আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ১৩
suraiya rafa
আজ একত্রিশে অক্টোবর নয়। আর নাতো আজ হ্যালোইন উৎসব, তবুও ক্লাবের ডেকোরেশন আর আশেপাশের মানুষ গুলোর সাজসজ্জা দেখে মনে হচ্ছে রাত বারোটার পরে ভূতেদের আমন্ত্রণ করার জন্য পুরোপুরি তৈরি তারা।
এখানে উপস্থিত প্রতিটি মানুষ কোনো কিছুরই পরোয়া না করে অদ্ভুত সাজে বিভিন্ন অদ্ভুত কর্মকান্ড করে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ মদ্যপ হয়ে ঠোঁটের মাঝে গাঢ় সবুজ লিপস্টিকের আস্তর লাগিয়ে অদ্ভুত পোশাক পরে হেলেদুলে অন্যকে চুমু খাচ্ছে, তো কেউ কাউচে গা ছড়িয়ে বসে আরামসে নিজের শরীরে নিজেই ড্রা’গ পুশ করে যাচ্ছে ।
পুরো হল রুমটা ভরে আছে বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ দিয়ে। সেই অদ্ভুত মানুষ গুলোকে বিনোদন দিতে বার কাউন্টারের সামনে নিজেদের উন্মুক্ত নির্মেদ কোমরের অসাধারণ বেলী ড্যান্স প্রদশর্ন করায় ব্যস্ত একদল সুন্দরী রুশ তরুণী।
তবে আজ এই বিকৃত মানুষগুলোর বিকৃত উৎসবের প্রধান আকর্ষন হলো ড্রাগন হান্টার গ্রুপের গড ফাদার ডেনিয়েল হ্যারিসন। মূলত ক্লাবে নতুন কোনো সুন্দরী ভার্জিন মেয়ে এলে প্রতিবারই বেশ ঘটা করে পার্টির আয়োজন করেন তিনি। তবে আজকের পার্টিটা একটু বেশিই স্পেশাল,ওই জন্যই এমন হ্যালোইন থীমে সাজানো হয়েছে সবকিছু। কারণ ডিলটা হতে যাচ্ছে তার চরম শত্রু পাইথন লিডার এরীশ ইউভানের সঙ্গে।
এরীশের নিকট থেকে এই প্রথমবার উপঢৌকন হিসেবে কোনো মেয়ে আসছে নিশ্চয়ই সে অতিব সাধারণ কোনো মেয়ে নয়?
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
টমেটো প্রিন্সের কাছ থেকে শুনেছে মেয়েটা অসম্ভব সুন্দরী আর লাস্যময়ী, না জানি তার শরীর টা কতো বেশী উপভোগ্য , সে কথা ভেবেই খুশির পারদে চকচক করে ওঠে ডেনিয়েলের পৈশাচিক কুটিল দু’চোখ।
আপাতত আগমনী রমণীর আকাঙ্ক্ষায় সুন্দরী কোনো রুশ কন্যাকে উপভোগ করাই শ্রেয়,তাই ডেনিয়েল আর খালি মুখে শুষ্ক ঢোক গিলতে পারলো না বসে বসে। রেড ওয়াইনের ঝাঁঝের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মত্ত হলো নারীর নেশায়।
জায়গাটা ছিল ক্লাবেরই একাংশ, সবাই জানে ডেনিয়েল যখন তখন এখানে ফূর্তি করে। তাই সচারাচর ওইদিকে গিয়ে ওকে বিরক্ত করার স্পর্ধা দেখায় না কেউই, কিন্তু আজকে সকল নিয়ম নীতি ভেঙে হুট করেই ডেনিয়েলের বিশ্বস্ত স্পাই এডওয়ার্ড ফ্রাঙ্কি আচমকা গিয়ে ঢুকে পরে তার কামরায়।
ফ্রাঙ্কির এহেন আচমকা আগমনে বেশ রাগান্বিত হয়ে যায় ডেনিয়েল, রাগে গজগজ করতে করতে স্লাটটাকে বিদেয় করে শরীরে কাপড় জড়িয়ে উঠে বসে আচমকা রিভলবার লোড করতে শুরু করে দেয় সে।
ডেনিয়েলের অগ্নিমূর্তি দেখতে পেয়ে থতমত খেয়ে তরিৎ বেগে মাথা নুয়িয়ে ফেললো ফ্রাঙ্কি, ওকে কুর্নিশ করে ধরা গলায় বলে উঠলো ,
— মার্জনা করবেন ডেনিয়েল, আপনাকে সংবাদটা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল, তাই ছুটে এসেছি।
ফ্রাঙ্কির কথা শুনে রাগের পারদে কিঞ্চিৎ লাগাম টানলো ডেনিয়েল, প্রত্যুত্তরে কপালে সুক্ষ্ম ভাজ এটে উল্টো শুধালো,
—- তোমরা তো মেয়েটাকে আনতে গিয়েছিলে, কোথায় সে?
ফ্রাঙ্কি ইতস্তত গলায় বললো,
— নিয়েই আসছিলাম, কিন্তু হুট করেই এরীশ ইউভান সবার সামনে মেয়েটাকে আমাদের হাত থেকে সেফ করে নিয়ে গেলো, এমনকি,
কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায় ফ্রাঙ্কি।
ডেনিয়েল চোয়াল শক্ত করে গম্ভীর গলায় বলে,
— এমনকি?
—- মেয়েটাকে আ’ঘাত করার অ’পরাধে আমাদের একজন গার্ড কে ওখানেই শ্যুট করে স্পট ডে’থ বানিয়ে দেয় এরীশ ইউভান।আর ব্লাড ডায়মন্ডের পরিবর্তে মেয়েটাকে বাঁচিয়ে ও নিয়ে যায় সে।
ফ্রাঙ্কির শেষ কথায় এতোক্ষণ ধরে রাগে রক্তিম বর্ণ ধারণ করা অক্ষি জুগল অকস্মাৎ ছোট ছোট হয়ে গেলো ডেনিয়েলের,সেই সাথে কপালের সুক্ষ্ম ভাজ গুলো স্পষ্ট হলো দিগুণ, কিছুটা ভাবতে ভাবতেই বিড়বিড়ালো সে,
— এরীশ ইউভান একটা মেয়ের জন্য ব্লাড ডায়মন্ড ফিরিয়ে দিলো? স্ট্রেইঞ্জ! কি আছে সেই মেয়ের মাঝে? নিশ্চয়ই অভাবনীয় কিছু, ওই মেয়েটাকে তো আমার চাইই চাই।
একমনে কিছু একটা ফন্দি এঁটে, ফ্রাঙ্কির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ডেনিয়েল, শুধালো,
—- ফর দ্যা ফার্স্ট টাইম এরীশ ইউভান নিজের ডিসিশন চেঞ্জ করলো, এতো বড় একটা ডিল ক্যান্সেল করে দিলো। তাও কিনা সামান্য একটা মেয়ের জন্য, ব্যাপারটা কি তোমার স্বাভাবিক মনে হচ্ছে ফ্রাঙ্কি?
— মোটেই না বস, মেয়েটাকে সেফ করার সময় এরীশ কে খুব ডেস্পারেট লাগছিল,সাম হাউ ও নিজের মধ্যেই ছিল না।
ইভেন ঝোঁকের বশেই আমাদের গার্ডটাকে চোখের সামনে শ্যুট করে দেয় সে। আমি জানি এরীশ ইউভান হার্টলেস,সে পারেনা এমন কিছু নেই,কিন্তু মেয়েটার জন্য হঠাৎ কি হয়ে গেলো,ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।
ফ্রাঙ্কির কথা শুনে খ্যাক খ্যাক করে হেসে ওঠে ডেনিয়েল, হাসতে হাসতে কুটিল স্বরে বলে,
—- সময় এসেছে ফ্রাঙ্কি, আমার বেবিগার্লের হয়ে মৃ’ত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার সময় চলে এসেছে। ওই মেয়েটাকে এরীশ ইউভানের কাছ থেকে জাস্ট ছিনিয়ে নেবো আমি। এরপর এরীশের চোখের সামনে দিয়ে ওর ব্লু আইড এ্যাঞ্জেল কে এই ক্লাবে এনে সবার মধ্যে সস্তা খাবারের মতোই বিলিয়ে দেবো। আর তারপর আমিও দেখতে চাই শুধু ব্লাড ডায়মন্ড কেন একটা মেয়ের জন্য আর কি কি হাতছাড়া করতে পারে এরীশ ইউভান।
গতকাল থেকেই দিনভর তুষার পাত হচ্ছে
মস্কোতে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর তুষার পাতের পরিমাণ অনেক বেশি। ক্যালেন্ডারের পাতায় নভেম্বরের শুরু হতে না হতেই প্রকৃতি তার তুষ কন্যার সহযোগীতায় ধরনীকে আবৃত করেছে শুভ্রতার চাদরে।
শহরের লোকালয় ছাড়িয়ে নির্জন জঙ্গল দ্বারা বেষ্টিত সুউচ্চ বিলাস বহুল পেন্ট হাউজের ভেতরটা সবসময় কৃত্রিম উপায়ে উষ্ণতায় ছেয়ে থাকলেও আজ প্রায় একমাস পরে পেন্ট হাউজের বাইরে পা রাখতে না রাখতেই তীব্র ঠান্ডা আর হু হু বাতাসে শরীরের হাড়হাড্ডি সব অবশ হয়ে গিয়েছে ঈশানীর।
এমন আবহাওয়ায় অভ্যস্ত না থাকার দরুন প্রচন্ড ঠান্ডায় সরু থুতনিতে কাঁপন ধরেছে বাঙালি কণ্যার, এক্ষুনি বক্ষ ভেদ করে কলিজাটা জমে এলো বলে। তবুও এতোদিন পরে এরীশের কালো দুনিয়া থেকে বাইরে বেরিয়ে গাড়ির জানালার কাচ নামানো থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারলো না ঈশানী।
টিন্ডেট জানালার কাচ নামিয়ে তাতে থুতনি ঠেকিয়ে বাইরে দৃষ্টিপাত করে আছে ও। মনে মনে ভাবছে,
—- এই তুষারে মোড়ানো শুভ্রতায় ঘেরা সাজানো শহরটা আসলে রহস্যময়। এই শহরে সাধারণ মানুষের চেয়ে মাফিয়াদের আধিপত্য অনেক অনেক বেশি,বলতে গেলে বিশ্বের বড়বড় সব আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়াদের মূল গন্তব্যস্থলই হলো এই রাশিয়া।
এই শহর পাপের শহর, এই শহরে সাধারণ মানুষের মতোই মাফিয়াদের অবাধ চলাফেরা।এই দেশে তাদের কতৃত্ব, তাদের অনৈতিক অসাধু কর্মকান্ড সবকিছুই যেন পুরো পৃথিবীর ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
আর ঈশানী? সে ও আজ এই কালো দুনিয়ার সম্রাট মাফিয়া বস এরীশ ইউভানের হাতেই বন্দী। যে দুনিয়ায় নৃ’শংসতা, র’ক্তপা’ত, খু”নাখু’নি ছাড়া অন্য কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। ঈশানী ঘৃণা করে এরীশের এই নিষ্ঠুর দুনিয়া, সেই সাথে ঘৃণা করে নিষ্ঠুর দুনিয়ার হৃদয়হীন নিষ্ঠুর মাফিয়া বস এরীশ কেও।
ও কিছুতেই থাকতে চায় না এখানে, বাঁচতে চায়না এই কালো দুনিয়ার বন্দী পুতুল হয়ে। আর তাইতো আজ সাহসীকতার মাত্রা অতিক্রম করে ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে পালাবে। যে করেই হোক আজ শপিং মলে সবার অগোচরে পালাতেই হবে ঈশানীকে।
— ঈশু নেমে এসো।
গাড়ির বাইরে থেকে অকস্মাৎ ফ্লোরার ডাকে সম্বিত ফিরে পেলো ঈশানী, ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে চারিদিকে চোখ বোলাতেই দেখতে পেলো ওরা এক বিশাল টাউন সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে,এতোক্ষণ যাবত রাস্তাঘাটে খুব একটা মানুষ জনের উপস্থিতি টের না পেলেও, টাউন সেন্টারে আসা মাত্রই ঈশু খেয়াল করলো এই জায়গাটাতে বেশ ভালোই মানুষের আনাগোনা রয়েছে।
এতোবড় টাউন সেন্টার মানুষের ভীড় তো থাকবেই। যেহেতু আশপাশটা লোকে লোকারণ্য তাই ঈশানী বেশ খুশিই হলো, মনেমনে কিছু একটা ভেবে নেমে পরলো গাড়ি থেকে।
পেছনে গার্ড’স আর সামনে তুষার তার ঠিক মাঝখানে ফ্লোরার পাশাপাশি ধীর গতিতে এগোচ্ছে ঈশানী, হাটতে হাটতেই চারিদিকে চোখ বুলিয়ে আশপাশটা ভালোমতো পরখ নিলো ও।
শপিং মলের কাছে আসতেই সবকিছুকে ছাপিয়ে ফ্লোরা জলদি ছুটে গিয়ে ঢুকে পরলো গ্রোসারীতে, ওর নাকি রান্না ঘরের কিছু কেনাকাটা রয়েছে। ফ্লোরার কান্ডে কিঞ্চিৎ বিরক্ত বোধ করলো তুষার, চোখ মুখ কুঁচকে গম্ভীর গলায় ফ্লোরাকে বললো,
— আমার তাড়া আছে, জলদি করবে।
ফ্লোরা মৃদু হেসে তাতে সায় জানালো, ভেতরে যেতে যেতে বললো,
— মাত্র পাঁচ মিনিট।
ফ্লোরার সঙ্গে সঙ্গে এবার ঈশানীও আস্তে করে ঢুকে গেলো ভেতরে, তারপর চোরা চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে পেলো আশেপাশে কোথাও গার্ড’স নেই, শপের বাইরে দাঁড়িয়ে কারও সঙ্গে ফোনালাপে ব্যস্ত তুষার, এদিকে তার কোনোরূপ নজর নেই বললেই চলে।
এটাই পালানোর সূবর্ণ সুযোগ ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই ঈশানী এগিয়ে গেলো কেনাকাটায় ব্যস্ত ফ্লোরার নিকট, গিয়ে পেছন থেকে মৃদু আওয়াজে ডেকে বললো,
—- তুমি দেখতে থাকো, আমি একটু ওদিকটা ঘুরে আসি, দেখি ফ্রেশ কি কি আইটেম রয়েছে ওখানে ।
ঈশানীর কথার প্রত্যুত্তরে পেছনে না তাকিয়েই ব্যস্ত ভঙ্গিতে ফ্লোরা বলে,
—- হ্যা হ্যা তাড়াতাড়ি যাও, বেশি দেরী হয়ে গেলে আবার তুষার রেগেমেগে ব’ম যাবে।
—- আমাকে ক্ষমা করো ফ্লোরা, তোমাকে এখানে বি’পদে ফেলে গেলাম।
মনেমনে কথাটা আউড়ে আর এক মূহুর্ত ও সেখানে দাঁড়ালো না ঈশানী।
এক’কদম দু’কদম করে পেছাতে পেছাতে এক পর্যায়ে শপের একদম পেছনের এক্সিট ছাড়িয়ে বাইরে বেরোতেই চোখ মুখ খিঁচে এলোপাতাড়ি দৌড়াতে শুরু করে ঈশু। বাইরে প্রচন্ড ঠান্ডা, অনবরত তুষার পড়ছে, শরীরে তেমন কোনো গরম কাপড় নেই ওর, তবুও মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজনায় ঘামছে ঈশানী।
একদিকে শরীর ঘামছে অন্যদিকে থরথর করে কাপছে হৃদয়, এহেন ভয়াতুর হৃদ কম্পনে কলিজা ছাপিয়ে সর্বাঙ্গ কাপছে ঈশানীর। আশেপাশে সামনে পেছনে কোনো কিছুকে এক বিন্দু পরোয়া না করে শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে ছুটছে মেয়েটা।
ছুটতে ছুটতে এক পর্যায়ে ও নিজেকে আবিষ্কার করলো টাউন সেন্টারের একদম বাইরে, তবুও ধরা পরে যাওয়া তীব্র আশঙ্কায় ছোটার গতি কমানোর সাহস পেলনা ঈশানী, উল্টো পেছনে ঘুরে কেউ আসছে কিনা দেখতে দেখতে দৌড়াতে লাগলো লাগামহীন পাগলা ঘোড়ার ন্যায়।
তুষার আবৃত ভেজা পিচ্ছিল রাস্তায় ছুটতে ছুটতে শরীরের সব শক্তি যেন ফুরিয়ে এসেছে ওর, তবুও থামছে না ঈশানী। যতটুকু সম্ভব শরীরকে টেনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।
পেছনে তাকিয়ে দেখতে দেখতেই লাগামহীন হয়ে পা’গলের মতো ছুটছিল ঈশানী,কিন্তু ওর ছোটার গতি তখনই পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যায় যখন কিনা দৌড়াতে দৌড়াতে পাথরের ন্যায় শক্ত এক বলিষ্ঠ পুরুষালী বুকের উপর অকস্মাৎ ধাক্কা লেগে হুমড়ি খেয়ে পড়ে ও।
ঈশানী এতো দ্রুত দৌড়ে এসে বুকের উপর হুমড়ি খেয়ে পরা সত্ত্বেও এক পা ও নড়লো না লোকটা। উল্টো নিজের ওভার কোটের পকেটে দু’হাত ঢুকিয়ে সটান দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ।
ওদিকে আকস্মিক ধাক্কাটা এতোটাই জোরে ছিল যে তৎক্ষনাৎ ফিনকি দিয়ে র’ক্ত বেরিয়ে এলো ঈশুর নাক কেটে । এতো দ্রুত ধাক্কায় মাথাটা ও ভনভন করে চক্কর দিচ্ছে ওর। তবুও কোনোমতে নিজের চেতনা ধরে রেখে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে দেখার সামান্য চেষ্টা চালালো ঈশানী।
লোকটার পেশিবহুল পুরুষালী বুকের উপর দু’হাত রেখেই ধীরে ধীরে উপরে তুললো নিজের ভারী মাথাটা , ঝাপসা চোখে পরখ করে বুঝলো, হাইনেক ব্ল্যাক টিশার্টের উপর ব্ল্যাক ওভারকোট পরিহিত লম্বা মতো একটা লোক ,
অতঃপর তার মুখ দেখার প্রয়াশে যখন আরেকটু মাথা উঁচিয়ে ঝাপসা হয়ে যাওয়া চোখ দুটো খুলে লোকটার মুখের দিকে চাইলো, তৎক্ষনাৎ সেই পরিচিত পিয়ার্সিং করানো তীক্ষ্ণ ভ্রুজুগল আর একজোড়া র’ক্তিম ধূসর বাদামী চোখের সঙ্গে নিজের ঝাপসা দৃষ্টি মিলিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো ঈশানীর।
যার কাছ থেকে এতদূর পালিয়ে আসা, তাকেই হঠাৎ এভাবে চোখের সামনে দেখতে পেয়ে মাত্রাতিরিক্ত আতঙ্কে সেই মূহুর্তেই চেতনা হারিয়ে শূন্যে ঢলে পরলো ভীত স্বতন্ত্র ঈশানী। যদিওবা পুরোপুরি পরে যাওয়ার আগেই ওর তুলতুলে নরম ছোট্ট শরীরটা বলিষ্ঠ দু’হাতে আঁকড়ে ধরে এরীশ।অতঃপর আস্তে করে তুলে নেয় নিজের কোলে।
এরীশ যেই মূহুর্তে ঈশানীকে স্বহস্তে কোলে তুলে নেয়,ঠিক তখনই কোথা থেকে যেন হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটে আসে তুষার। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এরীশের কোলে এভাবে চেতনাহীন ঈশুকে দেখতে পেয়ে শুষ্ক ঢোক গিললো সে ,নিজের কর্মকান্ডের অপারগতা মেনে নিয়ে তৎক্ষনাৎ এরীশের নিকট ক্ষমা প্রাথর্না করে তুষার বলে উঠলো ,
—- আ’ম এক্সট্রিমলি সরি এরীশ, আমি এটা ধারণা করিনি যে,
—- আমি বুঝতে পেরেছি।
বাক্য শেষ করার আগেই এরীশের শীতল কন্ঠস্বরে আস্বস্ত হয়ে চোখ তুলে চাইলো তুষার, পুনরায় শুধালো,
—- কিন্তু আপনি হঠাৎ এখানে?
অবচেতন ঈশানীর স্নিগ্ধ মুখশ্রীর পানে একঝলক পরখ করে,মূহুর্তেই চোখ সরিয়ে নিয়ে গভীর কন্ঠে এরীশ বলে,
—- আই হ্যাড টু ডিল উইথ সামথিং।
কি কাজ তা আর আগ বাড়িয়ে জানতে চাইলো না তুষার, উল্টো ঈশানীকে এরীশের কোলে এভাবে দেখতে পেয়ে হকচকিয়ে উঠে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
—- ওকে আমার কাছে দিন, আমি পেন্ট হাউজে নিয়ে যাচ্ছি।
এরীশ দিলো না, উল্টো তুষার কে আদেশ করে বললো,
—- ইট’স ওকে, তুমি ফ্লোরাকে নিয়ে ফিরে এসো।
কথা শেষ করে ঈশানী সমেত গাড়ির দিকে এগিয়ে যায় এরীশ, দরজা খুলে ঈশুকে প্যাসেঞ্জার সিটে বসিয়ে দিয়ে, নিজে গিয়ে বসে পড়ে ড্রাইভিং সিটে।
অতঃপর গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগ মূহুর্তে অবচেতন ঈশানীর সিট বেল্টটা বেধে দিতে দিতে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বিড়বিড়ালো এরীশ,
আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ১২
—- এই নিয়ে দু’বার এরীশ ইউভানের কোলে উঠলে তুমি, ইউ হ্যাভ লাক মানতেই হবে।
“দু’বার “শব্দটা উচ্চারণ করতে গিয়ে এরীশের মনে পরে যায়,
সেদিন ক্রুজ শিপের মধ্যেও ঠিক একই ভাবে চেতনা হারিয়ে ওর বুকের উপর ঢলে পরেছিল ঈশানী। আর শূন্য মস্তিষ্কের এরীশ আজকের মতো করে সেদিনও স্বহস্তে কোলে তুলে কেবিনে রেখে এসেছিল এক অসহায় অবচেতন নীলাম্বরীকে।