আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ৭

আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ৭
suraiya rafa

“আকাশ পথে যাবো বেড়াতে
রেখে তোর কাঁধে দু’টো হাত”
” তারায় তারায় হবে সাজানো
হিরে জড়ানো প্রতিরাত”
গহীন জঙ্গলের বাঁকে হারিয়ে যাওয়া এক টুকরো জীপের কালো অংশটুকু এখনো পুরোপুরি দৃশ্যপটের আড়াল হয়নি, ভবঘুরে মেয়েটা মোহাবিষ্টের ন্যায় সেদিকেই চেয়ে আছে, যেন কোনো কঠিন মিরাকলের অপেক্ষা, কে বলতে পারে হয়তোবা অরন্য হুট করেই ফিরে এলো,আবারও চোখেমুখে হাজারো বিরক্তি টেনে ঈশুর উপর তীক্ষ্ণ অধিকার দেখিয়ে বললো,

— আমাকে একদম প্রশ্ন করবে না, আমি কাউকে কৈফিয়ত দিই না।
যদিও ব্যাপারটা হাস্যকর ছেলেমানুষি ছাড়া আর কিছুই হবেনা তবে তেমন কিছুই ঘটলো না,উল্টো বুকের মাঝে টিমটিমিয়ে জ্বলতে থাকা এক ফালি আশা প্রদীপকে দমকা হাওয়ায় নিভিয়ে দিয়ে জঙ্গলের বাঁকে হারিয়ে গেলো জিপ গাড়িটা, তৎক্ষনাৎ ঈশানীর কর্ণকূহর ভেদ করলো আরেক দফা কর্কষ আওয়াজ,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— ঈশাআআআ! তখন থেকে আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করছি, কোথায় হারিয়ে গিয়েছিস?
ধ্যান ভাঙলো ঈশার, আলগোছে চোখের জল মুছে পাছে ঘুরে দেখলো, জিসান সহ হাইকিং এ আসা প্রত্যেকটা মানুষ ওর দিকে গভীর নজরে চেয়ে আছে। সকলের চোখে মুখে কৌতুহলের পাশাপাশি ভীতিকর ছাপ সুস্পষ্ট।
যেন সবাই এতোক্ষন ধরে অধীর আগ্রহে ঈশানীর জবাব শোনারই অপেক্ষায়, অথচ ঈশানী দীর্ঘ একরাত পেরিয়ে কেবলই অনুভব করলো ওর কখনো অরন্যর সাথে থাকার কথাই ছিলো না, ও তো স্রেফ মন ভালো করার জন্য একটু মুক্ত বাতাসে গা ভাসাতে জিসানদের সাথে হাইকিং এ এসেছিল, তাহলে এতোকিছু কি করে হয়ে গেলো? সবকিছু ছাপিয়ে এই অরন্য নামক ব্যাধীটাই বা কি করে বাসা বাঁধলো হৃদয়ে? কি করে?

— সারারাত কোথায় ছিলি তুই? ওই জঙ্গলে? আর যে লোকটা তোকে মাত্রই পৌঁছে দিয়ে গেলো, সেই বা কে?
দেখ ঈশা, এখন প্লিজ এটা বলিস না যে এরীশ ইউভান তোকে বাড়ি বয়ে পৌঁছে দিয়ে গেছে।আর আমরা এই কথা বিশ্বাস করবো।
জিসানের করা একের পর এক প্রশ্নের তোপে ঘোর ছেড়ে বেরিয়ে আসে ঈশা, জবাবে একটুখানি গলা পরিস্কার করে একটা ভারী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের আগের সত্তায় ফিরে এসে গম্ভীর মুখে ঈশা বলে,
— তুই কি বলছিস, কার কথা বলছিস, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না জিসান।
অতঃপর পেছনে ঘুরে সবার উদ্দেশ্য একটু জোরপূর্বক হেসে জানালো,
— সবাইকে এতোটা চিন্তিত দেখাচ্ছে আমি সত্যিই ভীষণ লজ্জিত, কিন্তু এই দেখো আমি ঠিক আছি, সেইফ আছি, তোমরা প্লিজ আমায় নিয়ে আর অহেতুক চিন্তা করোনা।
ঈশানীর কথা শেষ হতে না হতেই মৃণা বলে উঠলো,

— চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে ঈশানী, ওই জঙ্গলটা পুরোপুরো নিষিদ্ধ, ওখানে রাত তো দূরের কথা দিন দুপুরে কোনো সাধারণ মানুষ গেলে পর্যন্ত ফিরে আসেনা, আর মেয়ে মানুষদের তো আসার প্রশ্নই ওঠেনা। শুনেছি ওখানে ছড়ানো ছিটানো অসংখ্য পাতি মাস্তানদের ডেরা,ওরা জন্তুজানোয়ারের থেকেও হিংস্র হয়ে থাকে, দেশের যত অনৈতিক অসাধু কর্মকান্ড তার প্রায় ফিফটি পার্সেন্ট এখান থেকেই লিড দেওয়া হয়, আর তুমি সেখানে একরাত কাটিয়ে এসে বলছো তুমি সেইফ?হাউ ইট পসিবল ঈশানী?
— ওয়েট তুমি এতোকিছু জানলে কি করে?আমরা তো ওই জঙ্গলের ব্যাপারে তেমন কিছুই জানিনা।
ঈশানী কিছু বলবে, তার আগেই প্রশ্নটা ছুড়লো মৃণার বয়ফ্রেন্ড আদি।
মৃণা ঠোঁট উল্টে জানালো,

— ঈশানী হারিয়ে যাওয়ার পরে গুগল করে এই সব ইনফরমেশন গুলো বের করেছি।
— তাহলে বাকি ফিফটি পার্সেন্ট কোথা থেকে সংঘটিত হয় বলে তোমার মনে হচ্ছে?
মৃণা জবাব দেয়,
— সুন্দরবন। স’ন্ত্রাসীরা সাধারণত, নদীপথ, জঙ্গল এছাড়া বর্ডারের আশেপাশের যায়গা গুলোকে নিজেদের কাজের জন্য ব্যাবহার করে থাকে।
— বাহ, বেশ ভালো রিসার্চ করেছো দেখছি।
আদির কথায় কিঞ্চিৎ হাসলো মৃণা, ওদিকে ঈশানী ও খানিকটা হাসার চেষ্টা করে বললো,
— চিল মৃণা, দেখো আমি পুরোপুরি ঠিক আছি, আর ভুলে গেলে এটা যে টুরিস্ট এরিয়া? তোমার কথা অনুযায়ী এখানে যদি স’ন্ত্রাসী থেকেও থাকে, তাহলে টুরিস্টদের ও কিন্তু অভাব নেই, হতে পারে উপর ওয়ালা সেরকমই কোনো একজনকে আমাকে সেইফ করার জন্য পাঠিয়ে ছিলেন।
মনেমনে ভাবলো,

— অরন্য নিশ্চয়ই দেশের বড় কোনো সেলিব্রিটি হবে, ওই জন্যই তো জঙ্গলে এতোটা সুরক্ষিত ছিলাম আমরা। এবার চিটাগং ফিরে এই রহস্য ঠিক বের করে ফেলবো আমি।
ওদিকে ঈশানীর এমন গা ছাড়া কথাবার্তায় চরাৎ করে ওঠে জিসানের মস্তিষ্কটা, একেতো সারারাত চিন্তায় চিন্তায় নির্ঘুম এক রাত পার করেছে, তার উপর ওই কালো হুডি পরা লোকটা, যার গেটআপ পুরোপুরি এরীশ ইউভানের মতোই রহস্যময়।তবুও মেয়েটা বারবার বলছে ও ঠিক আছে,
ঈশানী যত যাই বলুক না কেন, জিসান কিছুতেই নিজেকে আস্বস্ত করতে পারছে না যে ও আসলে ঠিক আছে, নিশ্চয়ই লোকলজ্জার ভয়ে কোনো কঠিন সত্যি লুকোচ্ছে মেয়েটা, কারণ জিসান তখন দোতলা থেকে স্পষ্ট ঈশানীকে এরীশের দিকে চেয়ে কাঁদতে দেখেছে। হতেও পারে ওই লোকটাই ঈশানীর সবচেয়ে বড় সর্বনাশ করে ছেড়ে দিয়েছে। আর তারপর ভয় দেখিয়ে!! না না এরীশ ইউভানের মতো মাফিয়ার দ্বারা সব সম্ভব। এসব ভাবতে ভাবতেই ঈশানীর কাঁধ ঝাঁকিয়ে একপ্রকার চেচিয়ে উঠলো জিসান,

—- তুই মোটেই ঠিক নেই ঈশা, ওই জঙ্গলে একবার প্রবেশ করলে কোনো মেয়েই ঠিক থাকেনা, সত্যি করে বল ওই এরীশ ইউভান তোর সাথে সারারাত কি কি করেছে? নিশ্চয়ই তোকে খুব খারাপ ভাবে এভ….
জিসানের কথা শেষ হওয়ার আগেই নিজের কাঁধ থেকে ওর হাত ছাড়িয়ে দু’পা পিছিয়ে দাঁড়ালো ঈশানী,এবার জিসানের কথার মানে খুব ভালো ভাবেই বুঝেছে ও, তাইতো এই মূহুর্তে ভেতরটা নীম পাতার মতোই তেঁতো হয়ে উঠেছে ঈশার, কেমন ভোঁতা অনুভূতি ছড়িয়ে পরেছে সর্বাঙ্গে, তারমানে এতোক্ষণ ধরে সবাই আকারে ইঙ্গিতে এটাই বোঝাতে চেয়েছিল ওকে? ওর সতীত্ব আদৌও অক্ষত আছে কিনা সেই নিয়েই সবার এতো কৌতুহল তাহলে? কী ভাবে এরা ওকে,বোকা? নাকি আত্নমর্যাদাহীণ?

— কি হলো কিছু বল? দেখ ঈশা সোসাইটি নিয়ে তোর মোটেই চিন্তা করতে হবে না, আমিতো আছি, সবকিছু আমি সামলে নেবো, তাও প্লিজ বল কাল রাতে এরীশ….
—- কি এরীশ এরীশ করছিস তখন থেকে? কে এরীশ? আমি এই নামে কাউকে চিনিনা।
রাজহংসীর ন্যায় ক্ষীপ্র চাহনী ছুড়ে চেঁচিয়ে উঠলো ঈশানী। তৎক্ষনাৎ ওদের দুজনকে একা ছেড়ে দিয়ে যায়গা ত্যাগ করলো সকলে। জিসান প্রত্যুত্তরে কিছু বলবে তার ফুরসত দিলোনা ঈশানী, পুনরায় ঝাঁঝিয়ে উঠে বললো,
—- তোকে বহুবার বলেছি জিসান, আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি নিজের ব্যাপারে সিন্ধান্ত নিতে জানি আমি, নিজের ভালো মন্দটাও বেশ বুঝি, তাই আমার সব ব্যাপারে নাক গলানোটা বন্ধ কর এবার।
জিসান ও নিজের খেইর হারালো এতোক্ষনে, সেই শান্ত ভদ্রসত্তাটা হুট করেই প্রচন্ত তেজের আড়ালে মিলিয়ে গেলো কোথাও, এক জীবন্ত হায়নার মতোই হিংস্রতা ভর করলো ওর চোখে মুখে, রাগে গজগজ করতে করতে চোয়াল শক্ত করে জিসান বলে উঠলো,

—- আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি, ইট’স নট ফেয়ার ঈশানী, আমি তোর চোখে ওই এরীশের জন্য মায়া দেখেছি,প্রচন্ত ঘোর দেখেছি, অথচ এই মায়া এতোগুলো দিনে একবারও আমার জন্য দেখিনি, আমার সামনে তুই আস্ত একটা জড়বস্তুর মতো বিহেভ করিস, হোয়াই? একরাতে কি এমন দিলো ওই জানোয়ারটা যা আমি এতোদিনেও দিতে পারিনি?

এ যেন বন্ধু জিসানের সম্পূর্ণ এক নতুন রূপ,ভিন্ন সত্তা। তারমানে জিসান এতোদিন ধরে বন্ধুত্ব নয় অন্য কিছু চাইতো ঈশার কাছে? অন্য কিছু বলতে কি? ভীষণ নিষিদ্ধ কিছু? ঈশানীর তো আপাতত সেটাই মনে হচ্ছে। তাইতো এই মূহুর্তে ঝগড়া কিংবা জিসানকে কোনোরূপ জবাবদিহি করার ইচ্ছেটা পুরোপুরি মরে গেলো ঈশানীর।
আকাশ ভেঙে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে ,পিচ ঢালা পাহাড়ী বাঁকানো রাস্তায় আঁচড়ে পরে সেই বর্ষনের রিনঝিন আওয়াজ কানে এসে বারি খাচ্ছে প্রতিমূহুর্তে। তুমুল বর্ষনে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জিসান আর ঈশানী, দু’জনই কাক ভেজা হয়ে চুপসে আছে। দোতলার করিডোর দিয়ে সবাই উঁকি ঝুঁকি দিয়ে ওদেরকেই দেখছে আপাতত। সবার মনে একটাই কৌতুহল, আদতে হচ্ছেটা কি ওদের মাঝে?
একটু পরে নিরবতা ভেঙে তুমুল বৃষ্টির মাঝেই ঈশানী বলে ওঠে,

—- তুই কার কথা বলছিস আমি জানিনা, কি ইঙ্গিত করছিস সেটাও ঠিক বুঝতে পারছি না, তবে এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে আমি অরন্যকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি জানিনা তুই আমাকে কি ভাবিস, তবে আমার দিক থেকে একজন বন্ধু হিসেবে এটুকু জানার অধিকার তোর অবশ্যই রয়েছে। আশা করি এ ব্যাপারে আমাদের মাঝে আর কখনো কোনো কথা হবে না। কারণ দৃষ্টিভঙ্গি আর আবেগ এক জিনিস নয়।
নিজের মনের ভাব ব্যক্ত করে হনহনিয়ে রিসোর্টের দিকে চলে যায় ঈশা, ওদিকে জিসান মূর্তিমান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখনো,ওর মস্তিষ্কে আপাতত প্রশ্নের জটলা, ঈশানীর মতো বরফ শীতল মেয়েটা এতো সহজে কারও প্রেমে পরে গেলো? এটাও কি সম্ভব? তারউপর একরাতে অমন গহীন জঙ্গলের মাঝে? এরমানে কি? ওটাতো এরীশ ছিল, তাহলে এই অরন্যটা কোথা থেকে এলো? কিইবা হয়েছিল গত রাতে? জিসানের পৈচাশিক মনটা ক্রমাগত নেতিবাচক ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে , কেন যেন মনে হচ্ছে ওই লম্বা মতো ছেলেটা ঈশানীকে জোর করেছে, আর এখন উপায় না পেয়ে ঈশানী নিজেকে সতী প্রমান করার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে। যদি এটাই হয় তবে জিসানের জন্যই ভালো, কারণ ঈশানীর দূর্বলতা ইতিমধ্যে ধরে ফেলেছে ও ।

ধীরে ধীরে জিসানের সতেজ নির্ভেজাল মনটা কলুষিত হয়ে যাচ্ছে প্রত্যাখ্যানের অসহ্য অপমানে। ঈশানীর মতো একটা সরল, বোকাসোকা, অতি সাধারণ মেয়ের কাছ থেকে এমন রিজেকশন কিছুতেই মানতে পারছে না জিসানের মস্তিষ্ক। মনে মনে জিদ চেপে বসেছে এর শেষ দেখে নেবে ও, দরকার পরলে ঈশানীর মাকেও বলে দেবে তার মেয়ের জঙ্গলের মাঝে অনাকাঙ্ক্ষিত রাত্রি যাপনের কথা। তখন নিশ্চয়ই উপায়ন্তর না পেয়ে নীল চোখের মেয়েটাকে জিসানের হাতেই তুলে দেবে ঈশানীর মা।

সকালের ভাঙাচোরা মনটা নিয়ে যা হোক নিজেকে কিছুটা ঠিকঠাক করে আপন গন্তব্যে পারি জমিয়েছে ঈশানী, কিন্তু মন থেকে ওই একটা রাত, ওই মূহুর্ত আর ওই অধর তলায় তিলকধারী বাদামী চোখের সৌবিষ্ঠ পুরুষ কোনোটাকেই একমূহুর্তের জন্যও মানস্পট থেকে দূরে ঠেলে দিতে পারছে না ঈশানী, এ কেমন ঘোর? এক রাতের স্মৃতি জমে স্তূপের মতো ভারী হয়ে আছে মস্তিষ্ক, তারউপর বাসটা খাগড়াছড়ি পেরোতেই বুকের ভেতরের চিনচিন ব্যথাটা প্রচন্ড গতিতে বেড়ে যাচ্ছে, বাসের প্রতিটি চাকার ঘর্ষনে যেন পিষে যাচ্ছে ঈশানী, মনে হচ্ছে কি যেন নেই, কি যেন নেই।
মৃণা ঈশানীর পাশের সিটেই বসেছিল, সকাল থেকেই মেয়েটা অন্যমনস্ক আর এখন কেমন অদ্ভুত রকম হাসফাস করছে, একহাত দিয়ে বুকের কাছের স্কার্ফ টা চেপে ধরে জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে, মনে হচ্ছে ওর কোথাও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ঈশানীকে এমন হাসফাস করতে দেখে মৃণা ডেকে উঠলো হঠাৎ,

—- কি হয়েছে ঈশানী? তুমি ঠিক আছো? শরীর খারাপ লাগছে,একটু পানি খাবে?
ঈশানী না সূচক মাথা নেড়ে জবাব দিলো,
— তোমার ফোনটা দেবে মৃণা, আমি আসলে নিজের মোবাইলটা জঙ্গলে হারিয়ে ফেলেছি।
মৃণা তৎক্ষনাৎ ভ্যানিটি থেকে ফোনটা বের করে ঈশানীর দিকে এগিয়ে দিলো, ঈশানী ফোন নিয়ে কাকে যেন ডায়াল করলো, কয়েক সেকেন্ড বাদেই ওপাশ থেকে শোনা গেলো নিঝুমের উদ্বিগ্ন কন্ঠস্বর।
দু’দিন বাদে চেনা পরিচিত বোনের মতো বেস্টফ্রেন্ডের গলার আওয়াজ পেয়ে নিজেকে আর সামলাতে পারলো না ঈশানী, সামলাতে না পারারই কথা, কারণ ওর হৃদয়টা ইতিমধ্যে দগ্ধ হয়ে আছে অচেনা এক পুরুষের আগমনে। সে কি যাদু করলো কে জানি, শক্ত পোক্ত আত্নবিশ্বাসের বেড়াজাল কেমন ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে ঈশানীর, ও নিজেকে চেয়েও ঠিক রাখতে পারছে না,ওদিকে ঈশানী ক্রন্দনরত আওয়াজ কানে ভেসে আসতেই উদ্বিগ্নতার মাত্রা দিগুণ হলো নিঝুমের, ও তেঁতে উঠে বললো,

—- ফাজিল মেয়ে, ফোন কোথায় থাকে তোর? কাল থেকে কত হাজার বার কল দিয়েছি তার একবিন্দু পরিমাণ ধারণা রাখিস তুই? নিজে তো জীবনেও কল করবি না, আমি করলেও ধরবি না, আমি কি পরিমাণ চিন্তিত ছিলাম জানিস তুই? রাতে ঘুমাতে অব্দি পারিনি।আ…
নিঝুম একনাগাড়ে বকেই যাচ্ছিল ঈশুকে, এক পর্যায়ে হুট করে এপাশ থেকে কথা বলে ওঠে ঈশানী,

—- আমার অরন্যকে খুব মনে পরছে রে নিঝুম। সেই আমি হুট করেই প্রেমে পরে গেলাম। কখন, কিভাবে, কেমন করে কিছুই মনে পরছে না, শুধু বুকটা ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে, গাড়িটা যত এগোচ্ছে, ততই মনে হচ্ছে আমার দম আটকে আসছে, এবার আমি কি করবো বলে দে, আমি অরন্যকে আবারও দেখতে চাই, ওই অচেনা অজানা লোকটাকে দ্বিতীয়বার দেখার প্রয়াশে নীল হয়ে যাচ্ছে আমার উচাটন হৃদয়টা, কি করবো বলনা?
বাচ্চাদের মতো বারবার একই শব্দ আওড়ে যাচ্ছে ঈশানী, কি করবো বলনা? ওদিকে এতোবড় একটা ঝটকায় পুরোপুরি নিস্তব্ধ নিঝুম। ও কি বলবে, কিভাবে বলবে, এই মূহুর্তে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। বাস তখন সিগনালে আটকে আছে, আরেকটু পরেই চিটাগং সরকে প্রবেশ করবে হয়তো, ফোনের ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ না পেয়ে আস্তে করে কলটা কেটে দিলো ঈশানী,অতঃপর পুনরায় ফোনটা এগিয়ে দিলো মৃণার নিকট।
ঠিক সে সময় বাসের টিন্ডেট জানালা ভেদ করে ঈশানীর নজরবন্দি হলো কালো হুডি পরিহিত একজন, ও নিজের চোখকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিল না, তাই বারবার গাড়ি ঘোড়ার আর জনসমাগমের আড়াল থেকে লোকটাকে একটু ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করছিল।

ওর মনে হচ্ছে এটাই অরন্য,কিন্তু অরন্য এখানে কি করছে? ঈশানীর জন্যই অপেক্ষা করছে নাতো? হুট করে উদয় হওয়া আচানক প্রশ্নে সচকিত হলো ঈশানীর মস্তিষ্ক, ও কি করবে ভেবে পাচ্ছে না,ওদিকে সিগন্যাল পরিবর্তন হতেই বাস চলতে আরম্ভ করেছে, ঈশানীর মনে হচ্ছে অরন্য আবারও হারিয়ে যাচ্ছে, এই মানুষের জঞ্জাল, এই দানবীয় গাড়ির বহর,বিরক্তিকর হর্ণের আওয়াজ সবকিছুর আড়ালে, ওই কালো হুডি পরা লোকটা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। অগত্যাই উপায়ন্তর না পেয়ে সিট থেকে উঠে দৌড়ে বাস থেকে নেমে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো ঈশানী, তবে উদাসীন হয়ে বাইরের দিকে এক পা বাড়াতেই, সজোরে ওর হাত টেনে ভেতরে নিয়ে এলো জিসান, আচমকা শরীরে ঝাঁকুনি অনুভব করতেই চোখের পলক ফেললো ঈশানী, পেছনে ঘুরে বিরক্ত কন্ঠে জিসানকে বলে উঠলো,

—-কি করলি এটা তুই?
—- তুই কি করছিলি সেটা আগে বল? চলন্ত বাস থেকে নেমে যাচ্ছিলি তুই, পাগলামির একটা সীমা থাকে ঈশা,আর ইউ আউট অফ ইওর মাইন্ড?একেতো সারারাত জঙ্গলে কাটিয়েছিস, তারউপর সকাল থেকে অরন্য অরন্য নাম জপে যাচ্ছিস, অথচ আমরা সকলে দেখেছি তোকে এরীশ গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে গেছে,সত্যি করে বলতো ও তোর সাথে খারাপ কিছু করেছে তাইনা? ওই মাফিয়াটা তোকে ড্রাগ ফ্রাগ খায়িয়ে দেয়নি তো আবার?
এক প্রকার ধমকে উঠে কথাগুলো বললো জিসান, ওদিকে ঈশানী নিজের বাক্যে অটল, ও বরাবরের মতো এবারও বললো,

—- কারও সম্মন্ধে ভালো করে না জেনে মন্তব্য করা একদমই ঠিক নয় জিসান, তুই কার কথা বলছিস আমি বুঝতে পারছি না। কিন্তু আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন কারও সাথে ছিলাম। এবং সে যথেষ্ট ভদ্রলোক, আর যাই হোক অন্তত তোর মতো নোংরা মানসিকতা তার নেই। আশা করি বুঝতে পেরেছিস।
পুনরায় ক্ষেপে গেলো জিসান, ও যেন ঈশানীর মুখে ওই অচেনা লোকটার প্রশংসা কিছুতেই সহ্য করতে পারেনা,চরাৎ করে হিংস্রতা জেঁকে বসে মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে, আর ঈশানী সেই কাজটা করে বারবার রাগিয়ে দেয় জিসানকে। যার ফলস্বরূপ জিসান এবার তেড়ে এলো ঈশানীর দিকে। তবে দু’পা এগোতেই ওকে আটকালো আদি, বিরক্ত হয়ে বললো,

—- চলন্ত বাসে কি শুরু করেছিস তোরা?
জিসান কটমটিয়ে বললো,
— কি শুরু করেছি সেটা ওকে জিজ্ঞেস কর? এক রাতে কি এমন দিয়েছে ওই ছেলেটা যে…
—- রাস্কেল।
জিসান কথা সম্পূর্ণ করার আগেই, জিসানের উদ্দেশ্যে শব্দটা উচ্চারন করে নিজের সিটে চলে যায় ঈশানী। আর মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় জিসানের সাথে বন্ধুত্বের ইস্তফা এখানেই ঘটাবে ও। আর যাই হোক এমন একটা হিংস্র প্রকৃতির ছেলের সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখা ঈশানীর পক্ষে সম্ভব নয়।

সুন্দর ঝলমলে রৌদ্রজ্জল দিন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহেবের বাড়িটা শহর থেকে একটু দূরে
সী- সাইডে অবস্থিত, সকাল সকাল পাখির কিচিরমিচির,আর সাগরের গর্জনে মুখরিত চারিপাশ, এমন সময় বাড়ির আবহাওয়া নিরবতায় ঘেরা শান্তি শান্তি হওয়ার কথা ছিল, তবে তেমন কিছুই লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা এই মূহুর্তে , এতোক্ষণ অবশ্য নিরবই ছিল সবকিছু, হুট করে কি জানি কি হলো, ফ্রন্ট ইয়ার্ডে বডিগার্ড আর সুরক্ষা বাহিনীর লাইন দাঁড়িয়ে গেলো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে, ডুপ্লেক্স বাড়িটার ছাঁদ থেকে শুরু করে প্রতিটি বারান্দার করিডোরে একে একে দাঁড়িয়ে গেলো বন্দুক ধারী সুরক্ষা বাহিনী। বাড়ির এহেন থমথমে পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে শীঘ্রই কোনো ভিআইপির আগমন ঘটবে এখানে।
নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি একটা হেলিকপ্টারও ল্যান্ড করানো হয়েছে বাড়ির ছাঁদে, তবে সবাই আপাতত উদ্বিগ্ন, আসলে হচ্ছে টা কি এখানে? হুট করে মন্ত্রী সাহেবই বা কেন এতো সুরক্ষা নিশ্চিত করলেন? কিসের এতো ভয় তার?

খানিক বাদে সকলের জল্পনা কল্পনার ইতি টেনে একে একে দশখানা রোলস রয়েস এসে থামলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসিফ জামানের বিশাল বাংলো বাড়ির সামনে, গাড়ি থেকে ধীরে ধীরে নেমে আসতে লাগলো কানে এয়ার পড লাগানো বিশাল দেহী কৃষ্ণ বর্নের দেহরক্ষীর কয়েকটা টীম। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ফরেইনার, এরপর সবশেষে তাদের মধ্যে থেকে নেভি ব্লু রঙা রোলস রয়েস থেকে বেরিয়ে এলো ব্ল্যাক হোয়াইট কম্বিনেশনের ফর্মাল শার্ট আর ওয়েস্ট কোট পরিহিত লম্বা মতো একজন।
যিনি দেখতে ইয়ং এবং জেন্টাল,যদিও তার চোখ দুটো ঢাকা পরে আছে বিশাল রোদ চশমার আড়ালে,তবে সকালের একফালি রোদের ঝিলিকে পুরোপুরি স্পষ্ট তার ডার্কব্রাউন সিগারেট পোড়া ঠোঁটের নিচের বিরল সেই কালো তিলক। রোদের তালে তাল মিলিয়ে যেন ঝিল ধরছে তিলকটা, তবে সেই তীলকের সৌন্দর্য পুরোপুরি ফিকে মনে হচ্ছে লোকটার ক্রুর রহস্যময় পৈচাশিক হাসির কাছে।

লোকটা গাড়ি থেকে নামতেই কয়েকজন বডিগার্ড এসে তাকে কোট পরিয়ে দিতে সাহায্য করে , এরপর কোটের হাতাগুলো ঠিকঠাক করতে করতেই গেট ছাড়িয়ে মন্ত্রী সাহেবের বাংলোর দিকে এগিয়ে গেলো সে,তার পিছু নিয়েছে শতাধিক বিশাল দেহী বডিগার্ডের দল। তবে ভেতরে প্রবেশের আগেই মন্ত্রী সাহেবের দেহরক্ষীরা আটকে দিলো তাদের, এরীশ নিজের বডিগার্ড দের আঙুলের ইশারায় চলে যেতে বললো এবার।
অতঃপর পা থেকে মাথা অব্দি সার্চ করা হলো তাকে,কিন্তু দূর্ভাগ্য বশত সেরকম ম’রণঘাতী কোনোকিছুই পাওয়া গেলো না এরীশের কাছে, অগত্যাই পুনরায় নিজের সানগ্লাসটা চোখে পড়ে সবাইকে ছাড়িয়ে ভেতরের দিকে এগিয়ে গেলো এরীশ, এদিকে হতবাক দেহরক্ষী বাহিনীগন একজন আরেকজনের দিকে চাওয়া চাওয়ি করায় ব্যস্ত, মন্ত্রী সাহেব কিনা এই লোককে এতো ভাই পাচ্ছে? এর হাতে তো একটা নেইল কাঁটার ও নেই আশ্চর্য।
ভেলভেট লাল গালিচা আর দেশি-বিদেশি সৌন্দর্য বর্ধক শো-পিচে মোড়ানো তকতকে হলরুমের ভেতরে ঢুকতে না ঢুকতেই মন্ত্রী সাহেব আসিফ জামান অসম্ভব সুন্দর সম্মোহনী হাসি দিয়ে আমন্ত্রণ জানালো এরীশ কে, কোনো পিএ টিএ নয়, একেবারে নিজেই এগিয়ে এসে হাত বাড়ালেন করমোর্দন করার উদ্দেশ্যে।

তবে এরীশ ইউভান তাকে দু’পয়সারও তোয়াক্কা করলো না, উল্টো মন্ত্রী সাহেবকে পাছে হটিয়ে এগিয়ে গিয়ে পায়ে পা তুলে বসে পরলো তারই চেয়ারে। এরীশ বসার সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রী সাহেব চুপসানো মুখে এগিয়ে গিয়ে এরীশের মুখোমুখি হয়ে একটা চেয়ারে বসলো, আবারও কুশল বিনিময়ের চেষ্টা চালিয়ে বলতে আরম্ভ করলো,
— এরীশ সাহেব, কি মনে এখানে হঠাৎ, না মানে আপনি বললে তো আমি নিজেই রাশিয়াতে…
মুখের কথা মুখেই আটকে গেলো মন্ত্রী সাহেবের,এরীশ তাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে গভীর গলায় বললো,
—– এরীশ ইউভান কাউকে কৈফিয়ত দেয়না, আপনার গভমেন্ট আমার দুশো কোটি টাকার ড্রা”গ আটকে রেখে রেখেছে বর্ডারে, প্রায় দশটা কাভার্ড ভ্যান আটকা পরে আছে সেখানে, আজ রাতের মধ্যে সেগুলো ডিশমিশ করার ব্যাবস্থা করুন, নয়তো….
এরীশ কথা শেষ করতে না করতেই মন্ত্রী সাহেব ওকে মানানোর চেষ্টা করে বললো,

—- ইয়ে মানে এরীশ সাহেব, সামনে নির্বাচন এখন যদি এসব নিউজ ভুল করেও একবার লিক হয়ে যায় তাহলে পুরো দলের সর্বনাশ হয়ে যাবে বুঝতেই তো পারছেন, আপনি বরং আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করুন ইলেকশনটা শেষ হলেই আমি আপনার মালামাল আপনাকে পৌঁছে দেওয়ার যথাযথ ব্যাবস্থা করবো, দরকার পরলে সাথে কিছু উপঢৌকনও…..
—-আহহহ!
গর্জে উঠলো এরীশ, বললো,

—- ফাক ইউর ব্রাউন লেকচার, জাস্ট ডু হোয়াট আই সেইড, আজ রাতের মধ্যে আমার কাভার্ড ভ্যান গুলো বর্ডার না ক্রোস করলে সারাজীবনের জন্য মন্ত্রালয়ের চেয়ারের রং ভুলে যান মন্ত্রী সাহেব। ওটা আর আপনার জন্য বরাদ্দ নেই।
শুষ্ক ঢোক গিললো আসিফ জামান, এরীশ নিজের কথা শেষ করে চেয়ার ছেড়ে বাইরের দিকে পা বাড়ায়, তবে যাওয়ার আগে কি ভেবে যেন পেছনে ঘুরে নিজের কলারের ভেতর থেকে একটা সরু সাইজের চাকু আর নিজের রিষ্ট ওয়াচটা খুলে সামনের ঝকঝকে গ্লাস লাগানো টি-টেবিলটার উপর রেখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ঠান্ডা আওয়াজে বলে ওঠে,

—- কোটি কোটি টাকা দিয়ে কি পুষছেন এগুলো মন্ত্রী সাহেব? সামান্য সার্চটা পর্যন্ত ঠিক ভাবে করতে পারেনা এরা। এই বাড়ির সবগুলো গর্ধবের দল। এনিওয়ে মার্ক মাই ওয়ার্ড মন্ত্রী সাহেব,টিল দেন বায় বায়।
ভীষণ শান্ত গলায় হাসতে হাসতে মন্ত্রী সাহেবকে কঠিন কিছু থ্রেট দিয়ে হিরোদের মতোই পকেটে হাত রেখে লম্বা সিল্কি আন্ডারকাট চুল গুলোতে ব্যাকব্র্যাশ করতে করতে বেরিয়ে যায় এরীশ।
এতোক্ষন ধরে এরীশের কর্মকান্ডে শীর দাঁড়া বেয়ে যেন শীতল শ্রোত বয়ে গেলো আসিফ জামানের, তিনি ঘামছেন ভীষণ। পাশেই তার বিশ্বস্ত পিএ লিও দাঁড়িয়ে ছিল, মন্ত্রী সাহেবকে এভাবে ঘামতে দেখে লিও তাড়াহুড়ো করে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।
মন্ত্রী সাহেব ঠান্ডা পানিতে চুমুক দিয়ে ঢকঢক করে গ্লাস শুদ্ধ পানি শেষ করে নিজেকে খানিকটা ঠিকঠাক করে থমথমে আওয়াজে লিওকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,

—- ও কে জানো তুমি?
অযাচিত লিও না সূচক মাথা নাড়ালে মন্ত্রী সাহেব বলেন,
—- মাত্র ত্রিশ বছর বয়সই এই ছেলেটা অন অফ আ মোস্ট ডেঞ্জারাস ফাকিং মাফিয়া টেরোরিস্ট ইন দ্যা এন্টায়ার আন্ডার ওয়ার্ল্ড। রাশিয়ান মোস্ট ওয়ান্টেড পাওয়ারফুল মাফিয়া গ্রুপ “পাইথন প্যারাডাইসের” একমাত্র লিডার, দ্যা এরীশ ইউভান।
যার মধ্যে দয়ামায়া, আবেগ অনুভূতি ভালোবাসার কোনো অস্তিত্ব নেই,আই থিংক ওর ভেতরে হৃদয়টাই অনুপস্থিত। যা আছে তা শুধুই ভয়াবহ হিংস্রতা। হায়নার থেকেও ভ’য়ঙ্কর আর অপত্যশিত ওর থাবা। ওর কাছে দ্বিতীয়বার বলতে কিছু নেই। সুযোগ কিংবা কমিটমেন্ট যাই হোকনা কেন সেটাই প্রথম সেটাই শেষ। মানুষের প্রান আর অস্তিত্ব দুটোই যার কাছে পুতুল খেলা মাত্র। ও শুধু একটা জিনিসই জানে আর একটা জিনিসই বোঝে, পাওয়ার এন্ড মানি, দ্যাটস অল। ওপেনলি ক্রাইম করে বেড়ানোটা ওর কাছে প্যাশন মাত্র।
দেশের ভেতরে বাইরে বৈধ অবৈধ প্রায় হাজারের উপরে রানিং ইন্ডাস্ট্রিজ রয়েছে ওর, এছাড়া আন্ডার ওয়ার্ল্ড মাফিয়া বিজনেস তো রমরমা, পৃথিবীর কোনো মাফিয়ার কাছে যেসব দূর্লভ জিনিস পাওয়া না যায় সেগুলো এক পিস হলেও ওর কাছে রয়েছে, আমার মতো এরকম শতশত মন্ত্রী মিনিস্টারদের প্রতিনিয়ত পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এই ছেলে।

—- হুম বুঝলাম।
মন্ত্রী সাহেবের ঘোর কাটে লিওর কথায়,তিনি শুধান,
— কি বুঝলে?
—- হি ইজ আ টোটাল হার্টলেস ব্লাডিবিস্ট,অলসো ডে’ঞ্জারাস। কিন্তু এবার কি করবো স্যার?
— কি আর করবে, আপাতত ও যা বলছে তাই করো, সামনে নির্বাচন এই সময় এরীশের সঙ্গে পাঙ্গা নেওয়াটা মূর্খামী ছাড়া কিছুই নয়।
—- কিন্তু স্যার একটা খটকা রয়েই গেলো?
আসিফ জামান বিরক্ত হয়ে শুধালেন,

আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ৬

— আবার কি?
— এরীশ ইউভান চাকু রেখে গিয়েছে বুঝলাম, কিন্তু ঘড়িটা কেন খুলে রেখে গেলো, বম টম নেইতো এতে?
লিওর কথায় মন্ত্রী সাহেবের শরীর শিওরে উঠলো,তিনি তৎক্ষনাৎ যায়গা ত্যাগ করে দোতলার দিকে যেতে যেতে বললেন,
—- এই ছেলেকে মোটেও বিশ্বাস নেই, আমার সুগার বেড়ে গেলো ওয়াশরুমে যেতে হবে,তুমি এক্ষুনি এগুলো সরানোর ব্যবস্থা করো,রাইট নাও।

আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব ৮