আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৫৫
লেখনীতে সালমা চৌধুরী
তানভির বন্যাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। আবির পাশে বসে ফোনে কিছু একটা করছে আর তানভিরের সাথে টুকিটাকি গল্প করছে। হুট করে আদি বলে উঠল,
“আবির ভাইয়া, তুমি আমাকে সালামি দাও নি কেনো?”
আদির কথা শুনে মীম, মেঘ দুজনেই চমকে উঠেছে। মেঘ মনে মনে ভাবছে, “আপনি আমাকে এত এত টাকা সালামি দিলেন অথচ আদিদের দিলেন না? এটা কি ঠিক হলো?”
আবির ভ্রু গুটিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” আমি নামাজে যাওয়ার আগেই তোদের সালামি কাকিয়ার কাছে রেখে গেছি। কাকিয়া ব্যস্ত তাই হয়তো মনে নেই। বাসায় গেলেই পেয়ে যাবি। তাছাড়া গতকাল তোদের রুমে ড্রেসও রেখে আসছি। দেখিস নি?”
মীম তড়িৎ বেগে বলল,
“হ্যাঁ৷ দেখেছি ড্রেস টা খুব সুন্দর হয়েছে। রাতে পড়বো।”
আদিও বলে উঠল,
“শার্ট টা রাতেই দেখেছি। থ্যাংক ইউ ভাইয়া। ”
তানভির ঠাট্টার স্বরে বলল,
“আদি তোর সালামি কত হলো?”
আদি মুখ ফুলিয়ে বলল,
” তোমাকে কেন বলবো? আমি রাতে ঘুমালে তুমি নিয়ে যাইতা?”
তানভির হেসে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“সে আমি এখনই তোর থেকে নিতে পারি। নিবো?”
আদি চিৎকার দিয়ে উঠল,
“নাহ।”
আবির মেকি স্বরে বলল,
” দূর, তানভির তোর সালামি নিয়ে কি করবে?”
আদি মুখ ফুলিয়ে বলল,
“একবার নিয়ে গেছিল।”
আবির ভ্রু কুঁচকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তানভিরের দিকে তাকালো। তানভির হেসে বলল,
“আরে ভাইয়া, ব্যাপারটা তেমন না।”
“তো কেমন?”
“তখন আদি আরও ছোট ছিল৷ আদি আমার কাছে সালামি চাইছে। তো আমি বলছি তুই যত সালামি পেয়েছিস আমি একায় ততটা দিব, আদি যেন তার সালামি আমাকে দেখায়। তারপর আদি বের করে দিল সব। তখন মজা করে আমি একবার বলছিলাম, এখন যদি তোর সালামি আমি নিয়ে যাই তাহলে কেমন হবে? বলছি না ম*রেছি, আদি কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে গড়াগড়ি শুরু করেছে। আমার পকেটে যত টাকা ছিল আমি সব দিয়ে দিয়েছি । তবুও আদির কান্না থামে না। আব্বু, বড় আব্বু, বড় আম্মু ইচ্ছে মতো আমাকে ঝাড়ছে। তবুও আদিকে থামাতে পারে নি৷ প্রায় ৩০-৪০ মিনিট মাটিতে গড়াগড়ি করছে। আমি সেদিন ই মনে মনে কানে ধরছি আর যাই করি সালামি নিয়া কোনো মজা করব না। এরপর থেকে ঈদের দিন গোসল করে রেডি হওয়ার আগেই ওদের সালামি দিয়ে দেয়, হাতে যত থাকে ততই দেয়৷ ভালোবাসা আর দেখাতে যায় না। ”
তানভিরের কথা শুনে সবাই হাসছে। ততক্ষণে বন্যাদের বাসার কাছে চলে আসছে৷ মেঘ গাড়ি থেকে নেমে বলল,
“আমি যাই, তোমরা গাড়িতেই বসো।”
মীম পিছন থেকে ডেকে বলল,
“আপু আমি তোমার সাথে আসি? ”
মেঘ আস্তে করে বলল,
“আয়।”
আদিও বলে উঠল,
“আমিও আসি?”
আবির এবার গম্ভীর কন্ঠে ধমক দিল,
“কি শুরু করছিস? মীম, আদি তোরা কেউ যাবি না৷ মেঘ তুই যাহ। ”
মেঘ ভেতরে চলে গেছে। মীম আর আদি গাড়িতেই বসে আছে৷ বন্যাদের বাসায় কলিং বেল চাপতেই বন্যার ছোট ভাই এসে দরজা খুলে দিল৷ মেঘকে দেখেই উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
“ঈদ মোবারক আপু। সালামি দিবা না?”
মেঘ হাসি মুখে একটা ৫০০ টাকার নোট বের করে দিল। আবিরের দেয়া বান্ডিল যেভাবে দিয়েছিল মেঘ সেটাকে সেভাবেই গুছিয়ে রেখে দিয়েছে। হাতে যা কিছু টাকা ছিল সেখান থেকে মীম আর আদিকে সালামি দিয়েছে। মেঘ বন্যার আব্বু আম্মুকে সালাম করে দ্রুত বন্যার রুমে চলে গেল। বন্যা একা একা সেলফি তুলছে, পড়নে বন্যার আব্বুর দেয়া একটা থ্রি-পিস। বিছানার উপর তানভিরের দেয়া দামী ড্রেসটা পড়ে আছে। বন্যা মেঘকে দেখেই এগিয়ে এসে বলল,
“ঈদ মোবারক বেবি। তুই আমাদের বাসায়? একা আসছিস?”
মেঘ মুখ বেঁকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“ঈদ মোবারক। ঈদের দিন আমাকে একা বের হতে দিবে? তোর মনে হয়? আবির ভাই, ভাইয়া, মীম, আদি সবাই আসছে। ওরা নিচে গাড়িতে। ”
“ওনাদের ভেতরে নিয়ে আসিস নি কেন? চল ওনাদের ডেকে নিয়ে আসি।”
“ওনাদের আসতে হবে না। তুই রেডি হ, তোকে নিয়ে ঘুরতে যাব।”
“আমি তোর ভাইদের সাথে কোথাও যাব না। সরি।”
মেঘ রাগী ভাব নিয়ে বলল,
“কেন আমার ভাই রা কি বাঘ নাকি ভাল্লুক যে তোকে খেয়ে ফেলবে। চল, আর ঐ ড্রেসটা পড়ে যাবি। আমি তোকে সুন্দর করে ছবি তুলে দিব, তারপর যা বলছিলাম তাই করব। ”
বন্যা কপাল গুটিয়ে বলল,
” ড্রেসের মালিককে খোঁজার আমার কোনো ইচ্ছে নেই। ড্রেস এমনেই পরে থাকুক৷ এখন নিচে চল, ওনাদের ডেকে নিয়ে আসি, আম্মু- আব্বু শুনলে বকা দিবে। চল।”
“ওনাদের ডাকতে পারি তবে একটা শর্তে, তুই যদি বলিস তুই আমাদের সাথে ঘুরতে যাবি তবেই ওনাদের ডাকবো। আর ঘুরতে গেলে অবশ্যই এই ড্রেসটা পড়ে যেতে হবে।”
“আমি এই ড্রেস পড়তে পারবো না।”
“তাহলে আমিও চলে যাচ্ছি। যাওয়ার সময় কাঁদতে কাঁদতে আংকেল আন্টিকে বিচার দিয়ে যাব যে তুই আমার সাথে খুব বাজে আচরণ করেছিস, আর তোদের বাসায় আসতে নিষেধ করেছিস। ”
বন্যা মেঘের হাত ধরে আটকে দিল। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“এই ঢংগী মেয়ে৷ আমি তোকে কখন কি বললাম?”
মেঘ দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
” তুই বলিস নি তবে আমি ঠিকই বলবো। আমি ভাইয়াদের বলে তোদের বাসা পর্যন্ত নিয়ে আসলাম আর তুই আমাদের সাথে যেতে রাজি হচ্ছিস না? তুই এত নিষ্ঠুর বন্যা?”
” হইছে হইছে আর ঢং করতে হবে না, আমি যাব। শান্তি? এখন চল ওনাদের বাসায় নিয়ে আসি। ”
মেঘ হাসিমুখে বলল,
“তোকে যেতে হবে না। তুই ঐ ড্রেসটা পড়ে তাড়াতাড়ি রেডি হ। আমি নিয়ে আসছি ওনাদের। ”
মেঘ চটজলদি নেমে আসলো। মেঘের ভাই বোন বাহিরে আছে শুনে বন্যার ছোট ভাই ওদের এগিয়ে আনতে গেল। মীম,আদি দ্রুত বেড়িয়ে গেছে। তানভির গুরুভার কন্ঠে বলল,
” ও রেডি হয়ে চলে আসলেই তো হতো। আমাদের ভেতরে যাওয়ার কি দরকার ছিল?”
আবির গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে বলল,
” তোর একমাত্র শালা তোকে নিতে আসছে, যাবি না? শ্বশুর-শ্বাশুড়ি কে সালাম করতে হবে না?”
তানভির দূর্বল কন্ঠে বলে উঠল,
” ওদের বাসায় যেতে আমার অস্বস্তি লাগে৷”
“শ্বশুর বাড়িতে গেলে সব ছেলেদেরই এমন লাগে। এসব কোনো বিষয় না। চল।”
মেঘ, মীমরা অনেকটা সামনে চলে গেছে, আবির আর তানভির পেছনে বিড়বিড় করতে করতে যাচ্ছে। বাসায় ঢুকেই সবাই বন্যার আব্বু আম্মুকে সালাম করলো৷ বন্যার বড় আপুর টুকিটাকি কথা বলে সবাই খাবার টেবিলে বসতে বলল। মেঘ বার বার বলে দিয়েছে যেন অল্প করে নাস্তা দেয়া হয়, কারণ কিছুক্ষণ আগেই ফুপ্পিদের বাসা থেকে খেয়ে আসছে তারা। সবার নাস্তা প্রায় শেষদিকে এমন সময় বন্যা রেডি হয়ে উপর থেকে নামছে। তানভিরের দেয়া খয়েরী রঙের ড্রেসটাতে বন্যাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
সাথে হিজাব পড়েছে, হাতে সিম্পল একটা পার্টস, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক আর মুখে হালকা মেকাপে বন্যাকে আজ অপরূপা লাগছে৷ হঠাৎ বন্যাকে নামতে দেখে তানভিরের গলায় খাবার আঁটকে গেছে,বিস্ময় সমেত তাকিয়ে আছে বন্যার দিকে। ঢোক গিলতে পারছেনা। তানভিরের অবস্থা বুঝতে পরে আবির তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল। তানভিরের হৃৎস্পন্দন বাহির থেকে শুনা যাচ্ছে।
পানি খেয়ে সেই যে মাথা নিচু করেছে একবারের জন্যও তাকায় নি। বন্যা নিচে এসে সবার উদ্দেশ্যে ‘ঈদ মোবারক’ বলল। মীম, মেঘ,আদি একসঙ্গে ঈদ মোবারক বলল। তানভির কোনোরকমে প্লেটের নাস্তা শেষ করেই উঠে পরেছে। এরমধ্যে সবার খাওয়া প্রায় শেষ৷ বন্যার আব্বু আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে সবাই বেড়িয়ে পরেছে, আসার সময় ওনারা সবাইকে সালামিও দিয়ে দিয়েছে।
আবির ইশারা দিতেই তানভির বন্যার ছোটভাইকে সালামি দিতে গেল। কিন্তু সে কিছুতেই নিবে না। মেঘের সাথে সে যতটা ফ্রী তানভিরের সাথে তেমন না৷ তাই সে নিতে চাচ্ছে না৷ তানভির জোরাজোরি করেই সালামি দিয়ে আসছে। তানভির বেড়িয়ে এসে বন্যার দিকে এক পলক তাকালো। সহসা দু চোখ আঁটকে গেছে। নিজে পছন্দ করে কেনা ড্রেস যখন প্রিয় জন পড়ে তখন মনে অন্য রকম প্রশান্তি কাজ করে। তানভির মুগ্ধ নয়নে বন্যার দিকে তাকিয়ে আছে৷ বুকের ভেতরের ভূকম্পন কোনোমতেই সামাল দিতে পারছে না। আবির এগিয়ে এসে বলল,
“চাবিটা দে, গাড়ি আমি চালাচ্ছি। ”
তানভিরের বুক থেকে সানগ্লাস টা খুলে তানভিরের চোখে দিয়ে বলল,
” সাবধান, সে কিন্তু তোর বোনের থেকেও বেশি চতুর, মানসম্মান ডুবাইস না। হিরো হতে এসে ভিলেন হয়ে যাইস না।”
আবিরের গাড়িতে বসে একবার পেছনে দেখে নিল। তানভির পাশের সীটে গিয়ে বসেছে, তার দৃষ্টি কোথায় কে জানে। আবির অতি সতর্কতার সহিত গাড়ি চালাচ্ছে। পেছনে মীম, মেঘ আর বন্যা নিজেদের মধ্যে গল্প করতে ব্যস্ত, মাঝে মাঝে আদিও তাতে সঙ্গ দিচ্ছে। সবাই ঘন্টাদুয়েক ঘুরাঘুরি করেছে, এই ফাঁকে মেঘ বন্যাকেও বেশ কিছু ছবি তুলে দিয়েছে। ঘুরাঘরি শেষে বন্যাদের বাসায় যাওয়ার সময় মেঘ বন্যার ছবি দেখে একটা ছবি সিলেক্ট করে দিল ফে*সবুকে পোস্ট করার জন্য। বন্যা আর মেঘ আস্তেধীরে কথা বললেও আবির সে কথা শুনে ফেলেছে। আবির সহসা ব্রেক কষল, পিছন ফিরে মেঘ আর বন্যার দিকে এক পলক দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” ফে*সবুক ছবি দেয়ার অভ্যাস ত্যাগ করো। আজকের পর ফে*সবুকে যেন কারো ছবি না দেখি৷ ”
আবিরের কথা শুনে মেঘ ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকালো। আবির দেখেও না দেখার মতো করে সামনে তাকিয়ে আবারও গাড়ি স্টার্ট দিল। মেঘ আড়চোখে আবিরকে দেখছে৷ আবির মিনহাজকে ব্লক দেয়ার পর পর মেঘের ফেসবুক আইডি থেকে মেঘের সব ছবি ডিলিট করে ফেলেছে, মেঘ বিষয়টা তখনই খেয়াল করেছে, বন্যাকেও জানিয়েছে। আবিরের জেলাসি দেখে সেদিন মেঘ আনমনে অনেকক্ষণ হেসেওছে । তবে আজকে শুধু মেঘকে বলেনি আবির বন্যাকে সহ ওয়ার্ন করেছে। আবির মেইন রোডে গাড়ি থামিয়ে তানভিরকে বলল,
” তানভির, বন্যাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আয়।”
বন্যা সঙ্গে সঙ্গে বলল,
“আমাকে এগিয়ে দিতে হবে না। আমি যেতে পারবো।”
আবির রাশভারি কন্ঠে বলল,
” জানি কিন্তু তুমি যেহেতু আমাদের সাথে বেড়িয়েছো তাই আমাদের উচিত তোমাকে বাসা পর্যন্ত পৌছে দেয়া । তানভির যা।”
বন্যা আর কথা বাড়ালো না। সবার থেকে বিদায় নিয়ে নেমে গেলো। গলির রাস্তায় তানভির আর বন্যা হাঁটছে। তানভির শান্ত স্বরে বলল,
“ঈদ মোবারক। ”
“ঈদ মোবারক। ”
কারো মুখে কোনো কথা নেই। বাসার কাছাকাছি আসতেই তানভির পকেট থেকে টাকা বের করে বন্যার দিকে এগিয়ে বলল,
“এটা তোমার সালামি, নাও।”
“আমার সালামি লাগবে না, ভাইয়া। ”
ভাইয়া ডাক শুনেই তানভির কপাল গুটিয়ে সূক্ষ্ম নেত্রে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল,
” ভাইয়া ডাকছো আর সালামি নিবা না? মেঘ, মীমও আমায় এত সুন্দর করে ডাকে না।”
তানভির বিরক্তি ভরা কন্ঠে কথা বলায় বন্যা থতমত খেল। কিছু বলার আগেই তানভির আবার জিজ্ঞেস করল,
“নিবে কি না?”
বন্যা চুপচাপ সালামি নিয়ে তানভিরের দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলল,
“সালামি নিলে সালাম করতে হয়, আপনাকে সালাম করি?”
বন্যা একটু নিচু হতেই তানভির এক লাফে কয়েক হাত পিছিয়ে গেল তৎক্ষনাৎ রাগী স্বরে বলল,
“একদম না। ”
তানভিরের এমন কান্ডে বন্যা ভ্যাবাচেকা খেল। খানিক বাদে বন্যা হাসতে হাসতে এক পা এগুতেই তানভির গাড়ির দিকে ছুটলো। বন্যা দাঁড়িয়ে থেকে একা একায় কিছুক্ষণ হাসলো, তারপর বাসার দিকে চলে গেছে। তানভির কে দৌড়ে আসতে দেখে আবির গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে তোর?”
“কিছু না।”
“বাসা পর্যন্ত দিয়ে আসছিস?”
“নাহ।”
আবির মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কল দিয়ে জিজ্ঞেস কর বাসায় পৌঁছেছে কি না”
মেঘ বন্যাকে কল দিতেই বন্যা সালামি আর সালামের ঘটনা বললো। মেঘ হাসতে হাসতে ফোন কেটে দিয়েছে। তানভিরের স্বভাব ই এমন, সালামি দেয়া দায়িত্ব তাই সকাল বেলায় ছোটদের সালামি দিয়ে দেয়। তবে কেউ তাকে সালাম করতে আসলেই সে ছুটে পালায় । আগে প্রায় সময় ই মেঘ সালাম করার জন্য তানভিরের পিছুপিছু সারা বাড়ি ছুটতো, কিন্তু এখন আর তা করে না। বন্যা জানতো না কিন্তু তানভিরের এক্সপ্রেশন দেখে সে না হেসে থাকতে পারে নি। মেঘ কল কেটে হাসতে হাসতে বলল,
“বাসায় পৌঁছেছে। ”
“হাসছিস কেনো?”
“এমনি। ”
তানভির মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
” এই কথাটাও বনুকে বলে দিতে হয়?”
আবারও আওড়ালো,
” বোনের বান্ধবীকে পটানোর আগে বোনকেই পটাতে হবে। ”
আবির তানভিরের দিকে তাকালো৷ কিছু একটা কাহিনী করেছে সেটা ঠিকই বুঝেছে আবির তবে কি করেছে সেটা বুঝতে পারছে না৷ সেসবে তেমন পাত্তা না দিয়ে বাসায় আসছে। ফ্রেশ হয়ে সবার সাথে খেতে বসেছে। পেট যতই ভরা থাকুক, যতই ঘুরাঘুরি করে আসুক না কেন, ঈদের দিন দুপুরে সবাই একসঙ্গে বসে খেতেই হবে, এটায় এই বাড়ির নিয়ম । আলী আহমদ খানরা আবিরদের জন্যই অপেক্ষা করছিল, আবিররা আসতেই খাওয়াদাওয়ার পর্ব শুরু হলো। অন্যান্য দিন বাড়ির বউ রা না বসলেও ঈদের দিন অন্ততপক্ষে সবার সাথে বসতে হয়। খাওয়া শেষে সবাই সবার মতো রেস্ট নিতে চলে গেছে।
আজ রাতে ফুপ্পিদের খান বাড়িতে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। বিকেলের পর থেকেই সেই আয়োজনে ব্যস্ত সবাই। আলী আহমদ খান আর মোজাম্মেল খান সোফায় বসে আছেন। ইকবাল খান বন্ধুদের সাথে দেখা করতে চলে গেছেন। আবির, তানভির দুজনেই বাড়িতে। ঈদের দিন তানভির সচরাচর বন্ধুদের সাথে দেখা করে না। মেঘ বিকেলের দিকে মোজাম্মেল খানের দেয়া ড্রেস টা পড়েছে। গাঢ় সবুজ রঙের গর্জিয়াছ ড্রেস, চুলে একটা স্টোনের মুকুট পড়েছে, পেছন দিকে চুলগুলো ছাড়া, একদম রানীর মতো লাগছে। আত্মীয়স্বজন বেড়াতে আসলে মেঘ মীম যথাসাধ্য কাজ করলেও আজ তারা কিছুই করছে না।
বিশেষ করে মেঘ ডাইনিং থেকে একটা চেয়ার নিয়ে ড্রয়িং রুমের মাঝ খানে রেখে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। দুহাতের কনুই অব্দি মেহেদী দেয়া, ম্যাচিং করা সবুজ কাঁচের চুড়িও পড়নে। এক হাতে একটু পর পর চুল ঠিক করছে আর মীম, আদির সাথে বকবক করছে। মেঘের খুদা লাগলে আদিকে এটা সেটা দিতে বলে কারণ সে এই ড্রেস পড়ে কোনোভাবেই রান্নাঘরে যাবে না। আবির ঘুম থেকে উঠে বারান্দা থেকে মেঘের ভাব ভঙ্গি দেখে নিঃশব্দে হাসছে, অতঃপর শান্ত স্বরে বলল,
“তোকে সারাজীবন রাজরানীর মতো যত্নে রাখার তৌফিক আল্লাহ যেন আমাকে দেন। ”
আবির নিচে আসতেই আলী আহমদ খান ধীর কন্ঠে ডাকলেন,
“আবির”
“জ্বি আব্বু ”
“তুমি কি একাউন্ট থেকে টাকা তুলেছো?”
“জ্বি”
“কেনো?”
“একটু দরকার ছিল। কিছুদিনের মধ্যে রেখে দিব।”
আলী আহমদ খান তপ্ত স্বরে বললেন,
” আমি রাখার কথা বলি নি আবির, এটা তোমার একাউন্ট তোমার যখন ইচ্ছে টাকা তুলবে। কিন্তু টাকাটা কেনো তুলেছো সেটা আমার জানা প্রয়োজন। ”
মীম আস্তে করে বলল,
“ভাইয়া, আমাদের অনেক টাকা সালামি দিয়েছে বড় আব্বু। ”
আলী আহমদ খান গুরুভার কন্ঠে বললেন,
“এখানে হাজারের কথা হচ্ছে না মা, লাখের কথা হচ্ছে। তাও ৪-৫ লাখ নয়৷ তুমি যাও এখান থেকে।”
আবির নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে। আবিরের নিস্তব্ধতা আলী আহমদ খান সহ্য করলেও মোজাম্মেল খান সহ্য করতে পারলেন না, রাগী স্বরে বললেন,
” ব্যবসায় লস খেলে সেখানে শুধু শুধু টাকা নষ্ট করো না আবির। তোমার যদি মনে হয়, তোমার পক্ষে ব্যবসা চালানো সম্ভব নয়, তবে ছেড়ে দাও। আমাদের ব্যবসাতে মনোযোগ দাও। একাউন্টে টাকা গুলো এমনি এমনি জমা হয়ে যায় না৷ তোমার আব্বুর কষ্টে জমানো টাকা এগুলো। ”
আবির দু আঙুলে কপালে হাত রেখে মেঘের দিকে তাকালো, মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
“তোকে পাওয়ার জন্য আর কত বকা আমার খেতে হবে সেটা একমাত্র আল্লাহ ই ভালো জানেন। ”
আলী আহমদ খান পুনরায় বললেন,
” দেখো আবির, তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছো। কি করলে ভালো হবে কি করলে ক্ষতি হবে সেটা তুমি খুব ভালো বুঝো। যাই করো বুঝে শুনে করবা।”
আবির অনচ্ছ হেসে বলল,
” আমি যা করি বুঝেই করি আর যা করবো তাও বুঝেই করবো, ইনশাআল্লাহ। ”
আবির রান্নাঘরের দিকে চলে গেছে।মোজাম্মেল খান রাগী স্বরে বললেন,
” ভাইজান, এই ছেলে সত্যি তোমার তো? নাকি কোথাও থেকে তুলে আনছিলা? এমন ঘাড়ত্যাড়ামি করতে আমি আজ পর্যন্ত তোমাকেও দেখি নি। ”
আলী আহমদ খান মলিন হেসে বললেন,
” তুই আবির কে রাগিয়ে দেস বলেই এমন করে ”
” আরও তুলো মাথায়, আজ নিজের একাউন্ট থেকে টাকা তুলছে, কাল তোমার একাউন্ট থেকে তুলবে। পরশু আমার একাউন্ট থেকে তুলবে। তখনও কিছু বলবা না?”
আলী আহমদ খান হেসে বললেন,
” আমার একাউন্ট থেকে তুললেও তোর একাউন্ট থেকে তোলার সাহস হবে না ”
তানভির সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনে মনে বলল,
” আব্বু, তোমার একাউন্ট থেকে টাকা নিয়ে ভাইয়া কি করবে? তুমি যার নামে টাকা জমাচ্ছো সেই তো ভাইয়ার৷ ”
রাতে ফুপ্পিরা এসে খাওয়াদাওয়া করে গেছেন৷ আগামীকাল বিকেলে রাকিবের গায়ে হলুদ। খুব বড় অনুষ্ঠান না করলেও কাছের মানুষ, আত্মীয় স্বজন রা থাকবে। জান্নাতের শ্বশুর বাড়ির সবাই আগামীকাল দুপুর দিকেই রাকিবদের বাসায় চলে যাবে। এদিকে মেঘ আর মীমকে পাঠানোর জন্য জান্নাত, আইরিন দুজনেই খুব রিকুয়েষ্ট করছে । মোজাম্মেল খান প্রথম দিকে রাজি না হলেও জান্নাতের জোরাজোরিতে বাধ্য হয়ে রাজি হয়েছেন।
আজ সকালে খাবার টেবিলে সবাই উপস্থিত হতেই মোজাম্মেল খান নীরবতা ভেঙে বললেন,
“তানভির, আবির আজ বিকেলে তোমরা বাসায় থেকো।”
আবির ভ্রু কুঁচকে বলল,
” আমাকে দুপুরের পরে রাকিবের বাসায় যেতে হবে। কেনো চাচ্চু?”
“আমার এক বন্ধু আসবে সাথে তার ছেলেও আসবে। ”
আবির স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,
“আসলে আসবে। আমাকে থাকতে হবে কেনো?”
“আসলে ওনারা মেঘকে দেখতে আসবে। যদি পছন্দ হয় তাহলে কথা আগাবে। ”
মোজাম্মেল খানের কথায় আবির যেন আকাশ থেকে পড়েছে । তানভির বসা থেকে দাঁড়িয়ে বললো,
” বনুকে দেখতে আসবে মানে? কিসের দেখাদেখি? ”
মেঘের মনের ভেতর কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়ে গেছে। আব্বু কি বলছেন, ছেলে দেখতে আসবে মানে, বিয়ে? নিরুদ্বেগ ভঙ্গিতে আবিরের দিকে চেয়ে আছে তবে আবিরের অভিব্যক্তি বুঝার উপায় নেই। বাহিরে আবির যতই শান্ত থাকার চেষ্টা করুক না কেন, রাগে আবিরের শিরা উপশিরা নীল হয়ে গেছে। চুল থেকে কানের পাশ দিয়ে ঘাম পড়ছে। আবির এক আঙুলে ঘাম মুছলো। মোজাম্মেল খান ধীর কন্ঠে বললেন,
” রফিক, আমার পুরোনো বন্ধু, অনেকবছর পর দেশে আসছে। মেঘকে দেখতে চাচ্ছে তাই বাসায় আসতে বলছি। ”
তানভির রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
” আমার বোনের কি রূপ বের হয়ছে যে ও কে দেখতে আসবে? আপনি ওনাদের কল দিয়ে আসতে নিষেধ করেন। আমার বোনকে আমি কারো সামনে যেতে দিব না। ”
আলী আহমদ খান ঠান্ডা কন্ঠে বললেন,
“তানভির, মাথা ঠান্ডা করো। ওনারা আসতে চাচ্ছে আসুক। আমরা দেখি, তাদের কথা যদি ভালো না লাগে তাহলে মেঘকে আনবোই না। ”
মেঘ আহাম্মক হয়ে বসে আছে। আবিরের দৃষ্টি প্লেটের দিকে। তানভির রাগে উল্টাপাল্টা আচরণ করলেও আবির কোনো কথা বলছে না। তানভিরের বাড়াবাড়ি বুঝতে পেরে আবির বামহাতে তানভিরের উরুতে হাত রাখলো যেন চুপ করে যায়। ইকবাল খানও তানভিরকে থামানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু তানভিরের চিল্লাচিল্লি থামার নাম নেই। সে মেঘকে কারো সামনে আসতে দিবে না মানে দিবেই না। আবিরের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে তানভিরের মেজাজ আরও তুঙ্গে উঠে গেছে, তানভির ভেবেছিল আবির তার আব্বুকে কিছু বলবে কিন্তু আবির উল্টো তানভিরকে থামতে বলছে। তানভির রাগে ভাতের প্লেট ধাক্কা মে*রে উঠে চলে যাচ্ছে। সবার দৃষ্টি তানভিরের দিকে। ইকবাল খান ভারী কন্ঠে বললেন,
“খাবার টা..! ”
তানভির রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে উপরে চলে গেছে। তিনভাই টুকিটাকি আলাপ করছে। আবির কোনোদিকে না তাকিয়ে প্লেটের খাবার শেষ করেই উঠে গেছে। উঠার সময় মেঘের চোখে চোখ পরল। মেঘের চোখ ছলছল করছে, গভীর দৃষ্টিতে আবিরকে দেখছে। হয়তো আবিরের মন বুঝার চেষ্টা করছে। আবির সহসা চোখ সরিয়ে চলে গেছে। টানা ২-৩ ঘন্টা তানভিরকে ডাকার পরও তানভির দরজা খুলছে না। এদিকে মেঘ রুমে শুয়ে শুয়ে কান্না করছে। মীম মেঘের পাশে বসে মেঘকে বুঝানোর চেষ্টা করছে। আবির ছাদে দাঁড়িয়ে আছে । দুপুরের দিকে তানভির রুম থেকে বেড়িয়ে ফোঁস ফোঁস করে সোজা ছাদে গেল৷ তানভিরকে দেখে দেখেই আবির নিঃশব্দে হেসে এগিয়ে আসলো। আবিরের হাসি দেখে তানভির রাগে কটকট করে বলল,
” তুমি আমার বোনকে বিয়ে করবা নাকি করবা না?”
আবির তানভিরকে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরে পিঠে আস্তে করে চাপড় মেরে বলল,
” এত মাথা গরম করলে কিভাবে হবে ভাই? তুই তো জানিস তোর বোনকে ছাড়া আমি চোখে ঝাপসা দেখি৷ ”
” আব্বু এসব কি শুরু করেছে? তুমি কিছু বলো নি কেন?”
” তোর বাপের চোখে আমি বহুবছরের জে*লখা*টা আ*সা*মি। আমি যাই বলতে যাব ওনি তার উল্টো মিনিং বের করবেন। তার থেকে চুপ থাকায় শ্রেয়। ”
“তারমানে বিকেলে তারা বনুকে দেখতে আসবে?”
আবির ঠোঁট বেঁকিয়ে হেসে বলল,
” বাসায় কে আসলো কে গেলো তাতে আমার মাথা ব্যথা নেই। তবে আমার সম্পত্তির দিকে নজর দিতে গেলে আগে আমার সাথে তাকে বসতে হবে।”
তানভির ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আবির পকেট থেকে ফোন বের করে তানভিরকে একটা ছবি দেখালো। তানভির ছবি দেখে মুচকি হেসে বলল,
” সাবাশ! তুমি আমার বোনের যোগ্য পাত্র।”
আবির মেকি স্বরে বলল,
” তোর বোনকে বলিস, যেন সাজুগুজু করে থাকে।”
” কার জন্য? ”
“আমার জন্য।”
তানভির ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ঠিক আছে বলল। এখন ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে আসো। নাটক দেখতে হবে। ”
“তুই যা আমি আসছি।”
আবির আর তানভির আজ সারাদিন বাসায়। তানভির সোফায় বসে ফোনে গেইম খেলছে। মেঘকে তানভির সাজার জন্য বলেছে, মেঘ সাজা তো দূর চুল এলোমেলো করে পাগলের মতো রুমে শুয়ে আছে। আবিরের উপর রাগে মেঘের গা জ্বলছে৷ কিছুক্ষণের মধ্যে আবিরও নিচে আসলো। দুই ভাই ই পাঞ্জাবি পরে একেবারে পরিপাটি হয়ে বসেছে। তানভিরের দেখাদেখি আবিরও ফোনে গেইম খেলায় মনোযোগ দিল। মোজাম্মেল খান রুম থেকে বের হতেই তানভির জিজ্ঞেস করল,
” আপনার মেহমান কখন আসবে? আমরা কতক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করছি। ”
মোজাম্মেল খান চোখ সরু করে দুজনকে দেখলো। হালিমা খানের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় কিছু জানতে চাইলো। কিন্তু ওনিও ঠিক বুঝতে পারছেন না কিছু। ইকবাল খান এসে আবিরের পাশে বসলেন। এরমধ্যে আলী আহমদ খান রেডি হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“ওনারা এখনও আসলো না?”
সবাই টেনশন করছে এদিকে আবির, তানভিরের মনোযোগ ফোনে। মালিহা খান আবিরদের কাছে এগিয়ে এসে রাগী স্বরে বললেন,
” কোথায় এগিয়ে গিয়ে তাদের নিয়ে আসবি তা না করে তোরা ঘরে বসে খেলছিস?”
আবির উদাসীন কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
” আমরা ওনাদের জন্য ঠিক কোথায় গিয়ে অপেক্ষা করবো আম্মু?”
মোজাম্মেল খান রাশভারি কন্ঠে বললেন,
“যেতে হবে না কোথাও। আমি আগে কল দিয়ে দেখি।”
তানভির ভাব নিয়ে বলল,
“ঠিক আছে। ”
মোজাম্মেল খান পর পর ৩ বার কল দেয়ার পর রিসিভ হলো। মোজাম্মেল খান মিষ্টি করে হেসে জিজ্ঞেস করলেন,
” তোমরা কখন আসবে? আমরা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি। ”
“আমরা আজ আসতে পারবো না বন্ধু। জরুরি কাজে আঁটকে গেছি। ”
“কবে আসবা তাহলে?”
“বলতে পারছি না। খুব শীঘ্রই আমেরিকা ফিরতে হবে আমাদের । তোমার সাথে পরে কথা হবে আল্লাহ হাফেজ। ”
কল কাটতেই তানভির আবিরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। আবিরের ওষ্ঠদ্বয় কিছুটা প্রশস্ত হলো। সহসা আবির স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল,
” ওনাদের আনতে কোথায় যেতে হবে? ”
মোজাম্মেল খান সন্দেহের দৃষ্টিতে আবির আর তানভিরের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের ব্যবহার খুব অদ্ভুত ঐদিকে রফিক সাহেবরাও আসবেন না। মোজাম্মেল খান কিছুক্ষণ ভেবে গুরুভার কন্ঠে বললেন,
“তোমরা যে যার কাজে যেতে পারো ”
তানভির সোফা থেকে উঠতে উঠতে মীমকে বলল,
“এই মীম, বনুকে বল তাড়াতাড়ি রেডি হতে আর তুইও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে, রাকিব ভাইয়ার গায়ে হলুদে যেতে হবে।”
আলী আহমদ খান আস্তে করে বললেন,
” রাতে থাকার দরকার নেই। পোগ্রাম শেষ হলে বাসায় চলে এসো।”
“আচ্ছা। ”
আবির কিছুক্ষণ আগে বেড়িয়েছে। প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনে রাস্তায় অপেক্ষা করছিল। তানভির রাস্তা থেকে আবিরকে নিয়ে গেছে। পেছনে মীম আর মেঘ বসা। মেঘ চোখ বন্ধ করে বসে আছে। আব্বুর প্রতি যতটা না রাগ উঠেছিল তার থেকে কয়েকগুণ বেশি রাগ আবিরের উপর। মেঘ নিজেকে নিজে প্রশ্ন করল,
” আবির ভাই কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসেন?”
রাকিবের বাসায় আসতেই রাকিব সূক্ষ্ম নেত্রে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আবির ভ্রু নাচাতেই রাকিব গুরুতর কন্ঠে বলল,
” আমার কালকে বিয়ে এটা কি তোর মাথায় ছিল?”
“থাকবে না কেন?”
“জেনে শুনে এত বড় রিস্কে আমায় পাঠিয়ে দিলি যে। আমার কখনো কোনো কাজে ভয় লাগে নি অথচ আজ ভয় লাগছে। রিয়াটার কথা খুব মনে পরছিল, আমার কিছু হলে মেয়েটা বিয়ে ছাড়ায় বিধবা হয়ে যেতো।”
আবির মুচকি হেসে বলল,
” এত সহজে তোর কিছু হতে দিব না আমি। চিন্তা করিস না। আগে চাচ্চু হবি তারপর.. ”
এমন সময় মেঘ আসছে। মেঘকে দেখে রাকিব আবিরকে প্রশ্ন করল,
“তারপর কি?”
“ম*রে যাইস।”
“বাহ! আবির বাহ! দেখেছো মেঘ তোমার আবির ভাই আমাকে ম*রে যেতে বলছে। ”
মেঘ রাশভারি কন্ঠে বলল,
” ওনি তো চান আমরা সবাই ম*রে যাই। তাহলেই ওনি মুক্তি পেয়ে যাবেন।”
মেঘের মুখে এমন কথা শুনে আবির ভ্রু যুগল নাকের গুঁড়ায় টেনে নিল। মেঘের মনের এক আকাশ অভিমান যা তার কথাতেই ফুটে উঠছে। রাকিবও স্তব্ধ হয়ে গেছে। এরমধ্যে জান্নাত এসে বলল,
“মেঘ চলো, তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দেয়। ”
“নাহ আপু, শাড়ি পড়ার মতো মন মানসিকতা আমার নেই। ”
“কেন? কি হয়ছে?”
মেঘ ঢোক গিলে আকুল কন্ঠে বলল,
” হয়তো খুব শীঘ্রই আমার বিয়ের দাওয়াত পাবে। ”
জান্নাত ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। মেঘ চোখ মুছে মীমের পাশে সোফায় গিয়ে বসলো। রাকিব জান্নাতকে ইশারা দিতেই জান্নাত ভেতরে চলে চলে গেছে। আবির সোফার কাছে গিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” মীম তুই ভেতরে যাহ।”
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৫৪(৩)
মীম সঙ্গে সঙ্গে উঠে গেছে। আবির মেঘের পাশে বসে মোলায়েম কন্ঠে বলল,
” কি হয়েছে তোর? এত অভিমান করেছিস কেন?”
মেঘের চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পরছে। মেঘ দু হাতে বার বার চোখ মুছছে। আবির আবারও জিজ্ঞেস করল,
” কথা বলবি না?”
মেঘ কাঁদতে কাঁদতে বলল,
” মেয়েদের আপন বলতে কেউ থাকে না, যদি কখনো কাউকে আপন মনে হয় তবে তার সঙ্গেই না হয় কথা বলবো। ”