আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৭৬
লেখনীতে সালমা চৌধুরী
বেলা বাজে ১০ টা ৪৫, আবির বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ফোনে কিছু করছে। অভিমানী মেঘ ঠোঁট ফুলিয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ সেই ভোরবেলা থেকে সমুদ্রে যাওয়ার জন্য বায়না ধরেছে কিন্তু আবির তার কথা কানেই তুলছে না। মেঘ হঠাৎ ই পুরু কন্ঠে বলে উঠল,
“আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন না?”
আবির ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকেই আস্তে করে বলল,
” বিয়ের পর থেকে কানে একটু কম শুনছি।”
“কেনো?”
” সারাক্ষণ যেভাবে আপনি আপনি করেন এসব শুনার থেকে কানে কম শোনাও ভালো।”
মেঘ মন খারাপ করে বলল,
” চলুন না সমুদ্রে যায়।”
আবির হঠাৎ ই চোখ তুলে তাকালো, মেঘের কুঁচকান কপাল আর উল্টানো ওষ্ঠ দেখে আবিরের অধরের কোণে মৃদু হাসি ফুটল। নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে ধাতস্থ করে ঠান্ডা কন্ঠে বলল,
” ইশশ, তুমি তাকালেই আমার হৃদয়ে শোণিতের ঢেউ বয়ে যায়। এই ঢেউয়ের নিকট সমুদ্রের ঢেউ কিছুই না। ”
মেঘ ভেঙচি কেটে বিড়বিড় করল,
” আপনি একটা অস…”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মেঘ সঙ্গে সঙ্গে নিজের মুখ চেপে ধরেছে। আবির প্রশস্ত আঁখিতে চেয়ে অদম্য কন্ঠে বলল,
“বলো বলো, বউয়ের কাছে সভ্য সেজে বিশ্বরেকর্ড করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই৷ আমি নষ্ট পুরুষ হলে আমার বউয়ের কাছে হব, পরনারীর চোখে না হয় সাধু পুরুষই হব।”
মেঘ চোখভরা আকুতি নিয়ে ফের প্রশ্ন করল,
” আপনি যদি সমুদ্রে নাই নিবেন তাহলে ঘুমের মধ্যে আমাকে হা*ইজ্যা*ক করে এনেছিলেন কেনো?”
মেঘের মুখে এমন কথা শুনে আবির ফিক করে হেসে উঠল। কন্ঠস্বরে কোমলতা মিশিয়ে বলল,
” বিয়ে করা বউকে হানিমুনে এনেছি তারজন্য এত বড় কথা! আজই বউয়ের মুখে হা*ইজ্যা*কার শুনতে হচ্ছে, এ জীবন রেখে কি হবে?”
মেঘ ভ্রু কুঁচকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে, আবির এক মনে হেসেই যাচ্ছে। মেঘ কিছু না বলেই উঠে বারান্দায় চলে গেল। আবির বেশ কয়েকবার ডেকেছে কিন্তু মেঘ রুমে আসার নাম ই নিচ্ছে না। আবির বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে মেঘের পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালো। মেঘের চুলের শক্ত বাঁধন খুলে চুলগুলো উন্মুক্ত করে দিল, মেঘের সুদীর্ঘ কেশরাশি বাতাসে এলোমেলো ভাবে উড়ছে। মেঘ চোখ ঘুরিয়ে আবিরের দিকে তাকালো তবে কিছুই বলল না৷ আবির মুচকি হেসে আস্তে করে বলল,
“হৃদয়ে প্রেমের আগুন জ্বালিয়ে
অভিমানে কেনো যেতে চাও অন্তরালে?”
মেঘের নিরবতা দেখে আবির মোলায়েম কন্ঠে ফের বলল,
“রাগ করে না জানু, বিকেলে ঘুরতে নিয়ে যাব।”
“আপনি রুমে যান, আপনার সাথে কোনো কথা নেই।”
“সত্যি তো?”
“হ্যাঁ।”
“ঠিক আছে।”
আবির ভাব নিয়ে রুমে চলে আসছে ঠিকই কিন্তু মেঘ আর আসছে না। ৫ মিনিট পেরিয়ে ১০ মিনিট হতে চলল, মেঘের রুমে আসার কোনো নামই নেই। আবির ফোন হাতে নিয়ে রাকিবের নাম্বারে কল দিল। রাকিব কল রিসিভ করেই গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলল,
“খুব সুখে আছিস না? দরকারে কল দিলেও রিসিভ করার প্রয়োজন মনে করিস না। বউ পেলে আগেই তো সব ভুলে যেতিস এখন আর কি বলব। শুধু একটা কথায় বলি, বউ কিন্তু আমারও আছে।”
আবির রাকিবের কথার প্রতিত্তোরে কিছু না বলে হঠাৎ ই উচ্চস্বরে বলতে শুরু করল,
” রাকিব রে, তুই ঠিকই বলেছিলি। ”
রাকিব থতমত খেয়ে জিজ্ঞেস করল,
” আমি আবার কি বলেছিলাম?”
আবির দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করল,
” চুপ থাক।”
আবির প্রগাঢ় কন্ঠে ফের বলল,
” বিয়ে তো করেছি। কিন্তু এখন বুঝতেছি, তুই যা বলেছিলি একদম ঠিক বলেছিলি। ভেবেছিলাম বিয়ে করলে সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। এই দু’দিনেই আমি আমার গার্লফ্রেন্ডের শূন্যতা উপলব্ধি করতে পারছি।”
ওপাশ থেকে রাকিব চাপা স্বরে বলছে,
” কত নাটক করে বিয়ে টা করলি, এখন আবার গার্লফ্রেন্ড খুঁজিস। হারামি কোথাকার ”
আবির কন্ঠ তিনগুণ শৃঙ্গে তুলে আবারও বলে উঠল,
“রাকিব, তুই তাকে বলে দিস, আমি খুব মিস করছি তাকে।”
মেঘ রুমে আসতেই আবির ফিসফিস করে বলে উঠল,
” কাজ হয়ে গেছে, রাখি এখন।”
মেঘ রাগান্বিত কন্ঠে হুঙ্কার দিল,
“আপনি কাকে মিস করছেন?”
আবির অন্যমনস্কভাবে উত্তর দিল,
“আমার গার্লফ্রেন্ড কে।”
“কে সে?”
“ছিল কোনো এক মায়াবতী।”
” একদম ফাজলামো করবেন না, আমি কিন্তু সিরিয়াস।”
“আমিও সিরিয়াস। তুমি বিশ্বাস করবে না সে আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো। আমাকে দেখার জন্য দিনরাত ছটফট করতো। আমার সাথে কথা বলার জন্য, ঘুরতে যাওয়ার জন্য দিওয়ানা ছিল। অথচ তুমি!”
সামান্য কথাতেই মেঘের দু-চোখ টলমল করছে, একরাশ মন খারাপে মুহুর্তেই মনের উঠোনে অন্ধকার নেমেছে, বুকের বাম পাশে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। মেঘের মন বলছে,
” আবির মেঘ ব্যতীত অন্য কাউকে ভালোবাসতেই পারে না।”
কিন্তু মস্তিষ্ক যেন মনের কথা বুঝতেই চাইছে না, তিক্ততায় বিষিয়ে দিচ্ছে মেঘের কোমল মনটাকে। আবির মুড নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে, আচমকা নাক টানার শব্দে আবির দৃষ্টি ফেরাল। মেঘের চোখ মুখ দেখে আতঙ্কে বিছানা থেকে নেমে মেঘের দু বাহু চেপে ধরে আদুরে কন্ঠে শুধালো,
” এই, কি হয়েছে তোমার?”
মেঘের নিস্তব্ধতা দেখে আবির ভীতিকর কন্ঠে বলতে শুরু করল,
” আগেই বলে দিচ্ছি, একদম কাঁদবে না। তোমার বাপের কলিজার টুকরাটাকে আমি নিয়ে আসছি। যত্নে না রাখতে পারলে আমাকে সোজা জে*লে*র ভা*ত খাওয়াবে।”
মেঘ শীতল চোখে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে জানতে চাইল,
” আপনার কি সত্যি গার্লফ্রেন্ড আছে? ”
আবির নিঃশব্দে হেসে মেঘের কাঁধের উপর আলতোভাবে হাত রেখে মোলায়েম কন্ঠে বলল,
” হ্যাঁ আছে তো, এইযে আমার সামনে। আগে আবিরের নাম শুনলেই যার বুকে তোলপাড় চলতো ৷ আবিরকে দেখার জন্য রাতের পর রাত ব্যালকনিতে অপেক্ষা করতো, না খেয়ে বসে থাকতো। সময়ে অসময়ে আবিরকে দেখার জন্য কারণ ছাড়ায় আশেপাশে ঘুরঘুর করতো। অভিমানে গাল ফুলাতো, সেই অভিমান ভুলে আবারও আবিরের প্রণয়ে আসক্ত হতো। সে প্রেমিকা না হলে আর কি বলো?”
আবির ভ্রু গুটিয়ে ধীর কন্ঠে ফের বলল,
” বউ, তুমি প্রেমিকা হিসেবেই ভালো ছিলে কারণ তখন তুমি আমার জন্য উন্মাদ ছিলে। মনে হচ্ছে বিয়ের পর তুমি সুস্থ হয়ে গেছ তাই আমার প্রতি তোমার পাগলামিও কমে এসেছে।”
মেঘ আবিরের চোখের দিকে তাকিয়ে আনমনে হাসলো। আবির কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেঘ নিচু হয়ে নিজের কাঁধে থাকা আবিরের হাত ছাড়িয়ে বিছানার উপর উঠে দাঁড়িয়েছে। তৎক্ষনাৎ আবিরের শার্টের কলার চেপে আবিরকে নিজের দিকে ঘুরালো। আবির বিপুল চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।
মেঘের গাল আর নাকের ডগা লাল টকটকে হয়ে আছে তবে তার গভীর চোখে উৎকন্ঠার রেশ মাত্র নেই। আবিরের কপালে পড়ে থাকা অগোছালো চুলগুলো খুব যত্নসহকারে গুছিয়ে কিছুটা ঝুঁকে মেঘ অকস্মাৎ আবিরের কপালে নিগূঢ় চুমু দিল। আবিরের প্রশস্ত দুচোখ সহসা দ্বিগুণ প্রশস্ত হয়ে গেছে, নিঃশ্বাস আঁটকে গেছে । মেঘ কিছুটা সরতেই আবিরের বিমোহিত চাহনির মুখোমুখি হলো।
আবিরের চাহনি দেখে মেঘ ভেতরে ভেতরে লজ্জায় আড়ষ্ট হচ্ছে ঠিকই তবে বাহিরে প্রকাশ করলো না। মেঘ ঢোক গিলে সঙ্গে সঙ্গে আবিরের অধরে নিজের অধর চেপে ধরেছে। আবির তড়িৎ বেগে মেঘের পেটে বরাবর ধরে মেঘকে বিছানা থেকে নামিয়ে নিজের সঙ্গে চেপে ধরেছে । মেঘের পা আবিরের পায়ের উপর, দুইটা দেহ একসঙ্গে লেপ্টে আছে, মেঘের পাতলা অধর আবিরের নিয়ন্ত্রণে। আবিরের নিখাঁদ ভালোবাসায় মেঘ আবারও ধরা দিতে বাধ্য হলো, দুচোখ বন্ধ করে শার্টের উপর দিয়ে আবিরের পিঠ থামছে ধরেছে।
২৪ ঘন্টা পেরিয়ে যাচ্ছে, তানভিরের সাথে বন্যার কোনো কথায় হচ্ছে না। বন্যা বেশকয়েকবার ফোন হাতে নিয়েছে ঠিকই কিন্তু সাহস করে তানভিরের নাম্বারে কল দিতে পারছে না। অনেক ভাবনাচিন্তার পর বন্যা তানভিরের নাম্বারে কল দিল কিন্তু তানভিরের নাম্বার বন্ধ। বন্যা ভ্রু কুঁচকে নাম্বারটা চেক করে আবারও কল দিল। তানভিরের নাম্বার বন্ধ পেয়ে বন্যার বুক কাঁপছে, ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। চোখের সামনে আয়েশার থা*প্পড়ের ঘটনাটা বার বার মনে পড়ছে। বন্যার কপাল চাপড়ে রাশভারি কন্ঠে বলল,
“সবসময় রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিস তাহলে কাল কোনো পারলি না, বন্যা? ওনাকে কিছু না বললে কি হচ্ছিলো না তোর?”
তানভির ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ কোথাও এক্টিভ নেই, ভয়ে বন্যার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। মেঘের নাম্বারে কল দিতে গিয়েও আঁটকে গেছে। দিশাবিশা না পেয়ে আইরিনের দেয়া একটা নাম্বারে কল দিল। মূলত ফোনটা মাহমুদা খানের। আইরিন কল রিসিভ করে ফিসফিস করে বলল,
” ভাবি, কোথায় তুমি?”
“বাসায়, কেনো?”
“তানভির ভাইয়া গতকাল সন্ধ্যার পর বাসায় এসে একটু পর সেই যে বের হয়েছিল, এখনও বাসায় আসে নি। বাসার সবাই খুব টেনশন করছে। তোমার সাথে কি কথা হয়েছে?”
“না। কিন্তু ওনি কোথায়?”
“জানি না। ফোন বন্ধ, ভাইয়ার বন্ধুরাও কিছু জানে না। এখন রাখছি, কেউ দেখে ফেললে আবার বকা খেতে হবে। ”
“শুনো..”
আইরিন কল কেটে দিয়েছে, বন্যা দু’হাতে মাথা চেপে নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে আছে। তানভিরের রাগ আর জেদ সম্পর্কে বন্যার খুব ভালোই ধারণা আছে। জেনে বুঝে এত বড় ভুল কিভাবে করল সেসব ভেবেই ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে। বন্যার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সেটাও পারছে না কারণ বাসার কেউ টের পেলে এই নিয়ে অশান্তি সৃষ্টি হবে৷
খান বাড়িতে তুলকালাম কান্ড চলছে। তানভিরের কি হয়েছে সেটা জানতে সবাই উঠেপড়ে লেগেছে কিন্তু কেউ ই কিছু বলতে পারছে না। এক পর্যায়ে আলী আহমদ খান আবিরের নাম্বারে কল দিল। মেঘ তখন ওয়াশরুমে, আবির কল রিসিভ করে বারান্দায় চলে গেছে।
আলী আহমদ খান গম্ভীর গলায় বললেন,
” তোমার ভাইয়ের কি হয়েছে?”
আবির ভ্রু কুঁচকে বলল,
” জানি না, আমার সাথে কথা হয় নি। ”
“ওর ফোন বন্ধ, গতরাত থেকে বাসায় নেই। কি শুরু করেছো তোমরা? কিছু হওয়ার আগেই তুমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাও, তোমার দেখাদেখি তানভিরও শুরু করেছে। ওর যদি কাউকে পছন্দ থাকে তাহলে বলো, বিয়ের ব্যবস্থা করি। কিন্তু এভাবে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার কি মানে?”
আবির ঢোক গিলে শান্ত কন্ঠে বলল,
” তেমন সিরিয়াস কিছু তো আমি জানি না, এখানে আসার পর ওর সাথে আমার কোনোরকম কথায় হয় নি। আমার ওর সাথে আগে কথা বলতে হবে।”
“ঠিক আছে, দেখো কোনোভাবে যোগাযোগ করতে পারো কি না। আর যাই হোক, পছন্দ থাকলে আগেভাগেই জানিয়ো।”
“জ্বি আব্বু।”
আলী আহমদ খান ফের বললেন,
” খোঁজ নিও, তোমার মতো আবার গোপনে বিয়ে করে ফেলেছে কিনা!”
আবির উদ্বিগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করল,
” মানে?”
“এখন আর মানে মানে করতে হবে না। তুমি যে আরও তিনবছর আগেই কাবিনের কাজ সেরে ফেলেছো এটা আমি খুব ভালোভাবেই জানি। শুধু আমি না, এখন বাসার সবাই জানে।”
” আপনাকে কে বলেছে?”
“কে আবার বলবে, তোমার প্রাণপ্রিয় ভাই তানভির। তোমার বিয়েতে আমি যেন কোনো প্রকার বাঁধা সৃষ্টি না করি তারজন্য আমার পায়ে ধরা শুধু বাকি রেখেছে। আমি মানছিলাম না বলে এক পর্যায়ে নিজের ঘাড়ে তোমাদের বিয়ের সব দায় নিয়ে বহুবার রিকুয়েষ্ট করে আমাকে রাজি করিয়েছে। ভেবো না তোমার বিয়েতে আমি এমনি এমনি রাজি হয়ে গিয়েছি। আমি শুধু তানভিরের অসহায় মুখটা দেখে রাজি হয়েছি। আমি যদি সেদিন রাজি না হতাম তাহলে তোমাদের ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পর্ক নষ্ট হতো যেটা আমি কোনোদিনও চাই না। আমি যেমন আমার ভাইদের সবসময় আগলে রেখেছি আমি চাই তোমাদের সম্পর্কটাও এরকম থাকুক। তাই আবারও বলছি, তানভিরের সম্পর্কে এমন কিছু জানলে আগেই জানিয়ে দাও।”
আবির তপ্ত স্বরে জানাল,
” আমি তানভিরের সাথে যোগাযোগ করে তারপর আপনার সাথে কথা বলবো। আপনার চিন্তা করতে হবে না।”
“ঠিক আছে। তানভিরের সাথে কথা হলে, বাসায় আসতে বলো।”
“জ্বি আচ্ছা।”
আবির প্রভূত আঁখিতে দূরের আকাশে চেয়ে আছে। ‘মেঘকে না পেলে আবির ম*রে যাবে’ এই কথা আলী আহমদ খানকে বলায় আবির তানভিরের উপর নিজের রাগ ঝেড়েছিল অথচ তাদের বিয়ে কোনো ঝামেলা ছাড়া সম্পন্ন হবার পেছনে তানভিরের হাত ছিল এটা জেনে আজ আবিরের খুব খারাপ লাগছে। তানভিরকে জড়িয়ে ধরতে হাজার বার ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে। আবির সঙ্গে সঙ্গে তানভিরের নাম্বারে কল দিল, সবার মতো আবিরও নাম্বার বন্ধই পেল।
আবির কল দিতে দিতে আনমনে রুমে ঢুকতেই মেঘের লম্বা চুল আবিরের চোখে মুখে লাগে। মেঘের ভেজা চুলের পানিতে আবির মুখ সহ গলা পর্যন্ত ভিজে গেছে। মেঘ পেছনে ঘুরে আবিরকে দেখেই ভীত কন্ঠে বলতে শুরু করল,
“সরি, সরি। আমি সত্যি আপনাকে দেখি নি।”
আবির মুচকি হেসে বলল,
” বিয়ের পর বউয়ের ভেজা চুল চোখে মুখে না লাগলে বিয়ের ফিল ই আসে না। যাক অবশেষে নিজেকে সর্বাঙ্গীণ স্বামী মনে হচ্ছে। ”
মেঘ চিবুক নামিয়ে কয়েক কদম পেছাতেই আবির আশ্চর্য নয়নে তাকালো। মেঘের পড়নে আবিরের একটা সাদা শার্ট সঙ্গে প্লাজু, গলায় একটা স্কার্ফ ওড়না পেচানো। আবির বিস্তীর্ণ আঁখিতে তাকিয়ে আছে। মেঘ চোখ তুলে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ হেসে বলল,
“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? সুন্দর লাগছে না?”
“খুব।”
মেঘ মোলায়েম কন্ঠে বলল,
“ঘুরতে যখন নিয়েই যাবেন না তখন এত সুন্দর ড্রেস আর শাড়ি পড়ে কি হবে? তাই রাগ করে আপনার শার্ট পড়ে ফেলেছি। একবার বলুন ঘুরতে নিয়ে যাবেন, তাহলে এখনই সাজুগুজু করবো।”
আবির মৃদুস্বরে বলল,
“থাক না, এভাবেই ভালো লাগছে। কাছে আসো হাতাটা ঠিক করে দেই।”
মেঘ ভেঙচি কেটে বিড়বিড় করল,
” আমি আপনার নতুন শার্ট পড়ে নিয়েছি, আপনার কি রাগ লাগছে না?”
“যেখানে আমিই তোমার সেখানে শার্ট আর এমনকি। এদিকে আসো। ”
মেঘ এগিয়ে আসলো। আবির মেঘের পড়নের শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে ধীর কন্ঠে শুধালো,
“বন্যার সাথে ইদানীং কোনো কথা হয়েছে?”
“না, কেনো?”
“তানভিরের সাথে বন্যার মনে হয় কোনো ঝামেলা হয়েছে। সাকিব কাল মেসেজ দিয়ে শুধু বলেছিল, তানভির বন্যার সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে যাচ্ছে। কিন্তু তারপর কি হয়েছে সে জানে না। তানভিরও নাকি কিছু বলে নি। একটু আগে আব্বু কল দিয়েছিল, বললেন রাত থেকে তানভির বাসায় নেই। ”
মেঘ শীতল কন্ঠে শুধালো,
“বাসায় নেই মানে? কোথায় গেছে?”
“কেউ ই জানে না, তানভিরের ফোন বন্ধ। বন্যাকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করো কোনো সমস্যা কি না!”
“আচ্ছা। ”
মেঘ সঙ্গে সঙ্গে বন্যার নাম্বারে কল দিল, বন্যা কল রিসিভ করে স্বাভাবিক কন্ঠে জানতে চাইল,
“কিরে, কেমন আছিস?”
মেঘ উত্তর না দিয়ে উল্টো গুরুভার কন্ঠে বলে উঠল,
” এই তার ছিঁড়া, বদের হাড্ডি। তুই আমার ভাইকে কি বলেছিস?”
আবির রাগান্বিত কন্ঠে হুঙ্কার দিল,
” এসব কি ধরনের ভাষা?”
মেঘ আড়চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে বেকুবের মতো হাসলো। আবির যে তার পাশে বসা এটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য মেঘ ভুলেই গিয়েছিল। মেঘ আস্তে করে ঢোক গিলে শান্ত কন্ঠে বলল,
” ভাবি, আপনি আমার ভাইকে কি বলেছিলেন?”
আবির মৃদু হাসল। বন্যা উষ্ণ স্বরে বলতে শুরু করল,
” আমার যা ঠিক মনে হয়েছে তাই বলেছি। ওনাকে আমার ভালো লাগে বলে এই না আমি আমার পরিবারের অমতে গিয়ে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে নিব। ওনি আমার কথা ঠিকমতো না বুঝেই ফোন বন্ধ করে ফেলেছেন, এতে আমি কি করব? ওনি ছেলে মানুষ তাই রাগ করে ফোন বন্ধ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে পারেন আর আমি মেয়ে বলে সেসব কিছুই করতে পারি না। তুই তোর ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে আমাকে বলতে আসছিস, আজ আমার পক্ষে কেউ নেই বলে তোদের কিছু বলতে পারে না। দিনশেষে তোদেরই সব আছে, আমি আর আমাদের কিছুই নেই।”
বন্যা কথা শেষ করে সঙ্গে সঙ্গে কল কেটে দিয়েছে। মেঘ আবিরের দিকে অসহায় মুখ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফোন রেখে দু’হাতে আবিরের হাত আঁকড়ে ধরে মাথা এলিয়ে দিয়ে আস্তে করে বলল,
” বন্যা পা*গল হয়ে গেছে।”
“এখন তোমার কি হয়েছে?”
“ওদের চিন্তায় আমার মাথা ঘুরছে।”
আবির কিছু না বলেই আসিফের নাম্বারে কল দিল। রিসিভ করতেই আবির একদমে বলতে শুরু করল,
” ভাইয়া, আমি তোমাদের বিয়ে, হানিমুন আটকিয়েছিলাম তারজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমার পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য স্পেশাল অফার, আগামীকাল থেকে ৩ দিন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের হানিমুন অফার। আইরিন, আরিফ, মীম, তানভির সবাইকে নিয়ে আসবে। ২-১ জন স্পেশাল গেস্ট আছে তাদেরকেও নিয়ে আসবে। বুঝতে পেরেছো?”
আসিফ ভারী কন্ঠে বলল,
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৭৫
” এটা কাপল হানিমুন অফার ছিল নাকি ফ্যামিলি প্যাকেজ ছিল ভাই?”
” আসবেই যখন একা আসবে কেন? এই সুযোগে সবার ইচ্ছে পূরণ হয়ে যাবে। তোমার দায়িত্ব শুধু ওদের নিয়ে আসা, তারপর তোমাদের মুক্তি।”
“তানভিরকে কোথায় পাবো? ওর ফোন তো বন্ধ। ”
“সেসব আমি দেখছি। তুমি কাল সবাইকে নিয়ে আসবে এটায় ফাইনাল।”
” আচ্ছা।”