ধ্রুব ওর হাত ছেড়ে দিল। অদিতির দেয়ালে চেপে ধরা হাত ধীরে ধীরে ধ্রুবর গলা জড়িয়ে ওর চুল খামচে ধরল। ধ্রুবর হাত কোমর জড়িয়ে ধরে পিঠ চেপে ধরলো অদিতির। দুজনেই ডুবে গেল, একে অপরের মাঝে! আজ আর অদিতির শাড়ির কোমরে সেফটিপিন নেই; ধ্রুব দেয়নি ওসব হাবিজাবি! একটু আগে যত্নে করে পরিয়ে দেওয়া শাড়িটা এখন ধ্রুবকে বড্ড জ্বালাচ্ছে! ও ঠোঁট ছেড়ে সরে এলো দু’কদম! অস্থির একেকটা নিঃশ্বাস ওর।

অদিতি ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকাল। ধ্রুব দু কদম পিছিয়ে নিজের মাথার চুল নিজেই খামচে ধরে মাথাটা নিচু করে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে ব্যস্ত! নিজেকে শান্ত করতে চাইছে যেন। অদিতি ঢোক গিলে তাকিয়ে আছে ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব মাথা তুললো; ও কি ভয়াবহ; মারাত্মক চোখের দৃষ্টি! এক নিমিষে ঘায়েল করে ফেলল অদিতি হায়াতকে! ধ্রুব আর এক মুহূর্ত দেরি না করে হঠাৎ পাজাকোলে তুলে নিল মেয়েটাকে। অদিতিও তখন ডুবে; সম্মতিস্বরূপ দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরল ধ্রুবর!
বিছানায় শুইয়ে দিতেই, অদিতি লজ্জায় যেন মূর্ছা যাবে! দেহের নিচে পিষে যাচ্ছে গোলাপের পাপড়িগুলো! কোমল বিছানায় গা ঠেকতেই বুঝতে পারল— এই রাতটা বড্ড দীর্ঘ কাটবে ওর।

ধ্রুব টিশার্টটা অস্থির ভঙ্গিতে খুলে ছুড়ে ফেলে দিল মেঝেতে। অদিতির শ্বাস আটকে গেল ধ্রুবর নগ্ন, পেটানো শরীর দেখে। চোখ বন্ধ করে পেছন ফিরে বালিশে মুখ গুঁজে অস্ফুটে মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো! ধ্রুব ধীরে ধীরে ওর উপর ঝুঁকে ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিল। অদিতি চোখ খুলছে না; সাহস নেই ওর! চোখ খুললেই যে ওমন অস্থির ধ্রুবকে দেখতে হবে! যে ধ্রুবকে অদিতি চেনে না; কোনদিন দেখেওনি! এই ধ্রুব অন্য; তার চোখের ভাষা ভিন্ন; তার হাতের ছোয়া বড্ড দুষ্টু!
ধ্রুব অদিতির চুল গুছিয়ে দিতে দিতে ব্যাকুল গলায় বলল———-‘শাড়ি পরে মেবি তোমার গরম লাগছে! খুলে ফেললে দুজনেরই সুবিধা হবে। খুলবো?’
অদিতি জবাব দিতে পারলো না। ওর সমস্ত সত্তা তখন তোলপাড়! অনুভূতির আঁচড়ে দগ্ধ তনু-মন-হৃদয়; সবটুকু। ধ্রুবর ছোয়া-টুকু পাগল করে দিয়েছে ওকে! ধ্রুব আবার জবাব চাইল, আকুলভাবে এবার———‘কিছু তো বলো, অদিতি।’

অদিতি ঢোক গিললো; তারপর চোখ খুলে তাকিয়ে রইলো ধ্রুবর দিকে। একসময় ফাঁকা ঢোক গিললো; কাঁপা গলায় বলল——-‘শা…শাড়ির ম..মালিক যা চায়!’
বলে ধ্রুবর থেকে চোখ নামিয়ে নিলো। আবারও লালা দিয়ে শুষ্ক গলা ভেজালো। ধ্রুব ওর ঢোক গেলার মুহূর্তেই হঠাৎ ওর গলায় চুমু খেয়ে বসল।ঢোক গেলা অবস্থায় স্তব্ধ হয়ে গেল অদিতি! ধ্রুব ওর গলায় নাক ঘষতে ঘষতে আকুল গলায় বলতে থাকে———‘ঢোকটাও কত সুন্দর করে করো, অদিতি! আমি তোমার ওপর এত কেন ফিদা হচ্ছি, অ্যাই রিয়েলি ডোন্ট নো! আমাকে পাগল করে দিচ্ছো তুমি, ইয়ার!’

আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ৩৬

নিজের গলায় ওমন স্পর্শ-টুকু পাগল করে দিচ্ছে অদিতিকে! ও শিহরণে ধ্রুবর নগ্ন পিঠ চেপে ধরলো দুহাতে। ধ্রুব গলায় নাক ঘষতে ঘষতে সেভাবেই শাড়ির আঁচলে হাত রাখলো। আঁচল-টুকু সরিয়ে ফেলবে; তার আগেই হঠাৎ দরজায় কেউ করাঘাত করলো। থমকে গেল ধ্রুব। অদিতির ঘোরও তখন কেটে গেছে। ধ্রুব অদিতির গলা থেকে মুখ তুলে দরজার দিকে তাকালো, অদিতিও তাকিয়ে! দরজার ওপাশে হারুন চাচা ডাকছে অস্থির গলায়———‘ধ্রুব স্যার, বড় স্যার কী করতেসেন যেন,বুকে অশান্তি হইতেসে উনার! আপনে একটা বার আহেন! স্যার? ঘুমায় গেছেন? স্যার?’

আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ৩৮