আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ১৯ (২)

আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ১৯ (২)
suraiya rafa

সন্ধ্যা রাতের নিরবতা ছাপিয়ে ঝিঁঝি পোকার আওয়াজ বেড়েছে দিগুণ । থেকে থেকে গহীন জঙ্গলের ভেতর থেকে ভেসে আসছে সাদা নেকড়েদের গা ছমছমে হাউলিং। অদূরের জঙ্গল থেকে ভেসে আসা জোড়ালো আওয়াজে সারা দিয়ে পেন্টহাউজ কাঁপিয়ে হাউলিং করছে এরীশের আদুরে নেকড়ে বোজো। নিস্তব্ধ রাতে এহেন হাউলিং এর আওয়াজ ভীষণ ভয়াতুর শোনালেও আজ আর সেসব ভয় ছুঁতে পারছে না ফ্লোরা আর ঈশানীকে। মেয়ে দুটো আবারও এসে বসেছে বিস্তৃত ছাঁদ বারান্দায়। অনর্গল তুষারপাত আর ঠান্ডা দু’টোই মাত্রাতিরিক্ত, তবুও ওরা নিরুদ্বেগ।
ঈশানীর দৃষ্টি নিস্প্রভ। সেদিকে এক পল চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ফ্লোরা,অতঃপর গলার আওয়াজ খাদে নামিয়ে একাই বলতে লাগলো,

— জন্ম কাউকে খারাপ বানায় না ঈশু। আর না তো এরীশের জন্মের উদ্দেশ্য কখনো মাফিয়া কিং হওয়া ছিল। কিন্তু পৃথিবীতে জন্মানোর পরে তোমার রক্ষকেরাই যখন ভক্ষক হয়ে দাঁড়ায়, তখন সেই তুমি টা আর তুমি থাকবে না। মায়া, ভালোবাসা,প্রিয়জন এগুলোর মতো হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতির প্রতি তৈরি হবে এক আকাশ সমান বিতৃষ্ণা। আর এরীশ তো সেই মায়ার বাঁধন গুলো নিজ হাতে র’ক্তা’ক্ত করেছে । রাইফেলের গু’লিতে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে ভালোবাসা নামক বিনে সুঁতোর টান।
তাহলে এতোগুলা বছর পরে ওর কাছ থেকে তুমি কেমন আচরণ আশা করছো ঈশু? হ্যা এটাই সত্যি ও ভালোবাসতে জানেনা। আর না তো কখনো দূর্বলতা অনুভব করে কারও জন্য। ওর খরখরে কড়াপড়া হৃদয়টা যতটা না নির্জীব তার চেয়েও বেশি নিষ্ঠুর।
এটুকু বলে থামলো ফ্লোরা। ওর পানে দৃষ্টি ঘোরালো ঈশানী, লম্বা শ্বাস টেনে বুক ভরে কনকনে শীতল বাতাস পুরে বিরস মুখে শুধালো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— তুমি ওর সম্মন্ধে এতো কিছু কিভাবে জানলে?
— ছোট বেলায় একটু আধটু মায়ের কাছে শুনেছিলাম, সেটুকুই। এছাড়া খোলাখুলি তেমন কিছুই জানিনা। কারণ এরীশের পেন্ট হাউজে তার অতীত নিয়ে আলোচনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ওর দুনিয়াটা আসলে এক দু’দিনে এমন রঙহীন কালো হয়নি ঈশু। বুঝ হওয়ার পর থেকেই এরীশ নিঃসঙ্গ।
চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জবাব দেয় ফ্লোরা। এখনো একই দৃষ্টিতে ওর পানে চেয়ে আছে ঈশানী। মেয়েটার জ্বলজ্বলে নীল চোখের মাঝে কৌতূহল সুস্পষ্ট। তা দেখে ফ্লোরা বলতে শুলো করলো আবারও,
— শুনেছি এরীশ বাংলাদেশের বংশভূত হলেও ওর জন্ম রাশিয়ায়।কারণ সে সময় bratva এর অন্তর্ভুক্ত আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়া টেরোরিস্ট পাইথন প্যারাইডাইসের লিডার মি. ভানিয়া মিকাইলের একমাত্র বিশ্বস্ত স্পাই ছিল এরীশের বাবা আন্দ্রেই। আমি যতটুকু জানি এরীশের বাঙালি নাম অরণ্য, যেটা কখনোই কোথাও ব্যাবহার করতে পছন্দ করেনা এরীশ।
ফ্লোরার কথায় ঈশুর অযাচিত মস্তিষ্কে হানা দেয় সূদুর খাগড়াছড়ির এক টুকরো বেনামী স্মৃতি,

— বাই দ্যা ওয়ে আমি অরণ্য।
তখনকার সেই বাক্যটুকু কর্ণকূহরে মধুসুধার মতো ঠেকলেও এখন সেসব কিছু ঘৃণার মিশেলে একীভূত। ঈশানীকে ভাবতে দেখে কথার পারদে লাগাম টানে ফ্লোরা, আগ বাড়িয়ে শুধায়,
— কিছু ভাবছো ঈশু।
ফ্লোরার ডাকে ভ্রম কাটে ঈশানীর, ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে পুনরায় বলে,
— পাইথন প্যারাডাইসের লিডার অন্যকেউ ছিল। তাহলে এরীশ?
আকাশ পানে চেয়ে ভাবুক স্বরে ফ্লোরা বললো,
— এক কথায় যদি বলি, এতো অল্প বয়সে এরীশের জীবনটাকে এমন নরক বানানোর পেছনে একমাত্র দায়ী এই পাইথন প্যারাডাইস।
— মানে?

ফের প্রশ্ন ছুড়লো ঈশানী। ওর কথার পাছে এবার আর থেমে থেমে নয়, বরং এক নাগাড়ে বলতে শুরু করে ফ্লোরা।
— মাফিয়া গ্রুপ গুলোর লেনদেন বলো, কিংবা ডিল বলো, এগুলো শুধু কালো টাকা আর অ’সাধু ব্যবসাতেই সীমাবদ্ধ নয় ঈশু। মাফিয়ারা অনেককিছুর বিনিময়ে লেনদেন করে, অনেকটা আগেকার যুগের দেনাপাওনার মতোই। কখনো ক্ষমতার বিনিময়ে মানুষের লেনদেন হয়, তো কখনো মানুষের বিনিময়ে ক্ষমতার। মাঝেমধ্যে তো সর্বশান্ত হয়ে কেউ কেউ নিজেকেই নিজে বিলিয়ে দেয় নিষিদ্ধ জগতের অন্ধকার মরীচিকার মাঝে।
ঈশানী হা করে তাকিয়ে আছে ফ্লোরার মুখশ্রী পানে। ওর চেহারায় বেকুব ভঙ্গিমা স্পষ্টত হওয়ায় ফ্লোরা বলে,
— কি! বুঝলে না তাইতো?
উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানায় ঈশানী। সহসা মৃদু হেসে জবাব দিলো ফ্লোরা,

— শুনেছি, এরীশের বাবা ছিলেন অত্যন্ত লোভী আর কুটিল স্বভাবের একজন লোক। ক্ষমতার লোভে যা কিছু করতে পারতেন তিনি। একই সাথে দাড়িয়ে হাজার জন কে মে’রে ফেলাও ছিল তার কাছে পৈশাচিক আনন্দের অংশ বিশেষ মাত্র ।ওইজন্যই তো খুব তাড়াতাড়ি ভানিয়া মিকাইলের বিশ্বস্ত স্পাই হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তবে ক্ষমতার লোভে নিজের বসকে পর্যন্ত প্রতারিত করতে দু’বার ভাবেনি আন্দ্রেয়।মাফিয়া বসের আড়ালে bratva এর সঙ্গে গোপনীয় লেনদেনে তার ছিল অগার নির্ভীকতা। তবে দূর্ভাগ্য এরীশ ইউভানের। এমন একজন বাবার ঘরেই জন্ম হয়েছিল তার, যে কিনা প্যারাডাইসের লোভে নিজের আট বছরের ছেলেকে bratva এর হাতে তুলে দিতেও দু’বার ভাবেনি।
— ছেলেকেই কেন?
প্রত্যুত্তরে ফ্লোরা বললো,
— সে ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। তবে এটাই সত্যি যে আন্দ্রেয় তার নিজের ছেলেকে মাফিয়াদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।আর বিনিময়ে চেয়েছিলেন তার একমাত্র বস ভানিয়া মিকাইলের বিশাল পাপের সাম্রাজ্য দ্যা পাইথন প্যারাডাইস।

— তারপর কি হলো?
কৌতুহলী দেখালো ঈশানীকে। ফোঁস করে এক চিলতে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবলেশহীন গলায় ফ্লোরা বললো,
— তারপর আর কি? শুরু হলো এরীশের দূর্বিশহ জীবন যাপন। যে কাজ গুলো মানুষ করতে পারেনা, যে খাবার গুলো মানুষ খেতে পারেনা, সেগুলোই যোগ হতে লাগলো ওর নিত্তনৈমিত্তিক অভ্যেসের তালিকায়। কোনোভাবে না করতে চাইলে ওকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হতো। বলা হতো, মাফিয়া কিং হওয়ার প্রথম ধাপ এটা। অনৈতিক, অবৈ’ধ কাজ থেকে শুরু করে ফাইটিং, গু’লি চালানো কোনোকিছুই বাদ যায় নি ওর অভ্যেস থেকে। এক পর্যায়ে ট্রেনিং এ এসে যোগ হলো খু’ন করার অভিনব কৌশল।

আট বছরের এরীশের জন্য এই জঘন্য ক্রা’ইম গুলো ছিল অত্যন্ত আ’তঙ্কদায়ক আর মানসিক যন্ত্রনার। ও পালাতে চেয়েছিল বহুবার, কিন্তু পারেনি। উল্টো ধরা পরে কঠিন শা’স্তির মুখোমুখি হয়েছে বারবার।
এরীশের জীবনের আশা আকাঙ্ক্ষা ওখানেই নিভে যেতে পারতো, কিন্তু যায়নি। বেশকিছু বছর মাফিয়া হাউজের ওই ছিপছিপে দু’কামরার ঘরটাতে বসবাস করার পরেও বাড়ি ফেরার আশা ছাড়েনি এরীশ।কারণ সাধারণ স্বাভাবিক একটা কৈশোরিক জীবন যাপন তখনও ব্যগ্র হয়ে তাড়া করে বেড়াতো ওকে। দিনের আলো টুকু মিয়িয়ে গেলে তমশাচ্ছন্ন আধারের মাঝে নিজের পাপী সত্তাটাকে ভীষণ ঘৃ’ণা করতো এরীশ। অগত্যা দীর্ঘ আট বছর পরেও কখনো আশাহত হয়নি ও। উল্টো সবসময় স্বপ্ন দেখেছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার। যার ফলস্বরূপ ওর প্রতি যখন মাফিয়াদের বিশ্বাস তুঙ্গে। পুরো আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সবার মুখে যখন একই নামের জয়ধ্বনি, ঠিক তখনই এরীশ সিন্ধান্ত নেয় ও আরও একবার পালাবে। পালিয়ে গিয়ে bravta এর পুরো মাফিয়া সাম্রাজ্যকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে এরীশ আসলে কি জিনিস।

তখনকার এরীশ ইউভান হয়তো পাইথন লিডার এরীশের মতো এতোটা সুকৌশলী ছিলনা কখনোই। নয়তো জানার কথা ছিল, পাপের দুনিয়ায় একবার ভুলবশত ঢুকে পরলে তার আর এখান থেকে পরিত্রান নেই।
সবকিছু ছাড়িয়ে যতদূরেই সে পালিয়ে যাক না কেন, পাছে ফেলে আসা অগণিত পাপের স্তূপ তাকে ভৌতিক ছায়ার মতোই তাড়া করে বেড়াবে সারাজীবন। এরীশের সঙ্গেও এমন কিছুই ঘটেছিল। ও নিজের কৌশল আর পারদর্শীতা দিয়ে পাপের দুনিয়াকে বিদায় জানিয়ে এসেছিল ঠিকই, কিন্তু পাপ ওকে ছাড়েনি। বরং দিগুণ হস্তে জড়িয়ে ধরেছিল আষ্টেপৃষ্টে। সেবার এমন ভাবেই পাপের নৃ’শংস বেড়াজালে বাঁধা পরেছিল ওইটুকু ছেলেটা, যে ওর জন্য সাধারণ জীবন যাপন হয়ে উঠেছিল এক আতঙ্কিত দুঃস্বপ্নের আরেক নাম । সেই সঙ্গে ভেতরের আবেগ অনুভূতি সবকিছু হারিয়ে গিয়েছিল বিতৃষ্ণার মহাসমুদ্রে। ভেতরের অনুভূতিকে জ্যান্ত কব’র দিয়ে এরীশ হয়ে উঠেছিল এক হৃদয়হীন জানোয়ার।

— মাফিয়া টেরিটোরি থেকে বেরিয়ে আসার পরে কি হয়েছিল এরীশের সঙ্গে?
চোখের পাতায় কৌতুহল ধরে রেখে ভাবুক স্বরে প্রশ্ন ছোড়ে ঈশা, ওর কথার প্রত্যুত্তরে ফ্লোরা বলতে শুরু করে আবারও,
— মা বলেছিল টেরোটোরি থেকে পালিয়ে সবার আগে নিজের বাড়িতে যায় এরীশ। যেখানে ওর মা আর ছোট্ট বোনটা থাকতো। খুব বেশি ছোট ছিল না বোনটা। এরীশের চেয়ে দু’এক বছরের ছোট মাত্র। তবে বাড়িতে প্রবেশ করার পরেই সবচেয়ে বড় ঝটকা খায় এরীশ, সাধারণ একটা রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া থেকে কত সহজেই না টেনে হিঁচড়ে বেড় করা হচ্ছিল ওর মা আর ছোট্ট বোনটাকে। এরীশের চোখের সামনে ঘটেছিল সবটা।কারণ, এরীশ পালিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু পালানোর অপরাধে মাফিয়াদের সবচেয়ে বড় থাবাটা পরেছিল ওর মা আর বোনের উপর। যা হতে দিয়েছিল ওর বাবা স্বয়ং আন্দ্রেয়।
— কি হতে দিয়েছিলো?
— এরীশ নিখোঁজ হওয়ার পরেও ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য আন্দ্রেয় তার স্ত্রী আর কন্যাকে ইতালিয়ান মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়। আর এরীশ যে সময়ে বাড়িতে পৌঁছায় ঠিক তখনই ওরা সবাই জোর জবরদস্তি করে এরীশের মা আর বোনকে হেলিকপ্টারে তুলছিল। সময়টা ছিল একদম মুখোমুখি।
এটুকু শুনে উদ্বিগ্নতায় ভ্রু বেঁকে গেলো ঈশানীর, ব্যগ্র হয়ে শুধালো ,

— কি বলছো এসব? ক্ষমতার লোভ মানুষকে এতো নিচে নামাতে পারে?
— পারে।
— তারপর নিশ্চয়ই এরীশ বাঁচিয়েছিল ওর মা বোন কে?
ঈশুর কথায় ফিচেল হাসলো ফ্লোরা। বললো,
— এরীশ তখন নিতান্তই কিশোর মাত্র, মাফিয়াদের সঙ্গে লড়াই করার মতো শক্তি কিংবা সামর্থ্য কোনোটাই ছিল না ওর । তবে কৌশল ছিল,বুকে অদম্য সাহস আর জিদ ছিল প্রচুর। যার বশবর্তী হয়ে নিজের জীবনের মা’রাত্মক ক্ষতিটা সেসময়ই করেছিল এরীশ।
চোখ বড়বড় হয়ে গেলো ঈশানীর, তা দেখে ফ্লোরা বলে ওঠে,

— যে সময় এরীশ বুঝতে পারলো যে, ওর আর করার কিছুই নেই। হেলিকপ্টার টা ইতিমধ্যে সমতল ছাড়িয়ে উড়ে যাচ্ছে। নিয়ে যাচ্ছে ওর মা আর একমাত্র বোন কে। আর কখনো দেখা হওয়ার সুযোগ নেই।এবার থেকে ওর মা আর ছোট্ট বোনটার ডেসটিনি হবে হয়তো কোনো নোংরা মাফিয়া ক্লাব, আর নয়তো অন্ধকার এক ডোম ঘর। ঠিক সে সময় মস্তিষ্ক টগবগিয়ে ওঠে এরীশের। বীভৎস রাগের বশবর্তী হয়ে তৎক্ষনাৎ ঘটিয়ে ফেলে সবচেয়ে বড় অঘটন। ওকে যে গার্ডগুলো শক্ত করে ধরে রেখেছিল, অকস্মাৎ তাদের কোমরের খাঁজ থেকে রাই’ফেল টেনে নেয় এরীশ। হেলিকপ্টারটা বেশি উপরে উঠতে পারেনি তখনও। ঠিক এমন সময় কোনোকিছু না ভেবেই চোখ খিঁচে একাধিক রাইফেলের গু’লি নিক্ষেপ করে হেলিকপ্টার টাকে উদ্দেশ্য করে। গু’লি লাগার কয়েক সেকেন্ডের মাথায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তৎক্ষনাৎ সেখানেই ক্র্যাশ করে উরন্ত যানবাহনটি। চোখের সামনে বিকট আওয়াজ করে দাউদাউ করে ঝলসে ওঠে এক মস্তবড় যান। যার মধ্যে উপস্থিত ছিল স্বয়ং এরীশে মা আর বোন।

ধীরে ধীরে চোখের সামনে একটু একটু করে পু’ড়তে শুরু করে সবকিছু। ঝলসানো ধ্বংস স্তূপের মাঝে কোনোকিছুই আর অবশিষ্ট থাকেনা। দিন শেষে নিজের হাতে মা আর বোনকে এক বীভৎস য’ন্ত্রনাদায়ক মৃ’ত্যু দিয়ে ক্ষান্ত হয় এরীশ। ব্যাপারটা এমন যেন, যা হয়েছে খুব ভালো হয়েছে।
তবে এসবের প্রক্ষিতে চরম প্রতিশোধের নেশায় উদভ্রান্ত হয়ে পরে এরীশ। ভেতরের পরিবর্তনটা বোধহয় তখনই হয়েছিল। দগদগে রক্তিম অঙ্গারের মাঝে একমুঠো ছাঁই ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট ছিল না আর।
এই কাহিনীর পর পরই এরীশের প্রথম স্বীকার হয় ওর নিজের বাবা আন্দ্রেয়। তখন ছিল সন্ধ্যা নামার আগ মূহুর্ত,দূর্বার সিঁদুর রাঙা টকটকে লাল আকাশের মতোই র’ক্তে মাখামাখি হয়ে ভরসন্ধ্যায় এই পেন্ট হাউজে এসে হাজির হয় এরীশ।

আমরা তখনও পেন্ট হাউজেই থাকতাম। পেন্ট হাউজের মাঝে যে লাউঞ্জটা দেখছো ঠিক ওখানে দাঁড়িয়ে নিজের বাবাকে নৃ’শংস ভাবে কু”পি’য়ে হ”ত্যা করে এরীশ। সেদিন ওর মাঝে মানুষ নয়, যেন জেগে উঠেছিল এক ভয়াবহ হিংস্র পশুসত্তা। ওর বাবা ম’রে গিয়েছিল অনেক আগেই, তবুও উন্মাদের মতোই ঘন্টার পর কু’পি’য়ে যাচ্ছিল একটা ছিন্নভিন্ন ম’রদে’হকে। যেন এটা কোনো মানুষ নয়, জন্তু জানোয়ারের খুবলে খাওয়া একটুকরো সামান্য মাংসের অংশবিশেষ মাত্র । তাজা র’ক্তে ভিজে গিয়েছিল ওর সমস্ত শরীর, তবুও থামছিল না ওর মাঝের হিং’স্রতা। ঠিক সেসময় পেছন থেকে ওর কাঁধের উপর হাত রাখে একজন।
কথার এই পর্যায়ে বিরতি টানলো ফ্লোরা, ঈশানী অস্থির হয়ে কাঁপা গলায় শুধালো,

— কে রেখেছিল হাত?
বিরস মুখে জবাব দিলো ফ্লোরা,
— তুষার ছিল ওটা।
তীক্ষ্ণ ভাঁজে কুঞ্চিত হলো ঈশানীর সরল কপাল। ফ্লোরা জিভ দিয়ে শুষ্ক অধর ভিজিয়ে বলতে লাগলো,
— তুষার হলো পাইথন প্যারাইডাইসের আসল লিডার ভানিয়া মিকাইলের একমাত্র ছেলে তুষার জাওয়াদ মিকাইল। তুষারের মা ছিল না। কারণ তার বাবাও ক্ষমতার লোভে অন্য একজন মাফিয়ার মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু নিষিদ্ধ জগতের বাদশা হওয়ার দরুন স্বাভাবিক সম্পর্কটা আর টিকিয়ে রাখতে পারেনি বেশিদিন।
অগত্যা তুষারকে রেখেই বিদায় নিয়েছিল তুষারের মা।কিন্তু আন্দ্রেয় যখন ভানিয়াকে মে’রে নিজে প্যারাডাইসের ক্ষমতা দখল করলো, তখন থেকেই বন্দি ছিল তুষার। খুব খারাপ ভাবে নির্যাতনের স্বীকারও হতে হয়েছিল ওকে। ওইজন্যই আন্দ্রেয়কে মা’রার পর এরীশকে নিজের সেভিয়র মনে করতে শুরু করে তুষার। মাথা পেতে মেনে নেয় নতুন পাইথন লিডারের আকস্মিক বশ্যতা। যেন এটাই হওয়ার ছিল, ছোট বেলা থেকে একটা সহজ সরল সাধারণ ছেলের মাঝে একটু একটু করে স’হিংসতার যে বীজ বপন করে দিয়েছিলbratva। কালের পরিক্রমায় এখন সেই বীজ ডালপালা ছড়িয়ে তেজি, হিংস্র, ধ্বং’সাত্তক এক পাপিষ্ঠে পরিনত হয়েছে।

— তারমানে তুমি বলতে চাইছো এরীশের পুরো পরিবারকে ও নিজ হাতে হ’ত্যা করেছিল তাইতো?
হ্যা সূচক মাথা দোলায় ফ্লোরা,বিক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে,
— এখানে দোষটা ঠিক কার, তা আমার জানা নেই ঈশু। মনে হয় পুরোটাই ছিল পাইথন লিডারের ভবিতব্য। কারণ ডেসটিনি আমরা চাইলেও বদলাতে পারিনা।
ঈশানী সন্দেহাতিক কন্ঠে বললো,
— তুমি বলতে চাইছো, আমরা নই বরং ডেসটিনি আমাদের জীবন বদলে দিতে পারে?
— হ্যা ঈশু পারে। ডেসটিনি অনেক কিছুই বদলাতে পারে।
ফ্লোরার কথার আর কোনোরূপ প্রত্যুত্তর করেনা ঈশানী। বিনা দ্বিধায় ঘুমন্ত আকাশ পানে চেয়ে দীর্ঘশ্বাসের বহর ছাড়ে নির্বিগ্নে।

আজ দুদিন হলো ফ্লোরা নেই পেন্টহাউজে। তুষার আর এরীশের ও হদিস নেই কোনো। ঈশানীর অবশ্য সেসবে মাথা ব্যথা নেই একটুও । ও তো সেদিন রাতের কথাগুলো থেকেই বের হতে পারছে না আজ অবধি। চোখ বুঝলেই মানস্পটে ভেসে ওঠে বিভীষিকা ময় কিছু আবছায়া দৃশ্য। না জানি এরীশ কতটা কষ্ট পেয়ে মে’রে ফেলতে বাধ্য হয়েছিল নিজের পরিবারকে। আর তারপর এক মহাসমুদ্র ব্যথার আড়ালে হারিয়ে গিয়েছিল ওর ভেতরের আবেগ, অনুভূতি, দূর্বলতা গুলো। এখনকার এরীশ ওর অ’ত্যচারী হলেও, সেই ছেলে মানুষ, সহজ সরল এরীশের জন্য বড্ড অনুশোচনা হয় ঈশানীর।যদিও সেসব ফিকে, তবুও আজকাল ঘুমুতে পারেনা মেয়েটা। এই যেমন এখন এই মূহুর্তে কিছুতেই ঘুম নামছে না চোখের পাতায়। মস্তিষ্কে ভীষণ চিন্তার পাহাড়।অক্ষিপট সুস্পষ্ট, অগত্যাই বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো ঈশানী।

এতোগুলা বছর আগে ঘটে যাওয়া অন্যকারও জীবন কাহিনি নিয়ে এতো মাথাব্যথার কোনো মানেই হয়না। সেই ভেবে বিছানা ছেড়ে গিয়ে বসলো স্টাডি টেবিলে। হয়তো ডায়েরি লেখার প্রয়াসে, কিন্তু তার আগে একটু পানি পান করা জরুরি। বোতলে পানি ছিলনা। সহসা পানি পানের উদ্দেশ্যে রুম থেকে পা টিপে টিপে বের হলো ঈশানী। যদিও পা টিপে হাঁটছে তবুও নুপুরের রিনঝিন আওয়াজটুকু ঠিকই ক্রমান্বয়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে নিস্তব্ধ লাউঞ্জের চার দেওয়ালে।

ফ্লোরা না থাকায় কিচেন কাউন্টারটা ফাঁকা পরে আছে। চারিদিকে কেমন শূন্যতা জড়ানো। পুরো লাউঞ্জে এক পল চোখ বুলিয়ে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে ঈশানী,অতঃপর বোতলে পানি ভরে ফের হাঁটা ধরে রুমের দিকে। কিচেন থেকে বেরিয়ে যাবে তখনই ওর দৃষ্টি আটকায় পেন্টহাউজের সদর দরজায়।

সেদিকে ঠোঁট উল্টে সামান্য উঁকি দিতেই দেখতে পায়,আহত অবস্থায় পা টেনে টেনে মাত্রই দরজা ঠেলে লাউঞ্জে প্রবেশ করেছে এরীশ। ওর পরনের সফেদ রঙা শার্টটা র’ক্তে ভেজা।হাঁটুর দিকটা অনেক খানি ছিলে বীভৎস হয়ে আছে । কপালের ক্ষ’তস্থান থেকে চুয়িয়ে চুয়িয়ে পড়া র’ক্তে’র স্রোতে ভিজে যাচ্ছে মুখমণ্ডল। হুট করেই এরীশের এহেন মূমুর্ষ অবস্থা দেখে ভড়কালো ঈশানী। ব্যগ্র পায়ে দু’কদম এগিয়ে গিয়ে আড় চোখে পরখ করলো মাফিয়া বস টাকে। দেখলো ক্ষ’তবিক্ষ’ত শরীরটা নিয়েই ধীরে ধীরে দোতলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এরীশ। ওর কণ্ঠনালী থেকে বেরিয়ে আসা তপ্ত ব্যথাতুর গোঙানির আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিল ঈশানী। যার ফলে প্রথমে কিঞ্চিৎ খারাপ লাগলেও পরক্ষণেই নিজের অবস্থান, নিজের বন্দিদশা সবকিছু মস্তিষ্কে হানা দেয় ওর।ফলস্বরূপ রুমে ফিরে যেতে যেতে বিড়বিড়ায় মেয়েটা,

— যা খুশি হোক আমার কি তাতে? অ’ত্যাচারী একটা।
তবে বিদীর্ণ এক আত্নিক বাঁধায় পা বাড়িয়েও সামনে এগুতে পারলো না ঈশানী। কিয়ৎক্ষন থম মে’রে দাঁড়িয়ে রইলো একই স্থানে। ভেতরে ভেতরে অপার মনুষ্যত্ব বোধ বারবার নাড়া দিচ্ছে ওকে। মস্তিষ্কে ভেসে উঠছে ফ্লোরার বলে যাওয়া সেই শান্ত কথা গুলো,
— মানুষ কোনোদিন পাপী হয়ে জন্মায় না ঈশু। এই দুনিয়া আর দুনিয়ার কিছু নামধারী মানুষরূপি দুষ্কৃতকারীদের জন্য পাপী হতে বাধ্য হয় তারা।
যদিও হৃদয়ের ক্ষত আর ঘৃ’ণার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত তবুও এই পর্যায়ে এসে দোতলার দিকে নজর বুলিয়ে একাই বলতে লাগলো ঈশু,

— আমিতো আর ওনার মতো জা’নোয়ার নই। আমি মানুষ। মনুষ্যত্ব বোধ আর বিবেক দুটোই আছে আমার মাঝে।
কথাটুকু শেষ করে ফ্লোরার রুম থেকে ফাস্টএইড বক্স সমেত দোতলার দিকে পা বাড়ায় ঈশানী। ধীর পায়ে করিডোর দিয়ে এগিয়ে গিয়ে শঙ্কিত হয়ে হাত ছোঁয়ায় এরীশের রুমের দরজায়। সেদিনের ফিঙ্গার প্রিন্ট ম্যাচ করায় তৎক্ষনাৎ খুলে যায় দরজাটি। রুমের মাঝে আলো জ্বলছে। চোরা চোখে ইতিউতি নজর বুলিয়ে পা টিপেটিপে ভেতরে প্রবেশ করে ঈশানী। মাফিয়া বস টা তখন নিজের ক্ষতবিক্ষত অসার শরীরটাকে এলিয়ে দিয়েছে খাটের মাঝে। ওর শরীরের অর্ধেকটা খাটে আর বাকি অর্ধেক খাটের বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। র’ক্তা’ক্ত শরীরটাকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব খারাপ ভাবে আ’ঘাত প্রাপ্ত হয়েছে সে। কিন্তু কৌতুহলের বিষয় হলো পাইথন প্যারাডাইসের মাফিয়া বস কে এভাবে আ’ঘাত করার সাহস হলো কার?

অযাচিত প্রশ্নটা মস্তিষ্ক গহ্বরে হানা দিলেও,এরীশের কাতর স্বরের জন্য খুব বেশি ভাবতে পারলো না ঈশানী। অগত্যা এগিয়ে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে পরলো মেঝেতে। কয়েক মূহুর্ত ওর হাঁটুর ক্ষতস্থানের দিকে বিস্মিত নজরে তাকিয়ে থেকে বিনাবাক্যে সেখানটায় হাত ছোঁয়ালো ঈশানী। ব্যথাতুর শরীরে একটু খানি উষ্ণ হাতের পরশ অনুভব করার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে গতিতে উঠে বসে এরীশ। ওর চাউনী ঘোলাটে। মাথাটাও সমান তালে টলছে। ঘোর লাগা চোখে খানিকক্ষণ অজ্ঞাত নীলাম্বরীকে পরখ করে যখন বুঝতে পারলো এটা ঈশানী, তখন হুট করেই নিজের র’ক্তা’ক্ত পুরুষালি হাতটা আলতো স্পর্শে ছুয়িয়ে দিলো ঈশানীর তুলতুলে কোমল কপোলে। পান পাতার মতোন ঢলঢলে সুশ্রী গালে নিজের র’ক্ত মাখা হাতটা বুলিয়ে অস্পষ্ট আওয়াজে বললো,
— তোমার মতো মেয়ে আর একটাও দেখেনি এরীশ ইউভান।
তাজা রক্তের উৎকট গন্ধে চোখ মুখ কুঁচকে এলো ঈশুর। নিজের নাকটা শিকোয় তুলে মেয়েটা বিরক্ত ভঙ্গিতে ঝাঁঝালো গলায় বললো,

— তা দেখবেন কেন?কোনোদিন শুনেছেন কাউকে নিজের অ’ত্যাচা’রীর ক্ষততে মলম লাগাতে? আমি লাগাচ্ছি। কারণ আমি আপনার মতো জা’নোয়ার নই, আমি মানুষ। বিবেক বুদ্ধি দুটোই আছে আমার।
গম্ভীর মেয়েটার জ্বলজ্বলে নীল চোখে এক পল নিজের ঘোলাটে দৃষ্টি বুলিয়ে আবারও সটান হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় এরীশ। পা দু’টো তখনও বিছানার বাইরেই নিবদ্ধ। এতো বেশি জটিল ক্ষত জীবনে দেখেনি ঈশানী, এসবের জন্য ডাক্তার প্রয়োজন। কিন্তু র’ক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে তো ম’রে যাবে লোকটা। সেই ভেবে তাড়াহুড়ো ওর র’ক্তা’ক্ত কপালে হাত ছোঁয়ায় ঈশানী। কিঞ্চিৎ অনীহা নিয়ে সেখানটায় গজ প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে বলে,
— কি বীভৎস ক্ষত! নির্দয় পাষাণ লোক একটা।
ঈশুর তপ্ত আওয়াজ কর্ণগহ্বর ছুঁতেই ঘোরের মাঝে ফিচেল হাসলো এরীশ। অস্পষ্ট আওয়াজে একা একাই বিড়বিড়ালো ও,

— যদি বলি আজ এই বীভৎস ক্ষতগুলো একজনকে সুরক্ষিত রাখার জন্য হয়েছে, তার পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য হয়েছে, তাহলে কি সে বিশ্বাস করবে আমায়?
ওর এসব অহেতুক অস্পষ্ট কথায় কান দিলোনা ঈশানী। বরং মনোযোগী ভঙ্গিতে কপালটাকে মুড়িয়ে দিতে লাগলো সফেদ ব্যান্ডেজের আস্তরে। বিড়বিড় করতে করতে এক পর্যায়ে আধো আধো করে চোখ খোলে এরীশ। চোখ খুলতেই দেখতে পায় একটা স্নিগ্ধতায় জড়ানো সরল পবিত্র মুখ।একজোড়া গভীর সমুদ্রের মতো নীল চোখ। যা এই মূহুর্তে এরীশের দুনিয়া ভুলিয়ে দিতে সক্ষম।

আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ১৯

এরীশ দেখলো, অতঃপর পুনরায় চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো পরম আবেশে। কেন যেন ভীষণ আরাম লাগছে, আরামের কারণে গভীর ঘুমে দু’চোখ জুড়িয়ে আসছে ওর। হতে পারে ব্যথানাশকের পার্শপ্রতিক্রিয়া নয়তো একটা মেয়েলী ভ্যানিলা ফ্লেভারের সুবাসে এই পরাস্ত ঘুমের ঘোর। সে যাই হোক,আহত শরীরটাকে অযথা পেরেশানি দিলোনা এরীশ। ঘুমের ঘোরে তলিয়ে যেতে যেতেই ভুল বশত একটানে নিজের ইস্পাত কঠিন বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলো ঈশুকে। আচানক কান্ডে ধড়ফড়িয়ে উঠলো ঈশানী।মাফিয়া বসের সুদর্শন চেহারাটা ওর চোখের সামনে স্পষ্টত হলো কিছু সময়ের জন্য। বেখেয়ালে সেদিকে এক নজর আহত দৃষ্টি বুলিয়ে, অকস্মাৎ ওকে ধাক্কা মে’রে উঠে দাঁড়ায় ভীত মেয়েটা। সাথে করে নিয়ে আসা ফাস্ট এইড বক্সটা ফেলে রেখেই তাড়াহুড়ো পায়ে রুম ছেড়ে ছুটে বেড়িয়ে যেতে যেতে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে ওঠে,
— জা’নোয়ার একটা।

আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ২০