আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৭২ (৩)
লেখনীতে সালমা চৌধুরী
আবির পাশ ফিরে রাকিবের দিকে ক্ষুদ্র চোখে তাকিয়ে অত্যন্ত মোলায়েম কন্ঠে বলল,
” ও চাইলে হাসিমুখে জীবনটাও দিয়ে দিতে পারবো সেখানে তাকে পাওয়ার জন্য এই সামান্য ডিমান্ড আর এমন কি!”
রাকিব তপ্ত স্বরে বলল,
” আবেগ ছেড়ে বিবেক দিয়ে কথা বলল। বুঝছি তুই বউ পাগল, বউয়ের জন্য যা খুশি করতে পারিস তাই বলে যে যা বলবে তাই?”
“ও শুধু আমার আবেগ না, আমার চিত্ত চাঞ্চল্যের এক ফালি সুখের আভাস।”
” হয়েছে, বুঝেছি। বজ্জাত ছেলে, তোর জন্য একটু মজাও করতে পারবো না। ”
আবির আড়চোখে তাকিয়ে মলিন হাসলো। আবির কানে কানে রাকিবকে কিছু বলতে চেয়েছে কিন্তু রাকিব সে কথা না শুনে আবিরের থেকে কিছুটা দূরে সরে রাগী স্বরে বলতে শুরু করল,
” তোর আর কোনো কথায় শুনছি না আমি…!”
তানভির মুচকি হেসে বলে উঠল,
“রাকিব ভাইয়া, তোমার যা মজা করার ইচ্ছে আমার বিয়েতে করো। তোমার বন্ধুর বিয়েতে মজা করার আশা ছেড়ে দেও।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তুইও যে তোর ভাইয়ের মতো আচরণ করবি না তার কি গ্যারেন্টি আছে? শত হোক তোদের রক্ত তো এক।”
আলী আহমদ খান ভেতর থেকে হুঙ্কার দিলেন,
” গেইট থেকে ভেতর পর্যন্ত আসতে এতক্ষণ সময় লাগে তোমাদের?”
আবির তৎক্ষনাৎ চোখে ইশারা দিল, রাকিব টাকা বের করেও দিতে চাচ্ছে না। আইরিন, মীম, রিয়ারা জোরজবরদস্তি করে নিয়েছে। আবিরকে মালা পড়িয়ে, সাদা গোলাপ দিয়ে ভেতরে নেয়া হয়েছে। আলী আহমদ খান, মোজাম্মেল খান সহ আরও কয়েকজন একসঙ্গে বসে আছেন। আবির ঢুকতেই আলী আহমদ খান ডাকলেন,
“আবির, একটু এদিকে আসো।”
আবির তটস্থ হয়ে বলল,
” জাস্ট এক মিনিট আব্বু। এখুনি আসছি।”
আবির সবাইকে ফেলে চটজলদি মেঘের সাথে দেখা করতে চলে গেছে। কমবেশি সবাই গেইটের কাছে ছিল তাই মেঘের আশেপাশে তেমন বড় কেউ নেই। আদি সহ আরও কয়েকটা পিচ্চি ছুটাছুটি করছে। আবির মেঘের কাছাকাছি এসে কোমল কন্ঠে সালাম দিল, মেঘও মোলায়েম কন্ঠে সালামের উত্তর দিল। আবির মেঘের সামনে এসে দুই হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে কিছুটা ঝুঁকে ঘোমটার আড়ালে থাকা মেঘকে একপলক দেখে নিল। আবিরের অনভিপ্রেত কাণ্ড দেখে মেঘ অলক্ষিতভাবে হেসে ফেলল। আবির মেঘের মুখের পানে গভীর মনোযোগে চেয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে নেশাক্ত কন্ঠে বলল,
“একটু ভয়ে ছিলাম তাই দেখতে আসছি, কিছু মনে করিস না৷ কেমন!”
মেঘ তপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঠান্ডা কন্ঠে বলল,
” আপনাকে রেখে পালাবো না, আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।”
আবির চটজলদি মেঘের হাতে আলতোভাবে চুমু খেয়ে তটস্থ কন্ঠে বলল,
” আব্বু ডাকছে, এখন যায়।”
আবির সামনে যেতেই আলী আহমদ খান জিজ্ঞেস করলেন,
” কোথায় গিয়েছিলে?”
আবির মাথা নিচু করে বিড়বিড় করল,
“মেঘকে দেখতে।”
“৫ মিনিট কথা বলার জন্য ডেকেছিলাম, এটাও সহ্য হয় নি তোমার?”
আবির নিরুদ্বেগ ভঙ্গিতে বলল,
“আসলাম তো, এখন বলুন।”
আবিরের নিরুদ্বেগ ভাবভঙ্গি দেখে মোজাম্মেল খান ঠোঁট চেপে হাসলেন, সাথে আবিরের বড় মামাও মৃদু হাসলেন। তবে আলী আহমদ খান ছেলের কর্মকাণ্ডে বেশ ক্ষুদ্ধ। আবির ২-৪ মিনিট কথা বলে আবারও মেঘের কাছে চলে গেছে কিন্তু ততক্ষণে মেঘের চারপাশে সবাই জড়ো হয়ে গেছে। আবিরের আব্বু, রাকিব, মেঘের আব্বু, তানভির কাজীর সাথে কথা বলে সবকিছু ঠিকঠাক করছে। মেঘ আবিরের উপস্থিতিতে, তাদের সম্মতি নিয়ে মৌখিকভাবে বিয়ের কাজ শেষ হয়েছে। বিয়ের যাবতীয় কাজ শেষে খাওয়াদাওয়ার পর্ব শুরু হয়েছে। মেঘ, আবির, বন্যা, তানভির, রাকিব, সাকিব সবাই একসঙ্গে বসেছে, খেতে খেতে টুকটাক খুনসুটি করছে। মিনহাজরা এসেছে অনেকক্ষণ হবে কিন্তু মেঘের জন্য বন্যা ওদের সাথে ঠিকমতো কথাও বলতে পারছে না। এর কিছুক্ষণ পরেই সিফাত আসছে, আলী আহমদ খান সিফাতকে দেখেই এগিয়ে গিয়ে হাসিমুখে কথা বলতে শুরু করেছেন। এদিকে মোজাম্মেল খান বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ চিন্তিত। সিফাত কিছুটা দূরে যেতেই মোজাম্মেল খান কিছুটা চিন্তিত স্বরে ডাকলেন,
“ভাইজান”
“হ্যাঁ, বল।”
“আবির আর মেঘের বিয়ের কাজ কি শেষ?”
“হ্যাঁ, কেনো?”
“না মানে কাবিনের কাজ টা বাকি রয়ে গেল না?”
আলী আহমদ খান গুরুভার কন্ঠে বললেন,
” ছেলে আমার মেয়ে তোর, সবচেয়ে বড় কথা তারা দু’জন দু’জনকে মন থেকে ভালোবাসে। তুই কাবিন দিয়ে কি করবি? তারপরও যদি তোর মনে হয় তাহলে ঘরোয়াভাবে বসে সেটার সমাধান করা যাবে। ”
” আমি ঐভাবে বলতে চাই নি।”
আলী আহমদ খান কপাল গুটিয়ে ধীর কন্ঠে বললেন,
“বিবাহ সম্পাদনের জন্য বা বিবাহ বৈধ হওয়ার জন্য ‘কাবিননামা’ অপরিহার্য না। কাবিননামা একটা আইনি বাধ্যবাধকতা মাত্র। প্রাপ্তবয়স্ক দুজন ছেলে মেয়ের সম্মতি নিয়ে, সব নিয়মকানুন মেনেই বিয়ে হয়েছে এতে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।”
আলী আহমদ খান একগাল হেসে ফের বললেন,
” এখন খেতে চল।”
“চলো।”
মেঘ আর আবিরের ফটোশুট চলছে। বন্যা কাছেই দাঁড়িয়ে আছে যেন মেঘের কোনো সমস্যা হলে ঝটপট যেতে পারে। বন্যার আব্বু, আম্মু, ভাই আর বোন এসেছিলো, খাওয়াদাওয়া করে মেঘ আবিরের সাথে কয়েকটা ছবি তুলে কিছুক্ষণ আগেই বেড়িয়েছে। ওনারা চলে যাওয়ার খানিক বাদে আচমকা তানভির এসে বন্যার পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালো। তানভিরকে দেখেই বন্যা কিছুটা সরে যাওয়ার চেষ্টা করলো। তানভির সহসা শীতল কন্ঠে বলল,
” তারপর বলো, তুমি কবে বিয়ে করবে। ”
বন্যা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠল,
“মানে?”
“বিয়ে করবে না?”
” আগে আপুর বিয়ে হোক তারপর ভেবে দেখবো।”
তানভির মনমরা হয়ে বলল,
” ওহ।”
বন্যা ভণিতা ছাড়াই প্রশ্ন করল,
“কেনো বলুন তো..”
“তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, তোমার খারাপ লাগছে না?”
“খারাপ কেনো লাগবে? মেঘ তার প্রিয়মানুষকে বিয়ে করতে পেরেছে, এতে আমি খুব খুশি। ”
” তোমার প্রিয়…” বলতেই মোজাম্মেল খান দূর থেকে উচ্চস্বরে ডাকলেন,
“তানভির”
তানভির ভয়ে আঁতকে উঠে,
” ও বাবা ”
বলে তড়িৎ বেগে বন্যার পাশ থেকে সরে গেছে। বন্যা উদ্বেগহীন চোখে তাকিয়ে আনমনে হাসলো। বাহিরে তানভির যতই রাগী রাগী ভাব নিয়ে থাকুক না কেনো, বাসার ভেতরে সে আপাদমস্তক ভীতু একটা ছেলে। মীম টেবিলে মাথা রেখে মুগ্ধ চোখে চেয়ে আবির আর মেঘকে দেখছে। মেঘের চোখে মুখে লজ্জা লজ্জা ভাব থাকলেও আবিরের চোখে লজ্জার ছিটেফোঁটাও নেই। নতুন জামাইয়ের যেসব গুণাবলি থাকা প্রয়োজন তার একটাও আবিরের মধ্যে নেই। এই একবার মেঘের সাথে দুষ্টামি করছে, আবার তানভির, রাকিবের সঙ্গে দুষ্টামি করছে, ছবি সুন্দর না হলে ফটোগ্রাফারের মাথায় গাট্টা দিয়ে স্টাইল শিখিয়ে দিচ্ছে। মীম সেগুলোই মনোযোগ দিয়ে দেখছে। আরিফ একটা আইসক্রিম মীমের সামনে রেখে মৃদুস্বরে বলল,
“খেয়ে নাও”
মীম মাথা তুলে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
” আমি কেনো খাবো?”
” গরমের মধ্যে আইসক্রিম টা খেলে তোমার ভালো লাগবে তাই নিয়ে আসছি।”
মীম গম্ভীর মুখ করে বলে উঠল,
” আমার ভালো কবে থেকে চিন্তা করা শুরু করেছো তুমি?”
“যেভাবে এদিক সেদিক হোঁচট খাচ্ছো, চিন্তা না করে উপায় আছে?”
মীম মুচকি হেসে আস্তে করে বলল,
” তুমি ধাক্কা না মারলেই হলো।”
শেষ বিকেলের দিকে হালিমা খানরা বাসায় চলে আসছেন। মেঘ আর আবিরকে বরণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কাজের ফাঁকে মাহিলা খান অকস্মাৎ প্রশ্ন করে বসলেন,
” তোর মেয়ের বিয়েতে তুই খুশি তো বোন?”
হালিমা খান মুচকি হেসে বললেন,
“একটা কথা বলবো আফা?”
” বল।”
“আবিরের সাথে মেঘের বিয়ের ব্যাপারে আমি আরও অনেকদিন আগেই ভেবেছিলাম। ”
“সত্যি? আমাকে বলিস নি কেনো?”
“কিভাবে বলতাম বলো, এই বাড়ির পুরুষদের কিছু বলতে গেলে ভয় লাগে অন্ততপক্ষে বিয়ের বিষয়ে। প্রথমে মেঘের আব্বুকে বলতে চেয়েছি কিন্তু ওনার ছেলে দেখার তোরজোর দেখে আর বলতে পারি নি, তারপর একদিন আকলিমাকে কথার কথা এমনিতেই বললাম, সে তো ভয়ে শেষ। আমাকে সঙ্গে সঙ্গে বারণ করেছে যেন তোমাকে কিছু না বলি। আমি সব ভুলে একদিন তোমাকে বলে ফেলতে চেয়েছিলাম তৎক্ষনাৎ তোমার অতীতের ঘটনা মনে পড়ে গেছিলো। আমার উল্টাপাল্টা চিন্তার জন্য বাসায় যেন নতুন কোনো অশান্তি সৃষ্টি না হয় এজন্য আর কিছুই বলি নি৷ ”
আবিরের আম্মু শীতল কন্ঠে জানালেন,
” যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। ছেলেমেয়ে পছন্দ করেছে, তারা ভাইয়ে ভাইয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এতে আমাদের কোনো হাত নেই ”
মেঘের আম্মু মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ছেড়ে মৃদুস্বরে বললেন,
” আমার মেয়েটার জন্য একটু ভয় হচ্ছে, আফা।”
“কেনো?”
” আমি জানি আবির মেঘকে অনেক পছন্দ করে, সারাজীবন আগলে রাখবে কিন্তু সবকিছুর পরেও আবিরের শরীরে ভাইজানের রক্তই বইছে তাছাড়া ওর রাগটাও বেশি। রাগের মাথায় মেঘের সাথে যদি খারাপ আচরণ করে। ”
মালিহা খান মলিন হেসে বললেন,
” এখনই এত ভয় পাচ্ছিস কেনো, ওরা তো আমাদের চোখের সামনেই থাকবে। যা হবে দেখা যাবে। ”
সন্ধ্যার আগে আগে আবির-মেঘ বাসায় আসছে। ওদের বরণ করে, দুধ, মিষ্টি খাইয়ে বাকি নিয়মকানুন শেষ করে মেঘকে নিয়ে মালিহা খান ভেতরে চলে যাচ্ছেন। এদিকে আবির ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছে। সবার পূর্ণ মনোযোগ মেঘের দিকে দেখে আবির ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,
” আমি এখন কি করবো?”
মালিহা খান তপ্ত স্বরে বললেন,
” তোর যা ইচ্ছে কর গিয়ে।”
আবির দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করল,
“বউটাকে দিয়ে গেলে অন্তত দেখতে তো পারতাম। ”
বন্যারা পরের গাড়ি দিয়ে আসছে তাই একটু দেরি হয়েছে। মীম, আইরিন আর বন্যা গেইটের কাছে আসতেই তানভির গুরুভার কন্ঠে ডাকল,
” বন্যা। ”
বন্যা সহ আইরিন আর মীম স্পষ্ট চোখে তাকিয়েছে। তানভির তৎক্ষনাৎ বলে উঠল,
“আমি বন্যাকে ডেকেছি, তোদের নাম বন্যা?”
“না।”
“তাহলে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?”
বন্যা মৃদুস্বরে বলল,
“কিছু বলবেন?”
সঙ্গে সঙ্গে মীম, আইরিন একসঙ্গে বলে উঠলো,
“কিছু বলবা?”
তানভির মুখ ফুলিয়ে রাগী স্বরে বলল,
” না। ”
মীম আর আইরিন বন্যাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। তানভির কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে থেকে আবিরের কাছে গেল। তানভির কপাল কুঁচকে এক দৃষ্টিতে বন্যার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
” ভাইয়া, তোমার বিয়ে টা তো শেষ হলোই এবার আমার টা নিয়ে একটু ভাবো।”
আবির চোখ ঘুরিয়ে তানভিরের দিকে তাকিয়ে রাশভারি কন্ঠে বলল,
” আগামী দু’বছর এই বাড়িতে আর কোনো বিয়ে হবে না। ”
“আমি চাকরি নিলেও না?”
“না”
“কোনো? ”
“আমার বউ অন্ততপক্ষে দু’বছর এই বাড়ির একমাত্র বউ হয়ে রাজত্ব করবে। তোর বোনের বউ বউ ফিল শেষ হলেই তার ভাবিকে নিয়ে আসবো ততদিনে তুই নিজেকে গুছা৷”
“তাই বলে দুই বছর?”
“দেখ তানভির, তুই আমার থেকে বয়সে দুই বছরের ছোট তাই বিয়েটাও দু’বছর পর করা উচিত । তাছাড়া আমি তোর বোনের মানসিক শান্তিতে ব্যাঘাত দিব না। তোকে ছয় মাসের মধ্যে বিয়ে করালাম সবকিছু ঠিকঠাক চললো। কোনো এক দিন, হয়তো আজ থেকে ১০ বছর পর মেঘ আমার কাছে এই অভিযোগটা করল তখন আমি কি করবো? ও কে কি এই দিনগুলো ফিরিয়ে দিতে পারবো?”
তানভির মন মরা হয়ে বলল,
” থাক, আমি আর কিছু বলব না।”
তানভির মন খারাপ করে চলে যাচ্ছে। আবির মৃদু হেসে ফের ডাকল, কিন্তু তানভির আর তাকালো না। অবশ্য তাকালেও বিশেষ কোনো লাভ হবে না কারণ আবির যা ভেবে রেখেছে তাই হবে, তানভির জোরপূর্বক কোনোকিছু পরিবর্তন করতে পারবে না আর করতে চাইও না। আগামীকাল আবিরদের বাসায় অনুষ্ঠান হবে, একেবারে কাছের মানুষজন ছাড়া অতিরিক্ত কোনো মানুষ থাকবে না৷ আবিরের আব্বু চেয়েছিলেন একদিনেই অনুষ্ঠান শেষ করতে কিন্তু মোজাম্মেল খানের এতে দ্বিমত ছিল। ওনি মেয়ের বিয়ের জন্য এত বছর যাবৎ স্বপ্ন দেখেছেন তাই আলী আহমদ খান ওনার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার সুযোগ দিয়েছেন।
আবির আর রাকিব সন্ধ্যার পর পর ই বেড়িয়েছে, ফিরেছে প্রায় ১১ টা নাগাদ। ততক্ষণে বাড়ি মোটামুটি শান্ত হয়ে গেছে। আবির নিজের রুমে যেতে যেতে মেঘের রুমটা দেখে গেছে, রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। সন্ধ্যার পর থেকে মেঘের সাথে আবিরের আর কোনো কথায় হয় নি। আবির দু’তিনবার ডাকতেও গিয়েছে কিন্তু আজ কেনো জানি সাহস পাচ্ছে না তাই রুমে এসে মেঘের নাম্বারে কল দিল, সারাদিনের ক্লান্তিতে মেঘ গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। আবিরের কল বেজেই যাচ্ছে। মেঘের পাশ থেকে মাহমুদা খান ঘুম ঘুম কন্ঠে মেঘকে ডেকে বললেন,
“মেঘ, ফোনটা সাইলেন্ট কর।”
মেঘ ঘুমের মধ্যেই নড়ে উঠলো কিন্তু ফোন ধরলো না।
গতকাল রাতে আবিরের রুমে আসার ঘটনা ছড়াতে ছড়াতে বড়দের কান পর্যন্ত চলে গিয়েছে। তাই মাহমুদা খান ইচ্ছে করেই আজ মেঘের রুমে শুয়েছেন। মেঘের একপাশে মাহমুদা খান অন্যপাশে বন্যা শুয়েছে। দু’বার কল কেটে পুনরায় কল বাজতে শুরু করেছে। বন্যা মেঘের পাশ থেকে ফোনটা একটু তুলতেই আবিরের ছবি ভেসে উঠেছে। বন্যা আস্তে করে বলল,
“ঐ মেঘ, ভাইয়া কল দিচ্ছে।”
ভাইয়া নামটা শুনতেই মেঘের গভীর ঘুম কেটে গেছে। ঘুম ঘুম চোখে পিট পিট করে কল রিসিভ করে কানে ধরল। ফোনের ওপাশ থেকে আবিরের মোলায়েম কন্ঠস্বর শুনা গেল,
“আমার বউটা এখন কি করছে?”
মেঘ ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
“ঘুমাচ্ছে”
আবির মুচকি হেসে বলল,
” কিন্তু আমার যে তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।”
“সকালে বলব।”
“না, এখনি বলতে হবে। ”
মাহমুদা খান আস্তে করে বললেন,
” মেঘ, ফোনটা রেখে ঘুমা।”
মেঘ ফিসফিস করে রেখে দেয়ার কথা বলছে কিন্তু আবির নাছোড়বান্দা, কথা তার বলতেই হবে। আবির তপ্ত স্বরে বলল,
“চল ছাদে যায়।”
“কেনো?”
“আমার চাঁদটাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। ”
“এখন ছাদে যেতে পারবো না।”
ছাদের কথা শুনে মাহমুদা খান রাগী স্বরে বলে উঠলেন,
“এই আবির, ফোনটা রাখবি তুই? আর একটা রাত সহ্য করতে পারছিস না?”
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৭২ (২)
✏️Note: আবিরের হঠাৎ পরিবর্তনে যারা খুব বেশি চিন্তিত তাদেরকে বলছি,উপন্যাসের প্রথম পর্বেই উল্লেখ করা ছিল, ”আবিরের চাঞ্চল্যে মেতে থাকতো খান বাড়ি৷” সেই আবিরের চাঞ্চল্য কমার কারণটা আশা করি কারো অজানা না৷ তবুও বলছি, মেঘকে থাপ্পড় দেয়ার অপরাধে মেঘ যখন আবিরের সাথে টোটালি কথা বন্ধ করে দিয়েছিল তখন ধীরে ধীরে আবিরের মনে সেটার প্রভাব পড়ছিল আর সে চুপ হতে শুরু করেছিল । দুই বছর চেষ্টা করে মেঘের সাথে সম্পর্ক ঠিক করতে ব্যর্থ হওয়ায় মেঘের উপর কিছুটা অভিমান করেই দেশ ছেড়েছিল।এছাড়াও বেশ কিছু পর্বে আমি উল্লেখ করেছি, আবির পরিস্থিতির স্বীকার ৷ তাই যারা গুরুগম্ভীর আবিরকে মিস করছেন তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা। 🙂