আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ৫৪

আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ৫৪
suraiya rafa

স্রোতসীনি নদীর কুলকুলে জলধারার মতোই নিঃশব্দে গড়িয়ে গেছে সময়। প্রকৃতির ধরাবাঁধা নিয়মের যাঁতাকলে একের পর এক খসখস করে উল্টেছে চিরায়ত ক্যালেন্ডারের বারোখানা পাতা। জীবন থেকে হারিয়েছে আরও একটি চমৎকার বসন্ত। শরৎ হেমন্তের মতো অদৃশ্য মৌসুমের শীতল ছায়ায় ঢুবে গিয়েছে কত অনুচ্চারিত অনুভব। সময় পেরিয়েছে তার নিজস্ব গতিতে। জীবনের কঠোর বাস্তবতাকে পুঁজি করে মানুষও হয়েছে তার সামিল। সবকিছুকে পেছনে ছাড়িয়ে তুখোড় পদচারণায় ছুটে চলেছে অবিরাম।

মানুষ স্বভাবতই পরিবর্তনশীল। কিছু পরিস্থিতিতে তারা স্বার্থপর হতে বাধ্য হয় । আত্মিক মোহ ভুলে গিয়ে আবর্তিত হয় দ্বায়িত্বের বেড়াজালে। কিন্তু অনুভূতি? অনুভূতির কি কখনো মৃত্যু ঘটে ? হয়তো না। পরিনাম আর সময়ের পরিক্রমায় অনুভূতির সজীবতাটুকু আপনাআপনি নিস্তেজ হয়ে যায় ঠিকই, তবে ছাইচাঁপা আগুনের মতোই পিছুটান হয়ে থেকে যায় হৃদয়ে জমানো অজস্র বিভীষিকাময় অপূর্ণ স্মৃতির বহর। সেই বেদনাদ্বায়ক অপূর্ণতার অভাবে মানুষের মৃত্যু হয় না । বরং মৃত্যুর চেয়েও ততোধিক যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে বেঁচে থাকে তার নিস্ক্রিয় আত্মাটা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বছর খানিক পরে……..
সকালটা আজ মনোরম। গোটা অক্টোবর মাস পুরো দমে শৈত্য প্রবাহ হাঁকিয়ে বহুদিন বাদে আজ সূর্যের দেখা মিলেছে হুইস্টলারে। একছটাক মোলায়েম রোদে ঝলমল করছে চারিপাশ। মৃদু-মন্থর কনে দেখা আলোর মাখন নরম উষ্মায় প্রাঞ্জল হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। রাস্তার দু’ধারে কমলা রঙের ম্যাপল গাছের মগডালে দুরন্ত শিশুর মতো খেলা করছে ফুরফরে হিমেল হওয়া।

প্রকৃতির এহেন হাস্যোজ্জল রূপে সকাল সকাল ড্রাইভ করতে গিয়েও মন ভালো হয়ে গেলো মাহিনের। প্রকৃতির রূপে মাতোয়ারা হয়ে কয়েকক্রোশ বন্ধুর পাহাড়ি হাইওয়ে পেড়িয়ে গেলো এক নিমেষে।সৌম্য ওষ্ঠ যুগল সরু করে শীষ বাজাতে বাজাতে মনের আনন্দে সে পৌঁছালো শহরের সবচেয়ে বড় সরকারি ক্লিনিক হুইস্টলার হেলথ কেয়ারে।
ভ্যাকসিন এরিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই চোখে পড়লো স্থানীয় মানুষের লম্বা লাইন। সবাই তার ছোট্ট সোনাকে পরম আদরে বুকে আগলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সিরিয়ালের অপেক্ষায়।

আজ রবিবার অথার্ৎ ছুটির দিন, তাই হয়তো ভীড়ের পরিমাণটা একটু বেশি। মাহিনের চিন্তা হতে লাগলো, কেন যে এতো বেলা অবধি ঘুমালো সেই ভেবে মন খারাপ হলো। যদিও সে ভালো করেই জানে ঈশানী তার দ্বায়িত্বে অবিচল। কোথাও কোনো ক্রুটি না রেখেই সে বেড়িয়ে আসবে ক্লিনিক থেকে। তবুও ভেতরে একপ্রকার গ্লানির ঢেউ উঠলো মাহিনের । ক্ষণকাল অপেক্ষা না করে সিরিয়াল ভেঙেই সে ছুটে গেলো কক্ষের নিকট। তার এহেন অস্বাভাবিক বিবেক বিবর্জিত কর্মকাণ্ডে পেছন থেকে হইরই করে উঠলো সকলে। ওপাশ থেকে দু’জন নীল পোশাকধারী গার্ড ও এগিয়ে এলো তাকে রুখবে বলে। তন্মধ্যে ভেতর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে এলো ঈশানী।

আবেশিত হাতের দৃঢ়তায় যক্ষের ধনের মতোই বুকের মাঝে আবদ্ধ করে রেখেছে তার কোমল অস্তিত্বখানিকে । হ্যালো কিটির তুলতুলে জাম্বো স্যুটের মধ্যে থেকে বেড়িয়ে আসা একজোড়া ধূসর বর্ণের টলমলে আদুরে চোখ ঈশানীর পানেই দৃষ্টিপাত করে আছে অপলক।
ঈশানীকে দেখা মাত্রই উদাসীন পদক্ষেপ থমকে গেলো মাহিনের। যে চটজলদি জায়গা ছেড়ে এগিয়ে গেলো করিডোরের দিকে। ঈশানীর মুখোমুখি হতেই মেয়েটার ক্রন্দিত বদনে চোখ রেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো সে। সৌষ্ঠব কপালে জড়ো হলো চিন্তার বলিরেখা। বিস্মিত কণ্ঠে শুধালো,

— কাঁদছো কেন তুমি? কি হয়েছে?
নাকের পাটা ফুলিয়ে ঠোঁট উল্টালো ঈশানী। মাহিনের একটুখানি আস্কারায় অভিমানে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠার উপক্রম তার।
— দাঁড়াও ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করছি।
চোয়াল শক্ত করে সামনের দিকে হাঁটা ধরতেই ঘাড় ঘোরালো ঈশানী। ভ্রু বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কোথায় যাচ্ছেন?
— কৈফিয়ত চাইতে। আমার বাচ্চাকে রেখে বাচ্চার মাকে কেন ভ্যাকসিন দেওয়া হলো!
মাহিনের কথা শুনে তপ্ত রাগে চিড়বিড়িয়ে উঠলো ঈশানী। চোয়ালের পেশী শক্ত করে বললো,
— কখন বললাম ওরা আমাকে ভ্যাকসিন দিয়েছে?
মাহিনের চোয়াল ঝুলে পড়লো। ঠোঁট টিপে হাসি দমানোর প্রয়াস চালিয়ে বললো,
— আশ্চর্য! তোমার কান্নাকাটি দেখে আমি আরও ভাবলাম,বেবির ভ্যাকসিন গুলো বোধ হয় তোমাকেই দেওয়া হয়েছে।

মাহিনের কৌতুক হাসির রহস্য আঁচ করতে পেরে অতর্কিতে ফুঁসে উঠলো রমণী । হাতের বাঁধন দৃঢ় করে , নিজের ক্ষুদ্র অংশকে বুকের কাছে টেনে আনলো আরেকটু। মাখন নরম মুখটার দিকে মমতার দৃষ্টিতে চেয়ে জড়ানো গলায় আওড়ালো,
— হাত,পা মিলিয়ে চার চারটে ইনজেকশন দিয়েছে। ওর কান্না দেখে আমার বুক ভেঙে আসছিল, নিজেকে আটকাতে পারিনি কিছুতেই। কতটা ব্যথা পেয়েছে বলুন তো।
চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মাহিন । ডেলিভারির পরে আজ প্রায় চারমাস অতিবাহিত হয়েছে, এখনো পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের কঠিন অধ্যায়টুকু কাটিয়ে উঠতে পারেনি মেয়েটা। তাইতো সময় অসময় অযথাই কান্নার জোয়ারে ভাসে তার নীল নয়ন। একটু থেমে ঈশানীর মাথায় হাত বোলালো মাহিন। সম্পর্কটা ঠিক বন্ধু সুলভ না হলেও টুকটাক বোঝাপড়ার বিষয়গুলো এখন তাদের মধ্যে খুব স্বাভাবিক। সেই অধিকার বোধ থেকেই মাহিন ধাতস্থ করলো মেয়েটাকে,

— আমার মতে মেয়েদের দু’বার জন্ম হয়।
তার কথা শুনে চোখ তুললো ঈশানী। বিহ্বলিত কণ্ঠে শুধালো,
— মানে?
ক্ষণকাল থেমে ছোট্ট ইয়াশ কে কোলে তুলে নিলো মাহিন। মা ছেলে সমেত পার্কিংয়ের দিকে এগুতে এগুতে প্রলম্বিত শ্বাস ফেলে বললো,
— একবার স্রেফ মানুষ হিসেবে জন্ম হয়। আরেকবার মা হিসেবে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে সন্তান জন্মদান মাতৃত্ব হলেও, তাত্ত্বিক ভাষায় তা নয়। গোটা একটা মানুষ যখন আরেকটা প্রাণের সুরক্ষায় নিজের নিজস্বতাকে ভেঙেচুড়ে নতুন রূপে প্রসিদ্ধ হয়, তখনই তাকে মাতৃত্ব বলে ঈশানী । আর সেই জননী রূপী মানবীর মনের জোর হয় অনেক বেশি।মন চাইলে তাকে আর ভাঙা যায় না। কারণ তখন তার আস্তিন জুড়ে থাকে আরেকটি অস্তিত্ব। তার সুরক্ষা , তার ভবিষ্যত।

মাহিনের কথার ফোয়ারা রেলগাড়ির মতো ছুটছে।বিমুগ্ধ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে ঈশানী। মাঝেমধ্যে মনে হয় এই মানুষটার কথায় জাদু আছে, আছে অদ্ভুত এক মাধুর্য্য। যা এক নিমেষে কুয়াশার চাদরের মতোই ভিজিয়ে দেয় মন জমিন। সাংঘাতিক রকম মন খারাপ থাকলেও তার প্রতিটি বাক্যে যেন উপচে পড়ে সূর্যঢালা সোনালু দ্যুতি। গত একটা বছরে মানুষটাকে এক প্রকার দেবদূতের আসনে বসিয়ে ফেলেছে ঈশানী। অকূলপাথারে ডুবে মরার আগ মূহুর্তে অনাগত সন্তান সমেত ঈশানীকে রক্ষার জন্য যেন স্বয়ং উপরওয়ালাই পাঠিয়েছিলেন তাকে।

মাহিন গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো। ঈশানী তার পাশেই। মায়ের বুকের ওমে গা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে ছোট্ট ইয়াশ। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। ভেতরে পিনপতন নীরবতা । সময়ের ব্যবধানে ঈশানী একটু জড়তা কাটিয়ে উঠলো। মজার ছলে বললো,
— যে এতো সুন্দর করে মানুষকে বোঝাতে পারে, তার জীবন সঙ্গীর সৌভাগ্য দেখার জন্য তর সইছে না আমার।
কিঞ্চিৎ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো মাহিন। ঘুমন্ত ইয়াশের পানে পিতৃস্নেহ দৃষ্টিপাত করে বললো,
— আমার ছেলের তার পাপাকে প্রয়োজন, সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি আসার প্রশ্নই ওঠে না।

মাহিন অযৌক্তিক কিছু বলেনি। ইয়াশের জন্মের পর থেকে কাগজে কলমে সবখানে বাবার নামের জায়গায় মাহিনেরই সাক্ষর দিতে হয়।সে হিসেবে সে ইয়াশের পাপা তো বটেই। কিন্তু কথাটা শোনা মাত্রই জমে গেলো ঈশানী। অন্তর গহিনে কোথাও একটা খেলে গেলো মন বিষাদের তুফান। মেঘ থমথমে আকাশের মতোই আঁধার ঘনালো হৃদপিঞ্জরে। নিঃশব্দে চোখ নামিয়ে সে দৃষ্টিপাত করলো তুলতুলে নরম অস্তিত্বের পানে। ভীষণ আদুরে একটা মুখ। মাথা ভর্তি ঈষৎ বাদামী ঘন চুল, চোখ দু’টোও তাই। ধূসর বাদামি রঙের। আজকাল এই মুখটা দেখলেই বুকের ভেতর ধক ওঠে ঈশানীর। ছেলের কোমল চাহনিতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে তার। না চাইতেও মানস্পটে ভেসে ওঠে সদৃশ এক পূর্ণবয়স্ক মুখাবয়ব। যার দৃষ্টি ছিল শূন্য, অনুভূতিহীন, মরীচিকার মতো আঁধারে ঢাকা। সেই মানুষটার কথা ভাবতে গিয়ে ছেলের নিম্নাধরের তিলকে আঙুল বোলায় ঈশানী। তিল টা পর্যন্ত হুবহু।ফটোকপি ও বোধ হয় এতোটা নিখুঁত হয়না।

মাঝেমধ্যেই তাকে না পাওয়ার আফসোসে ভেতর ভেতর কাতরে ওঠে ঈশানী। ফের মনে পরে যায় নিজের যন্ত্রণাদায়ক অতীতের কথা। সঙ্গে সঙ্গে ছেলের সুরক্ষায় তৎপর হয়ে ওঠে রমণী। এরীশের ইউভানের স্নিগ্ধ সরল সাকুরা থেকে হয়ে ওঠে স্বার্থপর এক মা। দুনিয়াতে যার সন্তানই সবকিছু।
সকালের ঝলমলে রোদ ম্লান হয়ে এসেছে। মেঘের স্তরে গা ঢাকা দিয়ে ঝিমিয়ে পড়েছে সূর্যরাজ । একটু বাদেই আকাশ ভাঙা বৃষ্টিতে ঝমঝম করে উঠলো চারপাশ। গাড়ির উইন্ড শিল্ড ছাপিয়ে বর্ষনের ছাট এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে ঈশানীর গা । তাতেও নিরুদ্বেগ সে। সেই তখন থেকে আনমনা হয়ে কি যেন ভাবছে চুপচাপ। তা পরিলক্ষণ করে সেন্সরে আঙুল চেপে গাড়ির জানালা লাগালো মাহিন। অতঃপর নৈঃশব্দ্য ভেঙে নিরুত্তাপ গলায় বলে উঠলো,

— কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশ যাচ্ছি। সামনেই তো শীতকাল, কয়েকটা টিভিসির কাজ জমে আছে।
মাহিনের বাংলাদেশ ফেরার কথা শুনে চমকে উঠলো ঈশানী। ভেতর ভেতর অজানা এক আড়ষ্টতা চেপে বসলেও, বাহ্যিক সাবলীলতা অটুট রেখে নরম কণ্ঠে শুধালো,
— কবে যাচ্ছেন?
— আজ রাতের ফ্লাইট।
— হ্যালোইনের আগে ফিরবেন নিশ্চয়ই ?
উদাসীন হয়ে জানতে চাইলো ঈশানী। সড়কে ইউ টার্ন নিয়ে এদিকে ওদিকে মাথা নাড়ালো মাহিন। চিন্তিত স্বরে বললো,
— তোমাদের একা রেখে যেতে মন সায় দিচ্ছে না কিছুতেই । তুমি কি কিছুদিন আমার আত্মীয়ের বাড়িতে….
— না থাক।
বাক্য সম্পন্ন করার আগেই ওকে মাঝপথে থামিয়ে দিলো ঈশানী। ছদ্ম আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললো,
— আমি একাই থাকতে পারবো। আপনি নিশ্চিন্তে যেতে পারেন।
— আই হোপ সো।
কথা বলতে বলতেই আড়ালে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মাহিন।

আজ ত্রিশে অক্টোবর। হ্যালোইনের আগের রাত। লোকে বলে ডেভিল’স নাইট। প্রচলিত আছে ধ্বং’সযজ্ঞ, ভা’ঙচুর, নৃ’শংতার জন্য এই রাত অভিশপ্ত। তাই সন্ধ্যা হতে না হতেই দরজা জানালার কপাট লাগিয়ে ঘরে অবস্থান করে সবাই । ঈশানী ও ঘরেই রয়েছে। ঘরের আলো নিভিয়ে দোতলার রোয়াকে হেঁটে হেঁটে ঘুম পাড়াচ্ছে ইয়াশ কে।
আজ সত্যিই ডেভিল’স নাইট কিনা জানা নেই তার, তবে আজ রাত যে ভীষণ কালো আর ভয়ংকর তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাবস্যা হবে হয়তো। আকাশে নক্ষত্র নেই, রুপোলী চাঁদের জ্যোৎস্না নেই, নেই কোনো গা ভেজানো ঠান্ডা বাতাস। গুমোট থমথমে একটা আবহ নিয়ে স্থবির হয়ে আছে চারিদিক। স্ট্রিট লাইটের নিয়ন আলোয় জানালার সফেদ পর্দাগুলো অদ্ভুত দেখাচ্ছে। কপাট গুলো লাগিয়ে দেওয়া দরকার, সেই ভেবে ইয়াশকে নিয়েই ঈশানী এগিয়ে গেলো জানালার কাছে। তখনই হুট করে পর্দার ওপাশ থেকে সরে দাঁড়ালো এক লম্বাটে ছায়ামূর্তি। ঈশানীর মনে হলো ও ভুল দেখেছে। সারাক্ষণ আজেবাজে চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তাই হয়তো হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। সহসা ঘুরে দাঁড়ালো সে । চারপাশটা ভালো মতো পরখ করে ফের ব্যস্ত হলো ছেলেকে ঘুম পাড়ানোর প্রচেষ্টায়।

সন্ধ্যার ধোঁয়াসায় আরেকটু আধার গুলে মাঝরাত হয়েছে। ইয়াশ কে ঘুম পাড়িয়ে মাত্রই নিচে এসেছে ঈশানী। বসার ঘরটা নিস্তব্ধ হয়ে আছে, সাথে মাহিনের রুমটাও। ঈশানী দোতলার ঘরে আর মাহিন নিচের ঘরে এভাবেই গত একবছর যাবৎ থেকে এসেছে ওরা। আজ হঠাৎ মাহিনের অনুপস্থিতিতে ফাঁকা লাগছে চারিদিক।
একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাহিনের শূন্য ঘর থেকে চোখ সরালো ঈশানী। তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সুইচবোর্ডের দিকে । বাচ্চাটা একা রয়েছে, লাইট জ্বালিয়ে একটু পানি পান করেই উপরে উঠবে সে। তখনই আবারও পর্দার আড়ালে ভেসে উঠলো সেই ছায়ামূর্তিটি। তারমানে এটা ঈশানীর মতিভ্রম নয়। আতঙ্কে হাড়হীম হয়ে এলো মেয়েটার । শিরদাঁড়া বেয়ে নীরবে অতিক্রম করে গেলো ঠান্ডা শীতল স্রোত। শুষ্ক একটা ঢোক গিলে সতর্ক পায়ে সামনে এগুলো ঈশানী । ক্ষণকালের মধ্যেই ভয়ার্ত স্বর ধ্বনিত হলো তার প্রকম্পিত কণ্ঠানালি ভেদিয়ে।

— কে!
ওপাশ থেকে আওয়াজ এলোনা। আবারও নিঃশব্দে সরে গেলো অবয়বটি। ঈশানী চিন্তা মুক্ত নয়। প্রবল ঠান্ডার মাঝেও শরীর ঘেমে অসার হয়ে আসছে হাত-পা। কণ্ঠতালু শুকিয়ে কাঠ। কোনোপ্রকার সাড়াশব্দ না পেয়ে ফল কাটার ধারালো ছুরি মুঠিবদ্ধ করে আবারও ডেকে উঠলো রমণী,
— ক…কে ওখানে?
নৈঃশব্দ্য!

একটু বাদেই ঈশানী টের পেল ওর পেছনেই লম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অবয়বটি। নিজের বলবান ছায়ায় ঈশানীর ছোট্ট ছায়াকে গ্রাস করে চামড়ার বুট জোড়া দম্ভ নিয়ে দাড়িয়ে আছে মাটিতে। এতোক্ষণে কলজেটা শক্ত হয়ে গেলো ঈশানীর । ভীরুতার অদৃশ্য বলয়ে কুণ্ঠিত হয়ে পড়লো তার জোড়ালো আত্মবিশ্বাস। তবুও শেষ প্রচেষ্টা তো করবেই রমণী । শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ করে ছুরির সাহায্যে আ”ক্রমণ করার প্রস্তুতি নিতেই, পেছন থেকে ওর মুখের উপর অতর্কিতে রুমাল চেপে ধরলো লোকটা। ঈশানীকে অবচেতন করার জন্য নয়, ও যাতে চিৎকার দিতে না পারে সেইজন্য। অতঃপর তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসা হলো লনের শেষ মাথায়।

আলোআঁধারি ছাপিয়ে ঈশানীকে এনে দাঁড় করানো হলো সেখানে। মুখের উপর থেকে কাপড়ের আস্তরণ সরাতেই প্রথমে বুক ভরে শ্বাস নিলো সে। তারপর আস্তেধীরে ভয়ে-ভয়ে দৃষ্টিপাত করলো সম্মুখে। অতঃপর যা দেখলো তাতে হৃদযন্ত্র থমকে গেলো মানবীর। আতঙ্কে শিউরে উঠলো সর্বাঙ্গ। ঈশানীর মনে হলো ও বোধ এখনই মা’রা যাবে। নাম,পরিচয় সবকিছু বদলে একটা বছর যার থেকে উন্মাদের মতো পালিয়ে বেড়িয়েছে সে আজ সামনে দাঁড়িয়ে।
ঈশানীর থেকে কয়েক সেন্টিমিটার দূরত্বে হলদে নিয়নবাতির ঠিক নিচে একটা ধাতব রিভলবার মুঠিবদ্ধ করে হিমালয়ের মতো নিটোল ভঙ্গিতে দণ্ডায়মান এরীশ ইউভান। লম্বায় ঈশানীর চেয়ে দিগুণ সে। সহসা আঁকতে উঠে দু’কদম পিছিয়ে গেলো ঈশানী।

তার আঁধার কালো শূন্য চোখে জমে আছে পাষবীয় হিংস্রতা। দুনিয়ার সমস্ত কুণ্ঠা নিয়ে সেই চোখে চোখ পড়তেই ধক করে উঠলো রমণীর অন্তরঃকরণ।
পড়নে চার্কোল রঙের স্যুট। আন্ডারকাট চুলগুলো অযত্নে লম্বা হয়ে ঘাড় ছুয়েছে এখন। মুখভর্তি খড়খড়ে দাড়ি। গৌড় বর্ণের সৌম্য চেহারার সবটুকু আকর্ষন ধরে রেখেই মাফিয়া বসের তীক্ষ্ণ চোয়ালে চেপে বসেছে তারা।
দুপাশে তার সশস্ত্র গার্ড। হাতের মুঠোয় রিভলবার আবদ্ধ করে একটু দূরেই থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে আছে তুষার। স্যুট পরিহিত কিছু কালো পোশাকধারী দৃশ্যমান বলয়ের মতো ঘিরে রেখেছে ঈশানীকে। চারিদিকে এতো মানুষ। অথচ দু’জোড়া তৃষ্ণার্থ চোখ তাদের নিজস্ব অধিকারবোধ নিয়ে একজন আরেকজনের মাঝে ডুবে আছে নিঃশব্দে। এতোগুলো দিন বাদে আজ আবারও তাদের হৃদগহীনে ঝঙ্কার তুলেছে সুরের তরঙ্গ। কেউ একজন তার কণ্ঠের সবটুকু ব্যাকুলতা ঢেলে মেঘমেদুর সুরে গেয়ে চলেছে ,

কতদিন,….
ভেবেছি শুধু দেখবো যে তোমায়,
অন্তহীন….
তুমি ছিলে আমার কল্পনায়।
সেই ছবি উঠলো ভেসে,চোখেরই চাওয়ায়….
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়…
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়।
ছলছলে ব্যথাতুর দৃষ্টে মাফিয়া বসের কৃষ্ণ গহ্বরে তলিয়ে গিয়েও কোথাও একফোঁটা অনুভূতির লেশমাত্র খুঁজে পেলোনা ঈশানী। আগ্নেয়গিরির দাবানলের মতোই প্রতিহিংসার অনলে দাউদাউ করছে তার পাংশুটে আঁখি । অগত্যা সৎবিৎ ফিরলো ঈশানীর। হতবুদ্ধি হয়ে দণ্ডায়মান রমণী অবশেষে ঠোঁট কাঁপিয়ে জড়ানো গলায় ডেকে উঠলো মাফিয়া বসটাকে,

— অ… অরণ্য!
— এরীশ…. গ্যাংস্টার এরীশ।
পাথর কঠিন স্বরে ভেসে এলো নীরব হুংকার। একবাক্যেই তার নমনীয়তাকে রুখে দিলো মাফিয়া বস।
বুকের ভেতর কোথাও একটা চিঁড় ধরলো যেন। দহন অনুভব হচ্ছে সেথায়। ভয় আর জড়তার মিশেলে বাক্যহারা ঈশানী। এরীশের এহেন সশস্ত্র আগমন মস্তিষ্কে ভয়ংকর কোনো ঝড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে তাকে। ক্ষণকালের সেই ভাবনাকে এক নিমেষে পায়ে মাড়ালো মাফিয়া বস। শক্ত থাবায় ঈশানীর হাতটা কব্জাবন্দি করে পৌঁছালো নৃ”শংসতার চূড়ায়। আশেপাশের গার্ডগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করে কঠোর স্বরে আদেশ করলো,

— বাড়িটাকে জ্বালিয়ে দাও এক্ষুণি।
এরীশের বজ্রকঠিন বাক্য কর্ণগোচর হতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠের ন্যায় চমকে উঠলো ঈশানী। বিস্ফারিত নয়নে এরীশের পানে চেয়ে ধড়ফড়ালো সে।
— কি বলছো তুমি এসব!
এরীশ ভ্রুক্ষেপ করলো না সে বাক্যে। উল্টো হাতের বাঁধন দৃঢ় করে দাঁতে দাঁত পিষে গার্ডদের হুকুম করলো আবারও,
— ডু ইট ফাস্ট!
এরীশের কথামতো লাইটার আর পেট্রোল হাতে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো দু’জন গার্ড। তা দেখে গলা ছিঁড়ে চেঁচিয়ে উঠলো ঈশানী।
— নাহ!
কান্নায় ভেঙে পড়ে আকুতি ভরা কণ্ঠে ফের বলতে আরম্ভ করলো,

— আ..আমার বাচ্চা, এরীশ আমার বাচ্চা, আমার বাচ্চাটা ভেতরে। এতোবড় অশিষ্ট করোনা, আমাকে যেতে দাওওওওও!
চিৎকারের তোড়ে কণ্ঠ বুঁজে আসে তার। এরীশের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দিগ্বিদিক ছটফট করতে থাকে পাগলের মতো। ওদিকে ঈশানীর মুখ থেকে বাচ্চা শব্দটা উচ্চারিত হতেই গৌড় চেহারায় র’ক্ত জমাট বাঁধলো এরীশের। তপ্ত রাগে ফেটে পড়লো তার দিশাহীন মস্তিষ্ক। বুকের ভেতর আচঁড়ে পড়লো জলোচ্ছ্বাসের বন্য ঢেউ। গোলোকের মতো মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে তার,

— সাকুরার গর্ভে মাহিনের বাচ্চা থাকতে পারে না। কিছুতেই না।
সঙ্গে সঙ্গে চোখ তুলে আরেকপাশের গার্ডদের দিকে দৃষ্টিপাত করলো মাফিয়া বস। তপ্তস্বরে আদেশ করলো,
— বাচ্চাটাকে নিয়ে এসো।
এরীশের এহেন সিদ্ধান্তে জোরে জোরে শ্বাস ফেললো ঈশানী। সে চায় না এরীশের অশুভ ছায়া কোনোদিন তার নিষ্পাপ বাচ্চাটার উপর পড়ুক। কিন্তু ভাগ্য আজ তার পক্ষে নেই।
অতঃপর সত্যি সত্যি নিয়ে আসা হলো ঈশানীর বুকের মানিক, দুনিয়ার সবটুকু আদর নিয়ে ঘুমিয়ে থাকা ছোট্ট ইয়াশকে। ঈশানী এগিয়ে গিয়ে ছেলেকে নিতে চাইলে আবারও কব্জিতে জোড়ালো এক টান অনুভূত হলো তার। সে চকিতে পেছনে তাকায়। ক্রোধের তাড়নায় টগবগ করতে থাকা এরীশের পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে কাঁতর গলায় বলে,

— ওকে ছেড়ে দাও এরীশ, ও কিছু করেনি, ওর কোনো দোষ নেই।
ঈশানীর হৃদয় ভাঙা বিলাপে কর্ণপাত করলো না এরীশ। অনুভূতিহীন, নির্মম তেজস্বী কণ্ঠে ধ্বনিত হলো,
— বাচ্চাটাকে জ্যান্ত মাটি চাপা দিয়ে দাও তুষার ।
নিমেষেই শ্রবনেন্দ্রীয় বুদ হয়ে এলো ঈশানীর। ঝটিকা প্রবাহের প্রবল জলোচ্ছ্বাসের মতোই থরথর করে কেঁপে উঠলো তার পায়ের তলার মাটি। মুখ থেকে র’ক্ত সরে যেতেই উঠে দাঁড়ালো সে এক ঝটকায়। এরীশের শূন্য চোখের দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিপাত করে বলে উঠলো,

— কি বললে তুমি!
— মাহিনের সন্তানকে আমি বাঁচিয়ে রাখবো,সেটা ভাবলে কি করে ?
এরীশ ভুল বুঝছে, ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই একপ্রকার বিষাদের ঝড় উঠলো ঈশানীর মাঝে। এতোবড় একটা সত্যি লুকানোর দায়ে এরীশ কি তাকে মে’রে ফেলবে? মে’রে ফেললে ফেলুক, তবুও সন্তানের সুরক্ষায় তৎপর রমণী।
হৃদয় জুড়ে বেগবান হয়ে উঠেছে নৈরাশ্য। বুকের র’ক্ত তোলপাড় করা অস্থিরতায় হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে ঈশানী। তার বাচ্চাকে চাপা দেওয়ার জন্য যখন সত্যি সত্যিই ধাতব বেলচা দিয়ে মাটি খোঁড়া হচ্ছিল, ঠিক সেই মূহুর্তে কান্নায় ভেঙে পড়ে বাধ্য হয় মুখ খুলতে। সবাইকে থামিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে,

— ও তোমার রক্ত! ওকে মে’রোনা এরীশ, বিশ্বাস করো ও তোমার রক্ত। তোমার অংশে ওর জন্ম।
কাঁদতে কাঁদতে হাঁটু গেড়ে বসতে গিয়েও বাঁধা প্রাপ্ত হলো ঈশানী। ভঙ্গুর পা দু’টো জমিন ছোঁয়ার আগেই,জোরালো টানে ওকে আবারও দাঁড় করালো এরীশ। দৃষ্টিতে তার আগুনের লেলিহান। তেমন করেই ঈশানীর চোখে নজর আবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত পিষলো সে। শীতল রাশভারি গলায় বললো,
— যা বলছো, ভেবে বলছো তো?
তৎক্ষনাৎ জোরে জোরে মাথায় ঝাঁকালো ঈশানী। ঠোঁট ভেঙে ফুঁপিয়ে উঠে থেমে থেমে আওড়ালো,

— ওকে কিছু করোনা এরীশ। যা শাস্তি আমাকে দাও।
— ওর বয়স? একই সুরে প্রশ্ন ছুড়লো মাফিয়া বস।
— চা… চারমাস।
এরীশের ষষ্ঠইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে ঈশানী মিথ্যে বলছে না। এবং এ বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত সে। তাই পেছনে ঘুরে তুষারকে হুকুম করলো,
— বাচ্চাটাকে গাড়িতে তোলো।

মাফিয়া বসের উদ্দেশ্য অনুমান করতে না পেরে ফের আরেকদফা হোঁচট খেলো রমণী। শঙ্কায় তরিৎ খেলে গেলো তার অন্তরে। তবে এবার আকুতি নয়, ছেলের অনিশ্চয়তায় রণমুর্তি ধারণ করলো তার পাণ্ডুর ফ্যাকাসে মুখ। শরীরের সর্বশক্তি ব্যায় করে এরীশ ইউভানকে ধাক্কা দিতে দিতে চিৎকার করে বলতে লাগলো,
— নিষ্ঠুর, পাষণ্ড, জানোয়ার একটা। কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমার ছেলেকে? ওকে ছাড়া আমি ম’রে যাবো। আমার বাচ্চাকে দিয়ে দিতে বল ওদের।

ঈশানীর আহাজারিতে একটুখানি থমকে গেলো তুষার। গাড়িতে উঠতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়লো সে । প্রশ্নবিদ্ধ নয়নে তাকালো এরীশের পানে। উদভ্রান্ত ঈশানীর সরু বাহুটাকে একহাতে চেপে ধরে চোখের ইশারায় তুষারকে হ্যা জানালো এরীশ। ব্যাস! সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাটাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেলো তুষার। চোখের পলকে আঁধারের ধোঁয়াসায় মিলিয়ে গেলো গাড়িটা। সঙ্গে করে নিয়ে গেলো ঈশানীর সুখ, শান্তি, সবকিছু। ওর বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল,ওর নাড়িছেঁড়া ধন, ওর বাচ্চাটাকেও।
এতোক্ষণে খেই হারিয়েছে ঈশানী। গাড়িটা চলে যেতেই উদগ্রীব হয়ে ক্ষ্যাপা বাঘিনীর মতো হামলে পড়লো এরীশের উপর। কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,

— ভালোবাসি না তোকে আমি, বাসিনা ভালো আর।
এরীশ সময় নিলোনা,দাঁত খিঁচে ঈশানীর পেলব কোমল গালের উপর পুরুষালী হাতের শক্ত এক চপেটাঘাত বসিয়ে দিলো আচানক । সঙ্গে সঙ্গে চেতনা হারিয়ে ভগ্ন ইমারতের মতোই এরীশের বুকে এসে ঢলে পড়লো তুলতুলে নরম শরীরটা।ক্ষণকাল বিলম্ব না করেই একহাত বাড়িয়ে ছোট্ট শরীরটাকে ধরে ফেললো মাফিয়া বস। যেন পাখির পালকের মতোই হালকা সে মানবী, তেমন করেই অতি সন্তোর্পনে তুলে নিয়ে এলো বুকের মাঝে। নিয়নবাতির মোলায়েম আলোয় কান্নাভেজা ক্লান্ত চেতনাহীন মুখের পানে আচ্ছন্ন দৃষ্টে নির্লিপ্তে চেয়ে রইলো কিয়ৎক্ষণ।

আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ৫৩

অতঃপর মেয়েটাকে কোলে নিয়েই দাম্ভিক পদচারণায় ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো হেলিকপ্টারের অভিমুখে। পেছনে ফেলে এলো পাহাড়ে ঘেরা রেইন ফরেস্টের চূড়ায় দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা একটুকরো সাজানো বাড়ি। যার প্রতিটি কোণায় কোণায় ছিল, মাহিন, ঈশানী আর ইয়াশের হাজারো অমোঘ স্মৃতির উপাখ্যান ।

আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ৫৫