আমার হায়াতি পর্ব ৩৭

আমার হায়াতি পর্ব ৩৭
Nahar Adrita

আদিবকে শুইয়ে দিয়ে সকলে একে একে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, আর হায়াত ক্লিওকে কোলে নিয়ে ডিভানে বসে আছে। মুখ গোমরা করে ক্লিওর শরীরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে, আদিব কপাল স্লাইড করে হায়াতকে ডাকলো,
— “ বউ এদিকে এসো। ”
হায়াত আদিবের কথায় কোনো উত্তর দিলো না। আদিব এভাবে তিনবার ডাক দিলো তবুও হায়াতের কানে যেনো কোনো কথা পৌঁছালো না। আদিব চোখ বন্ধ করে জুড়ে এক ধমক দিতেই হায়াত কেঁপে ওঠে। মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে এসে আদিবের পাশে বসলো বিছানায়।
আদিব হায়াতের দিকে একটু কপাল কুচকে তাকালো,

— “ আমার কিছু হয় নি , তাকাও আমার দিকে প্লিজ হায়াত। ”
আদিবের কথা শেষ হতে না হতেই আফরা ডুকরে কেঁদে উঠে, আদিবের বুকে হালকা মাথা রেখে বললো,
— “ আপনি অনেক ব্যথা পেয়েছেন তাই না। ”
— “ না সোনা মাথায় একটু ব্যথা তাছাড়া কোনো ব্যথায় নেই। ”
— “ সত্যি ”
আদিব হায়াতের কপালে পর পর পাঁচটা চুমু দিয়ে বুকে শক্ত করে চেপে ধরলো, হায়াত পরম আবেশে আদিবের শার্টের বোতাম খুলে বুকে চুমু দিতে থাকলো, আদিব জানে হায়াত প্রচন্ড কষ্ট পেলেই এমন পাগলামি করে।
আদিব হায়াতকে নিয়ে ওভাবেই শুয়ে শুয়ে মুভি দেখতে লাগলো। হায়াত বিড়াল ছানার মতো গুটি মেরে আদিবের প্রশস্ত বুকে মাথা রেখে মুভি দেখতে লাগলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অন্যদিকে আরাবি ইউটিউবে দেখে দেখে খুব মনোযোগ সহকারে কাপড় কাটছে আর আসিফ হাতে ফিতা নিয়ে চেয়ারে বসে আছে। ইউটিউবে সুন্দর একটা অফ হোয়াইট কালার বাবুদের ফ্রক বানানোর ভিডিও চলছে। আর আরাবি সেটা দেখে দেখে কাটছে।
আসিফ এতোক্ষণ অফিসের কাজ করছিলো। আদিবের এক্সিডেন হওয়ায় সব কাজ নিজের ঘাড়ে নিয়েছে সে। প্রায় বিশ মিনিট ধরে আরাবির কান্ড দেখছে আসিফ।
—“ তুমি শিউর আমাদের মেয়ে বেবি হবে ? ”
আরাবি কাপড়ের টুকরো গুলো নিয়ে মেশিনের ওপর রাখলো, ভেঙ্গচি কেটে বললো,

— “ দেখুন মিস্টার……
— “ দেখার সুযোগ দিলে তো দেখবো। ”
আসিফের কথায় আরু গাল ফুলিয়ে বললো,
—“ এক লাইন বেশি বলেন কেনো,, আমার কথাটা আগে শেষ করতে দিন তো। ”
— “ হ্যা বলো বলো..!! ”
— “ আমাদের কুটু পাখিরা ইনশাআল্লাহ একজন মেয়ে একজন ছেলে হবে, আর নাহলে দুইটা মেয়ে হলে তো উফ কথায় নেই। ”
আসিফ একটু ভাব নিয়ে বললো,
— “ আর যদি আমাদের দু’টোই আব্বাজান হয় ? ”
—“ না না আমাদের মেয়ে হবে, আমার কতো স্বপ্ন..!! ”
—“ আরু একটা চুমু খাও তো, কাজ পরে করবে !! ”

দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে আরও চার মাস………
রাত প্রায় এগারোটা চল্লিশ, হায়াতের কিছুতেই ঘুম আসছে না, আর আদিব ক্লান্ত শরীর নিয়ে সেই কখন ঘুমিয়ে পরেছে। এতো ভারী পেট নিয়ে হায়াত এক পাশ হয়ে শুয়ে আছে।
এই লাস্টের দিকে একটু নড়াচড়া করতেও ভয় লাগে তার। সাত মাসেই পেট-টা অনেকটাই বড় হয়ে গিয়েছে, টুইন বেবির আগমন ঘটবে আর দুইটা মাস গেলেই।
হায়াত আস্তেধীরে ওঠে বসলো। পেটে হাত দিয়ে বিছানায় থেকে ওঠলো, মনে মনে ভাবলো একটু আচার খেলে মন্দ হয় না, হায়াতের মা আলিয়া বেগম এসেছিলো এক সপ্তাহ আগে, সে মেয়ের জন্য নিজ হাতে নানান রকমের আচার বানিয়ে এনেছে।

হায়াত এখন খুব কমই সিড়ি দিয়ে ওঠানামা করে,বাড়ির সকলের কড়া আদেশ এতোবার নিচে ওঠানামা করা যাবে না। চার মাস আগে রাকিব চৌধুরী এসেছিলো আদিবকে দেখতে। আর হায়াতকে প্রাণ ভরে দোয়া করে গিয়েছে, হায়াতের পছন্দের সব খাবারও কিনে দিয়ে গিয়েছেন।
হায়াত আস্তেধীরে খুব সাবধানে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলো, আর ঠিক তখনি আঁতকে উঠল দরজা খোলা দেখে, ভয়ে ঢোক গিলে এগোতে থাকলো। দরজার সামনে গিয়ে দেখলো কেউ নেই। কপাল কুঁচকে আরেকটু এগোতেই শুনতে পেলো কারো ফিসফিস করে কথা বলা।
বাগানের কাছটায় যেতেই দেখলো মিনহাজা একটা ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে আপত্তিকর কাজ করছে, হায়াত নিমিষেই চোখ বন্ধ করে ফেললো। মিনহাজা ফিসফিস করে বললো,

— “ আমাকে নিয়ে কবে পালিয়ে যাবে ইমন । ”
— “ আরেকটু অপেক্ষা করো মিনু..! ”
হায়াত যেনো পাথর হয়ে গেলো, এরা কি বলছে এসব। মিনহাজা কেনোই বা পালিয়ে যাওয়ার কথা বলছে। হায়াত আর চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে পারলো না। জোরে এক ধমক স্বরে বললো,
—“ কি হচ্ছে এখানে ? ”
মিনহাজা যেনো পরক্ষণেই আঁতকে উঠলো,দুইজনেই ভয়ে দুই দিকে সরে আসলো, হায়াতের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বললো,
—“ বিশ্বাস করো ভাব্ ভাবি, আমরা তো জাস্ট…….
ঠাসসসসস্………….★

ব্যাস !! মিনহাজা আর কিছু বলার আগেই বাম গালে সজোরে এক থাপ্পড় দিলো হায়াত, হায়াত এভাবে মারবে তা কাশমিন কালেও ভাবে নি মিনহাজা। রাগে দুঃখে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,
— “ তুমি আমাকে কোন সাহসে থাপ্পড় মারলে, এভাবে অভিভাবক গিরি দেখাতে এসেছো। ”
ইমন এবার সামনে এগিয়ে আসলো, হায়াতের দিকে তাকিয়ে দাঁত কিরমির করে বললো,
— “ আমার মিনুকে মারলে কেনো তুমি ? তুমি কে ওর গায়ে হাত তোলার ? ”
— “ আমি ওর ভাইয়ের স্ত্রী, ও যদি ভুল পথে হাটঁতে শুরু করে তাহলে অবশ্যই শাষণ করবো, আর আজ এই চড়টা ওর প্রাপ্য ছিল, সেদিন তার মানে আমি ভুল দেখি নি, মিনহাজা তুমি সত্যিই বাইরে এসেছিলে, লজ্জা করে না তোমার একটা গা’ঞ্জা খোর ছেলের সাথে এসব করে বেড়াচ্ছো।
হায়াতের হালকা শ্বাস কষ্ট হতে শুরু করলো, বড় করে একটা নিশ্বাস ফুঁকে আবারও বললো,,
আর জিবন নাকি ইমন তুমি সেই না, যাকে প্রতিদিন রাস্তায় মাস্তানি করতে দেখি…..আর কি বললে
❝ আমার মিনুকে মারলে কেন ❞ ও তোমার মিনু কিভাবে হলো, তুমি তো কয়েক মাস আগেও দেখলাম অন্য একটা মেয়ের সাথে ন’ষ্টা…..
এবার মিনহাজা চিৎকার করে ওঠলো, রাগে গিরগির করতে করতে হায়াতের গাল চেপে ধরলো,

—“ বেশ অনেকক্ষণ ধরেই তোমার ফাউল মার্কা কথা শুনে যাচ্ছি,,
—“ মিন্ মিনহাজা ছাড়ো আমাকে, আব্ আহ্ ব্যথা লাগছে……..
হায়াতের গাল বেয়ে পানি পরলো, মিনহাজা মাটিতে একটু থুতু ফেললো,
— “ তুমি আমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে কথা বলার আগে নিজের চরিত্র ঠিক করে নাও। ”
ইমন পরিবেশ অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে বলে অযথা একটা হাসি ঝুলিয়ে বললো,
—“ বেবি আমি চলে যাচ্ছি, তুমি এই মেয়ের সাথে হিসাব নিকাশ করো কেমন। ”
মিনহাজা মাথা নাড়ালো, হায়াত কপাল কুঁচকে মিনহাজার হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিলো,,
—“ মানে কি, আমার চরিত্র এসব কি বলছো তুমি ? আর এটা কোন ধরনের ব্যবহার মিনহাজা ? ”
—“ বাহ্ , আমারটা কোন ধরনের ব্যবহার তাই না, আর তুমি যে আমাকে চড় মারলে তার বেলায় ? ”
হায়াত এবার গর্জে উঠে,
—“ আমার চরিত্র নিয়ে তুমি কথা বললে কোন সাহসে,, তুমি এই পর্যন্ত কোনোদিন আমাকে খারাপ কাজ করতে দেখেছো। ”

— “ হাহ্ খারাপ কাজ ? অন্যের বাচ্চা পেটে নিয়ে ঘুরা এটা কি খুব ভালো পবিত্র কাজ ? ”
হায়াতের যেনো পরক্ষণেই মাথা ঘুরে গেলো, মিনহাজা এসব কি বলছে, ” অন্যের বাচ্চা পেটে নিয়ে ঘুরা ” এটার মানে কি, এটা তো আমার আর আদিব সন্তান।
—“ মিব্ মিনহাজা কথা স্পষ্ট করে বলো, অন্যের বাচ্চা মানে তুব্ তুমি কি বুঝাতে চাইছো ? ”
—“ থাক রুমে যাও ভাবি, পুরোনো কাশন্দি ঘেটে লাভ নেই। ”
— “ না মিনহাজা, আমাকে সবটা খুলে তোমাকে বলতেই হবে, প্লিজ বলো তোমার এই কথার মানে কি ? ”
মিনহাজা দাঁত কিরমির করে বললো,
—“ মানেটা খুব পরিষ্কার,, এই বাচ্চা তোমার আর আদিব ভাইয়ার না। ”
হায়াত অবাক হয়ে তাকালো মিনহাজার দিকে, রাগে গা দিয়ে যেনো আগুনের ঝলকানি বের হচ্ছে, তবুও স্থির থেকে মিনহাজার সব কথা শুনতে লাগলো।

—“ আসলে এই বাচ্চার বাবা তো রাজ ভাইয়া, সাত মাস আগে ছোট ভাইয়া আর আরাবি ভাবির যখন বিয়ে হলো, সেদিন রাতে তুমি আর রাজ ভাইয়া এক রুমে ছিলে, যদিও তোমাকে নেশা করানো হয়েছিলো আর তোমার কিছু মনে নেই।
তবে বাচ্চাটা কিন্তু রাজ ভাইয়েরই, শুনতে খারাপ লাগলেও তুমি একজন
ন’ষ্ট মহিলা। আর তোমার পেটে অন্যের সন্তান বড় হচ্ছে, আমার বাড়ির মানুষ ভালো দেখে তোমাকে এখনো কিছুই বলে নি। হয়তো বাচ্চা হলেই তোমাকে বের করে দিবে। যাইহোক কথা গুলো বলার আমার কোনো ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু তুমি বাধ্য করলে, আর আমার কথা তোমার বিশ্বাস নাই হতে পারে এই নিউসটা দেখো।
এরপর মিনহাজা ইউটিউবে একটা নিউস দেখালো যা দেখে হায়াত পাথর হয়ে গেলো, ঠাস করে মাটিতে বসে পরলো। মিনহাজা বাকা হেসে বললো,

— “ খুব তো এসেছিলে আমার বিষয় নিয়ে নাক গলাতে, এখন দেখো দিন শেষে কার চরিত্র কেমন। ”
হায়াতকে ফেলে রেখেই মিনহাজা হনহন করে ভেতরে চলে গেলো। আর হায়াত নিজেকে যেনো বিশ্বাস-ই করতে পারছে না, কাঁপা কাঁপা হাতে পেটে আলতো করে চেপে ধরলো,
—“ তার মানে সেদিন আমার আর ওনার মধ্যে কিছু হয়নি , রাজের সাথে আব্ আমি ই’ন্টিমেট হয়েছিলাম।
আর এই বাচ্চা আমর আর আদির না, আব্ আমি এতো খারাপ, আমার সাথে এসব হলো আর আমি টের পেলাম না, আব্ আমি তো কলঙ্কিত হয়ে গিয়েছি। এই সন্তান গুলো আমাদের না, আমার আদি এই সন্তানের বাবা না।
এই বলেই হায়াত ডুকরে কেঁদে উঠে, বিরবির করে বলতে লাগলো…… এই সন্তানের বাবা আদি না, আমার আদি বাবা না বাচ্চাদের, এগুলো আমার গর্ভের অভিশাপ, আমি কলঙ্কিনী নারী, আমি পাপ করেছি, আমি নিজেকে হেফাজত করতে পারি নি।
হায়াত এভাবেই কান্না করতে করতে বেজে গেলো রাত বারোটা বিশ। হায়াতের নাক দিয়ে রক্ত পরতে লাগলো। মাথাটা প্রচুর ঘুরতে লাগলো। অনেক কষ্টে পেট ধরে ওঠে দাড়ালো, বিরবির করে ভেতরে প্রবেশ করে গেট লাগিয়ে দিলো, সিড়ি দিয়ে ওপরে ওঠতে লাগলো।

অন্যদিকে আদিবের হঠাৎ করেই ঘুমের মধ্যে কেমন যেনো হতে শুরু করলো। কাশতে কাশতে ওঠে বসে পরলো।কাছেই রাখা জগ থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে ওপাশে তাকাতেই আঁতকে উঠল, হায়াত পাশে নেই আর দরজাও খোলা।
সাত পাঁচ না ভেবে লাফিয়ে বিছানায় থেকে ওঠে গেলো। রুমের লাইট অন করলো, নাহ ওয়াশরুমেও নেই, আদিবের যেনো মাথা কাজ করতে বন্ধ হয়ে গেলো।
দৌড়ে রুম থেকে বের হতেই দেখলো হায়াত কিছু একটা বলতে বলতে রুমের দিকে আসছে, আদিব যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল। লম্বা একটা নিশ্বাস ফুঁকে দরজার সামনে দাড়ালো, হায়াত সামনে আসতেই আদিব যেনো পুনরায় আঁতকে উঠল।
হায়াতের নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে, চোখ মুখ লাল। আদিব তাড়াতাড়ি হায়াতকে ধরে নিলো,আরেকটু হলেই হায়াত পরে যেতো। হাত দিয়ে নাকের রক্ত মুছে দিয়ে ডিভানে বসিয়ে দিলো, কিন্তু হায়াত তখনো মৃদু আওয়াজে কি যেনো বলছে।

—“ কি হয়েছে লক্ষি, আমাকে বলো কোথায় গিয়েছিলে। নাক দিয়ে এতো রক্ত পরছে কেনো ? ”
হায়াতের এবার হুস ফিরলো,, মনে মনে ভাবলো এই কল’ঙ্ক নিয়ে আমি কেনো আদিবের এতো কাছে রয়েছি,
আমাকে দূরে থাকতে হবে, আমি তো ওনার যোগ্য নই,আমি একজন খারাপ স্ত্রী।
এই ভেবেই হায়াত আদিবের থেকে দূরে গেলো, আদিব বুঝতে পারলো, হয়তো হায়াতের ভালো লাগছে না, প্রেগন্যান্সির সময় এমন মুড সুইং হয়। আদিব আলতো করে আরেকটু সরে বসলো৷
—“ জান ডাক্তার ডাকবো। ”
হায়াতের চোখ থেকে আপনাআপনিই পানি গড়িয়ে পরলো, ঠোঁট চেপে কান্না আটকিয়ে বললো,
—“ আমি ঘুমাবো, লাইট অফ করে দিন,কোনো কষ্ট হচ্ছে না আমার। ”
আদিব আর কোনো কথা বলে লাইট অফ করে দিলো। আর হায়াত বিছানায় শুয়ে পরলো, মনে মনে ঠিক করলো কালকেই আরাবির মায়ের সাথে বেবি নষ্ট করে ফেলা নিয়ে কথা বলবে।

সকাল সাতটা,,,,
হায়াত সাড়া রাত ঘুমাইনি বললেই চলে, বিছানা থেকে ওঠে পেটে হাত দিতেই মনে পরলো এগুলো তার গর্ভের কলঙ্ক। তাচ্ছিল্যের এক হাসি ঝুলিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।
আদিব আজ ছয়টার দিকেই রওনা হয়েছে অফিসের উদ্দেশ্য। আমেরিকা থেকে একজন কোম্পানির মিটিংয়ে আসবে সেই জন্যই তার আগে যাওয়া, এয়ারপোর্ট থেকে মি. ইবিডিয়ান – কে রিসিভ করে সোজা অফিস যাবে।
আরাবি গুন গুন করতে করতে হায়াতের রুমে আসলো। আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল খোপা করতে লাগলো, ঠিক তখনি ওয়াশরুম থেকে বের হলো হায়াত। মুখ ভার করেই প্রশ্ন করলো,
—“ ওনি অফিস গিয়েছেন কখন জানিস ? ”
—“ হ্যা সকাল ছয়টায় গিয়েছে, কেন তুই জানিস না জানু !! ”
হায়াত স্মিথ হেসে মনে মনে ভাবলো, আমাকে বলে যাবে কেনো, আমি তো পাপ কাজ করেছি, মানুষ খারাপ বলবে তাই বাচ্চা গুলো হওয়া অব্দি ওনি সহ প্রত্যেকে আমার সাথে নাটক করছে, আল্লাহ গো আমাকে মুক্তি দাও, আমার যে আর সহ্য হচ্ছে না।

….এই জানু, জানুরেএএএএএএ……
আরাবির ডাকে চমকে ওঠে হায়াত, মুচকি হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,
—“ আচ্ছা আরু আন্টি তো আজকে আসবে তাইনা…. আমি চাচ্ছিলাম আমার প্রেগ্ন্যাসির ব্যাপারে আন্টির সাথে একটু পার্সোনালি কথা বলতে, কখন আসবে আন্টি ? ”
—“ আম্মু হয়তো সকাল সকালই আসবে, আবার চেম্বারে যেতে হবে তো, আচ্ছা তোকে এতো মনমরা লাগছে কেনো হায়াত, কি হয়েছে বেস্টুকেও বলা যায় না বুঝি..! ”
হায়াত একটু মৃদু আওয়াজে বললো,
—“ না না আমার আবার কি হবে, আসলে পেটটা বড় হয়েছে তো, তাই একটু অস্বস্তি হচ্ছে। ”
আরাবি হায়াতকে আস্তেধীরে ডিভানে বসিয়ে দিয়ে মুচকি হপসে বললো,
—“ তবে যায় বলিস জানু,তোকে না খুব সুন্দর লাগে, মানে তোর চেহারা আগের থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, কি সুন্দর গলুমলু হয়েছিস। ”
হায়াত আগের মতোই মুখ ভার করে বসে আছে বলে আরু হায়াতের গালে চুমু দিয়ে বললো,

— “ তোর কি খুব খারাপ লাগছে আজ, তাহলে শুয়ে থাক আমি আম্মু আসলে তোর রুমে পাঠিয়ে দিবো।”
হায়াত কিছু না বলে রোবটের মতো ডিভানেই শুয়ে পরলো।
আটটা বেজে পঁচিশ মিনিট, একটু আগেই রোজি খালা হায়াতের খাবার ওপরে দিয়ে গিয়েছে। হায়াত না খেয়ে ওভাবেই শুইয়ে ছিলো, হঠাৎ করে দরজা খোলার শব্দ পেয়ে হায়াত ওঠে বসলো। মিসেস আফসানা (নাম ভুলে গিয়েছি) মুচকি হেসে ভেতরে ঢুকতেই হায়াত তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
মিসেস আফসানা একটু চমকে ওঠলো হায়াতের কান্ড দেখে, তবুও কিছু বললো না, হায়াত তাড়াতাড়ি এসে মিসেস আফসানাকে ডিভানে বসিয়ে নিজেও বসলো। এরপর কান্নায় ভেঙে পরলো।
—“ কি হয়েছে হায়াত, কান্না করছো কেন,আন্টিকে বলো। ”
হায়াতের চোখ মুছে দিলেন তিনি। হায়াত পাশে রাখা গ্লাস থেকে ঢকঢক করে সবটা পানি খেয়ে বললো,
—“ আন্টি তুমি কি আমাকে এমন ঔষধ দিতে পারবে, যেটা খেলেই বাচ্চা গুলো নষ্ট হয়ে যাবে৷ ”

হায়াতের কথায় মিসেস আফসানা আশ্চর্যের সপ্তম আকাশ থেকে পরলেন যেনো। হা হয়ে গেলেন হায়াতের কথায়।
—“ কি বলছো তুমি এসব,পাগল হয়েছে ? সাত মাসের প্রেগন্যান্ট অবস্থায় তুমি এমন কথা বলছো ? ”
—“ তারমানে ওদেরকে আমি নষ্ট করতে পারবো না,ওরা জীবিত থাকবে। ”
হায়াতের কথায় কেঁপে ওঠে মিসেস আফসানা। হায়াতের মতো মেয়ের মুখে এসব কথা শুনবে তা কল্পনাও করতে পারেন নি তিনি।

—“ ওয়েট ওয়েট ! তোমার ফোনটা আমাকে দাও, এসব বেয়াদবি কথা আদিবকে জানাতে হবে তো। ”
আদিবের নাম শুনতেই হায়াত একটু ভয় পেয়ে গেলো। চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নিতে লাগলো।
—“ না না আব্ আমি বাচ্চার ক্ষতি করবো না আন্টি, আপনি আদিকে বলবেন না ! ”
মিসেস আফসানা হতবাক হয়ে তারিয়ে রইলো হায়াতের দিকে,
—“ শুনো হায়াত, তোমার এইসময় অনেক অস্বস্তি হয় তা জানি, তবে এমন কথা আর মুখেও আনবে না কেমন। নেক্ট টাইম আমি যেনো আর এসব না শুনি। ভুলে যেও না তুমি ওদের মা। আমি আসি কেমন সময় কম চেম্বারে যেতে হবে। ”
❝ আমি ওদের মা, হ্যা সেই তো ওরা আমার গর্ভের ক’লঙ্ক,আমি আদির অযোগ্য ❞

হায়াত অঝোরে কান্না করছে আজ সাতদিন হলো, আদিব কি করবে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না,কাছে গেলেই বলে চোখের সামনে থেকে সরুন ।
এই সময় ওকে বেশি জোড়াজুড়িও করা যাবে না,,সাত মাসের প্রেগন্যান্ট অবস্থায়ও ফ্লোরে বসে পাগলের মতো কান্না করছে পেট ধরে। আদিব অফিস থেকে কেবল আসলো, প্রতিদিনই বাড়িতে আসলেই হায়াতকে এভাবে কান্না করতে দেখে।
বাড়ির সবাইকে জানালে তারা বলে এটা নাকি মুড সুইং, কান্না আসলে নাকি কান্না করতে দিতে হয়, এর জন্য আদিবও এতোদিন কিছু বলে নি, কিন্তু আজ প্রায় এক ঘন্টারও বেশি হবে, আদিব অফিস থেকে এসে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।
আর হায়াত….. আল্লাহ আমি জঘন্য কাজ করেছি, আমাকে মাফ করে দাও এসব আহাজারি করে কান্না করছে। এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ হায়াত জুড়ে জুড়ে ফ্লোরে মাথায় আঘাত করতে লাগলো, আদিব ছোটে এসে হায়াতকে থামালো।
হায়াত হাঁপিয়ে গিয়ে আদিবের বুকে মাথা রেখে জুড়ে জুড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে, আদিব হায়াতের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

—“ কোথায় কষ্ট হচ্ছে, কোথায় ব্যথা করছে বলো জান, আমি ঔষধ নিয়ে আসি ? ”
হায়াত আবারও কান্না করে দিল,
—“আত্নার ব্যথা ঔষধে সারানো যায় না। ”
—“আমি জানি না তোমার কি নিয়ে এতো আহাজারি, তবে তুমি আমাকে নিরদ্বিধায় বলতে পারো, আমি তোমার জন্য দুনিয়ার সকল কষ্ট মুছে দিবো, তুমি শুধু একবার বলো।
হায়াত আদিবের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো,
—“নামাজ পড়ে আমার জন্য একটু দোয়া করবেন। ”
আদিবের ভেতরটা কেমন যেনো ছ্যাত করে ওঠলো, কিছু না বলে ছুটে গেলো ওয়াশরুমে, এরপর ওযু করে এসে নামাজ পড়তে বসে পরলো।
নামাজ শেষ করে হায়াতের সাড়া শরীরে দোয়া করে ফু দিলো আদিব। হায়াত চুপচাপ আদিবের দিকে তাকিয়ে রইলো।
রাত এগারোটা চল্লিশ। আরাবি চিন্তিত মুখে আসিফের দিকে তাকালো,

আমার হায়াতি পর্ব ৩৬

—“ আসিফ আপনার কি মনে হচ্ছে না, হায়াত কিছুদিন ধরে অস্বাভাবিক ব্যাবহার করছে। ”
আসিফ ল্যাপটপ সোফার ওপর রেখে কফি হাতে নিল।
—“ হ্যা হায়াত একটু চুপচাপ থাকে এখন আগের তুলনায়, তুমি একটু জানার চেষ্টা করবে তো। ”
—“ আমাকে বললে তো, আমি কি কম চেষ্টা করেছি নাকি। ”
আরাবি আর কোনো কথা বাড়ালো না, হায়াতের চিন্তায় অভাবেই শুয়ে পরলো। না জানি সামনে কি অপেক্ষা করছে,, হায়াতের মতো চঞ্চল স্বভাবের মেয়েটার এমন চুপচাপ হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো না। দেখা যাক সামনে কি আছে…….

আমার হায়াতি পর্ব ৩৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here