আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৫৮(২)

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৫৮(২)
লেখনীতে সালমা চৌধুরী

তানভিরের গতিবিধি দেখে রাকিব থ হয়ে গেছে,চা বিক্রেতা মামাও আঁতকে উঠেছেন। আশেপাশের কয়েকজন বিস্ময় সমেত তাকিয়ে আছে। আবির চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে মিটিমিটি হাসছে। রাকিব ঢোক গিলে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তানভির বাজখাঁই কন্ঠে আবারও বলে উঠল,

” Don’t say anything. I don’t want to hear anything from your mouth. যদি তোর মুখ থেকে একটা শব্দ বের হয় তবে তোর বাপ এখানে এসে শুধু তোর লা**শ টায় পাবে।”
রাকিব নিষ্পলক দৃষ্টিতে তানভিরের ক্রোধিত চেহারার পানে চেয়ে আছে। তানভিরের চোখে মুখে হাসি উপচে পড়ছে তবুও নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছে। রাসেল অবাক চোখে সে-সব দেখছে। অকস্মাৎ রাকিব হাসতে শুরু করলো, তানভির তখনও রাগী লুক করে চেয়ে আছে। আবির গুরুভার কন্ঠে বলল,
” তোর নাটক দেখানোর জন্যই জোর করে আমায় নিয়ে আসছিস, তাই না?”
রাকিব হাসতে হাসতে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“চিন্তা করিস না, সেরা অভিনেতার পুরস্কার এবার তুই ই পাবি।”
ওদের হাসি দেখে তানভির নিজের হাসি আঁটকে রাখতে পারলো না। হাসতে হাসতে রাকিবের মাথা থেকে হাত সরিয়ে, চেয়ার থেকে পা নামিয়ে টিস্যু দিয়ে চেয়ার টা মুছে বসলো। শুকনো গলায় ঢোক গিলে আহত স্বরে বলল,
” ইসস, থামালে কেন আমাকে?”
রাকিব তখনও হেসেই যাচ্ছে। হাসি কিছুটা কমিয়ে বলল,
“পেছনে তাকিয়ে দেখ, মানুষ যেভাবে তোকে দেখছে মনে হচ্ছে পুলিশ আসতে বেশি দেরি নেই। ”
তানভির অকস্মাৎ পেছন ফিরে তাকালো। প্রায় ১৫-২০ জন লোক দাঁড়ানো, দৃষ্টিতে আতঙ্ক । তানভির থতমত খেয়ে বলল,

” এ ভাই, আমি কিছু করি নাই।”
লোকজন এখনও নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে। তানভির ভ্রু কুঁচকে উষ্ণ স্বরে বলল,
” বিশ্বাস করুন আমি কিছু করি নি। দেখুন, আমার হাতে কিচ্ছু নাই।”
আবির আর রাকিব হাসতে হাসতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে। চা বিক্রেতা মামা মৃদুস্বরে বললেন,
“আরে কোনো সমস্যা নাই। ওরা সবাই ভাই ভাই, এমনিতেই মজা করছে। আপনারা যান।”
আস্তে আস্তে মানুষ চলে যাচ্ছে, যেতে যেতেও বার বার তানভিরকে দেখছে৷ কয়েকজন এখনও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তানভির তাদের দেখে বিড়বিড় করে বলল,

” আমাকে দেখেই এত ভয় পাচ্ছে ভাবছি ভাইয়াকে দেখলে তাদের কি হতো!”
রাসেল চোখ মুখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
” আবির কি আজ নিজের রূপ দেখিয়েই ফেলছে? মিনহাজদের ঘটনায় আমি কত কষ্টে আবিরকে আটকাইছিলাম তারপরও পারলাম না। সেই তো গিয়ে এক্সিডেন্ট করলো। ”
রাকিব শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল,
“আবির কি এভাবেই হুমকি দিছিলো, তানভির?”
তানভির মেকি স্বরে বলল,
“দূর! এটা তো শুধু ট্রেইলার ছিল।”

রাকিব আর রাসেল বিস্ময়কর দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আবির স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
” আমাকে এভাবে দেখার কি আছে? ”
“দেখছি তুই ঠিকঠাক আছিস কি না! ”
“আমার আবার কি হবে?”
“নাহ। কিছু না। তা এভাবে আর কতদিন?”
“জানি না।”
রাকিব ঠাট্টা কন্ঠে বলল,
” তোদের জন্য প্রতিনিয়ত আমার সংসারে ঝগড়া হয় ”
আবির ভ্রু কুঁচকে বলল,
” আমরা কি করলাম?”

“তুই কি করিস নাই। মেঘকে তুই ইচ্ছে করে কষ্ট দিচ্ছিস, মেঘের ভালোবাসা বুঝতেছিস না। সেদিন তো রিয়া রাগে বলতাছে মেঘকে তার কোন কাজিনের বউ করে নিয়ে যাবে।”
আবির অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” রাকিব তোর বউকে সামলে রাখিস। উল্টাপাল্টা কথা বললে তোর বউকে মে* রে তোকে বিপত্নীক করে ফেলবো।”
রাকিব মৃদুস্বরে বলল,
“এমন করিস না ভাই। আমার একটায় বউ।”
তানভির স্ব শব্দে হেসে বলল,

” তোমাদের তো একটা হলেও আছে অন্তত বলতে পারো, সে আমার। এদিকে আমার যে একটাও নেই।”
আবির গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” থাকবে কিভাবে নির্বোধের মতো কোথাকার কোন মেয়ের প্রস্তাবে রাজি হওয়ার সময় মনে ছিল না? খোঁজ খবর না নিয়ে ধুম করে প্রেমে পড়ে গেছে৷ আসছে আমার প্রেমিক পুরুষ। ”
তানভির মন খারাপ করে বলল,
” তখন না হয় আমি নির্বোধ ছিলাম। এখন তো বোধ হয়েছে আমার৷ আর ঠিকঠাক কাউকে পছন্দও করেছি। তাহলে তাকে কেন পাচ্ছি না?”
আবির শক্ত কন্ঠে বলল,

“নামাজ পড়িস কয় ওয়াক্ত? আল্লাহ র কাছে কতবার তাকে চাস?”
“মাঝে মাঝে চাই।”
“তাহলে আর কি, মাঝে মাঝেই আসবে।”
তানভির কপাল গুটিয়ে ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো। আবির ভারী কন্ঠে বলল,
” দেখ তানভির, তুই ফজর থেকে আমার সাথে নামাজে যাবি। কাল থেকে যদি এক ওয়াক্ত নামাজ মিস করিস তাহলে তোর না হওয়া প্রেমিকার কাছে তোর নামে অপপ্রচার করবো।”
তানভির নিরেট কন্ঠে বলল,
“কি?”
আবির খানিক হেসে বলল,

“তাছাড়া আমি আমার শ্বশুর আব্বাকে কথা দিয়েছি। সেই কথা তো আমার রাখতেই হবে। প্রয়োজনে তোকে কানে ধরে নিয়ে যেতেও আমার কোনো সমস্যা নেই। ”
তানভির ঠাট্টার স্বরে বলল,
” বাহ! শ্বশুর কে পটানোর ধান্দা নাকি?”
আবির নিঃশব্দে হাসলো। রাকিব তানভিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ঐ খানের ঝামেলা সমাধান হয়েছে? নাকি বেঁধে রেখে আসছিস?”
“ভাইয়া গেলে বাঁধার প্রয়োজন পড়ে না। সবকিছু একদম সমাধান করেই আসছি৷ ”
রাসেল বলল,
” ঝামেলা কি বেশি হয়ছিল?”

“তোমরা তো ভাইয়াকে চিনোই। বনুর ব্যাপারে সামান্যতম বিষয়েই যে পরিমাণ ক্ষিপ্ত হয় সেখানে বনুর বিয়ের বিষয় উঠে গেছে। কি হতে পারে ভাবো! সিচুয়েশন এতই খারাপ হয়ে গেছিলো যে হয় এসপার নয় উসপার হয়েই যেতো। তখন ছেলের বাবা আসছে, ঐ অবস্থায় ছেলেকে বাঁচাতে ডিরেক্ট ভাইয়ার পায়ে ধরতে ফেলতেছিল। তারপর তাড়াতাড়ি সরিয়ে সবকিছু মোটামুটি নরমাল করেছি এমন সময় আব্বু কল দিয়েছে। তখন আর কি, ভাইয়া যা যা শিখিয়ে দিয়েছে ওনিও তাই তাই বলছে৷ এইসবই। ”
রাকিব তপ্ত স্বরে বলল,

” আমাকে একটা কল দিতে পারতি। ”
” আমি নিজেও জানতাম না। ভাইয়া আমায় ঠিকানা দিয়ে শুধু আসতে বলেছে।”
আবির ঠান্ডা কন্ঠে বলল,
“সেসব কথা বাদ দে। এখন বল কাজটা শেষ হয়েছে?”
রাকিব ধীর কন্ঠে বলল,
“আমি যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছি তুই রাতে সময় করে একটু দেখে নিস,প্লিজ।”
“আচ্ছা। ”

ওরা চারজন বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়েছে । তবে আজ বেশিরভাগ আলোচনা হয়েছে রাকিবের বিবাহিত জীবন নিয়ে। ঘন্টাখানেক পর আবিররা বাসার উদ্দেশ্যে চলে গেছে।
আলী আহমদ খান নিজের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরেই মোজাম্মেল খানকে ডেকেছেন। মোজাম্মেল খান আসতেই জিজ্ঞেস করলেন,
“ওনারা আসছিলেন?”
“নাহ ভাইজান।”
“আসেনি কেনো?”
“সঠিক জানি না তবে বলেছেন ছেলের অন্য মেয়েকে পছন্দ। ”

“তাহলে আর কি, আপাতত ছেলে দেখা বন্ধ করে কাজে মনোযোগ দে। সামনে ঈদ আসতে চললো।”
“এবারের ঈদে আমি কিছু করতে পারবো না। যা করার সব আবির আর তানভির করবে।”
আলী আহমদ খান চিন্তিত কন্ঠে শুধালেন,
“ওরা কি পারবে?”
“পারবে না কেনো? বড় হয়েছে দায়িত্ব নিতে হবে না?”
‘আচ্ছা বলে দেখিস। কিন্তু আপাতত ছেলে দেখা বন্ধ রাখ। ”
মোজাম্মেল খান গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

“ঠিক আছে, রাখলাম বন্ধ। কিন্তু ভালো ছেলে পেলে অবশ্যই বাসায় নিয়ে আসবো।”
“আগে দেখ, ভালো ছেলে পাস কি না।”
মোজাম্মেল খান রাশভারি কন্ঠে শুধালেন,
” তুমি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছো ভাইজান? ”
আলী আহমদ খান মেকি স্বরে বললেন,
” ঠাট্টা করবো না তো কি করবো? এই বলিস ছেলে ভালো, পরিবার ভালো অথচ ছেলে বাসা পর্যন্ত আসেই না৷ আমি কিভাবে বুঝবো ভালো নাকি খারাপ?”
মোজাম্মেল খান প্রখর তপ্ত স্বরে বললেন,

” ঠিক আছে, এর পর আমি গিয়ে ছেলেকে বাসায় নিয়ে আসবো।”
আলী আহমদ খান উদাসীন কন্ঠে বললেন,
“আচ্ছা। আসলে আমাকে খবর দিস। ”

এদিকে মেঘ একটু পর পর বেলকনিতে যাচ্ছে, আবিরের জন্য অপেক্ষা করছে। হঠাৎ বাইকের শব্দ শুনতেই বেলকনিতে ছুটলো। তানভিরের পেছনে আবির বসা, আবিরকে দেখেই মেঘের মুখে হাসি ফুটলো। আবির রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়েই বিছানায় ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। প্রায় ১৫-২০ মিনিট পর মেঘ আসছে। ভেতরে না ঢুকে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আবিরকে দেখছে। আবির পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে, হঠাৎ নিজের ফোন নিতে হাত বাড়াতেই মেঘকে নজরে পড়লো। মেঘের চোখে মুখে প্রশান্তির হাসি, আবেশিত দৃষ্টিতে আবিরকে দেখছে। আবির মেঘকে আপাদমস্তক দেখে উষ্ণ স্বরে বলল,

“কি ব্যাপার ম্যাম, বাহিরে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? রুমে আসার জন্য কি আপনাকে আলাদাভাবে আমন্ত্রণ জানাতে হবে?”
মেঘ মুচকি হাসলো৷ উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করল,
” আজকের ছেলে টা কেমন ছিল?”
আবির নিঃশব্দে হেসে বলল,
” আপনি কেমন আশা করেছিলেন?”
“রাজপুত্রের মতো।”
আবিরের আঁখি যুগল খানিক প্রশস্ত হলো৷ সহসা ঠোঁটের কোণে সহসা হাসি ফুটে উঠেছে। অতঃপর আবির স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,

” রুমে আসুন, ম্যাম। ”
“নাহ। আপনি কাজ করুন।”
আবির ল্যাপটপের দিকে একপলক তাকিয়ে চাপা স্বরে বলল,
” রাত অনেক হয়েছে, ঘুমাতে যান।”
মেঘ শান্ত স্বরে বলল,
“ঘুম আসতেছে না।”
আবির অকস্মাৎ ভ্রু কুঁচকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
“কেনো?”

আবিরের অভিপ্রায় বুঝতে পেরে ঠোঁটে হাসি রেখে মেঘ অত্যন্ত গুরুতর কন্ঠে জবাব দিল,
” হবু জামাই টাকে খুব মিস করছি। ”
আবির সঙ্গে সঙ্গে ল্যাপটপ বিছানায় ফেলে দাঁড়িয়ে হুঙ্কার দিয়ে উঠল,
“কি?”
মেঘ স্ব শব্দে হেসে এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেছে। আবির এগিয়ে গিয়ে রুমের দরজায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। মেঘের করা ছোট ছোট দুষ্টামি গুলো আবিরের বরাবর ই খুব প্রিয়৷ আবির রুমে এসে আবারও কাজে মনোযোগ দিল। ঘন্টাখানেক পর মেঘের নাম্বার থেকে একটা মেসেজ আসছে,

” Miss You
অনেকটা নিচে লেখা হবু জামাই। ”
আবির মেসেজ টা দেখে আবারও হাসলো। ঘড়িতে তখন ১২ টার উপরে বাজে। আবির রিপ্লাই দিল,
” ঘুম না আসলে ছাদে চলুন তাঁনাদের সাথে আড্ডা দিয়ে আসি।”
দুমিনিট বাদেই মেঘ মেসেজ দিল,
” আমি ছাদেই আছি।”

আবির এক লাফে বিছানা থেকে নেমে দ্রুত দৌড়ে ছাদে গেল। তাঁনাদের প্রতি মেঘের এক আকাশ সমান ভয়, যার জন্য সন্ধ্যার পরে আবিরের রুমটাও পার হয় না। আবিরের উপর রাগ করে একদিন রাতে ছাদে এসে বৃষ্টিতে ভিজেছিল আর আজ দ্বিতীয় দিন। আবির ছাদে আসতেই মেঘ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” আমি কি আপনাকে বিরক্ত করেছি?”
মেঘের মাথা থেকে পরে যাওয়া ওড়নাটা আবির দুহাতে আবারও মাথায় তুলে দিল। লোকে বলে রাত বিরাতে ছাদে তাঁনারা ঘুরাফেরা করে৷ তাঁনাদের নজর যেন মেঘের উপর না পড়ে সেই ভয়েই আবির মেঘের কপাল পর্যন্ত ওড়না টেনে দিয়েছে।

চিরচেনা গায়ের গন্ধ নাসারন্ধ্রে প্রবেশ মাত্রই মেঘের অন্তঃস্থলে শিহরণ জাগে। মৃদু আলোতে মেঘের দিকে তাকিয়ে আবির মোলায়েম কন্ঠে বলল,
” মাঝে মাঝে বিরক্ত কি জিনিস বুঝতেই পারি না৷ ”
মেঘ নিজেকে সামলে উত্তেজিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“ঐ ছেলেটার সাথে দেখা করেছিলেন আপনি? ”
আবির কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
“ঐ ছেলের ব্যাপারে কথা বলার জন্য আমার কাছে কোনো সময় নেই। চলে যাচ্ছি আমি।”
আবির ঘুরতেই মেঘ আবিরের হাত চেপে ধরলো। আবির আড়চোখে তাকাতেই মেঘ সঙ্গে সঙ্গে হাত ছেড়ে ধীর কন্ঠে বলল,

” আপনি বলেছিলেন তাঁনাদের সাথে গল্প করবেন।”
আবির মনে মনে আওড়াল,
“আমার যে আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিল। তাঁনারা তো বাহানা মাত্র। ”
মেঘ আর আবির মুখোমুখি দুটা সিঙ্গেল সোফায় বসা। কারো মুখেই কোনো কথা নেই। মেঘ নীরবে বসে নিজের হৃদয়ের প্রবল ধুকপুকানি সহ্য করছে, ক্ষণে ক্ষণে আবিরের দিকে তাকাচ্ছে তবে আবিরের নিগূঢ় দৃষ্টি দেখে স্থির থাকতে পারছে না। কথা বলতে গিয়ে বার বার কথা গিলছে৷ ধীরে ধীরে শরীর ঘামতে শুরু করেছে। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সামলে মেঘ আচমকা ডাকলো,

” আবির ভাই…”
সুপরিচিত কন্ঠস্বরের চিরচেনা জবাব,
“হুমমমমমমম”
আবিরের মোহমায়ায় জড়ানো মেঘ বিমোহিত নয়নে আবিরকে দেখে ঢোক গিলে উষ্ণ স্বরে জানতে চাইলো,
” আব্বু এমন করছেন কেনো?”
মেঘের আকুল কন্ঠে বলা কথাটায় আবির নড়েচড়ে বসলো। ধীর কন্ঠে বলল,
” জানি না। ”
“আপনি এভাবে আর কতদিন আমাকে বাঁচাবেন?”
“জানি না।”

মেঘ একটু রাগী স্বরে বলল,
” আপনি কি কিছুই জানেন না?”
আবির মেঘের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলল,
“তোর কাছে একটা জিনিস চাইবো। দিবি?”
ওমনি মেঘের হৃৎস্পন্দন বাড়তে শুরু করেছে। আবিরের আকুল আবেদনে মেঘের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। মেঘ তপ্ত স্বরে বলল,
” কি চান?”
” সাহস। ”

আবিরের কথা শুনে মেঘ আনমনেই হেসে ফেলল। লজ্জায় চিবুক খানিক নামিয়ে বলল,
“আপনি আমার কাছে সাহস চাচ্ছেন? ”
আবির ঢোক গিলে শান্ত স্বরে বলল,
” হ্যাঁ চাইছি৷ ”
“কেনো?”
“নিজের করা ভুলগুলো প্রতিনিয়ত তাড়া করে আমায়, জানি না কখন কি হবে। যদি পারিস একটু সাহায্য করিস৷ ”
“কিসের ভুল? কি করেছেন আপনি? কিসের সাহায্য চাইছেন?”

আবিরের শাণিত চাহনি মেঘের হৃদয়ের তোলপাড় আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আবিরের কথার মানে বুঝতে পারছে না। বুকটা ধড়াস ধড়াস করে কাঁপছে। মেঘ প্রখর নেত্রে দীর্ঘ সময় আবিরকে নিরীক্ষণ করলো, একবারের জন্য পল্লব ফেললো না । আবির দু’হাতে নিজের মুখ ঢেকে বসে আছে। ভেতরে ভেতরে কাঁদছে এটা বুঝতে পেরেই মেঘ তড়িৎ বেগে আবিরের কাছে এগিয়ে গেলো। আবিরের মাথায় হাত রেখে উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধালো,
“আবির ভাই, কি হয়েছে আপনার?”

মেঘের স্পর্শ পেয়ে আবিরের ভেতরের কান্না কিছুটা প্রকাশিত হলো। আবিরের কান্না দেখে মেঘের রাকিবের গায়ে হলুদের রাতের কথা মনে পড়ে গেছে।
মেঘ আর্তনাদ করে উঠলো,
“আপনি কাঁদছেন কেনো? কি হয়েছে বলুন আমায়, প্লিজ।”
“প্লিজ বলুন।”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৫৮

আবির হঠাৎ ই মেঘের হাতটা শক্ত করে ধরলো৷ আকস্মিক ঘটনায় মেঘের শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠেছে। ক্রন্দনরত অবস্থায় আবির কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
“I am Sorry, Megh.
I am really sorry.”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৫৯