আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে বোনাস পর্ব
লেখনীতে সালমা চৌধুরী
তানভির চোখ ছোট করে গম্ভীর কণ্ঠে জানতে চাইল,
“আমি পস্তাবো কেনো?”
মেঘ এপাশ ওপাশ মাথা দুলিয়ে আস্তে করে বলল,
“বলবো না।”
“না বললে যেতে দিব না কিন্তু। ”
মেঘ চুল উড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে যেতে মেকি স্বরে বলল,
“তুমি যে ভেটো দিবে এটা আমি আগে থেকেই জানতাম। তাই গতকাল রাতেই বড় আব্বু, আব্বু, কাকামনি, বড় আম্মু, আম্মু, কাকিয়া এমনকি আবির ভাইয়ের থেকেও অনুমতি নিয়ে ফেলেছি। কোথায় বিচার দিতে যাবে, যাও।”
মেঘ এক প্রকার নাচতে নাচতে রুমে চলে গেছে। মীম ও তার পিছু পিছু ছুটলো। তানভির রাগে কটমট করছে। ইদানীং মেঘের দুষ্টামির মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে, একা সামলানো যাচ্ছে না। মেঘ আগেও দুষ্টামি করতো তবে লিমিটেড। আবির আসার পর মেঘ অনেকটায় শান্ত হয়ে গিয়েছিল। আবিরের সাথে মনোমালিন্যের কারণে ৮-৯ বছর কথা হয় নি বলে সেই দূরত্ব টা কমাতে একটু সময় লেগেছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এডমিশন টেস্ট আর আবিরের প্রেমে হাবুডুবু খেতে খেতে দুষ্টামির চিন্তা মাথায় ই আসে নি। এখন সেই দুষ্টামির ভূত টা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আবির কোনো কারণে অভিমান করলেও মেঘের সামনে সেই অভিমান ১ মিনিটের বেশি টিকতেই পারে না। আবির যতক্ষণ না হাসবে ততক্ষণ পর্যন্ত মেঘের আজগুবি কথাবার্তা চলতেই থাকে। গতকালও তেমনটায় ঘটেছে। মেঘের একা ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে আবির রাজি ছিল না তাই আবিরকে রাজি করাতে মেঘকে বহু কাঠখড় পুড়াতে হয়েছে। এক পর্যায়ে “তেলাপোকার আর্তনাদ” গল্প শুনিয়ে আবিরকে পটিয়ে ঘুরতে যাওয়ার অনুমতি নিয়েছে। তবে অবশ্যই শর্তসাপেক্ষে। আবির মেসেজে তিন পাতার এক লিস্ট পাঠিয়েছে যেখানে কি করা যাবে না, কি করা যাবে, কিভাবে চলতে হবে সব নির্দেশনা দেয়া। মেঘ সব শর্ত মেনেই রাজি হয়েছে।
মেঘ আর মীম রেডি হতে রুমে চলে গেছে। তানভির আবিরকে কল দিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
“ভাইয়া, তোমার কলিজাকে আমি আর সামলাতে পারছি না। সে এখন আমার কলিজা ছিদ্র করে ফেলতেছে।”
আবির মৃদু হেসে বলল,
“আর তো কয়েকটা দিন। একটু সহ্য করে নে।”
“তুমি নাকি ঘুরতে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছো?”
“কি করবো বল! এমন ভাবে আবদার করে যে না করতে পারি না।”
“কোথায় যাবে কিছু বলছে?”
” বন্যা, মিনহাজ ওদের সাথেই বের হবে বললো।”
” আমি নিয়ে গেলে কি হতো? ইদানীং মনে হয় দুই বান্ধবীর মধ্যে মনোমালিন্য চলছে। ভার্সিটিতে কেউ কারো সাথে কথা বলে না। গত দুদিন বন্যা ভার্সিটিতেও আসে নি। কল দিলাম রিসিভও করে নি। আজ আবার ঘুরতে যাচ্ছে বিষয়টা ঠিক ভালো লাগছে না।”
” তুই ওদের চিনিস না? মনোমালিন্য থাকলেও দেখবি আজকে ঠিক মিলে গেছে। ”
“সেটাও ঠিক। আচ্ছা, পরে কথা হবে। ”
“ওকে। ”
৩ টার দিকে মেঘ আর মীম সেদিনের কেনা ড্রেস পড়ে সেজেগুজে বেরিয়েছে। তানভির সূক্ষ্ম নেত্রে তাকিয়ে আছে কিন্তু কিছু বলছে না। মেঘ যেতে যেতে তানভিরের দিকে তাকিয়ে জিভ বের করে ভেঙচি কাটলো৷ তানভির চোখ রাঙাতেই মেঘ দাঁত কেলিয়ে চলে গেছে। বাসার সামনে থেকে রিক্সা করে দুই বোন গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিল। ফোনের লোকেশন দেখে মিনহাজদের দেয়া ঠিকানা পর্যন্ত পৌঁছেছে। বন্যারা আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত। মিনহাজ আর তামিম কাছেই একটা বাসায় থাকে। সেখান থেকে একটা টেবিল এনে একটা খালি জায়গায় রেখে তারউপর কেক এর বক্স রেখেছে। আজ তামিমের মিথ্যা জন্মদিন, সেই উপলক্ষে ই এই আয়োজন।
গত পাঁচদিনে বন্যার সাথে মেঘের ফোনে কথা হয় নি বললেই চলে৷ ক্লাসে দেখা হলেও মেঘ সারাক্ষণ শুধু ভাইয়ের বিয়ে নিয়েই বকবক করেছে৷ গত দুদিন বন্যা ক্লাসেও আসে নি৷ বন্যার ব্যাপারে কথা বলার জন্য গত পরশুদিন বন্যার অনুপস্থিতিতে মিনহাজদের সাথে আলোচনায় বসেছিল মেঘ। মেঘের প্ল্যান জানিয়ে সবার মতামত নিয়ে সবকিছু রেডি করেছে। এমনকি মিনহাজদের থ্রেট ও দিয়েছে যেন আবির বা তানভির কিছু জানতে না পারে৷ সেদিন ই মিনহাজদের আনব্লক করে ফেসবুকে এড করে ওদের দিয়ে একটা গ্রুপ খুলিয়েছে।
সেখানে গত দুদিনে মেঘ আর মীম যা যা করেছে সব আপডেট দিয়েছে। এমনকি গতকাল বিকেলে মীম, আদি আর মেঘ মিলে তানভিরকে জোর করে ফেসিয়াল করিয়েছে সেই ছবি তুলেও গ্রুপে দিয়েছে। বন্যা সব মেসেজ দেখলেও কোনো রিপ্লাই করে নি। তানভিরের ফেসিয়ালের ছবি দেয়ার পর থেকে বন্যা নেটেও নেই। মেঘ সন্ধ্যার পর মিষ্টিকে দিয়ে বন্যার নাম্বারে কল দিয়েছিল। ২-৩ বার কল দেয়ার পর বন্যার বোন কল রিসিভ করে জানিয়েছে বন্যার ১০৪° ফা জ্বর। রাতে মিষ্টি আরও ২-৩ বার কল দিয়ে খোঁজ নিয়েছে কিন্তু মেঘ একবারও কল দেয় নি। আজ দুপুরে মিনহাজ বন্যাকে কল দিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছে। বন্যার শরীরে তখনও জ্বর ছিলই তবে কম। মিনহাজ তামিমের জন্মদিনের কথা জানিয়ে খুব জোরাজোরি করে রাজি করেছে সাথে এটাও বলেছে যেন মেঘের দেয়া ড্রেস টা পড়ে আসে৷ বন্যা তখন জিজ্ঞেস করেছিল,
“আমি যে অসুস্থ এটা কি মেঘ জানে?”
মিনহাজ স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিয়েছিল,
“জানলেই বা কি মেঘের এখন তোর কথা ভাবার সময় আছে নাকি। সে তার ভাবিকে নিয়ে ব্যস্ত৷ ”
বন্যা আর কিছু না বলেই কল কেটে দিয়েছিল। শুধুমাত্র বন্ধুদের কথা ভেবে শরীরে জ্বর নিয়েও বন্যা আসছে। মেঘ দু’হাত পেছনে রেখে সোজা টেবিলের কাছে দাঁড়ালো। মীম মেঘের পাশে দাঁড়িয়ে সবাইকে সালাম দিয়ে বন্যাকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করল,
“বন্যাপু তুমি কি অসুস্থ?”
বন্যা উত্তর দেয়ার আগেই মেঘ মীমের দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বলল,
” তুই কি বন্যার খোঁজ নিতে আসছিস? যার জন্মদিন তাকে উইশ কর।”
মীম আস্তে করে বলল,
“সরি। ”
মীম পরপর মিনহাজের দিকে তাকিয়ে বলল,
“Happy birthday Tamim Vaiya”
মিনহাজ হেসে বলল,
“আমি তামিম না, মিনহাজ।”
“জানি। এখন আমি কি করব? ”
“না মানে আমার দিকে তাকিয়ে উইশ করলা তাই বললাম। ”
“ইচ্ছে করেই করেছি।”
“মানে?”
মীম মেকি স্বরে শুধালো,
“আজ কার জন্মদিন ?”
মীম মনে মনে বিড়বিড় করল,
“জন্মদিনের নামগন্ধ নেই উইশ নিয়ে পড়ে আছে।”
তামিম কথা কাটিয়ে বলল,
“আরে বাদ দে। জন্মদিন যার ই হোক কেক সবাই মিলে খাবো।”
বন্যা চাপা স্বরে বলল,
“তাড়াতাড়ি কর। বাসায় যেতে হবে।”
তামিম তপ্ত স্বরে বলল,
“বাইকে আসার সময় ছু*রি টা রাস্তায় পরে ভেঙে গেছে। মেঘকে বলছিলাম ছু*রি নিয়ে আসতে৷”
মেঘকে উদ্দেশ্য করে শুধালো,
“ছু*রি আনছিস?”
মেঘ বন্যার দিকে তাকিয়ে পেছন থেকে এক হাত সামনে এনে টেবিলে রাখতেই মিনহাজ চেঁচিয়ে উঠলো,
“তোকে কেক কাঁটার প্লাস্টিকের ছু*রি আনতে বলেছিলাম। তুই মানুষ কাঁ*টার ছু*রি নিয়ে আসলি কেন?”
মেঘ বন্যার দিকে তাকিয়ে থেকেই উত্তর দিল,
“কোন কাজে লাগে বলা যায় না।”
তামিম চোখ বড় করে বলল,
“ভাবি আমাদের সেই মুডে আছে। আজ এসপারওসপার করেই ছাড়বে।”
বন্যা ঢোক গিলে শান্ত স্বরে বলল,
“ওর মুডে থাকার দিন, ও তো মুডেই থাকবে। কেক কাটলে কাট না হয় আমি চলে যাব।”
মেঘ ছু*রি টা এপাশ ওপাশ ঘুরিয়ে কাঠের টেবিলের মাঝ বরাবর ছু*রিটা কুপতে কুপতে রাগান্বিত কন্ঠে হুঙ্কার দিল,
“আজ এখানে আমি ছাড়া কারো কথা চলবে না।”
মেঘের এমন আচরণে বন্যা সহ সবাই কেঁপে উঠলো। মেঘ বন্যার দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বলল,
” তোকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি, আমার সাথে নাটক করার চেষ্টাও করবি না। তালবাহানা করলে একদম মে*রে গাছতলায় ফেলে চলে যাব৷”
বন্যা ভ্রু গুটিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে তোর?”
স্নিগ্ধ শীতল হাওয়া বইছে, মেঘ টেবিলের পাশ কাটিয়ে বন্যার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মেঘের দু হাত পেছনে। মিষ্টি ফোন বের করে ভিডিও অন করলো। বাকিরা উৎসুক দৃষ্টিতে মেঘকে দেখছে। মেঘের বিধ্বংসী মনোভাব দেখে বন্যা কিছুটা ভীত হয়ে আছে। মেঘ রক্তিম আকাশের পানে তাকিয়ে উষ্ণ নিঃশ্বাস ছেড়ে বন্যার অভিমুখে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো,
“আমার হৃদয়ের সবটুকু জুড়ে যাদের অস্তিত্ব আছে তাদের মধ্যে তুই একজন। আমার প্রাণচঁচল্যে তোর অবস্থান রক্তিম অরুণের মতোন। তুই পাশে আছিস বলে আমি বারংবার ভেঙেচুরে নবরূপে রাঙিয়েছি নিজেকে। তোর প্রতি আমার বিশ্বাস সুবিশাল সমুদ্রের গভীরতায় ন্যায় দৃঢ়। তোকে বন্ধু হিসেবে পেয়ে আমার প্রাপ্তির খাতা পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। আমি জানি, তুই নিজের থেকেও বেশি আমায় ভালোবাসিস আর আমার থেকেও বেশি ভালোবাসিস আমার ভাইকে। তুই বুঝতেও পারছিস না, তানভির ভাইয়ার জন্য তোর বুকের বা পাশে বিদ্যমান ৩০০ গ্রামের হৃদপিণ্ডটা প্রতিনিয়ত ঠিক কতটা অস্বাভাবিকভাবে স্পন্দিত হচ্ছে। ভাইয়ার তমসাচ্ছন্ন ক্ষয়িষ্ণু হৃদয়ের একগুচ্ছ আতশবাজি তুই, বিষাদে ন্যস্ত অভিপ্রায়ের একমাত্র প্রণয়িনী তুই।ভাইয়ার বেপরোয়া জীবন নবলব্ধে সাজানোর উত্তমা উপদেষ্টা হবি তুই। কথা দিচ্ছি, ভাইয়ার জীবনে অদ্বিতীয়া হয়ে থাকবি সারাজীবন।”
বন্যা হতবিহ্বল। দৃষ্টি নিরেট। বন্যার নিস্তব্ধ আঁখি যুগল মেঘের অভিমুখে স্তব্ধ হয়ে আছে। মেঘ হাঁটু গেড়ে বসে পেছন থেকে গোলাপ ভর্তি হাত সামনে এনে বন্যার দিকে ধরে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মোলায়েম কণ্ঠে শুধালো,
” তুই কি ভাইয়ার কল্পনার রাজ্যের কল্পতরু হবি? তার সঙ্কীর্ণ সাম্রাজ্যের মহারানী হবি?”
বন্যার চোখ টলমল করছে। জ্বরের ঘোরে ভার হয়ে থাকা মাথাটা অনবরত ঘুরছে। মসৃণ গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরতে বেশি সময় লাগল না। গত পাঁচদিন গুমরে গুমরে অনেক কেঁদেছে যেটা বন্যার চোখ মুখ দেখলেই বুঝা যায়। বন্যার দুচোখ বেয়ে অনর্গল পানি পরছে। মেঘ মীমের দিকে তাকিয়ে গুরুভার কন্ঠে বলল,
“তোকে কি দাওয়াত দিয়ে আনতে হবে?”
মীম থতমত খেয়ে বলল,
“সরি, সরি। তোমার কথা শুনে টাশকি খেয়ে ফেলছিলাম।”
মীম এগিয়ে এসে মেঘের পাশে হাঁটু গেড়ে বসে সেই ফুলের তোড়ায় হাত রেখে দু’জন একসঙ্গে উচ্চস্বরে বলে উঠল,
“আপনি কি আমাদের ভাবি হবেন? তানভির খানের একমাত্র বউ হবেন?”
বন্যার শরীর কাঁপছে। ভেজা চোখে মেঘ আর মীমের দিকে তাকিয়ে আছে। তামিম রাশভারি কন্ঠে বলল,
“বন্যা ভাবি তাড়াতাড়ি রাজি হোন, নয়তো মেঘ ভাবির মাথা আবারও গরম হয়ে যাবে।”
বন্যা সবার দিকে তাকালো। মিনহাজ, তামিম, সাদিয়া একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে। মিষ্টি একায় ভিডিও করছে। বন্যা পুনরায় মেঘদের দিকে তাকালো। মেঘ স্ট্রং থাকলেও মীম এক পায়ের উপর নিজের ভর রাখতে না পেরে মেঘের উপর হেলে পড়ছে। মেঘ তড়িঘড়ি করে চেঁচিয়ে উঠল,
“আরে বেডি তাড়াতাড়ি হ্যাঁ বল, পড়ে যাচ্ছি তো।”
বন্যা ফুল ধরতে ধরতে বিহ্বলতায় উত্তর দিল,
” ইনশাআল্লাহ, তোমাদের ভাবি হবো আমি।”
ততক্ষণে মীমের শরীরের ভরে মেঘ মাটিতে পরে গেছে, মীম মেঘের উপর পরছে৷ বন্যার একহাতে ফুল অন্যহাতে মেঘের ঘাড়ে ধরে আটকাতে গিয়ে নিজের ওড়নায় টান খেয়ে বন্যাও মেঘদের উপর পরছে। বন্যা তখনও একহাতে মেঘের কাঁধ আঁকড়ে ধরে আছে যেন মাথায় চাপ না খায়। মিষ্টির ভিডিও তখনও চলমান। সাদিয়া, তামিম দ্রুত এগিয়ে গেছে৷ সাদিয়া মীমকে টেনে তুলেছে৷ মীমের পায়ে অল্প চাপ খেয়েছে তাই ব্যথায় আর্তনাদ করছে। মিষ্টি মিনহাজকে ফোন দিয়ে তাড়াতাড়ি মেঘ আর বন্যাকে টেনে তুলেছে। ব্যথা পেয়েছে যেমন তেমন নতুন জামাগুলোতে মাটি আর ময়লা লেগে যাচ্ছেতাই অবস্থা হয়ে গেছে। মিনহাজ, তামিম আর সাদিয়া হাসতে হাসতে একদম বসে পরেছে। মিনহাজ হাসতে হাসতে বলল,
“আমার জীবনে দেখা সেরা প্রপোজ। সারাজীবন মনে থাকবে। দেখবি তোদের ননদ ভাবির সম্পর্ক সারাজীবন এমনই থাকবে। যাই করতে যাবি একটা করে অঘটন ঘটাবি। ”
মেঘ হুঙ্কার দিয়ে উঠল,
” চুপ থাক নয়তো তোর মুখে কসটেপ লাগায় দিব।”
মেঘ বন্যার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
“সরি, তুই ভাইয়াকে ভালোবাসিস এটা তোকে বুঝাতে পাঁচদিন তোর সঙ্গে খুব বাজে ব্যবহার করেছি। সরি বেবি ”
বন্যা কোনো কিছু না বলে আচমকা মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কান্না ভেজা দুচোখ বেয়ে আবারও পানি ঝরছে। মেঘও বন্যার পিঠ বরাবর দুহাত পেঁচিয়ে ধরেছে। বন্যা এবার হাউমাউ করে কান্না শুরু করেছে। এত বছরের বন্ধুত্বে বন্যাকে কখনো এভাবে কাঁদতে দেখেনি মেঘ। বরাবরই চুপচাপ আর শান্তশিষ্ট থাকে, কাঁদলেও কখনো কারো সামনে কাঁদে না অথচ আজ সেই মেয়ে খোলা আকাশের নিচে অবাধে কেঁদে চলেছে। মেঘ শীতল কন্ঠে বলল,
” সরি তো। প্লিজ এভাবে কান্না করিস না। আমি জানতাম তুই ভাইয়াকে ভালোবাসিস কিন্তু তোকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলে তুই কখনোই স্বীকার করতি না তারজন্য আমাকে এসব করতে হয়েছে। প্লিজ সরি।”
বন্যা কাঁদতে কাঁদতে অস্পষ্ট কন্ঠে বলতে শুরু করল,
“আমি বুঝতেও পারি নি কবে আমি ওনাকে এত বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। তুই সেদিন ঐ মেয়ের ছবি দেখানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত আমি ঠিকমতো ঘুমাতে পারি নি, খেতে পর্যন্ত পারি নি। আমার নিঃশ্বাস নিতে পর্যন্ত কষ্ট হচ্ছিলো। সারাক্ষণ মনে হচ্ছিল আমি সব হারিয়ে ফেলছি। কি যেন নেই আমার৷ চারপাশ শূন্য লাগছিল আমার৷ আমি ওনাকে অনেক ভালোবাসি বেবি৷ ”
মেঘ বন্যাকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দুচোখ মুছে শান্ত কন্ঠে বলল,
” আমার ভাবি হতে তুই সত্যি রাজি তো ? ”
বন্যা মলিন হেসে বলল,
“রাজি। কিন্তু… ”
মেঘ স্বাভাবিক কন্ঠে জানতে চাইল,
“কিন্তু কি?”
“তুই যে বলছিলি আজ মেয়ে দেখতে যাবি?”
” লে হালুয়া! তুই কি ছেলে নাকি?”
বন্যা শ্বাস ছেড়ে রাগী স্বরে বলল,
“দূর ফাজলামো করিস না। ঐ মেয়েটা কে ছিল?”
“আমি চিনি না। ফেসবুকে পেয়েছিলাম। ”
“ফাজিল মেয়ে। কিন্তু বললি যে তোর ভাই রাজি?”
“ওমা। ভাইয়া তোকে লাভ করলে রাজি হবে না?”
“তোর ভাই আমায় পছন্দ করে?”
“নাহ। ডিরেক্ট ভালোবাসে। ”
“তোকে বলছে?”
মেঘ বিষন্ন চিত্তে তাকিয়ে বলল,
“বললে আজ আমাদের জায়গায় ভাইয়া থাকতো আর আমরা ক্যামেরাম্যান থাকতাম। বুঝলি? অনেক চেষ্টা করার পরও ভাইয়া যখন কিছু বলছিল না তখন বাধ্য হয়ে আমাকে এই পথ বেঁচে নিতে হয়েছে। ভাইয়া কবে বলবে সে আশায় থাকলে আমি মরে ভূ*ত হয়ে যেতাম। তার থেকে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে ফেললাম।”
মেঘ একটু থেমে আবার বলে উঠল,
“আবির ভাইয়ের মতো ডায়লগ দেয়,
তোকে বৌমনি ডাকার জন্য যদি অধিকারনামায় স্বাক্ষর করতে হয় তবে আমি সেই অধিকারনামায় স্বাক্ষর করে হলেও তোকে বৌমনি ডাকবো৷ তুই আমার ভাবি মানে আমার ই ভাবি। পৃথিবীর কেউ তোকে আমার ভাবি হওয়া থেকে আটকাতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ। ”
বন্যা আনমনে হেসে বলল,
“ইনশাআল্লাহ। ”
মীম এক পা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে মেঘদের কাছে আসতে আসতে বলল,
” বন্যাপু, আমি যে তোমার ছোট ননদ এটা কি তোমার মনে আছে?”
বন্যা আলতোভাবে মীমকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী কন্ঠে বলল,
“ওলে সোনা। তুমি আমার কিউট ননদী, তোমাকে আমি কিভাবে ভুলবো বলো। ”
মেঘ ভেঙচি কেটে বিড়বিড় করে বলল,
“আজ কিউট না বলে।”
মিনহাজ ঠাট্টার স্বরে বলে উঠল,
” আপনি কিউট না বলেই একজন নিজের জান জীবন দিয়ে আপনাকে আগলে রাখে। আপনার দিকে কেউ নজর দেয়ার আগেই আধমরা করে ফেলে। আপনাদের মুখে এসব সাজে না ভাবি। বরং আমি আর তামিম এসব বললে মানা যেতো। ”
তামিম পাশ থেকে বলল,
“সহমত বন্ধু।”
বন্যা হঠাৎ জিজ্ঞেস করল,
“তামিমের না জন্মদিন? কেক কাটব না?”
মেঘ ভেঙচি কেটে বলল,
” আমার ভাইয়ের সাথে যুদ্ধ করে আসছি কি তামিমের জন্মদিন করতে নাকি?”
মেঘ নিজের হাতে বক্স থেকে কেক বের করল। কেক এর উপর লেখা,
প্রিয় বন্যা,
“ভাবি হবি?”
হ্যাঁ/হ্যাঁ
মেঘ বলল,
” দুটা অপশন দিলাম যেকোনো একটা বেছে নিতে পারিস। ”
“এখানে দুটা অপশন? ”
” অবশ্যই। একটা আমার অপশন আরেকটা মীমের অপশন। ”
কেক কেটে খেয়ে সবাইকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিল৷ সন্ধ্যার আগে আগে বাসায় না গেলে নিশ্চিত বকা খাবে। রেস্টুরেন্টে বন্যা আর মেঘ পাশাপাশি বসে খাচ্ছে আর ফিসফিস করে গল্প করছে। মেঘ সবার উদ্দেশ্যে হুঙ্কার দিল,
” আমার ভাই কিংবা আমার ওনার কানে যদি আজকের ঘটনার একাংশ যায় তাহলে তোদের সাথে চিরদিনের জন্য বন্ধুত্ব ভেঙে দিব। আর বন্যা, তোকেও সাবধান করছি। তুই আমাদের ভাবি কিন্তু তানভির ভাই এর প্রেমিকা না। ভাইয়া প্রপোজ না করা পর্যন্ত তুই যদি কোনো প্রকার আলগা পিরিত দেখাস তাহলে তোকেও দেখে নিব।”
“ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি কর। জ্বর বাড়তেছে, শরীর খারাপ লাগছে। বাসায় চলে যাব।”
“রিক্সা দিয়ে এতদূর গেলে আরও বেশি কষ্ট হবে। দাঁড়া ভাইয়াকে কল দিচ্ছি।”
“এই না না, প্লিজ। ওনাকে কল দিস না।”
“চুপ করে বসে থাক। আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে বউ বানানোর যোগ্যতা না থাকলে বিয়ে কিভাবে দিব?”
মেঘ তানভিরকে কল দিয়ে আসতে বলেছে। তানভিরও চটজলদি রেডি হয়ে রওনা দিয়েছে। ওদের খাওয়া শেষ হতে হতে তানভির চলে আসছে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে তানভিরের সামনে আসতেই তানভির পর পর তিনজনের দিকে তাকালো। তিনজনের জামার অবস্থা দেখে তানভির গম্ভীর কন্ঠে শুধালো,
“তোরা কি ফুটবল খেলতে গেছিলি?”
মেঘ একটা বক্সে “হ্যাঁ” লেখা একটুকরো কেক তানভিরের মুখের সামনে ধরে বলল,
“এটা পুরস্কার। এবার হা করো”
“কিসের পুরস্কার? আর কেকে হ্যাঁ লেখা কেনো?”
“তুমি আমাদের ভালোবাসো না?”
“হ্যাঁ”
“এটায় লেখা। এখন হা করো।”
তানভির হা করতেই মেঘ কেক মুখে দিয়ে অস্থির হয়ে বলল,
“এখন চলো আমার বেবি অসুস্থ। ”
মেঘ আর মীম দ্রুত গাড়ির দিকে চলে গেছে। বন্যার মাথা ঘুরছে তবুও আস্তে করে পা বাড়ালো। তানভির উদ্বিগ্ন কন্ঠে জানতে চাইলো,
“কি হয়েছে তোমার?”
“জ্বর।”
জ্বর শব্দটা কানে বাজতেই তানভির এগিয়ে এসে বন্যার কপালে হাত রাখলো। সঙ্গে সঙ্গে বন্যার শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠেছে। মেঘ আর মীম দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে মেঘ দ্রুত দু হাতে মীমের চোখ ঢেকে মেকি স্বরে বলল,
” রোমান্টিক সীন দেখার বয়স হয় নি তোর। ”
তানভিরের পেশিবহুল হাতে নজর পড়তেই বন্যা চোখ নামিয়ে আতঙ্কিত কন্ঠে বলল,
“হাত সরান।”
“হাত সরাবো কেনো? এত জ্বর নিয়ে বাহিরে ঘুরছো কোন সাহসে? আর হাতে এত ফুল কেনো? কে দিয়েছে? কেক ই বা কিসের ছিল?”
বন্যা কি বলবে বুঝতে না পেরে আস্তে করে বলতে নিল,
“তামিমের..”
এটুকু বলতেই তানভির কপাল থেকে হাত সরিয়ে চিৎকার করল,
“তামিম তোমায় ফুল দিয়েছে? ”
“না না।”
“তাহলে কে দিয়েছে?”
“মেঘ। ”
“সত্যি তো?”
“বিশ্বাস না হলে মেঘকে জিজ্ঞেস করুন।”
“বনুকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই। ডাক্তার দেখিয়েছিলে?”
“না। ঔষধ খেলেই কমে যাবে।”
তানভির অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল,
” এই মেয়ে তুমি এত কেয়ারলেস কেনো? সেদিন যে বললাম প্রেশার কম, খাওয়াদাওয়া করতে ঠিক মতো৷ কথা মানলে না কেনো? উল্টো জ্বর বাঁধিয়েছো। ”
বন্যা কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছে। তানভির পেছন পেছন গজগজ করতে করতে যাচ্ছে,
“কল দিলে কল রিসিভ করে না, কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয়ার প্রয়োজন মনে করে না, নিজের যত্ন পর্যন্ত নেয় না। এর থেকে রোবটও শতগুণে ভালো। ”
বন্যা সামনে যেতে যেতে তানভিরের কথা শুনে মুচকি হাসলো। বন্যাকে ডাক্তার দেখিয়ে, ঔষধ আর কিছু ফল কিনে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে তারপর ওরা বাসায় আসছে। সারাদিনের ক্লান্তিতে মেঘ মাগরিবের নামাজ পড়েই ঘুমিয়ে পরেছে। ফোন টেবিলের উপর সাইলেন্ট অবস্থায় পড়ে আছে। আবির সন্ধ্যার পর সবার সাথে কথা বলার সময় মেঘের সাথে কথা বলতে চেয়েছিল, কিন্তু মেঘ আশেপাশে নেই শুনে তেমন জোরও করে নি। কিন্তু মেঘের সঙ্গে কথা বলার জন্য মনটা ছটফট করছে। মেঘদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে তানভির একটা কাজে শহরের বাহিরে গেছে আগামীকাল ফিরবে। মেঘের সাথে কথা বলার জন্য দুই তিনবার আম্মু, মামনির নাম্বারে কল দিয়েছে কিন্তু মেঘের কথা বলতে পারছে না। কাকিয়ার ফোন প্রায় সময় মীমের কাছে থাকে সেই ভেবে কাকিয়াকেও কল দিয়েছে কিন্তু আজ ফোন কাকিয়ার কাছেই। আবির এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে ফুপ্পিকে কল দিল। ফুপ্পি এশার নামাজ পড়ছেন তাই জান্নাত ফোন রিসিভ করে সালাম দিল৷ জান্নাতের কন্ঠ বুঝতে পেরে আবির সালামের উত্তর দিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
” কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো তবে রেগে আছি। ”
“কেনো আপু?”
“ভাইয়া, আজ আমি তোমার ভাবি হিসেবে কথা বলছি।”
“জ্বি ভাবি বলুন।”
জান্নাত মনমরা হয়ে বলল,
“আমাদের বিবাহ বার্ষিকীতে মেঘকে আসতে দিলে না কেনো? আম্মুকে দিয়ে তোমাকে কতগুলো কল দিলাম, আমি নিজে দিলাম, তানভির ভাইকে পর্যন্ত কতগুলো কল দিয়েছি। এটা কি তুমি ঠিক করলে?”
আবির মুচকি হেসে বলল,
“আমি চিন্তা করেছি, আমার বউকে এখন থেকে একা কারো বাসায় যেতে দিব না। একা একা ঘুরলে আমার কথা ভুলে যাবে। এইযে আজ, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেড়িয়ে সারাদিনেও আমার খোঁজ নেয় নি।”
“একদম ঠিক করেছে। এত বউ পাগল যেহেতু বউকে নিয়েই চলে যাইতা।”
“আমি তো নিয়ে আসতাম ই। কিন্তু আপনার মামা শ্বশুর মানে আমার আব্বাজান শুনলে হার্ট অ্যাটাক করে ফেলবেন এই ভয়ে আনতে পারি নি। ”
“মেঘের আব্বু শুনলে মনে হয় হার্ট অ্যাটাক করতো না?”
“জ্বি না। আমার শ্বশুর অনেক স্ট্রং আর ওনাকে যদি আজ বলি মেয়েকে পাঠিয়ে দিতে ওনি এক কথায় রাজি হয়ে যাবেন। ”
জান্নাত উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
” সত্যি? মেজো মামা জানে? তুমি বলে ফেলছো?”
“আমি বলি নি কিন্তু ওনি রাজি। ”
“এটা আবার কেমন কথা?”
“এটা এমন ই কথা। সেসব বাদ দেন। এখন আমার বাসায় ফোন দিয়ে আমার বউটাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে আমাকে কল দিতে বলুন। বউকে খুব মিস করছি। ”
“আমাকে এসব বলতে তোমার লজ্জা লাগছে না?”
“আপনি বললেন আজ আপনি আমার ভাবি৷ তাই দেবর হিসেবে ভাবির কাছে আবদার করায় যায়। রাখছি এখন।”
“আচ্ছা। ”
জান্নাত যথারীতি হালিমা খানকে কল দিয়ে মেঘের সাথে কথা বলার নাম করে মেঘকে ঘুম থেকে তুলে আবিরের কথা বলেছে। মেঘ তড়িৎ বেগে উঠে ওয়াশরুম থেকে চোখমুখে পানি দিয়ে এসে আবিরকে কল দিল। আবির অডিও কল কেটে ডিরেক্ট ভিডিও কল দিল। মেঘ ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে সালাম দিল। আবির সালামের উত্তর দিয়ে তপ্ত স্বরে বলল,
” কারো কি আমার জন্য বিন্দুমাত্র চিন্তা হয়?”
“সরি ঘুমিয়ে পরেছিলাম।”
“আমিও সরি। ঘুম ভাঙানোর জন্য। ”
মেঘ মুচকি হেসে বলল,
” আপনার এই পরিবর্তনের পেছনে নিশ্চিত কোনো রহস্য আছে৷ কি রহস্য বলুন তো। ”
আবির লাজুক হেসে বলল,
” আমি বলুম না আমার শরম করে।”
মেঘ চক্ষু যুগল প্রশস্ত করে বলল,
“আপনার শরমও আছে?”
আবির উত্তর না দিয়ে মেঘের দিকে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে। মেঘ বার বার ডাকছে কিন্তু আবিরের নজর স্থির৷ মেঘ এবার রাগী স্বরে বলল,
” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?”
” আপনার যেহেতু মনে হয় আমি নির্লজ্জ তাই আজ থেকে আমি নির্লজ্জের মতো আচরণ করব।”
মেঘ আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে। আবিরের দৃষ্টি মেঘকে বরাবরই নাজেহাল করে সেই সঙ্গে আবিরের উল্টাপাল্টা কথাতে মেঘ এখন হতবিহ্বল।
আবির খানিক চুপ থেকে মোলায়েম কন্ঠে শুধালো,
” শুনলাম কোথায় পরে গিয়ে জামাকাপড় নষ্ট করে আসছিস। শরীরে ব্যথা পেয়েছিস?”
“না। তেমন ব্যথা পায় নি। কোমড়ে একটু লাগছে।”
“কি করতে গেছিলি?”
“একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে গেছিলাম। কাউকে বলা যাবে না।”
“আমাকেও বলা যাবে না?”
“আপনাকে অবশ্যই বলবো। কিন্তু এখন না প্লিজ। আপনি দেশে ফিরলে আপনাকে সারপ্রাইজ দিব।”
” এখন কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে।”
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৬৬ (২)
আবিরের মুখের অপ্রত্যাশিত কথা শুনে মেঘ বাগাড়ম্বরপূর্ণ হয়ে গেছে। গলা খাঁকারি দিয়ে আস্তে করে বলল,
” ওহ নো। আপনি আমায় ভয় পান? কতটা?”
আবির ভ্রু কুঁচকে চাপা স্বরে বলল,
” আপনাকে না আপনার কর্মকাণ্ডকে ভয় পায়।”