আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ৪৮
suraiya rafa
মস্কো,ক্রেমলিন।
টক টক টক…..
চামড়ার বুটের প্রশস্ত পদধ্বনিতে মুখরিত প্রান্তর। শহরের সবচেয়ে বড় ক্যাসেল মস্কো ক্রেমলিনের চতুর্দিকে শয়ে শয়ে রয়্যাল গার্ডদের নির্ভীক অবস্থান। এই বিশাল প্রাসাদের অভ্যন্তরেই রয়েছে রাশিয়ার চেইন অব কমান্ড মি. প্রেসিডেন্টের বাসভবন। রাজকীয় অতিথিশালা থেকে শুরু করে নানাবিধ সরকারি দপ্তর এবং শহরের সবচেয়ে বড় টেম্পলটাও এখানেই অবস্থিত।
সুদীর্ঘ এই ক্যাসেলের অভ্যন্তরে রাজ অতিথি এবং ভিআইপি ব্যক্তিবর্গ ব্যাতিত অন্যকোনো জনসাধারণের প্রবেশাধিকারে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। যদিওবা কোনো সাধারণ মানুষ ভুলক্রমে অবমাননা করে ফেলে এই নিষেধাজ্ঞার তবে তার উপর ধেয়ে আছে অবিরত গুলির বর্ষন।
অমানিশায় ঢাকা ঘুমন্ত রজনী। শহর জুড়ে নিস্তব্ধতার আবাহন , রয়্যাল গার্ডদের শক্ত পদধ্বনি অনুসরণ করে দূর্গের এক নির্দিষ্ট সীমানায় এসে স্তব্ধ হলো লম্বা মতো এক অবয়ব। চারিপাশে আবর্তিত মাথা সমান সুদীর্ঘ প্রাচীর ডিঙিয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করা দুঃসাধ্য। আর সেই দুঃসাধ্য চোখের পলকে সাধন করে ফেললো অবয়বটি। দু’হাতে পোক্ত চামড়ার গ্লাভস এঁটে, এদিক-ওদিক দৃষ্টি বুলিয়ে তরতর করে বেয়ে উঠে গেলো চূড়ায়। অতঃপর কংক্রিটের প্রাচীর ডিঙিয়ে একলাফে সোজা দূর্গের অভ্যন্তরে।
এদিকে অনিয়ন্ত্রিত পদধ্বনি কর্ণগোচর হতেই সচকিত হয়ে ছুটে এলো দু’জন রয়্যাল গার্ড, সময় অতিবাহিত করলো না সে বান্দা, কব্জাবন্দি ধারালো শর্টনাইফের সাহায্যে এক লহমায় কেটে নিলো দু’দুটো গর্দান। কোনো শব্দ নেই, নেই কোনো আর্তনাদ, কেবল আধার আবৃত খোলা ময়দানে দু’টো র’ক্তা’ক্ত প্রাণের নীরব ছটফটানি। পিছনে ঘুরে দেখার প্রয়োজন বোধ করলো না মানব, মাথায় আটকানো বেজবল ক্যাপটা ঠিকঠাক করতে করতে দ্রুত গতিতে এগুলো সম্মুখে। যেতে যেতে উপলব্ধি করলো জুতোর ফিতে গুলো ঠিক ভাবে বাঁধা হয়নি তার, অগত্যা গতিজড়তায় শব্দ হচ্ছে থেকে থেকে। পায়ের দিকে দৃষ্টিপাত করে একমুহূর্ত দাঁড়ালো সে, এলোমেলো করে বাঁধা ফিতে গুলোর দিকে চেয়ে ছাড়লো দীর্ঘশ্বাস।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
মনে পরে গেলো কিছুদিন আগের এক অপ্রিয় রমণীর প্রিয় কয়েকটি বাক্য,
— দু’দিন বাদে বত্রিশ হতে চললো, এখনো জুতোর ফিতা বাঁধতে শেখোনি।
সে মানবী নিশ্চয়ই রহস্যময়ী। নয়তো ওই আঁধার ঢাকা নিশীথে অমন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো কেমন করে? কেমন করেই বা এতো সহজে বলে দিলো তুষারের বয়স? তার মানে কি, সে মনে রেখেছিল ?
কয়েক জোড়া বুটের অতর্কিত আগমন ভাবনা থেকে ঠেলে বের করলো তুষারকে। তৎক্ষনাৎ র’ক্তসিক্ত ছুরিটা দাঁতের মাঝে আঁটকে একহাঁটু ভাজ করে জমিনে বসলো সে। এলোমেলো ফিতার ভাঁজে দ্রুত আঙুল চালাতে গিয়ে অনুভব করলো কেউ একজন খুব কাছাকাছি চলে এসেছে ওর, হয়তো এখনই ধাতব রাইফেলের সবগুলো বুলেট এক যোগে ঢুকিয়ে দিবে মস্তিষ্কে। সচকিত চোখের মনিযুগল ডানে-বামে তাক করে কিঞ্চিৎ ঠোঁট বাঁকালো তুষার, স্নাইপারের লম্বাটে নলটা কাছাকাছি আসতেই মুখে আবদ্ধ শর্টনাইফটা ছুড়ে মা’রলো পেছনে। গুলি করার ফুরসত পেলোনা বিপরীত পক্ষ তার আগেই শর্টনাইফের ধারালো আঘাতে ত্বক ভেদিয়ে কপাল দ্বিখণ্ডিত হলো তার।
রক্তস্নাত নিথর দেহটি তুষারের শরীর ঘেঁষে মুখ থুবড়ে পড়লো মাটিতে, সেদিকে তাকানোর বিন্দুসম ইচ্ছে হলো না মানবের, যেন রক্তপিপাসায় মরিয়া অন্তর, তেমন করেই দূর্বার কদম ফেলে এগুলো সম্মুখে। পরপর পেছন থেকে ধেয়ে এলো আরও দু’টো রয়্যাল গার্ড,এবারে একটু ঝুঁকলো যন্ত্রমানব, টান মে’রে বুটের মধ্যে থেকে বের করে আনলো আরও একটি ধারালো মারণাস্ত্র। শর্টনাইফ গুলো দু’হাতে মুঠোবন্দি করে অতর্কিতে বাহু মেলে ধরলো দু’দিকে, চিঁড়েখুঁড়ে দু’পাশ থেকে ধেয়ে আসা দু’টো অস্তিত্বকে একযোগে শুয়িয়ে দিলো জমিনে।
অতঃপর নৈঃশব্দ্য।
গুমোটতায় ভার হয়ে আছে পরিবেশ, নিস্তব্ধ আবহ, বড়সড় আ’ক্রমনের পূর্বাভাস। সময় অতিবাহিত করলো না সে যন্ত্রমানব। রোবটের মতো যান্ত্রিক পা ফেলে তৎক্ষনাৎ মিলিয়ে গেলো ধোঁয়াসায়।
ক্রেমলিনের অন্যতম আকর্ষন রাজ অতিথিশালা। অত্যাধুনিক আভিজাত্যে পরিপূর্ণ এ ক্যাসেল। লবি থেকে শুরু করে প্রতিটি কক্ষজুড়ে হরেক রকম বিলাসিতার আয়োজন।
মুখের উপর কালো মাস্কের আবরণ টেনে নিজের ভিআইভি ব্ল্যাক কার্ড দেখিয়ে লবি থেকে সোজা এলিভেটর ধরলো তুষার। এক দুই করে গোটা কয়েক তলা পেরিয়ে একটা ভিআইপি কক্ষের সামনে এসে গন্তব্য স্থির করলো সে, অতঃপর পকেট থেকে ডুপ্লিকেট সেন্সর কার্ডটি বের করে অকস্মাৎ ঢুকে পড়লো রুমের মধ্যে।
ভেতর থেকে ভেসে আসছে টম এ্যান্ড জেরীর হাস্যরস কৌতুকীয় ধ্বনি। যা শুনে মাস্কের আড়ালের অধর খানা হামেশাই প্রসারিত হলো তুষারের।
নষ্ট করার মতো সময় নেই, দরজার কাছে কয়েক মূহুর্ত দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষন করলো ভেতরটা।
টমেটো প্রিন্স ওরফে এ্যালেক্সান্দ্রেয় ভেতরেই আছে, সঙ্গে উপস্থিত দু’দুটো সাদা চামড়ার সুন্দরী রুশ রমণী। নিজেদের অর্ধনগ্ন শরীর দেখিয়ে ভিআইপি ক্ল্যায়েন্টকে বিনোদন দিতে ভীষণ ব্যস্ত তারা । টমেটো প্রিন্সের চোখ টিভি স্ক্রিনে নিবদ্ধ। বোঝাই যাচ্ছে টম এন্ড জেরীর বড়সড় ভক্ত সে বান্দা। সবকিছু অবলোকন করে তুষার অনুমান করলো সরকারি কড়া নিরাপত্তার মাঝে বেশ চুটিয়ে নিজের ভ্যাকেশন কাটাচ্ছে এই নরপিশাচ। কিন্তু এই আনন্দ ক্ষণস্থায়ী, স্বয়ং যম ওর দুয়ারে হাজির হয়েছে, অতি শীঘ্রই ব্যগ্র থাবায় সে নৃ’শং’স ভাবে বদ করে নেবে ওর প্রাণটা।
দরজার কাছটায় খুটখাট যান্ত্রিক আওয়াজ মনোযোগ কেড়ে নিলো এ্যালেক্সের। চকিতে ঘুরে তাকালো সে। নাহ! কেউ নেই ওপাশে, সমস্তটা খালি। কাউকে দেখতে না পেয়ে ঘুরে চোখ বসালো টিভিতে, তক্ষুণি শব্দ হলো ফের। আস্তে ধীরে নয়, ঠকঠক করে। অতর্কিতে লাফিয়ে ওঠে এ্যালেক্স, অজানা আতঙ্ক গ্রাস করে নেয় তার সমগ্র অন্তরাত্মা। মেয়ে দু’টোকে সরিয়ে ছুটে আসে দরজার কাছে।
এদিক ওদিক চোখ ঘোরাতেই কেবিনেটের উপর ছুরি হাতে বসে থাকা কালো অবয়বটি দেখা মাত্রই ধরণী কাঁপিয়ে চিৎকার দিয়ে হুমড়ি খেয়ে মেঝেতে পরলো সে।
প্রকম্পিত স্বরে আওড়ালো,
— ক…ক..কেহ!
— তোর যম!
ধীরে ধীরে এগোতে থাকলো অবয়ব। টমেটো প্রিন্স দিশেহারা। মেয়ে দু’টো ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কক্ষের এককোণে। তাদের কাছেই প্রথম সাহায্য চাইলো এ্যালেক্স,
— হেই! পলিৎসিয়া পাজভানিতি!(পুলিশ কে কল দাও)
নিঃশব্দে হাসলো তুষার। হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাওয়া টমেটো প্রিন্সের দিকে ঝুঁকলো কিছুটা। নিজের প্রশস্ত ভ্রু খানা উঁচিয়ে কপটতার স্বরে উচ্চারণ করলো,
—পুলিশ!
হাঁপড়ের মতো ওঠানামা করছে শ্বাস-প্রশ্বাস। আতঙ্কে ওষ্ঠাগত প্রাণ। অযাচিত ভয়ে উচ্চারণ করলো টমেটো প্রিন্স,
— কে!
প্রত্যুত্তর করলো না তুষার। গ্রীবাদেশ বাকিয়ে তুড়ির ইশারায় ডাকলো প্রস্টিটিউড মেয়ে দু’টোকে। তারা একপ্রকার কুণ্ঠায় নতজানু। এগোনোর সাহস পাচ্ছে মোটেও। বিস্মিত হলোনা যন্ত্রমানব, পকেট থেকে কার্ড বের করে কৌশলী স্বরে বললো,
— পাইথন ক্লাবে কাজ করতে চাও নিশ্চয়ই?
মেয়েদু’টো বিস্মিত নজরে চাওয়াচাওয়ি করলো নিজেদের মাঝে। ফের ভেসে এলো পুরুষালি রূঢ় কণ্ঠস্বর,
— দ্যাট প্লেস ইজ ফুল অফ হ্যান্ডসাম, মাল্টি বিলিয়নিয়র মাফিয়া’স। ইউ মাস্ট বি ডাইয়িং ফর সার্ভ দেম। আরে’ন্ট ইউ লিটল পাপেট’স?
সঙ্গে সঙ্গে বাধ্য দাশীর মতো উপর নিচ মাথা ঝাঁকালো মেয়ে দু’টো। তীব্র লালসায় লকলক করছে তাদের জিহ্বাদ্বয়।তৎক্ষনাৎ একযোগে বলে উঠলো,
— হোয়াট ক্যান উই ডু ফর ইউ মাস্টার?
জবাব দিলো না তুষার, কেবল দু’টো আগুল চেইনের মতো করে নির্লিপ্তে বুলিয়ে গেলো নিজ ঠোঁটের উপর। অর্থাৎ মুখ বন্ধ রাখতে হবে।
— ইউ ডার্টি স্লাট!
মেঝেতে আঁধশোয়া অবস্থায় চ্যাঁচিয়ে উঠলো টমেটো প্রিন্স। ফের অস্থির চিত্তে দৃষ্টিপাত করলো তুষারের পানে, উদগ্রীব হয়ে চ্যাঁচালো,
— কে তুই!
উত্তর দিলোনা বিপরীত পক্ষ। বিনাবাক্যে মুখের উপর থেকে মাস্ক টেনে খুললো অকস্মাৎ। উজ্জ্বল তামাটে বর্ণের তীক্ষ্ণ চোয়াল বিশিষ্ট মুখাবয়ব খানা দৃশ্যগত হতেই বেগতিক চিত্তে আঁতকে উঠলো টমেটো প্রিন্স। শুষ্ক ঠোঁটের ফাঁক গলিয়ে বেড়িয়ে এলো তার অস্ফুট কণ্ঠস্বর,
— ত…তু… তু..
— তুষার!
এ্যালেক্সের জিভে আটকানো শব্দটা সম্পন্ন করলো তুষার। কথা বাড়ালো না এ্যালেক্স, বিনাশ আসন্ন ভেবে পালানোর পাঁয়তারায় উঠতে চাইলো ধড়ফড়িয়ে,তবে সুযোগ দিলোনা যন্ত্রমানব । সজোড়ে ওর বক্ষস্থল বরাবর লাথি হাঁকিয়ে মেঝেতে শুয়িয়ে দিলো ফের।অতঃপর দু’ আঙুলের ইশারায় মেয়ে দু’টোকে ডেকে আনলো সন্নিকটে। শঙ্কিত পায়ে এগিয়ে এলো তারা, কাছাকাছি আসতেই তুষার ওদের হাতে একটা শর্টনাইফ ছুঁড়ে মে’রে বললো,
—ফলো দ্যা কমান্ড।
তরতর করে মাথা ঝাঁকালো মেয়ে দু’টো। পরপরই ধ্বনিত হলো নিরুদ্বেগ পুরুষালি কণ্ঠস্বর,
— এতোক্ষণ যেটাকে আদরযত্ন করেছো সেটাকে কেটে ফেলো এবার।
ঠিকঠাক কথার মানে বুঝতে না পেরে অবিশ্বাসের নজরে পেছনে ঘুরে চাইলো তারা। তন্মধ্যে ঘর কাঁপিয়ে দানবের ন্যায় গর্জে উঠলো তুষার,
— ওর প্রাইভেট পার্ট কাটতে বলেছি ইউ ফাকিং বিচ!
গর্জনের তোড়ে তিরতির করে কেঁপে উঠলো নারী অস্তিত্ব দু’টি। আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে আগপাছ না ভেবেই সঙ্গে সঙ্গে হাত চালালো তারা এ্যালেক্সের পরিধেয় শর্টসের ফিতায়। অতঃপর প্রকম্পিত হাতে সেখানটায় বসিয়ে দিলো ধারালো এক ছুড়ির ফলা। অনুমান করার ফুরসত পেলো না এ্যালেক্স তার আগেই তীব্র ব্যথায় চিৎকার দিয়ে উঠলো ঘর কাঁপিয়ে। অনুভব করলো শরীরের বিশেষ মাংসপিণ্ডের দ্বিখণ্ডতা সেই সঙ্গে দেখতে পেলো প্রবল ধারার র’ক্তপ্লাবন। পরপর একই উদ্যমে ভেসে এলো হৃদয় চেঁড়া চিৎকার।
ঠোঁট প্রসারিত করে ক্রূর হাসলো তুষার। দুস্পাপ্য সেই হাসির রেখা মিলিয়ে গেলো এক লহমায়। বাইরে রয়্যাল গার্ডদের সুক্ষ্ম পদধ্বনি, এদিকেই ধেয়ে আসছে তারা। ওদিকে মেঝেতে শুয়ে গলাকাঁটা মুরগীর মতো ধড়ফড় করছে এ্যালেক্স, বেগতিক হয়ে সমানে ছুড়ছে হাত-পা। এক পর্যায়ে তীব্র হাতের ধাক্কায় কাচের তৈরি কফি টেবিলটা উল্টে পড়ে মেঝেতে। ভিন্টেজের কাচ গুলো অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় এদিক সেদিক । সেগুলোর মধ্যে থেকে দু’টো কাচ মুঠোবন্দি করে নেয় এ্যালেক্স, তার সর্বস্ব হরণকারী মেয়ে দু’টোর কপাল বরাবর বসিয়ে দেয় ধারালো কাচের কোপ । মূহুর্তেই বদলে যায় আবহ । এক দিকে আঘাতপ্রাপ্ত মেয়ে দু’টো মুখ থুবড়ে পড়ে অকস্মাৎ, অন্যদিকে কক্ষের বাইরে দরজা ভাঙার ঠকঠক আওয়াজ।
কিঞ্চিৎ মনোযোগ বিচ্যুত হয় তুষারের, এবারে সেই সুযোগটাই কাজে লাগালো টমেটো প্রিন্স,কোনোমতে নিজের র’ক্তে ভেজা ক্ষতবিক্ষত শরীরটাকে টেনেটুনে তুলে একছুটে গিয়ে লাফিয়ে পড়লো বেলকনি থেকে। তুষার ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। আজ এই টমেটো প্রিন্সের জীবন-ইতিহাস তার হাতেই সমাপ্ত হবে যেন দৃঢ়প্রতীজ্ঞ যন্ত্রমানব। তেমনভাবেই এ্যালেক্স কে অনুসরণ করে নিজেও বেলকনি থেকে ঝাপিয়ে পরলো উর্ধ্বশ্বাসে। বলাবাহুল্য বেলকনির নিচ বরাবর ছিল এক সুগভীর সুইমিং পুলের অবস্থান।
গোটা মস্কো ক্রেমলিন ছেয়ে গেছে অরাজকতায়। চারিদিকে গোলাবারুদ, হানাহানি ছোটাছুটির জের ধরে পরে যাচ্ছে একের পর এক লাশ। চেইন অব কমান্ডের সুরক্ষা নিশ্চিতে রয়্যাল গার্ডরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যে যেভাবে পারছে ছুটছে প্রেসিডেন্ট বাসভবনের অভিমুখে। ক্যাসেলের বিশাল গেট পুরোপুরি উন্মুক্ত, এরই ফাঁকে গেট দিয়ে দু’দুটো কালোরঙা মার্সিডিজ বেঞ্জ বেড়িয়ে গেলো শাঁই শাঁই করে।
নিয়ন্ত্রণহীন গতি তার, স্পিডোমিটার আটকে আছে একশোর কাঁটায়। বাতাসের বেগে চলছে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। শীতের শেষ কটাদিন উষ্ণ আবহে ধীরে ধীরে গলতে শুরু করেছে বরফ, যার দরুন রাস্তাঘাট পিচ্ছিল ভীষণ । গোটা হাইওয়ে জুড়ে গাড়ির উপস্থিতি নগন্য, অথচ উর্ধ্বশ্বাসে চলতে থাকা মার্সিডিজ দু’টো বেগতিক হয়ে উড়ে যেতে চাইছে যেন। কয়েক সেকেন্ডের মাথায় অতিক্রম করে চলেছে কিলোর পর কিলো । পিচ্ছিল রাস্তার প্রতিটি ইউটার্ন, প্রতি বাঁক যেন ভয়ঙ্কর মরণফাঁদ।অথচ দক্ষ চালনায় দু’টো গাড়িই উদভ্রান্তের ন্যায় ছুটে চলছে অর্হনিশ।
রাস্তার ধারের স্ট্রিটলাইটের নিয়ন আলো ছুঁয়ে যাচ্ছে কুয়াশার পরত। পুব আকাশে উদীয়মান শুকতারা জানান দিচ্ছে অন্তিম রজনীর, অথচ চলন্ত ইঞ্জিনের গর্জনে ভারী হয়ে আছে প্রকৃতি। জানান দিচ্ছে এই খেলা শেষ হবার নয়।
সড়কে নিবদ্ধ তীক্ষ্ণ দৃষ্টে বিঘ্ন ঘটলো অকস্মাৎ। সামনের গাড়িটা ইউটার্ন নিয়ে কৌশলে নেমে গেলো জঙ্গলের রাস্তায়। সহসা উদগ্রীব হয়ে অ্যাক্সেলে পা দাবালো তুষার।সুতীব্র গতিজড়তায় হুমড়ি খেয়ে ঝুকলো সম্মুখে।
— বাস্টার্ড!
চূড়ান্ত সম্মোধন। থমকালো না এক ন্যানো সেকেন্ড । দক্ষ হাতে ঘোরালো স্টিয়ারিং, অতঃপর ছুট লাগালো প্রথম গাড়িটার নিশানা ধরে।
জঙ্গলের শেষ মাথায়, যেখানে স্থল গিয়ে হ্রদের সীমায় মিলেছে, আশেপাশে আর কোনো সভ্যতার উপস্থিতি নেই, সেখানে এসে গাড়ি থামালো তুষার। এ্যালেক্সের গাড়িটাও এখানেই দাঁড় করানো৷
তুষার নেমে গিয়ে হাত রাখলো গাড়িতে, ইঞ্জিন এখনো গরম, তারমানে বেশিক্ষণ হয়নি এসেছে।
কারোর উপস্থিতি টের না পেয়ে গাড়ি থেকে টর্চ বেড় করে সেটাকে প্রথমে জ্বালায় তুষার। ভিজে চপচপে তার সমস্ত শরীর, ফলস্বরূপ প্রতিটি কদমে শব্দ হচ্ছে ভীষণ, সচকিত হয়ে এদিক ওদিকে টর্চ ঘোরাতে গিয়ে অকস্মাৎ লক্ষ্য করলো, সূঁচালো তীরের সাহায্যে ওর গাড়ির দু’টো টায়ারই পাঞ্চার করে দিয়ে জঙ্গলের দিকে ছুট লাগিয়েছে কেউ। অবয়বটি কালো, কুৎসিত। অনেকটা আফ্রিকান অধিবাসীদের মতো। কিন্তু রাশিয়ায় এই নিগ্রো প্রজাতির লোক কোথা থেকে এলো? আর সবকিছু রেখে গাড়ির চাকাই কেন পাঞ্চার করলো? তীরের ফলার মতো প্রশ্ন এসে বিধঁলো তুষারের মাথায়, অগত্যা সময় অতিবাহিত করলো না যন্ত্রমানব। হাতের মুঠোয় দু’দুটো শর্টনাইফ আবদ্ধ করে, চোখ খিঁচে ধাওয়া করতে শুরু করলো অবয়বটিকে।
খুব বেশিক্ষণ নয়, কয়েক মূহুর্ত অতিবাহিত হতে না হতেই ছায়ামূর্তিটা লুকিয়ে পরলো এক ধাতব পাথরের আড়ালে, এক মূহুর্তের জন্য বিচলিত হলো তুষার, তন্মধ্যে জোড়ালো এক টান অনুভুব করলো পায়ে, টানের তোড়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সশব্দে মুখ থুবড়ে পরলো শক্ত জামিনের উপর। গাছগাছালির শিকরে লেগে কেটে গেলো মানবের সুডৌল কপালের অগ্রভাগ। প্রচন্ড আঘাতে ঝিমঝিম করছে মাথাটা, আঁধার মিশ্রিত ধোঁয়াসার মাঝে অনুভব করলো কোথাও টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওকে । এতোক্ষণে মতিভ্রম কাটলো তুষারের, বুঝতে পারলো অতর্কিত ফাঁদে আটকা পড়েছে সে।
তবে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের জোড়ালো ইঙ্গিতে নিজেকে ছাড়ানোর বিন্দুমাত্র পাঁয়তারা করলো না অকুতোভয় এই বান্দা , চুপচাপ পরে রইলো মটকা মে’রে।
একাধিক পদধ্বনির মাঝে, ঠকঠক করে হেটে চলা শক্ত বুটের আওয়াজ পেতেই কর্ণসচল হলো তুষারের। সভ্যতার ইঙ্গিত অনুমান করতেই তড়াক করে চোখ খুললো সে। এখানে আলোর কোনো কমতি নেই। চারিপাশে হ্যাজাকের প্রজ্জ্বলন। নীরবে চারিদিকে চোখ বোলালো তুষার। একটা পুরাতন রঙচটা কক্ষ। ভাঙাচোরা আটপৌরে কাঠের দেওয়াল, বন্ধুর মেঝেতে মদের বোতলের ছড়াছড়ি। এছাড়া পুরো কক্ষ জুড়ে হরেকরকম গাড়ির পার্সপাতি দিয়ে ভর্তি আসবাব। হতে পারে কোনো পুরোনো গ্যারেজ। জমিন জুড়ে উৎকট মদের গন্ধ। উঠতে নিয়ে নাক সিটকালো তুষার, কাশি দিলো সশব্দে।
তক্ষুনি দৃষ্টিজুড়ে ভেসে টমেটো প্রিন্সের ক্রূর অভিব্যক্তি। তুষারের পানে হালকা ঝুঁকে চোয়াল বের করে সশব্দে হাসছে সে। স্তম্ভিত হয়ে চেয়ে রইলো তুষার, উদভ্রান্তের ন্যায় হাসতে হাসতে এ্যালেক্স বলে উঠলো,
— শুয়ে থাকো তুষার জাওয়াদ, উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা তোমার নেই,কারণ তোমার পা দু’টো লোহার শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা।
এ্যালেক্স বলতে বাকি, সঙ্গে সঙ্গে করতলের ফাঁক গলিয়ে ওর কপাল বরাবর শর্টনাইফ ছুড়ে মারলো তুষার। টমেটো প্রিন্স সরে দাঁড়াতে লক্ষ্য বিচ্যুত হলো তার। অতর্কিতে চোখ বুজলো তুষার, শক্তি প্রয়োগ করে ছাড়াতে চাইলো নিজেকে, মূহুর্তেই ভেসে এলো টমেটো প্রিন্সের কপটতা মিশ্রিত ধ্বনি,
— চেকমেট তুষার জাওয়াদ! কি ভেবেছিলে পালিয়েছি আমি?
চোখ তুলে চাইলো তুষার। অক্ষিপটে তার আগ্নেয়গিরির দাবানল, ছুড়লো কঠোর বাক্য,
— বুকের পাটা থাকলে শেকল খুলে দিয়ে কথা বল শুয়োর।
— নো, নো, নো। প্রথম দর্শনেই তুমি আমার মহামূল্যবান জিনিস কেটে নিয়েছো, কোনোমতে আটকে আছে শরীরের সঙ্গে। ছেড়ে দিলে না জানি আরও কি কি কেটে নাও। নোপ! আই কান্ট টেইক রিস্ক এ্যনি মোর।
— সাহস থাকলে শেকল খোল এ্যালেক্স।
—এ্যাই তুষার এ্যাই! সব রেখে তুমি আমার এই জিনিসটাই কেন কাটলে বলো? এখন আমার কি হবে?
মেকি স্বরে কাঁদছে এ্যালেক্স।
— বাস্টার্ড, তুই ফ্লোরাকে কলুষিত করেছিস।আমার ফ্লোরাকে। ওকে সেই ছোট্ট থেকে বড় করেছি আমি, এই দু’হাতে।
দানবের ন্যায় গর্জে উঠলো অপারগ তুষার। কান্নার মাঝেই রূঢ় স্বরে হেসে উঠলো এ্যালেক্স, হিসহিসিয়ে জবাব দিলো,
— ওকে সেদিনই পু’ড়িয়ে ফেলতাম, তাহলে তোমার আর আফসোস থাকতো না। কিন্তু ব্যাডলাক, আমার টাইমিং টা খারাপ ছিল। সমস্যা নেই, তোমার ফ্লোরাকে রে’ইপ করেছি এবার তোমাকে পো’ড়াবো। একজন বেঁচে থেকে ম’রে গেলো আরেকজন জ্বলেপু’ড়ে। গ্রেট আইডিয়া রাইট?
বিদ্রুপাত্তক হাসিতে ঠোঁট বাঁকালো তুষার, ক্ষুব্ধস্বরে বললো,
— তুই আজ ম’রবি এ্যালেক্সান্দ্রেয়।
— আমি নই, তুমি ম’রবে তুষার জাওয়াদ। হয় আমার হাতে, নয়তো এরীশ ইউভানের হাতে। ইউ নো হোয়াট আই মিন।
— ব্লাকমেইক করছিস?
— ইয়েস!
এ্যালেক্সের কন্ঠে দৃঢ়তা। পরপরই ধ্বনিত হলো অপ্রত্যাশিত বাক্য,
— কে আছো ধনুক দাও, বাকিরা আগুন জ্বালাও। আমি একে বদ করবো, আর তোমরা পু’ড়িয়ে খাবে।
টমেটো প্রিন্সের কথায় হইহই করে উঠলো উপস্থিত সকলে। এতোক্ষণে চারিদিকে চোখ বোলালো তুষার, পুরো গ্যারেজ জুড়ে অগনিত জংলী আদিবাসীদের অস্তিত্ব, অচেনা ভয়ংকর সব মুখ। কারা এরা? কোথা থেকে এসেছে?
অজ্ঞাত এক প্রশ্ন খেলে গেলো তুষারের মস্তিষ্কে। তবে ভাবনার অভ্যন্তরে পৌঁছানোর আগেই প্রকম্পিত চিত্তে চাপা আর্তনাদ করে ওঠে যন্ত্রমানব। তার চিজেলকাটা চওড়া বক্ষে নেমে এসেছে একজোড়া শক্ত বুটের ছায়া। তুষারের বুকের উপর দু’পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছে এ্যালেক্স, তীব্র চাপপ্রয়োগে শ্বাসরোধ হয়ে নাকমুখ থেকে বেড়িয়ে এসেছে রক্তের স্রোত। যন্ত্রণায় ধড়ফড় করছে তুষার। যা দেখে
পিশাচের মতো শরীরের কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো হায়েনা রূপি এ্যালেক্স।
কৃষ্ণগহব্বরের তীক্ষ্ণ উজ্জ্বলাব দীপ্তি মিয়িয়ে এসেছে যেন, তুষার হাঁপাচ্ছে অতর্কিতে। আত্ম সুরক্ষায় বা হাতে আঁটকে থাকা শর্টনাইফটাও এবার বসিয়ে দিলো এ্যালেক্সের পায়ের পাতায়। বিন্দুসম টললো না সে বান্দা। গোড়ালিতে তীব্র বল প্রয়োগ করে হাতের আঙুলে টানলো ধনুক, নিশানা বাঁধলো নির্ভুল ভাবে। ঠিক তুষারের চোখ বরাবর।
— প্রস্তুুত তুমি মেশিনম্যান!
প্রত্যুত্তর করার ফুরসত পেলোনা তুষার । মুখগহ্বরে তার রক্তের জোয়ার।
ঠোঁট প্রসারিত করলো এ্যালেক্স, কটাক্ষের সুরে বললো,
— মনে রেখো আমি একা নই, এই যে চারিপাশে এতো এতো দক্ষ সৈনিক গুলো দেখছো, এগুলো সব তার। তার কথায় ওঠে আবার তার কথাতেই বসে। কিন্তু তুমি আজ এই জঙ্গলে সম্পূর্ণ একা। আমাকে এতোটা দূর্বল ভাবা তোমার উচিত হয়নি ডিউড!
একটু থামলো এ্যালেক্স। অক্ষি তার শীতল। ফের শান্ত গলায় বললো,
— গ্যাংস্টার লিডার তুষার জাওয়াদ ধুঁকে ধুঁকে ম:রবে এবার। বেচারা রীশস্কা, লা’শটাও খুঁজে পাবেনা তার ডান হাতের।
ফের হইহই করে উল্লাসে মেতে উঠলো মানুষ খেকো আদিবাসী গুলো। সময় নষ্ট করলো না এ্যালেক্স, লক্ষ্যভেদে মরিয়া হয়ে টানলো ধনুর ডোরা। সঙ্গে সঙ্গে তুষারের অভিমুখে ছুট লাগালো তীরের ফলা। যেন নৈঃশব্দ্যিক এক মৃ’ত্যু দূত। জীবনের অন্তিম লগ্ন ঘনিয়ে এসেছে ভেবে চোখ বন্ধ করে নিলো যন্ত্রমানব। অন্তর ছেয়ে গেলো তার গুমোট শূন্যতায়।
কয়েক ন্যানো সেকেন্ড মাত্র, এরই মাঝে কোথা থেকে যেন ছুটে আসা এক তীক্ষ্ণ ধাতব বুলেট নিমেষেই লক্ষ্যচ্যুত করে দিলো ছুটে চলা তীরটাকে। বুলেটের সংঘর্ষে গতি হারিয়ে সেটি ধপ করে পড়লো গিয়ে জমিনে।
ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল হয়ে পরলো উপস্থিত সকলে। তীরের ফলার চেয়ে সুক্ষ্ম নিশানা এই বুলেটের!
কার নিশানায় থাকতে পারে এতোটা তীক্ষ্ণতা! কেই বা এই অদৃশ্য স্নাইপার!
বাইরে প্রবল বায়ুর ঘূর্ণি,সঙ্গে পাখা ঘোরার যান্ত্রিক গর্জন। আচানক ধেয়ে আসা দমকা হাওয়ায় একযোগে নিভে গেলো সব হ্যাজাকের আলো। ভাবনার ছেদ ঘটলো আবারও। গ্যারেজের বাইরে আদিবাসীদের হট্টগোল, চিৎকার, চেঁচামেচি । তার কয়েক মূহুর্ত বাদেই নিস্তব্ধতা। এতোক্ষণে বোধ হয় শশ্মানে রূপান্তরিত হয়েছে ফ্রন্ট ইয়ার্ড। সবগুলো মানুষ খেকোকে এক লহমায় শুয়িয়ে দিয়েছে আগন্তুক।
ভ্রু গোছালো টমেটো প্রিন্স। আগন্তুকের সুতীব্র পদধ্বনি যেন অশুভের আস্ফালন। ধড়ফড়িয়ে ঘুরে তাকালো সকলে।
দেখলো, আঁধারের মরীচিকা ভেদ করে রিভলবার হাতে এদিকেই এগিয়ে আসছে এক দীর্ঘদেহী অবয়ব। বাতাসের তীব্রতায় তিরতির করে উড়ছে তার পরিধেয় টেইলকোট খানি। নিস্তব্ধ পদধ্বনি। প্রতিটি কদমে তার নৈঃশব্দ্যিক হুশিয়ার।
মনিবের নিস্তেজ গতির তালে তালে এগিয়ে আসছে আরও একটি দানবীয় অবয়ব। হিং’স্র’তায় একহাত সম জিহ্বাটা বাইরে বেড়িয়ে এসেছে তার, লকলকে বিদঘুটে অভিব্যক্তি। যেন হুকুম পাওয়া মাত্রই এক লাফে ঝাপিয়ে পড়বে উপস্থিতদের উপর । নিজের ধারালো দাঁত আর তীক্ষ্ণ নখড়ের থাবায় ছিড়েখুঁড়ে এক নিমেষে পেটে পুরবে সবাইকে।
থমকে গিয়েছে এ্যালেক্স, সেই সঙ্গে স্তব্ধ হয়েছে কক্ষে উপস্থিত প্রতিটি মানুষ। প্রগাঢ় আঁধার ভেদ করে অবশেষে দৃশ্যজুড়ে ভেসে উঠলো আগন্তুকের তীক্ষ্ণ মুখাবয়ব।হীম ধরা শীতল দৃষ্টি যেন অন্তর জমিয়ে দিতে সক্ষম। তেমন করেই জমে গেলো টমেটো প্রিন্স, অস্ফুট স্বরে আওড়ালো,
— রীশস্কা!
কোনোরূপ প্রত্যুত্তর করলো না মাফিয়া বস, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোভাতুর দৃষ্টির জন্তুটাকে আঙুল তুলে ইশারা করলো কেবল। তার হুকুম পাওয়া মাত্রই ভয়ঙ্কর সূঁচালো দন্তরাশি বের করে হিং’স্রে’র ন্যায় ঝাঁপিয়ে পরলো উপস্থিত আদিবাসীদের উপর। নিমেষেই প্রতিটি জলজ্যান্ত প্রাণ থেকে ছিড়েখুঁড়ে নাড়িভুঁড়ি টেনে বের করে আনলো সে দানব। রঙচটা ভঙ্গুর কক্ষের প্রতিটি শ্যাওলাধরা দেওয়াল ছেয়ে গেলো হৃদয় ছেঁড়া আর্তনাদ আর র’ক্তের লালিমায়।
সেসবে বিন্দুসম ভ্রুক্ষেপ করলো না মাংসাশী নেকড়ে টা। বরং তৃষ্ণার্থ চাতকের ন্যায় বড্ড আমোদ করে পান করতে লাগলো সেই উষ্ণ রঞ্জিত তরল। দগদগে মাং’স’পিণ্ড গুলো যেন তার পরম সুস্বাদু আহার।
এরীশ, তুষার, এমনকি টমেটো প্রিন্স প্রত্যেকের মুখমণ্ডল ভরে উঠেছে ছিটকে পড়া র’ক্তের আঁচড়ে । প্রথমে বৃদ্ধাঙ্গুলির সাহায্যে কপালটা মুছলো এরীশ, অন্যহাতে আবদ্ধ রিভলবারটা তাক করলো তুষারের পা বরাবর। আবৃত শেকলের ধাতব বাঁধন ছুটে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ছুড়লো গুলির বহর। অতঃপর হাত বাড়ালো তুষারকে টেনে তোলার আশ্বাসে।
সঙ্গে সঙ্গে ওপাশ থেকে খ্যাক খ্যাক ধ্বনিতে হেসে উঠলো এ্যালেক্স। হাতে তালি দিতে দিতে বললো,
— নাইস বন্ডিং।
হাত সরিয়ে দৃষ্টি ঘোরালো মাফিয়া বস। শীতল দৃষ্টে অবলোকন করলো মূমুর্ষ এ্যালেক্সের পানে, ক্ষুব্ধতায় বেড়িয়ে এলো তার ধারালো কণ্ঠস্বর।
— তোর আশেপাশের আবর্জনা গুলো সরানোর জন্য আমার বোজো একাই যথেষ্ট। আর তোকে সরানোর জন্য আমার একটা ইশারা।
ফের ধ্বনিত হলো টমেটো প্রিন্সের উদ্ভট কৌতুক হাসির বহর। যেন মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে মস্তিষ্কের খেই হারিয়েছে সে। তেমন করেই বলে উঠলো,
— ওই যে বললাম, নাইস বন্ডিং। রক্তের টান বলে কথা।
— শু’য়োরের বাচ্চা।
চিৎকার করে ছুটে এসে ওর কপাল বরাবর সজোরে লাত্থি হাঁকালো তুষার। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শক্ত জমিনে মুখ থুবড়ে পড়লো এ্যালেক্স। গাড়ির স্টিয়ারিং এ লেগে কপাল থেঁতলে বেড়িয়ে এলো র’ক্তে’র স্রোত। পরপর আরও দু’টো ঘুষি ছাড়লো পুরুষালি চওড়া পিঠের মাঝ বরাবর। বেঁকে গেলো মেরুদণ্ড। ফর্সা শরীরটা নিমেষেই নদী হলো র’ক্তে। উদভ্রান্ত তুষার মে”রেই ফেলতো টমেটো প্রিন্সকে, তবে বাঁধ সাধলো এরীশ, এগিয়ে এসে এক ঝটকায় সরিয়ে দিলো তুষারকে, এ্যলেক্সকে ঘুরিয়ে ওর বক্ষস্থল বরাবর হাঁটু দাবিয়ে কপালে রিভলবার ঠেকিয়ে বললো,
— কি বলেছিলি আবার বল।
বহু কসরত করে শ্বাস টানলো এ্যালেক্স্। হাসতে হাসতে অস্ফুট স্বরে বললো,
— কয়জন কে মা’রবে তুমি মাফিয়া বস? ও তোমাকে ছাড়বে না। প্রতিশোধের তাড়নায় পাগলা কুকুরের মতো ছটফট করছে ও। অচিরেই ছাঁয়ার মতো ধাওয়া করবে তোমায়। বিডি তে তোমার ছোট্ট একটা ব্লু আইড বেবিগার্ল আছে। সেটাকেও তোমার সামনে বসিয়ে নষ্ট করবে। তোমার আকাঙ্ক্ষিত তুলতুলে সব অঙ্গপ্রতঙ্গ গুলো ছিঁড়েছিঁড়ে খাবে। একমাত্র দূর্বলতার প্রতিটি চিৎকারে ভেঙেচুড়ে শেষ হয়ে যাবে তুমি। কেউ আটকাতে পারবে না। মনে রেখো, হি ইজ আ সাইকোপ্যাথ! আ রিয়াল সাইকোপ্যাথ!
মাফিয়া বসের শীতল দৃষ্টি এক লহমায় পরিনত হলো অঙ্গারে। বিস্তৃত কপালে জড়ো হলো বিন্দু বিন্দু ঘাম। প্রবল আক্রোশে ফেটে পড়লো তার পৈশাচিক সত্তা। থরথর করে কেঁপে উঠলো অশুভ অস্তিত্ব। জানোয়ারের ন্যায় বন্দুকের নলের সাহায্যে এ্যালেক্সের মুখমণ্ডলটা থেঁতলে দিতে দিতে বললো,
— সি ইজ দ্যা প্রিন্সেস, বাস্টার্ড! কুইন অব মাই আন্ডারওয়ার্ল্ড। ওকে যে স্পর্শ করে তার হাতটা পর্যন্ত ভেঙে গুড়িয়ে ফেলি আমি।
— কতক্ষণ ভাঙবে!
আবারও অস্ফুট আওয়াজ ভেসে এলো এ্যালেক্সের মুখ থেকে। হুংকার ছাড়লে এরীশ,
— রে’পিস্ট! তোর মতো রে’পিস্ট যতদিন যতদিন থাকবেন। শুধু এই একটা অন্যায় যা আমি সহজে বরদাস্ত করিনা।
— ধ’র্ষ’নে যার জন্ম সে বরদাস্ত করবেই বা কিভাবে!
শ্বাস নিতে নিতে উচ্চারণ করলো এ্যালেক্স।
মূহুর্তেই থমকে গেলো মাফিয়া বসের দুটো হাত। ধূসর নেত্রের ক্ষয়িষ্ণু দীপ্তি নিভে এলো অকস্মাৎ।
— হেলিকপ্টার নিয়ে কাকে বাঁচাতে এলে তুমি? মনে রেখো, শুধু তুমিই মরিচীকা নও মাফিয়া বস। তোমার আশেপাশের সবাই মরিচীকা।
গ্রীবা ঘোরালো এরীশ। অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো তুষারের পানে। একটা ধারালো কুড়াল হাতে নিয়ে আঘাত প্রাপ্ত পা টেনে এদিকেই এগিয়ে আসছে সে। এরীশ এবং তুষার দুজনার হাতে আবদ্ধ একই রকম দু’টো স্মার্টওয়াচ। একটি অপরটির সাথে বিশেষভাবে সংযুক্ত ঘড়ি দুটো। একজনের হৃদস্পদন, ব্লাডপ্রেশার এমনকি অবসাদ বেড়ে গেলেও অপরজন টের পেয়ে যায় শুধুমাত্র এই ডিভাইসের মাধ্যমে। লোকেশন ট্র্যাকারের দরুন, ঘড়ির মাধ্যমেই আজ তুষারের গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছিল মাফিয়া বস।
কিন্তু এ্যালেক্স কি বলতে চাইছে?
ফের চোখ ঘুরিয়ে এ্যালেক্সের পানে দৃষ্টিপাত করলো সে । ওর কপাল বরাবর বন্দুক তাক করে টেনে ধরলো ট্রিগ্যারস, নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে উঠলো ,
—- আমার জন্ম ধর্ষনে নয়। আমার পিতৃ পরিচয় আছে।
— আছে তো জারজ জাত! ভানিয়া মিকাইল ওরফে পাইথন লিডারের জারজ সন্তান।
কথাটা বলে খ্যাক খ্যাক শব্দে বিদ্রুপাত্তক হাসিতে ফেটে পড়লো এ্যালেক্স। ওদিকে ছুটে এসে ওর শরীরে কুড়ালের ধারালো ফলা বসাতে যাবে তার আগেই ব্যগ্র থাবায় তুষারকে জমিনে শুয়িয়ে দেয় এরীশ। তুষারের হৃদস্পন্দন তুঙ্গে, গ্রীবাদেশ চেপে ধরার দরুন শ্বাসরোধ হয়ে আসছে। যেন ওষ্ঠাগত প্রাণ। তুষারের নিয়ন্ত্রণহীন মাত্রাতিরিক্ত হৃদস্পন্দনের এ্যালার্ট হিসেবে বিপবিপ আওয়াজে ক্রমাগত জ্বলে উঠছে এরীশের কব্জিবদ্ধ ঘড়িটা। তা দেখে উপহাস করে হাসলো এরীশ। টমেটোর পানে দৃষ্টি ঘুরিয়ে ছুড়লো কর্কশ আওয়াজ,
— এই সব কে বলেছে তোকে?
— আমি আরও অনেক কিছু জানি। আ….
কথা সম্পন্ন করার আগেই হাতে থাকা মারণাস্ত্রটি ওর পানে ছুড়ে মারলো তুষার। নিমেষেই ছুটে আসা কুড়ালটা গেঁথে গেলো এ্যালেক্সের কপাল বরাবর। সহসা বাকি কথা কন্ঠানালিতে আঁটকে গেলো বান্দার। চিরতরে রোধ হয়ে গেলো তার শ্বাস-প্রশ্বাস।
এহেন কাণ্ডে ক্ষুদার্থ হিংস্রের ন্যায় তুষারের পানে দৃষ্টিপাত করলো এরীশ। মানবের নাক বরাবর পরপর কয়েক ঘাঁ ঘুষি হাঁকিয়ে হুংকার ছাড়লে ঘর কাঁপিয়ে,
— ইউ ব্লাডি লায়ার! বিশ্বাসঘাতক।আ’ল কিল ইউ!
— আমি বিশ্বাসঘাতক নই । যা আপনার প্রাপ্য, তাতে কখনো হস্তক্ষেপ করিনি আমি।
তুষার জবাব দিলো নির্বিকারে। মুখজুড়ে তার র’ক্তের প্লাবন। ফের গর্জে উঠলো মরিচীকা,
— প্রাপ্য! তোমার বাপের জারজ সন্তান বলে দয়া দেখাচ্ছো? আই জাস্ট ফা’কিং হেইট ইউওর সিমপ্যাথী।
তুষারের কলার ধরে সজোরে ঝাঁকালো এরীশ।
— ভুল বলেছেন, এই সাম্রাজ্য কখনোই আমার নয়। আমিতো কেবল লাটাই বিহীন ঘুড়িমাত্র। উদ্দেশ্য হীনতায় ভুগতে ভুগতে পাপের আঁধারে আটকে গিয়েছি। পাইথন প্যারাডাইস যদি কারোর দাম্ভিকতায় মাথা নোয়ায় তবে সেটা আপনি এরীশ । দয়া তো আপনি আমাকে দেখিয়েছেন, সেদিন আমার জীবন বাঁচিয়ে।
— জাস্ট শাট ইউওর ফা’কিং মাউথ। এসব বললে আমি তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবো না কাওয়ার্ড। তোমার বাবা আমার মায়ের রে’পিস্টদের একজন। তোমাকে তো ম’রতেই হবে।
— আমি প্রস্তুত!
এবারও উদ্বেগহীন তুষার। এরীশ উঠে দাঁড়ালো ধীরে ধীরে। সটান দাঁড়িয়ে রিভলবার তাক করালো তুষারের কপাল বরাবর। ধেঁয়ে আসা প্রবল জলোচ্ছ্বাসের ন্যায় শীতল কন্ঠে আওড়ালো,
— আমার দুনিয়াতে সেকেন্ড চান্স বলে কিছু নেই। বিট্রেয়ারদের কখনো বাঁচতে দিই না আমি। নেভার!
— আমার অন্যায়?
— তুমি ভানিয়া মিকাইলের একমাত্র ছেলে নও। তোমার বাবা আমার জন্মদাতা। এটাই সবচেয়ে বড় অন্যায়।
বাকরুদ্ধ তুষার। সশব্দে বিড়বিড়ালো এরীশ,
— গুড বায় তুষার জাওয়াদ!
— নাহ!
ট্রিগার টানার শব্দ হলো এরপর বুলেট বের হবে। তন্মধ্যে অকস্মাৎ ভেসে এলো অযাচিত নারীকণ্ঠস্বর। তুষার এরীশ দু’জনেই একযোগে দৃষ্টিপাত করলো সম্মুখ দুয়ারে। দেখা মিললো সোনালী চুলের রুশকন্যার। অস্থির চিত্তে বেগবান হয়ে ছুটে এলো সে রমণী। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে হাঁটু ভেঙে ঝুকলো নির্দয় মানবের পায়ের সংস্পর্শে। হাতে আবদ্ধ রিভলবারটা নিজের কপালে ঠেকিয়ে ক্রন্দিত স্বরে বললো,
— আপনার সঙ্গে কৌশলে জেতার সাধ্য আমার নেই। কিন্তু তুষারকে মারলে আমাকেও দুনিয়া ত্যাগ করতে হবে এরীশ ।
— আমার দেওয়া রিভলবার দিয়ে আমাকেই ব্ল্যাকমেইল করছো। তারমানে বিশ্বাসঘাতক সব আমার ঘরেই!
তাচ্ছিল্যের সুরে ঠোঁট বাঁকালো এরীশ। কুণ্ঠায় রিভলবার নামিয়ে নিলো ফ্লোরা। মাফিয়া বসে পা দু’টো আঁকড়ে ধরলো সবেগে। ডুকরে কেঁদে উঠে বললো,
— তুষার বিশ্বাসঘাতক নয় এরীশ। আমি জানি তুষার আপনার সুরক্ষা কবজ। ছিল, আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।
শুধু মাত্র তুষারের প্রাণের সুরক্ষায় আমি আমার সব হারিয়েছি। নিজেকে পন্যের মতো তুলে দিয়েছি ওই নরপশুটার হাতে। এতকিছুর পরেও তুষারকে এভাবে মে’রে ফেলতে পারেন না আপনি। কিছুতেই পারেন না। আমি আপনার কাছে ভিক্ষা চাইছি, তুষারের জীবনটা ভিক্ষা দিন আমায় এরীশ।
— আমি নির্দয়।
রুক্ষস্বর ভেসে এলো ওপাশ থেকে। এতোক্ষণে ফ্লোরার পানে দৃষ্টিপাত করলো তুষার। ওর চোখে আগুন। মুখ জুড়ে রাজ্যের ক্ষোভ। আর অপেক্ষা করলো না। বিতৃষ্ণায় চোখ বুঁজে বলে উঠলো,
— জাস্ট শ্যুট মি এরীশ, আমি প্রস্তুত।
— কিন্তু আমি নই।
রিভলবার সরিয়ে নিলো এরীশ। কোমরে আবদ্ধ হোলস্টারে সেটিকে ঢোকাতে ঢোকাতে বললো,
— তোমার সঙ্গে এখনো বহু হিসেব নিকেশ বাকি রয়ে গেছে তুষার জাওয়াদ। তুমি এতো সহজে ম’রতে পারোনা। নো ওয়ে!
নিগূঢ় নির্লিপ্ত স্বরে বাক্যকটা উগড়ে দিয়ে অস্থির পদক্ষেপে জায়গা ত্যাগ করলো এরীশ। মাফিয়া বস চলে যেতেই তুষারের নিকট হুড়মুড়িয়ে ছুটে এলো ফ্লোরা। মানবের র’ক্তা’ক্ত মুখাবয়বখানি দু’হাতে আঁজলা করে ধরে ঠোঁট ভেঙে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো মেয়েটা
— কতো রক্ত তুষার! কতো রক্ত। আপনি খুব ব্যথা পেয়েছেন তাইনা!
আলতো স্পর্শে ছুঁয়ে দিলো দগদগে ক্ষতস্থান। সঙ্গে সঙ্গে এক ঝটকায় ওকে দূরে সরিয়ে দিলো তুষার। কন্ঠে আ’ক্রোশ ঢেলে বললো,
— খবরদার! ছোঁবে না তুমি আমায়।
— তুষার!
আহত স্বরে ডাকলো রমণী।
— তুমি আমার জন্য নিজের সম্মান বিলিয়ে দিয়েছো, রিয়েলি! আমার মতো একটা পাপিষ্ঠের জন্য? হাউ ফা’কিং ডেয়ার ইউ ফ্লোরা, হাউ ফা’কিং ডেয়ার ইউ!
প্রকম্পিত গলায় চিৎকার করে উঠলো তুষার। কণ্ঠে তার এক পৃথিবী সমান আক্ষেপ। বুকভাঙা আর্তনাদে কাতরে উঠলো ফ্লোরা। ফোপাঁতে ফোপাঁতে বললো,
— সেই মূহুর্তে আপনার জীবনের চেয়ে আমার কাছে আর কিছুই মূল্যবান ছিলনা তুষার।
— আজ কিংবা কাল সত্যিটা সামনে আসতোই ফ্লোরা।
— কিন্তু আপনি বাঁচতে পারতেন না। ধর্ষিতাদের প্রতি এরীশের এক অদৃশ্য দূর্বলতা রয়েছে। আমি সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছি। আজ আমাকে এখানে এরীশই নিয়ে এসেছিল। টমেটো প্রিন্সকে নিজের হাতে শাস্তি দেওয়ার জন্য। এই দেখুন রিভলবার ও দিয়েছে।
কাঁদতে কাদঁতে আরেকটু দূরত্ব কমালো রমণী, তৎক্ষণাৎ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় তুষার।
আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ৪৭
— দূরে যাও, আমি তোমাকে দেখতে চাই না আর।
ক্রন্দনরত রমণী কথা বলতে পারলো না। নৈঃশব্দ্য আহাজারিতে অন্তর ছিঁড়ে যাচ্ছে তার। মনেমনে চিৎকার করে বলতে লাগলো,
— আমি যে কতোটা ভালোবেসে ফেলেছি, কি করে বোঝাই আপনাকে তুষার!
ধীরে ধীরে রুক্ষ দৃষ্টি নমনীয় হয় মানবের। নিস্প্রাণ নেত্রজুড়ে চিকচিক করে ওঠে জলের আভাস। ক্ষ’তবি’ক্ষত মুখমণ্ডলের মাঝে অশ্রুসজল কার্নিশদ্বয়। বড্ড ব্যথাতুর লাগছে সে চাহনি। টলমলে, অপ্রত্যাশিত সেই দৃশ্য চোখ এড়ায়না রুশ রমণীর। অবাক দৃষ্টে তুষারের অক্ষমতার স্বাক্ষী হয় সে। অতঃপর স্বগোতক্তিতে বিড়বিড়ায়,
— তারমানে তুষার কাঁদতে জানে! তার এই অশ্রুর প্রতিটি ফোঁটা আমার জন্য বিসর্জিত হয়। শুধু আমার জন্য।
অতঃপর একচিলতে মোলায়েম হাসি।