আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ২৬

আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ২৬
suraiya rafa

গহীন অভয়ারণ্যের মাঝে মহাপ্রাচীরের ন্যায় দন্ডায়মান বিলাসবহুল মাফিয়া পেন্টহাউজ। যা বরাবরই নীরব আর কোলাহল মুক্ত, ঠিক যেন বিষণ্ণতার প্রতীক। এই ভবনে যারা বসবাস করে তারা যান্ত্রিক মানবের ন্যায় একঘেয়ে আর জটিল। প্রয়োজনের আধিক্যে কথা তো দূরে থাক সহসা চোখের পলক পর্যন্ত ছাড়েনা তারা । যেন এটাও তাদের কর্তব্যেরই অন্তর্ভুক্ত। বলাবাহুল্য মাফিয়া টেরিটোরিতে কর্ত্যব্যের সামান্য হেরফের হলেই নির্ঘাত মৃ’ত্যু।
তবে পেন্ট হাউজের ভেতরের চিত্র আজ বেশ সরগরম। পূর্বাভাস বিহীন জলোচ্ছ্বাস যেন মাথার উপর দিয়ে গেলো। হিমালয়ের তীব্র তুষার ঝড়ের মাঝে এক টুকরো ভূখণ্ড আঁকড়ে জীবনপণ দাঁড়িয়ে থাকার মতোই সকলের ওষ্ঠাগত প্রাণ। এই মূহুর্তে কার অভিব্যক্তি ঠিক কিরূপ হওয়া উচিৎ তা সঠিক বিবেচনায় ধারণা করা মুশকিল , ফলস্বরূপ স্থবির পায়ে জীবন্ত মূর্তি হয়ে থমকে রয়েছে সকলে। মাফিয়া বসের আচানক কান্ডে ভাবাবেগ কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত হলেও, পেশাদারি চিত্তে যান্ত্রিক রোবটের ন্যায় সর্বদা অটুট তারা।

একটা ব্লাডি মনস্টার। মরীচীকার অতল গহ্বরে যার অবাধ বিচরণ। বীভৎস তিমিরে আচ্ছাদিত যার নৃ’শংস অতীত। সে হৃদয়হীন। গু’ম,খু’ন,হাহাকার,নিষ্ঠুরতা সকল পাপচারেই তার ভেতরের অভিব্যক্তি দাঁড়ায় ভাবলেশহীন শূন্য। যেন নরকের অভিমূখে হাপিত্যেশ ছুটে বেড়ানো এক অনুভূতিহীন জীবন্তলা’শ।
ক্ষমতা আর পাশবিকতার জোরে সকলকে কুণ্ঠিত বানিয়ে পুতুলের মতো নাচানোর চেয়ে পৈশাচিক আনন্দ বোধ হয় এ জীবনে কোনোকিছুতে পায়নি এরীশ। উপরুদ্ধ এই পৈশাচিক আনন্দটুকুই ওকে ধীরে ধীরে বানিয়েছে সর্বগ্রাসী অশুভ এক জানোয়ার। আপামর মানুষরূপী একটা পাপিষ্ঠ দানবীয় সত্তা, যে চায় পুরো দুনিয়া তাকে ভয় করুক। ভয় করুক তার হিংস্রতাকে। Bratva শব্দটা সামনে এলে শুধুমাত্র একটা নামই মস্তিষ্কে ঘূর্ণন লাগিয়ে দিক সবার,আর সেটা হলো “এরীশ ইউভান”।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ধ্বংসলীলা যার প্রতিটি র’ক্ত কণিকায় মিশে, যার অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো দাপুটে চাহনি জুড়ে উদ্ভাসিত অঢেল কতৃত্ব।যার পৈশাচিক হুংকারে কম্পিত হয় পুরো আন্ডারওয়ার্ল্ড bratva। আর আজ কিনা সেই অনুভূতিহীন পাপী জানোয়ারটা চট করেই ঝড় তুলেছে একজোড়া নিস্পাপ নিটোল ওষ্ঠাধরের অন্তরায়। কোন সুখের উল্লাসে নিজের ধ্বংসকে এমন করে আলিঙ্গন করার স্পর্ধা দেখালো সে?
মন জানেনা মনের কথা। এরীশ নিজেও হয়তো জানেনা এর উত্তর। মন মস্তিষ্কের টানাপোড়েনে ঠোঁটের আগ্রাসন জোড়ালো হয় তার। শক্ত হয়ে ওঠে হাতের বাঁধন। ভেজা নরম কম্পনরত ঠোঁটের গভীর স্বাদটুকু আস্বাদনে উন্মাদনায় মত্ত হয়ে ওঠে মাফিয়া বসের কলুষিত আবেগহীন পাথর চিত্ত। মতিভ্রমে ঠোঁট ছাপিয়ে দাঁত বসায় মেয়েটার তুলতলে নরম অধরের মাঝে। আ’ক্রমণকারী নরপিশাচের ন্যায় দন্তরাশির বেসামাল বিচরণে মূহুর্তে বিদীর্ণ করে তোলে রমনীর ফিনফিনে ওষ্ঠপুট।

পূর্বাভাসবিহীন বেগতিক ঝোড়ো হাওয়ার মতো ঘটে যাওয়া আকস্মিক ঘটনায় পুরোপুরি স্তব্ধ ঈশানী। আশ্চর্য এক অনুভূতির তরঙ্গোচ্ছ্বাসে শিথিল হয়ে আছে মস্তিষ্ক। কয়েক মূহুর্তের ব্যবধানে কি থেকে কি হয়ে গেলো সে ধারণা প্রায় ক্ষীণ। ঘটনার আকস্মিকতায় লোপ পেয়েছে অনুভূতি শক্তি । অব্যক্ত বিষণ্ণতায় জমে বরফ হয়ে এসেছে সর্বাঙ্গ। কিয়ৎক্ষনের জন্য ও শুধু অনুভব করলো একজোড়া শীতল খরখরে ঠোঁটের জোড়ালো স্পর্শ। কেবল ঠোঁট নয় লোকটার হাতের বাঁধন গুলোও ছিল অস্বাভাবিক শীতল। যেন জীবন্ত ঘুরে বেড়ানো আস্ত এক বরফ পিণ্ড। মানুষটা কি আদৌও জীবিত?
চট করেই অযাচিত এক প্রশ্ন খেলে গেলো ঈশুর মন মস্তিষ্কে। পরমূহুর্তেই ঠোঁটের মাঝে অনুভূত হওয়া র’ক্তের নোনতা স্বাদে ভাবনা থেকে ছিটকে বেড়িয়ে এলো মেয়েটা । বিদীর্ণ ওষ্ঠাধরের মন্থর যাতনায় শিওরে উঠে নিজের থেকে ঠেলে সরাতে চাইলো পর্বতসম বলিষ্ঠ শরীরটাকে। ঈশানীর দু’হাতের ধাক্কায় টললো না মাফিয়া বস। উল্টো নিজের কাজে অনড় থেকে হাতের সাহায্যে সরু কোমড়টাকে টান মে’রে মাঝখানের সামান্য তম দূরত্বটুকু ঘুচিয়ে নিলো অকপটে। মূহুর্তেই তার ইস্পাত কঠিন বক্ষভাঁজে বহমান উর্মি মালার ন্যায় আঁচড়ে পরলো শীর্ণকায় শরীরের একরত্তি মেয়েটা।

আচানক ঘটনায় বিতৃষ্ণায় ছটফট করে ওঠে ঈশানী। ফুটন্ত তেলের মতোই মাত্রাতিরিক্ত আগ্রাসনে চড়চড়িয়ে ওঠে আত্মসম্মানবোধ । মূহুর্তের মাঝে খেই হারায় মস্তিক, অগত্যা শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা প্রয়োগ করে ওর ইস্পাত কঠিন শক্ত বুকে। ক্ষয়িষ্ণু উন্মাদনায় জ্ঞানশূন্য মাফিয়া বস চট করেই টললো এবার। ঈশানীর ধাক্কায় বেখেয়ালে পিছিয়ে গেলো দু’কদম, বেসামাল পদচারণায় চওড়া পৃষ্ঠদেশ গিয়ে থমকালো কংক্রিটের পোক্ত দেওয়ালে।
এবার মুখোমুখি দু’জন। মাঝখানে কয়েক বিঘাত দূরত্ব মাত্র। ওদের মাঝ বরাবর অফিস কক্ষের ভেতরে স্থির দাঁড়িয়ে তুষার। মুখে তার চিরাচরিত থমথমে অভিব্যক্তি। যেন কিছুই হয়নি এখানে, সবকিছু অত্যন্ত স্বাভাবিক। এমনকি এরীশের এই আত্মসংযমহীন এলোমেলো কাজটিও বিন্দুমাত্র ভাবালো না তাকে ।

ঈশানীর ধাক্কায় পিছিয়ে এসে মধুরস আহরণের ন্যায় জিভের ডগায় ঠোঁট ভেজালো এরীশ,অতঃপর হাতের পিঠ দিয়ে অধরে অবশিষ্ট তরলাংশটুকু মুছে ফেললো নির্দ্বিধায়।বিস্তার দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ঘাড়টা সামান্য কাত করে মেয়েটার পানে নিক্ষেপ করলো পূর্ণ দৃষ্টি । পিয়ার্সড করানো ধূসর বাদামি চোখের মাঝে নির্জীবতায় ঠাসা, অথচ নজর কাড়া তার মোহিত দৃষ্টি ।ধস্তাধস্তির তোড়ে গোছানো চুল গুলো এলোমেলো হয়ে নেমে এসেছে কপালের অগ্রভাগে।
মাফিয়াটার অমন নির্বিকার শূন্য চাহনিতে আগ্রাসী হয়ে ওঠে ঈশানী, বিরক্তির চরম পর্যায়ে গিয়ে বজ্রধ্বনিতে চ্যাঁচিয়ে ওঠে তৎক্ষনাৎ।প্রচন্ড ক্ষোভ নিয়ে বলে,
— আর কত নিচে নামবেন? কেন আপনি এতো খারাপ হতে গেলেন? বলুন কেন?
— কোনো কারণ নেই! আমি শুরু থেকেই খারাপ। তোমার ভাষায় পাপিষ্ঠ।
রুক্ষ আওয়াজ ভেসে এলো ওপাশ থেকে। এরীশের অজ্ঞাত প্রত্যুত্তরে কিঞ্চিৎ দ্বিধাগ্রস্থ হলো ঈশানী, মনে মনে ভাবলো,

— তবে যে ফ্লোরা বলেছিল, এরীশের নৃ’শংস এক কালো অতীত রয়েছে? ফ্লোরা আদৌও সত্যিটা জানেতো? নাকি সত্যিই কারণহীন সত্তায় কলুষিত জানোয়ারটা?
কিয়ৎক্ষন ভাবনায় ডুবলো ঈশানী। পর মূহুর্তেই ভাবনার সুতো ছিঁড়ে বেড়িয়ে মেকি রাগে চিড়বিড়িয়ে উঠে বললো,
— ওই পাপিষ্ঠ হাতে আমাকে ছোঁয়ার সাহস হলো কি করে আপনার? কোন অধিকারে চুমু খেয়েছেন আপনি আমায়?
কয়েক সেকেন্ডের জন্য এক চিলতে বিদ্রুপাত্তক হাসি খেলে গেলো পাইথন লিডারের ঠোঁটের আগায়। পরমূহুর্তেই মুখাবয়বে স্পষ্টত হলো প্রতীয়মান গাম্ভীর্যের ছাঁপ । ধ্বংসাত্ত্বক চোখদু’টো ঈশানীর গভীর চোখে তাক করালো সে। বললো,

— একশো মিলিয়নের কথা এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে? তোমার সঙ্গে যা খুশি করতে পারি আমি। ইভেন,
এরীশের বাক্যশেষ হওয়ার পূর্বেই চোখ দু’টো খিঁচে বন্ধ করে নিলো ঈশানী। কেন যেন ওই নোংরা জায়গা, ওই বীভৎস নিলামের রাতটার কথা মনে পরলে তীব্র আতঙ্কে অন্তরাত্মা ধড়ফড়িয়ে ওঠে ওর। নিজেকে হাড়িয়ে ফেলার নিগূঢ় ভয়ে তটস্থ হয়ে ওঠে মেয়েটা।
যদিও ঈশানীর ক্ষয়িষ্ণুতা আঁচ করতে পেরে মাঝপথে কথার লাগাম টেনেছে এরীশ। তাও সময় নিলো ঈশানী। অজান্তেই ভরে উঠলো ওর চোখের কোটর। নিঃশব্দে চিকন স্রোত গড়ালো কপোল বেয়ে । অস্রুশিক্ত নয়ন মেলে শেষ বারের মতো ওই সুদর্শন চেহারার হৃদয়হীন লোকটাকে পরখ করে নীলাম্বরী। কণ্ঠনালীতে কান্নার ঢেউ তুলে বলে,
— আপনি একটা মানুষরূপী জানোয়ার। আপনার এই নির্দয় অ’ত্যাচারী চেহারাটা কোনোদিন দেখতে চাইনা আমি।কোনোদিন না।

সদ্য অঙ্কুরিত অনুভূতির কাছে ঈশানীর কথাগুলো ছিল হৃদয় ছিড়ে ফেলার মতোই যন্ত্রণাদায়ক , তবুও কেন যেন প্রত্যুত্তর করলো না মাফিয়া বস। মোহাবিষ্টের ন্যায় নিস্প্রভ উচাটন দৃষ্টি মেলে আনমনে চেয়ে রইলো মেয়েটার দিকে । ওর গভীর চোখের এলোমেলো অনুভূতির ভাষা খুঁজতে গেলো না ঈশানী।তপ্তশ্বাস ছেড়ে দ্রুত পায়ে ত্যাগ করলো অফিস রুম। অতঃপর গটগটিয়ে এগিয়ে গেলো করিডোর ধরে।

অথচ একই জায়গাতে একই ভঙ্গিমায় ঠায় দাঁড়িয়ে এরীশ। ঈশানী নেই এখানে, চলে গিয়েছে অনেকক্ষন, দরজার কাছটা নিছকই ফাঁকা পরে আছে। তাও একবারের জন্যও চোখ ঘোরালো না এরীশ। ভ্যানিলার ওই মিষ্টি সুবাস টা এখনো উপস্থিত, যেন সামনেই দাঁড়িয়ে আছে আছে স্বয়ং সাকুরা। কথার জোয়ারে কুলকুলিয়ে উগড়ে দিচ্ছে ভেতরের রাগ, ঢাক অভিমান, বিরক্তি সমস্তটা। আর বিনা প্রতিক্রিয়ায় সেগুলো মন দিয়ে শুনে যাচ্ছে এরীশ।
তখন থেকে স্থির দাঁড়িয়ে আছে মাফিয়া বস।চোখে মুখে তার অস্তিত্বহীন ব্যথার সুপ্ত অবয়ব। অফিস কক্ষ ত্যাগ করার সময় তুষার বিনাবাক্যে সেদিকে চাইলো এক পল।অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভঙ্গুর সত্তাটাকে অতিক্রম করতে করতে নরম স্বরে বললো ,
— এভাবে নিজের সঙ্গে নিজের অঘোষিত যুদ্ধটা না বাঁধালেও পারতেন এরীশ।
এবারও নির্বিকার মাফিয়া বস। শূন্য অভিব্যক্তিতে চোখ ঘোরালো শুধু।ধূসরগহ্বরে হিং’স্রতার বদলে হানা দিয়েছে অসহনীয় যন্ত্রণা,সেদিকে কয়েক মূহুর্তের বেশি তাকিয়ে থাকতে পারলে না তুষার। সহসা ঝটপট চোখ নামিয়ে লম্বা পা ফেলে সম্মুখে এগিয়ে যেতে যেতে ছোট্ট করে জানালো,
— আসছি।

— তুমি এভাবে চলে যাচ্ছো, আমি খুশি হতে চেয়েও পারছি না ঈশু।
আজ বহুদিন বাদে ভবনের ফ্রন্ট গেইটে এসে দাঁড়িয়েছে ঈশানী। বিশাল কংক্রিটের আস্তরে ফুঁসে ওঠা সর্পিলের চিকচিকে অবয়ব। পুরো গেইট টাই বানানো হয়েছে জঙ্গলের ভয়ানক সব জন্তুজানোয়ারের জীবন্ত দানবীয়তাকে ভিত্তি করে। যেন কোনো হিংস্র পিশাচের সবগ্রাসী সাম্রাজ্যের হাতছানি। ঘুনাক্ষরে এক’পা ভেতরে গেলেই মুখোমুখি হতে হবে ভয়ংকর সব জাদুকরী বাস্তবতার।

ফ্লোরা খুব ভালো করেই জানে এই জায়গাটা থেকে বের হওয়া ঈশানীর জন্য কতটা সৌভাগ্যের, সেখানে খারাপ লাগার তো প্রশ্নই ওঠে না। তাও কেন যেন এই মূহুর্তে দাঁড়িয়ে নিজের আবেগ টুকু সংবরণ করতে পারছে না মেয়েটা। নিশ্চুপ ঘরকুণো ঈশানী কত সহজেই না বন্ধু হয়ে গিয়েছিল ওর।কতগুলো দিন একসঙ্গে কাটিয়েছে, কত হেসেছে ওরা দু’জন। অথচ আজ দু’জনার চলার পথ বেঁকে গেলো দু’দিকে । জীবনে কখনো আর দেখা হবে কিনা অনুমান করা দুষ্কর। কারণ আর যাই হোক ঈশানী নিশ্চয়ই কল্পনাতেও কোনোদিন পা রাখবে না এই পাপের দুনিয়ায়।
যদিও ডেসটিনি খুব অদ্ভুত একটা জিনিস। ডেসটিনির প্রভাবে অনেক ধরনের মিরাকল ঘটে জীবনে, এই যেমন পেন্টহাউজ থেকে অকস্মাৎ মুক্তি পাওয়ার ঘটনাটা ছিল ঈশানীর ভাবনার অন্তরায়। ও ভেবেই নিয়েছিল পেন্টহাউজের এই অসহনীয় দিনাতিপাত ওকে মৃ’ত্যু অবধি পৌঁছে দিবে। কিন্তু ডেনসিটি পরিবর্তন হলো, আজ সত্যি সত্যি ফিরে যাচ্ছে ঈশানী। মাফিয়া বস এরীশ ওর কাছে হেরে গিয়েছে। বাধ্য হয়েছে মুক্তি দিতে। অথচ ফ্লোরার কান্নার তোড়ে বিজয়ের আনন্দটুকু ক্রমশ ফিকে লাগছে হৃদয়ে। গেটের সামনে গাড়ি দাঁড়িয়ে, প্যাসেঞ্জার সিটে বসে আছে তুষার,কারও সঙ্গে কথায় বলায় ভীষণ ব্যস্ত সে। মেয়েদের মেলোড্রামায় গা ভাসানোর বিন্দু মাত্র ইচ্ছে কিংবা ধৈর্য কোনোটাই নেই তার।

হৃদয়টাকে খানিক্ষণ সংযত রেখেও, শেষমেশ মনের জোরে পেরে উঠলো না ঈশানী,কান্নায় ভেঙে পরে নমনীয় হাতে আঁকড়ে ধরলো রুশ মেয়েটাকে, ওর সরু কাঁধে চিবুক ঠেকিয়ে ফোঁপাতে ফোপাঁতে কম্পিতস্বরে বললো,
— রাশিয়াতে এসে আমার সঙ্গে সত্যিই যদি ভালো কিছু হয়ে থাকে তবে সেটা শুধু তুমি ফ্লোরা। তোমার জন্যই বোধ হয় এতো ঝড়ঝাপটার মাঝেও ভালো ছিলাম আমি। দুঃখ বিষণ্ণতা সবকিছু ভুলে তোমার মতোই উচ্ছাসিত মনে খুশি ভাগাভাগি করতাম সন্তোর্পনে। তুমি আমার সত্যিকারের বন্ধু ফ্লোরা। আমি কোনোদিন ভুলতে পারবো না তোমায়, আর না তো তোমার সঙ্গে কাটানো এই বিভীষিকা ময় দিনগুলো। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি আর এখানে ফিরতে চাই না কোনোদিন । এই পেন্টহাউজ আমাকে ধোঁকা, অপমান আর আতঙ্ক ছাড়া কিছুই দেয়নি। আমি চাইনা এই পাপের শহরে পা রাখতে আর। আ…

কথার মাঝপথে থমকে গেলো ঈশানী, যখন দেখতে পেলো দোতলার বেজমেন্টের খোলা বারান্দায় স্থবির চিত্তে দাঁড়িয়ে আছে এরীশ ইউভান। কিছুটা কৌতুহলী হয়ে সেদিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মেয়েটা, দেখতে পায় ফর্মাল প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে এদিকেই চেয়ে আছে লোকটা। তার চিরাচরিত কঠোর দৃষ্টিতে কিছু একটা অনুপস্থিত আজ ।
ঈশুর চোখে চোখ পরা মাত্রই ধারালো অভিব্যক্তিতে আঁধারের প্রগারতা দিগুণ হয়ে এসেছে যেন। শূন্য চোখ দু’টোতে জড়ো হয়েছে বিষাদের ঘনঘটা । কেমন যেন ব্যথাতুর নিস্প্রান চাহনি তার। এটা নিশ্চয়ই কেবল বিষাদ নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু। কিন্তু কি?

মস্তিষ্ক গহ্বরে আচানক হামলে পরা আ’গুনের ফুলকির ন্যায় দলা পাকানো প্রশ্নে থমকালো ঈশানী। হৃদয়হীন লোকটা নিগূঢ় নয়নে এদিকেই চেয়ে আছে একদৃষ্টে। ওর চোখ গুলো আজ অন্যরকম ঠেকলো ঈশানীর নিকট,ফলস্বরূপ ঈশু নিজেও এরীশের পানে চাইলো এক পল । শেষবারের মতো মিলন ঘটলো দুই জোড়া অক্ষিপুটের। প্রথমদিনের মতো হিং’স্রতা কিংবা প্রতিহিংসা নয়। আজ এই মূহুর্তে দাঁড়িয়ে, একজোড়া চোখে স্থান পেয়েছে কলুষিত ঘৃ’ণার অভিমানী আন্দোলন,আর অন্যজোড়ায় প্রবল ব্যাকুলতা।
এরই মাঝে ডাক পরলো তুষারের,
— হারিআপ লেট হয়ে যাচ্ছে।

আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ২৫

তুষার তাড়া দিতেই পেছনে ঘোরে ঈশানী, হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে ধীর কদমে গাড়ির অভিমুখে এগিয়ে যেতে যেতে আরও একবার ঘাড় ফিরিয়ে তাকায় অরণ্য নামক উতপ্ত খরখরে মরুভূমির পানে। অতঃপর সেভাবেই এগুতে এগুতে উপলব্ধি করে, ওই পিয়ার্সড করা নির্জীব চোখ দু’টোতে বোধহয় অসহনীয় যন্ত্রণা ছিল আজ। সেই সঙ্গে ছিল ব্ল্যাকহোলের মতোই ধ্বং’সা’ত্বক বিভীষিকা।

আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ২৬ (২)