আযদাহা পর্ব ১২

আযদাহা পর্ব ১২
সাবিলা সাবি

ল্যাবের ভারী দরজাটি খোলার সঙ্গে সঙ্গেই মিস্টার চেন শিংয়ের মনে অদ্ভুত শীতলতা নেমে আসে। চারদিকে এক নিস্তব্ধতা, যার প্রতিটি মুহূর্ত বুকে ভারী পাথর চাপিয়ে দিচ্ছে। তার চোখে ধরা পড়ে কম্পিউটারের স্ক্রিনে ভেসে ওঠা অচেনা বার্তা।
জ্যাসপার!!
জ্যাসপারই ফিওনাকে নিয়ে গেছে।
চেন শিং কিছুক্ষণ নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকে, শ্বাসগুলো ভারী হতে থাকে, প্রতিটি শ্বাস তার আত্মার এক টুকরো নিয়ে যাচ্ছে। সে কম্পিউটারের দিকে এগিয়ে যায়, কাঁপা কাঁপা হাতে কী-বোর্ড স্পর্শ করে। তবে তার চোখের সামনে ছড়িয়ে থাকা কোড আর গোপন সংকেতের জাল তাকে বিপর্যস্ত করে তোলে। জ্যাসপারের বার্তা ছাপিয়ে থাকা তথ্যের ভার তার মস্তিষ্কে গজাল হয়ে বিঁধে।

সে বার্তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি সংকেত খুঁজে খুঁজে দেখতে থাকে। হ্যাকিংয়ের নানা পদ্ধতি ব্যবহার করে, কোনো অদৃশ্য চাবি দিয়ে জ্যাসপারের অবস্থান বের করার চেষ্টা করে। সে টের পায়,প্রতিটি মুহূর্তের সাথে সাথে ফিওনার জীবন আরো গভীর অন্ধকারের দিকে ডুবে যাচ্ছে।
“কোথায় নিয়ে গেলো আমার ফিওনাকে?” নিজের মনেই ফিসফিস করে বলে ওঠে চেন শিং। তার হাতের মুঠো শক্ত হয়, ঠোঁট শক্ত হয়ে আসে, চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। জ্যাসপার ছায়ার মতো সরে গেছে, তার অস্তিত্বের কোনো ছাপ রেখে যায়নি। তার লোকেশন খুঁজে বের করার জন্য চেন শিং নানা পদ্ধতি অবলম্বন করে, কম্পিউটার সিস্টেমের গভীরে প্রবেশ করে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিন্তু কোথাও কোনো চিহ্ন নেই, কোনো ফাঁক নেই। চেন শিংয়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অনুভূতি হয়।
তারপর তিনি উঠে দাঁড়ান, ভ্রু কুঁচকে একমাত্র প্রতিজ্ঞাই করে বসেন, “ফিওনাকে আমি খুঁজে বের করবো, যদি সবকিছু চূর্ণ ও করতে হয়!”
ওয়াং লি তাড়াহুড়ো করে ল্যাবে প্রবেশ করে। তার পদক্ষেপের ভারী শব্দেই চেন শিং বুঝতে পারে ওয়াং লি ল্যাবে প্রবেশ করেছে। ওয়াং লি চেন শিং-এর সামনে এসে দাঁড়ায়, মুখের গভীর রেখাগুলো উদ্বেগের চিহ্ন বয়ে নিয়ে এসেছে।
“মিস্টার চেন শিং, ফিওনার কোনো খোঁজ পেয়েছেন?” তার কণ্ঠস্বরের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ স্পষ্ট।
চেন শিং নিঃশব্দে মাথা নিচু করে থাকা কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে ইশারা করে। ওয়াং লি সামনে এগিয়ে যায়, স্ক্রিনের গাঢ় অক্ষরে ভাসমান সেই বার্তাটির দিকে চোখ পড়তেই তার ভেতরটা শীতল হয়ে যায়। আতঙ্কের শীতল হাওয়া মেরুদণ্ড বেয়ে নেমে আসে।

“তারমানে, ওই ড্রাগনটা ফিওনাকে নিয়ে গেছে?” ওয়াং লির কণ্ঠে অবিশ্বাস্য।
চেন শিং-এর চোখে ক্রোধের আগুন জ্বলে ওঠে, তবে তার কণ্ঠে থেমে আসা অসহায়তা ফুটে ওঠে। ” মিস্টার ওয়াং লি, এখন আমরা কী করবো? কোথায় খুঁজবো তাকে?”
ওয়াং লি হঠাৎ মনোযোগ দিয়ে বার্তাটির প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করে। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একটুখানি ভেসে থাকা ইমেল ঠিকানাটি ধরা পড়ে। “এক মিনিট, দেখো তো, এই ইমেল ঠিকানাটি রেখেছে।”
“এটা যোগাযোগের মাধ্যম হতে পারে,” ওয়াং লি বলে।
এক মুহূর্তও দেরি না করে চেন শিং সেই ইমেল ঠিকানাটি কপি করে দ্রুত মেসেজ টাইপ করতে শুরু করে। তার আঙুলগুলো দ্রুতগতিতে কী-বোর্ডের ওপর চলতে থাকে।

“জ্যাসপার! আমার ফিওনাকে কোথায় নিয়ে গেছো? ওকে ফেরত দাও। তোমার ভাইয়ের বন্দির সাথে ওর কোনো যোগসূত্র নেই। ও কিছুই জানে না। আমি তোমার কাছে অনুরোধ করছি, ওর কোনো ক্ষতি করোনা। দয়া করে, ওকে ছেড়ে দাও!”
বার্তা পাঠানোর পর চেন শিং এক মুহূর্তের জন্য নিঃশ্বাস নেয়। মনে হয়, তার সমস্ত আশা এখন ইমেলের উত্তরেই সীমাবদ্ধ।

জ্যাসপার অরিজিন শান্তভাবে তার কাঁচের রুমে শুয়ে, পাহাড়ের চূড়া থেকে নীচের অসীম নীলাভ শূন্যতা পর্যবেক্ষণ করছিলো। পৃথিবীর এত উঁচু থেকে পৃথিবীর সীমানা প্রায় অস্পষ্ট। তার শরীর এই অনন্ত মহাকাশের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার।
ঠিক এই মুহূর্তে, থারিনিয়াস ভেতরে প্রবেশের অনুমতির জন্য সংকেত পাঠায়। জ্যাসপারের ইঙ্গিতে স্লাইডিং দরজা মসৃণভাবে খুলে যায়। থারিনিয়াস তার প্রতিরূপ শুদ্ধ সম্মান নিয়ে প্রবেশ করে।
“প্রিন্স অরিজিন,” থারিনিয়াসের গভীর প্রভাশালী কণ্ঠস্বর কক্ষের নির্জনতা ভঙ্গ করে, “আপনাকে বিরক্ত করার জন্য সরি, কিন্তু আপনার জন্য জরুরি বার্তা এসেছে ল্যাব থেকে।”
জ্যাসপার ধীরে ধীরে উঠে বসে। তার চোখে তেমন কোনো ভাবান্তর নেই, তবে ঠোঁটের কোনায় এক অদ্ভুত উষ্ণতা দেখা যায়।

“বার্তা কে পাঠিয়েছে?” তার প্রশ্নে কোনো উত্তেজনা নেই, কেবল জিজ্ঞাসা।
“মনে হচ্ছে, মিস্টার চেন শিং,” থারিনিয়াস নিঃশব্দে উত্তর দেয়, তার কণ্ঠে কিঞ্চিৎ দ্বিধার ইঙ্গিত।
“তুমি যাও, আমি আসছি।”
থারিনিয়াস মাথা নত করে বেরিয়ে যায়, দরজাটি মৃদু স্বরে স্লাইড হয়ে বন্ধ হয়। সারা ঘরে আবারো একপ্রকার নির্জনতা নেমে আসে।
জ্যাসপার বিছানা থেকে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়।আলমারির কাছে গিয়ে একটা সাদা ফিনফিনে শার্ট গায়ে তোলে। এতক্ষণ সে উদোম গায়েই শুয়ে ছিলো, ঠান্ডা বাতাস তার শরীরকে প্রশান্ত করেছিলো।
রুম থেকে বের হয়ে করিডোর পার করার সময়,কয়েক মুহূর্ত থেমে ফিওনার কক্ষের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। সেই নজরে কোনো উষ্ণতা ছিল না, শুধু গভীরভাবে অনুধাবন করার ইচ্ছা, সে দূর থেকে কিছু পর্যবেক্ষণ করে কিছু আবিষ্কার করতে চাচ্ছে। কিন্তু ফিওনার কক্ষে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত নয়, সে নির্লিপ্তভাবে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায়।

লিভিং রুমে পৌঁছানো মাত্রই, আলবিরা থারোনিয়াস আর অন্যান্য ড্রাগন সদস্যরা সম্মানসূচক অভিবাদন জানায়। তারা সবাই দাঁড়িয়ে পড়ে প্রিন্সের আগমন উপলব্ধি করে। কোনো শব্দের আদানপ্রদান ছাড়াই, জ্যাসপার তাদের সকলের দিকে এক পলক দৃষ্টিপাত করে আর নিরবে তার গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হয়।
সে গোপন পথ ধরে তার ল্যাবের দিকে চলে যায়, যেখানে সে বার্তার রহস্য উন্মোচনের জন্য অপেক্ষা করছে।

পাহাড়ের গহীন ঝর্ণার কোল ঘেঁষে, এক প্রাচীন গুহার ভেতরে তার বিশাল বৈজ্ঞানিক ল্যাবরেটরি।
জ্যাসপার প্রবল উদাসীনতার সঙ্গে কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকালো। চেন শিং-এর বার্তাটি তার জন্য কোনো গুরুত্বই বহন করছে না, বরং তার মুখে এক তীব্র বিদ্রূপের ছায়া ফুটে উঠলো।
“আহ, মানব সাইন্টিস্টরা!” নিজের মনে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো জ্যাসপার, “তাদের কথাবার্তায় এতো আবেগ, এতো দুর্বলতা! এসব বোধ হয় সাধারণ মানুষদের থেকে কোনো অংশে ভিন্ন নয়। বিশেষত্ব? এরাই যদি ‘বিশেষ’ হয় তবে এই পৃথিবীর অধিকার কী করে দাবি করে?”
সে ধীরে ধীরে কম্পিউটারের কীবোর্ডের উপর আঙুল চালিয়ে বার্তা লিখতে শুরু করলো। তার প্রতিটি অক্ষরে দৃঢ়তা ফুটে ওঠে।

“মিস্টার চেন শিং,” টাইপ করলো সে, **”যদি আপনার প্রিয় নাতনিকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত পেতে চান, তবে আগে আমার ভাই এথিরিয়নকে সুস্থ আর নিরাপদে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। আপনি যদি মনে করেন আপনার বৈজ্ঞানিক দক্ষতা আমাকে প্রভাবিত করতে পারবে, তবে তা ভ্রান্ত। মনে রাখবেন, ফিওনা এলিসন আমার কাছেই বন্দি থাকবে,আর আমার শর্ত না মানলে সে সারাজীবন আমার অধীনেই থেকে যাবে। আমার ভাইয়ের যদি একটি তিল পরিমাণ ক্ষতিও হয়, তবে পৃথিবী যে আলোতে আজ ফিওনার জীবন আলোকিত, সেই আলো চিরতরে নিভে যাবে।
বার্তাটি পাঠিয়ে সে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ এক নিশ্চুপ অন্ধকারে নিমজ্জিত রইলো। সেই মুহূর্তে সমগ্র পৃথিবীই তার হাতে বন্দি, সময় আর বাস্তবতা তার অধীনেই কৃত্রিমভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

মিস্টার চেন শিং আর ওয়াং লি তৎক্ষণাৎ নড়েচড়ে বসলেন। কম্পিউটারের স্ক্রিনে ঝলসে ওঠা বার্তাটি তাদের হৃদপিণ্ডে তীব্র আঘাত হেনে গেল। মিস্টার চেন শিং-এর মুখে উদ্বেগের ছায়া ফুটে উঠলো, তিনি দ্রুত ওয়াং লির দিকে ফিরে বললেন:
“মিস্টার ওয়াং লি, আমার মনে হচ্ছে আমাদের এথিরিয়নকে মুক্তি দিতে হবে। তুমি এখনই সিক্রেট রুমের দরজা খোল। ফিওনার জীবন ঝুঁকির মধ্যে আছে।”

ওয়াং লি সেই প্রস্তাব শুনে হতভম্ব হয়ে উত্তর দিলো, “মিস্টার চেন শিং! আপনি কি সজ্ঞানে আছেন? এই ড্রাগনটাকে কতোদিন ধরে আমরা বন্দি করে রেখেছি, সেটা আপনি ভুলে গেছেন? এখন যদি তাকে মুক্তি দেই, ও আমাদের ছাড়বে না। আমাদের মে’রে ফেলবে, সেই ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। আর যদি একবার কারো কাছে প্রকাশ হয়ে যায় যে আমরা তাকে বন্দি করে রেখেছি, তাহলে আপনি আর আমি চিরতরে কারাগারে প’চে মর’বো।”
ওয়াং লি কণ্ঠে আরও দৃঢ়তা এনে বললো, “আর একটা কথা মনে রাখুন, আপনি কী গ্যারান্টি দিচ্ছেন যে ওই ড্রাগনটাকে মুক্তি দিলেই সে আমাদের ফিওনাকে ছেড়ে দিবে? সে হয়তো প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজছে। আর ও যদি আমাদের কোনো ক্ষতি করে, তবে? আমি বলছি, ড্রাগনের কোনো বিশ্বাস নেই।”
চেন শিং হতাশভাবে নি:শ্বাস ফেললেন। চোখের কোণে উদ্বেগ জমে উঠল। “তাহলে আপনি কি বলতে চান, আমি আমার নাতনিকে মর*তে দেবো? সেই ভয়ংকর ড্রাগনদের মাঝে ফিওনাকে ফেলে নিশ্চিন্তে থাকবো? আমি তো জানি না সে কোথায় আছে, কেমন আছে! যদি তার কোনো ক্ষতি হয়ে যায়?”

ওয়াং লি শান্ত স্বরে বলল, “মিস্টার চেন শিং, আপনি ঠাণ্ডা মাথায় ভাবুন। অন্য কোনো উপায় বের করতে হবে। এই ড্রাগন প্রিন্স আমাদের শুধুই ভয় দেখাচ্ছে। ভেনাসের ড্রাগনরা সহজে কাউকে আ*ঘাত করে না। আমি জানি ফিওনা নিরাপদে আছে। ওরা ফিওনাকে কোনো ক্ষ*তি করবে না কারণ সে নির্দো*ষ! কিন্তু আমাদের বিপদ হতে পারে। যদি বিষয়টা ফাঁস হয়ে যায়, ফিওনা-সহ আমরা সবাই বিপদে পড়বো। ফিওনা ওই ল্যাবে প্রবেশ করেছে, তারও শাস্তি হবে। আপনি চাইলে একবার ভেবে দেখুন।”
চেন শিং কপালের ঘাম মুছলেন। সবকিছু দুঃস্বপ্নের মতো লাগছিল, যে দুঃস্বপ্নের শেষ কোথায় তিনি বুঝতে পারছেন না। তিনি কিছুক্ষণ স্তব্ধ থেকে ওয়াং লির কথাগুলো ভাবলেন, কিন্তু তার চোখে জ্বলজ্বল করছে নাতনির জন্য এক প্রবল উদ্বেগের ছায়া।

জ্যাসপারের চোখের সামনে ভেসে উঠল মিস্টার ওয়াং লির পাঠানো রিপ্লাই বার্তা- বরফ-ঠান্ডা সতর্কবার্তা, যেখানে মিশে ছিল হুম’কির আগুন।
“আমি জানি, তোমাদের ড্রাগনরা বিনা কারণে মানুষকে ক্ষতি করে না, আর ফিওনা নির্দোষ। তবে তোমার ভাইকে আমরা ছেড়ে দেব না। আমাদের কাজ সম্পূর্ণ হবে, তারপর। হ্যাঁ, তোমার ভাই মর’বে না, তবে ড্রাগনের শ’ক্তি হারাবে। তুমি যদি চাও যে আমরা তাকে পুরোপুরি শেষ না করি, তবে ফিওনাকে ছেড়ে দাও।”
বার্তাটি পরার সাথে সাথেই জ্যাসপারের শিরায় শিরায় র**ক্ত ধা**ক্কা খেল। এক মুহূর্তের জন্যও নিজেকে সং**যত রাখতে পারল না। তার শরীর আগু**নের মতো জ্ব*লছিল, রা’গে আর প্রতি*শোধের ক্ষু’ধায়। তার সামনে থাকা কম্পিউটারটিকে একটানে তুলে আছা’ড় দিলো মেঝেতে। মুহূর্তের মধ্যে সেটি ভে’ঙে চুর’মার হয়ে গেল। তার ড্রাগনের চোখে বিদ্রো’হের আগুন জ্বলতে লাগল।

“তোমরা আমাকে এখনো চিনতে পারনি, মিস্টার চেন শিং” নিজের মনে ফুঁসে উঠল জ্যাসপার কন্ঠে প্রতিশোধের সুর। “তোমার নাতনীর এমন করুণ পরি’ণতি ঘটবে, যা তোমার অপরাধের মূ’ল্য বহন করবে। আমার ভাইকে আমি মুক্ত করব, তবে ফিওনাকে আর তুমি পাবে না। তোমার নাতনী এবার তার গ্ৰ্যান্ডফাদারের পাপে**র শা**স্তি পাবে।”
জ্যাসপার তার দান*বীয় ড্রাগন মনে জানত, যখন প্রিন্স অরিজিনের কথা অমান্য করে, তখন মৃ*ত্যু তার জন্য অপেক্ষা করে।

ফিওনার ক্ষুধার যন্ত্রণায় পেট মোচড়ে উঠছিল, সে গুটিসুটি মেরে বিছানায় শুয়ে ছিল। হঠাৎ করেই দরজার শব্দে চমকে উঠল। কক্ষে প্রবেশ করলো জ্যাসপার, দ্রুত পদক্ষেপে এগিয়ে এলো, তার মুখে গম্ভীর আর কঠোর অভিব্যক্তি। ফিওনা কোনোরকমে উঠে বসল, চোখে উদ্বেগ আর হতাশার ছাপ।
জ্যাসপার বিছানার সামনে দাঁড়িয়ে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, “ভেবেছিলাম আমি একমাত্র হ্নদয়*হীন… কিন্তু তোমার গ্ৰান্ডফাদার তো তার চেয়েও বড় নি**ষ্ঠুর। ভাবতাম মানুষের মধ্যে আবেগ থাকে, কিন্তু তোমার নানা খুবই বিচক্ষ*ণ।”

ফিওনার ভ্রু কুঁচকে উঠল, সে কিছুই বুঝতে পারল না। “তুমি কী বলছো?” তার কণ্ঠে অস্পষ্ট উদ্বেগ।
জ্যাসপার এক গভীর শ্বাস নিলো, চোখে তীব্রতা ফুটে উঠল। “তোমার নানাকে বার্তা পাঠিয়েছিলাম। তোমার মুক্তির বিনিময়ে আমি শর্ত দিয়েছিলাম। কিন্তু তোমার জীবনের চেয়ে তার কাছে অন্য কিছু বেশি মূল্যবান।”
ফিওনা ফিসফিস করে বলল, “কখনোই না! আমার গ্ৰান্ডপা কখনোই এ কথা বলতে পারে না! মিথ্যা বলছো! আর তুমি কী শর্ত দিয়েছো?”
জ্যাসপার একটু ঝুঁকে ফিওনার চোখের গভীরতায় তাকালো। “তুমি কি সত্যিই জানো না, ফিওনা? তোমার নানার সিক্রেট রুমে কী আছে?”
ফিওনার হৃদয় দ্রুত বেগে ধুকপুক করতে লাগল, মাথা ঝিমঝিম করতে শুরু করল। “না… আমি জানি না…” তার কণ্ঠস্বর কাঁপছিল, চোখের কোণে জল জমে উঠছিল।

জ্যাসপার মুহূর্তেই ফিওনার গ*লা চে’পে শুন্যে তুলে ধরল। তার শক্তপোক্ত পুরুষালী হাতের শক্তি এতো ছিল যে, ফিওনা নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না। সে হতাশার সঙ্গে হাত দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল আর পা ছটফট করতে লাগলো, কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছিল না। জ্যাসপারের চোখে ক্ষো*ভ আর প্রতি*শোধের অ*গ্নি জ্বলছিল।
“শুনে রাখো,” জ্যাসপার গম্ভীর কণ্ঠে বললো, “তোমার প্রিয় নানা আমার ড্রাগন ভাই এথিরিয়নকে বন্দি করে রেখেছে সেই সিক্রেট রুমে। তাকে শারীরিকভাবে যন্ত্র*ণা দিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এবার তার ভুলের শা*স্তি তুমি পাবে, ফিওনা”।

ফিওনার চোখে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল।” আমাকে ছাড়ো!” তার কণ্ঠস্বর অস্পষ্ট হয়ে গেল, কিন্তু জ্যাসপার কঠোর।
“তোমাকে আমি এমন হাল করবো,” জ্যাসপার বললো তার ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠলো, “যে তুমি নিজেই মর’তে ভি*ক্ষা চাইবে। কিন্তু সেই করুনাও আমি করবো না তোমার প্রতি।”
ফিওনার বুকের ভেতর ভয়াবহ শিহরণ বয়ে গেল। তার চোখের কোণে জল জমে উঠলো, আর সে মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগল—প্রার্থনা তার নানার কাছে, প্রার্থনা সৃষ্টিকর্তার কাছে। কিন্তু জ্যাসপারের চোখের কঠিনতা আর প্রতিশোধের অঙ্গীকারের দিকে তাকিয়ে তার মনে হচ্ছিল, সব আশা মুহূর্তেই চুরমার হয়ে গেছে।

জ্যাসপার অবশেষে ফিওনার গলা ছেড়ে দিল। ফিওনা ধব করে ফ্লোরে পড়ে গেলো। আর জ্যাসপার দ্রুত পেছনে সরে গিয়ে দরজার দিকে অগ্রসর হল। ফিওনা একেবারের জন্য অচেতন হয়ে পড়ে, তার শরীর মাটির সাথে মিশে গেছে। মুহূর্তের জন্য অনুভূতি ছিল শূন্য,আর তার মাথা ঘুরছিল। তারপর যখন জ্ঞান ফিরে এল, যখন সে তার মাথায় হাত বুলিয়ে আঘাতের তীব্রতা উপলব্ধি করল।
সে ব্যথার তীব্রতায় চিৎকার করতে চাইল, কিন্তু কণ্ঠনালী দিয়ে শব্দ বের হলো না। পায়ের নিচে মাটির ঠাণ্ডা স্পর্শ তাকে স্মরণ করিয়ে দিল সে একা। শত চেষ্টার পরেও সে উঠে বসতে পারল না। তার পা দুটো কিছুক্ষণের জন্য অসাড় হয়ে গেল।

আযদাহা পর্ব ১১

জ্যাসপার একবারও পেছন ফিরে না তাকিয়ে, ভারি পদক্ষেপে বেরিয়ে গেল। ফিওনা তখনো মাটিতে পড়ে, নিজের শরীরের প্রতিটা আঘাতের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, আর মনের গহনে শুধুমাত্র একটি চিন্তা—কিভাবে সে এই অন্ধকার আর ভয়ঙ্কর জগত থেকে মুক্তি পাবে‌।

আযদাহা পর্ব ১৩