আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৫৩

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৫৩
লেখনীতে সালমা চৌধুরী

মেঘের ঘুম ভাঙতেই দেখল, ফুপ্পির নাম্বার থেকে দুটা কল, আরিফ আর জান্নাত আপুর নাম্বার থেকেও বেশ কয়েকটা কল আসছে সেই সাথে আবিরের নাম্বার থেকে প্রায় দুই ঘন্টা আগে ৩ বার কল আসছিল। আবিরের নাম্বার টা চোখে ভাসতেই মেঘের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল, কানে বাজছে দুপুরে খাবার টেবিলের কথাগুলো সেই সঙ্গে চোখের সামনে ভেসে উঠেছে বড় আব্বুর পায়ে ধরে ফুপ্পিদের কান্নার দৃশ্য।

মেঘ শুয়ে রুমের ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে আর হাবিজাবি ভাবছে, বেশ কিছুক্ষণ পর শুয়া অবস্থায় ফুপ্পিকে কল দিলো। ফুপ্পির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলল, মনের অবস্থা ভালো না বলে বেশি কথাও বললো না। আরও ঘন্টাখানেক চুপচাপ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে রইলো৷ কি ভাবছে, কেন ভাবছে তার সবটায় অজানা৷ এরমধ্যে দুএকবার রুম থেকে বেড়িয়ে বেলকনি পর্যন্ত গিয়েওছে৷ কিন্তু বাড়ির পরিবেশ বেশ নিরব, কেউ কোথাও নেই, প্রতিদিনের মতোই ড্রয়িংরুম শুধু একটা বাল্ব জ্বলছে। ড্রয়িংরুম পেরিয়ে আবিরকে দেখতে যাওয়ার সাহস ছোট্ট মেঘের হচ্ছে না৷ তাই দুবার ই রুমে ফিরে আসছে৷ আবিরের নাম্বারে একবার কলও দিয়েছিল, আবির কল রিসিভ করে নি৷ প্রায় ঘন্টাখানেক রুমে পায়চারি করার পর অবশেষে মেঘ বুকে সাহস নিয়ে আবিরের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেঘ উপরে থাকাকালীন এতবছরে আজ অবধি ভয়ে রাতের বেলা নিচে নামে নি। পানি সহ প্রয়োজনীয় সব জিনিস সন্ধ্যের আগেই রুমে নিয়ে আসে। আবিরকে দেখার জন্য মেঘ এত রাতে ভয়ে ভয়ে নিচে নামছে৷ রুমের দরজা ধাক্কা দিতেই মৃদু আলোতে আবিরের ঘুমন্ত ধৃষ্টতা ভেসে উঠল। মেঘ ধীর গতিতে রুমে প্রবেশ করল। নিস্তব্ধ আঁখিতে বেশকিছু সময় আবিরকে পরখ করল। বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসে আবিরের চুল গুলো উড়ছে, গাল ভর্তি দাঁড়ি গুলো অনেকটায় বড় হয়ে গেছে সেই সাথে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে শ্যামবর্ণের চেহারা তামাটে বর্ণ ধারণ করেছে৷ মেঘ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আচমকা বিছানার পাশে ধপ করে ফ্লোরে বসে পরলো।

মাঝরাতে নিস্তব্ধ পরিবেশে বাসার পাশে গাছের ঢালে দুটা পাখির কিচিরমিচির শব্দ ব্যতীত আর কোনো শব্দ নেই৷ অকস্মাৎ আবিরের ঘুম ভেঙে গেছে, অনুভব করে একজোড়া তুলতুলে হাত আবিরের একহাত আঁকড়ে ধরে রেখেছে, আবিরের হাতের আঙুল গুলো কোমল গাল স্পর্শ করে রেখেছে৷ আবিরের অনুভূতিরা জানান দিচ্ছে আবিরের প্রেয়সী আবিরের হাতকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে।

সবই ঠিক ছিল, কিন্তু মেঘের হঠাৎ কান্না সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে৷ প্রথম দিকে আস্তেধীরে কাঁদলেও ধীরে ধীরে মেঘ নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। মেঘের নিরবচ্ছিন্ন কান্নায় চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরা পানিতে মেঘের গালে রাখা আবিরের আঙুল গুলো ভিজে গেছে৷ মেঘের কান্নার শব্দে আবিরের বুকের ভেতর তোলপাড় চলছে। মাঝরাতে মেঘ কেন কাঁদছে, কেউ কিছু বললো কি না, আগে আবিরের কল কেন রিসিভ করল না সেসব ভেবে আবির অস্থির হয়ে যাচ্ছে। এদিকে মেঘের কান্না থামার কোনো নাম নেই৷
মেঘের হাতে থাকা আবিরের আঙুল গুলো তিরতির করে কাঁপছে, মেঘ কান্নার জন্য তা বুঝতেই পারছে না। আবির কাতর স্বরে মনে মনে বলল,

” মেঘ, তুই এভাবে কাঁদিস না প্লিজ। তোকে কিভাবে বুঝায়, তুই কাঁদলে যে আমার ভেতরটা পুড়ে ছারখার হয়ে যায়৷ তুই জানিস না, তোর চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি ঝড়লে এই আবিরের হৃদয় থেকে কত ফোঁটা র- ক্ত ঝড়ে৷ তোর কান্না দেখলে খু-* ন না করেও নিজেকে খু*-নী মনে হয়। তোর কাছে থেকেও আজ আমি বহুদূরে, তোকে ছোঁয়ার অধিকার থাকা সত্ত্বেও আজ আমি বড্ড অসহায়। ”

মেঘ আপনমনে কেঁদেই চলেছে, মাঝরাতে আবির মেঘকে কি বলবে, মেঘকে ডাকলে মেঘ অস্বস্তিতে পরে যাবে। সেসব ভেবেই আবির মেঘকে ডাকার সাহস পাচ্ছে না। মেঘ কাঁদতে কাঁদতে আবিরের হাতে অধর ছুঁয়ে দিচ্ছে, পুনরায় গালে হাত চেপে ধরে ব্যগ্র
কন্ঠে বলল,

” আবির ভাই, আপনি আমার প্রাণচঁচল্যের একমাত্র শখের পুরুষ, আমার হৃদয়ের একান্ত ব্যাকুলতা। চিত্তচাঁচল্য নয় বরং আমি আপনার প্রণয়ের পরিণীতা হতে চাই৷”
মেঘের কান্না জড়িত কন্ঠে বলা একেকটা কথা শুনে আবিরের হৃদস্পন্দন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ইচ্ছে করছে সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে কাদম্বিনীর দুচোখের পানি মুখে, মায়াবী দুচোখে চোখ রেখে অনুরক্ত কন্ঠে বলতে,
“মাহদিবা খান মেঘ, আপনিও আমার অস্তিত্বে নিবদ্ধ একমাত্র শখের নারী, আমার আত্মাকে প্রশান্ত করার অনন্য পন্থা। পৃথিবীর সব নারীকে অবহেলা করতে পারলেও মাহদিবাকে উপেক্ষা করার সাধ্যি এই আবিরের নেই। চিন্তা নেই ললনা, আপনি আমার প্রণয়ের একমাত্র পরিণীতা হবেন, শুধু সময়ের প্রতীক্ষা। ”

মেঘ অতর্কিতে আবিরের হাত ছেড়ে নিস্তরজ আঁখিতে
আবিরকে আপাদমস্তক পরখ করে, নিসাড় মাথা নিচু করে বেড়িয়ে যাচ্ছে। আবির অক্রুর দৃষ্টিতে মেঘকে দেখছে,চোখে উপচে পড়ছে প্রশান্তি। মেঘ অতি সন্তর্পণে হাঁটছে যেন কারো নজরে না পরে। ড্রয়িং রুম পার হয়ে দুটা সিঁড়ি উঠতেই পাশ থেকে ভারী পুরুষালি কন্ঠস্বর ভেসে আসলো,
“এত রাতে নিচে কি করছিস?”

মেঘ আঁতকে উঠে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখল ইকবাল খান সোফার পাশে দাঁড়ানো৷ ভয় পেয়ে তড়িঘড়ি করে মেঘ জামার উপর দিয়েই বুকে থু থু দিল। দাঁত দিয়ে জিভ কেটে, চোখ নামিয়ে মেঘ ধীরস্থির কন্ঠে আমতা আমতা করে বলল,
” পা. পানি খেতে আসছিলাম।”
ইকবাল খান গুরুভার কন্ঠে বললেন,
” অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে যা এখন।”

মেঘ ঘাড় কাত করে “আচ্ছা” বলে গুটিগুটি পায়ে উপরে উঠে গেছে।
সময় চলমান৷ মেঘ নিজের মতো ভার্সিটিতে যায়, বন্যার সাথে টুকিটাকি কথা বললেও মিনহাজ, তামিম, মিষ্টি কারো সঙ্গেই তেমন কথা বলে না,ওদের দেখলেই এড়িয়ে যায়৷ নিজের প্রতি তীব্র ক্ষোভ থেকেই মূলত মেঘের এই কাজ করা। তানভিরও নিজের কাজে ব্যস্ত, বাসায় ফিরে আবিরের সাথে টুকটাক কথা বলে খাওয়াদাওয়া করে ঘুমায়। দেখতে দেখতে ২১ দিন পেরিয়ে গেছে, আবিরের পা অনেকটায় ঠিক হয়ে গেছে৷ মোটামুটি হাঁটা চলাও করতে পারে৷ এরমধ্যে একদিন সন্ধ্যের দিকে সাকিল সাহেব আলী আহমদ খানকে কল ও দিয়েছেন। আবিরের খোঁজ খবর নেয়ার জন্য, তাছাড়া ওনারা খুব শীঘ্রই আবিরকে দেখতে আসতে চাচ্ছেন। কিন্তু আবিরের রাগ দেখে আলী আহমদ খান ডিরেক্ট নিষেধ করে দিয়েছেন। আবির কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরেই নিজের রুমে চলে আসছে। এত দিনের মধ্যে মেঘ আবিরকে দেখতে যতবারই আবিরের রুমে যায় ততবার ই মীম মেঘকে নিয়ে মজা করে, মীমের দুষ্টামির জন্য এখন, আবির রুমে একা থাকলে মেঘ লজ্জায় রুমেই যায় না।

অনেকদিন ধরে ছাদে যাওয়া হয় না, গাছ গুলোর তেমন যত্নও নেয়া হয় না। মীম আর আদি মাঝে মাঝে গাছগুলোতে পানি দেয়। আজ বিকেলের দিকে মেঘ আর মীম ছাদে গেছে, গাছগুলোর আগাছা পরিষ্কার করছে আর দু বোন নিজেদের মতো গল্প করছে৷ মীম মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলল,
” আপু সামনে ঈদ, তুমি ভাইয়াকে কিছু দিবা না?”
“একটা পাঞ্জাবিতে হ্যান্ডপ্রিন্ট করে দিব ভাবছিলাম। ”

“এটা তো খুব ভালো আইডিয়া৷ ডিজাইনের মাঝে তোমার নামটাও লিখে দিও৷ ”
“নাহ নাহ। এসব করা যাবে না। কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে৷ ”
“তোমাকে বড় করে লিখতে বলছে কে? একদম ছোট ছোট অক্ষরে লিখবা। মানুষ কি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবে নাকি?”
“আমার ভয় লাগে। আবির ভাই দেখলে খুব বকা দিবেন।”
“কে বকা দিবে? ভাইয়া?”
“হ্যাঁ”

“ভাইয়া দিবে তোমাকে বকা? এটাও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে? শুনো আপু, আর যাই বলো আমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে নিবো৷ কিন্তু ভাইয়া তোমাকে বকবে এটা আমি জীবনেও বিশ্বাস করব না। ”
মেঘ মুখ গোমড়া করে বলল,
“সত্যি ই ওনি আমাকে বকা দেন। ”
“তুমি হয়তো খেয়াল করো না তবে আমি খেয়াল করেছি, বাসার মধ্যে ভাইয়া একমাত্র তোমার সাথে কথা বলার সময় ই মাধুর্য মিশিয়ে মনোরম কন্ঠে কথা বলে, তোমাকে দেখলেই ভাইয়ার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। ”
“বলছে তোরে! ”

“আল্লাহ! বিশ্বাস করো না? তুমি আমাকে ভাইয়ার কথা বলছো পর থেকে আমি বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে খেয়াল করেছি৷ তোমার প্রতি ভাইয়ার অন্য লেবেলের টান আছে। ভাইয়াকে কিছু আনতে বললে ভাইয়া যতই ব্যস্ত থাকুক, তোমার কথা শুনা মাত্রই সব ব্যস্ততা সাইডে রেখে সাথে সাথে নিয়ে আসে৷”
মেঘ কপাল কুঁচকিয়ে বলল,
“ভাবের কথা বাদ দে৷ ”

“আমার ভাইয়ার এত কেয়ার তোমার কাছে ভাব মনে হয়? এমন করলে তোমাকে আমার ভাইয়ার বউ বানাবো না বলে দিলাম।”
“আর বউ! বাসার আর আবির ভাইয়ের যে অবস্থা, আমার ভালোবাসা কোনোদিন পূর্ণতা পাবে বলে মনে হয় না!”
“বললেই হলো। সত্যিকারে ভালোবাসা থাকলে পূর্ণতা পাবেই, ইনশাআল্লাহ। এখন তোমাকে যা বলছি তা করো, ঈদে ভাইয়াকে একটা পাঞ্জাবি গিফট সেটাতে অবশ্যই তোমার নাম থাকতে হবে। আগে আমাকে দেখিয়ে নিবা, বুঝছো? ”

“বুঝছি। কিন্তু পাঞ্জাবি কিনতে হবে তো, পাঞ্জাবির সাইজ জানি না তাছাড়া পাঞ্জাবি কিনবো কিভাবে?
“ভাইয়াকে দেখেছিলাম নিচে গেছে, তুমি এখন ভাইয়ার রুমে যাও, ভাইয়ার পাঞ্জাবি থেকে সাইজ টা দেখে আসো, আমি বাহিরে পাহারা দিব। ভাইয়া আসলেই তোমাকে ডাকবো। পরে আম্মুকে নিয়ে শপিং এ গিয়ে পাঞ্জাবি কিনে নিয়ে আসবো।”

“আচ্ছা, চল।”
আবির নিচে সোফায় বসে কফি খাচ্ছে আর ল্যাপটপে কাজ করছে, ইকবাল খান পাশের সোফায় বসে আবিরের সাথে অফিসের বিভিন্ন টপিক নিয়ে কথা বলছেন। মীম বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আবিরের দিকে নজর রাখছে, মেঘ আবিরের রুমে ঢুকে ওয়ারড্রবে পাঞ্জাবি খোঁজছে৷ আবির কাজের ফাঁকে হঠাৎ উপরে হালকা তাকাতেই মীম থতমত খেয়ে পেছনে সরে গেছে। মীমের এমন কান্ডে আবির কপাল কুঁচকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো। কিছু একটা ভেবেই আবির বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ইকবাল খান স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,

“কোথায় যাচ্ছিস?”
“আসছি একটু।”
“তাড়াতাড়ি আসিস, কাজ শেষ করতে হবে।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ আসছি এখনি ”
আবির তড়িঘড়ি করে উপরে উঠছে৷ আবিরের ভয়ে মীম আর নিচে দেখতেই পারে নি। আচমকা আবিরকে বেলকনিতে দেখে মীম আঁতকে উঠল। গলা থেকে কোনো কথায় বের হচ্ছে না, মেঘকে ডাকতেও পারছে না। আবির বড় বড় কদম এগিয়ে এসে ভারী কন্ঠে শুধালো,

“এখানে কি করছিস?”
মীম এপাশ ওপাশ মাথা নেড়ে বুঝালো,”কিছু না”
আবির ফের বলে উঠল,
” যা এখান থেকে। ”
মীম বার বার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে, আবিরের তপ্ত দৃষ্টির ভয়ে মেঘকে আর ডাকতে পারছে না। আবির পুনরায় বলল,
“কি হলো?”

মীম মাথা নিচু করে দৌড়ে চলে গেছে। আবির রুমের দরজা চাপিয়ে নিচে গিয়েছিল, এখন দরজা কিছুটা খোলা দেখেই অনুমান করতে পারছে রুমে কেউ আছে। আবির দরজা থেকে রুমে চোখ বুলালো। হঠাৎ আবিরের নজর স্থির হলো, মেঘ আবিরের রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। আবির ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে গেল সেদিকে। বেলকনিতে আবির আর মীমের কথোপকথন শুনেই মেঘ তাড়াতাড়ি পাঞ্জাবি লুকিয়ে কি করবে বুঝতে না পেরে বারান্দায় চলে গেছে। আবির গুরুতর কন্ঠে শুধালো,

” আমার রুমে কি করছিস?”
মেঘ নিশ্চুপ থেকেই আবিরের পাশ কেটে চলে যেতে নিল। আবির আবারও প্রশ্ন করল,
” আমার রুমে কেন আসছিলি? তাও আবার পাহারাদার রেখে?”
মেঘ ভয়ে ঢোক গিলে ধীর কন্ঠে বলল,
“এমনি আসছিলাম। ”
মেঘ চলে যেতে নিলেই আবির মেঘের হাত চেপে ধরে। মেঘ আতঙ্কিত নয়নে তাকিয়ে বলল,
“ছাড়ুন, যাবো।”

” রুমে কেন আসছিলি সেটা বল,তাহলে ছেড়ে দিবো।”
মেঘ আমতা আমতা করে বলল,
“আপনারা রুমে আসা কি নিষেধ? ”
“নিষেধ কেন হবে, তোর যখন ইচ্ছে রুমে আসবি কিন্তু পাহারাদার কেন বাহিরে থাকবে? কি করতে আসছিলি বল”
“চুরি করতে আসছিলাম, হয়েছে!”
আবির অন্যমনস্ক হয়ে বলল,
” আর কি চুরি করার বাকি আছে?”
“মানে?”

আবির মেঘের হাত ছেড়ে মুচকি হেসে বলল,
” আমার রুমে কি এমন জিনিস আছে যা তোর চুরি করে নিতে হয়, তোর কি লাগবে নিয়ে যা। ”
মেঘ মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
“সম্পূর্ণ আপনি টা কেই আমার লাগবে, কিভাবে নিব বলুন।”
আবির কিঞ্চিৎ হেসে বলল,
” কি হলো? কিছু খোঁজে পাচ্ছিস না?”

মেঘ কপাল গুটিয়ে রিনিঝিনি হেসে আবিরের দিকে তাকিয়ে শীতল কণ্ঠে বলল,
” আমি যা নিতে চাই তা আপনাকে দেখিয়ে নিতে পারবো না৷ ”
আবির চোখ বড় করে সম্পূর্ণ রুমে নজর বুলিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
” তাহলে কি আমি ঘুমালে নিতে পারবি?”

মেঘ ছোট করে ভেংচি কেটে বিড়বিড় করতে করতে চলে যাচ্ছে, আবির ঠোঁট কামড়ে হাসছে। মেঘ দরজা পর্যন্ত গিয়ে থমকে দাঁড়ালো। কয়েক পা পিছিয়ে দরজার পাশে দেয়ালে তাকালো। দেয়ালে একটা হাতের ছাপ দেখে মেঘের নজর স্থির হলো, সরু নেত্রে খেয়াল করল, হঠাৎ মনে পরে গেল প্রায় ২-৩ মাস আগে রুমে রঙ করার ঘটনা। ভেজা রঙে মেঘের হাতের ছাপ পরেছিল, সেই ছাপ শুকিয়েছে বহুদিন আগেই৷ দরজার আড়ালে ছিল বলে আজ পর্যন্ত মেঘের চোখে পরে নি। আজ দরজাটা চাপানো ছিল বিধায় মেঘের নজর আটকেছে। মেঘ আবিরের দিকে তাকিয়ে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,

” এই দাগ টাতে রঙ করান নি কেন?”
মেঘের কন্ঠে আবির পেছন ফিরে তাকিয়েছে, মেঘের দৃষ্টি খেয়াল করে নিজেও সেদিকে তাকালো। আবির মুখের ভঙ্গি স্বাভাবিক রেখে বলল,
” লোকের কি খেয়ে কাজ নেই, তুই নষ্ট করবি আর তারা বার বার রং করবে!”
“বার বার করবে কেন? একবার ই তো নষ্ট করেছি তাও পরে গেছিলাম বলে ।”
আবির উদাসীন কন্ঠে বলল,

” বেরঙিন জীবনে রুমে রঙ করে আর কি হবে?”
মেঘ প্রখর নেত্রে আবিরের দিকে তাকিয়ে অকস্মাৎ বলে উঠল,
” আমার কাছে রঙ আছে, আমি এখনি নিয়ে আসছি। হাতের ছাপ মুছে সুন্দর ডিজাইন করে দিব। ”
আবির বিরক্তি ভরা কন্ঠে বলল,
” যেভাবে রুমে আসছিলি সেভাবে বেড়িয়ে যা, আমার রুম যেমন আছে তেমনই থাকবে, মাতবরি করে নষ্ট করতে হবে না ”

মেঘ কন্ঠ খাদে নামিয়ে মৃদুস্বরে বলল,
“বিশ্বাস করুন নষ্ট করব না। সুন্দর লাগবে। ”
আবির রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
“মেঘ, কথা বললে কথা শুনবি না?”
“শুনবো। ”

“তাহলে যা এখান থেকে। আমার অনুমতি ব্যতীত আমার রুমের কোনো জিনিস যদি এদিকসেদিক হয়, সেই কাজ যেই করে থাকুক না কেন, তার দায়ভার কিন্তু তোর হবে। সো বি কেয়ার ফুল। ”
মেঘ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নিচ থেকে ইকবাল খান আবিরকে ডাকছেন। আবির এগিয়ে গিয়ে মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে অনুগ্র কন্ঠে বলল,
” সারারাত ভাবেন, আগামীকাল আমার রুমের দুটা দেয়াল আপনাকে ডিজাইন করে দিতে হবে। ডিজাইন ভালো না হলে…. ”

“….না হলে কি?”
“সেটা না হয় কালকেই বুঝাবো। ”
আবির রুম থেকে বেরিয়ে গেছে। মেঘ দেয়ালের হাতের ছাপের দিকে একবার তাকালো, আবার পাশের দুটা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখলো। তারপর রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা মীমের রুমে ঢুকলো। মীম বিছানায় বসে চোখ বন্ধ করে, “আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও” বলতেছে।
মেঘ মীমকে আলতো চাপড় মেরে বলল,

“আমাকে বিপদে ফেলে নিজে বাঁচাও বাঁচাও করছিস। লজ্জা লাগে না তোর?”
” লজ্জার যেমন বয়স নাই তেমনি মা-ইর খাওয়ারও বয়স নাই৷ ভাইয়া যেভাবে তাকাইছিল, ভয়েই আমার গলা শুকিয়ে গেছিল। তোমাকে কিভাবে ডাকবো! কথায় আছে, জান বাঁচানো ফরজ৷ ”
মেঘ রাগী ভাব নিয়ে বলল,

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৫২

” তুই বিপদে পড়লে আমিও বলল, জান বাঁচানো ফরজ৷ ”
মীম আহ্লাদী কন্ঠে বলল,
“আপু….. সরি”
মেঘ ভেঙচি কেটে চলে গেছে। মীম পেছন পেছন আপু আপু ডাকছে।

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৫৩(২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here