আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৪৬ (২)

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৪৬ (২)
লেখনীতে সালমা চৌধুরী

আলী আহমদ খান চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। মেঘ ২-১ বার আবিরের দিকে তাকিয়ে আবারও পত্রিকা পড়া শুরু করলো। আবিরের শাণিত দৃষ্টি যতবার নজরে পড়ছে ততবার ই মেঘের পড়া আঁটকে আসছে। ক্ষণে ক্ষণে আবিরের কুঁচকানো ভ্রু যুগল আরও কুঁচকে আসে। গভীর কোনো উদ্বেগ মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে। আবির দীর্ঘসময় স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেঘের অভিমুখে৷

আবিরের হিমায়িত দৃষ্টিতে অষ্টাদশীর শান্ত হৃদয়ে আচমকা অশান্ত বাতাস বইতে শুরু করলো। পড়া থামিয়ে প্রখর নেত্রে তাকালো আবিরের দিকে। সরাসরি চোখে চোখ পরায় আবির পলক ফেলে চিবুক নামিয়ে রুম থেকে চলে গেছে। আবিরের নিস্তব্ধতা মেঘকে খানিক ভাবালো, তারপর আবারও পত্রিকা পড়ায় মনোযোগ দিল। মালিহা খান ছাদে হাঁটাহাঁটি করে সন্ধ্যায় রুমে আসছে। মেঘকে পত্রিকা পড়তে দেখে ঠান্ডা কন্ঠে বললেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“তুই এখনও পত্রিকা পড়তেছিস?”
মেঘ নিরবে হেসে পড়াতে মনোযোগ দিল। মালিহা খান বিছানার পাশে বসতে বসতে শক্ত কন্ঠে বললেন,
“অনেক পড়েছিস এখন পত্রিকাটা রেখে একটু বাহিরে বের হ। দীর্ঘসময় এভাবে পড়লে চোখে ঝাপসা দেখবি”
“কিছু হবে না। ”
আলী আহমদ খান এবার স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,

“আর পড়তে না আম্মু। তুমি এখন রুমে যাও”
বড় আব্বুর মুখের উপর কথা বলা মেঘের পক্ষে সম্ভব না। তাই পত্রিকা ভাঁজ করে টেবিলের উপর রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেছে। সোফায় বসে হালিমা খান আর আকলিমা খান গল্প করছিলেন। মেঘ ওনাদের পাশের সোফায় হেলান দিয়ে বসছে। হালিমা খান মেঘকে দেখে মৃদুগামী কন্ঠে বললেন,

“তোর বড় আব্বু এখন কেমন আছে?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ”
ঠোঁটে হাসি রেখে হালিমা খান বললেন,
“তোর রান্না খুব ভালো হয়েছে। বড় আব্বুর উছিলায় আমার মেয়ে রান্না যে করছে সেই অনেক।”
মেঘ প্রশ্ন করে,
“তুমি খেয়েছো?”
“শুধু আমি কেন, তোর আব্বু, বড় আম্মু, কাকিয়া, আবির, তানভির সহ সবাই টেস্ট করেছে। তোর প্রথম রান্না বলে কথা!”

আম্মুর কথা শুনে মেঘ চমকে উঠে। সবাই মেঘের রান্না টেস্ট করেছে এটা ভাবতেই মেঘের মন আনন্দে ভরে উঠেছে। অকস্মাৎ মেঘের ভ্রু কুঁচকে আসে। মেঘ উতলা হয়ে শুধালো,
“আবির ভাইও টেস্ট করেছেন?”
“হ্যাঁ। আবির সবার আগে টেস্ট করছে।”
“আবির ভাই না সারাদিন ঘুমাইছে। আমার রান্না কখন টেস্ট করলো?”
” সকালে টেস্ট করে তারপরই ঘুমাতে গেছে। তোর রান্নার তারিফ করছিলো। ”
“আবির ভাই নিজে থেকে আমার রান্নার প্রশংসা করেছেন?”
আকলিমা খান ঠোঁট বেঁকিয়ে মৃদুস্বরে বললেন,

” আবির কি সহজে কিছু বলে নাকি? বার বার জিজ্ঞেস করতেছিলাম তাই বাধ্য হয়ে বলছে খুব ভালো হয়েছে। ”
মেঘ মৃদু হাসলো। এরমধ্যে হালিমা খান বলে উঠলেন,
“তোর বড় আম্মু কিন্তু সারাদিন যাবৎ ই তোর প্রশংসা করছে। কম করে হলেও ১৫-২০ বার বলছে, তুই বড় হয়ে গেছিস, বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। তোকে নাকি বিয়ে দিয়ে দিবে”
মেঘ মনে মনে বিড়বিড় করে বলছে,
“বড় আম্মু আমাকে বড় ভাবলে কি হবে! ওনার ছেলের চোখে তো আমি পিপীলিকার মতো। ওনার নজরে আমি পড়িই না। ”

আকলিমা খান উপরে বেলকনির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললেন,
“আবির উঠেছে দেখলাম৷ কফি খাবেই কি না! করে দিব?”
হালিমা খান কিছু বলার আগে মেঘ বসা থেকে উঠতে উঠতে বলল,
” আমি কফি নিয়ে যাচ্ছি। তোমরা গল্প করো।”

আকলিমা খান আর হালিমা খান দুজনেই আশ্চর্যান্বিত নয়নে তাকিয়ে আছেন। মেঘ সেসবে পাত্তা না দিয়ে রান্নাঘরে গেল কফি করার জন্য৷ দুই ঝা নিষ্পলক তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে৷ মেঘ খুব সাবধানতার সহিত আবিরের জন্য কফি বানিয়ে নিজেই নিয়ে যাচ্ছে। কফি হাতে আবিরের রুমে ঢুকলো, আবির কোথাও নেই, টেবিলের উপর কফির কাপ রেখে সম্পূর্ণ রুমে চোখ বুলালো, আবির কোথাও নেই৷ হঠাৎ বারান্দার কথা মনে হতেই এগিয়ে গেল সেদিকে। আবির চেয়ারে বসে রেলিং এ পা ঠেসে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।
মেঘ অনুচ্চ কন্ঠে বলল,

“আপনার জন্য কফি নিয়ে আসছি।”
মেঘের কন্ঠস্বর স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ মাত্রই আবির চোখ মেলল, অপাঙ্গে তাকালো মেঘের দিকে। মেঘ পুনরায় অচঞ্চল স্বরে প্রশ্ন করল,
“কফি টা এখানে নিয়ে আসব?”
আবির ভ্রু কুঁচকে সূক্ষ্ম নেত্রে তাকিয়ে বিরক্তি ভরা কন্ঠে বলল,
“কি হয়ছে তোর?”
মেঘ এদিক সেদিক তাকিয়ে শমিত স্বরে জানালো,
“আমার আবার কি হবে! ”

“কিছু না হলে এত ম্যাচিউর ব্যবহার কেন করতেছিস? কাকে কি বুঝাতে চাচ্ছিস?”
মেঘ কপালে ভাঁজ ফেলে মন খারাপ করে বলল,
“আমি কাউকে কিছু বুঝাতে চাচ্ছি না। কাকিয়া, আম্মু আপনার কফির কথা বলছিল তাই আমি নিয়ে আসছি। আমার কাজ আছে,আসছি৷ ”
মেঘ মাথা নিচু করে যেতে নিলে আবির চেয়ার থেকে উঠে একপা এগিয়ে মেঘের ডানহাতের কব্জিতে শক্ত করে ধরে। অকস্মাৎ কান্ডে মেঘ ভড়কে গেছে। ঘাড় ঘুরিয়ে আবিরের দিকে তাকাতেই চোখে পরে একজোড়া রক্তাভ আঁখি। সহসা মেঘ ঢোক গিলল। আবির ভাইয়ের রাগের কারণ মেঘের অজানা, কি ভুল করেছে তাও বুঝতে পারছে না। চিবুক নামিয়ে ধীর কন্ঠে বলল,

“ছাড়ুন প্লিজ, হাতে ব্যথা লাগছে”
হাত ছাড়ার বদলে আবির আরও শক্ত করে ধরে নিরেট কন্ঠে বলল,
“কি কাজ আছে তোর?”
আবিরের রাগী স্বর বুঝতে পেরে মেঘ ধীরস্থির গতিতে বলল,
” বড় আব্বুর কাছে যাব।”
“কোনো প্রয়োজন নেই। ”
“মানে?”
“আব্বু যথেষ্ট সুস্থ আছেন তোকে আব্বুর দেখাশোনা করতে হবে না। ”
“কেনো?”
আবির রাগান্বিত কন্ঠে বলল,

“কারণ আমি চাই না তুই আমার আব্বু আম্মুর এত যত্ন নেস। আমি আমার বাবা মাকে দেখে রাখতে পারবো। আর আমার প্রতিও তোর কোনো প্রকার আহ্লাদী ভাব দেখাতে হবে না। কফি আমি করে খেতে পারবো, কাউকে কফি করে দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ”
মেঘ এবার চোখ তুলে আবিরের দিকে তাকায়। হাতের ব্যথার থেকে কয়েকগুণ বেশি ব্যথা বুকে করছে। আবিরের নিষ্ঠুরতা দেখে মেঘের মনের কোণ মেঘে ঢেকে গেছে। মেঘ করুণ স্বরে বলল,
“আপনার আম্মু- আব্বু বলে কি আমি যত্ন নিতে পারবো না? ওনারা তো আমার বড় আব্বু-বড় আম্মু। আমার কি ওনাদের যত্ন নেয়ার অধিকার নেই?”

আবিরের রাগ দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। রাগে কটমট করতে করতে বলল,
“নাহ নেই। কোনো অধিকার নেই।”
মেঘের কন্ঠস্বর ভারী হয়ে আসে। অকস্মাৎ দুর্বহ কন্ঠে বলে উঠে,
“আপনি বললেই হলো! আমি যত্ন নিবই। ছাড়ুন যা..”

হাত না ছাড়া স্বত্তেও মেঘ চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। আবির সহসা মেঘের হাতের কব্জিতে টান দিতেই মেঘ আবিরের বুকের কাছে চলে আসে। আবির সঙ্গে সঙ্গে ঘুরিয়ে মেঘকে বারান্দার দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে। মেঘ স্থির হতে পারছে না, মাথা ঘুরছে। আবির আরেক হাতে মেঘের নামানো চিবুক উপরে উঠায়। আবির তখনও অগ্নিদৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে। কন্ঠ তিনগুণ ভারী করে আবির বলল,
“আমার কথা না মানলে এর ফল খুব ভয়ানক হবে। তুই যদি ভেবে থাকিস তুই সব বিষয়ে ছাড় পেয়ে যাবি তাহলে তুই ভুল ভাবছিস।”

মেঘ শীতল চোখে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
“আপনি এত নিষ্ঠুর কেনো?”
“নিষ্ঠুর পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষকেই প্রয়োজনে নিষ্ঠুর হতে হয়।”
মেঘ তপ্ত স্বরে বলল,
” বড় আব্বু বা বড় আম্মুর যত্ন কেন নিতে পারবো না এর একটা কারণ বলুন। ”
আবির গম্ভীর কণ্ঠে জানালো,

” আমার আব্বু আম্মুর ব্যাপারে আমি কি সিদ্ধান্ত নিব তার কারণ তোকে বলতে হবে? আমার বাবামাকে আমি যেভাবে খুশি দেখে রাখবো, একা না পারলে কয়েকজন নার্স নিয়োগ করবো। তবুও তোকে যেনো ওনাদের আশেপাশে সর্বক্ষণ ঘুরঘুর করতে না দেখি। ”
মেঘ আগপাছ না ভেবেই বলে উঠল,
“আমি কি আপনাদের খুব বিরক্ত করি?”
“হ্যাঁ অনেক বিরক্ত করিস। এইযে এখন করতেছিস৷ ”

মেঘের চোখ টলমল করছে। হৃদয় খুঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে। মেঘ কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,
” ঠিক আছে। আজকের পর আমি আপনাদের কারো জীবনে বিরক্তির কারণ হবো না।”
আবির ঠাস করে মেঘের হাত ছেড়ে গজগজ করতে করতে বলল,
“বেশি বুঝলে এমন ই হবে। ”

মেঘ ছলছল নয়নে কিছুক্ষণ নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা নিচু করে চলে গেছে। আবির ধপ করে চেয়ারে বসে পরেছে। চোখ বন্ধ করে দুহাতে মাথা চেপে ধরেছে। মেঘের সঙ্গে রাগ দেখাতে বড্ড কষ্ট হয় কিন্তু মেঘের এই ম্যাচিউর আচরণে আবির আতঙ্কে আছে। অষ্টাদশীর পরিপক্বতা দেখে বাড়ির মানুষ কোনোভাবে যদি মেঘের জন্য সম্বন্ধ দেখা শুরু করে তখন আবির কি করবে! কিভাবে আটকাবে আব্বু চাচ্চুকে। মেঘ অবুঝের মতো বড় আব্বুর যত্ন করছে, কিন্তু তারা তো এটাকে সেভাবে নিবে না।

হুট করে এমন কোনো ঘটনা ঘটলে আবির সম্পূর্ণরূপে চূর্ণ হয়ে যাবে। আব্বু, চাচ্চুর সামনে দাঁড়ানোর মতো মিনিমাম যোগ্যতাও তার হয় নি! এজন্য আবির সর্বক্ষণ চাই মেঘ সবার চোখে পিচ্চি থাকুক। মেঘের বাচ্চামিতে মেতে থাকুক এই বাড়ি। গুণা ক্ষুরেও কারো চোখে যেন মেঘের ম্যাচিউরিটি না পড়ে। আবির তার সুপ্ত অনুভূতি চেপে, মেঘকে যা তা বলেছে। মেঘ কষ্ট পাবে এটা খুব স্বাভাবিক কিন্তু মেঘের জন্য অন্য ছেলে দেখা হলে আবির,মেঘ দুজনেই কষ্ট পাবে। তখন সেই কষ্টের মাত্রা বর্তমান থেকেও কয়েকগুণ বেশি হবে। আবির বেলকনিতে প্রায় দেড় দুই ঘন্টা বসে রইল, মেঘের আনা কফি টেবিলেই ঠান্ডা হয়েছে৷ ঘন্টাদুয়েক পর তানভির এসে কিছুক্ষণ কথা বলে আবার বেড়িয়ে গেছে।

আবিরের আচরণে মেঘ অনেক বেশি কষ্ট পেরেছে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মেঘের রুমে। রাগে ঘরের প্রতিটা জিনিস এলোমেলো করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পরেছে। বার বার কানে বাজছে,
“আমার কথা না মানলে এর ফল খুব ভয়ানক হবে। বড় আব্বুর উপর কোনো অধিকার নেই।”

মেঘ যখন ই ভাবে আবিরের কাছাকাছি আসবে, আবিরকে নিজের মনের কথা বলবে, আবিরের অনুভূতি বুঝবে তখনই আবির মেঘকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ চেষ্টায় দূরত্ব খানিকটা হ্রাস হয় কি না আবির আবারও দূরত্ব বাড়িয়ে নিজের হাতেই সেখানে দেয়াল তুলে দেয়। অষ্টাদশীর অবুঝ মনে আবিরের কর্মকান্ড ক্রমে ক্রমে দাগ কেটে যাচ্ছে। ভালোবাসার অনুভূতিগুলো কেমন জানি ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছে। বেশকিছুক্ষণ পর মেঘের ফোনে কল বাজতেছে৷ কয়েকবার রিং হওয়ার পর মেঘ হাত বাড়িয়ে ফোনটা কাছে এনে দেখে বন্যা কল দিচ্ছে। দুদিন যাবৎ বন্যা কল দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু মেঘ রিসিভ করছে না৷ ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও মেঘ কল রিসিভ করল।
কল রিসিভ হওয়া মাত্রই ওপাশ থেকে বন্যা বলে উঠল,

“কিরে কি হয়ছে তোর? কোন দুনিয়ায় হারাইছিলি?”
মেঘ শ্বাস ছেড়ে গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিল,
“হারাতে পারলে বোধহয় ভালো হতো।”
“কেন? কি হয়ছে?”
“কিছু না। বাদ দে”
ইচ্ছে করেই বন্যাকে কিছু বলে নি। দুদিন পর পর আবির ভাইয়ের আচরণে মেঘ নিজেই কনফিউশনে পরে যায়৷ সেখানে বন্যা তো আবির ভাইকে সামনাসামনি দেখেই না, আচরণ কিভাবে বুঝবে৷
বন্যা চিন্তিত কন্ঠে প্রশ্ন করল,

“তোদের বাসায় কি সমস্যা রে?”
“তোকে কে বলছে?”
“তানভির ভাই।”
মেঘ একে একে সব ঘটনা বিস্তারিত বলেছে। খুব প্রয়োজনীয় কথা ব্যতীত মেঘ পারিবারিক ঝামেলা বন্যাকে খুব একটা শেয়ার করে না৷ তবে মানসিক পীড়ন সহ্য করতে না পেরে এখন কম বেশি শেয়ার করে। মনের ভেতর কত কথা জমিয়ে রাখা সম্ভব! বন্যা মনোযোগের সহিত সব ঘটনা শুনেছে৷ এখানে বন্যার কিছুই বলার নেই এমনকি মেঘকে সান্ত্বনা দেয়ার কোনো ভাষাও নেই৷ ঘন্টাখানেক দুই বান্ধবীর কথোপকথন চলেছে তারপর মেঘ ফোন রেখে ঘুমিয়ে পরেছে।

দু-তিনদিন কেটে গেছে মেঘ আর আগের মতো বড় আব্বু-আম্মুর কাছে যায় না৷ ওনাদের সঙ্গে কথাও বলে না। ভুলেও আবির মুখোমুখি হয় না। ক্লাসের সময় ক্লাসে যায়, চুপচাপ ক্লাস করে বাসায় চলে আসে। বাকি সময় দরজা বন্ধ করে রুমে শুয়ে থাকে না হয় বই নিয়ে বেলকনিতে বসে থাকে৷ গুনে গুনে দিন কাটাচ্ছে, এই বাসায় থাকতে এখন মেঘের দম বন্ধ হয়ে আসছে। চুপিচুপি গিয়ে বড় আম্মু আব্বুকে দেখে আসে, ওনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারে না, এদিকে মীম আদির সঙ্গেও কথা বলতে ইচ্ছে করে না। ফোন চাপতেও ভালো লাগে না। মন খারাপ থাকলে যেমন সবকিছুই অসহ্য লাগে, মেঘের অবস্থাও এখন তেমন৷ রাতের বেলা মোজাম্মেল খান বাসায় ফেরার কিছুক্ষণ পরেই মেঘ আব্বুর রুমের সামনে হাজির হলো। অনুমতি নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো। হালিমা খান মেঘের মলিন মুখ দেখে প্রশ্ন করলেন,

“কি হয়েছে তোর? মন খারাপ কেন?”
মোজাম্মেল খানও এবার চোখ তুলে মেয়ের দিকে তাকালেন, ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলেন,
“কিছু বলবা?”
“কতদিন হয়ে গেছে আমরা নানুবাড়িতে যায় না৷ চলুন না নানু বাড়ি থেকে ঘুরে আসি!”
হালিমা খান উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,
” তুই তো কখনো নানু বাড়ি যেতেই চাস না৷ আজ হঠাৎ নানু বাড়ি যেতে চাচ্ছিস যে”
“যেতে ইচ্ছে করছে৷ তোমরা যাবে কি না বলো”
মোজাম্মেল খান নিরুদ্বেগ কন্ঠে বলল,

” ভাইজান অসুস্থ৷ এ অবস্থায় আমি যেতে পারবো না। তুমি আর তোমার আম্মু বরং ঘুরে আসো, ফেরার সময় জানিয়ো, তানভির গিয়ে নিয়ে আসবে। ”
হালিমা খান প্রশ্ন করলেন,
“কবে যাবি?”
“কালকেই”
“ক্লাস আছে না?”
“আছে, করব না।আমার ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে।”
মোজাম্মেল খান ভারী কন্ঠে বললেন,

” ক্লাস করতে হবে না, ওর যেহেতু যেতে ইচ্ছে করছে নিয়ে যাও।”
সকাল থেকেই খান বাড়ির পরিবেশ অন্য রকম। আবিরের কড়া নিষেধের জন্য আলী আহমদ খান অফিসে যেতে পারছেন না। আবির আর মোজাম্মেল খান একায় সামলাচ্ছেন সবদিক৷ ইকবাল খান গতকাল ভোরবেলা সিলেটে চলে গেছেন। খাবার টেবিলে বসে আবির, মোজাম্মেল খান, আলী আহমদ খানের সঙ্গে কোনো এক বিষয়ে আলোচনা করায় ব্যস্ত। মীম, আদি নিজেদের মতো খাবার খাচ্ছে। তানভির তাড়াহুড়ো করে খেয়ে বেড়িয়ে গেছে। খাবার টেবিলে মেঘ নেই দেখে মোজাম্মেল খান শুধালেন,

“মেঘ খাবে না?”
মীম আস্তে করে বলল,
” আপু শাওয়ার নিচ্ছে, পরে খাবে বলল।”
“আচ্ছা। ”

আবিরও তেমন মনোযোগ দেয় নি। মেঘকে বকা দিলে সে ২-৪ দিন রাগ-অভিমানে ভোতা মেরে থাকে এটা আবির খুব ভালো মতোই জানে। কিন্তু এখন মেঘের রাগকে প্রাধান্য দিতে গেলে ভবিষ্যতে বড়সড় বিপদের সম্মুখীন হতে হবে ভেবেই আবির মুখ বুঝে সব সহ্য করছে। আবির আর মোজাম্মেল খান অফিসে চলে গেছেন৷ তার কিছুক্ষণ পরেই মেঘ একেবারে রেডি হয়ে নিচে নেমেছে। ভেজা চুল মাঝখানে সিঁথি করে দু পাশে দুটা ছোট ক্লিপ দিয়ে পেছনের চুল ছেড়ে রেখেছে, সঙ্গে পছন্দের একটা জামা পরেছে। খাওয়াদাওয়া করে ১ ঘন্টার মধ্যে নানু বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। প্রায় বছর খানেক পর নানু বাড়িতে আসছে মেঘ৷ বাড়িতে এসে মেঘ ব্যাগ রেখেই ঘুরতে চলে গেছে। হালিমা খান ফোন করে বাসায় জানিয়েছে, মেঘ নানা-নানুর সঙ্গে গল্পগুজব করে, দুই মামার বাড়িতে ঘুরছে। এতদিন পর মামাতো ভাই বোন মেঘকে পেয়েছে, খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে।

২ বোন, ৩ ভাই সবাই মেঘের থেকে বয়সে ছোট৷ মেঘ মামা বাড়িতে গেলে কাজিনদের ঈদ ঈদ লাগে৷ মেঘের মামা খালাদের মধ্যে মেঘের আম্মু ই সবার বড়৷ তারপর দুই মামা, সবার ছোট আরেক খালা। মেঘ বিকেল বেলা আম্মুর ফোন থেকে খালামনিকে কল দিয়ে ভাইবোনের সাথে কথা বলেছে, খালামনিকে আসতে বলেছে। খালামনির দুই মেয়ে এক ছেলে৷ বড় মেয়েটা মেঘের প্রায় সমবয়সী, এখন ইন্টারমিডিয়েট এ পড়তেছে। ছোট মেয়ে ক্লাস ৬ এ পড়ে, ছেলেটার বয়স সবে ৫ বছর।

মেঘ যতবারই নানুবাড়ি আসে ততবারই খালামনিকেও আসতে হয়। সারাদিন হৈ হুল্লোড়ে থেকে মেঘ বাসার কথা প্রায় ভুলেই গেছে। এদিকে আবির সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরেই বাসায় আসছে। গেইটের বাহির থেকে মেঘের বেলকনির দিকে তাকিয়েছে। মেঘের রুমের লাইট অফ দেখেই আবির কপাল গুটায়৷ বাড়ির পরিবেশ বরাবরের মতোই ঠান্ডা৷ আকলিমা খান আজ আদিকে সোফায় বসে পড়াচ্ছেন, মালিহা খান আলী আহমদ খানের কাছে বসে আছেন, মীম তার রুমে পড়তেছে। আবির রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ পর আলী আহমদ খানের রুমে গেল, আব্বুর রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই আকলিমা খান শুধালেন,

“তোমাকে খেতে দিব?”
“দাও।”
আকলিমা খান আবিরকে খেতে দিয়েছেন। আবিরের সাথে মীম আর আদিও কিছুক্ষণ পর খেতে বসছে৷ আবির আশেপাশে তাকাচ্ছে, বার বার উপরে তাকাচ্ছে, মনে মনে মেঘকে খোঁজছে। সচরাচর এত তাড়াতাড়ি আবির খায় না আজ মেঘকে দেখার জন্য ই অসময়ে খেতে এসেছে। মামনিকেও দেখতে পাচ্ছে না, জিজ্ঞেস করতেও কেমন জানি লাগছে। আবির তাড়াহুড়ো করে খাওয়া শেষ করে সিঁড়ি দিয়ে উঠছে, মেঘের রুম পেরিয়ে গিয়েও থমকে দাঁড়িয়েছে। মনের ভেতর কেমন জানি খুঁতখুঁত করছে। দু কদম পিছিয়ে দরজায় হাত রেখেও ধাক্কা দেয় নি, নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পরেছে। সকালে ঘুম ভাঙে আদির ডাকে৷ আদি দরজা থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করছে,

“আম্মু বলছে, কি খাবে বলতে!”
আবির ঘুমের মধ্যেই বলছে,
“কাকিয়ার রান্না করতে হবে না, মামনি কে বল, যা খুশি রান্না করতে।”
“তোমার মামনি বাসায় নেই!”
আবির সহসা চোখ মেলে ক্ষুদ্র পরিসরে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
“কোথায় গেছে?”
“মেঘাপুর নানু বাড়ি গেছে।”
“একা?”
“না মেঘাপুও গেছে। ”

আবির সঙ্গে সঙ্গে শুয়া থেকে উঠে বসল। মেঘ বাসায় নেই অথচ সে কিছুই জানে না। আদি চলে যেতেই আবির সঙ্গে সঙ্গে মেঘের নাম্বারে কল দিয়েছে কিন্তু মেঘের ফোন বন্ধ। মেঘ রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে অথচ আবির কিছুই টের পায় নি, ভাবতেই আবিরের বুক কাঁপছে। এদিকে মেঘের ফোন বন্ধ পেয়ে আবির রীতিমতো ঘামতে শুরু করেছে। বাধ্য হয়ে মামনিকে কল দিয়ে কথা বলেছে, মেঘের কথাও জিজ্ঞেস করেছে, মেঘ ভোরবেলা উঠেই কোথায় ফুল আনতে চলে গেছে। আবির মামনির সাথে কথা শেষ করে সহসা তানভিরের রুমে গেছে। তানভির তখনও ঘুমে বিভোর হয়ে আছে৷

গতকাল রাতে প্রায় ১ টার দিকে বাসায় আসছে, সকালেও তাড়াতাড়ি করে চলে গেছিল। মা, বোনের খবর ই নেয়া হয় নি৷ হালিমা খান যাওয়ার আগে তানভিরকে কল দিয়েছিল কিন্তু তানভির ব্যস্ততার কারণে কথা বলতে পারে নি। কল রিসিভ করে শুধু বলেছিল, “পরে ফোন দিচ্ছি। “পরে আর সময় হয়ে উঠে নি, বাসায় ফিরতে দেরি হয়ে গেছে বলে এত রাতে আম্মুকে ডাকে নি। তানভির ঘুমাচ্ছে দেখে আবিরও আর ডাকে নি। আবির দুপুরের দিকে আবারও মেঘের নাম্বারে কল দিয়েছে কিন্তু মেঘের নাম্বার তখনও বন্ধ। বিকেলে বাসায় ফিরে কি যেন ভেবে মেঘের রুমের দরজা ধাক্কা দিয়েছে।

বিকেলের অল্প রোদে রুমের দেয়ালগুলো আলোকিত হয়ে আছে, আবিরের চোখ পরে বিছানার দিকে, বিছানার উপর আবিরের দেয়া সব গিফট সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছে। আবির ভ্রু কুঁচকে সূক্ষ্ণ নেত্রে তাকায়। হঠাৎ আবিরের চোখ পড়ে টেবিলের উপর রাখা ফোনের দিকে। আবির এগিয়ে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো। মেঘ ফোন বন্ধ করে টেবিলের উপর রেখে চলে গেছে। অভিমানী মেঘ আবিরের রাগ সহ্য করতে না পেরে আবিরের স্মৃতি রেখে দূরে চলে গেছে। এদিকে মেঘের ফোন বন্ধ পেয়ে তামিম, মিনহাজ, মিষ্টি সবাই বন্যাকে কল দিচ্ছে। মেঘ যে নানার বাড়ি যাবে এটা বন্যাকেও বলে নি। ২ দিন হয়ে যাচ্ছে মেঘের ফোন বন্ধ পেয়ে বন্যা তানভিরকে কল দিল, তানভির তখন বাইকে৷ বন্যার দ্বিতীয় কল টের পেয়ে বাইক সাইড করে কল রিসিভ করল,
বন্যা সালাম দিয়ে প্রশ্ন করল,

” মেঘ কোথায় আছে?”
“বনু নানু বাড়ি গেছে৷”
” কবে গেছে?”
“২ দিন হলো।”
“আমার সঙ্গে তো ঐদিন রাতেই কথা হলো৷ বললো না তো”
“তোমার বান্ধবী আমাকেও বলে নি, আমিই পরের দিন শুনছি ”
“মেঘের ফোন বন্ধ কেন?”
ফোন বাসায় রেখে চলে গেছে। ”

“কেন?”
“আমি কি করে বলবো?”
“কবে আসবে?”
“জানি না”
“আপনি না ওর ভাই, জানেন না কেন?”
” আমাকে না বললে আমি কিভাবে জানবো, আম্মুও জানে না। বনুর যেদিন ইচ্ছে হবে সেদিন আসবে। ”
“ওহ আচ্ছা। রাখি তাহলে”
“শুনো”
“জ্বি”

“তোমার হাতের কি অবস্থা? ”
“এখন কিছুটা ঠিক হয়ছে।”
“ঔষধ গুলো খাচ্ছো সময়মতো?”
“জ্বি। আপনি কেমন আছেন? ”
তানভির ভ্রু উঁচিয়ে মৃদু হেসে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো ”
“কোথায় আছেন?”
“রাস্তায়, বাইকে”
“সরি অসময়ে কল দিলাম”
“সমস্যা নেই৷ বলো”
“আর কিছু বলবো না। রাখি এখন”
“আচ্ছা। কি আর করা।”

এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে মেঘের সঙ্গে কারো যোগাযোগ নেই। তানভির, আবির, মীমরা যখনই কল দেয়, মেঘ আশেপাশে কোথাও থাকে না, কাছে থাকলেও আবিরের কথা শুনলেই মেঘ নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। হালিমা খান সারাবাড়ি খোঁজেও মেঘকে পান না৷ ৪-৫ দিন হলো মেঘের খালামনি আসছে। নানু বাড়িতে মেঘকে নিয়ে মোট ৯ জন কাজিন। তানভির আসলে পরিপূর্ণ হতো। রাত ১২-১ টা পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে ঘুমায়, সকাল থেকে উঠে হৈ-হুল্লোড় খেলাধুলা, নানার সঙ্গে ঘুরাঘুরি, নানুর হাতের পিঠা খাওয়াতে ব্যস্ত থাকে।

এই কয়েকদিনে মেঘের মন অনেকটায় হালকা হয়ে গেছে। হালিমা খানকে দিয়ে প্রতিদিনই মালিহা খানকে কল দিয়ে মেঘ বড় আব্বু আর বড় আম্মুর খবর নেয় কিন্তু নিজে কথা বলে না এমনকি তানভিরের সঙ্গেও কথা বলে না। মেঘের সঙ্গে কথা বলতে না পেরে এদিকে আবিরের মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, প্রতিদিন ই মামনিকে কল দেয় কিন্তু মেঘকে একবারও কাছে পায় না। আজ ইচ্ছে করে ই আবির রাত ১১ টায় কল দিয়েছে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বার কল দেয়ার পর অবশেষে কল রিসিভ হলো। কিন্তু কোনো কথা বলছে না।
আবির প্রখর তপ্ত স্বরে ডাকলো,

“মেঘ”
মেঘ নিশ্চুপ, কোনো কথা বলছে না। আবির পুনরায় মোলায়েম কন্ঠে বলল,
“কথা বলবি না?”
মেঘ ঢোক গিলে শান্ত স্বরে বলল,
” বলুন।”
“কি করছিস?”
“ঘুমাবো।”
“রাতে খাইছিস?”
“জ্বি৷ ”
“বাসায় আসবি কবে?”
“জানি না।”
“ক্লাস মিস হচ্ছে না?”
“হওক।”
“তবুও আসবি না?”
“নাহ”

“বাসার মানুষদের মিস করিস না?”
“নাহ। আর কিছু বলবেন?”
“কেনো? বিরক্তবোধ করছিস?”
মেঘ স্ব শব্দে হেসে আস্তে বলে বলল,
“নাহ! হয়তো আমি কারো বিরক্তির কারণ হচ্ছি। ভালো থাকুন৷ আল্লাহ হাফেজ। ”

মেঘের তীব্র অভিমান বুঝতে পেরে আবির আর কিছুই বলতে পারলো না। মেঘ কল কেটে দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো। এর আগে কখনো আবিরের সঙ্গে এত অভিমান নিয়ে কথা বলে নি মেঘ। আবির কল দিলেই রাগ অভিমান সব মিলিয়ে যায় অথচ এবার মেঘের মন পাথরের ন্যায় শক্ত হয়ে গেছে। আবিরের মোলায়েম, কোমল কন্ঠস্বর অষ্টাদশীর অভিমানের পাহাড় ভাঙতে ব্যর্থ হলো। এরপর থেকে প্রতিদিন ই আবির রাত ১১ টার পরে মামনির নাম্বারে কল দেয়৷ হালিমা খান ১০-১০.৩০ নাগাদ ঘুমিয়ে পরেন। তারপর মেঘ আম্মুর ফোন দিয়ে গেইম খেলে। আবিরের কল কাটার সাধ্যি হয় না বলে বাধ্য হয়ে রিসিভ করে, প্রতিদিন ই ২-১ টা কথা বলে মেঘ কল কেটে দেয়।

আজ শুক্রবার। গতরাতে মেঘের সঙ্গে কথা বলেই আবির ঘুমিয়েছে। ১০ টা বাজে, এখনও আবির ঘুমাচ্ছে। মামনির নাম্বার থেকে কল আসতেই আবির ঘুমের মধ্যে কল রিসিভ করল। ঘুমন্ত অবস্থায় বলল,
“মামনি”
“নাহ। আমি মেঘ ”
“হুমমমমমম ম্যাম, বলুন।”
“ঘুমাচ্ছেন? পরে কল দিব? ”
” বলুন, আমার ঘুম শেষ৷ ”
মেঘ মলিন হেসে বলল,
“ভাইয়াকে কল দিচ্ছি, ভাইয়া কল ধরছে না।”
“কেনো? কোনো দরকার? ”
“নানুমনি ভাইয়াকে আসতে বলতেছে। আর আমরাও চলে যাব আজ।”
“আচ্ছা আমি তানভিরকে বলে দিব। ”
“আর একটা কথা। ”
“বলুন ”

“আম্মু বলতেছিল, ভাইয়ার সঙ্গে আপনিও আসার জন্য। ”
“মামনি বলছে, তারমানে আপনি চান না আমি আসি৷”
“আপনার ইচ্ছে হলে, সুযোগ থাকলে আসবেন। আমি কাউকে জোর করে তার বিরক্তির কারণ হতে চাই না। রাখছি। ”
আবির মুচকি হেসে তাড়াতাড়ি উঠে তানভিরের রুমে ছুটে গেল। তানভির সকালে খেয়ে আবার শুয়েছে। আবির তপ্ত স্বরে ডাকলো,

“তানভির, উঠ ”
আবিরের কন্ঠস্বর শুনামাত্র তানভির হকচকিয়ে উঠল। গলা খাঁকারি দিয়ে প্রশ্ন করল,
“কি হলো ভাইয়া?”
আবির মুচকি হেসে বলল,
“বউ কল দিছে তাকে আনতে যেতে হবে। তাড়াতাড়ি রেডি হ”
“বাপরে বাপ৷ এত খুশি?”
“বউটাকে কতদিন ধরে দেখি না৷ বুকের ভেতর শূন্যতা অনুভব করছি। তুই বুঝবি না। ”
“আহাগো”
“ভন্ডামি না করে তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হ।”

তানভির রেডি হতে হতে আম্মুকে কল দিয়েছে। গাড়ি নিয়ে বাড়ি পর্যন্ত যাওয়া যাবে কি না জানার জন্য। মেঘদের নানুর বাড়ির এদিকে রাস্তা করতেছে, গাড়ি বাড়ি পর্যন্ত যাবে না। যাওয়ার দিনই অনেকটা পথ হেঁটে যেতে হয়েছে । এজন্য তানভির আর আবির বাইক নিয়ে বেরিয়েছে। আবির আজ সাদা রঙের পাঞ্জাবি পরেছে আর তানভির ধূসর রঙের। পাশাপাশি দুই ভাই বাইক চালিয়ে যাচ্ছে। তানভির হঠাৎ ই ডাকলো,

“ভাইয়া!”
“বল”
“একটা গান গায়?”
“তোর মন চাইলে গা, আমার বলছিস কেন?”
“এই গান টা শুধু তোমার জন্য। তুমি রাজি থাকলে শুরু করব৷ গাইবো?”
“গা”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৪৫

তানভির গলা খাঁকারি দিয়ে গাইতে শুরু করল,
“এসেছি তোকে নিয়ে ফিরবো বলে
মনেরই পথ চিনে আয়না চলে
তোর ছেড়ে জ্বর বুকে ছাড়ে না
পারছে তোকে ছাড়া না রে না!”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৪৭