আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ৪২

আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ৪২
অবন্তিকা তৃপ্তি

ইয়ামিন বাড়িতে একপ্রকার হইচই লেগে গেছে।ওই বাড়ির সবচেয়ে বাঁদর, বখাটে, চুড়ান্ত উশৃঙ্খল ছেলেটা নাকি বাবা হবে। ইলেকশনের ব্যস্ততায় যে সৌরভকে আজকাল বাড়িতে দেখাই যায়না; সেও খবরটা পাওয়া মাত্রই ছুটে এসেছেন ইয়ামিন বাড়িতে। অদিতির গ্রামের বাড়িতেও খবর দেওয়া হয়েছে; উনারাও তৈরি হয়ে গাড়িতে চড়েছেন ঢাকা আসবেন বলে। অদিতির চোখে-মুখে লাজুক আভা টিকরে বেরুচ্ছে; খুশিতে কাঁপছে একপ্রকার।
তবে এত হাসি, এত খুশির মধ্যেও একজনের মনে কিছু একটা বৈরী অনুভূতি চলছে। এতসব সাজ-সাজ রবেও সোফার এক কোণে পরে আছে চুপচাপ। বারবার ওর চোখ চলে যাচ্ছে অদিতির শাড়িতে ঢেকে রাখা পেটের দিকে। ওইখানে…ওই নরম চামড়ার অনেকটা ভেতরে ধ্রুবর বাচ্চা আছে। ধ্রুব যার বাবা হবে; ধ্রুবকে যে বাবা বলে ডাকবে পুরো.…পুরোটাজীবন। ধ্রুব যতবার ওদিকে অদিতির পেটের দিকে তাকাচ্ছে; ততবার বড্ড পিপাসায় বুকটা হুহু করে উঠছে। আজ নিজেকে যতটা অস্থির লাগছে, এক জীবনে ধ্রুবর এতটাও অস্থিরতা অনুভব হয়নি।

ধ্রুব অদিতির পেটের থেকে চোখ সরিয়ে আবারও মেঝের দিকে নিশ্চুপে চেয়ে রইলো। অদিতি এতক্ষণ মেহমানদের আনা মিষ্টি; সৌরভের আনা মিষ্টি খেতে খেতে এখন একটু শান্তিতে বসেছে সোফাতে। তৃণা সাথেসাথে পরিচিত নিউট্রেশনিষ্টের কাছ থেকে ডায়েট চার্ট এনে অদিতির হাতি ধরিয়ে দিয়েছেন। অদিতি সেটাই পরে যাচ্ছে এখন। তৃণাও পাশ থেকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন চার্টটা।
সবাই যখন অদিতিকে নিয়ে ব্যস্ত—সৌরভ ছেলেকে দেখেন; ধ্রুব চুপ করে অন্য ধ্যানে মগ্ন। সবার এত হইচই, এত আনন্দের ঝলকানি ওকে একটুও ছুতে পারছে না যেমন। সৌরভ চিন্তিত হোন, ছেলে কি খুশি না? সারাজীবন নিসঙ্গতার যন্ত্রণায় ধীরে ধীরে পুড়েছে ধ্রুব। ও হয়তবা কখনই কাউকেই বলবে না; নিজে ভেতরের কথাগুলো। ওর মা বেচে থাকলে ধ্রুব হয়তো তাঁকে সব বলতো। আজ সৌরভ শুনতে চান ওসব কথা, যা ধ্রুব বলতে চায়—সবটুকু কথা শুনতে চান। ধ্রুব বাবা হিসেবে হয়তোবানিজেকে এখনো তৈরি ভাবতে পারছে না। তবুও সৌরভ জানেন— ধ্রুব একজন চমৎকার বাবা হবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সৌরভ এবার একটু কাশলেন; আদ্র কণ্ঠে ডাকলেন ছেলেকে—-‘ধ্রুব?’
ধ্রুব অন্যমনস্ক ছিলো; সৌরভ তাই আবার ডাকেন—-‘ধ্রুব?’
ধ্রুব আচমকা ডাকে হুশে ফিরে যেমন——‘হু; ওহ হা বলো।’
সৌরভ স্বাভাবিক গলায় বললেন——-‘আমার রুমে সেদিনের ফাইলটা নিয়ে এসো, কথা আছে তোমার সঙ্গে।’
ধ্রুব মাথা নাড়াল, উঠে চলে যায় পাশের লাইব্রেরি রুমে। আজকাল ধ্রুব কাজ বুঝে নিচ্ছে সৌরভের থেকে। সৌরভের যে কটা ফ্যাক্টরি আছে ওসবের ওকালতি ঝামেলা মিটে গেলে সৌরভ ওসবের দায়িত্ব একমাত্র ছেলে ধ্রুবকে হ্যান্ডওভার করবেন। ধ্রুব চলে যেতেই, সৌরভ চেয়ার ছেড়ে উঠে অদিতির পাশে এসে দাঁড়ান। অদিতি উনাকে দেখে মাথা তুলে উনার দিকে তাকায়। সৌরভ ওর মাথায় আলতো হাত রাখতেই; অদিতি হালকা হাসে।
সৌরভ মৃদু হেসে বড্ড যত্ন কণ্ঠে ঢেলে বললেন——-‘আমি জানিনা তুমি ছেলে দিবে নাকি মেয়ে। একটা সুস্থ বাচ্চার আশা তো আমি রাখি। নিজের খেয়াল রেখো, সঙ্গে আমার গাধাটারও। প্রথম বাপ হচ্ছে; মেইবি হি ইজ ফিলিং লিটল বিট নার্ভাস।’

অদিতি চোখ জুড়িয়ে গেল একজন বাবার কথা শুনে। ওর চোখ-দুটো টলমলিয়ে উঠে, ও মাথা নাড়াল আস্তে করে। সৌরভ হালকা হেসে চলে গেলেন নিজের রুমে।
ধ্রুব ফাইল নিয়ে এসেছে বাবার পাশে, সৌরভের দিকে ফাইল এগুতেই; সৌরভ মাথা তুলে তাকালেন, বললেন——‘ফাইলের জন্যে ডাকিনি আমি তোমাকে।’
ধ্রুব ফাইল হাতে ভ্রু কুচকালো। সৌরভ নিজের পাশটা বসার জন্যে দেখিয়ে বললেন——-‘বসো; বলছি সব।’
ধ্রুব চুপচাপ বসলো। ওর নিঃশ্বাস ভারী। বুকের ভেতর চাপা একটা অস্থিরতা হাত-পা টানটান করে রেখেছে। প্রথমবার বাবা হচ্ছে ও।ধ্রুব ঠিক বুঝতে পারছে না, এটা ওর জন্য আনন্দের নাকি আতঙ্কের খবর।
অদিতির আল্ট্রা রিপোর্ট দেখে যখন ডক্টর বলেছে——‘ ইওর ওয়াইফ ইজ প্রেগন্যান্ট উইথ টু মান্থ ফিটাস।’
ধ্রুব তখন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিল উনার দিকে। অদিতির চোখে অশ্রু জমে, ও ধ্রুবর হাতটা তখন চেপে রেখেছিল। ধ্রুব অনুভব করেছে— অদিতির হাতও কেপেছে, ঠিক যেমন কেপেছে স্বয়ং ধ্রুবর হাত-টুকুও। ধ্রুব তখন কিছু বলতে পারেনি। শুধু অনুভব করেছে— এই এতদিন, এত বছর বুকের এক কোণে যে খালি অংশ ছিলো, শূন্য অংশ ছিলো— সেটা হঠাৎ; একদম আচমকা ভরে গেছে। বুকটা আর আগের ন্যায় উত্তপ্ত মনে হচ্ছিল না; শান্তি শান্তি অনুভূতি ঘিরে ধরেছিল ওকে।

তখনও স্বাভাবিক আচরণ করলেও, ধীরে ধীরে ওর ভেতরের কনফিডেন্ট কমে যাচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে— ও কি সত্যিই বাবা হওয়ার জন্য তৈরি? ওর মধ্যে ভালো গুণই নেই; ওর বাচ্চা কি শিখবে ওর থেকে? সিগারেট খাওয়া আর কোকের বোতল খালি করা, এটুকু? বাচ্চাকে যদি ভালোভাবে মানুষ করতে না পারে? ভবিষ্যতে যদি ওদের বাচ্চা ওকে বলে— হোয়াট অ্যা রাবিশ বাবা ইউ আর! কি করবে তখন ধ্রুব? একটা শিশুর দায়িত্ব… ও সামলাতেই পারবে না, অসম্ভব!
একটা নিষ্পাপ মুখ ওর দিকে চেয়ে থাকবে— নির্ভরশীল, নিরাপত্তাহীন। ধ্রুব কি সেই নিরাপত্তার দেয়াল হয়ে দাঁড়াতে পারবে? আর যদি ওর বাচ্চা ওকেই সেই ব্যবহার দেয়; যেটুকু ও দিয়েছে পুরোটা জীবন ওর বাবাকে? সইতে পারবে ও?

অন্যমনস্ক ধ্রুবর পিঠে হাত রাখেন সৌরভ——‘ধ্রুব?’
ধ্রুব মুখ তুলে তাকাল, ওর চোখ অন্যরকম লাগছিল।সৌরভ কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে থাকলেন ছেলের দিকে, তারপর আস্তে করে বললেন——-‘নার্ভাস?’
ধ্রুব উত্তর করল না।শুধু নিশ্চুপে মুখটা পায়ের পাতার দিকে নামিয়ে রাখল। সৌরভ আলতো করে ওর পিঠে হাত রাখলেন, বললেন——-‘ইটস ওকে ধ্রুব! বাবা হওয়াটা ব্লেসিং। প্রথমবার যখন জানলাম আমি বাবা হচ্ছি, আমিও এইরকম ছিলাম। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। কেমন যেন অসহায় লাগছিল। মনে হচ্ছিল, আমি পারব না। আমি তো নিজের জীবনই সামলাতে পারি না, সন্তানের জীবন সামলাব কীভাবে?”

ধ্রুব আস্তে করে বলা শুরু করলো তখন——-‘আমি জানি না আমি বাবা হওয়ার যোগ্য কিনা। ভয় হচ্ছে আমার।’
সৌরভ মৃদু হাসলেন——‘যোগ্যতা দিয়ে বাবা হওয়া যায় না, ধ্রুব। বাবা হওয়া মানে নিখুঁত হওয়া নয়। এই পৃথিবীর সব বাবারাই নিখুঁত নয়। তবে অ্যাই নো; ইউ উইল গিভ ইউর বেস্ট, রাইট?’
ধ্রুব চুপ করে বসে রইল তখনও! সৌরভ ওর কাঁধে হাত রেখে বসে রইলেন কিছুক্ষণ। নীরবতা ভেঙে সৌরভই কথা বলেন——‘অদিতি কিন্তু তোমার অপেক্ষায় আছে। শি নিডস ইউ দি মোস্ট।’
ধ্রুবর চোখে ভেসে উঠে—অদিতির খুশি-খুশি মায়াবী চেহারাটুকু! কতটা খুশি ছিল ও, বাচ্চার কথা শুনে। ধ্রুবর টনক নড়ে তখন। অদিতির ফিলিংসকে অপমান করে বসেছে ধ্রুব! ধ্রুব হুঁশে ফিরেছে যেমন— দ্রুত উঠে দাঁড়ায় বিছানা থেকে। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলতে থাকে——‘আ…অ্যাই মাস্ট গো। বাই।’
বলে এক দৌড়ে বেরিয়ে গেল সৌরভের রুম থেকে। সৌরভ চেয়ারে বসে হাসছেন তখন। আসলেই গাধা একটা!

অদিতি ঘরে বসে আছে। ওর হাত পেটের উপরে চেপে ধরা। হাতে আল্ট্রার রিপোর্ট! চলছে তখন অদিতির বুকের মধ্যে চাপা কাঁপুনি। ধ্রুব বাবা হচ্ছে জানার পর ধ্রুব কেমন বদলে গেছে না? অদিতির মনে তো তাই হচ্ছে। অদ্ভুত আচরণ করছে আসার পর থেকে। ও কি খুশি…পরপর অদিতি নিজেকে প্রবোধ দেয়ার চেষ্টা করল। ধ্রুব এমন নয়। ও নিশ্চয়ই খুশি। ধ্রুব কখনোই ওকে কষ্ট দেবে না। ধ্রুব হয়তবা শকে আছে। বলে না, অধিক সুখে পাথর! অদিতি খিলখিল করে হেসে উঠে। পেটের হাত বুলিয়ে কথা বলে——-‘তোমার বাবাটা আসলেই পাগল! তুমি আসার পর যদি খোদা তাকে বুঝ দেন একটুও।’

অদিতি হাসছে আর কথা বলছে পেটেরটার সঙ্গে! হঠাৎ দরজায় শব্দ হলো, অদিতি মাথা তুলে তাকাল। ধ্রুব তখন রুমে ঢুকছে। ও ঢুকেই দরজা আটকে সিটকিনি লাগিয়ে দিল। অদিতি উঠে দাঁড়ালো, মুখটা বেজার করে বলল——-‘এত দেরি কেন? আর একটু দেরি হলে আমি ঘুমিয়ে যেতাম।’
অদিতির ফুলো-ফুলো গালটা ধ্রুবকে আরো টানে যেমন। ধ্রুব তখনও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। অদিতি ওর দিকে চেয়ে আছে। ধ্রুবর চোখ অদিতির পেটের দিকে, ঠোঁট শক্ত হয়ে চেপে রেখেছে। ধ্রুবকে চুপ দেখে অদিতি ডাকে আবারও——-‘ধ্রুব?’
তারপর কি হয়েছে? ধ্রুব হঠাৎ এক দৌড়ে এগিয়ে এসে ওর গায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ওকে।অদিতি হতভম্ব হয়ে গেল। ধ্রুবর বুকের ভেতর মুখ গুঁজে ওর কাঁধে বড়বড় নিঃশ্বাস ফেলছে ধ্রুব।
অদিতি চুড়ান্ত অবাক——‘ধ্রুব?

অদিতি টের পেল, ওর ঘাড় ফোঁটা ফোঁটা পানির স্পর্শ! অদিতি আরও অবাক——‘ধ্রুব….আপনি কাঁদছেন?’
ধ্রুব কিছু বলল না। হাতের বাঁধন আরো শক্ত করে, ওকে ধরে থাকল। ওমন শক্ত স্পর্শ অদিতি ব্যথাত গুঙিয়ে উঠতেই; ধ্রুব ভাঙা ভাঙা গলায় বলতে থাকে——-‘আমি… আমি সরি অদিতি। আমি বেবিটা নিয়ে খুশি; ট্রাস্ট মি। আমি আসলে… আসলে আমি খুব কনফিউজড ছিলাম।’
অদিতি ধ্রুবর পিঠে হাত রাখল। ধ্রুব মাথা তুলে অদিতির চোখের দিকে তাকাল। ভেজা চোখে ওর মুখটা লালচে হয়ে আছে। নাক টেনে আবারও অদিতির হাত টেনে ওকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে ধরে রাখল।
ধ্রুব অপরাধীর ন্যায় মাথাটা নিচু করে কাঁপা কণ্ঠে বললে থাকে———-‘আমি চাইনি আমার বাচ্চা আমাকে কখনো অপরাধী ভাবুক। আমি চাইনি, আমার মতো কিছু হোক ওর লাইফেও। আমি ভেবেছিলাম, যদি আমি ভালো বাবা না হই… যদি ও আমাকে ঘৃণা করে…?’

অদিতি ধ্রুবর গালে হাত রাখল। ধ্রুবর ঠোঁট কাঁপছে তখনও, অদিতি ধীরে গলায় বলল——-‘তারপর? তারপর কি মনে হয়েছে, যে এভাবে ছুটে এলেন?’
ধ্রুবর মাথাটা নিচু করে হাঁটু গেড়ে বসল অদিতির সামনে। ওর পেটের উপর থেকে শাড়ি সরিয়ে একটা চুমু খেলো স্ত্রীর পেটের নরম ত্বকে, তারপর আরও একটা, তারপর বেশ কটা! অদিতি শিউরে উঠে ধ্রুবর মাথার চুল খামচে ধরল। ধ্রুব মাথা তুলে ওভাবেই হাঁটু গেড়ে অবস্থাতে অদিতির দিকে তাকাল, বড্ড আবেগ নিয়ে বলল——-‘মেইবি আমি পারব। এন্ড তুমি মাস্ট বি হেল্প করবে আমাকে। তুমি এই পেটের জনকে বলবে—ধ্রুব ইজ দ্য বেস্ট বাবা ইন দিস হোল ওয়ার্ল্ড! এন্ড আমিও রোজ ওকে ইমপ্রেস করতেই থাকব কন্টিনাউসলি, আমার ভক্ত না হয়ে যাবেটাই কোথায়?’

অদিতি হেসে ফেলল আচমকা। ধ্রুব উঠে দাড়ালো! আস্তে করে অদিতিকে টেনে নিজের বুকের সঙ্গে মিশিয়ে কপালে চুমু খেলো, চোখ বন্ধ করে স্বস্থির শ্বাস ফেলল অদিতি। ধ্রুব লো ভয়েজে মিটমিট হেসে বলল——-‘আমার আদরে ভাগ বসাতে কেউ একজন আসছে তাহলে?’
অদিতিও হাসে——-‘সেই কেউ একজন আমাদের লক্ষ্মী একটা বাচ্চা হবে। আপনাকে এতটাও ভুগাবে না।’
ধ্রুব ভ্রু উচালো——-‘তাহলে বলছো আমি নিয়ম করে আমার আদর-টুকু ভাগে পাব?’
অদিতি লজ্জায় ডুবে যায়, আস্তে করে ধ্রুবর বুকে মাথা এলিয়ে বললো———‘যেই আসুক; আমি চাই ও ধ্রুব হোক! আমার পাগলাটে প্রেমিক ধ্রুব!’
ধ্রুব হেসে উঠে শব্দ করে——‘দু-দুটো ধ্রুব? সামলাতে কষ্ট হবে না তোমার?’
অদিতি ধ্রুবর ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে থামিয়ে দিল ওকে, শাসিয়ে বললো——-‘পারব,আপনি হেল্প করবেন।’

অদিতির বাবার বাড়ি থেকে আজ লোকজন এসেছেন। অদিতির মা ফাহিমা হাসিমুখে ওর পাশে বসে আছেন। ধ্রুবর মা’র সঙ্গে গল্প জমে উঠেছে বেশ। ফাহিমার মুখে প্রশান্তির ছাপ। অদিতির বাবা তোফাজ্জল অবশ্য চুপচাপ। শুরু থেকে মেয়ের থেকে দূরে দূরে থাকার দরুন নিজের খুশি-টুকু প্রকাশ করতেই পারছেন না। মেয়ের সামনে বিশেষ কথা বলেন নি অবশ্য, তবুও এই তো চায়ের কাপ হাতে এখনো মেয়ের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছেন। অদিতির চোখ পড়তেই, তিনি চোখ সরিয়ে নিচ্ছেন বারবার।
অদিতি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। পুরনো কিছু বই লাইব্রেরিতে রাখতে হবে ওর, কালকে থেকেই রাখা। ও রুমে গিয়ে হাতের বইগুলো গুছিয়ে নিয়ে লাইব্রেরির দিকে গেল।

লাইব্রেরির দরজায় পৌঁছাতে দেখে দরজা আগে থেকেই খোলা। অদিতি দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখল— ধ্রুব একটা টেবিলের সামনে বসে আছে।ওর সামনে টেবিলে কিছু পেপার্স ছড়িয়ে রাখা। অদিতি মুচকি হেসে দরজায় টোকা দিল——-‘হ্যালো মিস্টার ধ্রুব, মিসেস ধ্রুব ভেতরে আসতে চাইছে; আসবে?’
কিছুটা নাটক করেই বললো অদিতি। ধ্রুব পেপারগুলো থেকে মাথা তুলে অদিতির দিকে তাকাল। ধ্রুবর চোখে চশমা এই প্রথম দেখল অদিতি। ধ্রুব চশমা খুলে টেবিলে রেখে উঠে এলো, অদিতির হাত থেকে বই এর স্তূপ নিজের হাতে নিয়ে বিরক্ত কণ্ঠে বললো——-‘বইগুলো তুমি বইছ কেন?’
ধ্রুব ভেতরে ঢুকছে বই নিয়ে; অদিতি ওর পিছু পিছু বলতে বলতে এগুলো ——-‘আমি তো এসব রাখতে এসেছি এই রুমে।’

ধ্রুব বইগুলো জায়গামতো রাখতে রাখতে বললো——-‘তুমি প্রেগনেন্ট অদিতি। এখন ভারী জিনিস ওঠানো তোমার জন্য সেইফ না। এখন প্লিজ একটু রেসপন্সিবল হও, টাইমটা তোমার ভালো না এখন।’’
অদিতি শুনলো ওসব নিয়মের কথা বাধ্য মেয়ের ন্যায়! ধ্রুব বই তাকে গুছিয় রাখল। অদিতির দিকে ফিরতেই অদিতি আবার বললো——-‘ধ্রুব, আমার একটা বই লাগবে এখান থেকে। খুঁজে দেবেন কষ্ট করে?’
ধ্রুব টেবিলের উপর অগোছালো পেপারগুলো গোছাতে গোছাতে জবাবে বললো———‘এখানে তো ম্যাথের বই নেই। সব উকিলাতি বই।’
অদিতি হাত তুলে তাকিয়ে দেখাল উঁচু তাকের একটা বইয়ের দিকে———‘উকিলাতি না। তৃণা মা বলেছে ওই ফিলোসফির বইটা পড়তে। এনে দেবেন?’
ধ্রুব গভীর একটা নিঃশ্বাস ফেলল, গোছানো পেপার্স জায়গা মতো রেখে অদিতির দিকে চেয়ে বললো——‘আজকাল বড্ড খাটাচ্ছ না আমাকে? অ্যাডভান্টেজ নিচ্ছো, না?’
অদিতি হেসে ফেলল! ধ্রুব কথা না বাড়িয়ে তারপর মই টেনে এনে তাক সমান উঁচু হয়ে দাঁড়াল। উঁচু তাক থেকে বইটা বের করতে গিয়েই পাশের একটা বাক্স ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেল। বাক্স খুলে গিয়ে কয়েকটা পুরনো ফাইল ছড়িয়ে গেল মেঝেময়। ধ্রুব মই থেকে বিরক্ত হয়ে তাকাল নিচে। অদিতি সেটা দেখে দ্রুত ব্যস্ত গলায় বললো——-‘আমি গুছিয়ে দিচ্ছি।’

আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ৪১

ধ্রুব মই থেকে নামতে নামতে শাসিয়ে উঠলো———‘ফাইলগুলো থেকে দূরে থাকো। ধুলো আছে ওগুলোতে।’
ওমন ভারি শাসন শুনে অদিতি চুপ করে সরে গেল। ধ্রুব অদিতির দিকে ফিলোসফির বইটা এগিয়ে দিল। অদিতি হাত বাড়িয়ে সেটা নিতেই ধ্রুব নিচু হয়ে মেঝেতে ছড়ানো ফাইল গুছাতে বসল। কিন্তু এতেই ঘটল ইয়ামিন বাড়ির সবচেয়ে বড় বি-স্ফোরণ! ফাইল গুছানোর সময় ধ্রুবর চোখ হঠাৎ-ই একটা পুরনো ফাইলে আটকে গেল, যার ওপরের মলাটে লেখা— ‘নিকাহনামা—সাল ২০১৯’

আমার প্রেমিক ধ্রুব শেষ পর্ব