আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব ২১

আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব ২১
ইয়াসমিন খন্দকার

“আমি ঐশীকে বিয়ে করতে চাই।”
নাহিদের এমন প্রস্তাব শুনে জাহানারা বেগম হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। তার পাশে বসা ঈশিতা অবশ্য বেশ স্বাভাবিক। কারণ তামিম ভাই আগেই তাকে এই ব্যাপারটা বলেছিল। নাহিদের বাবা জাহাঙ্গীর আলম নিজের বোন জাহানারাকে বলেন,”তুই তো জানিস,আমার ছেলে এখন একজন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার। আমরা অনেক দিন থেকেই ওর বিয়ের ব্যাপারে ভাবছি। ওকে এই ব্যাপারে জানাতেই ও বলল, ও ঐশীকে পছন্দ করে এবং তাকেই বিয়ে করতে চায়৷ আর তুই তো জানিস, আমি ছোটবেলা থেকে নিজের ছেলের কোন চাওয়াই অপূর্ণ রাখিনি। এক্ষেত্রেও তার ব্যতয় ঘটবে না। তাই আমি চলে এলাম ঐশীর জন্য নিজের ছেলের প্রস্তাব নিয়ে। আশা করি, তোর শ্বশুর বাড়ির কারো কোন সমস্যা হবে না।”

জাহানারা বেগম বলে ওঠেন,”সব ঠিক আছে কিন্তু ঐশীর পায়ে যে..”
নাহিদের মা নাজমা বেগম বলেন,”আমিও শুরুতে এটা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলাম জাহানারা। কিন্তু আপনার ভাতিজা তো জানিয়েই দিয়েছে এই ব্যাপারে সে কোন কথা শুনবে না। ও তো বলেই দিয়েছে ঐশীকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না। আর এমনিতেও বিয়ে করবে ওরা, সংসারটাও ওরাই করবে। তাহলে ওদের যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে আমাদের আর কিসের আপত্তি?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

জাহানারা বেগম আর কিছু বলতে পারলেন না। তবে তিনি এই প্রস্তাবে মোটেই রাজি হন নি। নেহাতই নিজের বড় ভাই-ভাবি বড় মুখ করে এসেছেন তাই। নাহলে ঐশীর সাথে নিজের ভাতিজার বিয়ের কথা তিনি ভাবতেও পারেন না। এমন সময় আলতাফ তালুকদারও উপর থেকে নিচে নেমে এসে ড্রয়িংরুমে এলেন। তাকে দেখেই জাহাঙ্গীর আলম সালাম বিনিময় করলেন। আলতাফ তালুকদার সোফায় বসে বলে উঠলেন,”কেমন আছেন ভাইয়া?”
জাহাঙ্গীর আলম হেসে বললেন,”আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?”

“আমিও ভালোই আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি। যাইহোক, এতদিন পর এলে, আজকে কিন্তু থেকে যেতে হবে।”
“থাকার জন্য তো আসিনি আলতাফ। আমি আসলে এখানে একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।”
“প্রস্তাব?! কিসের প্রস্তাব?”
জাহাঙ্গীর আলম সহাস্যে বলেন,”আমার ছেলে নাহিদের অনেক পছন্দ হয়েছে আপনার ভাইঝি ঐশীকে। ও ঐশীকে বিয়ে করতে চায়। সেটারই সম্মন্ধ নিয়ে এলাম। আপনার এতে কোন আপত্তি নেই তো?”
আলতাফ তালুকদার প্রস্তাবটা শুনে ভীষণ খুশি হলেন।

“আপত্তি থাকতে যাবে কেন ভাইয়া? এটা তো অনেক ভালো প্রস্তাব। নাহিদকে তো আমরা ছোট বেলা থেকে দেখছি একদম সোনার টুকরো ছেলে। কেউ ওর নামে বদনাম করতে পারবে না, নিজের যোগ্যতায় আজ সে প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার। এমন ছেলেই তো খুঁজছিলাম আমাদের ঐশীর জন্য।”
“বাহ, তাহলে তো হয়েই গেলো। তোমার যখন কোন আপত্তি নেই তাহলে কথা বাড়াই?”
“আসলে ভাইয়া, আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে আম্মা এবং ঐশীর সাথেও কথা বলতে চাইছিলাম। আম্মু এখন এ বাড়ির মুরুব্বি। আর বিয়েটা যেহেতু ঐশীর তাই ওর মতামত নেওয়াটাও জরুরি।”

জাহানারা বেগম বলে ওঠেন,”ও আবার রাজি হবে না কেন? এমন পাত্র পেয়েছে সেটাই ওর সৌভাগ্য। আমাদের নাহিদের মধ্যে কোন কিছুর কমতি আছে নাকি?”
এরইমধ্যে সেখানে উপস্থিত হলেন গুলশেনারা বেগম। তিনি আসতেই জাহাঙ্গীর আলম ও নাজমা বেগম তাকে সালাম জানালো এবং খোঁজ খবর নিলো। অতঃপর আলতাফ তালুকদার তাকে সবটা খুলে বলেন৷ গুলশেনারা বেগম খুশি হয়ে বলেন,”এতো অতি উত্তম প্রস্তাব। আমিও চাইছিলাম আমার মৃত্যুর আগে ঐশীর একটা ব্যবস্থা করতে। আমি কিছুদিনের মধ্যেই পাত্র দেখা শুরু করতাম। সেক্ষেত্রে নাহিদ দাদুভাই এর মতো এত ভালো পাত্র আর কোথাও পেতাম কিনা সন্দেহ।”

ঐশী রিডিংরুমে থেকে বই নিয়ে ফিরছিল। সবাইকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। নাজমা বেগম উঠে গিয়ে ঐশীর হাত ধরে তাকে নিয়ে এসে নিজের পাশে বসান। অতঃপর ঐশীর হাতে দুটো বালা পড়িয়ে দিয়ে বলেন,”বাহ, কি সুন্দর লাগছে। আজ তো বেশি কিছু নেই, তাই এটা দিয়েই তোমাকে দোয়া করলাম। এই বালা জোড়া আমার শাশুড়ী আমাকে দিয়েছিলেন আজ আমি তোমায় দিলাম।”

ঐশী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। গুলশেনারা বেগম ঐশীকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলেন,”ওনারা তোকে নাহিদের বউ করতে চান। আমাদের বড়দের কারো কোন আপত্তি নেই।”
ঐশী সাথে সাথেই বলে ওঠে,”কিন্তু, আমার আপত্তি আছে।”
বলেই সে নিজের হাতের বালা জোড়া খুলে নাজমা বেগমের হাতে দিয়ে বলে,”আমায় ক্ষমা করে দেবেন আন্টি কিন্তু এই বিয়েতে আমার মত নেই। আমি বিয়েটা করতে চাইছি না।”

বলেই সে উঠে দাঁড়ায়। ক্রাচে ভড় দিয়ে সবার সামনে থেকে চলে যায়। নাহিদের মা-বাবা ভীষণ অপমানিত বোধ করে। জাহানারা বেগম তো সবথেকে বেশি রেগে যান। বিষয়টা স্বাভাবিক করার জন্য জাহাঙ্গীর আলম সবার সামনে বলে ওঠেন,”তাহলে আজ আমরা উঠি। যেই কারণে এলাম সেটা যখন হলো না তখন এখানে থেকে তো আর কোন লাভ নেই। নাজমা, নাহিদ চলো।”

কর্কশ কন্ঠে চাপা ক্রোধ ঢেলে বললেন তিনি। নাহিদ ব্যথিত নয়নে ঐশীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছিল। নাজমা বেগম ঝাড়া দিয়ে বলেন,”আমাদের এত অপমানিত করেও কি তোর শান্তি হয়নি? চল, এখান থেকে। এরপর আমাদের পছন্দ করা মেয়েকেই তোকে বিয়ে করতে হবে।”

নাহিদ উঠে দাঁড়ায়। আপাতত এখানে থাকলে সমস্যা বাড়বে। তবে এত জলদি নাহিদ ঐশীকে ভুলে যাবে না। সে চেষ্টা চালিয়ে যাবে। ঐশীকে তার কাছে ধরা দিতে হবে এমনটাই তার পণ।

ঐশী নিজের রুমে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে। কান্নায় চোখ বুজে আসছিল। ভাগ্য কেন তাকে এরকম ভাবে বিড়ম্বনায় ফেলল? ভাগ্যের এই লীলাখেলা সে মানতে পারছে না। ভাগ্য আজ তাকে একদম অসহায় করে দিলো। ঐশী কান্না করতে করতে বলতে লাগলে,”তুমি এমন কেন করলে আল্লাহ? আমাকে কেন এত অসহায় বানিয়ে দিলেন? আমি তো আয়ুশ ভাইয়াকেই ভালোবেসেছি সেই ছোট থেকে, আজও ভালোবাসি। চাইলেও তাকে ভুলতে পারছি না। তবুও তো নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি।

ঈশিতা ও আয়ুশ একে অপরের পরিপূরক এটাও মেনে নিয়েছি। তাদের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াই নি। আমি শুধু বাকি জীবনটা একটু স্বস্তিতে কাটাতে চাই। আমার আর কোন চাওয়া পাওয়া নেই। তবে আমি অন্য কাউকে নিজের জীবনে মেনে নিতে পারবো না। আয়ুশ ভাইয়াকে পাই নি তাতে আমার কোন ক্ষোভ নেই তোমার প্রতি। কিন্তু তাই বলে তার স্থানে অন্য কাউকে বসাতে হবে? নিজের ভালোবাসার মানুষকে ভুলে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে? এমনটা আমার পক্ষে আর সম্ভব না। আমি বাকিটা জীবন একা কাটিয়ে দেব কিন্তু ওর স্থান আর কাউকে দেব না। তুমি আর আমাকে এমন পরিস্থিতিতে ফেল না আল্লাহ, ফেলো না।”

আয়ুশ বাড়িতে এসেই দেখলো বাড়িতে চরম অশান্তি। জাহানারা বেগম চিৎকার করে বলছেন,”ঐ মেয়ের সাহস কি করে হয় আমার ভাই ভাবিকে এভাবে অপমান করার? আমার ভাই ভাবি আজ কত অপমানিত হয়ে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। এটা আমি মানতে পারছি না। ঐ মেয়ের চৌদ্দ গুষ্ঠির ভাগ্য ভালো যে, আমার ভাইপোর সম্মন্ধ এনেছিল নাহলে তো ওকে কেউ ছুঁয়েও দেখত না। আর ঐ মেয়ে এত দেমাগ দেখায় কোন সাহসে৷ আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।”

আয়ুশ ঈশিতার কাছে এসে বলে,”কি হয়েছে ঈশিতা? মা এমন করছে কেন?”
আয়ুশকে ঈশিতা সব ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে আয়ুশ অবাক হলো। বিস্ময়ের সাথে বললো,”কিন্তু ঐশী নাহিদকে বিয়ে করতে না করল কেন?”

আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব ২০

ঈশিতা বলল,”হয়তো ও অন্য কাউকে পছন্দ করে।”
“সত্যি কি এমন? কই আমি তো জানি না।”
ঈশিতা চুপ করে গেলো। আয়ুশ না জানলেও সে ঠিকই জানে ঐশীর মনে কে রয়েছে।

আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব ২২