আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ২১
suraiya rafa
স্বীকারোক্তি, একটি সহজ স্বীকারোক্তি। যা পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃসাধ্য অভিব্যক্তিতে পরিণত হয় তখন, যখন নিশ্চিত ধ্বং’স যেনেও তোমার হৃদয়টা মস্তিষ্কের অজস্র বাঁধা ডিঙিয়ে বেগতিক, বেসামাল হয়ে সেই ধ্বং’সের অভিমুখে পাগলা ঘোড়ার মতোই ছুটে যেতে চায় অর্হনিশ। এদিকে ওই একরত্তি বাঁধাহীন হৃদয়ের দাপটে তোমার পুরো দুনিয়া গতি হারিয়ে নিশ্চল হয়ে পরে মূহুর্তেই।
মাফিয়া বস এরীশ ইউভানের সঙ্গে ঠিক এমন কিছুই ঘটেছে। সারাজীবন নিজের অস্তিত্বহীন দাবি করা নির্জীব হৃদয়টা হুট করেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে কোনো এক সরলতার পরশে। একজোড়া নীল চোখের গভীরে দানা বেঁধেছে সুপ্ত অনুভূতির দেওয়াল। পৈশাচিক বিধ্বংসী মস্তিষ্কটা যত বেশি সেই অনুভূতি গুলোকে উপেক্ষা করতে চাইছে, ততবেশি বেড়ে যাচ্ছে অন্তর্দহন। এরীশের সুকৌশলী গতিহীন ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বুঝতে পেরেছে ওর দিশাহীন নির্দয় সত্তাটা প্রেমে পরেছে, খুব ভয়ংকর রকমের প্রেমে। অথচ তীক্ষ্ণ, গুরুগম্ভীর,অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো জলন্ত মস্তিষ্কটা এসব তুচ্ছ অনুভূতি মানতে নারাজ।
অবশেষে গতকাল রাতে এক বৃষ্টি স্নাত নীলাম্বরীকে সাক্ষী রেখে মাফিয়া বস মেনে নিয়েছে নিজের হৃদয়ের অপারগতা । এক নিমেষে ভেঙে দিয়েছে মস্তিষ্ক আর হৃদয়ের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়ানো শক্তপোক্ত সেই স্বীকারোক্তির মহাপ্রচীর।
এরীশ খুব ভালোই করে জানে এই অনুভূতির কোনো নাম নেই, আর না আছে কোনো ভবিষ্যত। ও এটাও জানে, ঈশানী নামক মায়া লতার গভীর নীল চোখের মাঝেই হয়তোবা ওর ধ্বং’স অবধারিত। তবুও যন্ত্রণাদায়ক দগ্ধ এই অনুভূতিকে নিজের কড়াপড়া হৃদয়ের এককোণে নির্দ্বিধায় ঠায় দিয়েছে এরীশ ইউভান। গন্তব্যহীন নিরন্তর মরীচিকায় হারিয়ে যাওয়ার মতোই অকস্মাৎ প্রণয়ের মাঝ সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছে ওর তিমিরে ঢাকা কুৎসিত জীবনটা। পিছু হাঁটার সুযোগ নেই, তাইতো এবার সম্মুখে দাড়িয়ে সকল বাঁধাকে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত স্বয়ং মাফিয়া বস।
ভর সন্ধ্যা বেলা অফিস কামরায় বসে ধ্যানমগ্ন এরীশ। মূহুর্তটা ভীষণ জটিল। মাফিয়া সাম্রাজ্যে সরলতার কোনো স্থান নেই, এটা এরীশ আগেও জানতো, আর এখনও জানে। তাও এই পেন্টহাউজের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ানো এক চিলতে সরলতার সুরক্ষা নিশ্চিতের দায়ভারে মুখিয়ে আছে ওর বিষণ্ন হৃদয়টা। মাথার মধ্যে কিছু একটা চলছে, সেই ভাবনায় নিস্প্রভ ওর দু’চোখ।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
— ভেতরে আসবো?
তুষারের আকস্মিক আগমনে ভাবনা থেকে ছিটকে বেড়িয়ে এলো এরীশ।চোখের পাতায় এক পল ছেড়ে ভেতরের আসার সায় জানালো বিনাবাক্যে। অনুমতি পেয়ে লম্বা পা ফেলে ভেতরে প্রবেশ করে তুষার। সবসময়ের মতো হাতে থাকা আইপ্যাডটা এরীশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করে আন্ডারওয়ার্ল্ডের বিভিন্ন খবরাখবর। আইপ্যাড স্ক্রলিং করতে করতে অত্যন্ত গভীর কন্ঠে এরীশ শুধালো,
— দুবাই মিশনের কি খবর?
— অলমোস্ট সাকসেসফুল, গোল্ড বার ভর্তি কাভার্ডভ্যান গুলো খুব শীঘ্রই মরুভূমি ধরে বর্ডার ক্রস করবে, তারপর সোজা ক্রুজ শীপে।
ধাতস্থ হয়ে জবাব দেয় তুষার, এরীশ পুনরায় বলে ওঠে,
— এতো বড় একটা মিশন ফেলে রেখে চলে আসাটা কি ঠিক হলো?
জিভের আগায় শুষ্ক অধর ভেজালো তুষার, তপ্তস্বরে জবাব দিলো,
— কালকের প্রোগ্রামটাও কম ইম্পর্টেন্ট ছিল না এরীশ। ব্লাড ডায়মন্ড নিলামে ওঠার কথা ছিল কাল। অথচ ধূর্ত ডেনিয়েল হুট করেই ব্লাড ডায়মন্ডের পরিবর্তে একটা স্লাটকে তুলে দিলো।
— কিছু তো একটা চলছে ওর মাথায়।
কপাল জুড়ে চিন্তার ভাজ আটলো এরীশ,শকুনের মতো স্থির দৃষ্টি জুড়ে ঠিকড়ে পড়ছে কৌতুহল।এরীশের ভাবনায় জুতসই ঢেউ তুলে দিতে তুষার বলে ওঠে ,
— কাল একটা অঘটন ঘটে গিয়েছে।
তরাগ করে চোখ তুলে চাইলো এরীশ, মুখমণ্ডলের গাম্ভীর্য ভাবটা অটল রেখে বললো,
— ক্লিয়ার করো।
— আমার মনে হয় কাল প্রোগ্রামে এতো কৌশল অবলম্বনের পরেও, মিস ব্লু আইড এ্যাঞ্জেলকে ঠিকই চিনে ফেলেছে ডেনিয়েল।
— হু কেয়ার’স।
জিভের আগায় গাল ঠেলে বিদ্রুপাত্তক স্বরে জবাব দিলো এরীশ। তুষার বললো,
— কিন্তু আমার দুশ্চিন্তা অন্য জায়গায়।
ভ্রু বাঁকালো এরীশ, ফের তপ্তস্বরে জবাব দিলো তুষার,
— সেদিনের অজ্ঞাত স্পাই আর ক্যামেরা দু’টোরই খোঁজ পাওয়া গিয়েছে,লোকটা ফরেইনার। বাংলাদেশী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে দুর্ভাগ্য বশত ক্যামেরার মধ্যে কোনো হার্ডডিক্স পাওয়া যায়নি।
— তারমানে তুমি বলতে চাইছো, স্পাই দু’টো ডেনিয়েলের নয় বরং অন্যকারও হয়ে কাজ করছিল?
বিরস মুখে হ্যা সূচক মাথা দোলায় তুষার। তীক্ষ্ণস্বরে বলে,
— কিন্তু!মিস ব্লু আইড এ্যাঞ্জেলের সঙ্গে ওই অজ্ঞাত লোকের কানেকশনটা ঠিক ধরতে পারছি না।
— হোয়াট এভার। গড ফাদার যেই হোক না কেন,যত বেশিই তার ম্যান পাওয়ার থাকুক না কেন, ওদিকে হাত বাড়ালে তাকে শিকড়ের মতো উপড়ে ফেলে দিতে দু’বার ভাববো না আমি।
এরীশের তীব্র অধিকার বোধ আর আর র’ক্তিম মুখমন্ডলের দিকে চেয়ে হতবিহ্বল তুষার। চোখের আগায় বিস্ময়টুকু ধরে রেখেই,অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলে ওঠে,
— আপনি কি সিরিয়াস এরীশ?
— তুমি ভালো করেই জানো এরীশ ইউভান কখনো ঠাট্টা করেনা।যা বলেছি, আর যা করেছি সবটা ভেবেচিন্তে। আমি এরীশ পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও এ কথার নড়চড় হবে না কোনোদিন । বাই দ্যা ওয়ে, পেপার্স গুলো এনেছো?
এরীশের মতো একরোখা পা’গলা ঘোড়াকে আটাকানোর দুঃসাধ্য তুষারের নেই। অবশ্য স্বয়ং এরীশ ইউভান নিজেই সেই কার্জে অপারগ। অগত্যা আড়ালে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাতে থাকা পেপার্সগুলো এরীশের পানে এগিয়ে দিলো তুষার। অতঃপর আস্তে করে দু’কদম পিছিয়ে গিয়ে শুকনো মুখে বললো,
— আরেকবার ভেবে নিলে ভালো হতো না? এটা সত্যিই বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে এরীশ। মেয়েটার জীবন নিয়ে এভাবে ছেলেখেলা করাটা কি ঠিক হবে?
তুষারের কথার প্রত্যুত্তরে চোখে মুখে ক্ষীপ্রতা টানলো এরীশ, ক্রোধান্বিত স্বরে দাঁতে দাঁত পিষে বললো,
— হোক বাড়াবাড়ি। আমার করা অপরাধের তোপে দুনিয়া উল্টে যাক, তবুও ওর নামের শেষে স্লাট শব্দটা দ্বিতীয়বার শুনতে চাইনা আমি।
— কিন্তু আপনি তো স্রেফ ওকে বাঁচানোর জন্য কিনে নিয়েছিলেন।
—সেটা আমি আর তুমি জানি, পুরো দুনিয়া তো আর জানেনা।
ওদের বাকবিতন্ডার মাঝেই ঈশানীকে নিয়ে হাজির হলো একটা গার্ড। আজ আর টানা হেঁচড়া নয়, বরং নতজানু হয়ে চুপচাপ নিজ ইচ্ছেতেই এখানে এসেছে ঈশানী। কালকের পর থেকে এরীশের সঙ্গে লাগতে আসার কিংবা পেন্টহাউজ থেকে পালানোর দুটো ইচ্ছেই পুরোপুরি লোপ পেয়েছে ওর মাঝে। নিষ্ঠুর দুনিয়ার প্রবল জলোচ্ছ্বাসিত ঢেউয়ের দোলায় কংক্রিটের তুচ্ছ দেওয়ালের মতোই ভেঙে গুড়িয়ে গিয়েছে ওর দিবালোকের ন্যায় কঠোর আত্নবিশ্বাস।বারংবার ঠকে যেতে যেতে ক্লান্ত ঈশানী। আবারও ভুলের উপর ভুল করে নিজেকে আর বোকা প্রমান করার কোনো ইচ্ছে নেই ওর, ফলস্বরূপ কুণ্ঠায় গুটিয়ে নিয়েছে নিজেকে ।
ঈশানী দরজা ঠেলে অফিস কক্ষে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে থমকে যায় এরীশ। তুষারের মাঝেও লোপ পায় কথা বলার স্পৃহা। গুটি পায়ে সামনে এগিয়ে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে মেয়েটা । খানিকক্ষণ সময় নিয়ে পেপার্সগুলোতে চোখ বুলিয়ে গম্ভীর রাশভারী আওয়াজে এরীশ বলে ওঠে,
—হান্ড্রেড মিলিয়ন রুবলের পরিমাণ জানো?
কুণ্ঠায় নতজানু হয়ে পরে ঈশানী,সামান্য চোখ উঁচিয়ে এরীশের পানে শঙ্কিত দৃষ্টি ফেলে না সূচক মাথা নাড়ায় সে,
— বেশ তাহলে সাইন করো।
হাতে থাকা পেপার্স আর কলমটা সামনে এগিয়ে দিয়ে চেয়ারে টানটান হয়ে বসলো এরীশ।
এরীশের কথায় চকিতে মাথা তুলে সামনে দৃষ্টিপাত করে ঈশানী,টেবিলের উপর রাখা দলিল জাতীয় পেপার্স গুলোর দিকে বিস্ময়কর চাউনী ফেলে উদ্বিগ্ন স্বরে বলে ওঠে,
— কিসের পেপার্স এগুলো? আমি কেন সাইন করতে যাবো?কি লেখা আছে এতে?
— এগুলো কন্ট্র্যাক্ট পেপার্স। এতে লেখা আছে আমি এরীশ ইউভান তোমায় হান্ড্রেড মিলিয়নের বিনিময়ে কিনে নিয়েছি। এবং পালিয়ে যাওয়া তো দূরে থাক, তুমি চাইলেই আমার অনুমতি ব্যাতীত এই পেন্টহাউজের বাইরে পা রাখতে পারবে না কোনোদিন। যদি কোনোদিন পালানোর চেষ্টাও করেছো, তবে এই হান্ড্রেড মিলিয়নের পুরো দায়ভার গিয়ে পরবে তোমার পরিবারের উপর। তাদেরকেই টাকা টা পরিশোধ করতে হবে আমায় । আর যদি তারা পরিশোধ করতে অক্ষম হয়, তাহলে আমি ঠিক কি উপায়ে নিজের টাকা উশুল করে নিতে পারি সেটা নিশ্চয়ই তোমাকে নতুন করে এক্সপ্লেইন করতে হবে না?
এতোক্ষণ ধরে সবকিছু শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরে ঈশানীর। এতোদিন ওকে নিয়ে যা ইচ্ছে করেছে, আর এখন পরিবারকেও এসবের মাঝে টেনে আনতে চাইছে। এই লোকটা এতো নিকৃষ্ট কেন? কেমন করেই বা এই মানুষটার প্রতি উন্মাদের মতো ভালোবাসা জন্মেছিল হৃদয়ে? সেসব ভেবে এখন অবিশ্বাসের তোড়ে মাথা ঘুরে ওঠে ঈশানীর।
—এক্সপ্লেইন শোনা হয়ে গেছে, এবার সাইন করো।
ঈশানীর ভাবনার মাঝে পুনরায় বলে ওঠে এরীশ। ওর কথায় মূহুর্তেই শান্ত মস্তিষ্কটা তিরিক্ষি হয়ে ওঠে ঈশুর, ও তৎক্ষনাৎ ঘোর আপত্তি জানিয়ে তেতে উঠে বলে,
— অসম্ভব পেয়েছেন টা কি? আপনি যদি আমাকে কিনে থাকেন তবে সেই টাকার দায়ভার শুধুমাত্র আমার। অযথা পরিবার কেন টানছেন? আমি কিছুতেই সাইন করবো না এখানে।
ঈশানীর কথার পাছে এরীশ নির্বিকার হয়ে তুষারের পানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
— তুষার, ঈশানীর পরিবারে কে কে আছে?
ঈশানীর আতঙ্কিত চেহারার পানে এক পল দৃষ্টি ফেলে, নির্দ্বিধায় বলতে আরম্ভ করে তুষার,
— বৃদ্ধা নানী, মা রোকেয়া প্রাচী আর একমাত্র বোন….
বাক্য শেষ করতে পারলো না তুষার। ওর কথা জিহ্বায় আটকে দিয়ে আচমকা এরীশের মুখোমুখি হয়ে দাড়িয়ে চ্যাঁচিয়ে ওঠে ঈশানী,
— আমার পরিবারকে কেন টানছেন শুধু শুধু ? ওরা কি ক্ষ’তি করেছে আপনার?
মেয়েটার টলমলে অশ্রুশিক্ত গাঢ় নীল চোখজোড়া ছিল এরীশের খুব কাছে, একেবারে মুখের সামনে। যা দেখা মাত্র আপনাআপনি শ্বাসরোধ হয়ে আসে এরীশের। তৎক্ষনাৎ চোখ বুঁজে চোয়াল শক্ত করে তপ্তস্বরে বলে ওঠে ,
— চোখ নামাও।
মাফিয়া বসের গমগমে আওয়াজে কুণ্ঠিত হয় ভীত সন্ত্রস্ত মেয়েটা। সহসা চোখ নামিয়ে ঠোঁট ভেঙে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলে,
— ওরা কোনো দোষ করেনি, যা করার আমি করেছি। যা শা’স্তি দেওয়ার আমাকে দিন। দয়া করে ওদের কোনো ক্ষ’তি করবেন না।
ক্রদনরত ঈশানীর পানে মুখ ফিরিয়ে তাকালো না এরীশ।পেইন্টিং বিহীন কালো কুচকুচে দেওয়ালের দিকে সম্পূর্ণ মনোযোগ স্থির করে ফের হুকুম করলো মেয়েটাকে,
— পরিবারের ভালো চাইলে সাইন করো। যতদ্রুত সাইন করে চুক্তি সম্পাদন করবে, ততদ্রুতই আশঙ্কা মুক্ত হবে তোমার পরিবার।
মেয়েটা কাঁদছিল খুব। ভেবেছিল কেঁদেকুটে যদি খানিক টলানো যায় মাফিয়া বসের সিদ্ধান্ত। কিন্তু ওর ধারণা ভুল। যার ভেতরে দূর্বলতাই অনুপস্থিত এসব তুচ্ছ কান্নাকাটি দিয়ে তার পাথর হৃদয়ে বর্ষণ নামানো তো অসম্ভব কাজ। ঈশানী নিরুপায়, জীবনটা আজকাল গলার কাটা হয়ে আঁটকে আছে ওর মাঝে, না পারছে অপসারণ করতে আর না তো গলাধঃকরণ করতে। অগত্যা হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে হাতে তুলে দিলো চকচকে নিখুঁত কলমটা,হেঁচকি তুলে শুধালো,
—কোথায় সাইন করতে হবে।
এবারও এরীশ তাকালো না ওর দিকে। তুষার এগিয়ে এসে দেখিয়ে দিলো স্থান।
নিঃশব্দে চোখের জল বিসর্জন দিতে দিতে একের পর এক পাতা উল্টে সাক্ষর করে দিলো ঈশানী। শেষ পাতাটায় সাক্ষর করা হয়ে গেলে কলমটা সেখানেই ছুড়ে ফেলে একছুটে বেড়িয়ে গেলো অফিস কক্ষ থেকে। ঈশানী কক্ষ ছেড়ে বেড়িয়ে যেতেই আড়ালে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিনাবাক্যে পেপার্স গুলোতে কলম চালায় স্বয়ং এরীশ।
বোকা মেয়েটা ভেবেছিল এরীশের কোনো দূর্বলতা নেই, অথচ ও নিজেই যে পাহাড় সমান দূর্বলতা হয়ে এসে নিঃশব্দে চিড় ধরিয়েছে মাফিয়া বসের বরফ কঠিন হৃদয়ের মাঝে, দুনিয়ার কেউ হদিস রাখেনি তার । কেউ খুঁজতে আসেনি বরফ শীতল হৃদয়ে হঠাৎ জাগ্রত হওয়া দগ্ধ দাবানলের ন্যায় অসহনীয় অনুভূতির তুফান।
— আমি আপনাকে নিয়ে চিন্তিত এরীশ। আপনার কিছু হয়ে গেলে পাইথন প্যারাডাইসের ভীত নড়ে উঠবে।
তুষারের কন্ঠে স্পষ্ট উদ্বিগ্নতা। সব পরিস্থিতিতে সাবলীল মুখ ভঙ্গিমা আজ মিলিয়ে গিয়েছে দুশ্চিন্তার আড়ালে। সরু চোখে এক ঝলক তুষারকে পরখ করে ঠোঁট বাঁকিয়ে ক্রুর হাসলো এরীশ। শূন্য ধূসর বাদামি চোখ দু’টোতে তীক্ষ্ণতা ধরে রেখে ধারালো চোয়ালটা শক্ত করে বলে উঠলো,
— দূর্বলতাটা হৃদয়ে জন্ম হয়েছে তুষার, মস্তিষ্কে নয় । ওই একটা জায়গা ছাড়া একচুল ও পরিবর্তন হয়নি কোথাও। পুরো দুনিয়ার কাছে পাইথন লিডার এখনো ব্লাডিবিস্টই রয়েছে।
— কিন্তু আমাদের শ’ত্রুরা জেনে গেলে,
তুষারের কথা শেষ হওয়ার আগেই কঠিন স্বরে জবাব দিলো এরীশ ,
— যেই আসুক না কেন, আমার দূর্বলতায় হাত বাড়ানোর আগে আমার হিং’স্রতার সম্মুখীন হতে হবে তাকে।
এরীশের কথার প্রত্যুত্তরে তুষার ফের কিছু বলতে যাবে, তার আগেই দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে টমেটো প্রিন্স। দেখতে শুনতে বেশ স্মার্ট, মাথায় এটে আছে উলের তৈরি বাকেট হ্যাট,কোট থেকে ঝরঝরিয়ে পরছে শুভ্র তুষারের কথা। ওকে দেখে হাতের পেপার্স গুলো ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখলো এরীশ। অতঃপর ভ্রু নাচিয়ে শুধালো,
— এখানে কি চাই?
ঠোঁট প্রসারিত করে সাবলীল হাসলো এ্যালেক্স। ওর সুনিপুণ হাসিতে ধাতস্থ হতে পারলো না এরীশ, কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ টেনে গম্ভীর স্বরে বললো,
— ডেনিয়েলের হয়ে চামচামি করতে এলে এক্ষুণি বিদেয় হও, দরজা খোলাই আছে।
এরীশের কথায় পুনরায় কুটকুট করে কৌতুক হাসলো এ্যালেক্স, হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর মতো করে বললো,
— ধূর আমি কি এতো বোকা নাকি? ডেনিয়েল আর তুমি মিলে তৃতীয় বিশ্বযু’দ্ধ বাঁধাও গিয়ে তাতে আমার কি? আমার কাজ হলো ঠিকঠাক টমেটো সস সাপ্লাই করা। হেহে!
— কেন এসেছেন সেটা বলুন?
তুষারের কাট কাট প্রশ্নের জবাবে, ঈষৎ হাসলো এ্যালেক্স,বললো,
— এতো রেগে কেন যাচ্ছো বাপু ? মার্কেটে নতুন মাল এসেছে, একদম অরিজিনাল সেটাই দেখাতে এলাম।
তরিৎ বেগে এগিয়ে এলো তুষার,সন্দিহান গলায় বলে উঠলো ,
— কই দেখি?
তৎক্ষনাৎ মাথার হ্যাট খুলে ডেস্কের উপর রাখলো এ্যালেক্স, হ্যাটের মধ্যে কয়েক প্যাকেট পাউডার ড্রা’গ। সেগুলোকে জহুরী চোখে পরখ করে ঘ্রান শুকলো তুষার, অতঃপর গমগমে আওয়াজে বললো,
— এগুলোকে ল্যাবে পাঠাতে হবে, আপনাকে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না আপাতত।
ঠোঁট উল্টালো এ্যালেক্স,ভাবলেশহীন গলায় বললো,
— সে যেখানে খুশি পাঠাও, আমার টমেটো সসে কোনো ঘাপলা নেই। একেবারে ব্র্যান্ডের জিনিস, আর যাই হোক টমেটো প্রিন্স কখনো কোয়ালিটি বিহীন সস সাপ্লাই করে না।
হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে পুনরায়,ড্রা’গের দিকে মন দিলো তুষার।
সেই তখন থেকে ধ্যান মগ্ন হয়ে কপালের ডগায় দু’আঙুল বোলাচ্ছে এরীশ। সে দৃশ্য লক্ষ্য করে অকস্মাৎ এ্যালেক্স বলে ওঠে,
— মেয়েটাকে বেঁচে দিয়েছো নাকি? দেখলাম কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে যাচ্ছে।
ভাবনা থেকে বেড়িয়ে তপ্তশ্বাস ছাড়লো এরীশ, এ্যালেক্সের কথার প্রত্যুত্তর করে বললো,
— পার্মানেন্টলি।
— যাক এতোদিনে তাহলে সুবুদ্ধি হলো তোমার।
— ঠিকই বলেছো এ্যালেক্স। এতোদিনে পার্মানেন্টলি নিজের স্বার্থে কিছু করলাম।
— ঠিক বুঝলাম না।
— বুঝতে যাবেন না। কারণ এরীশ আপনাকে কৈফিয়ত দেবেও না।
তুষারের কথায় চকিতে ঘাড় ঘোরালো এ্যালেক্স। অধৈর্য হয়ে বললো,
—তোমরা দু’জন এমন কেন বলোতো? সোজা কথা কখনো সোজা ভাবে বলোনা।
এ্যালেক্সের কথার পাছে ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তুষার। বিরস মুখে বলে,
—জানিনা।
কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এসে রুমে প্রবেশ করতেই ঈশানী দেখলো ফ্লোরা বসে আছে। ওকে দেখে মেয়েটা ঠোঁটের আগায় মিষ্টি সম্মোহনী হাসি ঝুলিয়ে বললো,
— তোমার জন্যই বসে ছিলাম, কোথায় গিয়েছিলে বলোতো?
ফ্লোরাকে দেখে কান্নার বাঁধভেঙে গেলো ঈশানীর, ও দিশেহারা হয়ে দৌড়ে এসে দু’হাতে জাপটে ধরলো মেয়েটাকে। অতঃপর ফুঁপিয়ে উঠে বললো,
— তুমি কবে ফিরলে ফ্লোরা? আমি তোমাকে বড্ড মিস করেছি।
এতোদিন একসঙ্গে থাকলেও অন্তর্মুখী মেয়েটার মুখ থেকে কখনো এহেন আবেগঘন কথাবার্তা শোনেনি ফ্লোরা। আজ হঠাৎ কেঁদে কেঁদে এসব বলছে দেখে ওর পিঠে আলতো হাত বোলালো ও, আদুরে স্বরে জবাব দিলো,
— কালই ফিরেছি কিন্তু তুমি পেন্টহাউজে ছিলেনা। আর এভাবে কাঁদছো কেন? কি হয়েছে? তুমি কি আবারও পালানোর চেষ্টা করেছিলে ঈশু?
প্রত্যুত্তরে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো ঈশানী। ঈশানীর মৌন সম্মতিতে আতঙ্কিত হয়ে এক ঝটকায় ওকে নিজের থেকে সরিয়ে দিলো ফ্লোরা। প্রচন্ড ঘাবড়ে গিয়ে উদ্বিগ্ন স্বরে বলে,
— হায় ঈশ্বর কি বলছো! তুমি আবারও একই ভুল কিভাবে করলে ঈশু? এরীশ নিশ্চয়ই খুব রেগে আছে, তোমাকে কঠিন কোনো শা’স্তি দেয়নি তো আবার? দেখিতো।
ভয়ার্ত দৃষ্টিতে ঈশানীর হাতে পায়ে নজর বোলায় ফ্লোরা। ঈশানী ওকে থামিয়ে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
— ও আমার কিছুই করেনি, কিন্তু অনেক কিছু করেছে।
সবেগে ভ্রু কুঞ্চিত করে নিলো ফ্লোরা। বললো,
— মানে?
— সে অনেক কথা, কিন্তু তোমার পাশে ওগুলো কি?
ঈশানীর দৃষ্টি অনুসরণ করে চোখ ঘোরালো ফ্লোরা, পাশে রাখা ছোট ছোট কাচের বোতল গুলো দেখিয়ে কুটকুটিয়ে হেসে বললো,
— এগুলো ভদকা। আমার দাদীর নিজ হাতে বানানো, একেবারে অথেনটিক টেস্ট। তোমার সাথে পান করবো বলে নিয়ে এসেছি, তুষারপাত দেখে দেখে এটা পান করতে দারুণ লাগে।
ফ্লোরার কথায় কান্নাকাটি ভাব মূহুর্তেই উবে গেলো ঈশানীর, চোখেমুখে জড়ো হলো ভীষণ অনীহা। গলার স্বর খাদে নামিয়ে মেয়েটা বললো,
—ইউ! এসব আমি খাইনা একদম।
—কেন ক্রীসমাসে খাও না?
— না না আমাদের দেশে এসবের ওভাবে প্রচলন নেই।
— ভালোই হলো আজকে তাহলে একটু টেস্ট করো। দেখবে হৃদয়ে জমানো সব দুঃখ এক নিমেষে কেমন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে।
সন্দিহান দৃষ্টি ফেলে ফ্লোরার হাসিহাসি মুখের পানে চাইলো ঈশু, অবিশ্বাস্য কন্ঠে শুধালো,
— সত্যি বলছো? সব কষ্ট চলে যাবে?
ঝপাঝপ উপর নিচ মাথা নাড়ালো ফ্লোরা, ফের নাকচ করে ঈশানী বললো,
— না বাবা থাক। আমার যদি মাতাল হয়ে ভুল ভাল কিছু করে ফেলি।
— আরে ধূর কিচ্ছু হবেনা, তাছাড়া আমি তো আছি। বেশি না এক প্যাগ খেয়েই দেখো।
ফ্লোরার কথায় আস্বস্ত হয়ে হৃদয়ের অসহনীয় ব্যথা ভোলার প্রয়াসে সত্যি সত্যিই এক চুমুক পান করলো ঈশানী। পান করতে না করতেই মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো ওর। একঘেয়ে বিরক্তির জীবন থেকে ছুটি নিয়ে কোথায় যেন উড়ে যেতে লাগলো ভেতরের কৈশোরিক আত্নাটা। ঈশানীর মনে হলো কয়েকগুণ হালকা লাগছে ওর ভেতরটা, অগত্যা সবটুকু পানীয় শেষ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে পান পাত্রটা ফ্লোরার নিকট এগিয়ে দিয়ে বোকার মতো হেসে বলে উঠলো,
— আরেকটু দাও ফ্লোরা।
***********************************
কথা শেষ করে মাত্রই অফিস রুম থেকে বেড়িয়েছে এ্যালেক্স। দোতলার সিঁড়ি ভেঙে লাউঞ্জের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে। হ্যাটের মধ্যে ড্রা’গ থাকায় সেটা আপাতত রেখে এসেছে অফিস কামরায়। অগত্যা খালি মাথায় এখন তুষার ডিঙিয়ে গাড়ি পর্যন্ত যেতে হবে তাকে।
নিজের স্টাইলিশ চুলের মাঝে হাত বোলাতে বোলাতে এগুচ্ছিল সে, ঠিক সে সময় ঝড়ের বেগে তার অত্যন্ত প্রিয় চুলের উপর হামলে পরে এক অতিব সুন্দরী রমনী। মাঝ রাতে শেওড়া গাছের ভ’য়ানক সেই মানবীর মতোই অকস্মাৎ আ’ক্রমন তার। পেছন থেকে দু’হাতে এ্যালেক্সের চুল খামচে ধরে ঝাঁকাতে থাকে আপন শক্তিতে। পেন্টহাউজের লাউঞ্জে হঠাৎ এহেন আ’ক্রমনে ঘাবড়ালো এ্যালেক্স, মেয়েটাকে জোরহস্তে ছাড়ানোর পায়তারা করে বলতে লাগলো,
— আরে আরে! এরীশ ইদানীং ঘরের মধ্যে পেত্নী টেত্নীও পুষছে নাকি? মানে নিজের টেরিটোরি সুরক্ষিত রাখার জন্য শেষমেশ পেত্নী?
এ্যালেক্সকে কথা বলার ফুরসত না দিয়ে মেয়েটা ঝাঁঝালো গলায় বলে ওঠে,
— আবার এসেছিস, শয়তান। তুই একটা হারে বজ্জাত, টমেটো সসের নাম করে মাফিয়াদের কাছে ড্রা’গ বেঁচে বেড়াস।আবার ঢং করে নাম দেওয়া হয়েছে টমেটো প্রিন্স? বজ্জাত লোক তুই হলি গিয়ে ড্রা’গ প্রিন্স।
প্রচন্ড চুলের ব্যথায় দিশেহারা এ্যালেক্স। উপায়ন্তর না পেয়ে অকস্মাৎ চিল্লিয়ে উঠলো সে,
— আয়ায়ায়া! ছিঁড়ে গেলো, চুল ছিঁড়ে গেলো।
— ছিঁড়ুক, তোর সব চুল ছিঁড়ে যাক।
এদিকে লাউঞ্জে হঠাৎ চ্যাঁচামেচি শুনে তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে এলো তুষার। সিঁড়ি দিয়ে নামতে না নামতেই সামনের দৃশ্য অবলোকন করে চোখ কপালে উঠে গেলো তার। তৎক্ষনাৎ দাঁত খিঁচিয়ে হাঁক পেড়ে ডেকে উঠলো সে,
— ফ্লোরা!
তুষারের ডাকে ঘুরলো না ফ্লোরা। উল্টো আরও জোরে খামচে ধরলো এ্যালেক্সের চুল। তুষার আর দাঁড়িয়ে রইলো না, বড়বড় পা ফেলে সামনে এগিয়ে এসে টেনেটুনে ছাড়ালো ফ্লোরাকে। ওর ঘোলাটে চোখে দৃষ্টিপাত করে ধমকের স্বরে বললো,
— কি করছিলে এসব? বোধ বুদ্ধি কি সব ইয়াকুতিয়ার ঘোড়ার মাংসের সাথে গিলে খেয়ে এসেছো?
তুষারের ধমকে সম্বিত ফিরে পেলো ফ্লোরা। সহসা শান্ত হয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ।
এ্যালেক্স নিজের এলোমেলো চুলগুলোকে হাতের সাহায্যে ঠিকঠাক করতে করতে চোখ ফেরালো ফ্লোরার পানে। ফর্সা মেয়েটার রক্তি’ম গাল আর ফোলানো ঠোঁটের দিকে চেয়ে নিঃশব্দে হেঁসে উঠে বললো,
— শী ইজ সো কিউট।
তৎক্ষনাৎ ওকে আড়াল করে দাঁড়ালো তুষার। নিজের চিরাচরিত স্বভাবে ফিরে এসে, রাশভারি আওয়াজে বললো,
— পেন্টহাউজের কোনোকিছুতে নজর দেওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ।
তুষারের কথায় তাচ্ছিল্য করে হাসলো এ্যালেক্স,ফ্লোরাকে আরও একবার গভীর নজরে পরখ করে বললো,
— আমার যেটা ভালোলাগে সেটাতে বারবার নজর দিই আমি।
কথা শেষ করে আর এক মূহুর্তও দাঁড়ায় না সে। পেছনে ঘুরে গটগটিয়ে বেড়িয়ে যায় পেন্ট হাউজ থেকে।
★
এ্যালেক্স যেতে না যেতেই পেছনে ঘাড় ঘোরালো তুষার। টলতে থাকা মেয়েটার দিকে কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিরক্তির স্বরে বললো,
— কি সমস্যা তোমার? ঝাপিয়ে পড়ার আর মানুষ পেলেনা? শেষমেশ কিনা ওই হাঁদারাম টার উপর ?
তুষারের কথার পাছে কাঁদো কাঁদো স্বরে জবাব দেয় ফ্লোরা,
— আপনার কি সমস্যা? সবসময় শুধু রেগেমেগে থাকেন। জামাকাপড় নষ্ট হওয়ার ভয় দেখান, আপনার জন্য গ্রামে গিয়ে পর্যন্ত শান্তি নেই। স্বপ্নেও জামা কাপড় কাঁচতে হয়। সারাক্ষণ ভয়ে থাকি কখন যেন আবার জামাকাপড়ের খুঁত ধরে ঠুশ করে গু’লি মে’রে ফুস করে জীবনের ইস্তফা ঘটিয়ে দেন। মাফিয়া মানুষ আপনাদের মোটেও বিশ্বাস নেই।
ফ্লোরার এতো এতো অভিযোগের পাছে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো তুষার, শান্ত ভরাট কন্ঠে বললো,
— বুঝেছি আমার উপর তোমার অনেক রাগ।
— হু।
— ওই কারণেই দুবাই থেকে একটা জিনিস এনেছি তোমার জন্য।
ফ্লোরার মাতাল চাউনীতে উৎকন্ঠা। মেয়েটা খুঁশির চোটে আহ্লাদী গলায় শুধালো ,
— সত্যি বলছেন, আমার জন্য ? কি এনেছেন?
তুষার পকেট থেকে একটা হ্যান্ড ক্রিম বের করে ফ্লোরার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
— এটা। এখন থেকে জামাকাপড় ধোয়ার পরে সবসময় এটা ব্যাবহার করবে। দেখবে হাত আর খশখশে হবে না, আরও বেশি বেশি কাপড় কাঁচতে পারবে।
তুষারের উপহার আর কথা দু’টোই মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজিত করে দিয়েছিল ফ্লোরাকে। যার দরুন নিজেকে আর সামলাতে পারেনি মেয়েটা,তৎক্ষনাৎ চেতনা হারিয়ে ঠাস করে মুখ থুবড়ে পড়ে যায় মেঝেতে।
আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ২০ (২)
নিস্তব্ধ নিঝুম রাতে নিজের তীক্ষ্ণ অক্ষি জুগল ম্যাকবুকে নিবদ্ধ করে রুমেই বসেছিল এরীশ। ঠিক তখনই নুপুরের রিনঝিন আওয়াজের তালে সকল নিস্তব্ধতার ইতি টেনে অসচেতন কদম ফেলে মাফিয়া বসের ঘরের মধ্যে পা বাড়ায় এক সরলতায় জড়ানো উন্মাদ নীলাম্বরী। নীলাম্বরীর সেই ঝঙ্কার তোলা নুপুরের আওয়াজ চকিতে কেড়ে নেয় মাফিয়া বসের এলোমেলো মস্তিষ্কের সবটুকু মনোযোগ।