আযদাহা পর্ব ১১
সাবিলা সাবি
দুপুরের নীরবতা ভেদ করে জ্যাসপার পা রাখল ফিওনার বন্দিশালার দিকে। কাল রাতের ঘটনাবলী তাঁর মনের এক কোণে গোপন থাকলেও,সেই মানব কন্যার অস্তিত্ব ক্রমশ তাঁর চিন্তায় ভারী হয়ে উঠছিল। কাল রাতে, কোনো প্রকার অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ না করেই ফিওনাকে সেই বিছানায় ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলো, কিন্তু সে জানে, একজন মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য পানি আর খাদ্য প্রয়োজন। আর আপাতত ফিওনা জীবিত থাকা অধিক জরুরী সেই তাগিদেই সে হাতে কিছু তাজা ফল আর বোতলজাত পানি নিয়ে কাচের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করল।
এখানে কেউ যেনো ফিওনার ধারে কাছে ঘেঁষতে না পারে —এটা জ্যাসপারের একান্ত ইচ্ছা। সেই কারণেই সে নিজেই খাবার পৌঁছে দিতে আসছে, কাউকে নিযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি।
ফিওনা তখন হতাশার গভীরে নিমজ্জিত,বিছানায় নীরব বসে আছে,এক নিষ্প্রাণ পাথরের মূর্তির মতো। হঠাৎই কাঁচের দেওয়ালের সামনে কিছু একটা নড়ে উঠল—একটি স্লাইডিং প্যানেল,যা এতক্ষণ অদৃশ্য ছিল, হঠাৎ সশব্দে সরে গেল।কোনো রহস্যময় দ্বারপথ তার সামনে উপস্থিত হয়ে গেলো।
ফিওনার বিস্ময় যেনো শেষ হবার নয়; তার মনের মধ্যে একটাই প্রশ্ন—এখানে এমন গোপন দরজা থাকতে পারে, সেটা কখনো তার কল্পনার মধ্যেও আসেনি।
ঠিক সেই মুহূর্তে, জ্যাসপার রুমে প্রবেশ করল। তার উচ্চকায় অবয়ব আর নিঃশব্দ গতিবিধি ফিওনার মনে আগুনের মতো ছড়িয়ে দিল সেই ভয়াবহ স্মৃতি—সেই ড্রাগনের রূপ। যদিও এই মুহূর্তে জ্যাসপার মানব রূপে ছিল, তার উপস্থিতি ফিওনার মনে ড্রাগনের আদিম ভয়ঙ্কর রূপটিকে আরও জোরালো করে তোলে।
ফিওনার দৃষ্টি মুহূর্তেই জড়সড় হয়ে গেল,তার হৃদস্পন্দন থেমে যাবার উপক্রম। মানব দেহে হলেও, জ্যাসপার তার কাছে এক নিষ্ঠুর অপ্রতিরোধ্য শক্তির প্রতীক।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
জ্যাসপার তার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে, চোখের কোনো অভিব্যক্তি প্রকাশ না করেই।
জ্যাসপার কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে ফিওনাকে পর্যবেক্ষণ করল। তার চোখের গভীরে এক অদ্ভুত নিষ্ঠুরতা, যা প্রকাশের অপেক্ষায় ছিল। তারপর এক নিঃশব্দে, সে বেডের পাশে রাখা ছোট টেবিলটির দিকে এগিয়ে গেল। হাতের ফল আর পানির বোতল সেখানে নামিয়ে রেখে, সে পুনরায় ফিওনার দিকে তাকাল।
ফিওনার হৃদয় তীব্র ধাক্কায় বাজছিল। ভয় আর ক্ষোভে কণ্ঠস্বর ফেটে বেরিয়ে এলো, “আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছো? কোথায় এনেছো আমাকে? জবাব দাও!আমি তোমার কী ক্ষতি করেছি? কেনো এমন করলে আমার সঙ্গে?”
জ্যাসপার ততক্ষণে এক নিস্পৃহ মুখ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। কিছুক্ষণ স্তব্ধতার পর, সে অবিচলভাবে উত্তর দিল। “বাহ!সোজা ‘আপনি’থেকে ‘তুমিতে’চলে এসেছো?… এনি ওয়ে! আমি তোমাকে জবাব দিতে বাধ্য না, মানবকন্যা। সময় হলে নিজেই জানতে পারবে। শুধু জেনে রাখো, এই মুহূর্তে তুমি আমার হাতিয়ার। খাবার রেখে গেলাম, খেয়ে নিও।”
ফিওনার চোখে প্রতিরোধের অগ্নি জ্বলল। তবু ভেতরে ভয় ছিল অসীম। তবুও সে কঠোর কণ্ঠে বলল, “আমি খাবো না! যদি সত্যিই আমি তোমার হাতিয়ার হই, অথবা কোনো কাজের যোগ্য হই, তবে আমি না খেয়ে নিজেকে শেষ করে দিবো। তাহলে তোমার কোনও কাজেও আসব না।”
জ্যাসপারের চোখে এক মুহূর্তের জন্য এক শীতল হাসির ঝলক দেখা গেল। সে এক পা, দু পা করে ধীরে ধীরে ফিওনার দিকে অগ্রসর হতে থাকল। ফিওনার কণ্ঠে যতই সাহস থাকুক, তার পায়ে তা ছিল না।
সে অজান্তেই পেছাতে শুরু করল,যতক্ষণ না পিঠ গিয়ে ঠেকে কাঁচের দেয়ালে। ফিওনার চোখের সামনে ভয়াবহ ড্রাগন রূপের স্মৃতি আবারও হানা দিল।
জ্যাসপার তখন ফিওনার বরাবর দাঁড়িয়ে, তাদের মধ্যে দুই ইঞ্চি দুরত্ব মাত্র। ফিওনার মাথার ডান পাশে একটি হাত রেখে তার দিকে ঝুঁকল। তার মুখমণ্ডলে রাগের ছায়া ছড়িয়ে পড়ল, গর্জে উঠল তার কণ্ঠ,
“যদি নিজের ভালো চাও,তবে ভালোয় ভালোয় আমার কথামতো চলবে। আমার কথার অবমাননা করলে, এমন শাস্তি পাবে যে কল্পনাও করতে পারবেনা।
“আর মৃ’ত্যু—মৃ’ত্যু আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমাকে ছুঁতে পারবে না। তোমার ইচ্ছায় মরার সুযোগ নেই এখানে। মাথায় রাখো কথাটা।”
কথাগুলি ফিওনার হৃদয়ে কাঁপন ধরিয়ে দিল। জ্যাসপারের কণ্ঠে এমন কঠোরতা আর অপ্রতিরোধ্য শক্তি ছিল,তার প্রতি কথায় ফিওনার সমস্ত ইচ্ছাশক্তি দমিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
“আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার আসব,” জ্যাসপার বলল। “যদি তখন দেখেছি তুমি খাবার স্পর্শ করোনি, তবে তারপরেরটা দেখতেই পাবে।”
তার কণ্ঠে এতটাই আক্রমণাত্মক সুর ছিল যে ফিওনার শরীর শীতল হয়ে গেল।
জ্যাসপার আর এক মুহূর্তও দেরি না করে কঠোর পদক্ষেপে হনহন করে বেরিয়ে গেল। কাঁচের দেয়ালটি তার পেছনে নিজে থেকেই মসৃণভাবে স্লাইড করে বন্ধ হয়ে গেল,মনে হলো তার অস্তিত্বের কোনো চিহ্ন সেখানে ছিল না। ফিওনার চোখে বিস্ময়ের আলোড়ন, “এই নির্জন জায়গায় দরজা ছিল কোথায়? অথচ ফিওনা সে সেদিকে দৌড়ে গিয়ে চারপাশে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখল—চিহ্নমাত্র নেই। যেন কিছুই ঘটেনি। কাঁচ ছিল যেমন, তেমনই। কখনো খোলেনি।
ফিওনা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলল, কিন্তু তার ভেতরের বুদ্ধি তখন ব্যস্ত ছিল বিশ্লেষণে। নিজের মনে সে গভীর এক উপলব্ধি আওড়াতে শুরু করল,“এই ফায়ার মনস্টারটারের কোনও ভয়ঙ্কর উদ্দেশ্য আছে। তাই তো আমাকে এখনো মেরে ফেলেনি। তার মানে যতক্ষণ পর্যন্ত তার কাজ না হবে, আমি নিরাপদ। তাহলে এখন আপাতত ভয় পেয়ে লাভ নেই। ফিওনা, তুই যাই করিস না কেনো—ও তোকে মেরে ফেলবে না,কারণ ওর তোর ওপরেই নির্ভর করছে কোনো একটা বিষয়।এখন আগে বুঝতে হবে ও আসলে চায় কী। তবে একটা ব্যাপার পরিষ্কার, আমি সহজে তার ফাঁদে পড়বো না। আর এসব ফল-মূল? দুপুরবেলা এসব খাওয়া যায় নাকি!”
মুখে এক ধরনের বিদ্রূপ ফুটে উঠল। সে আপত্তি প্রকাশ করে বলল, “আমি এসব খাবোই না। দেখা যাক, ফায়ার মনস্টারটা কী করে! আমি না খেলে তো আর আমাকে মেরে ফেলবে না!”
ফিওনার ভেতরের বুদ্ধিমত্তা আর সাহস তখন প্রতিটি সংকল্পকে দৃঢ় করে তুলল। সে নিজের ইচ্ছাশক্তির বিরুদ্ধে কেউ ক্ষমতাশালী নয়—এমন ধারণা নিয়ে সেই নিষ্ঠুর গেমের একটি নতুন চাল চালতে তৈরি হল।
এদিকে, এই যুদ্ধটা শুধু বাহ্যিক নয়, এটা ছিল এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। ফিওনা জানে, তাকে যুদ্ধে যেতে হবে, কিন্তু অস্ত্রের বদলে তার মস্তিষ্ক আর যুক্তিই তার প্রধান হাতিয়ার।
ফিওনা চুপচাপ বিছানায় বসে ছিল, মনটা উত্তপ্ত হলেও বাইরে থেকে তাকে শান্ত দেখাচ্ছিল। চোখের কোনা দিয়ে সে টেবিলের ওপর সাজানো ফলগুলো দেখছিলো ইচ্ছে করছিল এক ঝটকায় সবকিছু উড়িয়ে দিতে। কিছুক্ষণ পর, ধীর পদক্ষেপে জ্যাসপার পুনরায় রুমের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সেই নীরবতা ভেদ করে, কাঁচের স্লাইডিং দরজাটি নরম আওয়াজে খোলে, আর জ্যাসপার রুমে প্রবেশ করে। তার গম্ভীর দৃষ্টি ফিওনার ওপর স্থির হয়। এক ঝলক ফিওনার মুখে, আরেকবার টেবিলের অপ্রচলিত ফলের দিকে।
“তোমাকে আমি কি বলেছিলাম?” তার গভীর, কাঁপন ধরানো কণ্ঠস্বর রুমের নিস্তব্ধতা ভেঙে দেয়। “কথাটা বোধহয় তোমার কানে যায়নি, তাই না?”
ফিওনার ঠোঁটগুলো শুকিয়ে আসে, কিন্তু তার কণ্ঠে রাগের তীক্ষ্ণতা ফিরে আসে, “আমি বলেছি, আমি এসব খাই না। যদি খাবার দিতেই চাও, ভালো কিছু নিয়ে আসো।”
জ্যাসপার হঠাৎ হেসে ওঠে, একধরনের নির্মম কৌতুকমাখা হাসি। আমি পাঁচ গুনবো, এর মধ্যে খাবার শুরু করবে।”
ফিওনা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, মাথা উঁচু করে। কিন্তু তার হৃদয় দ্রুত ধুকপুক করছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষটি কোনো সাধারণ মানব নয়, বরং এক বিস্ময়কর ক্ষমতার অধিকারী ড্রাগন।
জ্যাসপার একে একে পাঁচ পর্যন্ত গুনতে থাকে, সময় থমকে গেছে।
“এক… দুই… তিন…” তার গুনতি কণ্ঠে নিখুঁতভাবে এগিয়ে চলে, কিন্তু ফিওনা নিজের জায়গা থেকে নড়েনি। পাঁচে পৌঁছানোর সাথে সাথে জ্যাসপারের ক্রোধ বিস্ফোরিত হলো। তার চোখ দুটো বন্ধ করে ক্রোধ সংবরণ করার চেষ্টা করলো, কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলো।
হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ল, তার আক্রমণের তীব্রতায় ফিওনা হতবাক হয়ে গেল। জ্যাসপার এক হাত দিয়ে ফিওনার চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরলো, এতটাই শক্ত করে যে ফিওনার নরম গালগুলো ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো। তার আঙুলের আঘাতে ফিওনার মুখ পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেল।
“তুমি কি ভেবেছো, তুমি আমার বিরুদ্ধে যাবে?” জ্যাসপার হিসহিসিয়ে বললো, তার কণ্ঠে চরম রাগের স্পর্শ। ফিওনা নিজের হাত দিয়ে তার হাত সরানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তার ড্রাগনশক্তির কাছে মানুষের সামান্য প্রতিরোধ কোনো কাজ করছিল না।
“তোমাকে আমি একবার বলেছি, আর বলছি না,” জ্যাসপার গর্জন করে উঠল, “আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করলে পরিণতি খুবই ভয়া’বহ হবে। আমাকে তুমি এখনো চিনতেই পারোনি।”
ফিওনার চোখ দুটো বিস্ফারিত হয়ে গেল,তার শ্বাসপ্রশ্বাস ধীরে ধীরে থেমে আসে।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে ফিওনাকে ছেড়ে দেয়,তার হাতের গ্রিপ শিথিল করে।পাশের টেবিলে রাখা ফলের ঝুড়ি থেকে আপেলটি হাতে নিয়ে ঠান্ডা নীরবতায় ছুরির সাহায্যে কেটে নেয় কয়েকটি টুকরো।তারপর, এক টুকরো আপেল নিয়ে ফিওনার দিকে এগিয়ে যায়,তার চোখে অদ্ভুত নিষ্ঠুরতা ফুটে উঠছে।
মুহুর্তেই ফিওনার ঘাড়ের পেছনে হাত দিয়ে চেপে ধরলো শক্ত করে, কোনো রকম মানবিকতা ছাড়াই জোর করে আপেল টুকরোটি ফিওনার মুখের মধ্যে ঠুসে ধরে রাখলো। ফিওনা মাথা এদিক ওদিক করে বাঁচার চেষ্টা করে,কিন্তু জ্যাসপারের অপরিসীম শক্তির সামনে সে ব্যর্থ। অগত্যা, ফিওনা বাধ্য হয় সেই আপেল চিবিয়ে গিলে খেতে।
জ্যাসপার একটু পিছিয়ে দাঁড়ায়,তার কণ্ঠে তিরস্কার ঝরে পড়ে, “এবার বলো, বাকি ফলগুলো খাবে, নাকি সেটাও আমাকে খাওয়াতে হবে? আমার হাতে খাওয়ার খুব শখ, যদি চাও তবে অন্য পন্থা অবলম্বন করে বাকিগুলো খাইয়ে দেবো!”
ফিওনা আতঙ্কিত কণ্ঠে বলে উঠল, “না! না! আমি খাচ্ছি, আমি খাচ্ছি!” তার গলায় আতঙ্কের স্পষ্ট ছাপ। বিছানায় বসে একে একে আপেলের টুকরো, আঙুর—সবকিছুই তাড়াহুড়ো করে মুখে দিতে থাকে, যেন প্রাণ হাতে নিয়ে লড়ছে।
জ্যাসপার আর কোনো কথা না বলে রুম ত্যাগ করে, তার মুখে এক অবজ্ঞার ছাপ ফুটে ওঠে। কাঁচের দরজাটি পুনরায় স্লাইডিং হয়ে বন্ধ হয়ে যায়,রুমের শীতল পরিবেশটা ফিওনার মনের মধ্যে আরও বেশি ঠান্ডা অনুভূতি নিয়ে আসে। ফিওনা বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে, চোখের কোণে জমে থাকা জল এবার নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়ে।
তার কণ্ঠ একেবারে নিস্তেজ হয়ে আসে। “জ্যাসপার… সে নির্দয় পাষাণ ছাড়া কিছুই না। এমন আচরণ তো কল্পনাও করিনি।” ফিওনার মনের গভীরে এক অনুচ্চারিত প্রশ্ন জেগে ওঠে—”সে তো মনুষ্য নয়, সে এক ভয়ংকর দানব। ফায়ার মনস্টার। তাহলে তার থেকে মানবিক আচরণ আশা করাই তো বোকামি”
এই ভাবনা ফিওনাকে ক্রমেই আরও গভীর এক অন্ধকারে ঠেলে দেয়, যেখানে তার ভয় ও হতাশা মিলে তৈরি করেছে এক অনির্দিষ্ট ভবিষ্যতের ছায়া।
জ্যাসপারের ভালোবাসা অনুভূতির ফাংশনাল ডিলিট করার কারণে তার ব্যক্তিত্বে একটি গভীর পরিবর্তন এসেছে। সে এখন এক প্রকার রেড ফ্ল্যাগ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছে, যা তাকে ভীতি প্রদর্শনকারী এবং অত্যাচারী (intimidating and abusive) করে তুলেছে। তার আচরণ এমন হয়েছে যে, সে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আর অন্যদের ছোট ছোট ভুল বা দুর্বলতাকে বড় অপরাধ মনে করে কঠোর শাস্তি দিতে চায়। তার মধ্যে সহানুভূতি বা প্রেমের অভাব তাকে দুর্দমনীয় আর হৃদয়হীন করে তুলেছে, যেখানে সে মানুষকে কেবল একটি হাতিয়ার মনে করে।জ্যাসপারের মধ্যে শুধুমাত্র রয়েছে অপরকে নিয়ন্ত্রণ করা,ভীতি প্রদর্শন করা,আর কোনো ভুলের জন্য নির্মম শাস্তি প্রদান করা।
তার ভালোবাসা অনুভবের ক্ষমতা না থাকায়, সে মানুষের অনুভূতির প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন, তবে জ্যাসপারের আপন চাচার সাথে এক নির্মম ঘটনা ঘটে যাওয়ার কারনে জ্যাসপার মানব জাতীর বিশেষ করে মেয়ে মানব জাতীকে ঘৃনা করে। অথচ তার বাবা ড্রাকোনিস জানেইনা তার ছেলের লাভ ফাংশনাল ডিলিট করার প্রভাব কতোটা ভয়াবহ হয়েছে।যেখানে তাদের ড্রাগন রাজ্যের নিয়মাবলী অনুযায়ী অযথা কোনো মানুষকে হার্ম করা যাবেনা সেখানে জ্যাসপারের কথার অবাধ্য হলে তার জীবনও কেড়ে নিতে দুবার ভাববে না।তিনি কখনোই তার ছেলের এমন রুপের বিষয়ে অবগত নন কেননা আজ পর্যন্ত কেউ জ্যাসপারের বিরুদ্ধে যায়নি, যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি।
পরদিন বিকেলবেলা, মিস্টার চেন শিং লন্ডন থেকে ফিরে আসেন। এক দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি তার চেহারায় স্পষ্ট, তবুও বাড়িতে প্রবেশ না করে সোজা হসপিটালের দিকে রওনা হন। তার আগমন নীরব হাওয়ার মতোই নিঃশব্দ, তবুও ভারী। মিস ঝাংয়ের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেওয়ার জন্যই তার এই তাড়াহুড়ো। হসপিটালে পৌঁছে ডক্টর লিউ ঝানের সাথে সাক্ষাৎ হয়। ডক্টর লিউ তার পরিচিত মৃদু হাসিতে অভ্যর্থনা জানায় চেন শিংকে।
“মিস্টার চেন শিং, কেমন আছেন আপনি, আপনাদের লন্ডন ভ্রমন কেমন কাটলো আর সেই গবেষনা কতটুকু সফল হলো?” ডক্টর লিউ বলেন।
“সবকিছু ঠিকঠাক আর গবেষনা সেটা সফল হওয়ার দ্বারপ্রান্তে” চেন শিং সোজাসুজি কথায় আসেন, “মিস ঝাং কেমন আছে?”
ডক্টর লিউ এক পলক থেমে বলেন, “তার অবস্থা স্থিতিশীল, কিন্তু ফিওনার কাল রাতে আসার কথা ছিলো। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করানো দরকার ছিল, কিন্তু সে এখনও আসেনি।”
এই কথাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে চেন শিংয়ের কপালে গভীর ভাঁজ পড়ে। “ফিওনা আসেনি?” তার কণ্ঠে স্পষ্ট উদ্বেগের ছাপ। “কোনো খোঁজ নিয়েছিলে?”
“না,” ডক্টর লিউ মাথা নাড়লেন, “আমি ভেবেছিলাম হয়তো কিছু কাজে ব্যস্ত।”
চেন শিং কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে রইলেন, তারপর হঠাৎ বললেন, “মিস ঝাংকে দেখাশোনা করবে, আমি কিছুক্ষণ পর আবার আসবো।”
চেন শিং দ্রুত হসপিটাল ত্যাগ করে সোজা ফিওনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরির দিকে রওনা দেন। তার মন ভারাক্রান্ত। হাওয়া থেমে গেছে, আর তিনি অস্থির। ডরমিটরিতে পৌঁছে ফিওনার রুম নম্বর জেনে, ভেতরে প্রবেশ করেন। ফিওনার ঘরে পৌঁছে দরজায় কড়া নাড়েন, কিন্তু কোনো সাড়া নেই। তিনি পরমুহূর্তেই লিয়া নামের রুমমেটের সাথে কথা বলেন। লিয়ার কণ্ঠে চিন্তার সুর স্পষ্ট।
“ফিওনা?” লিয়া বলে, “ও তো কালকে সন্ধা থেকেই আসেনি। আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো হসপিটালে বা নিজের বাড়িতে থাকবে।”
আযদাহা পর্ব ১০ (২)
চেন শিংয়ের মাথায় যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। তিনি প্রায় দিশাহারা হয়ে পড়েন। তার মনের কোণে শীতল আতঙ্কের কাঁটা বিঁধতে থাকে। ফিওনা কোথায় গেল? কী ঘটেছে তার সাথে? তিনি দ্রুত ফোন বের করে ওয়াং লির সাথে যোগাযোগ করেন। ওয়াং লি দ্রুত সাড়া দেন।
“ওয়াং লি, ফিওনার কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছেনা ?” চেন শিংয়ের কণ্ঠ তীক্ষ্ণ ও চঞ্চল।
“কি বলছেন চেন শিং,আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি,” ওয়াং লি বলেন, কণ্ঠে সজাগতা।
চেন শিং আর দেরি না করে সোজা তার ব্যক্তিগত ল্যাবের দিকে রওনা হন।