আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব ২৩

আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব ২৩
ইয়াসমিন খন্দকার

ঐশী এসে দাঁড়ালো নাহিদদের বাড়ির সামনে৷ তার উদ্দ্যেশ্য একটাই, জাহানারা বেগমকে যেকোন মূল্যেই ঐ বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। সবদিক দিয়ে দায়সারা হতে চায় সে। কলিংবেল বাজানোর কিছু সময় পর নাজমা বেগম এসে দরজা খুলে দেন। ঐশীকে দেখে তিনি অবাক হয়ে যান৷ ঐশী সালাম বিনিময় করে জানতে চায়,”বড় আম্মু কি এই বাড়িতে আছে?”

নাজমা বেগম বলে ওঠেন,”হ্যাঁ, আছে। তুমি ভেতরে আসো।”
“বড় আম্মুকে একটু ডেকে দিন না প্লিজ। ওনার সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”
“তুমি ভেতরে এসো আমি জাহানারাকে ডেকে দিচ্ছি।”
ঐশী সহাস্যে ভেতরে প্রবেশ করে। নাহিদ তখনই নিজের রুম থেকে বের হচ্ছিল। ঐশীকে দেখে সে থেমে যায়৷ গতকালকের ঘটনা মনে করে দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তবুও নাহিদ আড়চোখে ঐশীকে দেখছিল। যা ঐশীর অস্বস্তি বাড়িয়ে দেয়। এদিকে জাহানারা বেগম সেখানে উপস্থিত হয়ে বলে ওঠেন,”কেন এসেছিস এখানে তুই? আর কি নাটক দেখা বাকি রেখেছিস?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নাহিদ প্রতিবাদী সুরে বলে,”ঐশীর সাথে একদম এভাবে কথা বলবে না, বড় আম্মু।”
ঐশী আবার নাহিদকে রাগী সুরে বলে,”উনি আমার বড় আম্মু। আমাকে উনি শাসন কর‍তেই পারে। আপনি এরমধ্যে ঢুকবেন না।”
এটা বলার পর সে জাহানারা বেগমের সম্মুখে গিয়ে বলে,”আমি তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি বড় আম্মু। তুমি আমার সাথে ফিরে চলো।”
“জুতা মে*রে এখন গরুদান করতে এসেছিস? আমি ফিরবো না আর ঐ বাড়িতে।”
“তুমি চলে আসার পর ঐবাড়ির কেউ ভালো নেই বড় আম্মু। দাদি প্রতিনিয়ত কাঁদছে,এই বয়সে এসে নিজের বৌমাকে বাড়ি ছাড়তে দেখে তিনি ব্যথিত। বড় আব্বু মুখে কিছু না বললেও তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার বুক কষ্টে ফেটে যাচ্ছে।”

“তো আমি কি করব?”
“তুমি ফিরে চলো। প্রয়োজনে আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসব।”
নাহিদ তাদের কথার মাঝে বলে ওঠে,”বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোথায় যাবেন আপনি?”
“সে ব্যাপার নিয়ে তো আপনায় ভাবতে বলিনি।”
জাহানারা বেগম সরাসরি জানিয়ে দেন,”আমার তোকে সহ্য হয়না এটা ঠিক কিন্তু আমি তোকে বাড়ি ছাড়া করতেও চাই না। আর তুই বাড়ি ত্যাগ করলে আমি ঐ বাড়িতে ফিরবো এটা ভাবলে তুই ভুল করবি। শুধু একটা শর্তেই আমি ঐ বাড়িতে ফিরব আর সেটা হলো তোকে নাহিদকে বিয়ে করতে হবে।”

“বড় আম্মু!”
“এছাড়া আর যাই করিস তুই আমি ফিরবো না।”
নাহিদের ধৈর্যের সীমা এবার ভেঙে যায়।
“তুমি এভাবে ঐশীর উপর চাপ প্রয়োগ করো না, ফুফু। আমি ওনাকে ভালোবেসে জয় করতে চাই, জোরজবরদস্তি করে নয়।”

জাহানারা বেগম নাহিদের কথা আমলে না নিয়ে বলেন,”আমি একবার যেটা বলে দিয়েছি সেটাই হবে। এখন তুই ভাব কি করবি।”
নাজমা বেগম মুচকি হাসেন। কারণ এটা তারই পরিকল্পনা। নিজের ছেলের ভালোর জন্য এতটুকু তো তাকে করতেই হতো। তিনিই জাহানারা বেগমকে এটা শিখিয়ে দিয়েছিলেন।
ঐশী উঠে দাঁড়ায়। ফিরতে ফিরতে বলে,”আমি ভেবে তোমায় সব জানাচ্ছি বড় আম্মু।”

গুলশেনারা বেগমের রুমে এসে বসে আছে ঐশী। তাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেছে ঐশী। সব শুনে গুলশেনারা বেগম ঐশীর সামনে হাতজোড় করে বলেন,”তুই এই বিয়েটা করে নে, ঐশী। আমার সংসারটা রক্ষা কর তুই।”
“দাদি! তুমিও?!”
“আমি যা বলছি সবদিক ভেবেই বলছি৷ তোর তো বিয়ের বয়স হয়েছেই। আর নাহিদ তো ছেলে হিসেবে খারাপ নয়। বিয়েটা করতে তো তোর কোন অসুবিধা থাকার কথা না।”
“কিন্তু আমার মন যে মানতে চায়না?”

“মন না মানলেও মনকে মানাতে হবে। আয়ুশকে যে তুই আর পাবিনা এটা মেনে নে। আর বিয়ে না করলে তো অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ হয়না। তুই তো মোটামুটি ইসলামী মনস্ক, তোর তো এটা জানা উচিৎ। আজীবন একা থাকব এটাকে ইসলাম সমর্থন করে না। আজ নাহয় কাল তোকে বিয়ে করতেই হবে৷ আয়ুশ তোর কাছে কেবল একটা দ্বিধার নাম৷ যেই দ্বিধা তোকে বয়ে নিয়ে বেড়ালে চলবে না। তুই বিয়েটা করে নে। এতে তোরও ভালো আর এই সংসারেও শান্তি ফিরবে।”

ঐশী আর কিছু বলতে পারল না। কারণ গুলশেনারা বেগমের বলা কোন কথাই মিথ্যা নয়। তাই সে উঠে দাঁড়ালো। অতঃপর বেলকনিতে এসে দাঁড়ালো। আয়ুশের কথা ভেবে কিছুক্ষণ কাঁদল। কেন যে মনে থাকে সে ভাগ্যে থাকে না?! ঐশীর কান্নার আওয়াজ ভারী হলো৷ অনেক ভেবে চিন্তে ঐশী বলল,”বড় আম্মুকে জানিও দাও, আমি নাহিদকে বিয়ে করতে রাজি আছি।”
গুলশেনারা বেগম স্বস্তি পান।

“ভেতরে আসতে পারি?”
ঐশী সবেমাত্র ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমন সময় আয়ুশের আগমন ঘটে। আয়ুশকে দেখে ঐশী মলিন হেসে বলে,”হ্যাঁ, এসো। বড় আম্মু কি চলে এসেছে?”
“হুম, মা এসেছে।”
“ভালো।”
“তুই কি মন থেকে এই বিয়েতে রাজি ঐশী?”
“মন থেকে রাজি না থাকলে কি রাজি হতাম?”
আয়ুশ ঐশীর কাছে এসে বলে,”তাকা আমার দিকে।”

ঐশী তাকায়। কিন্তু বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না। চোখ সরিয়ে নেয়। আয়ুশ বলে ওঠে,”তুই কি আমাকে ভালোবাসতি ঐশী?”
ঐশী হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তার মুখ থেকে কোন কথা বেরোয় না।
“কি হলো চুপ করে আছিস কেন বল? ভালোবাসতি আমায়?”
“না..”
“তোর চোখ দেখে মনে হচ্ছে তুই মিথ্যা বলছিস।”
“ভালোবাসতাম না আমি তোমায় এখনো বাসি..”

বলেই কাঁদতে শুরু করে দেয় ঐশী। আয়ুশও আবেগপ্রবণ হয়ে যায়। ঐশীর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলে,”দুঃখিত, আমার জন্য তোকে বোধহয় অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। সেসব হয়তো আমি বদলাতে পারবো না। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি তোকে কখনো নিজের বোনের থেকে বেশি কিছু ভাবিনি। তোর প্রতি করা কেয়ারগুলোও বোন হিসেবেই ছিল।”

“জানি আমি, ভাইয়া। দোষটা আসলে আমারই ছিল। আমিই বেশি কিছু ভেবে নিয়েছিলাম।”
“নিজেকে দোষ দিয়ে তুই মানসিক শান্তি পাবি না। দোষ আসলে কারো না, দোষ ভাগ্যের, দোষ পরিস্থিতির। আজ যদি আমি অবিবাহিত থাকতাম তবুও আমি তোকে ফিরিয়ে দিতাম। কারণ তুই আমার কাছে আমার নিজের বোনের মতোই। আর এখন তো আমি বিবাহিত।”

ঐশী কিছু বুঝতে পারছিল না। আয়ুশ বলল,”তুই যদি তোর মনের কথা আগেই আমাকে বলতি তাহলে ভালো হতো। তাহলে এতগুলো দিন তোকে এই কষ্ট মনে চেপে নিয়ে থাকতে হতো না, এত ভোগান্তি পোহাতে হতো না। আমি না বললেই, তুই মুভ অন করতে পারতি। শুধু শুধু মিছে আশা মনে রেখে কষ্ট পেলি।”
ঐশীর কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে যায়।

“আমি কি করবো ভাইয়া? আমার মন যে মানতে চায় নি। আমি জানতাম, তোমাকে আমি পাবোনা। কিন্তু তবুও মনে আশা রেখেছিলাম। ঐ যে ছোটবেলায় শুনেছিলাম না, মন থেকে চাইলে সবকিছু পাওয়া যায়। আমি সেই আশাতেই ছিলাম এতগুলো দিন৷ ঈশিতা বিদেশে যাবার পর আমার মনে ক্ষনিক আশা জেগেছিল কিন্তু..ঐ যে ভাগ্য। সেটা যে আমার পক্ষে না।”

“আমি বুঝতে পারছি তোর কষ্টটা। তবে এখন তোকে এইসব কষ্ট ভুলে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য তোর নতুন করে জীবন শুরু করা প্রয়োজন। নাহিদ, ও অনেক ভালো ছেলে। তোকে অনেক ভালো রাখবে। দেখবি ওকে পেলে তুই আমাকে ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারবি। ঐ তোর জন্য উত্তম। কারণ ও তোকে ভালোবাসে৷ ঐ যে কথায় আছে না,তুমি তার কাছে বেশি সুখে থাকবে যে তোমায় ভালোবাসে নাতো যাকে তুমি ভালোবাসো। আমি কখনোই তোকে সেই নজরে দেখতাম না। ভালো থাকিস।”

আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব ২২

বলেই চলে যায় আয়ুশ। ঐশী তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে,”আজ থেকে আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচা ছেড়ে দিলাম। এখন থেকে শুরু হবে আমার নতুন জীবন।”

আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব ২৪