আমার হায়াতি পর্ব ২৪
Nahar Adrita
প্রত্যেক মানুষই জীবনের প্রতি এক অদ্ভুত টান অনুভব করে। এই পৃথিবীর রঙ, স্বপ্ন, আশা, ভালোবাসা—সবকিছুই তাকে বেঁধে রাখে বেঁচে থাকার মায়ায়। কিন্তু যতই আমরা জীবনের দিকে ছুটে চলি, একদিন না একদিন মৃত্যুর ছায়া আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। কেউ তা দেখে ভয় পায়, কেউ আবার শান্তভাবে মেনে নেয়। মৃত্যু কোনো হঠাৎ আগন্তুক নয়—সে জন্মের মুহূর্ত থেকেই আমাদের সঙ্গী, শুধু সময়ের অপেক্ষায় থাকে। মানুষ যতই অমরত্বের স্বপ্ন দেখুক না কেন, শেষমেশ তাকে মৃত্যুর আহ্বান গ্রহণ করতেই হয়। জীবন যেমন অবশ্যম্ভাবী, তেমনি মৃত্যু—এটাই চিরন্তন সত্য।
প্রায় তিনমাস চলে গিয়েছে হায়াতের বাবা মারা যাওয়ার পর। সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেলেও দুটো মানুষের মন এখনো স্বাভাবিক হয়ে ওঠে নি। হায়াতের মা মিসেস আলিয়া পাথরে পরিনত হয়েছে,তার চেহারার লাবণ্য কমে গিয়েছে, সারাক্ষণ জায়নামাজেই পড়ে থাকে, প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। অন্যদিকে হায়াত চুপচাপ থাকে,আগের মতো আর চঞ্চল নেই সে। আদিব সারাদিন এটা সেটা বলে হাসানোর চেষ্টা করলেও কোনো কাজে দেয় না। মা মেয়ে দুজনই বলতে গেলে পাথর হয়ে গিয়েছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আজ তারা গ্রাম থেকে সাভার চলে যাবে। আদিবের অফিসের চাপ বেড়েছে কাজের, এছাড়া কানাডার প্রজেক্টের জন্য মিস্টার চৌধুরী নিজেই চলে গিয়েছেন। এই প্রজেক্টকটা তাদের একমাত্র হাতিয়ার বাংলাদেশের মধ্যে ইন্ডাস্ট্রিতে নাম্বার ওয়ানে যাওয়ার। মিসেস অরোরাও চট্টগ্রাম গিয়েছেন আদিবের ফুপুর বাড়িতে কিছু দরকারে। কিছু মাস পরেই আবার নুপুর আর মিনহাজার একমাত্র ভাই আয়ানের বিয়ে। সব মিলিয়ে চৌধুরী পরিবার যেনো খুব ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে।
মিসেস আলিয়া হায়াতের জামা কাপড় গুছিয়ে দিচ্ছে। আর হায়াত জানালার দিকে মুখ করে বসে আছে। মেয়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফুঁকলেন তিনি৷ গম্ভীর স্বরে বললো,
– তুমি কি আমার সাথে কথা বলবে না, এতো জেদ ভালো না আফরা।
হায়াত এবার মায়ের দিকে তাকালো,
– আম্মু তোমাকে আর কতো ভাবে বুঝাতে হবে, আমাদের সাথে গেলে তোমার ভালো লাগবে। একা থাকলে আরো কষ্ট লাগবে।
চোখে পানি নিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন তিনি,
– কষ্ট…কষ্ট কি আমি একা পাচ্ছি তুই পাচ্ছিস না,যাই হোক আমি আমার স্বামীর ভিটা থেকে এক চুলও কোত্থাও যাবো না।
– মা আমি তোমাকে একেবারে নিয়ে যাচ্ছি না,তোমার যখন ইচ্ছে হবে বাড়িতে আসবে….
– না এটা হয় না আফরা, আমি জানি তোর শশুর বাড়ির সকলে কতো ভালো,তাই বলে কি আমি মেয়ের শশুর বাড়িতে ওঠবো, সমাজ কি বলবে সেটা একবারও ভাবছিস না, আচ্ছা ঠিক আছে তোর কথা আমি যেনো আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে ওঠি তাইতো,বেশ আমি আগের মতো হয়ে যাব তবুও তোর সাথে যাওয়া সম্ভব না মা…
হায়াত যেনো মায়ের কথা কিছুটা বুঝতে পারলো,ছোট্ট নিশ্বাস ফুঁকে মাকে জড়িয়ে ধরলো। খানিকক্ষণ মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে কান্নাও করলো,আলিয়া বেগম পরম যত্নে মেয়ের চোখের পানি মুছে দিলেন।
এমন সময় ঘরে প্রবেশ করলো আদিব, শাশুড়ীকে দেখে স্মিথ হেসে বললো,
– আম্মু আমি বলছি চলুন না।
– না বাবা সম্ভব না।
– আমি বলছি তাও যাবেন না, আমার কথাও কি রাখবেন না।
– আচ্ছা বেশ ! আমি তোমার ভাইয়ের বিয়েতে রাব্বিকে নিয়ে যাবো তখন নাহয় বেশ কিছুদিন থেকে আসবো। কথা দিলাম তোমাকে বাবা।
– আচ্ছা আম্মু,রাব্বির আগামী নয়মাসের পরীক্ষা ফি বেতন সব দিয়ে এসেছি কোনো সমস্যা নেই আর যা প্রয়োজন হবে আপনি আপনার এই ছেলের কাছে চাইবেন ইনশাআল্লাহ আমি আপনার ছেলে কখনো কোনো অভাব দেখতে দেবো না।
আলিয়া বেগম চোখের পানি মুছে বিছানায় বসলেন, তারপর আদিবকেও পাশে বসতে বললেন, স্মিথ হেসে আদিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন,এই তিনমাসে আদিব পরিস্থিতি অনুযায়ী সব দিক দেখেছে। আসলেই সে মেয়ের জামাই না বরং নিজের ছেলের জায়গা থেকেই সব কিছু করেছে। মিসেস আলিয়ার চোখের পানি হলো সেই প্রাপ্তির পানি। পরম আবেশে আদিবের পিঠ দুইয়ে দিলেন তিনি। আদিব হালকা হেসে মিসেস আলিয়ার কোলে মাথা রাখলেন,
– মা একটু দোয়া করে দিন তো, যাতে আপনার মেয়েকে সবসময় সুখে রাখতে পারি।
– দোয়া তো করিই, সব সময় আমার মোনাজাতে তোমরা আছো আর থাকবে।
হায়াত এতোক্ষণ যাবত সব দেখছিলো এখন একটু কপাল কুচকে বললো,
– হ্যা হ্যা আমি তো কেউ না, আমাকে কি একটু আদর করা যায় না সব আদর ওনাকেই করছো।
আদিব ফাজলামো করে বললো,
– ছিহ বউ তোমার মনে এতো হিংসা, ভেরি ব্যাড হায়াতি।
কিছুক্ষণ কথা বলে আলিয়া বেগম ঘর থেকে বেড় হয়ে গেলো। আদিব একটু পর হায়াতের পাশটায় বসলো, হায়াত মাথা নিচু করে এফবি স্ক্রোল করছিলো। আদিব হায়াতের হাত নিজের হাতের ভেতর পুড়ে নিল। হায়াত আদিবের দিকে তাকালো। সে মুচকি হেসে লাজুকপাখিকে জড়িয়ে ধরলো। কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
– বউ বাসায় গিয়ে আমরা একটা নতুন গেম খেলবো ওকে।
– কেমন গেম ?
– বাসায় চলো আমি বুঝাবো।
– হু।
আদিব হায়াতের অধরে নিজের আয়ত্তে নিয়ে ফেললো, আজ প্রায় তিনমাস পর হায়াতকে ছুয়ে দেখলো সে, আর হায়াতও আদিবের সাথে তালে তাল মিলাতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ পর অধর ছেড়ে দিয়ে দুজনেই হাঁপাতে লাগলো। শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলো নিজের লাজুকপাখিকে।
আধা ঘণ্টা পর হায়াত বোরকা পড়ে হিজাব করে নিলো, আদিব বাইরে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির চাবি নিয়ে। হায়াত ব্যাগ নিয়ে বের হলো। রাব্বি এগিয়ে এসে হায়াতের হাত থেকে ব্যাগটা নিলো, হায়াত হালকা হাসলো। আলিয়া বেগম তছবি গুনতে গুনতে ঘরে থেকপ বের হলো। হায়াত মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। হায়াতের চাচা চাচী সবাই আসলেন, হায়াতকে আর আলিয়া বেগমকে শান্তনা দিতে লাগলেন।
আদিব হায়াতকে গাড়িতে ওঠার জন্য বললো,রাব্বিকে জড়িয়ে ধরে আদর করলো হায়াত। আদিব রাব্বির হাতে কিছু টাকা গুজে দিলো। আলিয়া বেগম আদিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দিলেন, সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে ওঠলো দুজন।
বিকেলের শেষ আলোয় ভিজে থাকা গ্রামের সরু কাঁচা পথ বেয়ে গাড়িটি ধীরে ধীরে এগোতে লাগল। দু’পাশে ছড়িয়ে থাকা সবুজ ধানক্ষেত, মাঝেমধ্যে গাছের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়া মাটির বাড়িঘর আর দূরের টালিমারা ছনের চাল—সবকিছু যেন এক শান্ত, মায়াবী ছবির মতো ভেসে আসছিল। জানালার পাশে হায়াত গা এলিয়ে বসে, গভীর মনোযোগে বাইরের দৃশ্য দেখছিল; তার চোখে ছিল এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতি—হয়তো স্মৃতি, হয়তো অজানা কৌতূহল। আর ঠিক তার পাশেই বসে থাকা আদিব, নীরবে বারবার হায়াতের দিকে তাকাচ্ছিল; যেন প্রতিটি দৃষ্টিতে সে কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু কথাগুলো ঠোঁট পেরিয়ে আসছে না, শুধু চোখের ভাষায় বয়ে যাচ্ছে।
ড্রাইভিং করতে করতে হায়াতের হাত এক পর্যায়ে নিজের হাতের মুঠোতে নিলো, হায়াত তাকালো। আদিব মায়া ভরা চোখে তাকালো৷ হায়াত একটু নড়ে চড়ে বসলো। কিছু একটা ভেবে প্রশ্ন করলো,
– আচ্ছা আব্বু যেদিন মারা গেলো সেদিন আপনি আসলেন কি করে।
– ইমার্জেন্সি ছুটিতে এসেছিলাম।
– ওহ। আর অফিসের ওনারা কিছু বললো না আপনাকে কিছু৷
– না বউ তোমাকে এতো কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না।
– হু।
রাত ঠিক আটটায় গাড়িটির ব্রেক চেপে থামিয়ে দিল আদিব,ঠিক তার পাশেই বিভোর হয়ে ঘুমাচ্ছে হায়াত । অন্ধকারে মোড়ানো শহর তখন প্রায় নিস্তব্ধ, কেবল দূরে কোথাও ঝিঁঝিঁ পোকার একঘেয়ে ডাক আর বাতাসে দুলে ওঠা গাছের পাতার মৃদু শব্দ শোনা যাচ্ছিল। সামনের দিকে ফিকে হলুদ আলোয় ভেসে উঠল চৌধুরী বাড়ির বিশাল ফটক— লোহার গেট, দারোয়ান কাকা গাড়ির শব্দ পেয়ে সজাক হয়ে ওঠলেন। মুচকি হেসে সালাম দিলেন। আদিব ঘুমন্ত হায়াতকে কোলে তুলে নিল। আর ব্যাগ নিলো এক হাত দিয়ে। দারোয়ান কাকা গাড়িটি পার্কিং-এ রাখলো।
চাবি দিয়ে গেট খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো আদিব। হায়াতকে পরম যত্নে সোফায় শুইয়ে দিল। ব্যাগটা এক সাইডে রেখে সারা বাড়ির লাইট জ্বালিয়ে দিলে, চোখ কচলাতে কচলাতে ওঠে বসলো হায়াত।
এদিকে আদিব ফ্রিজ থেকে কিছু ফল বের করে ধুয়ে কেটে আনলো হায়াতের জন্য। হায়াত আদিবের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। আদিব টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
– বরকে পরেও দেখতে পারবে আগে ফল গুলো খেয়ে নাও তো বউ।
– আমি আপনাকে দেখছিলাম না….
– ওহ এমনিই তাকিয়ে ছিলে তাই না বউ।
– হু আপনার মাথা।
হায়াত একটা আপেলের টুকরো হাতে নিয়ে এক কামড় খেলো, আরেকবার মুখে দেওয়ার সময় হায়াত কিছু একটা ভেবে আপেলটা কামড় দিয়ে মুখটা আদিবের সামনে নিল, আদিব দুষ্টু হেসে নিজেও মুখ এগিয়ে দিয়ে আপেলটা খেয়ে হায়াতের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট পুড়ে নিল। বেশ কিছুক্ষণ তারা এভাবে এই খেলায় মাতিয়ে নিলো নিজেদের।
খাওয়া শেষ করে হায়াত ব্যাগ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে চলে গেলো, আর আদিব দরজা আটকিয়ে দিলো সারা বাড়ির। সিড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময় সামান্য হোটচ খেলো , বুড়ো আঙুলটাই বেশ লাগলো যার ফলে রক্ত ও বের হলো, তবে আদিবের ব্যাথা পাওয়া নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথায় নেই সে আছে অন্য চিন্তায়। আজ বাড়িটা কেমন ভারী ভারী লাগছে যেনো মনে হচ্ছে কেউ আছে। এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ ওপরে রুমে থেকে হায়াতের চিৎকার ভেসে আসলো।
আদিব দৌড়ে রুমে আসলো, রুমে এসে অবাক হয়ে তাকালো হায়াতের দিকে, হায়াত জানালার ওপর ওঠে দাড়িয়ে আছে, আর একটা ধবধবে সাদা মোটা পার্সিয়ান বিড়াল ফ্লোরে বসে আছে, আদিব অবাক স্বরে হায়াতকে জিজ্ঞেস করলো,
– পাখি তুমি কি এই বিড়ালটাকে ভয় পাচ্ছো ?
হায়াত কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
– হ্যা এটাকে সরান প্লিজ, আমার অনেক ভয় লাগে বিড়াল দেখলে৷
আদিব হো হো করে হেসে দিলো, বিড়ালটাকে কোলে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে নামিয়ে দিলো, বিড়ালটিও সুন্দর দোলনায় চড়ে বসলো। আদিব একটা টোনা ফিস লেখা প্যাকেট নিয়ে ওটা বিড়ালটিকে বের করে খাইয়ে দিতে লাগলো আনমনে।
এদিকে হায়াত জানালা থেকে নেমে আস্তে আস্তে বেলকনির কাচের গ্লাসটার সামনে দাড়ালো, আদিবের কান্ড দেখতে লাগলো। আদিব হায়াতকে দেখে মুচকি হেসে এক হাত দিয়ে চুল গুলো ব্রাশ করতে লাগলো।
– বউ ও কিছু করবে না আর এটা ভেকসিন দেওয়া ভয় নেই আসো।
– না না দরকার নেই, আমার ওনেক ভয় লাগে ছোটবেলা থেকেই, আচ্ছা এটা কার মিউ !
– এটা আমার মিউ, আমি ওনেক দিন আগে একটা পেজ থেকে নিয়েছি, এতোদিন মিনহাজার কাছে ছিলো, আজ তো ওরা গ্রামে গিয়েছে তাই আমার রুমে রেখে গিয়েছে।
– ওহ বুঝতে পেরেছি।
– হুম। কিছু খাবে তুমি জান ?
– উহু…. আচ্ছা এটার নাম কি ?
– ওর নাম ক্লিও।
– বাহ অনেক সুন্দর তো নামটা, যাইহোক বিড়ালটা মানে ক্লিও দেখতে কিন্তু অনেক সুন্দর। কিন্তু আমি কখনো ওকে কোলে নিব না,আর ওকে কিন্তু দূরে রাখবেন আমার থেকে ব্ বলে দিলাম।
– আরে পাখি চিন্তা করো না আমি তোমাকে বিড়ালকে কোলে নেওয়া শিখিয়ে ফেলবো চলো।
আদিব হায়াতের কাধ আগলিয়ে ডিভানে নিয়ে বসিয়ে দিলো, হায়াতও বাধ্য মেয়ের মতো বোরকা আর হিজাব খুলিয়ে বসে পড়লো।
আদিব একটা খাতা আর কলম নিয়ে আসলো, অসহায় মুখ করে বললো,
– আমি আজকে পড়তে বসবো না,আমার পরীক্ষা তো শেষ হয়ে গিয়েছে। আবার কিসের পড়াশোনা, মানলাম আপনি একজন গেস্ট টিচার তাই বলে কি আমাকে আগে থেকে সেকেন্ড ইয়ারের সব পড়া শেষ করাবেন।
– আরে বউ স্টপ। রেলগাড়ীর মতো কথা ছুটছে, একটু চুপ করো আমি বলছি ওকে৷
– হু…..
– এই কাগজ গুলো ছোট ছোট টুকরো করবা , তারপর বিভিন্ন কালের ছোট করে নাম লিখো।
আদিবের কথা মতো হায়াত কাগজের টুকরোতে একেক একেক করে কালারের নাম লিখতে শুরু করলো,
এরপর আদিবের কথা অনুযায়ী প্রত্যেকটা রংয়ের নামের নিচে টিশার্ট শার্ট লিখতে শুরু করলো। এইবার সবগুলো কাগজের টুকরো একেক করে ভা জ করতে শুরু করলো।
হায়াত মনে মনে ভাবতে লাগলে এসব দিয়ে কি হবে, আর আদিব যেনো হায়াতের মনের কথা এক নিমিষেই পড়ে ফেললো,
– সোনা তোমাকে চিন্তা করে মাথা ব্যাথা করতে হবে না, আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি গেমটা,
হায়াত মাথা নাড়লো। আদিব বুঝাতে শুরু করলো, প্রথমে সব গুলো কাগজ ভাজ করে কাঁচের বাটিতে নিয়ে এগুলোকে ভালো করে মিক্স করবে তারপর একেক কাগজে যে রংয়ের শার্ট বা টিশার্ট লেখা আছে তা পড়ে আসতে হবে,
একবার হায়াত আরেকবার আদিব, এভাবের প্রত্যেকটা টিশার্ট পড়ে গানে নাচতে হবে। এক রাউন্ড খেলার পর আবার আরেকটা গেম শুরু করবে।
হায়াত পুরু কথা মগজে গেঁথে নিলো। সম্মতি সরূপ মাথা নাড়ালো। আদিব কাগজের টুকরো গুলো বাটিতে নিয়ে নাড়তে লাগলো,
এরপর হায়াত একটা চিরকুট ওঠালো সেটার ভাজ খুলতেই চোখে ঝলমল করলো সেটাতে স্পষ্ট লেখা – এ্যাস কালার শুধু শার্ট পড়ে কামলি কামলি গানে নাচতে হবে এবং ছাপ্পান্নটা চুমু খেতে হবে শরীরের সব জায়গায় তাও নাচের মধ্যে ।
হায়াত আদিবের দিকে তাকালো।
আদিব ইশারা করলো আলমারি থেকে শার্ট নিয়ে পড়তে , হায়াত পা টিপে টিপে আলমারি থেকে একটা শার্ট বের করলো আর সেটা পড়লো, আদিব হা হয়ে তাকিয়ে আছে হায়াতের দিকে, এই লুকে আজ তাকে একটু বেশিই আবেদনময়ী লাগছে।
হায়াত চুলগুলোকে উচুঁতে বেধে নিলো, শুধু শার্ট পড়ে আছে সে, যা হাটু অব্দি লম্বা। আদিব টিভিতে কামলি সং চালিয়ে দিলো, হায়াত নাচতে শুরু করলো আর আদিব তা ভিডিও করছে, হায়াত একপর্যায়ে আদিবের কাছে আসলো, টিভিতে গান বাজছে আর সে আদিবের একটা একটা বোতাম খুলছে আদিব শুকনো ঢুক গিলতে শুরু করলো। হায়াত আদিবের বুকে একটা চুমু খেলো, অতঃপর গালে চুমু দিয়ে আস্তে আস্তে পেটের কাছটাই এসে চুমু খেয়ে করুন চোখে তাকালো আদিবের দিকে, সে এখন বুঝতে পেরেছে হায়াত কি করতে যাচ্ছে ।
হায়াত একপর্যায়ে আদিবের উদরের নিচে আস্তে করে চুমু খেলো আর আদিব হায়াতকে চেপে ধরলো, আর তখনি টিভিতে গান বেজে ওঠলো – রাত কা নেশা আভি, আখছে গেয়া নেহি…..
আদিব হায়াতকে কোলে করে বিছানায় নিয়ে গেলো, পাখির পরনের শার্টটা খুলে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো। হায়াত ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে আদিবের দিকে আর ততক্ষণে আদিব হায়াতের অধর নিজের অধরে পুড়ে নিলো। আর হাত বিচরণ করতে লাগলো পুরো শরীর জুড়ে। হায়াতের গায়ের লোম দাঁড়িয়ে ওঠলো, সামান্য কেঁপে ওঠে সে, অনেকদিনপর শখের পুরুষদের ছোঁয়া পেয়ে আবেশে মাতোয়ারা হয়ে গেলো হায়াত আর আদিব জুড়ে জুড়ে অধরের সাদ নিতে মরিয়া।
আদিব হায়াতের হাত বেল্ট দিয়ে বেধে নিলো,হাসফাস করতে লাগলো হায়াত, আদিব মুচকি হেসে হায়াতের সর্বাঙ্গে মধু ঢেলে দিলো, আস্তে আস্তে রসনা দিয়ে লেহন করতে লাগলো,খানিক সময় পরপরই হায়াত কেঁপে কেঁপে ওঠে। আদিব হাস্কি স্বরে বললো,
– Tonight I’ll savor the sweetness through honey… tell me, are you ready, my love?
হায়াত চুপ করে আছে,যার মানে সম্মতির লক্ষণ। বেশ কিছুক্ষণ আদিব সারা শরীর জুড়ে রসনা দিয়ে লেহন করতে লাগলো, এরপর আত্নার আকাঙ্ক্ষিত কামনা চালিয়ে যেতে থাকলো,আর হায়াত পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে তৃপ্তি নিতে থাকলো।
আদিব হাস্কি স্বরে বললো,
– Wifey, tonight I’ll be really intense, so please handle me carefully.
হায়াত চোখ খুলে আদিবের দিকে তাকালো,দুষ্টু মাখা স্বরে বললো,
– হু অবশ্যই আট মাসের মতো হতে চললো আপনাকে সামলাচ্ছি, প্রবলেম নেই।
– বিসমিল্লাহ…….
– Ah… it feels so good… slowly, please জান…
এভাবেই রাত নয়টা বেজে যাওয়া অব্দি তাদের আত্নার সংযোগ চলতে থাকলো।
”
হায়াতকে বুকে জড়িয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে আদিব,হায়াত ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে সেই কখন, আদিব হায়াতকে ভালো করে শুইয়ে দিলো, খানিক্ষন আগেই দুজন গোসল করে এসেছে।
আদিব পানি আনতে নিচে নামল। ঠিক সেই মুহূর্তে, মা-বাবার রুম থেকে অচেনা আওয়াজ এল। মৃদু পায়ে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সে দেখল, এক চোর আলমারির লক ভেঙে সব গহনা আর টাকাগুলো নিজের ব্যাগে ঢুকাচ্ছে।
হায়াতও তখন আদিবকে খুঁজতে নিচে নামছিল। সে আদিবকে সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, মুখ খুলে কিছু বলতে যেতেই আদিব দ্রুত তার মুখ চেপে ধরল।
হায়াতের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
– একদম কথা বলবে না, যা দেখবে তাতে একটুও চিৎকার করবে না ওকে।
হায়াত মাথা নাড়ালো, আদিবের কথা মতো মায়ের রুমের দিকে তাকিয়ে বেচারি হা হয়ে গেলো। আঁতকে উঠল সে আর আদিবের হাতে জুড়ে কামড় দিয়ে ফেললো,আদিব মৃদু আওয়াজ করলো,
– আহ্ পাখি এভাবে কেউ কামড় দেয়।
আদিব হায়াতকে ধীরে ধীরে ছেড়ে রুমের মধ্যে ঢুকল। চোরের দিকে তাকিয়ে চোখে রাগের অগ্নি জ্বলে উঠল। এক মুহূর্তের hesitation নেই, আদিব মুহূর্তের মধ্যে চোরের নাক বরাবর ঝড়ের মতো ঘুষি মারল। চোর হকচকিয়ে পিছনে লাফ দিল, ব্যাগের মধ্যে থাকা গহনা ছিটকে পড়ল। রুমে উত্তেজনার বীজ ছড়িয়ে পড়ল, হায়াত চিৎকার করতে চাইল, কিন্তু আতঙ্কে সে স্থির হয়ে রইল, চোখে ভয়ের ছাপ। আদিব দ্রুত চোরের দিকে এগিয়ে গেল, যেন কোনোরকম কৌশল ছাড়াই তাকে আটকাতে চায়।
চোর এখনও হকচকিয়ে ছিল, আর রুমের মধ্যে ভয় ও উত্তেজনা একত্রে ঘন হয়ে উঠল। আদিব তার চোখে কঠোরতা বজায় রেখে এগিয়ে গেল, আরো কয়েক খানা ঘুষি মারলে আর হাত বাড়িয়ে চোরকে আটকাতে চাইল। হায়াত তখন পিছনে দাঁড়িয়ে, রীতিমতো শ্বাস রুদ্ধ অবস্থায় দৃশ্যটি দেখছিল, চোরটা আদিবের পায়ে ধরে বললো,
– আমাকে মাফ কইরা দেন আমি গরীব মানুষ, আমি আর জীবনেও চুরি করুম না।
এদিকে হায়াত যেন একটু ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো ব্যাপারটা লক্ষ করলো আদিব, সে যে কোনো সময় জ্ঞান হারাতে পারে। আদিব কিছু একটা ভেবে পাঁচ হাজার টাকা সেই মাঝ বয়সি চোরের হাতে দিলো এবং বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে বললো নাহলে পুলিশকে এখনি কল করবে। চোরটি ভয়ে পালিয়ে গেলো ।
হায়াত বড় করে একটা শ্বাস ছেড়ে আদিবের বুকে মাথা রাখলো। আদিব হায়াতকে বুকে আগলে রাখলো। মিনিট পাঁচেক পর হায়াত মুখ তুলে আদিবের দিকে তাকালো।
আদিব হায়াতকে কোলে তুলে নিল। এরপর সোফায় বসিয়ে দিয়ে কিচেন রুমে গিয়ে এক গ্লাস দুধ আর পাউরুটি নিয়ে আসলো। দুধ দেখেই হায়াত নাক মুখ কুচকে বললো,
– আমি গু খাবো না।
– এটা গু না তো বউ,এটা দুধ একটু খাও ভাল্লাগবে। শরীরে শক্তি প্রয়োজন আমি তোমাকে স্যালাইন দিব না তো দুইদিন পর জ্ঞান হারিয়ে পড়ে থাকবে এতে লাভ হবে না।
– গু হারাবো, আপনি গু খান গা।
আদিব এক ধমক দিলো হায়াতকে। বললো,
– স্যাট আপ, পাগলের মতো সারাদিন গু গু করে, এই তোমার কি গু এতোই পছন্দ নাকি।
– এ্যা আপনি আমাকপ বকলেন।
এই বলেই হায়াত কান্না শুরু করে দিলো। আদিক পরলো মহা ঝামেলায়। কপাল স্লাইড করে নেশালো কন্ঠে বললো,
– জান আমি যদি মিষ্টি করে দিই তাহলে কি দুধ খাবে।
– কিভাবে ?
আদিব দুধটুকু এক চুমুক মুখে নিয়ে হায়াতকে ইশারায় হা করতে বললো, আর হায়াত হা করতেই আদিব দুধ সমেত হায়াতের ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ পুড়ে নিল, পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে খেতে লাগলো হায়াত।
রাত গভীর হতে লাগল। খাবার শেষ করার পর হায়াত আর আদিব কিছুক্ষণ গেম খেলল, হাসি আর হালকা টানাপোড়েনের মাঝে সময় কেটে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পরই দু’জন আবার একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অনুভূতি ভাগ করতে লাগল, মৃদু আগ্রহ আর অন্তরের আকাঙ্ক্ষা একসাথে জেগে উঠল।
হায়াত আর আদিব একে অপরের দিকে ধীরে ধীরে এগোতে লাগল। বাতাসে রাতের শান্তি ভেসে আসছিল, আর জানালার ফিকে আলো তাদের ছায়া খেলায় মিশে যাচ্ছিল। হায়াতের চোখে কৌতূহল আর আগ্রহের ঝলক, আর আদিবের হাতে কোমল স্পর্শ—সব মিলিয়ে যেন রাতের নিস্তব্ধতাকে আরও ঘন করে তুলছে। কথার দরকার নেই, শুধুই নীরব বোঝাপড়া, যেখানে দু’জনের অন্তরের আকাঙ্ক্ষা নিঃশব্দে একে অপরকে খুঁজে পাচ্ছিল।
হায়াত হালকা শ্বাস ফেলে আদিবের দিকে তাকাল, আর ছোট্ট হাসি খেলল তার ঠোঁটের কোণে। আদিবও ধীরে ধীরে হায়াতের চোখে চোখ রেখে, নীরবভাবে প্রতিশ্রুতি দিল—শুধু তারা দু’জন, এই রাতের নিস্তব্ধতার মাঝে। বাতাসে রাতের ঠান্ডা মিশে গেল, আর তাদের অন্তরের উত্তেজনা এক গভীর নীরব আলোয় সিক্ত হয়ে গেল।
হায়াত আর আদিব ধীরে ধীরে একে অপরের দিকে এগোল। রাতের নিস্তব্ধতা তাদের চারপাশে ঘন হয়ে আসছিল, আর জানালার ফিকে আলো তাদের ছায়াকে নাচাচ্ছিল। প্রতিটি স্পর্শ, প্রতিটি চুম্বন যেন নীরব ভাষায় একে অপরের অন্তরের আকাঙ্ক্ষা জানাচ্ছিল। সময় যেন থেমে গিয়েছিল, কেবল তারা দু’জনই, তাদের মৃদু শ্বাস আর নীরব বোঝাপড়ার মধ্যে রাতের নিস্তব্ধতা আরও গভীর হয়ে উঠল।
ডিসেম্বরের প্রায় শুরু, শীতের প্রথম কাঁপুনি বাতাসে লুকিয়ে আছে। ভোরের নিস্তব্ধতার মাঝে হায়াত গোসল করার জন্য ভাবছে, কিন্তু কপালে ঠান্ডার ছোঁয়া আর আঁধারের একাকিত্ব তাকে যেন ভয় পাচ্ছে। কল্পনায় শীতল পানি স্পর্শ করলেই শরীর কাঁপবে—এই ভয়ের মৃদু ছাপ তার প্রতিটি শ্বাসে লেগে আছে।
আদিব টাউজার পরে হায়াতের দিকে তাকালো সে এখনো কম্বলের ভেতর থেকে দুটো চোখ বের করে আদিবের দিকে চেয়ে আছে।
আদিব দাঁতকামড়ে হেসে চুলে হাত চালাতে থাকলো। হায়াত করুন চোখে আদিবের দিকে তাকালো।
আমার হায়াতি পর্ব ২৩
– পাখি ভয় নেই চলো,এতো ঠান্ডা না তো পানি।
– উহু আমি সকালে করবো, আমি এখন পারবো না আমাকে প্লিজ এখন গোসল করতে বলবেন না।
আদিব ভ্রু কুচকে হেসে দিলো, হায়াতকে কোলে করে ওয়াশরুম প্রবেশ করলো, আর নিচে নামিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে দিলো। ঝর্ণার পানি শরীরে পড়তেই,
– আল্লাহ গো তুমি এর বিচার করো, আমার স্বামী আমাকে মারতে চাই এর জন্য এখন গোসল করাতে এনেছে।
হায়াতের কথায় পেট ফেটে হাসি আসলো আদিবের। পরম আবেশে অধর নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো। এরপর আস্তে আস্তে কোমল অঙ্গে স্পর্শ করতে লাগলো।