আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব ২৪
ইয়াসমিন খন্দকার
ঐশী একটা লাল বেনারসি শাড়ি পড়েছে, সাথে সোনার অলংকার। আজকে তার বিয়ে নাহিদের সাথে। চারিদিকে চলছে আনন্দ আয়োজন৷ কিন্তু আনন্দ নেই ঐশীর মনে। কারণ সে মন থেকে এই বিয়েটা মেনে নিতে পারছে না। ঈশিতা এসে ঐশীকে সাজানো দেখে বলল,”ভীষণ সুন্দরী লাগছে তোমায়। নাহিদ ভাই তো একদম তাক লেগে যাবে!”
বিনিময়ে ঐশী শুধু মলিন হাসে। ঐশীর হাসি মিলিয়ে যায় মলীনতার ভাজে। ঈশিতা এমনটা দেখে বলে,”তুমি কি এখনো এই বিয়েটা নিয়ে খুশি নও?”
“যদি আমি বলি যে, আমি খুশি। তাহলে এটা মিথ্যা হয়ে যাবে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ঈশিতা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ঐশী বলে,”তুমি খুব ভাগ্যবান জানো, তুমি আয়ুশ ভাইয়ার ভালোবাসা পেয়েছ।”
“তোমাকে একটা কথা বলি, আমি কিন্তু বিয়ের সময় তোমার আয়ুশ ভাইকে একদম পছন্দ করত না কিন্তু তিনি আমায় পছন্দ করতেন। আর আজ দেখ, আমরা কত সুখী৷ কারণ তোমার আয়ুশ ভাইয়ার এত গভীর ভালোবাসা আমায় বাধ্য করেছে তাকে ভালোবাসতে। আর নাহিদ ভাইও তোমাকে অনেক ভালোবাসে। দেখবে তার থেকে এত ভালোবাসা পেয়ে তুমি ঠিকই মানিয়ে নেবে।”
ঐশী বিপরীতে কিছু বলে না৷ শুধু তাকিয়ে থাকে আকাশের পানে। মহান সৃষ্টিকর্তা সকলের ভাগ্য লিখে রাখে। ঐশীর ভাগ্যে হয়তো এমনটাই লেখা ছিল। ঐশী নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়েছে। তাই এখন তার আর বেশি কষ্ট হচ্ছে না।
ঐশীকে এসে বসানো হয়েছে নাহিদের সামনে। বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়৷ কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। একসময় তিনি কনেকে কবুল বলতে বলেন। ঐশী অনেকক্ষণ চুপ থাকে। কবুল বলতে গিয়ে যেন তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ চলছে। তবুও ঐশী দুচোখ বুজে শক্ত করে নিলো নিজেকে। অতঃপর ধীর গলায় বললো,”কবুল।”
নাহিদ বেশি সময় না নিয়ে কবুল বলে দিলো। এরই মাধ্যমে এক গভীর বন্ধনে বেঁধে গেলো দুজনে।
ঐশী কবুল বলার পর থেকে মনমরা হয়ে বসেছিল। নাহিদ তার কানে কানে এসে বলে,”যত মনমরা হয়ে থাকার শখ এখন থাকো। আজ থেকে তোমার সব দুঃখ আমি গ্রাস করব। সুখের চাদরে মুড়িয়ে দেব তোমায়। কথা দিলাম প্রেয়সী। আমি জানি, এই বিয়েতে তোমার মত ছিল না। কিন্তু দেখবে একদিন তুমি ঠিকই আল্লাহকে ধন্যবাদ দেবে।”
ঐশী কিছু বলল না৷ তবে সে চায় খুশি হতে, যা হয়েছে তা মেনে নিতে। ভাগ্যকে অস্বীকার করার তো কোন উপায় নেই৷ ভাগ্যকে মেনে নেওয়াই সব থেকে ভালো পন্থা৷ জীবনে সুখ খুব কম পেয়েছে ঐশী। পায়নি বললেও ভুল বলা হয়না। জীবনে সুখ দুঃখের পাল্লা মাপলে দুঃখের পাল্লাই ভারী হবে। তাই এখন সে জীবনে এক চিমটি সুখ চায়। দুঃখের গল্প থেকে মুক্তি চায়। দীর্ঘ কয়েক বছর সে বেঁচেছে দ্বিধাদ্বন্দে। তবে আর না। সে আর এই দ্বিধা বয়ে নিয়ে বেড়াবে না। জীবনকে আরেকটা সু্যোগ দেবে নতুন করে গড়ার জন্য। সুন্দর গড়া জীবনে সুন্দর কাহিনি রচনা করবে। নাহিদ নাহয় সেই জীবনে তার সঙ্গী হবে। আর তার সাথে বাকি জীবনটা সুখে শান্তিতে কাটাবে।
নাহিদের বিয়ে উপলক্ষে আজ তামিমও এসেছে এই স্থানে যেহেতু সে নাহিদের প্রিয় বন্ধু। তামিম আজ এসেছে থেকে ঈশিতাকে দেখছে। ঈশিতা সবার সামনে তামিমের সাথে কথা বলার সুযোগ পায় না। তবে ভীড় একটু কমতেই তামিমের কাছে গিয়ে বলে,”কেমন আছ তামিম ভাই?”
“আছি কোনরকম, তুই তো বিদেশ থেকে এসেছিস থেকে আমায় ভুলেই গেছিস।”
“ভুলে যাই নি তো। আসলে অনেক ব্যস্ত ছিলাম তাই আরকি যোগাযোগ করতে পারি নি।”
“হুম, বুঝলাম।”
এরমধ্যে আয়ুশ তামিম ও ঈশিতাকে একসাথে দেখে রেগে গেলো। সে তাদের কাছে এসে ঈশিতার হাত ধরে বলে,”তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।”
বলেই ঈশিতাকে একপ্রকার টেনে নিয়ে যায়। তামিম বাঁকা হেসে বলে,”এভাবে নিজের বউকে আমার থেকে দূরে রাখতে পারবা না আয়ুশ। আমার পছন্দের জিনিসকে কিভাবে নিজের করে নিতে হয় সেটা আমি খুব ভালো করেই চিনি।”
এদিকে ঈশিতা আয়ুশকে বলে,”আপনি এভাবে আমাকে তামিম ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে এলেন কেন? উনি কি মনে করলেন?”
“কি মনে করে করুক। তুমি ওর থেকে দূরে থাকবে ব্যস।”
“কেন?”
“কেন তুমি জানো না? কিছুদিন আগেই ওকে নিয়ে আমাদের মাঝে এত ঝামেলা হলো৷ এসবের মধ্যেই ভুলে গেলে!”
“সেটা আপনার ভুল ছিল। আপনি আমার উপর বিশ্বাস রাখতে চান নি।”
“আমি এত তর্ক করতে চাই না ঈশিতা। তোমাকে যা বলছি তাই শুনে চলবে।”
ঈশিতা আর কথা বাড়ায় না।
ঐশীর বিদায়ের পালা আসে। সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ে। বিশেষ করে গুলশেনারা বেগম। ঐশী নিজেও আজ কাঁদছে। জাহানারা বেগমও একটু মিছে কান্না করলেন। যদিওবা ঐশীর বিদায়ে তিনি মোটেই দুঃখী নন। বরং অনেক খুশি তিনি। তবু সবার সামনে একটু লোক দেখানো কান্না তো করতেই হবে।
এত সবার মধ্যে আয়ুশ ঈশিতাকে কোথাও দেখতে পেল না। আবার তামিমও সেখানে উপস্থিত ছিল না৷ যদিও তার বরযাত্রীর সাথে যাবার কথা। এই বিষয়টা আয়ুশের মনে খটকা তৈরি করলো। আয়ুশ আশেপাশে খুঁজতে গেল।
এদিকে ঈশিতার মাথা ব্যথা করছিল জন্য সে চুপ করে বাইরের দিকে একটা রুমে বসে ছিল। তামিম ঈশিতার কাছে এসে বলে,”তোকে এমন লাগছে কেন? কোন অসুবিধা?”
“আমার মাথাটা একটু ব্যথা করছে। তুমি এখানে? বরযাত্রীর সাথে যাবে না তামিম ভাই?”
তামিম ঈশিতার আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে বলল,”তোকে এই অবস্থায় রেখে কিভাবে যাই!”
ঈশিতার অস্বস্তি বোধ হয়৷ সে দূরে সরে যেতে চায়। তামিম ঐশীকে আরো শক্ত করে ধরে বলে,”আমার থেকে আর দূরে থাকিস না তুই!”
“তামিম ভাই কি করছ?! ছাড়ো আমায়।”
তামিম ঈশিতাকে আরো কাছে টানতে থাকে। ঈশিতা ধস্তাধস্তি শুরু করে দেয়। তামিম ঈশিতাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। ঈশিতার গায়ে জ্বর ছিল খানিক। তাই তার শরীরে জোর ছিল না। ঈশিতা বলল,”আমি কিন্তু চিৎকার করব..”
“কর না। এতে তোরই সম্মান যাবে। সবাই যদি এসে আমাদের এই অবস্থায় দেখে তাহলে তোকে কি ভাববে?!”
ঈশিতা তামিমের কাছে অনুরোধ করতে থাকে তাকে ছেড়ে দেয়ার। এমন সময় আয়ুশ সেই স্থানে চলে আসে। আয়ুশ এসেই বলে ওঠে,”তামিম!”
ঈশিতার উপর থেকে সরে আসে তামিম। আয়ুশ এসে তামিমের কলার চেপে ধরে৷ তাকে মা***রতে থাকে। তামিমও প্রতিবাদ করে। এরমধ্যে আরো কিছু মানুষ সেখানে চলে আসে। তামিম সবার সামনে বলে,”আমাকে ছাড়ো আয়ুশ”
“তোর এত বড় সাহস আমার দিকে হাত বাড়াস!”
“আমি তোর বউয়ের দিকে হাত বাড়াই নি। ও নিজেই আমাকে ওর কাছে ডেকেছে।”
ঈশিতা বলে ওঠে,”এসব মিথ্যা কেন বলছেন তামিম ভাই?! আপনিই তো…”
আয়ুশ তামিমকে ছেড়ে ঈশিতার কাছে আসে। ঈশিতাকে বলে,”তামিম যখন তোমার ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করছিল তখন তুমি প্রতিবাদ করো নি কেন? অন্তত চিৎকার তো করতে পারতে সেটা কেন করো নি? নাকি এসব স্পর্শ উপভোগ করছিলে?!”
“আয়ুশ! এসব কি বলছেন আপনি? আমি কেন..”
তামিম বলে,”আর নাটক করিস না জান। সবাই যখন সব জেনে গেছে তখন আর নাটক করে লাভ নেই। আমি এখন একজন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার। তুইও তাই। এখন আমাদের আর তোমার স্বামীর বাড়ির সাহায্য লাগবে না। তাই এইসব অভিনয়ও অর্থহীন।”
আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব ২৩
ঈশিতা আয়ুশকে বলে,”বিশ্বাস করুন এসব মিথ্যে..”
এদিকে আশেপাশে উপস্থিত মানুষ নানারকম কথা বলতে থাকে। সবাই ঈশিতার চরিত্রের দিকে আঙুল তোলে। আর ঈশিতা আয়ুশের প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষায় বসে থাকে।