আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৪৯
লেখনীতে সালমা চৌধুরী
মিষ্টির কথা শুনে মেঘের চোখের তারাগুলো ঝলমল করছে। চোখের সামনে আবিরের হাস্যোজ্জল চেহারা ভেসে উঠেছে। ওমনি মেঘ চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। চোখ বন্ধ করা মাত্র আবিরের ধারালো ছু*রির ন্যায় দৃষ্টি চোখে লাগল। বক্ষপিঞ্জরে আবদ্ধ হৃদপিণ্ডটা ছুটে পালাতে চাচ্ছে, সহসা অনুভব হলো উষ্ণ হাওয়া মেঘের কানের লতি ছুঁয়ে গেছে। মেঘের লুকানো অনুভূতিগুলো আজ আকাশে ডানা মেলে উড়তে চাচ্ছে, আনন্দ সাথে লজ্জায় মেঘের চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে। বন্যা সুনিপুণ নজরে খেয়াল করল তা, বন্যার ঠোঁটে সহসা হাসি ফুটলো। হাসিমুখে মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলল,
” কেউ আবির ভাইয়াকে খবর দে, বান্ধবী আমার নববধূর মতো লজ্জায় নুইয়ে পড়ছে। আবির ভাইয়া না আসলে বোধহয় চোখ তুলে তাকাবেই না।”
বন্যার কথায় মেঘের হুঁশ ফিরে৷ স্পষ্ট চোখে তাকায় বন্যার দিকে৷ বন্যার হাস্যোজ্জল মুখ দেখে মেঘ এগিয়ে এসে বন্যাকে জড়িয়ে ধরে লজ্জায় ওড়না দিয়ে মুখ লুকালো।
বন্যা ক্ষীণ স্বরে বলল,
“বেবি! থাক এত লজ্জা পাইতে হবে না। আমরা তো আর আবির ভাইয়া নয়!”
মিষ্টি বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” মেঘ তুই ওনাকে পেলে সত্যি ই অনেক ভালো থাকবি । আমি মাত্র কয়েক ঘন্টা ওনার দায়িত্বশীলতা আর যত্ন দেখেই ক্রাশ খেয়ে ফেলছি সেখানে তুই তো নিজে সর্বক্ষণ সবকিছু অনুভব করিস।”
মিনহাজ শক্ত গলায় বলে উঠল,
“তোদের আহ্লাদ দেখে বাঁচি না। এই বন্যা মেঘের ফোনটা দে, আমার আইডি আনব্লক করি।”
মেঘ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বন্যার থেকে নিজের ফোন নিয়ে ব্যাগে রাখতে রাখতে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
” কোনো প্রয়োজন নেই৷ তুই ব্লকলিস্টেই থাক।”
“কেনো?”
“আবির ভাই নিজের হাতে ব্লক দিছেন, আমার পক্ষে আনব্লক করা দুরূহ বিষয়৷ তাছাড়া আমাকে বেবি বলতে বারণ করা স্বত্তেও তুই বেবি ডাকছিস। আমি কিছুই করতে পারবো না। ”
” এত পাথর মন কেন তোর? আনব্লক করে দে৷ আর বলব না। ”
“সম্ভব না। আমি বাসায় যাব। টা টা। ”
মেঘ খুশিতে গদগদ হয়ে সবাইরে রেখে চলে গেছে । গাড়িতে বসে ভাবছে,
“আবির ভাই কি সত্যিই আমায় পছন্দ করেন? নাকি আমি একটু বেশিই ভাবছি!”
মেঘ বাসায় এসে হাতমুখ ধৌয়ে নিচে আসছে। মালিহা খান সোফায় বসে কি যেন পড়তেছিলেন। মেঘকে ঘুরঘুর করতে দেখে ডাকলেন,
“মেঘ, এদিয়ে আয়”
বড় আম্মুর ডাক শুনে মেঘ সোফায় এসে বসতেই মালিহা খান মৃদু স্বরে বললেন,
“খাবি কিছু?”
“না খিদে নেই৷”
“তাহলে ঘুরতেছিস যে”
“আম্মুরা কোথায়?”
“তোর আম্মু, কাকিয়ারা শপিং এ গেছে।”
মেঘ ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বলল,
” আমায় নিয়ে গেল না কেন?”
” তুই যেতিস নাকি?”
“হ্যাঁ”
“আজকে আর কিভাবে যাবি৷ তুই বরং অন্যদিন যাস। আমি খেতে দিচ্ছি তুই ঠান্ডা মাথায় খেয়ে নে।”
মেঘ স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
” তোমার খেতে দিতে হবে না। আমি একায় খেতে পারবো। ”
মেঘ মন খারাপ করে রান্না ঘরে চলে গেছে। রাস্তায় আসতে আসতে মেঘ ভাবছিল শপিং এ গিয়ে আবিরের জন্য নিজে পছন্দ করে পাঞ্জাবি কিনে নিয়ে আসবে কিন্তু আম্মুরা মেঘকে না বলেই চলে গেছে। মেঘ খাবার খেয়ে রুমে এসে শুয়ে আছে। মাথায় শুধু আবির ভাই ঘুরছে। শুয়ে বসে কোনোভাবেই ভালো লাগছে না। কয়েকবার ফোনে আবিরের নাম্বার বের করেছে কিন্তু কল দেয়ার সাহস পাচ্ছে না। কোনোভাবেই যখন ঘুম আসছিল না তখন মেঘ উঠে চুপিচুপি আবিরের রুমে চলে গেছে। রুম জুড়ে মাতাল করা এক সুগন্ধ যা মেঘের মস্তিষ্কের নিউরনে অনুরণন তুলছে। চারপাশে তাকাতে গিয়ে হঠাৎ নজর পরে আবিরের স্কাই ব্লু রঙের এক শার্টের দিকে। মেঘ নিঃশব্দে হেসে এগিয়ে গেল শার্টের কাছে।
শার্ট টা কাছে আনতেই আবিরের গায়ের গন্ধ স্পষ্ট নাকে লাগলো। আবেশে মেঘের চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। প্রিয় মানুষের স্পর্শ যেমন দেহ আর মন উভয়কে আন্দোলিত করে তেমনি প্রিয় মানুষের গায়ের গন্ধেও তীব্র আকর্ষণ কাজ করে। মেঘ কিছুক্ষণ শার্টটাকে জড়িয়ে ধরে অকস্মাৎ জামার উপরে শার্ট টা পড়ে নিল৷ আবিরের শার্ট মেঘের গায়ে অনেকরা পাঞ্জাবির মতো লাগছে, যেমন মোটা তেমনি লম্বা। মেঘ ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চোখ তুলে তাকাতেই লজ্জায় দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেছে। খানিক বাদে দু আঙুল ফাঁক করে এক চোখে তাকিয়ে নিজেকে দেখতে লাগলো। খুশিতে দুহাত মেলে রুমে ঘুরতে লাগলো, ঘুরতে ঘুরতে ধপ করে বিছানায় এসে বসে পরেছে। দুহাতে শার্টের কলার ঠিক করে হাতা টেনে বিছানায় শুয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করল৷ চোখে ভাসছে গত ৯ মাসে আবিরের সঙ্গে কাটানো একের পর এক অপরূপ মুহুর্ত। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে মেঘ নিজেও জানে না৷
আবির বিকেলের দিকে বাসায় আসছে। রুমে ঢুকতেই থমকে দাঁড়ালো, নিজের বিছানায় মেঘকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। আশেপাশে তাকিয়ে সম্পূর্ণ রুম ভালোভাবে নিরীক্ষণ করল৷ ব্যাগ টা রেখে কয়েক মুহুর্ত প্রখর নেত্রে রইলো প্রেয়সীর অভিমুখে। ঘুমের মধ্যেও মেঘের ঠোঁটের কোণে হাসি লেগেই আছে। মেঘের পরনে নিজের শার্ট দেখে মুচকি হাসলো । আবিরের নিষ্পলক দৃষ্টি আঁটকে আছে মেঘের ঘুমন্ত চেহারায়। আনমনে অনেককিছু ভেবে নিয়েছে। মেঘকে ডাকার জন্য একবার এগিয়ে গেল কিন্তু মেঘের গভীর ঘুম দেখে ডাকতে ইচ্ছে করে নি। তাই শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে চলে গেছে।
শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েও দেখল মেঘ ঘুমে নিমগ্ন হয়ে আছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। মনের ভেতর অস্থিরতা, মস্তিষ্কে বিচরণ করছে নানান রঙবেরঙের নিষিদ্ধ প্রেমানুভূতি। ইচ্ছে করছে প্রেয়সীর চাঁদের ন্যায় মুখবিবরে ভালোবাসার পরশ একেঁ দিতে কিন্তু কিভাবে সম্ভব! আবিরের প্রেয়সী যে এখনও অবুঝ। আবির ঠোঁটে হাসি রেখে মেঘের দিকে ঝুঁকে এসে চুল ঝাড়তেই, পানির ছিটা মেঘের চোখেমুখে পরে। মেঘ ঘুমের মধ্যেই ভ্রু কুঁচকালো কিন্তু সজাগ হওয়ার কোনো নাম ই নিল না।
আবির রুম থেকে বেরিয়ে বেলকনিতে গেল, বাসার পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করলো। মীমরা এখনও ফিরে নি, মালিহা খান নিজের রুমে। আবির আবারও রুমে আসছে। মেঘের দিকে ভালোভাবে তাকাতে পারছে না আবার না তাকিয়েও থাকতে পারছে না৷ অন্যদিকে বাসার মানুষের চিন্তা তো আছেই৷ হুট করে কেউ চলে আসলে আর মেঘ কে এ ভাবে আবিরের রুমে দেখলে কি হবে তাই ভেবে পাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত মেঘের মাথার কাছে বসে, মেঘের চুলে আলতোভাবে হাত বুলিয়ে মোলায়েম কন্ঠে ডাকলো,
“মেঘ”
মেঘ ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। আবির পুনরায় ডাকলো,
“মেঘ”
মেঘ ঘুমের মধ্যেই বলবো,
“ওমমমমম”
“উঠ”
মেঘ এবার ঠাস করে চোখ মেলল৷ আবিরের চোখে চোখ পরতেই আশেপাশে চোখ ঘুরালো। এটা আবিরের রুম বুঝতে পেরেই তাড়াহুড়ো করে উঠে বসলো। আবির ভাইয়ের বিছানায় ঘুমিয়ে পরেছিল ভেবেই লজ্জায় মেঘ চোখ তুলে তাকাতে পারছে না৷ মেঘের আকাশচুম্বী লজ্জা দেখে আবির থমথমে কন্ঠে বিড়বিড় করল,
” রাগ উঠতে এই লজ্জা কোথায় হারায় যায়? ”
মেঘ উঠে চলে যেতে নিলে আবির মেঘের বাহু চেপে ধরে। সদ্য ঘুম ভাঙায় মেঘ কথাও বলতে পারছে না। আবির দাঁড়িয়ে মেঘের কাছে এগিয়ে এসে শুধালো,
“এসবের মানে কি?”
মেঘ আবিরের দৃষ্টি খেয়াল করে নিচে তাকাতেই রীতিমতো কেঁপে উঠলো। পরনে আবিরের শার্ট দেখে মেঘের শরীর ঘামতে শুরু করেছে। ভয় আর লজ্জায় মেঘ আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ চিবুক নামিয়েছে গলায়। কিছু বলার ভাষা নেই। মেঘের অস্বাভাবিকতা বুঝতে পেরে আবির মেঘকে ছেড়ে দিয়েছে৷ মেঘ সঙ্গে সঙ্গে দরজার দিকে ছুটলো৷ বেলকনিতে গিয়ে শার্ট খুলে পুনরায় আবিরের রুমের দরজা পর্যন্ত এসে শার্ট বিছানার দিকে ছুঁড়ে ফেলে নিজের রুমে চলে গেছে। আবির ঠোঁটে হাসি রেখে দরজার দিকে তাকিয়ে রইলো।
কিছুক্ষণ পরেই মীমরা শপিং করে বাসায় আসছে। এসেই মেঘকে ডাক শুরু করলো। মেঘের জন্য জুতা, থ্রিপিস আরও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আসছে। মেঘ শপিং খুলে দেখছে। একটা শপিং দেখিয়ে বলল,
“ঐটাতে কি আছে আম্মু? ”
হালিমা খান শপিং ব্যাগটা মেঘের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
” আবির আর তানভিরের জন্য শার্ট আছে এটাতে! ”
মেঘ গম্ভীর গলায় বলে,
“পাঞ্জাবি আনো নি?”
“পাঞ্জাবি তেমন ভালো লাগে নাই তাই আনি নি৷ ”
“ওহ।”
হালিমা খান আদিকে পাঠালেন আবিরকে ডাকার জন্য। আবির নিচে আসতেই মেঘ লজ্জায় মীমের পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পরেছে। আকলিমা খান আবিরকে ২ টা শার্ট দিয়ে বলল,
“দেখো পছন্দ হয় কি না!”
আবির দাঁত বের করে হাসলো। তারপর স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“তোমাদের পছন্দ কে আমি কখনো খারাপ বলছি?”
“তা বলো নি৷ কিন্তু খুব ভালো লাগছে সেটাও কখনো বলো না। তুমি এত বছর বাহিরে ছিলে, তোমার পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই৷ তাই একটু চিন্তায় থাকি। ”
আবির হেসে বলল,
“তোমরা মাঝে মাঝে এমনভাবে কথা বলো যেন আমি ভিনগ্রহে ছিলাম। নতুন নতুন পৃথিবীতে পা রাখছি। ”
আবিরের কথা শুনে সবাই একসঙ্গে হেসে উঠলো৷ আবির নিরব দর্শকের মতো সব দেখল। আর মেঘ মীমের আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে আবিরকে দেখছে । আবির যতক্ষণ নিচে ছিল, মেঘ সামনেই আসে নি। আবির নিজের শার্ট নিয়ে চলে যেতেই মেঘ আবারও সোফায় বসে শুধালো,
“আম্মু তোমরা আবার শপিং এ যাবে কবে?”
“জানি না। কেন মা?”
“আমিও শপিং এ যেতাম।”
“তোর ড্রেস পছন্দ হয় নি?”
“হয়ছে। আমার অন্য কাজ আছে। কবে যাবে বলো।”
“আমরা আবার যেতে যেতে ঈদের সময় যাবো। তখন গেলে হবে?”
“না আমার ইমার্জেন্সি যেতে হবে। ”
“তাহলে তানভির না হয় আবিরের সঙ্গে চলে যাস। ”
আবির এরমধ্যে রুমে শার্ট দুটা রেখে নিচে নামতে নামতে গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,
“কোথায় যেতে বলছে?’
“ওর নাকি কি শপিং করতে হবে। তাই বলছিলাম তুই না হয় তানভির নিয়ে যাস। ”
“এখন যাবি? ”
মেঘ এপাশ ওপাশ মাথা নেড়ে না করল। মেঘ মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
“ওনাদের নিয়ে শপিং এ যাওয়ার চেয়ে না যাওয়ায় ভালো।”
আবির স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“আমি বাহিরে যাচ্ছি ফিরতে দেরি হতে পারে। ” বলে আবির চলে গেছে। মেঘ রুমে যেতেই দেখল ফোনে মিনহাজ একের পর এক কল দিচ্ছে। মেঘ ফোন রিসিভ করতেই মিনহাজ বলল,
“তুই কি আমায় আনব্লক করবি না মেঘ?”
“আমি পারব না।সেটা তোকে আগেই বলেছি। আর এতবার কল দিলে ফোন নাম্বারও ব্লক করে দিব বলে দিলাম।”
“থ্রেট দিচ্ছিস মেঘ?”
“মনে কর দিচ্ছি। ”
“ঠিক আছে, ভালো থাকিস। রাখছি। ”
বাসায় ভালো লাগছিল না বলে আবির আজ রাসেল, রাকিব আর লিমনের সাথে দেখা করতে আসছে। ওরা তিনজনই সিগারেট খাচ্ছিলো। আবির আসতেই লিমন একটা সিগারেট আবিরের দিকে এগিয়ে দিল। আবির শক্ত কন্ঠে বলল,
“আমি সিগারেট খায় না৷”
রাসেল ফিক করে হেসে বলল,
” মজা করছিস নাকি?”
“মজা করার কি হলো?”
লিমন সিগারেট টা আরও এগিয়ে বলল,
“আমাদের সাথে ফরমালিটি করতে হবে না। নে খা”
“আমি সত্যি খাই না। ”
“কবে থেকে?”
“অনেকদিন হবে।”
“ছাড়লি কেন?”
“আমার কাদম্বিনী চাই না আমি সিগারেট খায় ”
রাকিব এবার উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,
“তুই যেন কার জন্য সিগারেট খাওয়া শুরু করছিলি?”
“যার ধরেছিলাম তারজন্যই ছেড়েছি। সমস্যা আছে কোনো?”
“নাহ। একদম ই না।”
রাকিব শুধালো,
“বাসার সবাই কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ”
রাসেল গলা উঁচু করে বলল,
” আংকেল ঠিক আছেন? ”
” আলহামদুলিল্লাহ ”
লিমন কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
” তোর এত পরিবর্তনের রহস্য কি?”
আবির গম্ভীর গলায় বলে,
” বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে হলে এসব পরিবর্তন নিজে থেকেই চলে আসে। চোখে সামনে আব্বু আম্মুর অসুস্থতা, বুকের ভেতর প্রেয়সীর গভীর অনুরক্তি সব আড়াল করতে নিজের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয় এই আর কি!”
রাসেল শীতল কণ্ঠে বলল,
“মেঘের কথা বাসায় জানাবি না?”
“কিভাবে জানাবো? আব্বু হার্ট অ্যাটাকের হাত থেকে কোনোরকমে বেঁচে ফিরেছেন৷ এ অবস্থায় আব্বুকে প্রেশার দেয়ার মতো পরিস্থিতি কোনোভাবেই তৈরি করা যাবে না। আর আমার শ্বশুর যে মানুষ, আমার মুখে নিজের মেয়ের নাম শুনলেই আগুনে ঘি ঢালার মতো চেঁতবেন।
আবির পুনরায় নিরুদ্বেগ কন্ঠে বলল,
“আজ একমাত্র ছেলে না হইতাম। আর একটা ভাই থাকতো তাহলে আমাকে কখনো কোনো কাজে পিছপা হতে হতো না৷ ”
রাকিব করুণ স্বরে শুধালো,
“ফুপ্পির বিষয়ে বাসায় কোনো সিদ্ধান্ত হয় নি?”
আবির বিরক্তি নিয়ে বলল,
“এখনও কিছুই হচ্ছে না৷ আমি আব্বু চাচ্চুকে ইন্ডাইরেক্টলি বলেছি কিন্তু তাদের দিকে থেকে তেমন রেসপন্স পাচ্ছি না। ”
“কি ভাবছিস? কি ভাবে কি করবি?”
“আমি জানি না। ”
আবির অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে বাসায় আসছে। মেঘ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বরাবরের মতো আবিরের জন্য অপেক্ষা করছিল।আবির বাসায় ঢুকতেই দেখল আলী আহমদ খান সোফায় বসে ছিলেন। আবিরকে আসতে দেখে শক্ত কন্ঠে বললেন,
“তোমার সাথে একটু দরকার আছে।”
আবির সহসা দাঁড়িয়ে পরেছে। স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“জ্বি বলুন।”
“তোমার ফুপ্পির বিষয়ে কিছু ভেবেছো?”
মুখে হাসি নিয়ে আবির বলল,
“আমি কি ভাববো?”
“তোমার ফুপ্পির বিষয়ে তুমি ভাববে না?এ বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে তোমার তো কিছু দায়িত্ব আছে। ”
আবির মলিন হেসে বলল,
“আপনারা যা সিদ্ধান্ত নিবেন তাই হবে।”
আলী আহমদ খান শান্ত স্বরে বললেন,
“ঠিক আছে। রুমে যাও তুমি।”
আজ মেঘ ভার্সিটিতে আসতেই মিষ্টি উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
“কিরে মেঘ আবির ভাইয়ের সঙ্গে কথা হলো?”
“কি কথা বলবো?”
“মিনহাজকে ব্লক করার কারণ জিজ্ঞেস করিস নি?”
মেঘ আমতা আমতা করে বলল,
“এত সাহস আমার নেই।”
“সাহস না দেখালে কিছু জানতেও পারবি না।”
মেঘের হঠাৎ ধীর কন্ঠে প্রশ্ন করল,
” ওনি আমায় ভালো না বাসলে কি করব?”
তামিম হেসে বলল,
” ওনাকে ভুলে যাবি।”
মেঘ ভ্রু কুঁচকে কঠিন স্বরে বলল,
“তোরে ভুলে যাব৷ দূর হ হা*রামী।
মিনহাজ অভিভূতের ন্যায় নিষ্পলক মেঘের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
“তোরা অনুমতি দিলে আমি একটা প্ল্যান দিতে পারি।”
বন্যা শক্ত কন্ঠে বলল,
“কিসের প্ল্যান?”
মিনহাজ ধীর স্থির কন্ঠে সবটা প্ল্যান বলেছে। মিষ্টিরা বলার সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেছে। মিষ্টিদের উত্তেজনা দেখে মেঘও মোটামুটি রাজি হয়েছে । কিন্তু বন্যা কোনো ভাবেই রাজি হচ্ছে না। মেঘকে বুঝানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু মিষ্টি, মিনহাজ আর তামিমের কথা শুনতে শুনতে বন্যার কথা মেঘ পাত্তায় দিচ্ছে না৷
রাতে খাবার টেবিলে বড়দের খাওয়া শেষে আবির, তানভির, মীম, মেঘ বসে খাবার খাচ্ছিল। তানভির উঠে যেতেই মেঘ মীমকে উদ্দেশ্য করে বলল,
” মীম,তোর সাথে আমার অনেক কথা আছে। ”
“কি কথা আপু।”
মেঘ বিড়বিড় করে বলল,
“আমার ভার্সিটির ফ্রেন্ডদের কথা বলছিলাম না তোকে। ”
“হ্যাঁ। এখন কি হয়ছে?”
আবির দীর্ঘ মনোযোগ দিয়ে মেঘের কথা শুনছে। মেঘ ঢোক গিলে ধীর কন্ঠে বলল,
“আমার এক ফ্রেন্ড মনে হয় আমাকে পছন্দ করে। তোকে ছবি দেখাব নে। খেয়ে রুমে আসিস। ”
মীম “আচ্ছা” বলে চোখ তুলতেই নজর পরে আবিরের দিকে। আবির অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে। মীম সে দৃশ্য দেখে টেবিলের নিচ দিয়ে মেঘকে চিমটি কেটে বিড়বিড় করে বলল,
“আপু চুপ করো। ভাইয়া তোমার কথা শুনে ফেলছে।”
মেঘ মীমের কথায় তেমন পাত্তা না দিয়ে আবারও বলল,
“ওরা তোর কথা খুব বলে। তোকে নিয়ে একদিন ওদের সাথে দেখা করতে যাব নে৷ ঠিক আছে? ”
ভয়ে মীমের কন্ঠ ভিজে এলো, দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“সময় হলে যাব এখন চুপ করো তুমি”
মেঘ উত্তেজিত কন্ঠে পুনরায় বলল,
” জানিস মীম, ওর নামের প্রথম অক্ষরও M”
আবির সঙ্গে সঙ্গে খাবার রেখে দাঁড়িয়ে পরেছে৷ হালিমা খান উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধালেন,
“কিরে খাবার শেষ না করে উঠে পরলি যে?”
“খেতে ইচ্ছে করছে না।”
“কেন? কি হয়েছে তোর?”
“কিছু না।” আবির রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রুমে চলে গেছে। মেঘ এবার দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে চোখ তুলে তাকালো৷ মেঘের নেত্র দ্বয় টলমল করছে, আবিরের সামনে এভাবে কথা বলা মেঘের কাছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমতুল্য। ভয়ে মেঘের হাত-পা কাঁপছিল, নিচ দিকে তাকিয়ে কোনোরকমে কথাগুলো বলেছে মেঘ। আবির কোনোদিকে না তাকিয়ে রুমে চলে গেছে। মেঘ গভীর রাত পর্যন্ত টিভি দেখেছে আর আবিরের জন্য অপেক্ষা করেছে। প্রায় ১ টা নাগাদ মেঘ রুমে গিয়ে শুয়ে পরেছে।
পরদিন সকালে আবার খাবার টেবিলে আবিরের সঙ্গে দেখা। মেঘ কোনোভাবেই আবিরের চোখের দিকে তাকায় না। কারণ আবির ভাইয়ের চোখে চোখ রাখলেই মেঘের সবকিছু গুলিয়ে যাবে।
বড়দের কথার মাঝখানে মীম কি একটা কথা বলেছে কিন্তু কেউ মীমের কথা কানে ই নেয় নি। মেঘ মীমকে উদ্দেশ্য করে উচ্চস্বরে সচেতন কন্ঠে বলল,
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৪৮
“শুন মীম, যেখানে গুরুত্ব পাবি না সেখানে কখনো কোনো কথা বলবি না।যেখানে গুরুত্ব পাবি সেখানেই নিজের মতামত দিবি।”
মেঘের বিজ্ঞের ন্যায় কথা শুনে মীম আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে।