আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৬৭
লেখনীতে সালমা চৌধুরী
আবিরের আদুরে ভঙ্গির কথোপকথন শুনে মেঘ লজ্জায় নুইয়ে পড়ছে মুখ দিয়ে আর কোনো কথায় বের হচ্ছে না। মেঘের দুগাল লাল হয়ে গেছে, নাকের ডগায় ঘাম জমে চিকচিক করছে। অডিও কলে আর মেসেজে মেঘের কথার রাজত্ব চললেও ভিডিও কলে আবিরের সাথে কথা বলতে মেঘের হিমসিম খেতে হয়। গত দেড় বছরে আবির যতটা ভদ্র থাকার চেষ্টা করেছে, এই দুই তিনমাসে ভদ্রতার সেই মুখোশ সরে গেছে। সব বিধিনিষেধ ভুলে মেঘকে আপন করার এক বিচিত্র প্রচেষ্টা চলছে। আবিরের অব্যক্ত দৃষ্টি সর্বক্ষণ কিছু ব্যক্ত করতে চাই। আর সেই অবাঁচ্ছিত দৃষ্টিতেই মেঘ বারংবার ঘায়েল হয়। আবিরের সাথে যতবার কথা হয় কল কাটার আগে মেঘের শেষ কথা থাকে,
“I Miss You”
আবিরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কাটে প্রতিবার। মেঘের এমন কর্মকাণ্ডে নিঃশব্দে হাসা ছাড়া আবিরের আর কিছুই করার থাকে না।
রাত ১১ টার দিকে তানভির বন্যার নাম্বারে কল দিল। আজ প্রথম কলটায় রিসিভ হলো। বন্যা মৃদু স্বরে বলল,
“আসসালামু আলাইকুম ”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। জ্বর কমেছে?”
“কিছুটা।”
” ঔষধ খেয়েছো?”
“জ্বি। আপনি খেয়েছেন?”
“না।”
বন্যা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠল,
“এত রাত হয়ে গেছে এখনও খান নি কেনো?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“একটা কাজে শহরের বাহিরে আসছিলাম। অনেক রাত হয়ে গেছে তেমন দোকানপাট খোলা নেই। দু-একটা খোলা আছে কিন্তু খাবারের মান তেমন ভালো না। তাই খেতে ইচ্ছে করে নি।”
“সারারাত না খেয়ে থাকবেন?”
” তুমি হঠাৎ আমার খাবার নিয়ে এত চিন্তা করছো কেন? ঘটনা কি?”
“আমার সামান্য জ্বর দেখেই আপনি সন্ধ্যায় যেভাবে ডাক্তার দেখাতে উতলা হয়ে গিয়েছিলেন। তখন কি আমি কিছু বলেছি?”
“এটাকে সামান্য জ্বর বলে না বন্যা৷ ১০৩-১০৪° ফা জ্বর কখনোই স্বাভাবিক না। তার থেকেও বড় কথা এত জ্বর নিয়ে তুমি ঘুরতে বের হলে কোন বিবেকে? এই তোমার ম্যাচিউরিটি?”
“আমি কখন বললাম আমি ম্যাচিউর? তাছাড়া আজ না বের হলে হয়তো জীবনের সেরা মুহুর্তটা মিস করতাম। ”
“মানে? কিসের সেরা মুহুর্ত?”
“তেমন কিছু না তবে অনেক কিছু।”
” বনুর মতো তুমিও শুরু করো না প্লিজ। এমনিতেই খায় নি মাথা ঘুরছে তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে এখন ই বেহুঁশ হয়ে যাব। কি হয়েছে বলো, প্লিজ।”
বন্যা ফিসফিস করে বলল,
“আপু আসছে, বাই।”
বন্যা কল কেটে দিয়েছে। তানভির থম মেরে বসে আছে। একটু পর আবিরকে মেসেজ দিল, খানিক বাদেই আবিরের কল আসছে৷ রিসিভ করতেই আবির বলল,
” তোকে আমি একটা কাজ দিয়েছিলাম তা না করে এত রাতে কার সাথে কথা বলছিস?”
তানভির স্বাভাবিক কন্ঠে জানালো,
” বন্যার সাথে কথা বলছিলাম আর তোমার কাজ শেষ করেই কথা বলছি। আমি তো তোমার মতো না যে সব কাজ ফেলে বউয়ের সঙ্গে প্রেম করতে লেগে যাব। দূর! বেশি কিছু বলতেও পারি না কারণ বোনটাও আমার ই।”
আবির ঠাট্টার স্বরে শুধালো,
“এত রেগে আছিস কেন? কি হয়েছে ভাই..! ”
“রেগে থাকব না? একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসছি, সবকিছু ফাইনাল। তোমার সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য জাস্ট কল দিয়েছি। দুমিনিটের আলাপ সেখানে তুমি আমার কল তো রিসিভ করলাই না উল্টো আমায় ব্লক করে দিলা? এখন আবার আমায় বলতে আসছো, আমি কাজ ফেলে কার সঙ্গে কথা বলি? বাহ ভাই!”
আবির স্বভাব-সুলভ গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“প্রেমের সময় যারা বাগড়া দেয় তারা মানুষরূপী আগাছা। বুঝলি?”
“আমি আগাছা হলে তুমিও আগাছা। আমার প্রেমের সময় তুমিও বাগড়া দিয়েছো।”
“একদম না। আমি একবার কল দিয়ে ওয়েটিং পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে কল কেটে দিয়েছি। আর একটা কলও দেয় নি। তুই কথা শেষ করে মেসেজ দিয়েছিস তারপর আমি কল দিয়েছি। আর তুই? আমি বার বার কল কেটে দিচ্ছিলাম তারপরও তুই কল দিয়েই যাচ্ছিলি।”
“হয়েছে হয়েছে! আমি মানছি আমি আগাছা। শুধু তুমি না, সবার জীবনেরই আগাছা আমি। বেকুবের মতো এক মেয়ের প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হয়ে বাসার সবার চোখে আগাছা হয়েছি, ঐ মেয়ের জন্য নিজের পড়াশোনা ধ্বংস করেছি। রাজনীতির নামে মুখোশধারী মানুষের সাথে প্রতিনিয়ত বাকবিতন্ডায় জড়াচ্ছি। এখন একজনকে মন থেকে ভালোবাসি কিন্তু তার জীবনেও আমি ভিলেন পদে আছি। আহারে! আগাছাময় জীবন আমার।”
আবির মোলায়েম কন্ঠে বেশ কিছুক্ষণ বুঝানোর চেষ্টা করলো। তানভিরের সভাপতি নির্বাচনের এক বছর কেটে গেছে। তিনবছরের কমিটি এই এক বছরেই তছনছ হয়ে গেছে। কমিটির সদস্যের ঐক্যবদ্ধ জোট ভেঙেছে আরও ৩-৪ মাস আগে। সহ সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আর সাংগঠনিক সম্পাদকদের একের পর এক দ্বন্দ্বে প্রতিনিয়ত হিমসিম খাচ্ছে তানভির। স্থানীয় নেতা সহ এমপি, মন্ত্রীরাও সমস্যা সমাধান করতে পারছেন না৷ মিটিং এ সব মেনে নিলেও সুযোগে একজন আরেকজনের মা*থা ফা*টাতে ব্যস্ত। তানভিরের সঙ্গে কারো পার্সোনাল শত্রুতা নেই ঠিকই কিন্তু চোখের সামনে নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ড সহ্যও করতে পারছে না।
সেই সঙ্গে বন্যাকে নিয়ে আছে তার সুদূর চিন্তাভাবনা। বন্যার পরিবারে বন্যার বাবা সরকারি চাকরিজীবী, বড় বোনও তাই। এমনকি বন্যার আত্মীয়স্বজন বেশিরভাগ ই সরকারি চাকরিজীবী। বন্যার আপুর জন্য সরকারি চাকরিজীবী ছেলে খোঁজা হচ্ছে। সেখানে বন্যা তার বোনের থেকেও বেশি ব্রিলিয়ান্ট, দেখতে শুনতে মাশাআল্লাহ তাই স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় বন্যাকে বিয়ে করার জন্য তানভিরের বিন্দুমাত্র যোগ্যতাও নেই। বন্যাদের বংশের কেউ কখনো রাজনীতি করে নি। সেখানে তানভিরদের বাসায় স্বয়ং আলী আহমদ খান এককালে এলাকার সুপরিচিত রাজনীতিবিদ ছিলেন। গ্রামের বাড়িতে এখনও অনেকে ওনাকে নেতা হিসেবেই চিনেন।
পারিবারিক ও ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে একসময় রাজনীতি ছেড়ে, গ্রামের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ঢাকায় চলে আসেন৷ হয়তো বাবার রক্তের টানে কলেজ জীবনে আবিরও টুকটাক রাজনীতিতে জড়িয়েছিল তবে পুরোপুরি জড়ানোর আগেই কলেজের এক স্যার আবিরকে বুঝিয়ে রাজনীতির চিন্তা ছাড়িয়ে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী করেন। আব্বু আর স্যারের কথা মেনে আবিরও রাজনীতি নিয়ে তেমন ভাবে নি। কিন্তু তানভির আবিরের মতো না, ঐ মেয়ের কারণে বাসায় যখন ঝামেলা হয়েছিল তখন ২-৩ নেতা আলী আহমদ খান ও মোজাম্মেল খানকে বাজে কথা বলেছিলেন।
সেখান থেকেই তানভিরের ভেতর জেদ কাজ করে আর সে রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নেয়। রাজনীতি করতে না দিলে পড়াশোনা করবে না বলে হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিল।তখন বয়স কম ছিল আর তানভির এতটায় জেদি ছিল যে আবিরও তাকে মানাতে পারে নি তাই বাধ্য হয়ে তানভিরকে বেশ কিছু শর্ত দিয়ে আবির রাজি হয়েছিল। কয়েকবছরেই তানভিরের মন উঠে গেছে। একদিন কথায় কথায় মেঘের মুখে শুনেছে বন্যার রাজনীতি একদম পছন্দ না তাই ইদানীং তানভিরের মাথায় ভূত চেপেছে সে রাজনীতি ছেড়ে পড়াশোনা করবে, চাকরি নিয়ে বন্যাকে বিয়ে করবে। একটা সময় তানভিরের রাজনীতির জন্য আবিরকে প্রচুর বকা খেতে হয়েছিল তবে এখন সবাই মোটামুটি স্বাভাবিক।
তানভিরকে নিয়েও কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই অথচ তানভির হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে এই অমার্জিত রাজনীতি আর করবে না। যেখানে এক কমিটির অন্তর্ভুক্ত সদস্যরা নৈতিকতা ভুলে একে অপরের সঙ্গে দাঙ্গায় জড়াতে পারে সেই নোংরা রাজনীতিতে তানভির থাকবে না। এমপি তানভিরের সঙ্গে কথা বলে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন কিন্তু সে তার জেদ থেকে এক চুলও নড়বে না। আবিরকে কল দেয়ায় আবিরও নিরেট কন্ঠে বলেছিল,
” আমার ভাই যা বলবে তাই হবে। আমি আমার ভাইকে খুব ভালোবাসি।
ও যখন যা চেয়েছে আমি তাই দিয়েছি, ও রাজনীতি করতে চেয়েছে আমি তাতেও সাপোর্ট করেছি আর এখন সে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতেও সাপোর্ট করবো। কারণ আমি আমার ভাইকে কারোর প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলতে দেখতে পারবো না। অতি সামান্য একটা বিষয় নিয়ে কমিটিতে যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে তার প্রভাব যে আমার ভাইয়ের উপর পরবে না তার কি গ্যারেন্টি আছে? আজ নয়তো কাল কেউ যে আমার ভাইয়ের উপর অ্যাটাক করবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে?”
এমপি আবিরকে বুঝাতেও ব্যর্থ হয়েছেন। ওনাদের ইচ্ছে ছিল তানভিরকে সভাপতি পদে রেখে, বাকি কিছু সদস্য যুক্ত করে জেলাভিত্তিক নতুন করে কমিটি গঠন করে ফেলা। কিন্তু তানভির রাজি না থাকায় নতুন করে আবারও সবকিছু করতে হবে সেসব ভেবেই সবাই কিছুটা চিন্তিত৷ আগামী সপ্তাহে মিটিং ডাকা হয়েছে, সেদিন সবকিছু ঠিকঠাক হলে কমিটি ঠিক থাকবে না হয় অফিসিয়ালি কমিটি বাতিল করা হবে।তানভিরের সেসবে চিন্তা নেই। আর তানভিরকে ব্যস্ত রাখতে আবির ইচ্ছে করেই অফিসের কাজ সহ বেশকিছু কাজের জন্য তানভিরকে চাপে রাখছে।
দুপুর থেকে রাকিবের ফোনে রিয়া আর জান্নাত এক নাগাড়ে কল দিয়েই চলেছে। বাধ্য হয়ে ৪ টা নাগাদ রাকিব অফিস থেকে বেড়িয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল৷ রিয়া আজ সারাদিন ধরে মেঘের জন্য রান্না করেছে। সেগুলোই রাকিবকে দিয়ে পাঠাবে। রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে জান্নাতও বায়না ধরেছে মেঘের জন্য খাবার পাঠাবে। রাকিব এর কিছুই জানতো না। অফিস থেকে এসে এতো আয়োজন দেখে হতভম্ব হয়ে গেছে। কারণ জিজ্ঞেস করায় রিয়া বলেছে মেঘের আব্বু বিয়েতে রাজি সেই খুশি তাদের সামান্য আয়োজন। আবিরের আব্বু রাজি হলে বিশাল আয়োজন করবে। রিয়ার কথা শুনে রাকিব রীতিমতো আশ্চর্যান্বিত হয়েছে। মেঘের আব্বু আবির-মেঘের সম্পর্কে রাজি এটা রাকিব জানে না অথচ রিয়া -জান্নাত জানে এটা ভেবেই হতাশ হচ্ছে। ফ্রেশ হয়ে আবিরকে কল দিল। আবির কল রিসিভ করতেই রাকিব বলল,
” ভালোই তো। আজ শ্বশুরকে রাজি করিয়ে ফেলেছিস কাল বাপকেও রাজি করিয়ে ফেলবি। পরশু বউকে নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাবি। এদিকে তোর যে রাকিব নামের একটা বন্ধু ছিল সেটা বেমালুম ভুলে যাবি। বন্ধুত্বের সম্পর্কও ভেঙে দিবি।”
আবির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
” ৭ বছরের দূরত্বে যে বন্ধুত্ব ভাঙে নি, ৫ মাসে সে বন্ধুত্ব কি ভাঙবে? আর শ্বশুর রাজি এটা তোকে কে বলছে?”
“জান্নাত আর রিয়া বললো। তারা এই খুশিতে সারাদিন ব্যাপী রান্না করছে তোর বউকে খাওয়ানোর জন্য। ”
“মানে কি এসবের?”
“মানে রাখ। আগে বল তোর শ্বশুর কি আসলেই রাজি? কথা বলছিস তুই?”
“তুই কি পাগল হয়ছিস? এখন কথা বললে উপায় আছে? একদিন রিয়েক্ট করেই চিন্তায় আছি, রাগে ৬ মাসের হুমকি তো দিয়েছি ঠিকই কিন্তু মানলে বিশ্বাস। কবে না সব ভুলে বিয়ের আলোচনা শুরু করে দেন। আর এখন যদি এখান থেকে আমি এই কথা তুলি দেখা যাবে কাল সকালেই মেয়ের বিয়ের জন্য তোরজোর শুরু করে দিবেন। ”
“জান্নাতকে কি বলছিস তাহলে?”
“জান্নাতের সাথে মজা করছি। সে কাল ভাবির মতো আচরণ করেছে তাই আমিও দেবরের মতো দুষ্টামি করেছি৷ পুরোটা দুষ্টামি ছিল এমনটা নয় কারণ আমার শ্বশুরের এমন আচরণ আমাকেও বেশ ভাবাচ্ছে। ”
“কেনো কি হয়েছে?”
” আমি রাগ করে বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর থেকে চাচ্চু অনেক শান্ত হয়ে গেছেন। মেঘের বিয়ের জন্য নিজেই উঠেপড়ে লেগেছিলেন আবার নিজেই চুপ হয়ে গেছেন৷ এমন কেনো করল আমি জানি না তবে সন্দেহ করছি। এত বছর আব্বুর সাথে আমার রেগুলার কথা হতো। চাচ্চুর সাথে ৭ দিনে ১ দিন কিংবা ১৫ দিনে একদিন ২ মিনিটের জন্য কথা হতো। অথচ এবার আমি এখানে আসার পর থেকে আব্বুর থেকে বেশি চাচ্চুর সাথে কথা হচ্ছে। রেগুলার দু’বেলা করে ওনি নিজেই ফোন দেন। এমন না যে শুধু প্রজেক্টের জন্য ওনি চিন্তিত। এমনিতেই খোঁজ নেন, কি করছি, খাচ্ছি কি না ঠিকমতো, কবে ফিরব, শরীর ঠিক আছে কি আরও অনেককিছু। আগে যেসব কথা আব্বু বলতো সে সব কথা এখন চাচ্চু বলেন। ওনার এমন আচরণে মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি আসার সময় ওনার মেয়েকে সাথে নিয়ে আসছি। ওনার মেয়েকে যেন সুখে রাখি, তার সাথে যেন ভালো ব্যবহার করি সেজন্য দুবার করে ফোন দিয়ে এলার্ট করেন। ”
“ভালোই তো। ওনি রাজি থাকলে তোর টেনশন ই করতে হবে না।”
আবির কন্ঠ দ্বিগুণ ভারী করে বলতে শুরু করল,
“ভাই ওনাকে আমি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করি না। হতেও পারে ৬ মাসের হুমকির জন্য এখন কিছুটা শান্ত আছেন। শুনেছি আব্বুর সাথে ঝামেলা হয়েছে, তারজন্য হয়তো কিছুদিন চুপচাপ আছেন। যতদিন না বাসর করতে পারছি ততদিন পর্যন্ত আমি কাউকে বিশ্বাস করি না৷ বাসর রাতের পরদিন বলতে পারব, আমার শ্বশুর আমাকে মেনে নিয়েছে কি না!”
রাকিব মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ছেড়ে বলল,
“রিয়া আর জান্নাত যে খুশির ঠ্যালায় এতকিছু রান্না করল এখন কি আমিই খেয়ে ফেলব এসব?”
“সোজা আমাদের বাসায় নিয়ে দিয়ে আসবি। আমার বৌয়ের ভাগ থেকে একটা কিছু কমলে তোর কপালে শনি আছে। ”
রাকিব মুচকি হেসে বলল,
” তুই এখনও আগের মতোই আছিস। মেঘকে নিয়ে সামান্য একটু মজা করলেও যেভাবে রিয়েক্ট করিস আমার ভয় ই হয়। যেদিন বাসায় মেঘের কথা বলবি সেদিন ঠিক কি হবে!”
“কি আর হবে। আব্বুরা উল্টাপাল্টা করলে মেঘের হাত টা ধরে সোজা বাসা থেকে বেরিয়ে যাব।”
“মেঘ যেতে না চাইলে?”
“কোলে নিয়ে চলে যাব।”
” এটায় তো চাই। মেঘকে নিয়ে সোজা আমাদের বাসায় চলে আসিস।”
“সেসব পরে দেখা যাবে। এখন রাখি। বের হতে হবে। ”
“আচ্ছা ঠিক আছে। ”
রাকিব আর আরিফ খাবার নিয়ে একসঙ্গে মেঘদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। গেইটের ভেতর খোলা জায়গায় মীম আর আদি ক্রিকেট খেলছিল। মেঘও এতক্ষণ এখানেই ছিল কেবল ই ভেতরে গেছে। আদি বোলিং করছে আর মীম ব্যাটিং করছে। রাকিবের হাতে সব খাবার, ভেতরে ঢুকে আদিদের খেলতে দেখে তাড়াতাড়ি চলে গেছে। পেছনে ছিল আরিফ। গেইটের ভেতরে পা রাখতেই বল এসে ঠাস করে ঠোঁটে উপর লাগছে। একটুর জন্য নাকটা বেঁচে গেছে। আরিফ ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠল, মাথা চক্কর দিয়ে উঠেছে। এদিকে মীম ব্যাট ফেলে দৌড়। আদি কি করবে বুঝতে না পেরে মেঘকে ডাকতে ছুটলো।
আরিফ চোখে অন্ধকার দেখছে, ব্যথা সহ্য করতে না পেরে এখানেই বসে পরেছে। রাকিব ভেতর থেকে আরিফকে দুবার ডেকেওছে। কিন্তু মালিহা খানের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় বেড়িয়ে এসে দেখতে পারে নি। আদি মেঘকে বলতেই মেঘ দ্রুত ছুটে আসছে। ততক্ষণে আরিফ কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু দাঁতে আর মাড়িতে চাপ খাওয়ায় রক্ত বের হচ্ছে ।
মেঘ দৌড়ে এসে আরিফকে তুলে সাপ্লাই এর কাছে নিয়ে গেছে। চোখে-মুখে পানি দিয়ে আরিফকে ভেতরে নিয়ে গেছে। মেঘ ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে ঠোঁটের উপর লাগাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জায়গাটা ফুলে গেছে। মীম বেশকিছুক্ষণ পর নিচে আসছে। শীতল চোখে আরিফের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্য সময় ইচ্ছেকৃত ব্যথা দিলেও মীম আজ ইচ্ছেকরে কিছু করে নি৷ মীম ভেবেছিল রাকিব ভাইয়া একায় এসেছেন তাই রাকিব ভেতরে চলে যাওয়ায় আবার খেলতে শুরু করেছিল। মীম আর আদি চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, রাকিব আরিফের পাশে সোফায় বসে আছে। আলী আহমদ খান বাসায় ফিরে আরিফের অবস্থা দেখে চিন্তিত স্বরে জানতে চাইলেন,
“কি হয়েছে তোমার?”
আরিফ সত্যি কথা বলতে গিয়েও থেকে গেল। মীমের শীতল চোখদুটো আর অসহায়ের মতো চাহনি দেখে আরিফ আস্তে করে বলল,
“তেমন কিছু না বড় মামা।”
আলী আহমদ খান ভারী কন্ঠে বললেন,
” বসো। আমি আসছি।”
মীম ভয়ে আরও বেশি সিঁটিয়ে গেছে। বড় আব্বু জোর গলায় জিজ্ঞেস করলেই আরিফ বলে দিবে। বড় আব্বু জানতে পারলে ওদের যে কি হাল করবে সেই ভেবেই মীমের হাত পা কাঁপছে। কিছুক্ষণ পর তানভির আসছে। রাকিব তানভিরের সাথে কথা বলতে তানভিরের রুমে চলে গেছে। মেঘ রান্নাঘরে শরবত করছে আর মালিহা খান ওদের জন্য নাস্তা রেডি করছেন। মীম সেখান থেকে এক গ্লাস শরবত নিয়ে আরিফের কাছে গেল৷ মীম চোখ নামিয়ে শীতল কন্ঠে বলল,
“সরি, আমি আপনাকে সত্যি দেখি নি। হুট করে এসে ঢুকেছেন আর বলটাও সেসময় ই লেগেছে।”
আরিফ অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে
বলল,
” আমি জানি তুমি ইচ্ছে করে এমন করেছো। আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি যে তুমি সবসময় আমার সাথে এমন আচরণ করো।”
মীম ধীর কন্ঠে বলল,
” আপনি বিশ্বাস করুন, আমি ইচ্ছে করে এমনটা করি নি। ”
“মিথ্যাবাদী মেয়ে৷ চুপ করো। বড় মামা আসলে আমি সব বলে দিব।”
মীমের এবার রাগ উঠে গেছে। হাতে থাকা গ্লাসের সবটা শরবত শেষ করে গ্লাস রাখতে রাখতে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“আপনি আমায় ভয় দেখাচ্ছেন? কি ভাবছেন আমি খুব ভীতু? একদম না। আমি কাউকে ভয় পায় না। আমার কারণে ব্যথা পেয়েছেন তাই মানবতার খাতিরে সরি বলতে আসছিলাম। এখন বুঝতে পারছি আপনি এই সরির যোগ্য ই না। ”
মীম রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে চলে গেছে। আরিফ আর রাকিব নাস্তা করে সন্ধ্যার আগে আগে বেরিয়েছে। এরমধ্যে রাকিবের ফোন দিয়ে রিয়ার সাথে ভিডিও কলে কথাও বলেছে মেঘ।
সন্ধ্যা পর আবিরকে একটা ছেলের ছবি পাঠিয়ে মেঘ মেসেজ দিয়েছে,
“ছেলেটা কেমন?”
“ভালো। কে?”
মেঘ পরপর একটা বিয়ের কার্ডের ছবি পাঠিয়ে মেসেজ দিল,
“আগামী শুক্রবার বিয়ে। আপনার দাওয়াত রইলো। চলে আসবেন। ”
“মানে? কার বিয়ে?”
মেঘ মুচকি হেসে লিখল,
“আমার।”
“মা*র্ডার করে ফেলবো।”
মেঘ কতগুলোর হাসির ইমোজি পাঠিয়ে লিখল,
“মা*র্ডার করতে হলেও আপনাকে আমার সামনে আসতে হবে। বিয়ের দিন দেখা হচ্ছে তাহলে।”
আবির এবার কল দিল। মেঘ ভয়ে কল রিসিভ করছে না কারণ কল রিসিভ করলেই বকা খেতে হবে। তিনবারের মাথায় বাধ্য হয়ে কল রিসিভ করল। আবির রাগান্বিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“ছেলেটা কে?”
“বয়ফ্রেন্ড।”
“কার?”
“আমা…”
“রাগাবি না আমায়। ছেলেটা কে বল।”
“বললাম তো বয়ফ্রেন্ড। ”
“কার?”
“আমার বান্ধবী মায়ার বয়ফ্রেন্ড। ”
” কার্ড কার?”
“মায়ার বিয়ে শুক্রবারে। সেটার ই কার্ড।”
” বার বার নিজের কথা বলছিলি কেনো?”
” আমার বিয়ের কথা শুনে কতটা খুশি হোন তাই দেখছিলাম।”
আবির জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মোলায়েম কন্ঠে বলল,
“বিয়ে করার খুব ইচ্ছে তোর?”
“হ্যাঁ। অনেক ইচ্ছে। বিয়ে করলে সাজতে পারবো, ছবি তুলতে পারবো, অনেকগুলো শাড়ি হবে, ড্রেস হবে, কত কত গিফট পাবো। আহ! সবগুলো নিয়ে পালায় যাব।”
“মানে? কোথায় পালাবি?”
মেঘ ফিসফিস করে বলল,
“আমি তো বিয়ে করবো শুধু গিফট গুলোর জন্য। যা যা পাবো সব নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যাব।”
“বাহ! অসাধারণ চিন্তাভাবনা আপনার। টাকা পাঠায় বিয়ের শপিং করতে করতে রুম ভরে ফেলুন তবুও মানুষের গিফটের আশায় বসে থাকিয়েন না। ”
“আপনি বুঝতে পারছেন না। বিয়ের জিনিসপত্র নিয়ে পালানোর মজায় আলাদা। ”
আবির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বিড়বিড় করল,
” জিনিসপত্র না নিলেও আপনাকে নিয়ে আমি পালাবো, এটা নিশ্চিত। ”
আবির কিছু বলছে না দেখে মেঘ মোলায়েম কন্ঠে বলল,
“একটা কথা বলি?”
“হুমমম।”
” বলছিলাম… না থাক।”
“কি হয়েছে? বিয়েতে যেতে চাচ্ছিস? ”
মেঘ চোখ বড় করে ভীত কন্ঠে বলল,
” আসলে মায়া খুব জোর করছে। না করে দিব?”
“না করতে হবে না৷ যাস সমস্যা নেই।আর কে কে যাবে?”
“বন্যা ভা, মানে বন্যা, আমি, মীম, আর পাখি। তানভির ভাইয়া যেতে চাইলে যাবে। ভাইয়াকে আর আপনাকেও দাওয়াত দিয়েছে। ”
“সে আমাকে চিনে?”
“হুম।”
“আচ্ছা। যেখানেই যান সাবধানে থাকবেন।”
“জ্বি অবশ্যই। আল্লাহ হাফেজ।”
শুক্রবার মীম, মেঘ, বন্যাকে নিয়ে বিয়ে খেতে গেছে। পাখি আলাদাভাবে ওর হাসবেন্ডের সাথে গিয়েছে। মেঘ তানভিরকে যেতে বলেছিল এমনকি মায়া নিজেও ফোন দিয়ে তানভিরকে বলেছে কিন্তু তানভির যেতে রাজি হয় নি। ছোট বোনের বান্ধবীর বিয়েতে যাওয়াটা তানভিরের কাছে কেমন যেন লাগে। পাখির বিয়েতেও তানভির যায় নি৷ মেঘ, মীম আর বন্যা বিয়ে বাড়ি থেকে খাওয়াদাওয়া করে ঘুরে ফিরে বন্যাকে বাসায় দিয়ে সন্ধ্যার দিকে বাসায় পৌঁছেছে। আজ বাড়ির পরিবেশ অন্যরকম। আবির যাওয়ার এতদিন পর তিন ভাই একসঙ্গে বাড়িতে উপস্থিত হয়েছেন। তিনভাই সোফায় বসে চা খাচ্ছেন আর গল্প করছেন৷ মেঘ আর মীম একসঙ্গে সালাম দিল। মোজাম্মেল খান উঠে গিয়ে দু’জনের মাথায় হাত বুলিয়ে ঠান্ডা কন্ঠে শুধালেন,
“কেমন আছিস তোরা?”
“আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো৷ তোদের জন্য জামা নিয়ে আসছি। দেখ পছন্দ হয় কি না।”
মেঘ আর মীম জামা পেয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে রুমে চলে গেছে। ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ পর নিচে এসে সবার সঙ্গে গল্প করতে বসেছে। গল্প কিছুই না। ওনারা কথা বলছেন মেঘ আর মীম বসে বসে শুনছে। তানভির ছাড়া এখানে সবাই উপস্থিত আছে৷ কিছুক্ষণ বাদে তানভিরও নিচে আসছে। অনেকদিন পর ভাইদের পেয়ে আলী আহমদ খান মন খুলে কথা বলছেন৷ মোজাম্মেল খান তানভিরের উদ্দেশ্যে শান্ত কন্ঠে শুধালেন,
“শুনলাম তুমি নাকি রাজনীতি করবে না?”
“জ্বি। ”
“হঠাৎ এই চিন্তা মাথায় ঢুকলো কিভাবে?”
“এমনিতেই। ”
মোজাম্মেল খান এবার হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন,
“লক্ষ্য স্থির না করলে জীবনেও কিছু করতে পারবে না। এইযে ভাই ভাই করো, ভাই এর থেকে কিছু তো শিখতে পারো। আমাদের কোম্পানির বেশিরভাগ দায়িত্ব একা সামলিয়েও নিজের কোম্পানি দাঁড় করে ফেলেছে। শুধু তাই নয় এই যে গত দুইমাস রাজশাহী আর চট্টগ্রাম ছিলাম। আমার তেমন কোনো কাজ ই করতে হয় নি। আবির অলরেডি সবকিছু গুছিয়ে রেখে গেছে। এমনকি ওখানে থেকেও প্রতিনিয়ত এখানের খোঁজ নিচ্ছে। আর তুমি কি করছো? একবার পড়াশোনা ছেড়ে দিছো, আবিরের কথায় এখনও নামমাত্র পড়াশোনা করছো, হুট করে রাজনীতির ভূত চাপছে মাথায় এখন আবার বলছো রাজনীতি করবা না। তুমি আসতে কি চাও? কি করবা জীবনে? এমন করলে কোনো মেয়ের বাবা তোমার কাছে মেয়ে বিয়ে দিবে?”
তানভির মনে মনে বিড়বিড় করছে,
” কোনো মেয়ের প্রয়োজন নেই আমার। শুধু বন্যা হলেই হবে। আমি পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি নিয়ে বন্যাকে বিয়ে করবো।”
কিন্তু মুখ ফোটে কিছুই বলতে পারলো না। মোজাম্মেল খান গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
” যদি কিছু করতে না পারো কাল থেকে আমাদের অফিসেই যেও। বাবা-চাচার ব্যবসা যেহেতু আছে সেটার ই হাল ধরো। ”
আব্বুর কথা বলার ধরন মেঘের একদম সুবিধা লাগছে না। মেঘ তানভিরকে এক পলক দেখে নিল। তানভির মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আব্বু, বড় আব্বুর সামনে কথা বলার স্বভাব আবির, তানভির কারোরই নেই। মেঘ কপট রাগী স্বরে বলল,
“ভাইয়া অফিসে যাবে না। পড়াশোনা করে চাকরি নিবে।”
মোজাম্মেল খান মেকি স্বরে বললেন,
“তোমার ভাই করবে চাকরি! ”
মেঘের মন খারাপ হয়ে গেছে। তানভিরের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের উপর কনফিডেন্স নিয়ে বন্যাকে প্রপোজ করেছে মেঘ । বন্যার ইচ্ছা অনিচ্ছা সবটায় মেঘ জানে। বন্যার আব্বু স্ট্রং মেন্টালিটির মানুষ। ওনি যদি একবার মন স্থির করেন চাকরিজীবী ছাড়া মেয়ে বিয়ে দিব না তাহলে আর কোনোদিন ওনাকে রাজি করানো সম্ভব না। তাই আগে থেকেই ভাইকে প্রস্তুত করতে হবে। মেঘ তানভিরের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,
” ভাইয়া চাকরিই করবে। ভাইয়াকে কেউ কিছু বলবা না। ভাইয়া ব্যবসা করবে না, চাকরিই করবে।”
তানভির বিষ্ময় চোখে মেঘের দিকে চেয়ে আছে। মেঘ ফোপাঁতে ফোপাঁতে রুমে চলে গেছে। মনের বিরুদ্ধে কিছু ঘটলেই অভিমানী মেঘের বুক খুঁড়ে কান্না আসে। মোজাম্মেল খান তানভির এর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“তোমাকে নিয়ে ওরা তোমার থেকেও বেশি কনফিডেন্ট। অথচ তুমি কি দাম দিচ্ছো? আবির নিজের কারণে আজ পর্যন্ত যতবার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তার থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশি তোমার জন্য দাঁড়িয়েছে। আমার এই টুকু মেয়েটা পর্যন্ত তোমার জন্য কান্না করছে। তুমি কি এগুলো বুঝো? তোমার কি উচিত না ওদের মুখে একটু হাসি ফুটানো? ”
আলী আহমদ খান কোমল কন্ঠে বললেন,
“বাদ দে। বাসায় ফিরে ছেলেটাকে না বকলে কি তোর শান্তি লাগে না?”
মোজাম্মেল খান চিন্তিত স্বরে বললেন,
” তোমার তো চিন্তা নাই। একমাত্র ছেলে তাও আবার প্রতিষ্ঠিত। ”
“আবির কি তোর ছেলে না?”
“আবির আমার ছেলের মতো কিন্তু তানভির আমার ছেলে। ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাকেই ভাবতে হবে।”
আলী আহমদ খান হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন,
“ছেলেমেয়েদের মাঝে বিবাদ সৃষ্টি করিস না। আবির, তানভির, মেঘ, মীম,আদি প্রত্যেকে আমাদের সন্তান। কেউ কারোর থেকে বেশি আদরের না, সবাই সমান।”
বাকবিতন্ডা চললো বেশকিছুক্ষণ।আলী আহমদ খান তানভিরকে রুমে চলে যেতে বলেছেন।। এদিকে মেঘ কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরেছে। তানভির ডাকতে এসে ঘুমাচ্ছে দেখে চলে গেছে, আবিরকেও জানিয়ে দিয়েছে।
রাত ১.৩০ নাগাদ মেঘের ফোন ভাইব্রেশন হচ্ছে। দুবার বাজতেই মেঘ ঘুমের মধ্যে কল রিসিভ করল। অপর পাশ থেকে আবিরের আতঙ্কিত কন্ঠস্বর আসলো,
“মেঘ”
“এই মেঘ, তুই ঠিক আছিস?”
আবিরের গলা কাঁপছে, কন্ঠস্বর ভেজা। মেঘ থতমত খেয়ে বলল,
“হ্যাঁ। আপনার কি হয়েছে?”
আবির কথা বলতে পারছে না৷ চাপা কান্নার শব্দ আসছে। মেঘ শুয়া থেকে উঠে বসে উদ্বিগ্ন কন্ঠে ডাকল,
“আবির ভাই। ”
একটু থেমে আবারও শুধালো,
“কি হয়েছে আপনার? কাঁদছেন কেনো?”
আবির কিছু না বলে কল কেটে দিয়েছে। মেঘ দ্রুত ওয়াশরুম থেকে মুখ ধৌয়ে এসে নেট অন করে তাড়াতাড়ি আবিরকে ভিডিও কল দিল। খানিক বাদে আবির কল রিসিভ করল। বৈদ্যুতিক বাতির আলোতে আবিরের রক্তাভ চোখে চোখ পড়তেই মেঘের শরীর কম্পিত হলো। ফ্যাকাশে চোহারা, গালে পানির দাগ, চোখের নিচ ভিজে আছে এখনও। লাইটের আলোতে চিক চিক করছে। মেঘ আর্তনাদ করে উঠল,
“কি হয়েছে আপনার?”
“জানি না।”
“ঘুমাইছিলেন?”
“হুমম।”
“বাজে স্বপ্ন দেখেছেন?”
“হুমমমম।”
“ভয় পাইছেন?”
আবির ভ্রু কুঁচকে মেঘের দিকে তাকিয়ে শীতল কন্ঠে উত্তর দিল,
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে বোনাস পর্ব
“আর একটু হলে আত্মা টা বেড়িয়ে যেত।”
মেঘ নির্বোধের মতো আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ ঠোঁট বেঁকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
” আপনি না খুব সাহসী। এত ভয় পেলে হবে?”
আবির চোখ মুখে রাশভারি কন্ঠে জবাব দিল,
” পৃথিবীর সবার কাছে আমি সাহসী হলেও আমার মন জানে একজনের জন্য আমার হৃদপিণ্ড ঠিক কতটা দূর্বল। তার কিছু হলে আমি সত্যি ম*রে যাব।”