আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৫১
লেখনীতে সালমা চৌধুরী
যাকে ঘিরে মেঘ লক্ষাধিক স্বপ্নের পাহাড় বুনেছে সেই আবির ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে সারারাত কাটিয়েছে এটা ভেবেই মেঘের দু’চোখ আনন্দে ছলছল করছে। বুকের ভেতর অজানা অনুভূতি জেগে উঠছে। আবিরের হাতের দিকে তাকিয়ে মেঘের মন অধিকতর পুলকিত হচ্ছে। মেঘ আড়চোখে নিগূঢ় দৃষ্টিতে আবিরের সুষুপ্ত ধৃষ্টতায় কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো, চোখ সরানো বা পলক ফেলার কথা বেমালুম ভুলে গেল।
অজান্তেই কাদম্বিনীর ঠোঁটে লেগে আছে ললিত হাসি। মেঘের স্বাভাবিক চেহারা মুহুর্তের মধ্যেই লজ্জায় লাল হয়ে গেছে, ক্ষণে ক্ষণে আবিরের অভিমুখে চেয়ে থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলছে, দুর্ভেদ্য আবেশে মেঘের চোখ টানছে। মনের বিরুদ্ধে নিজেকে অক্লিষ্ট রাখার নিরবধি চেষ্টা চালাচ্ছে। আচমকা মেঘের নিঃশ্বাস থমকে গেছে মনের কোণে একটা গূঢ় প্রশ্ন উদ্গত হলো। মেঘ নিজেকে নিজে প্রশ্ন করল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” আবির ভাইয়ের জ্ঞান কখন ফিরেছে? আর ওনি কি সজ্ঞানে আমায় ধরেছেন নাকি ঘুমের ঘোরে?”
মেঘ শুকনো ঢোক গিলল। হুর হুর করে বুক কাঁপছে সাথে লজ্জায় রাঙা হয়ে আছে কাদম্বিনীর উজ্জ্বল চেহারা। এভাবে আর থাকা সম্ভব হচ্ছে না। মেঘের হৃদপিণ্ডের কম্পনে আবির যেকোনো সময় সজাগ হয়ে যেতে পারে তাই মেঘ ঘুরে কাঁপা কাঁপা হাতে আবিরের হাত টা সরিয়ে কোনোরকমে উঠলো। চুল ঠিক করে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে মাথায় ওড়না দিতে দিতে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল। হাতে ফোন নেই, নেই কোনো ঘড়ি, কত বেলা হয়েছে তা বুঝার উপায়ও নেই। মেঘের দরজা খোলার শব্দে তানভির হকচকিয়ে উঠল। এসে ধীর কন্ঠে শুধালো,
“ভাইয়ার জ্ঞান ফিরেছে?”
মেঘ শান্ত স্বরে বলল,
“মনে হয় ফিরেছে। এখন ঘুমাচ্ছেন। ”
ভাই বোনের কথোপকথন শুনে রাকিবের ঘুম ভেঙে গেছে। তড়িঘড়ি করে উঠে উত্তেজিত কন্ঠে প্রশ্ন করল,
“আবির উঠেছে?”
মেঘ এপাশ ওপাশ মাথা নেড়ে বলল, “নাহ”।
মেঘ সাইড হয়ে দাঁড়াতেই রাকিব আর তানভির রুমে ঢুকলো। ওদের হালকা পাতলা কথাতে আবিরের ঘুম ভেঙে গেছে। আবির চোখ পিটপিট করে একে একে তানভির, রাকিব আর মেঘের দিকে তাকালো। সম্পূর্ণ রুমে একবার চোখ বুলিয়ে আবির পুনরায় তানভির আর রাকিবের দিকে তাকিয়েছে। রাকিব ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর মুখ করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আবির এক মুহুর্ত চেয়ে থেকে অকস্মাৎ মলিন হাসলো। আবিরের হাসি দেখে রাকিবের মেজাজ গরম হচ্ছে।ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে রাকিব মেঘকে উদ্দেশ্য করে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“মেঘ তুমি একটু বাহিরে যাও তো। ”
মেঘ সরু নেত্রে রাকিবকে দেখে সাথে সাথে তানভিরের দিকে তাকালো। তানভির চোখ দিয়ে ইশারা করতেই মেঘ চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে গেছে। রাকিব রাগী স্বরে বলল,
“তানভির দরজা টা বন্ধ কর”
রাকিবের কথা মতো তানভির তাই করল৷ রাকিব আশেপাশে তাকিয়ে হঠাৎ ই এগিয়ে গিয়ে রুমের এক কর্ণার থেকে একটা পাইপ মাথার উপর তুলে দ্রুত আসতে নিলে,
আবির চেঁচিয়ে উঠে,
“এইইইই!”
তানভির রাকিবের দিকে তাকিয়ে সহসা ছুটে গিয়ে পেট বরাবর শক্ত করে ধরে বলল,
“কি করছো তুমি!”
রাকিব রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
“ওর যে হাত আর পা টা ঠিক আছে ঐটাও ভেঙে ফেলবো। মরার যখন এত শখ তাহলে ভালো করেই মা*রি। ”
তানভির ধীর কন্ঠে রাকিবকে বলল,
“থাক বাদ দাও। এমনিতেই ভাইয়ার অবস্থা খারাপ। ”
রাকিব পাইপ হাতে নিয়ে আবিরের কাছে আসতে আসতে রাগে কটকট করে বলল,
” তোর ফা*টা মাথা আরও ফা*টিয়ে দিব?”
আবিরের ঠোঁটে এখনও হাসি লেগেই আছে। আবির মৃদু স্বরে বলল,
” তোর ইচ্ছে হলে দে ফাটিয়ে।”
রাকিব গম্ভীর মুখ করো বলল,
“আবির! তোর সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। তুই কিভাবে পারলি এমন কাজ করতে?”
আবির ভ্রু গুটিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলল,
“আমি ইচ্ছে করে করছি নাকি!”
রাকিব পুনরায় বলল,
” মেঘ কি বলছে না বলছে তুই এতেই চটে গিয়ে মর-তে চলে গেলি? তুই কি ভাবছিলি, তুই মরে গেলেই সবকিছুর সমাধান হয়ে যাবে? আমাদের আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারতি ত! মেঘ বললেই হলো! প্রয়োজনে মেঘকে বিয়ের আসর থেকে উঠিয়ে এনে হলেও তোর সাথে বিয়ে দিব। আর কোন ছেলেকে সামান্য পছন্দ করে বলাতে তুই এমন কান্ড করে বসলি! মেঘের মনে যত যেই থাকুক সবগুলোকে মে*রে সেখানে তোর বসতি স্থাপন না করলে আমিও রাকিব না।”
আবির মুচকি হেসে বলল,
” আমার মেঘ আমার ছিল, আমার আছে আর আমৃত্যু আমার ই থাকবে। ও কোনো ছেলেকে পছন্দ করা তো দূর, কোনো ছেলের দিকে ভালোভাবে তাকিয়েই দেখে না। ওর মন মস্তিষ্ক জুড়ে এই আবির ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষের অস্তিত্ব নেই। আর কোনোদিন কেউ আমার কাদম্বিনীর প্রিয় পুরুষ হতে পারবেও না। এই কনফিডেন্স আমার আছে। ”
“তাহলে মিনহাজের থেকে ফুল নিল যে?”
“ফুল নিতে দেখছিস?”
“নাহ। কিন্তু”
“ছবি যা দেখছিস সবগুলোতে মিনহাজ ওকে ফুল অফার করছে। কিন্তু আমার মেঘ সেই ফুল ছুঁয়েও দেখে নি। ”
“তারপরও ঐ ছেলের সাহস কিভাবে হলো এভাবে মেঘকে ফুল দেয়ার?”
“এটা ওদের প্ল্যান ছিল। ওরা ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করার প্ল্যান করেছিল যাতে সেটা আমার চোখে পরে। কিন্তু আমি ওখানে চলে যাওয়াতে ওরা থতমত খেয়ে ফেলছে। ”
“তুই এসব কিভাবে জানিস? মেঘ বলছে?”
“আমি আগে থেকেই সব জানি তাছাড়া মেঘও কিছুটা বলছে। ”
“হারা*মী, তুই যদি আগে থেকেই সব জানতিস তাহলে এক্সিডেন্ট করতে গেছিলি কেন?”
আবির গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল,
” আমি মেঘকে বেশি কিছুই বলতাম না৷ বরং ওদের সাথে আড্ডা দিয়ে আমি ওকে নিয়ে চলে আসতাম৷ কিন্তু ঐ ছেলের এক্সট্রা কেয়ার দেখে সঙ্গে সঙ্গে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেছিল। না বুঝেই হুট করে প্রশ্ন করে বসি, মেঘ সেই ছেলেকে পছন্দ করে কি না! আমার ১০০% এর জায়গায় ১০০০% কনফিডেন্স ছিল মেঘ না বলবে। অন্তত আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ও কোনোদিন মিথ্যা বলতে পারবে না। কিন্তু ও যখন আমার চোখে চোখ রেখে হ্যাঁ বললো তখন এক মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিলো আকাশটা বোধহয় আমার মাথায় ভেঙে পরেছে। আমি দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছিলাম না। আমি আগে থেকেই জানি এসব কিছু ওদের প্ল্যান, ওরা আমার মুখ থেকে কিছু শুনতে চাচ্ছে কিন্তু ওর “হ্যাঁ” শুনার পর নিজের উপর উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলাম। যখন বুঝতে পেরেছি এখানে থাকাটা রিস্ক তখন ই আমি সেখান থেকে চলে গেছি।”
“একটু শান্ত থাকলেই মাথাটা ঠিক হয়ে যেত। তাহলে এভাবে এক্সিডেন্ট করতে হতো না! ”
“আরে বাবা, আমি ইচ্ছেকৃত এক্সিডেন্ট করি নি। আমি যেখানে জানি ও আমার, সেখানে এক্সিডেন্ট করে ম*রতে বসা বোকামি ছাড়া কিছুই না। ”
“তো করলি কিভাবে?”
“ফাঁকা রাস্তা, মন খারাপ তাই আমি মোটামুটি ভালো স্প্রীডেই বাইক চালাচ্ছিলাম। প্রায় জনমানবশূন্য এক জায়গায় হুট করে এক পাগল বাইকের সামনে চলে আসছে। পাগলের অবস্থা তো জানিস ই, রাস্তার মাঝখানে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে। যখন বুঝতে পারছি পাশ কেটে যাওয়া কষ্টকর হবে ততক্ষণে প্রায় কাছাকাছি চলে গেছি, পাগলের আলামত দেখতে দেখতে স্প্রীড ব্রেকার খেয়াল ই করি নি আচমকা ব্রেক করাতে স্প্রীড ব্রেকারে ধাক্কা লাগছে। এমনিতেই মাথা ভর্তি দুশ্চিন্তা, ধাক্কা খাওয়ায় বাইক কন্ট্রোল করার কথা ভুলেই গেছিলাম। এরপর কি হয়ছে জানি না।”
তানভির তপ্ত স্বরে বলল,
“বড় আব্বু কাল বেশি কিছু বলে নি। আজকে তোমার খবর ই আছে।”
আবির মলিন হেসে হঠাৎ ই সূক্ষ্ণ নেত্রে তানভিরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
“তুই ওদের কিছু করিস নি তো?”
রাকিব হেসে বলল,
“বেশি কিছু করে নি। জাস্ট ২ দফায় হালকার উপর ঝাপসা আপ্যায়ন করেছে আর কি!”
আবির সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে পুনরায় শুধালো,
“রাকিব যা বলছে সত্যি? কি করছিস তুই?”
তানভির চোখ নামিয়ে মৃদুস্বরে বলল,
” যা করার তাই করেছি। তোমার তাদের নিয়ে ভাবতে হবে না।”
“এখন কোথায় আছে?”
“আছে কোনো এক জায়গায়৷ ”
“তুই বন্যার সামনে মে-রেছিস?”
“হ্যাঁ!”
“তোরে আমি কি বুঝাইলাম তানভির! আর তুই এটা কি করলি?”
“আমি এত মেপে চলতে পারবো না ভাইয়া৷ । ঐটা পাবলিক প্লেইস না হলে আর রাকিব ভাইয়ারা আমায় না আটকালে গতকাল ঐখানেই ঐ ছেলেকে খু**ন করতাম। ”
আবির শান্ত স্বরে বলল,
” যুদ্ধ হয় সমানে সমানে। ওরা যতই লাফালাফি করুক না কেন, তোর, আমার কাছে ওরা এখনও অনেক ছোট। ”
তানভির ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“ছোট হয়ে বড়দের মতো আচরণ করেছে তাই আমিও আমার রূপ দেখিয়েছি। ”
“তোর আচরণে বন্যার তোর প্রতি বিদ্বেষ না চলে আসে!”
“আসলে আসুক। আমার জীবনে আমার ভাই-বোনের সামনে বাকি সবকিছু গুরুত্বহীন। সে যদি এতটায় ম্যাচিউর হয় তাহলে আশা করি অবশ্যই বুঝবে।”
আবির টুকটাকি কথা বলে হঠাৎ ই গুরুতর কন্ঠে বলল,
” আমার জান টা বাহিরে একা আছে। তানভির দেখ তো, আমার ময়নাপাখি টা কি করছে!”
রাকিব মৃদু হেসে বলল,
“এত পিরিত দেখাতে হবে না। তোর বাসর করার ইচ্ছে ছিল আমাদের জানাতি। সম্পূর্ণ অফিস সাজিয়ে, প্রকাণ্ড আয়োজন করে তোদের বাসরের ব্যবস্থা করতাম।”
আবিরের চোখ উজ্জ্বলতায় ঝলমল করছে, মুখে লাজুক হাসি। তানভির নিঃশব্দে হেসে পা বাড়াতেই রাকিব সহসা উত্তেজিত কন্ঠে শুধালো,
“বাই দ্য ওয়ে, বাসর রাত কেমন কাটলো আবির?”
আবির ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে উদাসীন কন্ঠে বলল,
“ফুলের সুভাস ছাড়া বাসর রাতের সৌন্দর্য ফিকে মনে হচ্ছিলো। ফুল দিয়ে সাজাতে পারলি না ?”
রাকিব আবারও চেচিয়ে উঠল,
“বাঁশ কই রে। বাঁশটা আন কেউ। ”
তানভির মেঘকে ডেকে নিয়ে আসছে। মেঘ নাকের ডগা পর্যন্ত ওড়না টেনে রেখেছে৷ মেঘ রুমে আসতেই আবির আড়চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে । কিন্তু মেঘের দৃষ্টি নিচের দিকে। ঘুরে এসে কোনোরকমে আবিরের পায়ের কাছে মাথা নিচু করে বসলো। তানভির আর রাকিব নাস্তা আনতে বেড়িয়ে গেছে। রুমে শুধু আবির আর মেঘ। আবির এক দৃষ্টিতে মেঘকে দেখছে। পাতলা ওড়নার আড়ালে মেঘের কুন্ঠ অভিমুখে আবির নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে। তৎক্ষনাৎ রুমে আলী আহমদ খান সহ মালিহা খান এবং হালিমা খান ঢুকলেন। আলী আহমদ খান রাগী স্বরে বললেন,
“জ্ঞান ফিরেছে তাহলে”
আবির খানিক হাসলো আর কিছুই বলল না। আলী আহমদ খান গুরুতর কন্ঠে শুধালেন,
“তুমি কি ঠিক করেই নিয়েছো, তোমার আম্মু আর আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না?”
আবির কন্ঠ খাদে নামিয়ে শান্ত স্বরে বিড়বিড় করে বলল,
“আপনাদের শান্তির জন্য প্রয়োজনে নিজের মনকে পু*ড়িয়ে ছারখার করে দিব।”
আলী আহমদ খান ভারী কন্ঠে শুধালেন,
“তানভির কোথায়?”
“নাস্তা আনতে গেছে। ”
আলী আহমদ খান হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন,
“তোমাদের মতো বয়সে বিজনেস করে একা হাতে সংসার সামলিয়েছি। আর তোমরা? আজকে তুমি এক্সিডেন্ট করে পরে আছো, দুদিন পর তানভির এক্সিডেন্ট করবে। এই বয়সে এসেও তোমাদের জন্যই টেনশন করতে হবে নাকি?”
আবির মৃদু হেসে ভারী কন্ঠে বলল,
“এই তানভির, তুই কিন্তু কোনোভাবেই এক্সিডেন্ট করিস না। ”
তানভির “আচ্ছা” বলতেই আলী আহমদ খান পেছন ফিরে তাকালেন। তানভির রুটি কলা আরও অন্যান্য খাবার নিয়ে আসছে। মালিহা খান শীতল কণ্ঠে আবিরকে বললেন,
” সাবধানে গাড়ি চালাতে পারিস না? ”
হালিমা খান স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,
” খাবার নিয়ে আসছি। আগে খাবার খেয়ে নে।”
মেঘ নিরব দর্শকের মতো মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে। মালিহা খান আবিরের হাত মুখ ধৌয়ে দিয়েছেন। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে দেখে গেছেন। ডাক্তার চলে যাওয়ার পর মালিহা খান নিজের হাতে আবিরকে খাইয়ে দিতে লাগলেন।তানভির, রাকিব ও খাচ্ছে। হালিমা খান স্বাভাবিক কন্ঠে শুধালেন,
“মেঘ তুই খাবি না?”
“খিদা নেই। পরে খাবো।”
আবির তানভিরের দিকে তাকিয়ে ইশারা দিতেই তানভির বসা থেকে উঠে এসে স্বাভাবিক কন্ঠে মেঘকে বলল,
“হা কর”
মেঘ বলে,
“খাবো না আমি।”
“হা করতে বলছি। ”
মেঘ মাথা তুলে অল্প করে হা করলো। তানভির মেঘকে খাইয়ে নিজেও খেয়ে নিয়েছে। খাওয়া শেষ হওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে জান্নাত আর আবিরের ফুপ্পি রুমে ঢুকলো। ওনাদের দেখে সবাই আশ্চর্য নয়নে তাকিয়ে আছে। আলী আহমদ খান বোনের দিকে এক পলক তাকিয়ে ভারী কন্ঠে বললেন,
“তুই এখানে? তোদের কে খবর দিয়েছে?”
জান্নাত ধীর কন্ঠে বলল,
“আসসালামু ওয়ালাইকুম। আমার ভাইয়া আমাদের খবর দিয়েছেন।”
মাহমুদা খান কোনো কথা বললেন না । ভেতরে এসে আবিরের দিকে তাকিয়ে তপ্ত স্বরে বললেন,
“এখন শরীর কেমন?”
আবির আড়চোখে মেঘের দিকে তাকালো সহসা স্বাভাবিক কন্ঠে জবাব দিল,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ”
আলী আহমদ খান গম্ভীর কণ্ঠে শুধালেন,
“তোমার ভাইয়া কে?”
জান্নাত রাকিবের দিকে তাকিয়ে অল্প হেসে বলল,
“রাকিব ভাইয়া। ”
মালিহা খান বিস্ময় সমেত একবার রাকিবকে দেখল আবার জান্নাত কে। হুবহু চেহারার মিল না থাকলেও দুজনের চোখ দেখতে একই রকম। মালিহা খান কন্ঠ ভারী করো প্রশ্ন করলেন,
“তুমি রাকিবের কেমন বোন?”
“আপন বোন।”
আলী আহমদ খান রাকিবের দিকে তাকিয়ে প্রখর তপ্ত স্বরে শুধালেন,
“জান্নাত তোমার বোন?”
“জ্বি আংকেল। আমার একমাত্র বোন।”
হালিমা খান আর মালিহা খান শুধু মুখ চাওয়া চাওয়ি করছেন। মালিহা খান প্রশ্ন করলেন,
” তুমি রাকিবের বোন সে কথা আগে বলো নি কেন?”
“কখনো তেমন প্রয়োজন হয় নি সেজন্য আর বলা হয় নি। ”
“আবির কে চিনতা না?”
“জ্বি। মোটামুটি চিনতাম। ”
আলী আহমদ খান জান্নাতকে প্রশ্ন করলেন,
“কিন্তু তোমাকে তো তানভির বাসায় আনছিল৷ তানভিরকে তুমি কিভাবে চিনো?”
“তানভির ভাইয়ার সাথে একটা পোগ্রামে দেখা হয়ছিল।। পরিচয় দেয়ায় চিনতে পারছি। তখন কথায় কথায় ওনি মেঘের কথা বলছেন। মেঘের জন্য টিচার খোঁজছিলেন। তখন ভাবলাম মেঘকে আমিই পড়ায়, সেভাবেই মেঘকে পড়ানো শুরু। ”
হালিমা খান , মালিহা খান ও আলী আহমদ খানের একের পর এক প্রশ্নের প্রতিত্তোরে জান্নাত প্রতিবার ই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। কোনো প্রকার মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সাবলীল ভঙ্গিতে সকল উত্তর দিয়েছেন৷
আলী আহমদ খান অফিসে চলে যাবেন। সবার থেকে বিদায় নিয়ে দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার থমকে দাঁড়িয়েছেন। মাহমুদা খানের দিকে তাকিয়ে ভারী কন্ঠে বললেন,
“বাসায় আসিস।”
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৫০
জান্নাত আলী আহমদ খানের দিকে তাকাতেই আলী আহমদ খান মৃদু হেসে বললেন,
“তোমার শ্বাশুড়িকে নিয়ে আমাদের বাসায় এসো।”
“জ্বি আচ্ছা। ”