আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৭১ (৪)

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৭১ (৪)
লেখনীতে সালমা চৌধুরী

বর্তমান-
লজ্জায় অসাড় মেঘ জোরপূর্বক নিজের চোখ বন্ধ করে রেখেছে। আবির আবেগান্বিত দৃষ্টিতে মেঘকে নিহারা করছে। আশেপাশে না তাকিয়ে আবির সরাসরি নিজের রুমে গিয়ে মেঘকে কোল থেকে নামালো। মেঘের দিকে তাকিয়ে উদ্দীপ্ত কন্ঠে জানতে চাইল,
“আমাকে এত কষ্ট দিয়ে কি শান্তি পেয়েছিস?”
“এইযে সারাজীবনের জন্য পেতে যাচ্ছি।”
আবির মুচকি হেসে বলল,
“তুই এমনিতেও আমারই। ”

মেঘ হঠাৎ ই ভ্রু কুঁচকালো। আবিরের চোখে চোখ রেখে আতঙ্কিত কন্ঠে বলল,
“আপনি মাথায় রি*ভ*লবা*র ধরেছিলেন কোন সাহসে? যদি আপনার কিছু হয়ে যেত?”
“তোকে না পেলে সত্যিই কিছু একটা হয়ে যেতো।”
“বাজে কথা বলবেন না।”
আবির মুচকি হেসে ফোনে সম্পূর্ণ ভলিউম দিয়ে গান চালিয়ে অতর্কিতে নাচতে শুরু করলো। মেঘ বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আবিরের নাচ দেখছে। আবির পুরোপুরি জ্ঞানশূন্য অবস্থায় নেচেই চলেছে। রুমের দরজা খুলা থাকায় নিচ পর্যন্ত গানের শব্দ আসছে। সবাই অবচেতন মনে চোখাচোখি করলো। মীম মাঝখান থেকে বলে উঠল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমি গিয়ে দেখবো?”
আরিফ নিরুদ্বেগ ভঙ্গিতে বলে উঠল,
“সব ব্যাপারে মাতবরি।”
মীম ভেঙচি কেটে বলল,
“তোমার কোনো সমস্যা?”
তানভির ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
“ভাইয়ার জামাকাপড়গুলো দিতে হবে, আমি যাচ্ছি।”
মোজাম্মেল খান উদ্বেগপূর্ণ ভঙ্গিতে বললেন,
“হ্যাঁ হ্যাঁ দেখো, খুশিতে পাগল ই হয়ে গেছে কি না!”

তানভির মৃদু হেসে ছুটলো। নিজের রুম থেকে আবিরের জামাকাপড় নিয়ে আবিরের রুমের দরজায় এসেই থমকালো। আবিরের এলোপাতাড়ি নাচ দেখে সহসা পকেট থেকে ফোন বের করে ভিডিও অন করলো। মেঘ এক কর্ণারে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে মুখ চেপে নির্বাক চোখে আবিরের তৃপ্ত আদলে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগে চিৎকার করে কান্না করা মানুষটা এখন কি সুন্দর হাসছে। তানভির মেঘকে আস্তে করে ডাকল, মেঘ এগুতেই আবিরের জামাকাপড়গুলো মেঘের হাতে দিয়ে মোলায়েম কন্ঠে বলল,
” ভাইয়াকে একটু তাড়াতাড়ি রেডি হতে বলিস, ফটোগ্রাফার ওয়েট করছে। আর হ্যাঁ তোর বান্ধবীকে অনেকগুলো কল দিয়েছি, একবার অর্ধেক কথা শুনার পর থেকে কল আর রিসিভ করে না।”
মেঘ মেকি স্বরে বলল,

” তোমার প্রেমিকা তুমি সামলিয়ো। আপসোস, কেউ একজন বলেছিল, সময় হলে জানাবো তার সময়ও হলো না আমাকে কিছু জানালোও না। ”
তানভির মেঘের মাথায় আস্তে করে গাট্টা মেরে বিড়বিড় করল,
” আমার আগে তুই ই তো প্রপোজ করে ফেলছিস। ”
“আমি আমার ভাবি বানানোর জন্য প্রপোজ করেছি তোমার প্রেমিকা বানাতে নয়। ওকে?”
“ওকে ওকে।”
মেঘ জামা বিছানার উপর রাখছে এরমধ্যে তানভির আচমকা ডাকল,
“ভাইয়া”

তানভিরকে আগে দেখলেও আবির নাচের মনোযোগ নষ্ট করে নি। এখন তানভিরের ডাকে ফোনের দিকে নজর পড়তেই থামলো। গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলল,
” শালা, তুই দাঁড়া শুধু..”
আবির দৌড় দেয়ার আগেই তানভির দু’হাতে আবিরের রুমের দরজা চাপিয়ে দৌড়ে বেলকনি পেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে। আলী আহমদ খান মৃদুস্বরে জানতে চাইলেন,
” এভাবে ছুটছো কেন? আর আবির ই বা কি করে?”
তানভির সিঁড়ি তে দাঁড়িয়েই আবিরের নাচের ভিডিও অন করল। ৫ থেকে ৭ সেকেন্ড চলার পর ই অফ করে দিয়েছে। ঠোঁটে হাসি রেখে বলল,

“খুশিতে পাগল না হলেও নাচতে নাচতে নিশ্চিত পাগল হয়ে যাবে।”
উপস্থিত সবাই একসঙ্গে হেসে উঠল। এদিকে মেঘ আবিরকে থামিয়ে উদ্বিগ্ন কন্ঠে জানতে চাইল,
” আপনি আমার ভাইকে মা*রতে চাচ্ছেন কেনো?”
” মা*রবো না তো কি চুমু খাবো? অবশ্য চুমু খাওয়ার জন্য তো তুই ই আছিস।”
মেঘ ঠোঁট উল্টিয়ে নিরেট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আবির শক্ত কন্ঠে বলল,
” ইসস, ভাল্লাগে না।”
মেঘ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,
“কেনো? কি হয়েছে?”

” সেজেগুজে পুরো পুতুল হয়ে আসছিস। ধরতেও পারছি না, কিছু করতেও পারছি না। দূর, ভাল্লাগে না।”
মেঘ আনমনে বলে উঠল,
” না সাজলে কি করতেন?”
আবির মেঘের চোখের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হেসে আস্তে করে চোখ মেরে বলল,
” রোমান্স। ”
মেঘ অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে। আবির প্রথমবারের মতো মেঘকে চোখ মেরেছে। হতবিহ্বল মেঘ নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। আবির দু’কদম এগিয়ে এসে মেঘের কানের কাছে ফিসফিস করল,
” এভাবে তাকিয়ে নিজের বিপত্তি ডেকে আনিস না, আমাকে তোর সাজ নষ্ট করাতে বাধ্য করিস না, প্লিজ।”
মেঘ নিজেকে সামলে অনুষ্ণ কন্ঠে বলল,

” শাওয়ার নিয়ে আসুন তাড়াতাড়ি।”
আবির বিছানার পাশে ধপ করে বসে উদাসীন কন্ঠে বলল,
” শার্টের বোতামগুলো খুলে দে।”
“আমি পারব না।”
“তাহলে আমিও শাওয়ার নিতে যাব না।”
আবির ভ্রু নাচালো, মেঘ কপালে কয়েকস্তর ভাঁজ ফেলে এগিয়ে এসে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলল,
“আপনি বড্ড জ্বালাচ্ছেন।”
আবির ঠোঁট ভিজিয়ে নরম স্বরে বলল,
“পাগলকে উসকাবে আর তার পাগলামি সহ্য করবে না তা কি করে হয়, সোনা।”
‘সোনা’ শব্দটা শুনেই মেঘ থম মেরে দাঁড়িয়ে পরেছে। পরপর দ্রুত গতিতে সব বোতাম খুলে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” শেষ, তাড়াতাড়ি যান।”

আবির মুচকি হেসে টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমে যেতে যেতে রাগী স্বরে বলল,
” রুম থেকে বের হলে আমি কিন্তু বিয়েই করব না।”
মেঘ রাগী চোখে তাকাতেই আবির ঠান্ডা কন্ঠে বলে উঠল,
” এত কিউট করে সেজে এভাবে তাকাস কেন? যাচ্ছি তো।”

আবির ওয়াশরুমে ঢুকে গেছে। মেঘ বিছানার এক কোণে বসে আনমনে হাসছে। আজকের আবির ভাই যেন আগাগোড়ায় ভিন্ন, কথায় কথায় লজ্জা দেয়ায় যেন তার একমাত্র কাজ। লজ্জায় মেঘের গালে দেয়া গোলাপী ব্লাশন এখন টকটকে লাল দেখাচ্ছে। মেঘ আবিরের হলুদের পাঞ্জাবি টা দেখছে। গায়ে হলুদের পুরো শপিং তানভির একায় করেছে যদিও আবিরের পছন্দের বাহিরে কিছুই কেনে নি। আবিরের যে রঙের পাঞ্জাবি পড়ার ইচ্ছে, মেঘকে যে রঙের শাড়ি পড়ানোর ইচ্ছে ছিল আর ঠিক যেভাবে সাজানোর ইচ্ছে ছিল তানভির সেভাবেই সবটা করেছে। আপাতত বাহিরের ফটোশুট হবে। সন্ধ্যার পর মেইন পোগ্রাম শুরু হবে। তখনের জন্য লেহেঙ্গা কিনে রেখেছে। আবির কিছুক্ষণের মধ্যে কোমড়ে টাওয়েল জড়িয়ে বেড়িয়ে আসছে। লাজুক মেঘ এক পলক দেখে লজ্জায় সেই যে মাথা নিচু করেছে আর চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। আবির আরেকটা শুকনো টাওয়েল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে স্বাভাবিক কন্ঠে জানতে চাইল,

” কোথায় ছবি তুলবি?”
মেঘ একনাগাড়ে অনেকগুলো জায়গার নাম বলল। আবির প্রশস্ত নেত্রে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
“এই তিনদিন কি শুধু জায়গায় ঠিক করছিস?”
“হ্যাঁ।”
আবির আস্তে করে বলল,
“এখন পাঞ্জাবি টা পড়িয়ে দেন।”
মেঘ আবারও ঠোঁট উল্টালো। আবির সঙ্গে সঙ্গে বলল,
“যত দেরি করবি তত কম ছবি তুলতে পারবি এই আমি বলে রাখলাম। শ্বশুরের সাথে মিলে জামাই কে কষ্ট দেয়া না? এর প্রতিশোধ আমি কড়ায়-গণ্ডায় ফেরত নিব।”
মেঘ ধীর গতিতে পাঞ্জাবির বোতাম খুলছে আর মনে মনে আবিরকে বকছে,
” বেহায়া, বেয়াদব ব্যাটা।”
অকস্মাৎ কেউ একজন দরজায় ডাকল৷ মেঘ দরজার দিকে তাকিয়ে উঁচু স্বরে বলল,
“দরজা খোলায় আছে।”

দরজা খুলতেই মালার গম্ভীর মুখ ভেসে উঠলো। আবির মালাকে দেখেই তড়িৎ বেগে বিছানার উপর রেখে দেয়া টাওয়েল টা টেনে নিজের গা ঢেকে ফেলেছে। আবিরের ঝড়ের গতিতে গা ঢাকা দেখে মালা ঠোঁট বাঁকালো। মেঘ মালাকে দেখে হাসিমুখে বলল,
“আপু কেমন আছেন?”
“ভালো।”
মেঘ পুনরায় বলল,
“ভেতরে আসুন।”
আবির এবার শক্ত কন্ঠে মেঘকে বলল,
” পাঞ্জাবি কি পড়িয়ে দিবি?”
মালা আবিরকে এক নজর দেখে রাশভারি কন্ঠে বলল,

” অসময়ে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। ফুফা তোমাদের ডাকতেছে, এটায় বলতে আসছিলাম। ”
” ধন্যবাদ, আব্বুকে গিয়ে বল একটু সময় লাগবে আর যাওয়ার আগে দরজাটা চাপিয়ে রেখে যা।”
মালা দাঁতে দাঁত চেপে দু’হাতে ঠাস করে দরজা বন্ধ করেছে। উচ্চশব্দে আবির মেঘ দুজনেই চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। মেঘ চোখ খুলে শান্ত গলায় বলল,
” আপুর সাথে এভাবে কথা বলা ঠিক হয় নি আপনার।”
“ঠিক-বেঠিক আমাকে বুঝাতে হবে না ম্যাডাম। এই মালা আমাকে খুব জ্বালিয়েছে। শুধুমাত্র আব্বুর ভয়ে এতদিন বাড়াবাড়ি করি নি নয়তো মালাকে অনেক আগেই শায়েস্তা করে ফেলতাম।”

মেঘ কেবল মুচকি হাসলো, কিছু বলার প্রয়োজন মনে করলো না। আবির রেডি হয়ে মেঘকে নিয়ে নিচে নামছে। আবিরের মামার বাড়ির সবাই ইতিমধ্যে চলে আসছে। মেঘের মামা বাড়ির মানুষ এখনও আসে নি। মাইশা আপুর লাস্ট মাস চলছে, কিছুদিনের মধ্যে ডেলিভারি তাই ওনি আজ আসতে পারেন নি। শরীর সুস্থ থাকলে বিয়ে বা বৌভাতে অন্ততপক্ষে আসবেন। আবির মামা মামীদের সাথে কথা শেষ করে বাসা থেকে বের হলো। বাসার সামনে তানভির দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বন্যাকে একাধারে কল দিয়েই যাচ্ছে। আবির আচমকা তানভিরের এক হাত পেছনে চেপে ধরে রাগান্বিত কন্ঠে বলল,

” শালা, তুই আব্বুর কাছে গেছিলি কোন সাহসে?”
মেঘকে আতঙ্কিত কন্ঠে বলল,
“প্লিজ, ভাইয়াকে ছাড়ুন।”
তানভির ব্যথায় আর্তনাদ করতে করতে তপ্ত স্বরে বলল,
” আমাকে মেরে লাভ নেই। আমরা না গেলে আজকের এই স্পেশাল দিনটা পেতেই না।”
তানভিরকে ছেড়ে আবির উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধালো,
“আমরা মানে? আর কে কে গেছিলি?”
“রাকিব ভাইয়া, রাসেল ভাইয়া।”

“হারামির দল। ঐদিন আমাকে ফেলে আসার কারণ এটায় ছিল ওদের? তোরা সব কয়টাকে দেখে নিব শুধু কয়েকটা দিন যাক।”
এরমধ্যে সাকিব আসছে৷ এক দৌড়ে এসেই আবিরকে জড়িয়ে ধরে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
” ভাইয়া, ফাইনালি আমি তোমাদের বিয়ে খেতে আসছি। ভাবতেই পারছি না। ”
সাকিব আচমকা ঘাড় কাত করে আহ্লাদী কন্ঠে বলল,
“হাই ভাবি”
“হাই।”
আবির আড়চোখে তানভিরের দিকে তাকালো। তানভির বন্যাকে কলের পর কল দিচ্ছে দেখে আবির মৃদুস্বরে বলল,
“যতই চেষ্টা কর, আমার রেকর্ড ভাঙতে পারবি না।”
“রেকর্ড ভাঙার কোনো ইচ্ছে নেই আমার, আপাতত মেয়ের রাগটা কমলেই চলবে।”
আবির রাশভারি কন্ঠে বলল,
” এসব বাদ দিয়ে বিকেলে সোজা ওদের বাসায় যাবি। ওর আব্বু, আম্মু, বোনকে দাওয়াত দিবি সাথে করে বন্যা আর তার ভাইকে নিয়ে আসবি।”

মেঘ, মীম, আরিফ, আইরিন, সাকিব, তানভির আর আবির ফটোশুট করতে বেড়িয়েছে, সাথে ক্যামেরাম্যান তো আছেই। সবাই হাসিখুশিতে থাকলেও আরিফ আর মীম একটু পর পর ঝগড়া লেগে যায়। একবার তানভির আরেকবার আইরিন আঁটকে আঁটকে রাখছে। ফটোশুটের লাস্ট দিকে তানভির ওদের থেকে বিদায় নিয়ে বন্যাদের বাসায় আসছে। সাথে দুটা কার্ডও নিয়ে আসছে, একটা নরমাল দাওয়াতের কার্ড অন্যটা বন্যার জন্য স্পেশালভাবে বানানো। যদিও প্ল্যানটা মেঘ ই দিয়েছে। তানভির বাসায় ঢুকতেই বন্যার বড় বোনের সাথে দেখা। তানভিরকে দেখেই মোলায়েম কন্ঠে বলল,

” কেমন আছো ভাইয়া?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন আপু?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
“আংকেল আন্টি বাসায় নেই?”
” আব্বু, আম্মু আর রিদ একটু বাহিরে গেছে। বসো, শুনলাম মেঘের বিয়ে। ”
তানভির বিয়ের কার্ড হাতে দিয়ে বলল,
” জ্বি আপু। হুট করে সবকিছু ঠিক হয়েছে যে সময় নিয়ে ঐভাবে দাওয়াত দেয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি। আমাদের কিন্তু দু’দিনের ই দাওয়াত। আগামীকাল কমিউনিটি সেন্টারে আর পরশুদিন বাসায়। আংকেল আন্টিকে বলবেন অবশ্যই যেতে হবে। আর এখন আপনি আর বন্যা রেডি হয়ে আমার সাথে বাসায় চলুন।”

“আরে না ভাই, আমি যাব না। বন্যাকে নিয়ে যাও, মেঘ আরও পাঁচবছর আগে থেকে আমাকে বলে রাখছে ওর বিয়েতে বন্যাকে কম করে হলেও তিনদিনের জন্য দিতে হবে। আমিও মেঘকে কথা দিয়েছিলাম, বন্যার বিয়ে না হলে আমি আব্বু আম্মুকে বুঝিয়ে তিনদিনের জন্য পাঠাবো। এখন দেখো মেঘের বিয়ের কথা শুনার পর থেকে সেই যে মুখ ফুলিয়ে রুমে ঢুকেছে আর বের ই হচ্ছে না। গত দুইদিন আব্বু অসুস্থ ছিল এ অবস্থায় বাসা থেকে বের হতে পারছিল ঠিকই তবে ২৪ টা ঘন্টা শুধু মেঘ কি করছে, মেঘের কি হয়েছে, মেঘ কেমন আছে এসব করেই কাটিয়েছে। আব্বু অসুস্থ না থাকলে আমি নিজেই বন্যাকে নিয়ে তোমাদের বাসা থেকে ঘুরে আসতাম।”

“বন্যা কোথায় এখন?”
” রুমে। ”
“ওর সাথে একটু কথা বলা যাবে?”
“আসো”
বন্যার বোন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জোরে ডাকতে ডাকতে বলল,
” এই বন্যা, দরজা খোল। মেঘের ভাই তোর সাথে কথা বলতে আসছে।”
“আমি দরজা খুলবো না, ওনাকে চলে যেতে বলো।”
“বন্যা, তানভির এখানে দাঁড়িয়ে আছে দরজাটা খোল।”
“বললাম তো খুলবো না।”
তানভির এবার মোলায়েম কন্ঠে বললো,

” বন্যা, প্লিজ দরজা টা খুলো৷”
” আপনি চলে যান এখান থেকে৷ ধুমধাম করে বোনের বিয়ে দেন গিয়ে।”
তানভির কপালের ঘাম মুছে শক্ত কন্ঠে বলল,
” তুমি না গেলে বনু বিয়েতে বসবে না কারণ টা তুমি খুব ভালোভাবেই জানো।”
বন্যা এবার একটু থামলো। তানভির শান্ত কন্ঠে পুনরায় বলল,
” প্লিজ বন্যা, দরজা টা খুলো। আমার কথাগুলো অন্তত শুনো।”
বন্যা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে দরজা খুলে রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
” সবকিছু ঠিকঠাক করে এখন আমাকে মিথ্যা গল্প শুনাতে আসছেন?”

বন্যার বোন ধীর কন্ঠে বলল,
” বন্যা, আস্তে কথা বল। ”
তানভির মৃদুস্বরে বলল,
“সমস্যা নেই আপু। ও কে বলতে দেন।”
বন্যার বোন স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
” তুমি ওর সাথে কথা বলো আমি চা নিয়ে আসছি।”
বন্যার বোন চলে যেতেই তানভির মলিন কন্ঠে বলল,
“সরি।”
বন্যার দুচোখ বেয়ে অনর্গল পানি পড়ছে। কাঁদতে কাঁদতে বলতে শুরু করল,

“সরি? মেঘের চিন্তায় আমি দু রাত একফোঁটাও ঘুমাতে পারি নি৷ আমি সেদিন কথাগুলো না বললে মেঘ শাড়ি পড়ে বের হতো না আর পরবর্তী ঘটনাগুলোও ঘটতো না। সব দোষ আমার, আমি মেঘের ভালো চাইতে গিয়ে খারাপ করে ফেলেছি, এসব ভেবে উঠতে বসতে আমার নিজেকে মা*রতে ইচ্ছে করছিল৷ আপনাকে কতশত কল দিয়েছি, এক পর্যায়ে আপনি আমার নাম্বার টা পর্যন্ত ব্লক করে দিয়েছেন। আমি দিশাবিশা পাচ্ছিলাম না, বাসায় আব্বু অসুস্থ, ঐদিকে মেঘের কি হয়েছে জানতে পারছিলাম না। আপনাদের বাসায় যাওয়ার শক্তি আর সাহস কোনোটায় পায় নি। আমাকে এত কষ্ট কেন দিয়েছেন আপনারা? আমি আপনাদের কি এমন ক্ষতি করেছি? একটাবারের জন্যও কি জানানো যেতো না আমায়?”

তানভির বন্যার দিকে তাকিয়ে অনুষ্ণ কন্ঠে বলতে শুরু করল,
” তুমি বিশ্বাস করো, আমি বা বনু চাইলেও কিছু করতে পারছিলাম না৷ যেখানে ভাইয়ার সাথে পর্যন্ত যোগাযোগ বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে সেখানে কতটা চাপে ছিলাম আমি একবার ভাবো। তোমাকে তো আগেই বলেছি বনুর ফোন বড় আব্বুর কাছে জমা ছিল। আর আমি গত তিনদিনে নিজের ইচ্ছেতে কোনোদিকে পাও বাড়াতে পারি নি৷ ঘুমাতে গেলে পর্যন্ত বড় আব্বুর অনুমতি নিয়ে যেতে হয়েছে।

আমাকে এমনভাবে থ্রেট করা হয়েছে, যদি আমি কোনোভাবে ভাইয়ার সাথে বা কারো সাথে ভাইয়ার বিষয় নিয়ে কথা বলি তাহলেই বিয়ে বাতিল। একজন মানুষ যদি ১০ মিনিট, ২০ মিনিট, ৩০ মিনিট অন্তর অন্তর কল দিয়ে কাজের অর্ডার দেন আর সেই কাজ হয়েছে কি না সেটার প্রমাণ পর্যন্ত চান। ঐ অবস্থায় আমি কিভাবে কি করতাম বলো, তোমাকে বাসা থেকে বের করে যে দুটা কথা বলবো এটুকু সময়ও আর সুযোগও আমাকে দেয়া হয় নি। শুধু আমি না, রাকিব ভাইয়া আর রাসেল ভাইয়াও থ্রেটের উপরে ছিল। বিভিন্ন প্রয়োজনে বড় আব্বুর সামনে দাঁড়িয়ে একে তাকে কল দিতে হচ্ছিল সেখানে বারবার তোমার কল আসা কতটা বিপদজনক একবার ভাবো। আমি সত্যি ই দুঃখিত, এখন প্লিজ চলো।”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৭১ (৩)

তানভির বন্যার জন্য আনা স্পেশাল কার্ডটা বন্যাকে দিল। বন্যা কার্ডটাকে ভালোভাবে পরখ করে চোখ মুছে চাপা স্বরে বলল,
” আমি যাব তবে শুধুমাত্র মেঘের জন্য।”
তানভির মুচকি হেসে বলল,
” ধন্যবাদ। ”
বন্যা ফোঁস করে উঠল,
” ধন্যবাদ দিতে হবে না। আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই। ”
তানভির মনমরা হয়ে বলল,
” আমার কি দোষ?”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৭২