আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৬৬

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৬৬
লেখনীতে সালমা চৌধুরী

মেঘ খানিক চুপ থেকে সন্ধিহান কন্ঠে বলে উঠল,
“মালা আপুর সাথে কত রাত আনলিমিটেড কথা বলেছেন বলতে পারবেন? মালা আপুর মতো আর কত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছেন?”
আবির গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“রাতভর আনলিমিটেড কথা তাও আবার মালার সাথে? আল্লাহ কোথায় আছো? আমায় উঠায় নেও। এই অবিশ্বাসের দুনিয়ায় আমি আর থাকতে চাই না।”

” ঢং করতেছেন কেনো?বলেন নি কথা? অস্বীকার করতে পারবেন?”
“হ্যাঁ বলেছি। তবে শুধুমাত্র মামা,মামি আর মাইশা আপুর সাথে। যেহেতু ফোন মালার ছিল তাই রিসিভ করলে Hi/ hello এটুকু কথায় হতো। এমনকি এই মালার যন্ত্রণায় রাতের বেলা ফোন বন্ধ করে ঘুমাইতাম। বিশ্বাস না হলে বাসার সবাইকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে নতুন ফোনও নিয়েছিলাম এটা শুধুমাত্র তানভির জানতো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আপনি কি বলতে চাচ্ছেন? আপনি নিষ্পাপ? দুধে ধৌয়া তুলসীপাতা?”
আবির মৃদুস্বরে বলল,
“একদম ই না। আমি নচ্ছার, বদমাশ, ধৃষ্ট, লুচ্চা অথবা লম্পট তবে সেটা শুধুমাত্র একজনের জন্য। সে ব্যতীত পৃথিবীর কেউ আমার দিকে আঙুল তুলে বলতে পারবে না আমি তার দিকে কুনজর দিয়েছি কিংবা তার সাথে বেহুদা কার্যকলাপ করেছি।”

“কে সে?”
” কেনো বলবো? কোন এক বৃষ্টিস্নাত রাতে কেউ একজন আমাকে বলেছিল ‘আপনি যা বলবেন, যে অবস্থাতেই বলবেন আমি সাথে সাথে বিশ্বাস করে ফেলবো৷’ তার বিশ্বাস এতটায় ঠুনকো যে কেউ কিছু বললেই তার বিশ্বাসের ঘরের বাতি নিভে যায়। তাকে আমি আমার মনের কথা কিভাবে বলবো? সে বরং তার মনের ঘরে অবিশ্বাসই পুষতে থাকুক।”
মেঘ আশাহত কন্ঠে বলল,

” আচ্ছা সরি।”
“আজ সরি বলছেন দু’দিন পর ভুলে যাবেন। দেখা গেল আজ থেকে তিন মাস পর কেউ একজন এসে বলল সে দু মাসের প্রেগন্যান্ট আর তার বাচ্চার বাবা আবির। আপনিও নাচতে নাচতে সে কথা বিশ্বাস করে ফেলবেন। অথচ আবির চারমাস যাবৎ দেশের বাহিরে৷”
” আমি এতটাও নির্বোধ নয়।”
“তা ঠিক কতটুকু চতুর আপনি? আপনাকে রাগানোর জন্য কেউ ইচ্ছেকৃত আজেবাজে কথা বলছে আর আপনি সবকিছু বুঝতে পেরেও রাগ করে বসে আছেন৷ বাহ!
একটা সময় পর্যন্ত মালা আমাকে খুব জ্বালিয়েছে এটা আমি অস্বীকার করছি না। কিন্তু গত ছয়মাসের উপরে মালার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ ই হয় নি৷ এখন বিশ্বাস করা না করা আপনার উপর৷ ”

“বললাম তো সরি৷”
“ঠিক আছে৷ এখন খেতে যান।”
“আপনি খেয়েছেন?”
“না খাবো।”
“আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ।”
“আল্লাহ হাফেজ।”

দিন কাটছে দ্রুতগতিতে। প্রত্যেকে নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। আবির না থাকায় অফিসের কাজের চাপ আলী আহমদ খানকে একা সামলাতে হচ্ছে। মোজাম্মেল খানকে ঢাকা আর রাজশাহীতে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। তানভির নিজেও প্রচুর ব্যস্ত হয়ে গেছে। পুরোদমে পরীক্ষার প্রিপারেশন নিচ্ছে সাথে আবিরের অফিসের কিছু কাজকর্মও সামলাতে হচ্ছে। তবে মেঘ একদম রিলাক্সে আছে। সকালবেলা আবিরের কলে ই ঘুম ভাঙে তার।

টুকটাক কথা বলে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়েই পড়তে বসে। সারাদিন ভার্সিটি, ঘুরাঘুরির ফাঁকেও আবিরকে মেসেজের পর মেসেজ করে। আবিরও যথাসম্ভব মেঘের মেসেজের রিপ্লাই দেয়ার চেষ্টা করে। সারাক্ষণ মেসেজে আর অডিও কলে কথা বললেও কেউ কাউকে ভিডিও কল দেয় না। সন্ধ্যায় বাসার সবার সাথে ভিডিও কলে কথা বললেও মেঘের সাথে তেমন কথা হয় না। মেসেজে করা দুষ্টামির জন্য মেঘ লজ্জায় ভিডিও কলে আবিরের দিকে তাকাতেই পারে না অন্যদিকে আবির কথা বলতে গেলে তুই, তুমি আর আপনি মিক্সড করে ফেলে। আশেপাশে মা -কাকিয়া, মীম, আদি থাকে মাঝে মাঝে আলী আহমদ খানও থাকেন। সবার সামনে এভাবে কথা আঁটকে যাওয়া, মেঘের লাজুক চেহারা দেখে নিজেকে সংযত রাখতে না পারা সবকিছুর জন্য ভিডিও কলে মেঘের সঙ্গে কথা বলতেই চায় না।

মাস খানেক কেটে গেছে। তানভিরের ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা চলছে। আজও পরীক্ষা আছে তাই সময়মতো পরীক্ষা দিতে গেছে। মীমরা কেউ বাসায় নেই। সারাদিন একা একা কিছুই ভালো লাগছে না মেঘের। আবিরের সঙ্গে দুপুরেই কথা হয়েছে, একটু পর মিটিং আছে বলে ঠিকমতো কথাও বলতে পারে নি। মেঘ ফোন হাতে নিয়ে নিচে যাচ্ছিলো, তানভিরের রুম পর্যন্ত এসে হঠাৎ ই থেমে গেছে। রুমের দরজাটা খোলা৷ মেঘ দরজা থেকে রুমে উঁকি দিতেই দেখল,
রুম এলোমেলো হয়ে আছে। সচরাচর মেঘ তানভিরের রুমে যায় ই না, রুম গুছানোর তো প্রশ্ন ই আসে না। রুমের বেহাল অবস্থা দেখে নিজের ই ইচ্ছে হলো রুমটা গুছিয়ে দেয়ার।

টেবিল আর বিছানায় বই খাতার ছড়াছড়ি। গতকালের ধৌয়া শার্টগুলোও এমনিই পড়ে আছে। মেঘ গুন গুন করে গান গাইতেছে আর একটা একটা করে শার্ট ইস্ত্রি করছে। প্রায় ঘন্টা দুয়েক সময় নিয়ে সবকিছু গুছিয়ে শার্টগুলো ওয়ারড্রবে রাখতে গিয়ে দেখল ওয়ারড্রবের অবস্থা আরও খারাপ। শার্ট, প্যান্ট আর টিশার্ট যাচ্ছেতাই অবস্থায় ফেলে রেখেছে।

এ পর্যায়ে এসে মেঘের রাগ উঠে গেছে। একটা মানুষ এতটা অযত্নশীল হয় কেমন করে। মেঘ রাগে গজগজ করতে করতে ওয়ারড্রব গোছাচ্ছে। আচমকা একটা ক্যাটালগ দেখে মেঘ থমকে গেল। মেয়েদের ড্রেসের ক্যাটালগ, হাতে নিয়ে ভালোভাবে দেখতেই দুই চোখ প্রসারিত হয়ে গেছে। মেঘ সঙ্গে সঙ্গে নিজের ফোন বের করে ছবি খোঁজতে লাগলো। কিন্তু এত এত ছবির ভিড়ে কাঙ্ক্ষিত ছবি খোঁজে পেলো না তাই ক্যাটালগ টা একপাশে রেখে দ্রুত জামাকাপড় গোছাতে শুরু করলো। কোনোরকমে সব গুছিয়ে ক্যাটালগ আর ফোন নিয়ে নিজের রুমে ছুটলো। ফ্রেশ হয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। হালিমা খান ঘুমাচ্ছিলেন তাই মালিহা খানকেই আপাতত বলে বেড়িয়েছে। রিক্সা নিয়ে সরাসরি বন্যাদের বাসায় আসছে।

বন্যাদের বাসায় ও তেমন কেউ নেই। আপু আর আংকেল অফিসে, বন্যার ভাইও খেলতে বেরিয়েছে। অনেকক্ষণ দরজায় ডাকার পর বন্যার আম্মু এসে দরজা খুলে দিয়েছে। মেঘ সালাম দিয়ে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করেই বন্যার রুমের দিকে ছুটলো। বন্যা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। পরপর দুবার ডাকতেই বন্যার ঘুম ভেঙেছে। মেঘকে দেখে বন্যা এক লাফে শুয়া থেকে উঠে বসছে। কথা নেই বার্তা নেই হুট করে বাসায় চলে আসছে এটা যেন অবিশ্বাস্য ঘটনা। বন্যা থতমত খেয়ে জিজ্ঞেস করল,

“তুই হঠাৎ আমাদের বাসায়?”
“তোকে দেখতে মন চাচ্ছিলো তাই আসছি।”
“সকালেই না দেখা হলো।”
” তাতে কি হয়ছে? আসতে পারি না? এখন কি চলে যাব?”
“এই না না। আমি এমনি বললাম। কল দিয়ে জানালিও না হুট করে আসছিস তারজন্য। তোর ভাই জানে?”
“না। ভাইয়া পরীক্ষা দিতে গেছে। আচ্ছা শুন, তোর ঈদের ড্রেসটা একটু বের কর তো। যেটা গিফট পাইছিলি। ”
“কেনো?”
“দেখব একটু।”

“ঐ ড্রেস দেখতে বাসায় আসছিস? বললেই ছবি পাঠিয়ে দিতাম।”
“তুই বড্ড বেশি কথা বলিস। চুপচাপ ড্রেস বের করে দে। ”
বন্যা উঠে ওয়ারড্রব থেকে ড্রেস বের করে মেঘের হাতে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেছে। মেঘ প্যাকেট থেকে ড্রেস টা বের করতে করতে বন্যা এসে শান্ত কন্ঠে শুধালো,
“কি হয়েছে বলবি?”

মেঘ কপট রাগী স্বরে বলল,
” আমার জন্য সেমাই এর বরফি নিয়ে আয়।”
” আছেই কি না কি জানি!”
“না থাকলে বানিয়ে নিয়ে আসবি যা এখন।”

মেঘের এমন আচরণের মানে বুঝলো না বন্যা। তবুও মেঘের কথা মতো বরফি আনতে নিচে চলে গেল। গতকাল বিকেলে আপু আর বন্যা মিলে সেমাই এর বরফি বানিয়েছিলো। সকালে সেখান থেকেই কয়েকটা মেঘের জন্য নিয়েছিল। কিন্তু মিষ্টি আর মিনহাজ দেখে ফেলায় মেঘের ভাগ থেকে ওদেরকেও ভাগ দিতে হয়েছিল।এদিকে মেঘ ড্রেসটা বিছানার উপর ছড়িয়ে রেখে ব্যাগ থেকে সেই ক্যাটালগ টা বের করে ভালোভাবে পরখ করতে লাগতো। ক্যাটালগ আর ড্রেসে কালার ব্যতীত বিন্দুমাত্র পার্থক্য নেই। মেঘের ঠোঁট জুড়ে মুচকি হাসি, দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে স্পষ্ট স্বরে বলে উঠল,

” ওহ আচ্ছা, বড়লোক বাপের ছেলেটা তবে আমার একমাত্র ভাই তানভির খান ছিল! আমার চোখ ফাঁকি দিয়ে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে গিফট পাঠানো। দাঁড়াও দেখাচ্ছি!”
মেঘ ক্যাটালগ ব্যাগে রেখে ড্রেস টা ভাঁজ করছে আর একা একায় বিড়বিড় করছে। এরমধ্যে বন্যা বরফি আর পিঠা নিয়ে আসছে। বন্যাকে দেখেই মেঘ চুপ হয়ে গেছে। বন্যা ড্রেস ওয়াড্রবে রাখতে রাখতে বলল,
“তোর কি হয়েছে আজ?”
উত্তর না দিয়ে মেঘ প্রশ্ন করল,

“এই ড্রেসের মালিকের সন্ধ্যান পেয়েছিলি?”
“নাহ। সন্ধ্যান পেলে তোকে অবশ্যই জানাতাম।”
মেঘ খাচ্ছে আর আনমনে হাবিজাবি ভাবছে। বন্যা একা একায় কথা বলছে কিন্তু সেসব কথা মেঘের মস্তিষ্কে ঢুকছেই না। বন্যার আম্মু ডাকছে শুনে বন্যা আবারও নিচে গেল। মেঘের মস্তিষ্কে দ্বিধাদ্বন্দের আনাগোনা চলছে। এই ড্রেস তানভির পাঠিয়েছে এটা ১০০% সিউর। বন্যার প্রতি কেয়ার দেখে মেঘের আগেও সন্দেহ হয়েছিল তবে আজ মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছে। কিন্তু বন্যার মনে কি চলছে এখনও বুঝা যাচ্ছে না। এরমধ্যে আবির কল দিয়েছে। মেঘ কল রিসিভ করে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

“আসসালামু আলাইকুম”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।কি ব্যাপার? কোথায় আপনি?”
“বন্যাদের বাসায় আসছি।”
“কেনো?”
“গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল।”
“কি কাজ বলা যাবে?”
“আপনি জানেন….”

এটুকু বলতেই বন্যা রুমে আসছে৷ মেঘ কথাটা গিলে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
” আপনার মিটিং শেষ?”
“হুমমমম। কি বলতে চাইছিলেন?”
“কিছু না। এখন রাখছি পরে কথা বলব।”
মেঘ কল কাটতেই বন্যা চাপা স্বরে বলল,
“আজ একটা ‘আপনি’ নেই বলে কেউ ফোন দিয়ে খোঁজও নেয় না। আমাদের বাসায় আসছিল ২০ মিনিটও হয় নি এরমধ্যে ফোন দিয়ে ফেলেছে৷ এত প্রেম!”

মেঘ মেকি স্বরে বলল,
” আমি তোর মতো অনুভূতি চাপিয়ে রাখতে পারি না। তুই কাউকে পছন্দ করলে বল, আপনির ব্যবস্থা না হয় আমিই করে দিব।”
“আমার পছন্দের কেউ নেই। এমনি মজা করলাম তোর সাথে। ”
“সত্যিই কেউ নেই?”
বন্যা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাগী স্বরে বলল,
“থাকলে কি তোকে বলতাম না?”
“কি জানি! নাও বলতে পারিস।”
“তোর আজ হয়ছে কি বলবি আমাকে? ত্যাড়া ত্যাড়া কথা কেনো বলছিস?”
“কিছু হয় নি।”

বন্যা আর মেঘের আরও কিছুক্ষণ আলাপচারিতা চলল। মেঘ আজ তেমন কিছু বলতেই পারছে না। বন্যাকে ভাবি বানানোর চিন্তা একান্তই মেঘের ছিল। কিন্তু তানভির বন্যাকে পছন্দ করে এটা ভেবেই মেঘ আশ্চর্য হচ্ছে। তার থেকেও বড় কষ্ট এটায় যে তানভির আজ পর্যন্ত মেঘকে একটাবার বলার প্রয়োজনও মনে করে নি। তানভির পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরে মেঘকে না পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে কল দিয়েছে। মেঘ ওয়াশরুমে ছিল তাই বন্যা কল রিসিভ করেছে।
তানভির উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধালো,

“কোথায় তুই?”
“মেঘ আমাদের বাসায় আসছে।”
বন্যার কন্ঠ শুনে তানভির গলা ঝেড়ে বলল,
” আশেপাশে বনু থাকলে ফোনটা দাও।”
“আপনার বনু আশেপাশে থাকলে নিশ্চয়ই আমি ফোনটা রিসিভ করতাম না। মেঘ ওয়াশরুমে। ”
“ওহ৷ বের হলে আমাকে কল দিতে বলো।”

বন্যা পরীক্ষার কথা জিজ্ঞেস করতে যাবে তারমধ্যে কল কেটে দিয়েছে। মেঘ আসতেই বন্যা জানিয়েছে। মেঘ কল দিতে গিয়ে খেয়াল করল ফোনে ব্যালেন্স শেষ। ততক্ষণে বন্যা নাস্তার প্লেটগুলো নিয়ে নিচে চলে গেছে। বন্যার ফোনের লক মেঘের জানায় আছে। মেঘ স্বাভাবিকভাবেই বন্যার ফোন হাতে নিয়ে লক খুলে তানভিরের নাম্বার লিখতে শুরু করল। ৫-৬ ডিজিট লিখতেই ‘Villain’ নামে সেইভ করা তানভিরের নাম্বার ভেসে উঠেছে । মেঘ ভাবলেশহীন চোখে চেয়ে আছে। হাসবে নাকি রাগ করবে সেটাও বুঝতে পারছে না। ভাইয়ের প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসায় রাগটায় প্রকাশ পেলো। বন্যা রুমে আসতেই মেঘ বাজখাঁই কণ্ঠে বলে উঠল,

” ভাইয়ার নাম্বার ভিলেন দিয়ে সেইভ করেছিস কেনো?”
“এমনি।”
“আমার ভাই তোর সাথে কি এমন করেছে?”
“কিছুই করে নি।”
“তো?”
“তো কি আবার? মন চাইছে তাই এই নামে সেইভ করেছি।”
মেঘ আনমনে কিছু ভেবে শক্ত কন্ঠে শুধালো,
” আমার ভাই কে কি তোর সহ্য হয় না?ভাইয়ার আচরণে বিরক্ত ? ভাইয়া কি তোর সাথে বাজে ব্যবহার করেছে?”
মেঘ প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করাতে বন্যার কুঞ্চিত ভ্রু যুগল আরও বেশি কুঞ্চিত হলো। কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে বন্যা সুগভীর কন্ঠে বলল,

” তোর ভাইকে সহ্য না হবার মতো কোনো কারণ ই নেই আর না ওনি আমার সাথে বাজে ব্যবহার করেছেন। সেদিন একটা মুভি দেখছিলাম, নায়ককে ভিলেন বলে ডাকে। নায়কটা তোর ভাইয়ের মতো দেখতে তারজন্য এই নামে সেইভ করেছিলাম। ফোন দে ডিলিট করে দিচ্ছি।”
মেঘের ঠোঁট জুড়ে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটলো। চক্ষুপল্লব ঝাপ্টে হাস্যোজ্জ্বল মুখে অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলে উঠল,
“No problem Baby. ভালোবেসে দিয়েছো যখন পাল্টাতে হবে না। আমার ভাই ভিলেনরূপী নায়ক হলে আমার কোনো আপত্তি নেই।”
বন্যা চাপা স্বরে বলল,

” আমি এতকিছু ভেবে দেয় নি৷ মাথায় আসছে এমনি দিয়েছি। ভালোবাসা আবার কোথা থেকে আসলো।”
মেঘ নির্বিকার ভঙ্গিতে শুধালো,
“তুই আমার ভাইকে ভালোবাসিস না?”
আচমকা মেঘের এমন প্রশ্নে বন্যা কেঁপে উঠলো। পূর্ণ মনোযোগে মেঘের অভিমুখে তাকালো। কোনো উত্তর দিতে পারছে না। শরীর জুড়ে অজানা শিহরণ, মস্তিষ্কের প্রতিটা নিউরনে তোলপাড় চলছে। দাঁতে দাঁত পিষে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে৷ আগে হলে মুখের উপর বলে দিত,
“না, ভালোবাসি না।”

আজ চাইলেও এই দুটা শব্দ বলতে পারছে না। মনে হচ্ছে কেউ মুখ চেপে ধরে আছে। বুকের ভেতর পিনপিন ব্যথা হচ্ছে। মেঘ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখের পাতা পিটপিট করছে, ঠোঁটে মৃদু হাসি লেগেই আছে৷বন্যা কাচুমাচু করে বলে উঠল,
” আমি ওনাকে নিয়ে এমন কিছু ভাবি না।”
মেঘ ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“তাহলে কাকে নিয়ে ভাবো সোনা? গলির মোড়ের মোখলেস মিয়াকে নিয়ে?”
“মোখলেস মিয়া আবার কে?”
” মনে নেই? সেদিন যে বলল ব্যাটায় তোমাকে ভালোবাসে। বিয়ে করতে চায়!”

“What?”
“কী?”
“কিসের কী?”
“ওয়াট অর্থ কী। ”
বন্যা মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ছেড়ে বলল,
“ফাজলামো করছিস?”
“তুই ও তো আমার ভাইয়ের জীবন নিয়ে ফাজলামো করছিস ”
“মানে?”
“কিছু না। ভাইয়াকে কল দিচ্ছি চুপ কর।”
বন্যার ফোন থেকে কল দেয়ায় তানভির রিসিভ করে ধীর কন্ঠে বলল,
“বলো।”
“ভাইয়া আমি মেঘ।”

“হ্যাঁ, বল।”
“তোমার কি মন খারাপ? পরীক্ষা ভালো হয় নি?”
“হয়েছে মোটামুটি। তুই যে আম্মুকে না বলে চলে গেলি। আম্মু টেনশন করছিল।”
“বড় আম্মুকে বলে আসছি। বড় আম্মু বলে নি?”
“বড় আম্মু বাসায় ছিল না। আম্মু কল দিয়েছে তুই নাকি রিসিভ করিস নি।”
“আমি ভাবছি আম্মু বকা দিতে কল দিয়েছে তাই রিসিভ করি নি।”
“বাসায় কখন আসবি?”
মেঘ বন্যার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
“তুমি এসে নিয়ে যাও।”

“আমি চারঘন্টা পরীক্ষা দিয়ে বাসায় আসছি কিছুক্ষণ হলো। এখন বের হওয়ার মতো এনার্জি নেই। তুই রিক্সা করে চলে আয়।”
“আমি না হয় চলে আসবো। কিন্তু একজন যে কত কষ্ট করে তোমার জন্য রান্না করছে। তুমি আসলে খাওয়াবে বলে।”
বন্যা তড়িৎ বেগে মেঘের মুখ চেপে ধরেছে। তানভির ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,
“কে?”
মেঘ বন্যার হাত সরিয়ে আস্তে করে বলল,
“বন্যা।”

“ওহ। তাকে রান্না করতে বারণ কর আর তুই তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।”
” আমি কিছু বলতে পারব না। বন্যা এত কষ্ট করে রান্না করছে আর তুমি এমন আচরণ করছ? তুমি এসে আমায় নিয়ে যাবে এটায় ফাইনাল। আর না হয় আমি এখানেই থাকবো। বাই।”
বন্যা অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“আমি তোর ভাইয়ের জন্য রান্না করছি?”
“নাহ।কিন্তু এখন করবি।”
“আমি পারবো না।”

“আমার একমাত্র ভাই আসতেছে। যত্নের কোনো ত্রুটি থাকলে তোর আব্বু আম্মু আর বড় আপুকে ইচ্ছেমতো বিচার দিবো সাথে আমার স্পেশাল নাটক ফ্রী। ”
“এমনভাবে বলছিস যেন আমি ওনার স্পেশাল কেউ আর ওনার যত্ন নিতে আমি বাধ্য।”
মেঘ ব্যাগ নিয়ে বের হতে হতে বলল,
“হয়ে যা স্পেশাল কেউ। কে বারণ করেছে?”
মেঘ ড্রয়িং রুমে বসে বন্যার আম্মুর সঙ্গে গল্প করছে।আর বার বার বন্যাকে ডেকে বলছে,
“ভাইয়ার কিন্তু ডিম বেশি দেয়া নুডলস পছন্দ।”

“মশলা চা করিস। এটাও ভাইয়ার পছন্দ। বাকি তোর মর্জি।”
বন্যা হাতের কাছে যা যা পেয়েছে তা ই রেডি করছে। অনেকক্ষণ পর তানভির আসছে। কলিং বেল বাজতেই মেঘ ড্রয়িং রুম থেকে ডেকে উঠল,
“বন্যা দেখ কে আসছে। ”
বন্যার মা বলল,
“আমি দেখছি।”
“না না আন্টি। আপনি বসুন৷ বন্যা যাচ্ছে।”

অন্য সময় হলে মেঘ নিজেই দরজা খুলতে ছুটতো। কারণ বন্যাদের বাসার সবার সঙ্গে মেঘের সম্পর্ক খুব ভালো। বাসায় আসলে বন্যার থেকেও বেশি বাকিদের সাথে আড্ডা দেয়। বন্যা আর তানভিরকে পরীক্ষা করতে আজ মেঘ ইচ্ছে করেই তানভিরকে বাসায় ডেকেছে। দরজা খুলে বন্যা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। তানভির ভ্রু নাচাতেই বন্যা রীতিমতো বিষম খেয়ে উঠলো। তানভির নেভি ব্লু রঙের শার্ট- কালো প্যান্ট পড়ে ফরমাল গেটআপ নিয়ে আসছে। বন্যা কাশতে কাশতে সালাম দিতেই ভুলে গেছে। তানভির কপাল গুটিয়ে বলল,
“পানি খাও। ঠিক হয়ে যাবে। ”

বন্যা দ্রুত ভেতরে চলে গেছে। মেঘ আড়চোখে ভাইকে দেখেই ভড়কালো। ভাইয়ের এমন গেটআপ দেখে আশ্চর্যের চূড়ায় পৌছে গেছে। তানভির বন্যার আম্মুর সঙ্গে কথা শেষ করে খাবারগুলো ওনার হাতে দিল। ওনি খাবার নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেছেন। তানভির মেঘের পাশে সোফায় বসলো। মেঘ ভ্রু কুঁচকে তানভিরকে দেখেই যাচ্ছে। মেঘ বিস্ময় সমেত জানতে চাইল,
“আমরা কি বউ দেখতে আসছি?”

তানভির ভ্রু কুঁচকে সূক্ষ্ম নেত্রে তাকিয়ে বলল,
” কেনো?”
“এভাবে আসছো কেনো?”
“ভালো লাগছে না?”
“অনেক বেশি ভালো লাগছে। কিন্তু এই গেটআপে কেনো আসছো?”
“ধৌয়া শার্টগুলো সব ইস্ত্রি করে রেখেছিস৷ তাই ভাবলাম ফরমাল গেটআপে আসলে তোর ভালো লাগবে।”
মেঘ সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেকি স্বরে বলল,
“আমার ভালো লাগবে তাই? অন্য কোনো কারণ নাই?”

“আর কি কারণ থাকবে?”
এরমধ্যে বন্যা দুকাপ চা নিয়ে আসছে। মেঘ একটা কাপ হাতে নিতে নিতে ঝটপট বলল,
” ভাইয়া চিনি কম খায়। তোকে বলতে মনে নেই। ”
বন্যা মৃদু হেসে বলল,
“চিনি কম ই দিয়েছি।”

মেঘ এবার দ্বিতীয় দফায় আশ্চর্য হলো। কি হচ্ছে এসব? মেঘ নিজেই নিজের কপাল চাপড়ে মনে মনে বলল,
” ছিঃ এত বেকুব মানুষও হয়? আবির ভাই ঠিকই বলে আমি আসলেই নির্বোধ। আমি তাদের মেলানোর জন্য ঝড় তুফানের সঙ্গে যুদ্ধ করছি এদিকে তারা অলরেডি মনে মনে দুজনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। বাহ! অসাধারণ৷”
তানভির চা খাচ্ছে বন্যা রান্নাঘরের দরজা থেকে নিপুণ দৃষ্টিতে তানভিরকে দেখছে৷ ফরমাল ড্রেসে সব ছেলেদের অন্যরকম সুন্দর লাগে। বন্যা না চাইতেও বার বার তানভিরের প্রতি দৃষ্টি আটকাচ্ছে। বুকের ভেতর হৃদপিণ্ডটা প্রচন্ড বেগে উঠানামা করছে। কানের লতি গরম হয়ে গেছে৷ মেঘ চা শেষ করে কাপ রাখতে গিয়ে বন্যার দিকে নজর পরলো।

মেঘ মনে মনে বিড়বিড় করল,
” আর একবার বলিস শুধু আমার ভাইকে ভালোবাসিস না। এমন মাইর দিবো কাঁদতে কাঁদতে বলবি, I love Tanvir.”
তানভির তাকাতেই বন্যার সঙ্গে চোখাচোখি হলো। বন্যা থতমত খেয়ে চোখ নামিয়ে সরে গেছে। তানভির আড়চোখে চেয়ে আছে ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটলো৷ মেঘ সারাবেলা বন্যা আর তানভিরের কর্মকাণ্ড দেখল আর একা একায় বিড়বিড় করলো। খাওয়াদাওয়া শেষে আন্টির থেকে বিদায় নিয়ে মেঘ আর তানভির বেরিয়ে পরেছে৷ বন্যাও পেছন পেছন যাচ্ছে৷ তানভির কিছুটা সামনে গিয়ে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো। পেছন ফিরে সরাসরি বন্যার দিকে নিরেট দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,

“তখন আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলে কেনো?”
“কই তাকায় নি তো।”
বন্যার গলার স্বর কাঁপছে। চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে মিথ্যা বলছে। বন্যা চোখ নামিয়ে নিয়েছে।
তানভির জানতে চাইল,
“আমি কি দেখতে এতই খারাপ? তাকাতেও ইচ্ছে হয় না?”
গমগমে পুরুষালী স্বর কানে বাজতেই বন্যা উৎকণ্ঠিত কন্ঠে বলল,

“কে বলেছে আপনি দেখতে খারাপ? মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে আপনাকে। কারো নজর না লাগে।”
কথাটা বলেই বন্যা নিজের মুখ চেপে ধরেছে। বাতাসে উড়তে থাকা বন্যার চুলগুলো চোখ মুখ ঢেকে দিচ্ছে। তানভিরের হৃদয়ে অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে। বন্যার চোখ বন্ধ, মুখ থেকে চুল সরাতে তানভির হাত বাড়ালো৷ পেছন থেকে মেঘের ডাকে তানভিরের ঘোর কাটলো৷ তানভির হাত নামিয়ে আস্তে করে বলল,
“নিজের হাতে চা করে খাওয়ানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ৷আসছি।”
মেঘের সামনে আসতেই মেঘ ভ্রু নাচিয়ে শুধালো,

“বাসায় যাওয়ায় ইচ্ছে নেই?”
“চল।”
অন্য সময় হলে তানভির দুটা কথা শুনাতো বা একটু রাগ হলেও দেখাতো। আজ কোনো রিয়াকশন নেই দেখে মেঘ হা হয়ে তাকিয়ে আছে। গাড়িতে বসেও একদৃষ্টিতে তানভিরকে পরখ করছে। তানভির মুচকি মুচকি হাসছে আর আস্তে করে গাড়ি চালাচ্ছে। মেঘ রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে মনে মনে বলল,
“তোমার মিটিমিটি হাসি বের করছি। ওয়েট”
গলির মোড় পর্যন্ত আসতেই একটা সিঙ্গারার দোকান দেখিয়ে মেঘ উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
“ভাইয়া ঐ ছেলেটাকে দেখছো। ”
তানভির এক সেকেন্ডের জন্য তাকিয়ে আস্তে করে বলল,

” হু৷ কে?”
“বন্যার বয়ফ্রেন্ড। ”
কথাটা কর্ণকুহরে প্রবেশ মাত্রই তানভির অকস্মাৎ গাড়ির ব্রেক কষল৷ আচমকা ব্রেক কষায় আর একটুর জন্য মাথায় বারি খেতে নিছিলো৷ তানভিরের পূর্ণ মনোযোগ দোকানে। আগে এক সেকেন্ডের জন্য তাকানোতে ঠিকমতো খেয়াল করে নি। দোকানে অল্প বয়স্ক কোনো ছেলেই নেই। দু’জন দোকানদার আছে যার মধ্যে একজনের বয়স ৬০+ আরেকজন বয়স ৩৫+ হবে। তানভির ভ্রু কুঁচকে শক্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“কোনটা?”
“লাল শার্ট পড়নে।”

তানভির আবারও দোকানের দিকে তাকালো। ৬০+ বয়সের লোকের পড়নে লালের মতো একটা শার্ট। হয়তো ওনার ছেলে বা নাতির শার্ট হবে। তানভির ভারী কন্ঠে বলল,
“ওনি ছেলে? আর বন্যার বয়ফ্রেন্ড?”
“অবশ্যই। তুমি বিশ্বাস করো না? চলো। আমাকে দেখলেই শালী শালী ডাকবে দেইখো । এমনকি সিঙ্গারার দাম ও নিবে না।”
“কেনো?”

“বাহ রে! বন্যাকে ওনার ভালো লাগে৷ বিয়ে করতে চায়৷ আমি বন্যার বেস্ট ফ্রেন্ড শুনে আমাকেও ফ্রি-তে সিঙ্গারা খাইয়েছে। ওনার নাম মোখলেস মিয়া, বয়স ৬৭। ওনার দুই বউ আর ৬ ছেলেমেয়ে আছে। ”
তানভির মেঘের দিকে আশ্চর্য নয়নে তাকিয়ে শুধালো,
” এতকিছু তুই কিভাবে জানিস?

“জানি জানি। বেস্টু আমার, আমি জানবো না তো কে জানবে হুম? এখন চলো বিয়ের ঘটকালি টা করে আসি। ”
“ভাইয়া যদি এসব কর্মকাণ্ডের কথা জানতে পারে তাহলে তোর খবর ই আছে। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে তুই মোখলেস মিয়ার বিয়ার ঘটকালি করিস?”
মেঘ কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,
“আমার বেস্টুর বিয়ে হওক তুমি কি চাও না?”
“তাই বলে ওনি?”

“ওনার চোখে বন্যার প্রতি ভালোবাসা দেখেছি আমি।”
তানভির গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বিড়বিড় করল,
“বন্যার প্রতি কারো চোখে ভালোবাসা উতলে পড়লে সেই চোখ ই কানা করে ফেলব।”
মেঘ বলে উঠল,
“বিড়বিড় করে কি বলো। ”
“কিছু না।”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৬৫

“বন্যার বিয়েতে আমি কিন্তু লেহেঙ্গা পড়বো৷ আর লেহেঙ্গা টা তুমি কিনে দিবা।”
তানভির গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছেড়ে তপ্ত স্বরে বলল,
“মুখ টা বন্ধ রাখ নয়তো রাস্তায় ফেলে চলে যাব।”
মেঘ ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসছে আর মনে মনে বলছে,
“লাগছে লাগছে৷ একদম কলিজায় লাগছে। ”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৬৬ (২)