আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব ১৬

আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব ১৬
ইয়াসমিন খন্দকার

আয়ু্শ যে ঈশিতাকে চায়না এই কথাটা ঈশিতা মেনে নিতে পারছে না। ঈশিতার মুখে আধার নেমে এলো। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো নোনাজল। অভিমান ভরা কন্ঠে ঈশিতা বলে উঠল,”আমার সাথে এমন করছেন কেন আয়ুশ? এক সপ্তাহ থেকে আমার সাথে কোন কথা বলছেন না। আমাকে এড়িয়ে চলছেন। আজ ভেবেছিলাম আমাকে দেখে ভীষণ খুশি হবেন কিন্তু আপনি এমন ব্যবহার করছেন। আমি কি জানতে পারি আমার দোষটা কোথায়?”

আয়ুশ নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টায় রত হয়। ধীর গলায় বলে,”আমি কোন কথা বাড়াতে চাইছি না। তুমি যাও এখান থেকে। তোমার উপস্থিতি আমার সহ্য হচ্ছে না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“যাবো না, আমি। এখানেই দাঁড়িয়ে থাকব।”
আয়ুশ রেগে দরজা খুলে বের হয়। ঈশিতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঈশিতার হাত ধরে তাকে দূরে নিয়ে গিয়ে বলে,”তোমায় আমি বলেছিলাম না, তোমায় আর দেশে ফিরতে হবে না। তাহলে কেন ফিরলে তুমি? আমাকে শান্তিতে থাকতে দেখে তোমার ভালো লাগছিল না বুঝি? এই জন্য আমার লাইফটা হেল করতে চলে এসেছ।”
“আপনি এমন ভাবে কথা বলছেন কেন আয়ুশ?”

“তুমি জানোনা কিছু? আর কত নাটক করবে তুমি? পাঁচ বছর ধরে আমার সাথে অনেক নাটক করেছ। আমি বোকা ছিলাম তাই তোমার নাটকগুলো সত্য ভেবেছিলাম তবে এখন আমার চোখ খুলে গেছে। তোমায় আর নিজের ত্রীসীমানায় দেখতে ইচ্ছা করছে না। তোমায় স্পর্শ করতেও আমার ঘৃণা লাগছে বিশ্বাস করো। যাইহোক, তুমি এসেছ এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। আইনত এবং সামাজিক মতে তুমি এখনো আমার স্ত্রী। এই সম্পর্কটার জন্যই তোমার এখনো অধিকার আছে আমার জীবনে। তবে এই অধিকার আর থাকবে না। এবার আমি তোমাকেও মুক্তি দেব আর নিজেও এই ছেলেখেলার বিয়ে থেকে মুক্তি পাবো। নিজের জীবন নতুন করে শুরু করতে পারব।”
“এসব কি যা তা কথা বলছেন আপনি আয়ুশ? কেন করছেন এমন?”

আয়ুশ ঈশিতার কথার কোন উত্তর না দিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। ঈশিতা আয়ুশকে ডাকতে থাকে কিন্তু সে কোন সাড়া দেয় না। ঈশিতা সেখানে বসেই কাঁদতে থাকে। আয়ুশ দূর থেকে ঈশিতাকে কাঁদতে দেখে। তার ইচ্ছা হয় কাছে এসে ঈশিতাকে জড়িয়ে ধরে তাকে সামলাতে কিন্তু সে নিজেকে দমিয়ে রাখে। আয়ুশ দ্রুত নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে সেও ওখানেই বসে পড়ে। এতক্ষণ অনেক কষ্টে নিজের কান্না আটকে রেখেছিল সে। তবে এবার আর পারলো না। আয়ুশ এবার নিজেও কান্নায় ভেঙে পড়লো। ঈশিতার উদ্দ্যেশ্যে বলল,”কেন ঈশিতা কেন? এভাবে ঠকালে কেন আমায়? আমি তো ৫ বছর তোমার অপেক্ষায় বসেছিলাম। তোমার জন্য কত স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম। আর তুমি এভাবে আমার সব স্বপ্ন ভেঙে দিলে! কি কমতি ছিল আমার মাঝে যে এভাবে তুমি আমায় ধোকা দিলে। তোমার ঐ চোখের জলে আমি আর ভুলবো না আর না।”

টিনা, তামিমের মামাতো বোন। লন্ডনের একটা বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করছে সে বর্তমানে। হঠাৎ তার ফোনে কাঙ্খিত নম্বর থেকে ফোন এলো। টিনা হাস্যজ্বল মুখে ফোনটা রিসিভ করলো। রিসিভ করেই বলল,”হ্যালো, ব্রো। কেমন আছ?”
তামিম বলল,”আই এম ফাইন। তোর খবর বল?”
“আমার খবর জানাবো নাকি তুমি যেই খবর জানতে কল দিয়েছ সেসব জানাব?”
“তুই তো বুদ্ধিমতী। তাই আমাকে নিশ্চয়ই তোকে কিছু বুঝিয়ে দিতে হবে না।”

“হা হা হা। যাইহোক, মিশন কমপ্লিট। তোমার কথা মতো আমি ঈশিতার বর আয়ুশের ফোনে তোমার আর ঈশিতার কিছু ঘনিষ্ঠ ছবি পাঠিয়ে দিয়েছি। সাথে তোমাদের ঐ ড্রামার পার্টটাও।”
তামিম মৃদু হাসে। এক বছর আগে সে যখন লন্ডন গেছিল তখন বাসায় একটা অনুষ্ঠানে তারা ড্রামায় অভিনয় করেছিল। সেখানে ঈশিতা ছিল নায়িকা এবং সে নায়ক। সেসবই টিনা রেকর্ড করে রেখছিল। আর এখন সুযোগ বুঝে সেসব ব্যবহার করেই আয়ুশ ও ঈশিতার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করছে তারা দুজনে মিলে।

টিনা তামিমকে বলে,”তবে আমি বুঝতে পারছি না ব্রো, তুমি ঐ ঈশিতার মধ্যে এমন কি পেলে যে একটা বিবাহিতা মেয়ের সংসার ভাঙতে উঠেপড়ে লেগেছ। আমি এসব করতাম না কিন্তু তুমি এমন ভাবে অনুরোধ করলে যে না করে থাকতে পারলাম না। মিস্টার আয়ুশ তালুকদারের সামনে সবটা এমনভাবে পোট্রে করলাম যে উনি মনে করছেন তুমি আর ঈশিতা মিলে ওনাকে ঠকাচ্ছ। ঈশিতা তোমার সাথে কোন সম্পর্কে আছে।”

“ঈশিতাকে আমি সেই যবে প্রথম দেখেছি তখন থেকে পছন্দ করি। কিন্তু ও তখন অনেক ছোট ছিল জন্য নিজের মনের কথা বলতে পারিনি। ওকে আমি এতোটা ভালোবেসেছি যে ও ছাড়া অন্য আর কারো দিকে কখনো নজর দেইনি আমি। যদি ঐ আয়ুশ লোকটা মাঝখানে চলে না আসত তাহলে এতদিনে আমি ঈশিতাকে নিজের করে নিতাম। কিন্তু….যাইহোক, এখনো সময় আছে। যেকোন মূল্যেই আমি ঈশিতাকে নিজের করে নেব। তার জন্য যা করতে হয় করব।”

টিনা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,”আমিও যথাসাধ্য তোমায় সাহায্য করব।”
বলেই টিনা ফোন রেখে দেয়। ফোন রেখেই বলে,”ঈশিতা তুমি বড্ড লাকি যে তামিম ব্রো তোমায় ভালোবাসে। আমার মনে হয়, তামিম ব্রো এর থেকে ভালো তোমাকে কেউ ভালোবাসতে পারবে না। তাই আমি নিজের কাজ নিয়ে একটুও আফসোস করছি না। বরং আমি খুশি হবো যদি তোমার সংসার ভেঙে যায় আর তামিম ব্রো তোমাকে পায়। বিনিময়ে আমিও তো তামিম ব্রো এর বেস্টফ্রেন্ড নাহিদকে পাবো। তামিম ব্রো তো বলেছে তোমার সংসারটা ভাঙতে পারলেই নাহিদের সাথে আমার সেটিং করে দিবে। তার জন্য এতটুকু তো আমি করতেই পারি।”
বলেই টিনা নিজের ফোনে নাহিদের একটা ছবি বের করে শুয়ে পড়লো বিছানায়।

ঈশিতা জাহানারা বেগমের রুমে এসে বসেছে। জাহানারা বেগম ঈশিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,”আমি জানি না আয়ুশ তোমার সাথে এমন কেন করছে। তবে তুমি কোন চিন্তা করবে না। দেখবা সব ঠিক হয়ে যাবে। ও হয়তো একটু অভিমান করেছে। এতগুলো বছর পর তুমি ফিরলা আর বাড়িতে এই পরিস্থিতি..যাইহোক কতক্ষণ আর না খেয়ে থাকবে। চলো খেয়ে নেবে।”

“আমার খেতে ইচ্ছা করছে না মা।”
“না বললে তো আমি শুনব না। এসো আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।”
বলেই জাহানারা বেগম ভাত নিয়ে এসে ঈশিতাকে খাইয়ে দেন। ঈশিতা যেন জাহানারা বেগমের মাঝে নিজের মাকে খুঁজে পায়। জাহানারা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমার জন্যই সবকিছু এমন হয়ে গেছে তাই না, মা? আমি যদি বিদেশে না যেতাম তাহলে আপনার ছেলে এভাবে আমার উপর রাগ করে থাকত না। আমার শ্বশুর মশাই, দাদি শাশুড়ী সবার মন আমি জয় করতে পারতাম।”

“এখন এসব বলে তো কোন লাভ নেই বৌমা। আগে যা হয়েছে তা অতীত, তা আমরা বদলাতে পারব না। কিন্তু এখন যা হবে তা আমাদের হাতেই রয়েছে। তুমি এখন চেষ্টা করো নিজের স্বামীর মন জয় করার, এই বাড়িতে নিজের অবস্থানটা শক্ত করার।”
ঈশিতা মাথা নাড়ায়। জাহানারা বেগম বলেন,”আয়ুশ তোমার উপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারবে না। তুমি শুধু ক্যারিয়ার নিয়ে আর এত না ভেবে সংসারে মন দাও।”

আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব ১৫

ঈশিতা বললো,”আমি আর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছি না। আমি এখন শুধু আমার স্বামী-সংসার নিয়ে ভাবছি। আগে নিজের স্বামী-সংসার ঠিক করব। তারপর ক্যারিয়ার। আমি জানি না, আয়ুশের কি হয়েছে। তবে আমি ওর সব অভিমান, সব রাগ মুছে দেব।”
“এটাই তো চাই।”

আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব ১৭