আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৪৫

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৪৫
লেখনীতে সালমা চৌধুরী

আবিরের বেসামাল অবস্থা দেখে তানভির মৃদু হেসে ঠাট্টার স্বরে মেঘকে বলল,
” ভয় পাইস না, ভাইয়ার মনে আরশোলা কামড় দিছে এজন্য অস্থির লাগছে সবকিছু। ঠিক হতে একটু সময় লাগবে।”
মীম আর আদি দু’জনে একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো,
“গাড়িতে আরশোলা আছে? কই আরশোলা, আল্লাহ বাঁচাও!”
ওদের নাচানাচিতে তানভির গাড়ি সাইড করে পেছন ফিরে তাকালো। তেজঃপূর্ণ গম্ভীর কন্ঠে শুধালো,

” আমি কি একবারও বলছি গাড়িতে আরশোলা আছে?”
আদি আর্তনাদ করে বলল,
“তুমি না বললা, ভাইয়াকে আরশোলা কামড় দিছে!”
তানভির উদাস ভঙ্গিতে বলল,
“ভাইয়াকে কখন, কোথায় আরশোলা কামড়াইছে কে জানে। তোরা চুপচাপ বস। গাড়িতে আরশোলা নেই তারপরও লাফালাফি করলে আরশোলার বাড়িতে ফেলে দিয়ে আসবো। ”
আবির তখনও চোখ বন্ধ করেই বসে ছিল।তানভির এবার আবিরের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বিড়বিড় করে শুধালো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ভাইয়া, ব্যথা কি বেশিই লাগছে? হাসপাতালে নিতে হবে?”
আবির সহসা চোখ খুললো। আড়চোখে তানভিরের দিকে তাকালো। কিন্তু কোনো রিয়াকশন দেখালো না। তানভির তখনও হেসেই যাচ্ছে। তানভির পুনরায় ডাকল,
আবির শুধু ভ্রু নাচালো। তানভির ঠোঁট বেঁকিয়ে হেসে বলল,
” চোখ বন্ধ করে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ো। আর বলো,
‘All is well’ দেখবা একটু শান্তি লাগছে। ”
আবির ভ্রু গুটিয়ে তাকালো, তানভিরের হাসি দেখে আবিরও খানিক হাসলো। তারপর তপ্ত স্বরে বলল,

“মজা নিচ্ছিস?”
তানভির স্ব শব্দে হেসে উত্তর দিল,
“একদম ই না।”
আবির ভারী কন্ঠে বলল,
“দিন আমারও আসবে। তখন বুঝাবো কত ধানে কত চাল। চুপচাপ গাড়ি স্টার্ট দে”
তানভিরও আর কিছু বললো না। ঠোঁটের কোণে হাসি রেখেই গাড়ি স্টার্ট দিল। মাইশা আপুর বিয়েতে মেঘকে শাড়ি পড়া দেখে আবির সারারাত ঘুমাতে পারে নি। সাকিব তানভির কে সবই বলেছে। তখনকার অবস্থা তানভির স্বচক্ষে না দেখতে পারলেও এখনের অবস্থা ঠিকই দেখতে পারছে। গাড়িতে এসি চলছে তারপরও আবির ঘামছে। স্থির থাকতে পারছে না, একবার টিস্যু দিয়ে চোখ- মুখ মুছছে, সানগ্লাস খুলে সামনে রাখছে আবার চোখে দিচ্ছে , এই ফোন বের করছে আবার পানি খাচ্ছে।

বুকের বা পাশে অবস্থিত হৃদপিণ্ডটা অবিরত কাঁপছে। কথায় আছে শাড়িতেই নারী৷ যে অষ্টাদশী জামা পরে পিচ্চি মেয়ের মতো সারা বাড়ি ছুটাছুটি করতো সে আজ শাড়ি পড়ে পরিপূর্ণ নারী রূপে আবিরের সামনে আসছে৷ মায়াবিনী তো জানে না, তার মায়ার জালে আবিরের মনটা বন্দি হয়ে আছে বহুবছর ধরে। নারীরূপী মায়াবিনীকে অনন্তকাল দেখার স্বাদ জাগছে আবিরের অন্তরে। ইচ্ছে তো অনেক কিছুই করছে, মায়াবিনীর দুগাল স্পর্শ করে চোখে চোখ রেখে মায়াবিনীর সমুদ্রের ন্যায় গভীর দুচোখে চিরকালের জন্য ডুবে যেতে। কপালে আলতোভাবে নিজের ঠোঁট ছোঁয়াতে, হৃদয়ে জমানো নিবরধি ভালোবাসার একখণ্ডে মায়াবিনীর উদ্বেলিত মনটাকে শান্ত করতে। মায়াবিনীর চোখে চোখ রেখে সাত সমুদ্র পাড়ি দিতে, নীল আকাশ, অগণিত পাখি আর সমুদ্রের সুবিশাল জলরাশিকে সাক্ষী রেখে বলতে,

“আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে।”
আবির সিটের সঙ্গে হেলান দিয়ে বসে আছে। দৃষ্টি তার গাড়ির মিররে। পেছনের সিটে বসা অষ্টাদশীকে আপনমনে দেখেই চলেছে। হঠাৎ ই ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির ঝলক দেখা গেল। কেন হাসলো কে জানে।এদিকে মেঘ শাড়ি ঠিক করায় ব্যস্ত। প্রথমবার এভাবে শাড়ি পরেছে, বার বার মনে হচ্ছে এদিকে ওদিকে খুলে যাচ্ছে তাই সেসব চেক করায় ব্যস্ত। স্বাভাবিক হয়ে বসতেই মিররে চোখ পড়ে, আবিরের সঙ্গে চোখাচোখি হতেই মেঘ সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিয়েছে। সহসা মেঘ ভ্রু কুচকায়, এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেছে সবকিছু। মাথাভর্তি হাজারও ভাবনার মধ্যে একটা ভাবনা হৃদয়ে আঘাত করে,

“আবির ভাই কি আমায় দেখছেন?”
মেঘ সঙ্গে সঙ্গে আবারও মিররে তাকায়। ততক্ষণে আবির চোখে সানগ্লাস পড়ে ফেলছে তা দেখে মেঘের কুঁচকানো ভ্রুযুগল আরও কুঁচকে আসে, সূক্ষ্ম নেত্রে তাকিয়ে থাকে বেশখানিকক্ষণ। মনে মনে ভাবছে,
“ঐ একজোড়া চোখ কি আমায় দেখে থমকে গিয়েছিল? শুধু কি দৃষ্টিই আঁটকে গেছিল নাকি দৃষ্টির সঙ্গে অন্তরতম অঁচলও? ”

ভাবতেই মেঘের ওষ্ঠদ্বয় প্রশস্ত হলো। হৃদয়ে জমানো অনূভুতিরা চোখে উপচে পড়ছে। আবির ভাই তাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছে ভেবেই মেঘের মন প্রজাপতির মতো উঁড়ে বেড়াচ্ছে। মেঘ নিজেকে আওড়ালো,
“ওনার কোমলপ্রাণ চাহনি কি কিছু বলতে চাইছিল? তবে কি আবির ভাইয়ের মনেও আমার জন্য অনুভূতি জন্মাচ্ছে?”
বাকিটা পথ মেঘ আবিরের চিন্তাতেই মগ্ন থেকেছে। শ্যামবর্ণের এক পুরুষের প্রেমে মেঘ মাতোয়ারা হয়ে গেছে। আবিরের যত্ন, রাগ, তীব্র অধিকারবোধ, স্নিগ্ধতা মিশ্রিত চাহনি অষ্টাদশীর মনেরপাড়ায় বারংবার বিপর্যয় ঘটায়। মেঘের প্রাণোচ্ছল জীবনে আবিরের আবির্ভাব টা ঠিক যেন ধূমকেতুর মতো। কয়েকমাসেই অষ্টাদশীর কোমল মন আবির ভাইকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।

মেঘের জীবনে বাবা আর ভাইয়ের পর আবির ই একমাত্র ছেলে যার সংস্পর্শে নিজেকে নিরাপদ মনে হয়। যার দৃষ্টি, স্পর্শ কোথাও অশ্লীলতার ছোঁয়া অনুভব করে নি। তারজন্যই বোধহয় আবির খুব দ্রুত অষ্টাদশীর হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। সেই থেকে অষ্টাদশীর মস্তিস্কজোরে আবিরের সঙ্গ পাওয়ার অদম্য প্রয়াস সর্বক্ষণ বিচরণ করে। আচমকা গাড়ি থামানোতে মেঘের সুদীর্ঘ ভাবনার অবসান ঘটে। চিরিয়াখানা দেখেই আদি সবার আগে গাড়ি থেকে নেমে পরে।ইকবাল খান আগেও কয়েকবার মেঘদের নিয়ে চিরিয়াখানায় এসেছিলো। তাই আদির এই জায়গা খুব পরিচিত। চিরিয়াখানায় ঘুরতে ঘুরতে আদির খুদা লেগে গেছে৷ আদির সঙ্গে মীমও জানালো, তারও খুদা লাগছে। কিন্তু মেঘের সেসবে মনোযোগ নেই৷ তার মন মস্তিষ্ক জুড়ে শুধুই আবির ভাই ঘুরপাক খাচ্ছে। এরমধ্যে বেশ কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে দুজনের। মেঘের আগে আবিরই চোখ নামিয়ে নেয়৷ চিরিয়াখানা থেকে বের হতেই তানভির ঠান্ডা কন্ঠে বলল,

“ভাইয়া, তুমি বনুকে নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাও আমি সবার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।”
মীম আর আদিও তানভিরের কাছেই রয়ে গেছে। আবির দুটা টিকেট কেটে মেঘকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। এ যেন গাছের সাম্রাজ্যে ঢুকে পরেছে। চারপাশে শুধু সবুজ আর সবুজ। প্রায় ৮৪ হেক্টর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই উদ্ভিদের সাম্রাজ্য। মেঘ আবিরের পিছুপিছু হাঁটছে আর চারপাশের পরিবেশ দেখছে। হঠাৎ কি মনে করে মেঘ হাঁটার গতি বাড়িয়ে আবিরের পাশাপাশি এগিয়ে গেল।৷ আবিরের সাথে তাল মেলানোর চেষ্টা করছে।

আবির যেখানে পা ফেলছে, সমান দূরত্বে মেঘও পা রাখার চেষ্টা করছে। আবিরের হাঁটার গতি বেশি হওয়ায় মেঘ শাড়ি পড়ে ঠিক কুলাতে পারছিল না। আবির আড়চোখে চেয়ে মেঘের পাগলামি দেখে মুচকি হাসলো। পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে হাঁটার গতি কমিয়ে আনলো। দুইজোড়া পা এখন সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবিতে আবির,তার সঙ্গে বাসন্তী রঙের শাড়িতে মেঘকে বেশ মানিয়েছে৷ লম্বাটে আবিরের পাশে মেঘকে আজ খুব একটা পিচ্চি লাগছে না। শাড়ি সঙ্গে হিল জুতাতে বেশ বড়ই লাগছে মেঘকে।

তানভির কল দেয়ায় আবিরের গতি কিছুটা কমে গেছে। মেঘ সামনে চলে গেছে। পাশ দিয়েই ৩-৪ টা ছেলে যাচ্ছিলো তাদের মধ্যে একজন ঠাট্টার স্বরে বলে উঠল,
“কিরে মামা! আজকাল পরীরা আসমান থেকে নেমে বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঘুরতে আসতাছে নাকি?”
দ্বিতীয় জন বলল,

“হ রে মামা, আমারও তাই মনে হচ্ছে। চুলগুলো দেখছিস? জোস না?”
“আসলেই জোস। এমন একটা মেয়ে যদি আমার গার্লফ্রেন্ড হতো”
আচমকা ছেলেগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। মেঘ আবিরের দিকে তাকাতেই দেখলো আবির ফোন চাপছে। মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে আবারও ছেলেগুলোর দিকে তাকালো৷ ততক্ষণে ছেলেগুলো মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছে৷ মেঘ আবিরের অভিমুখে চেয়ে আছে।
আবির ফোন থেকে চোখ তুলতেই মেঘের চোখে চোখ পরে। আবির ভ্রু নাচাতেই মেঘ কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করল,

“আপনি ছেলেগুলোকে কিছুই বললেন না কেন?”
” আজ কিছু বলার মুড নেই।”
মেঘ উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধালো,
“এত পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব? ”
আবির ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসলো। মৃদুস্বরে বলল,
” ফাল্গুনের প্রথম দিন আমি আমাকে সময় দিতে এসেছি। এসব ছেলেদের সাথে কথা বাড়িয়ে নিজের অবস্থান নষ্ট করতে চাই না ”
“তাই বলে কিছুই বললেন না?”
“তুই কি চাস এখন ছেলেগুলোকে ধরে পি*টায়? তাহলে তোর শান্তি লাগব?”
মেঘ গাল ফুলিয়ে বলল,
“জানি না”

মেঘের মনে অভিমান জমেছে। একদিন এক ছেলে মেঘের হাত ধরেছিল বলে আবির অফিস থেকে এসে মাঝরাস্তায় ছেলেটাকে মে*রেছিল। আর আজ ছেলেগুলো বাজে কমেন্টস করেছে তাতেও আবির কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। মেঘের মনে আবারও দুশ্চিন্তা ঢুকে গেছে। আবির ভাইয়ের এই পরিবর্তন মানতে পারছে না মেঘ। ছেলেগুলোকে একটা ধমক দিলেও মেঘ মানসিক শান্তি পেতো। আবিরের পিছুপিছু হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর চলে গেছে। অকস্মাৎ মেঘের নজর পরে সামনে গাছের নিচে একটা কাপল বসে আছে৷ মেঘ আবিরের মনোভাব বুঝার জন্য ঐদিকে দেখিয়ে বলল,

” জায়গাটা অনেক সুন্দর, তাই না?”
মেঘের দৃষ্টি অনুসরণ করে আবিরও সেদিকে তাকিয়েছে। কাপল টা কে দেখে আড়চোখে মেঘের দিকে তাকালো, মেঘ খুব মনোযোগ সহকারে কাপলটাকে দেখছে। আবির গলা খাঁকারি দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ঠান্ডা কন্ঠে বলল,
“হ্যাঁ, অনেক সুন্দর। ”
মেঘ একটু ভারী কন্ঠে বলল,
“ঐদিকে না, এদিকে দেখতে বলছি। ”

মেঘ ইন্ডাইরেক্টলি আবিরকে কাপল টাকে দেখতে বলছে। আবির বুঝেও না বুঝার মতো ভান করছে আর মিটিমিটি হাসছে। আবির এবার কাপলটার দিকে তাকালো৷ খানিক বাদে প্রশ্ন করল,
“তুই তো বোটানির স্টুডেন্ট। ওরা যে গাছটার নিচে বসে আছে ঐ গাছটার বৈজ্ঞানিক নাম কি বল? ”
মেঘ আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে। এ কেমন মানুষ, বুঝাচ্ছে কি আর ব্যাটায় বুঝতেছে কি! মনে প্রেম- ভালোবাসা নাই ঠিক আছে, তাই বলে ঘুরতে এসেও পড়াশোনা? এটা কেমন কথা!
আবির মেঘের দিকে তাকিয়ে পুনরায় প্রশ্ন করল,

“কি হলো? জানিস না?”
জানবো না কেন। এটার বৈজ্ঞানিক নাম Meghalemophyta ceratoabiropteris
আবির হা করে তাকিয়ে আছে।মেঘের মাথায় আস্তে করে গাট্টা দিয়ে আবির বলল,
“এটা Terminalia arjuna, কি পড়াশোনা করিস এটাও জানিস না।”
আরেকটা গাছের দিকে দেখিয়ে পুনরায় বলল,
“এই গাছটার নাম বল”
মেঘ ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে রাগী স্বরে বলল,

“বোটানিতে পড়ি বলে যেখানেই যাই সেখানেই শুধু বৈজ্ঞানিক নাম ধরতে হবে? আমি কি এখানে পড়তে আসছি? ”
“তাহলে কেনো আসছিস?”
“বেড়াতে আসছি।”
“বেড়াতে আসছিস বেড়া। এদিক সেদিক নজর আঁটকায় কেন?”
আবির ঘুরিয়ে ফিরিয়ে হলেও বুঝিয়ে দিয়েছে, ঐ কাপলটাকে দেখা আবিরের ভালো লাগে নি। মেঘ ভেংচি কেটে যেতে যেতে বলল,

“সুন্দর জিনিসে নজর তো পরবেই”
আবির সেদিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বলল,
” আমার চোখে যেমন তুই ব্যতীত সব মেয়েই কুৎসিত তেমন কাপল হিসেবে আমি আর আমার Sparrow ব্যতীত সবাই অসুন্দর। আমি চাই সবাই আমাদের দেখুক, আমি কেন অন্যদের দেখবো!”
কথা গুলো বলেই আবির ঠোঁট বাঁকালো। দ্রুত পায়ে মেঘের কাছাকাছি এগিয়ে আসলো। আবারো পাশাপাশি হাঁটছে দুজন। আবির একটু পর পর আড়চোখে মেঘকে দেখছে। সামনে যেতেই তানভিরদের সঙ্গে দেখা হলো। আবির তানভিরকে দেখেই শান্ত স্বরে বলল,

“ভাবছিলাম তোর বোনের মাথাটা ঠিক আছে। এখন দেখি ও আরও বড় তাড়ছিঁড়া ”
“কেনো? কি হয়ছে?”
” নির্দ্বিধায় বৈজ্ঞানিক নাম বানিয়ে বলে, পা*গলের লক্ষণ।”
“এটা তো ভালো কথা। আমার বোনের কত ট্যালেন্ট দেখছো?”
আবির হেসে বলল,
“তোর বোনের ট্যালেন্ট দেখে আমি শিহরিত ”

আবির আর তানভির দুজনেই স্ব শব্দে হাসছে। মেঘ মীমের হাত ধরে ঘুরছে৷ সুন্দর জায়গা দেখে ছবি তুলছে। আদি ওদের সামনে হাঁটছে আর খাচ্ছে। ঘন্টাদুয়েক ঘুরা শেষে গেইট থেকে বের হয়ে কিছুটা সামনে আসতেই তিনটা ছেলে ছুটে আসে। মোলায়েম কন্ঠে বলল,
“I am Sorry Apu. তখন আমাদের ঐভাবে কমেন্টস করা একেবারেই উচিত হয় নি। প্লিজ আপু, কিছু মনে করবেন না। সরি প্লিজ। আর কখনো আপনাকে বা অন্য কোনো মেয়েকে এভাবে বলবো না। মাফ করে দিন প্লিজ।”
মেঘ আবিরের দিকে তাকালো কিন্তু আবির নিরুদ্বেগ। আবিরের বেপরোয়া ভাব দেখে মেঘ কপাল গুটালো, তাকালো তানভিরের দিকে৷ তানভির আগে থেকেই সূক্ষ্ম নেত্রে তাকিয়ে আছে। কি হয়েছে বা কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে!
মেঘ নম্র স্বরে জানালো,

“ঠিক আছে। আপনারা এখন যান”
ছেলেগুলো পুনরায় জিজ্ঞেস করল,
“আপু, মাফ করেছেন ?”
“হ্যাঁ করেছি।”
ছেলেগুলো চলে গেছে। তানভির আবিরকে ইশারায় জিজ্ঞেস করল, “সমস্যা কি?” আবিরও ইশারাতেই বুঝালো, “তেমন কিছু না”
মেঘ সন্দেহের দৃষ্টিতে আবিরকে দেখছে৷ আবির মেঘের দিকে না তাকিয়ে তানভিরকে বলল,

“তুই ওদের নিয়ে ঘুরে আয় ৷ আমি মেঘকে নিয়ে এক জায়গায় যাব”
তানভির ভ্রু উঁচিয়ে চোখ বড় করে তাকালো। আবিরের নিরেট দৃষ্টি দেখেই তানভির এগিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসলো। মীম আর আদিকে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। মেঘ তখনও আবিরের দিকেই তাকিয়ে আছে আবির এবার সরাসরি মেঘের মুখের দিকে তাকালো। মেঘের কপালে কয়েক স্তর ভাজ, ভ্রু কুঁচকানো, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, নাকের ডগা ক্রমশ ফুলছে, গাল ফুলিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ছে। আবির গলার স্বর কিছুটা উঁচু করে বলল,
“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? আমার কি লজ্জা লাগে না?”
মেঘ শ্বাস ছেড়ে ধীর কন্ঠে শুধালো,

” ছেলেগুলো আমায় সরি বলল কেন?”
“আমি কি জানি!”
মেঘের রাগ চোখেমুখে ভেসে উঠছে। রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
“আপনি সত্যিই কিছু জানেন না?”
আবির নিচের ঠোঁট কামড়ে এক আঙুলে মেঘের নাকের ডগায় আলতোভাবে স্পর্শ করে বলল,
“যাই বল, রাগলে তোকে সেই লাগে, পুরায় অ*গ্নিকন্যা। সারাক্ষণ এভাবে ঘুরবি তাহলে কোনো ছেলে বাজে কমেন্টসও করবে না তারপর তাদের এসে সরিও বলতে হবে না। ”

আবির এগিয়ে গিয়ে একটা রিক্সা ঠিক করলো। হাতের ইশারায় মেঘকে ডাকলো। আবির রিক্সা থেকে হাত বাড়ালো, মেঘ একহাতে শাড়ির কুঁচি ধরে অন্যহাতে আবিরের হাত শক্ত করে ধরে রিক্সাতে উঠে বসলো। আবির মেঘের দিকে ঝুঁকে শাড়ির আঁচল টেনে মেঘের মাথায় দিয়ে দিয়েছে যেন বাতাসে চুল এলোমেলো না হয়। মেঘ অবাক চোখে সেই দৃশ্য দেখছে। রিক্সা চলতে শুরু করেছে, আবির খানিকক্ষণ পরপর ই মেঘের দিকে ঝুঁকে দেখে কোনোকিছু গাড়ির চাকায় আঁটকায় কি না!

আবির যতবার কাছে আসে আবিরের গায়ের গন্ধে মেঘের ছোট্ট দেহ ততবারই কম্পিত হয়। কিছুদূর যাওয়ার পর একটা ফুলের দোকান দেখে আবির রিক্সা থামিয়ে সেখান থেকে তাজা ফুলের মাথার মুকুট কিনেছে। সাথে দুহাতের জন্য তাজা ফুলের ব্রেসলেট। আশেপাশে ফুলের সুগন্ধ ছড়াচ্ছে৷ আবির নিজের হাতেই মেঘকে সেসব পড়িয়ে দিয়েছে। মেঘ আজ নির্বাক। কথা বলতে একদমই ইচ্ছে করছে না। আবির ভাইয়ের সঙ্গে এক রিক্সাতে পাশাপাশি বসে আছে এতেই তার খুশির সীমা নেই। তারউপর আবিরের যত্নে বারংবার অভিভূত হচ্ছে, নতুন করে নতুন ভাবে প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করছে। কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে কোনো কিছুই জিজ্ঞেস করার ইচ্ছে নেই তার৷ আর একটু সামনে গিয়ে মিষ্টি র দোকান থেকে মিষ্টি কিনেছে। মেঘ তখনও নির্বাক ছিল৷ আবির ভাই আজ যেখানে নিয়ে যাবে অষ্টাদশী সেখানেই যাবে, কোনো প্রশ্ন করবে না। যেই কথা সেই কাজ রিক্সা থেকে নেমে একটু হেঁটে একটা বাসায় ঢুকলো। মেঘ কিছুটা দূরে দাঁড়ানো। কলিং বেল চাপতেই কিছুক্ষণের মধ্যে দরজা খুলে দিল।
আবির হাসিমুখে বলল,

“আসসালামু আলাইকুম ”
মাইশা আপু একগাল হেসে উত্তর দিল,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। এতদিকে বোনের কথা মনে পরলো?”
আবির মুখে হাসি রেখে ঠাট্টার স্বরে বলল,
” আমার মতো ব্যস্ত মানুষ আর একটাও পাবে না”
“আহাগো! কি কাজে ব্যস্ত তা আমার জানা আছে।”
আবির মাইশার দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে ধীর কন্ঠে বলল,
“তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।”
মাইশা উত্তেজিত কন্ঠে প্রশ্ন করল,
“কি সারপ্রাইজ? ”
আবির কন্ঠস্বর উঁচু করে ডাকল,
“এইযে ম্যাম, আসুন”

মেঘ গুটিগুটি পায়ে দরজা পর্যন্ত আসতেই মেঘকে দেখে মাইশা দু হাতে নিজের দুগালে হাত রাখলো। মেঘকে আপাদমস্তক দেখে দরজার বাহিরে এসে মেঘকে জরিয়ে ধরে। মেঘও মাইশা আপুকে দেখে অবাক হয়ে গেছে। আপুর বিয়ের পর আজই আপুকে দেখছে৷ আবির অবশ্য আগেও এসেছে। বাসাও আবির ই ঠিক করে দিয়েছিল। মেঘ জিজ্ঞেস করে,
“ভাইয়া কোথায়?”

“ও বের হয়ছে। চলে আসবে এখনি। তোমরা ভেতরে এসে বসো।”
মেঘ ঘুরে ফিরে বাসাটা দেখছে। আবির ঠান্ডা কন্ঠে মাইশাকে বলল,
“আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি, শাড়ি পড়িয়ে তোমার সামনে এনেছি।”
মাইশা আবিরকে বিড়বিড় করে বলল,
” তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্তু প্রেমিকা না আমি তাকে তোর বউ হিসেবে দেখতে চাই৷ ভালোবাসার অভাবে আমার ভাইয়ের মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে৷ আহারে!”
আবির ঠোঁট ফুলিয়ে অভিযোগের স্বরে বলল,

” তুমিই একমাত্র বুঝছো।”
মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আর কেউ তো বুঝেই না”
মাইশা হাসতে হাসতে বলল,
“দাঁড়া বলে দিচ্ছি!”
“এই নাহ! আপু প্লিজ, বলো না”
ততক্ষণে মেঘ এসে সোফায় বসতে বসতে বলল,
“কি হয়েছে আপু?”
মাইশা মুখে হাসি রেখেই বলল,

“মেঘ তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। মাশাআল্লাহ। সাবধানে থেকো। তোমাকে দেখে কারোর হার্ট অ্যাটাক না হয়ে যায়! তোমরা বসো আমি নাস্তা নিয়ে আসি৷ ”
একটু পর মাইশা আপুর হাসবেন্ড বাসায় আসছেন। কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে, নাস্তা করে আবির মেঘকে নিয়ে বের হবে। মাইশা মেইনগেইট পর্যন্ত এগিয়ে এসে উচ্চস্বরে বলল,
“আবির মেঘের শাড়ির কুঁচিগুলো ঠিক করে দে।”
মেঘ আর আবির দুজনেই অবাক চোখে মাইশার দিকে তাকালো। মাইশা স্বাভাবিক কন্ঠে পুনরায় বলল,
“কি হলো? ঠিক করে দে!”
মাইশার কথামতো আবির হাঁটু গেড়ে বসে আস্তেধীরে কুঁচিগুলো ঠিক করে দিচ্ছে। মেঘ বিপুল চোখে তাকিয়ে সে দৃশ্য দেখছে, হাত পা কাঁপছে মেঘের। আবির দাঁড়াতেই মাইশা আবিরকে ডাকল। আবির কাছে যেতেই মাইশা হেসে বলল,

” শুধু ভালোবাসলেই হবে না ভাই, যত্নশীল হতে হবে।”
আবির মুচকি হেসে বলল,
“বিয়ে টা করতে দাও৷ যত্ন কি,কাকে বলে, কত প্রকার বিস্তারিত দেখতে পারবা৷ আসছি”
আবির মেঘকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।
অন্যদিকে তানভির, মীম আর আদিকে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বন্যাদের বাসার এদিকে আসছে। আবিরের চোখে প্রেমানুভূতি দেখে তানভিরেরও খুব ইচ্ছে করছিল বন্যাকে দেখতে৷ কিন্তু হুটহাট বন্যাকে কল দেয়া টা নিজের কাছেই খারাপ লাগে। ছোট বোনের বান্ধবীকে কল দিয়ে কি বলবে, সেটা বোনের কান পর্যন্ত কিভাবে পৌছাবে তা ভেবেই কল করার সাহস পায় না। তানভির ধীর গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে, আর আশেপাশে তাকাচ্ছে৷ আঁখি জোড়া অনবরত তাকেই খোঁজছে। মীম শুধালো,

“ভাইয়া আমরা এদিকে কেন আসছি? আমাদের বাসা তো এদিকে না!”
“ঘুরতে আসছি৷ চুপচাপ বসে থাক”
কিছুটা এগিয়ে যেতেই হঠাৎ চোখে পরলো হলুদ সেলোয়ার-কামিজ পড়নে একজনের দিকে, মাথায় সাদা ওড়না, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, আপন মনে ঝালমুড়ি খাচ্ছে। সিউর হওয়ার জন্য একটু এগিয়ে গেল। গাড়ি থামাতো বন্যার কাছাকাছি এসে । গাড়ির হর্নের শব্দে বন্যা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই তানভিরের হৃদয়ে ছু*রির ন্যায় কিছু ঢুকার মতো অনুভূতি হলো৷ বন্যার দুচোখে গাঢ় করে কাগজ দেয়া, বাসন্তী রঙের জামা আর সাদা ওড়নাতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে বন্যাকে৷ তানভিরের দৃষ্টি সরছেই না। ভেতর থেকে মীম বন্যাকে দেখে বলে উঠল,

“ভাই, দেখো বন্যা আপু।”
এতে তানভিরের হুঁশ ফিরে। মীম আর আদি যে তানভিরের সাথে ছিল এটা তানভিরের মনেই ছিল না।
তানভির শান্ত স্বরে বলল,
“তোরা বস। আমি আসছি।”
তানভির বের হয়ে একটু সামনে এগিয়ে গেল, বন্যা মৃদু হেসে প্রশ্ন করল,
“আপনি এখানে?”
“এমনিতেই আসলাম ”
বন্যা নিজের হাতের ঝালমুড়ির দিকে তাকিয়ে আবারও তানভিরকে দেখে আস্তে করে বলল,
“ঝালমুড়ি খাবেন?”
“নাহ। খাও তুমি।”
কয়েক মুহুর্তের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে তানভির শুধালো,
“বাসা থেকে এত দূর ঝালমুড়ি খেতে আসছো?”

বন্যা এবার একটু শব্দ করেই হাসলো।এপাশ ওপাশ মাথা নেড়ে বলল,
“নাহ। ঘুরতে বের হয়ছিলাম। আপু আর ভাই একটু সামনে গেছে। তাই আমি ঝালমুড়ি খাচ্ছিলাম।”
বন্যা ঘাড় ঘুরাতেই ঠোঁট জোড়া আরও প্রশস্ত হলো। স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“ঐতো আপুরা চলে আসছে।”
ওনারা আসতেই। বন্যা বোনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। যদিও তানভির আগে একবার বন্যাদের বাসায় গিয়েছিল কিন্তু তখন বড় আপুর সঙ্গে দেখা হয় নি। তানভির কিছুটা থতমত খেয়েছে তবুও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে। তানভির সহজ স্বরে বলল,

“আসসালামু আলাইকুম আপু, কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আমি মেঘের বড় ভাই।”
“চিনতে পারছি। আপনার কথা অনেক শুনি। আপনি নাকি খুব রাগী!”
তানভিরের মুখের হাসি মুহুর্তেই গায়েব হয়ে গেছে। কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। বন্যার আপু পুনরায় প্রশ্ন করলেন,

“তা আমাদের এদিকে কি মনে করে? ঘুরতে নাকি এমনিতেই?”
তানভির ঢোক গিলে শান্ত কন্ঠে বলল,
“ভাই বোনদের নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম। ভাবলাম এদিকেও ঘুরে যায়।”
বন্যা উত্তেজিত কন্ঠে প্রশ্ন করল,
“মেঘ আসছে?”
তানভির মৃদু হেসে বলল,
“না বনু আসে নি। মীম আর আদি গাড়িতে আছে।”
বন্যা তটস্ত হয়ে বলল,

“আগে বললেন না কেন? আপু, তোমরা কথা বলো, আমি দেখা করে আসি”
বন্যার বড় বোন হাসিমুখে বলল,
“ভাই বোনদের নিয়ে আসছেন রাস্তায় কত ঘুরবেন, বাসায় চলুন।”
“না আপু। অন্য কোনদিন আসবো।”

বন্যা, মীম আর আদির সঙ্গে গল্প করেছে৷ ঝালমুড়ি কিনে দিয়েছে। তাদের থেকে বিদায় নিয়ে তানভির বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। বাসার গলি পর্যন্ত এসে গাড়ি থামালো। ততক্ষণে আবির মেঘকে নিয়ে চলে আসছে। তানভির গলিতেই ওদের নামিয়ে দিয়েছে। তিনভাই বোন গল্প করতে করতে যাচ্ছে। আবির ভাই মেঘকে মাথার মুকুট কিনে দিয়েছে, সেটা দেখেই মীম মেঘের কাছে আবদার করছে তাকেও যেন এনে দেয়। তারপর বন্যার সঙ্গে দেখা হয়েছে সেই কথাও বলছে।
বাসায় ফিরে কিছুক্ষণ পর ই তানভির বন্যার নাম্বারে কল দিল৷ আজ প্রথম বারেই কল রিসিভ হলো। তানভির গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করল,

“কি করতেছো?”
“তেমন কিছু না। কেন?”
“হাত কাটছো কিভাবে?”
বন্যা আঁতকে উঠে নিজের হাতের দিকে তাকায়। তানভির সন্ধ্যার দিকেই হাতের অবস্থা দেখেছে। আপু চলে আসায় হাতের কথাটা জিজ্ঞেস করতে পারে নি। বন্যা জ্বিভ দিয়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,
“দা লেগে কেটে গেছিল”
তানভির রাগী স্বরে বলল,
“দা লেগে হাত কিভাবে কাটে? কাজ করার সময় মনোযোগ কোথায় থাকে?”
বন্যা মৃদু হেসে বলল,
“বেশি কাটে নি”

“তা তো ব্যান্ডেজ দেখেই বুঝেছি। ঔষধ খেয়ো ঠিক মতো৷ রাখছি ”
এদিকে মেঘ ঘন্টাখানেক পর আবিরের জন্য এক কাপ কফি নিয়ে আস্তে আস্তে আবিরের রুমে ঢুকেছে। আবির চোখ বন্ধ করে বিছানার পাশে হেলান দিয়ে বসে আছে। মেঘ খুব সন্তর্পণে কাপটা টেবিলের উপর রাখল। কয়েক সেকেন্ড আবিরকে দেখল। বলতে চাইলো,কফিটা খাওয়ার জন্য, কিন্তু কেন জানি গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। মেঘ চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে নিলে আবির সুস্থির কন্ঠে ডাকল,
“মেঘ”

ওমনি মেঘের পদযূগল স্তব্ধ হয়ে গেছে। পা বাড়াতে চেয়েও বাড়াতে পারছে না, মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছে না। আবির অত্যন্ত ধীর কন্ঠে বলল,
“মাথায় খুব ব্যথা করছে। কিছু মনে না করলে একটু টিপে দিবি৷ প্লিজ”
আবিরের কন্ঠ অনেক ভার। কথাগুলোও অনেক কষ্টে বলেছে। মেঘ ঢোক গিলে আস্তে করে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“আপনার জন্য কফি নিয়ে আসছিলাম৷”
“এই ব্যথা কফিতে কমবার নয়”
মেঘ এগিয়ে এসে আবিরের মাথার পেছনে দাঁড়িয়ে আলতোভাবে চুলে স্পর্শ করে। আবির চোখ বন্ধ করে বসে আছে। একবারের জন্য তাকিয়েও দেখছে না। আবিরের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মেঘ ডাকল,

“আবির ভাই”
“হুমমমমমমম”
“আপনার কি হয়েছে? কি নিয়ে এত টেনশন করছেন?”
“ভাবছি আগামীকাল ফুপ্পির সাথে বাসার মানুষদের দেখা করাবো। কিন্তু কিভাবে কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। বাসার মানুষদের রাজি করানোর উপায় পাচ্ছি না। তাই খুব টেনশন হচ্ছে ”
মেঘ খানিক ভেবে বলল,
“আমি কি কোনোভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?”
“নাহ। তোকে আমি কোনোকিছুতে জড়াতে চাই না। তোর কিছু করতে হবে না।”
“কেন? ফুপ্পি কি আপনার একার নাকি৷ ফুপ্পিকে বাসায় ফেরানোর দায়িত্ব একা আপনার না৷ এ দায়িত্ব আমারও। আমার মাথায় একটা প্ল্যান আছে৷ বলি?”

“বল”
মেঘ আবিরের কানের কাছে বিড়বিড় করে সব প্ল্যান জানালো। তা শুনে আবির তপ্ত স্বরে বলল,
” আমি বললাম তো, তোকে আমি এই ঘটনায় জড়াতে চাই না। কেন বুঝতে চাইছিস না?”
“কিছু হবে না আমার। আপনিই তো বলেন আমি এই বাড়ির রাজকন্যা। রাজকন্যার কথা কে অমান্য করবে শুনি?”
আবির মলিন হাসলো। পুনরায় গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” তোকে কিছু বলতে হবে না। ”
“আমি বড় আব্বু আর আব্বুকে রাজি করাতে পারবো। আপনি এত ভয় পাবেন না। ”
আবির প্রখর তপ্ত স্বরে জানালো,

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৪৪(২)

” রাজকন্যার উপর অনাঙ্ক্ষিত আক্রমণ বা সামান্যতম আঁচড়ও আমি সহ্য করতে পারব না। ”
“রাজকন্যার কিছুই হবে না জনাব। আমি এখনি রাজি করিয়ে আসছি ”
“এই শুন”
“পরে শুনবো, রাজকন্যা এখন গুরু দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছে। ”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৪৫(২)