আমার হায়াতি পর্ব ২৫

আমার হায়াতি পর্ব ২৫
Nahar Adrita

সদ্য গোসলের পরে দু’জনই সতেজ আর শান্ত মনে রুমে ফিরে এসেছে। আদিব ডিভানের এক কোণে বসে মিটিং করছে, চোখের সামনে ল্যাপটপ আর কাগজপত্রের মধ্যে মনোযোগ ছড়িয়ে আছে। হায়াত বিছানায় বসে বইয়ের পাতায় ডুবে আছে, মাঝে মাঝে চোখ উঠিয়ে আদিবকে দেখছে, চরম বিরক্ত নিয়ে এবার বলেই ফেললো,
– আমি পড়বো না, আমি আরাবিদের বাসায় যাবো ওর সাথে বসে পড়বো নাহলে আমি কিছুতেই একা পড়বো না।
ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে এবার হায়াতের দিকে তাকালো আদিব, মুখে অস্ফুটস্বরে ‘চ’ শব্দ করলো,

– হ্যা জানি তো দুটো বান্দর এক সাথে হলে কতোই না পড়বে।
– এই আপনি আমাদের র বান্দর বললেন কেনো।
– তো কি বলবো, আর এই ঠান্ডায় বাইরে যেতে হবে কেনো।
– আমি কি বাইরে যাচ্ছি নাকি,আমি তো আরাবিদের বাসায় যাবো।
আদিব ফাইল গুলোর দিকে তাকিয়েই জবাব দিলো,
– না যেতে হবে না, আমি ওকে কল দিচ্ছি ও রেডি হয়ে থাকবে রামু কাকা গিয়ে ওকে নিয়ে আসবে।
হায়াত প্রচন্ড খুশি হয়ে এক লাফে বিছানা থেকে নেমে আদিবের পাশে বসলো,এমনকি পর পর নয়টি চুমু একে দিলো আদিবের গালে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হায়াত দাঁত বের করে হাসতে লাগলো, তারপর এক দৌড়ে বেলকনিতে চলে গেলো আর তখনি এক বিপত্তি সৃষ্টি হলো, দৌড় দিয়ে ক্লিও এর লেজের ওপর দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো হায়াত, ক্লিও জুড়ে এক আঁচড় কাটলো হায়াতকে আর সাথে সাথে রক্ত বের হতে শুরু করলো। হায়াত ভ্যা ভ্যা করে কান্না করতে লাগলো, আদিব ছুটে আসলো বেলকনিতে। কপাল স্লাইড করে ক্লিওয়ের দিকে তাকালো, বেচারি ক্লিও হা করে তকিয়ে আছে হায়াতের দিকে। হায়াত পা ধরে বসে আছে আর চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। আদিব হায়াতের পাশে বসলো, রাগী কন্ঠে বললো,

– তুমি কি একটু স্থির হয়ে বসতে পারো না, সারাক্ষণ ছুটাছুটি করো।
– করে যে তুরু তুরু তুরু তুরু মন আমার, হয়ে যে শুরু শুরু মন আমার।
আদিব তাজ্জব বনে চলে গেলো, এই মুহূর্তেও নাকি পিচ্চিটা তার বাঁদরামি করছে হায়রে। হায়াতকে কোলে তুলে নিল আদিব। বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে বিছানার উপর বসিয়ে দিলো। কপাল কুচকে মুভ মলন খুজতে লাগলো, একটু পর তা পেয়েও গেলো। আস্তে আস্তে মলন লাগিয়ে দিলো, মুখে গাম্ভীর্য বজায় রেখে হায়াতকে বললো,
– এতো লাফালাফি করতে কে বলে তোমাকে।
– এ্যাাাা বকছেন কেনো, আমি চলে যাবো।

– কোথায় যাবে পাখি বা কতো দূরই যাবে, সাদাদ আদিব চৌধুরী তোমাকে পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকেই খুজে আনবে।
হায়াত কিছুক্ষণ আদিবের পেছন ঘুর ঘুর করে আবারও পড়তে বসলো,আর আদিব অফিসে যাওয়ার জন্য আয়নার সামনে রেডি হচ্ছে। হায়াত একটু কাছে এসে একটা চেয়ারে দাড়িয়ে আদিবের চুল গুলো ব্রাশ করে দিলো, মুচকি হেসে বললো,

– আপনি না আমার থেকে পিচ্চি হয়ে গেছেন।
– তাই ? তুমি কি যানো তোমার থেকে আমার ওইটার সাইজ অনেক বড়… আই মিন মন।
আদিব ঠোঁট কামড়ে হেসে হায়াতকে কোলে তুলে ওষ্ঠ নিজের আয়ত্তে এনে ফেললো,আস্তে আস্তে গলায় বাইট দিতে লাগলো। মিনিট বিশেক পর হায়াতের গালে পরশ একে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
আর হায়াত এখনো আদিবের বলা ওই কথাটাই ভাবছে। কথাটার মানে বুঝতে পেরে হা হয়ে গেলো,মনে মনে বললো- ছ্যাহ কি লুচু মার্কা বেডা, কি সব বলে একটু লজ্জাও করে না।
আস্তে আস্তে সারা রুম ঝাড়ু দিয়ে বিছানা গুছিয়ে ফেললো হায়াত। ক্লিও পা টিপে টিপে রুমে প্রবেশ করলো, হায়াত বসে বসে আরাবির সাথে মেসেজ করছিলো।

এমন সময় ক্লিও এসে হায়াতের পায়ের কাছে বসলো, হায়াত নাক সিটকে পা ওপরে তুলে ফেললো আর তকনি ক্লিও ইনোসেন্ট মুখ করে হায়াতের দিকে তাকালো। হায়াতের ভয় একটু কমলো, এতো মায়া ভরা চাহনিতে কার না ভয় দূর হয়।
হায়াত সাহস করে ক্লিওর শরীরে হাত বুলিয়ে দিলো, ক্লিও আদর পেয়ে এক লাফে হায়াতের কোলে ওঠে পড়লো, আর হায়াত আল্লাহ গো বলে চিৎকার করে চোখ বন্ধ করে ফেললো।চোখ টিপ টিপ করে ক্লিওর দিকে তাকালো,বেচারি ক্লিও হা করে চেয়ে আছে হায়াতের আদর খাওয়ার জন্য।
হায়াত যেন সব ভয় ভুলে গেলো আস্তে আস্তে ক্লিওর গায়ে আদর করতে থাকলো আর ক্লিও আদর পেয়ে মহা খুশি। হায়াতের হাতে পরম আহ্লাদে চা’টতে থাকলো,হায়াত নাক সিটকে বললো,

– তুই আর তোর বাবা এক, সুযোগ পেলেই আদর করতে চাস তাই না। এই তুই ছেলে নাকি পেয়ে দেখি একটু ।
এমন সময় ক্লিও হায়াতের কোলেই শিশি করে দিলো, হায়াত পুরো তাজ্জব বনে চলে গেলো। রাগে ফুসতে ফুঁসতে আরেকটা জামা নিয়ে গোসল করতে চলে গেলো, আর ক্লিও পুনরায় বেলকনিতে গিয়ে খাবার খেতে লাগলো।
বেলা এগারোটা। আরাবি রাস্তায়, হায়াত মুভি দেকার সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। কিছু একটা ভেবে আদিবকে কল করলো।
এদিকে আদিব সবে কেবিনে প্রবেশ করলো, একটানা দুই ঘন্টা মিটিংয়ে ছিলো সে। ঠিক তখনি ফোনে রিং হলো, স্ক্রিনে ঝলমল করছে #আমার_হায়াতি লেখা।মনে মনে ভাবলো, বাহ আমার বউ দেখি এখন আমাকে মিস ও করে, আহা কি সৌভাগ্য আমার। মুচকি হেসে কল রিসিভ করলো,

– হ্যা বউ বলো…
– আপনার ওই ক্লিও না ফিও ওটা ছেলে না মেয়ে, আমাকে একটু বলুন তো।
– কেনো কি হয়ছে বউ। ওটা তো একটা মেয়ে।
– ওহ যাক বেচে গেলো, নাহলে আজকে ওকে আমি বাসা থেকে বেরই করে দিতাম,জানেন ও আমার কোলে শিশি করে দিয়েছে, আবার আমার হাত চেটে দিয়েছে, ছ্যাহ।
– আচ্ছা বউ রাগ করে না ও ছোট তো এর জন্য বুঝে না,তুমি খেয়েছো।
– উহু আরাবি আসলে খাবো। আর শুনুন আমি আর আরাবি কিন্তু ওয়ার্শি ব্রিজে ঘুরতে যাবো আর সন্ধ্যায় আপনি আসলে মহেরা জমিদার বাড়িতে।

– আচ্ছা ঠিক আছে পাখি।
হায়াত খুশি মনে কল কেটে দিয়ে গেটের সামনে চলে গেলো। আর আদিবের ফোনে অচেনা এক নাম্বার থেকপ কল আসলো,আদিব কিছু না ভেবেই কল রিসিভ করলো।
– কি ব্রাদার শুনলাম বিয়ে করেছিস।
আদিব কিছুটা চিন্তিত গলায় বললো,
– হ্যা করেছি আট মাসের মতো হবে, তা আপনি কে…আমি তো চিনলাম না।
– বাহ নিজের জানের জিগারকে ভুলে গেলি, এই তোর বন্ধুত্বের প্রমান।
– রাজ ! রাজ তুই এই নাম্বার মানে তুই নতুন ফোন কিনেছিস, আর এতোদিন তোর ফোন বন্ধ ছিলো যে।
– হুম আমি রাজ, তা আমাকে রেখেই বিয়ে করলি ভেরি ব্যাড সাদাদ।
– আরে ঘরোয়া ভাবে বিয়ে করতে হয়েছে, আবার অনুষ্ঠান হবে,যাইহোক ফুপি কেমন আছে আর আসবি কবে।
– সবই বুঝলাম তা আমার ভাবিকে একটু কি দেখতে পারি ?

– না তোকে দেখানো যাবে না,তুই আমার বউয়ের দিকে শেষ মেশ নজর দিবি।
– আরে ভাই তোর বউ মানে তো আমার ও বউ,আর কিছুদিন পর তো আমি আসছিই তখন দেখবো তুই কি করে আমার হাত থেকে তোর বউকে বাঁচাস।
– যাহ বেডা এমন ফান করিস না, রাখ আমি অফিসে পরে কথা হবে।
– ওকে।

এদিকে আরাবি আর হায়াত কিছুক্ষণ মুভি দেখে নিলো, এরপর দুজন আয়েশি ভঙ্গিতে সোফায় বসে গল্প শুরু করলো, হায়াতের পায়ে মশা বসলো,
– তুম পাছ আয়ে,মশা ধরছে পায়ে… আগে যদি জানতাম কয়েল জ্বালিয়ে নিতাম।
– বাহ দোস্ত কি সুন্দর কবিতা বললি, ওহ স্যরি গান বললি।
– ধুরু এটা কোনো গান নয়, আমাকে সত্যিই মশা কামড়াচ্ছে।
হায়াত আর আরাবি মিলে কিছু পিক তুলে নিলো, এর পর দুজন বোরকা পড়ে রেডি হয়ে নিলো ওয়ার্শি ব্রিজে যাওয়ার জন্য। আজ তারা ঠিক করলো রিকশাতে করে ঘুরবে,যেই কথা সেই কাজ। হায়াত আর আরাবি মিলে রিকশাতে করে ওয়ার্শি ব্রিজে আসলো, দুজন মিলে ফুচকা খাচ্ছিল,হায়াত ফুচকাওয়ালা মামাকে বলতে শুরু করলো,
– মামা ঝাল দিন, ওনেক ঝাল দিবেন।
– হ্যা মামা ওর টাতে অনেক ঝাল দিন, যাতে ও আর কখনো ঝাল খাওয়ার বায়না না ধরে।
ফুচকাওয়ালা মামা প্রচুর ঝাল দিতে শুরু করলো কিন্তু হায়াতপর কাছে নাকি তা কোনো ঝালই লাগে না, এক পর্যায়ে সব মরিচকে হায়াতকে দিলো, আর হায়াত খেয়ে ঝালে অবস্থা শেষ হয়ে গেলো,পানি পানি বলে চিৎকার করতে লাগলো।

আরাবি আশে পাশে দেখলো কোথাও পানি নেই,এদিকে দূরে থেকে গাড়িতে বসে একটা ছেলে অনেক্ক্ষণ যাবত বিষয়টা খেয়াল করছিলো, পরনের নীল কালার শার্টটা হাতা গুটিয়ে কাছে রাখা ঠান্ডা পানির বোতলটা নিয়ে সামনে এগিয়ে আসলো।
এদিকে হায়াত নেকাপ উচু করে ঝাল ঝাল বলে কান্না করছিলো,ছেলেটা এগিয়ে এসে হায়াতকে পানি দিলো হায়াত আবেশে পানি খেতে লাগলো, ছেলেটা হায়াতকে একবার পরখ করে তাকিয়ে দেখলো, হায়াতে দুটো চুড়ি, নাকো ছোট্ট ফুল নাকের ডকাটা বেশ লাল হয়ে আছে।
ছেলেটা চোখ নামিয়ে ফেললো, এমন সময় আরাবি বললো,
– জানু মুখে পানি ছিটিয়ে দে খুব ভাল্লাগবে।

ছেলেটা এবার আরাবির দিকে তাকালো, শ্যাম বর্ণের মেয়েটা, মাথায় হিজাব করা, চোখ গুলো ছোটো ছোটো দেখতে ভীষণ মায়াবী। হায়াত পানি মুখে ছিটিয়ে ছেলেটাকে বোতলটা এগিয়ে দিলো।
– ধন্যবাদ, আপনি আজকে না থাকলে আমি বোধহয় জ্ঞানই হারিয়ে ফেলতাম।
ছেলেটা মিষ্টি করে হাসলো,বাকা হেসে বোতলটা নিয়ে চলে গেলো, আরাবি আর হায়াত হা করে চেয়ে রইলো,দুইজনেই এক সাথে বলে ওঠলো,
– কেমন ছেলেরে বাবা, একটা কথাও বললো না।
দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।বিল মিটিয়ে রিকশায় ওঠে পড়লো, আদিবও টাঙ্গাইল এসে হায়াতদের জন্য দাড়িয়ে আছে, ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়লো দুজন।
আরাবি আদিবকে দেখেই মুচকি হেসে বললো,
– দুলাভাই আজকে হায়াত যা করেছে না।

আরাবির কথা শুনে হায়াত চোখ বড় বড় করে তাকালো তার দিকে, যার অর্থ আদিবকে কিছু বলিস না প্লিজ। কিন্তু বোকা আরাবি বলতে শুরু করে দিবে ঠিক তখনি আদিবের একটা কল আসে আর আদিব মুচকি হেসে কল রিসিভ করে।
হায়াত যেনো অনেক বড় ঝামেলা থেকে বেঁচে গেলো।আরাবির পিঠে একটা থাপড় দিয়ে বললো,
– এই বেডি আমি কি তোকে বলেছি ওনাকে সব বলে দিলে।
– ওহ তারমানে দুলাভাইকে এসব বলা যাবে না ?
– না পাগল।
এমন সময় আদিব এক গাল হেসে আরাবিকে বললো,
– হ্যা শালিকা বলো কি যেনো বিচার দিচ্ছিলে আমার বউয়ের নামে।
– না না কিচ্ছু না আমি এমনিই ফাজলামো করছিলাম ভাইয়া,চলুন ভেতরে চলুন।
আদিবের চোখ গেলো নেকাপ পরিহিত হায়াতের দিকে, চোখ গুলো কেমন লাল হয়ে আছে। আদিব কপাল কুচকে বললো,

– বউ চোখের এই অবস্থা কেনো, ঝাল খেয়েছো নাকি ?
– উহু গরমে আলুর ভর্তা হয়ে গিয়েছি এর জন্য।
আদিব আর আরাবি দুজনেই হায়াতের কথায় হা হয়ে গেলো,এতো শীতেও নাকি হায়াতের গরম লাগছে। আদিব দুষ্টু হেসে হায়াতের কানে ফিসফিস করে বললো,
– বউ তুমি কি এখন আদর খেতে চাচ্ছো, যে গরম লাগছে তোমার ?
আদিবের কথায় হা হয়ে গেলো হায়াত, আর এদিকে এদের কান্ড দেখে মিটি মিটি হাসছে আরাবি। আদিব একটু ঠোঁট কামড়ে হেসে আরাবিকে বললো,

আমার হায়াতি পর্ব ২৪

– শালিকা একটু ওইদিকে ঘুরে চোখ বন্ধ করো তো।
আদিবের কথা মতো আরাবি অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়ালো, আদিব হায়াতের গালে হাত দিয়ে নেকাপ একটু উঁচু করে হায়াতের গালে অধর ছুইয়ে দিলো। হায়াত লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো।

আমার হায়াতি পর্ব ২৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here