আযদাহা পর্ব ২৬

আযদাহা পর্ব ২৬
সাবিলা সাবি

রাতের আকাশটা আগুনে জ্বলা নক্ষত্রের অরণ্য।মাউন্টেন গ্লাস হাউজের পাহাড়ের চূড়া থেকে নিচে তাকালে শুধুই অন্ধকার আর সাগরের তরঙ্গের একটানা গর্জন শোনা যায়। এই পাহাড়ের পাথুরে ঘর পেরিয়ে আজ তিনজন এক বড় অভিযানে বের হবে। জ্যাসপার, থারিনিয়াস, আর আলবিরা।।

পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে জ্যাসপার, থারিনিয়াস, আর আলবিরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে সংকেতের অপেক্ষায়। মাউন্টেন গ্লাস হাউজের আলো দূর থেকে ক্ষীণতায় হারিয়ে যাচ্ছে।আজকের গন্তব্য বেইজিং, চীনের মিস্টার চেন শিং এর ল্যাব, যেখানে ওয়াং লি আর ডঃ আর্থার তাদের অপেক্ষায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

জ্যাসপার প্রথমে গভীর নিশ্বাস নিয়ে বলল,
“সবাই প্রস্তুত তো, সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে করতে হবে।”

থারিনিয়াস ছোট হাসি দিয়ে জবাব দিল,
“আমরা প্রস্তুত প্রিন্স অরিজিন।”

আলবিরা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, “তাহলে চল, আজকের রাতটাই হবে আমাদের জন্য পৃথিবীতে সেরা রাত।”

তিনজনের চোখ এক মুহূর্তের জন্য আকাশের দিকে উঠল। তারপরই একসঙ্গে তাদের দেহ ভিন্ন আকার নিতে শুরু করল। জ্যাসপারের চেহারা বদলে গেল বিশাল, শক্তিশালী সবুজ ড্রাগনের রূপে, থারিনিয়াসের গাঢ় ধুসর রঙের ড্রাগন রূপে বিশাল ডানা মেলে, আর আলবিরার রুপালি ড্রাগন শরীরে এক সৌন্দর্যের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠল।

তারা তিনজন আকাশে উড়ে উঠল। বিশাল ডানা বাতাস কেটে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। সাগরের ওপরে দিয়ে উড়তে উড়তে তাদের প্রতিটি ডানা ঝাপটায় পানি ছিটকে পড়ছে নিচে।ৎতারা শব্দের চেয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে।

বেইজিং-এর প্রান্তে পৌঁছাতে খুব বেশি সময় লাগল না। দূর থেকে শহরের আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছে।ৎজ্যাসপার গর্জন দিয়ে তাদের সংকেত দিল। “নামার সময় হয়েছে। সবাই সাবধান।”

তারা তিনজন মাটির কাছাকাছি এসে নিজেদের ড্রাগন রূপ থেকে আবার মানব রূপ ধারণ করল।তারা দ্রুত রাস্তার পাশে দাঁড়ানো ডঃ আর্থারের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। ডঃ আর্থার ইতিমধ্যেই প্রস্তুত, চোখে এক ধরনের রহস্যময় চাহনি।জ্যাসপার সংক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলল, “সব ঠিক আছে?”

ডঃ আর্থার হালকা হাসি দিয়ে জবাব দিল, “এখন পর্যন্ত সব পরিকল্পনামাফিক চলছে।”

তারা গাড়িতে উঠে বসে। বেইজিং-এর আলোয় ঢাকা শহর পেরিয়ে তাদের সামনে অপেক্ষা করছে এক নতুন অধ্যায়, এক রহস্যময় রাতের মিটিং।

গাড়িটি ধীরে ধীরে থামল ফিওনার বাড়ির সামনে।চারপাশের পরিবেশ ছিল স্তব্ধ, একদম নীরব। পুরো বাড়ি জনমানবহীন, এক অদ্ভুত শূন্যতায় ভরা।বাড়িটির সামনের বাগান, যা একসময় প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা ছিল,ৎআজ মৃ*তপ্রায় মনে হচ্ছে।

জ্যাসপার, থারিনিয়াস, আর আলবিরা একে একে গাড়ি থেকে নেমে এল। ডঃ আর্থার তাদের পিছু নিলেন। সামনের গেটে কয়েকজন সশস্ত্র গার্ড আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে তাদের স্ক্যান করল।প্রতিটি যন্ত্রের ঝিকমিক আলো তাদের গতিবিধি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করল। কেউ কোনো আপত্তি তুলল না।

জ্যাসপারের চোখ দ্রুত চারপাশ পর্যালোচনা করছিল। সে ফিসফিস করে বলল,

“সবকিছু ঠিকঠাক মনে হচ্ছে, তবে ভেতরে কী অপেক্ষা করছে, সেটা জানা নেই।”

ডঃআর্থার মৃদু মাথা ঝাঁকালেন, তার মুখে এক চিলতে চাপা উদ্বেগ।

“এখানে যা চলছে, তা কল্পনার বাইরে।”

তারা গার্ডদের অনুমতি নিয়ে বাগান পেরিয়ে বাড়ির পেছনের দিকে এগিয়ে গেল। ডঃ আর্থার একটি ছোট প্যানেলের দিকে এগিয়ে গেলেন।ৎসেখানে একটি পাসকোড ইনপুট করার পরপরই দরজাটি গম্ভীর এক শব্দে খুলে গেল।

দরজার ওপাশে ছিল একটি সংকীর্ণ সিঁড়ি, যা গভীরভাবে নিচের দিকে নেমে গেছে। সিঁড়ির প্রতিটি ধাপে তাদের পায়ের আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল,ৎপ্রতিটি শব্দ তাদের ধৈর্য পরীক্ষা করছে। নিচে নামতেই তাদের সামনে এক অত্যাধুনিক গবেষণাগার উন্মুক্ত হল। জ্যাসপার এর আগে যখন এই ল্যাবে এসেছিলো তখন গবেষণাগার ওপরেই ছিলো কিন্তু আজকে সিঁড়ির নিচে, এই সিক্রেট গবেষনাগার আজকেই উন্মুক্ত হলো।

গ্লাসে ঘেরা কক্ষের ভেতরে আলো ঝলমল করছে।মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত নানা ধরনের যন্ত্রপাতি সাজানো। সেখানে ওয়াং লি একটি ডেস্কে বসে গভীর মনোযোগে কাজ করছে। তার হাত দ্রুত চলছিল একটি স্ক্রিনে,মনে হলো সময়ের সাথেই প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

জ্যাসপারের চোখ সজাগ হয়ে উঠল। তার কণ্ঠ গভীর অটল। “ওয়াং লি কী পরিকল্পনা করছে, সেটা এখনই জানা দরকার।”

আলবিরা আস্তে করে বলল, “কিছু একটা ঠিক নেই, এই নীরবতার আড়ালে কিছু একটা তো পরিকল্পনা হচ্ছে প্রিন্স।”

ওয়াং লি তাদের উপস্থিতি অনুভব করলেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। তার প্রতিটি নড়াচড়া ছিল নিখুঁত আর কৌশলগত, মনে হলো তার চারপাশের জগৎ অদৃশ্য।

ডঃআর্থার আস্তে করে কানে ফিসফিস করে বললেন, “সাবধান,কোনো ভুল করা যাবে না।”

জ্যাসপার এগিয়ে গেল তার চোখে একধরনের শীতল দৃঢ়তা। এই মুহূর্তে ল্যাবের বাতাসে উত্তেজনা আর দ্বন্দ্বের ঝড় বইছে। এই গবেষণাগারে কি চলেছে,ৎতা আবিষ্কার করাই এখন তাদের একমাত্র লক্ষ্য।

ডঃআর্থারের সাথেই জ্যাসপারের আগেই সবকিছু পরিকল্পনা করা ছিলো। আর্থার তো জ্যাসপারের হিপটোনাইজের স্বীকার তাই জ্যাসপারের নির্দেশ অনুযায়ী সে কাজ করবে।

ডঃআর্থার দরজার পাশে দাঁড়িয়ে গভীর গলায় বললেন, “মিস্টার ওয়াং লি, আমরা এসে গেছি।”

ওয়াং লি মাথা তুলে তাদের দিকে তাকালেন। তার চোখে একধরনের আত্মবিশ্বাস আর ঠান্ডা প্রবলতা। মৃদু হাসি দিয়ে বললেন, ভেতরে আসুন।বসুন সবাই।”

তারা একে একে বসে পড়ল।ৎচারপাশের পরিবেশ ভারী আর অস্বস্তিকর ছিল, প্রতিটি শব্দও পরিকল্পনা করে উচ্চারিত হচ্ছে। ওয়াং লি নিজেও তাদের সামনে চেয়ারে বসলেন।

তিনি একটু সময় নিলেন, তারপর একটি গভীর দৃষ্টিতে জ্যাসপার আলবিরা,আর থারিনিয়াসের দিকে তাকালেন। মৃদু কণ্ঠে বললেন, “ওনারা তাহলে আপনার সেই পার্টনার?”

ডঃ আর্থার মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।
“হ্যাঁ, এরা “লিওন গ্ৰে” জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে তারপর থারিনিয়াসের দিকে ইশারা করে বললো “ড্যানিয়েল ব্লাক” আর আলবিরাকে পরিচয় করালো “সিরেনা হোয়াইট’ নামে।”

পরিচয়ের সময় তিনজনকেই অন্য নামে পরিচিত করল, তাদের আসল পরিচয় গোপন থাকলো।ওয়াং লি তাতে বিন্দুমাত্র অবাক হলেন না। তার মুখে সেই একই নিয়ন্ত্রিত অভিব্যক্তি।

কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর ওয়াং লি সোজাসাপ্টা গলায় বললেন, “আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই। কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। কারণ আপনারা জানেন, ওই ড্রাগনটার ভাই এখনো পৃথিবীতে আছে। ও যতদিন আছে,ততদিন ঝুঁকি কমছে না।”

তার ঠোঁটের কোণে একধরনের কৌশলী হালকা হাসি ফুটে উঠল। “তাই আজ রাতেই এথিরিয়নের সমস্ত শক্তি সঞ্চয় করার কাজ শেষ করতে হবে।আমি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই করে রেখেছি।আমাদের আর দেরি করা যাবে না।”

জ্যাসপারের ঠোঁটের কোণে সামান্য টান পড়ল। তার চোখে এক ঝলক রহস্যময় দৃঢ়তা ফুটে উঠল।ভেতরে ভেতরে তার মন অস্থির হয়ে উঠলেও,ৎবাইরে থেকে সে ছিল স্থির। তার দৃষ্টিতে চ্যালেঞ্জের আভাস ফুটে উঠল।

এর মাঝে এক অবর্ণনীয় নীরবতা ঘিরে ফেলেছিল।হঠাৎ, জ্যাসপারের কণ্ঠ শোনা গেল, তীক্ষ্ণ জিজ্ঞাসু,
“মিসটার চেন শিং কোথায়?”

ওয়াং লি চোখের কোণে এক ঝলক চিন্তা ভাসিয়ে, ঠাণ্ডা স্বরে জবাব দিলেন, “সে চেয়েছিল ড্রাগনটাকে মুক্ত করতে, তার নাতনীকে ফিরিয়ে আনতে। তার এই উদ্দেশ্য আমার জন্য বিপজ্জনক ছিলো। তাই তাকে আটকে রাখা হয়েছে।”

ওয়াং লির কথা এক মুহূর্তে বাতাসে ভেসে উঠল,আর পুরো ঘরটি যেন ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিল, এক অদৃশ্য উত্তেজনার সাথে। জ্যাসপারের চোখে কোনো অনুভূতি ছিল না শুধু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, যেটি প্রত্যেকটি শব্দ গভীরভাবে শোষণ করছিল।

থারিনিয়াস নিচু স্বরে আলবিরার দিকে ফিসফিস করে বলল,”সবকিছু ঠিকঠাক মনে হচ্ছে, কিন্তু এতটা নির্বিঘ্ন কেন? কোনো ফাঁদ আছে কি না দেখতে হবে।”

আলবিরা গম্ভীর মুখে মাথা নাড়ল। রাতের আবরণে তাদের লক্ষ্য যতই স্পষ্ট হয়ে উঠছে, ততই উত্তেজনার ঘনঘটা ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে।

জ্যাসপার পকেটের ভেতর আঙুল চালিয়ে অনুভব করল তার আনা ডিভাইসটি। “সায়নেট্রিক্স হ্যাক-মডিউল”—ভেনাসের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির গর্ব। ছোট্ট, হেক্সাগোনাল আকৃতির এই ধাতব চিপটি দেখতে খুবই সাধারণ, কিন্তু এর ক্ষমতা ছিল অপ্রতিরোধ্য। ধাতব পৃষ্ঠে ভেনাসীয় প্রাচীন চিহ্ন খোদাই করা, যার মাঝখানে একটি নীলচে আলো ক্ষীণভাবে জ্বলছিল। ল্যাবের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝে বসে থাকা এই ডিভাইস ছিল জ্যাসপারের একমাত্র ভরসা।

জ্যাসপার ডিভাইসটি পকেটের ভেতর আড়াল করে রাখল। “সায়নেট্রিক্স হ্যাক-মডিউল এক্টিভ করার জন্য এটিই সঠিক সময় নয়।পরিকল্পনামাফিক এগোতে হবে। ওয়াং লি কিছু আঁচ করতে না পারে, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।তার ঠোঁটে হালকা হাসি খেলে গেল। এখন তাকে অপেক্ষা করতে হবে সঠিক মুহূর্তের জন্য।

ওয়াং লি ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছে এথিরিয়নকে সামনে আনার জন্য। ল্যাবের ভেতর ভারী যন্ত্রপাতির আওয়াজ ধীরে ধীরে জোরালো হয়ে উঠল। কাচের দেয়ালের ওপারে দেখা গেল একটি বড় কাচের ধাতব বাক্স ধীরে ধীরে ওপর থেকে নেমে আসছে। ভেতরে এথিরিয়নের অর্ধচেতনা অবস্থায় শুয়ে থাকা মানব দেহ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

জ্যাসপারের চোখ এথিরিয়নের দিকে নিবদ্ধ হলো। এথিরিয়নের গা নীল রং ধারন করেছে তবে হালকা আঁশগুলো নিস্তেজ হয়ে গেছে, তার ভেতরের শক্তি শুকিয়ে গেছে। পাশে থারিনিয়াস আর আলবিরা নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইল, তাদের ভঙ্গিমায় সতর্কতা।ওরা জানত, যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে।

ওয়াং লি গর্বিত ভঙ্গিতে বলল, “এথিরিয়নের শক্তি সম্পূর্ণরূপে সঞ্চয় করার জন্য সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন। আজকের রাতেই আমরা এক নতুন যুগের সূচনা করব।”

জ্যাসপার ঠাণ্ডা চোখে ওয়াং লির দিকে তাকাল।চেয়ারের পেছনে হেলান দিয়ে মৃদু হেসে বলল,

“নিশ্চিতভাবেই আজকের রাতটি ঐতিহাসিক হবে।তবে আগে আমাদের কাজটা নিখুঁতভাবে করতে হবে,তাই না?”

ওয়াং লি তার কথায় একমত জানিয়ে সায় দিল।তার পুরো মনোযোগ এখন এথিরিয়নের দিকে। এই ফাঁকে জ্যাসপার তার পকেটের ভেতর ডিভাইসটি এক্টিভ করল। ছোট্ট নীল আলো এক মুহূর্তের জন্য জ্বলে উঠল আর তৎক্ষণাৎ নিভে গেল। ডিভাইসটি এখন পুরো ল্যাবের সিস্টেমে নিঃশব্দে প্রবেশ করছে, কোনো অ্যালার্ম না বাজিয়ে।

জ্যাসপার জানে, ডিভাইসটি ধীরে ধীরে পুরো নেটওয়ার্ক হ্যাক করে ফেলবে। তবে আপাতত তাকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। তার লক্ষ্য এথিরিয়নকে মুক্ত করা, আর সেই সুযোগটি তৈরি হবে ঠিক তখনই, যখন ওয়াং লি তার নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকবে।

ল্যাবের ভেতর নিস্তব্ধতা নেমে আসে।য়এক মুহূর্তের জন্য চারপাশের সবকিছু স্থির হয়ে গেল।জ্যাসপারের পকেটের ডিভাইসটি তার কম্পন শুরু করেছিল ঠিক যেনো নিজেকে প্রস্তুত। মুহূর্তেই ডিভাইসটি সক্রিয় হয়ে পুরো ল্যাবের সিস্টেমে প্রবেশ করল।

কাঁচের বাক্সের ভিতরে রাখা এথিরিয়নের ওপরের সুরক্ষামূলক রাসায়নিক আবরণ ধীরে ধীরে তার কার্যকারিতা হারাতে শুরু করল। গ্লাসের নীল রেখাগুলো দ্রুত নিস্তেজ হয়ে গেল। এর সাথে সাথেই পুরো ল্যাবের আলো এক ঝলক জ্বলে উঠে নিভে যায়। হঠাৎ করেই সবকিছু অন্ধকার।

ওয়াং লি হতবাক হয়ে গেলেন। “এটা কী হচ্ছে? সিস্টেম তো নিখুঁত ছিল!” তিনি আতঙ্কে চিৎকার করলেন, তাঁর গার্ডদের দিকে তাকিয়ে।

জ্যাসপার তার সুযোগ কাজে লাগাল। অন্ধকারে তার চোখগুলো সবুজ আভা ছড়াল, যা তাকে শিকারীর মতো পথ দেখাল। সে এক নিঃশব্দ লাফ দিয়ে ওয়াং লির সামনে উপস্থিত হলো।

“এবার তোমার পালা,” জ্যাসপার গর্জে উঠল, তার ড্রাগনের শক্তি পুরোপুরি উন্মুক্ত করে। থারিনিয়াস আর আলবিরা নিজেদের অবস্থান নিয়ে দ্রুত গার্ডদের সামাল দিতে শুরু করল।

ওয়াং লি পালানোর চেষ্টা করল। ওয়াং লি পালানোর জন্য পা বাড়াতেই জ্যাসপার ড্রাগনের অসাধারণ গতি দিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ায়। “তোমার আর পালানোর উপায় নেই,” গম্ভীর কণ্ঠে বলল সে।

জ্যাসপার এক হাতে মেঝেতে পড়ে থাকা একটি ভাঙা ধাতব টুকরো তুলে নিল। সেটি ছিল ল্যাবের একটি ভেঙে যাওয়া সরঞ্জামের অংশ।

সে শক্তভাবে ওয়াং লির হাত ধরে পেছনের দিকে মোচড় দিল, ওয়াং লি যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠল।

“থারিনিয়াস, একটু সাহায্য লাগবে,” জ্যাসপার নির্দেশ দিল।

থারিনিয়াস দ্রুত এগিয়ে এসে ল্যাবের একটি ধাতব তার এনে দিল। এটি ছিল বৈদ্যুতিক তারের একটি মজবুত অংশ, যা জ্যাসপার দ্রুততার সাথে ওয়াং লির কব্জি জুড়ে শক্ত করে পেঁচিয়ে বাঁধল।

ওয়াং লি ফোঁস করে বলল,”তোমরা কিছুই করতে পারবে না। আমি পুরো ল্যাবের নিয়ন্ত্রণে ছিলাম, আর এখন সব ধ্বংস হয়ে যাবে।”

জ্যাসপার ঠাণ্ডা হাসল। “তোমার পরিকল্পনা ধ্বংস হয়েছে,ওয়াং লি। এখন দেখো কীভাবে আমরা তোমার তৈরি দুঃস্বপ্ন থেকে এথিরিয়নকে মুক্ত করি।”

এরপর জ্যাসপার নিশ্চিত করল, বাঁধন এমনভাবে শক্ত করা হয়েছে যে ওয়াং লি এক ইঞ্চিও নড়তে পারবে না।

এদিকে, সিস্টেম ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এথিরিয়নের বন্দি গ্লাস বাক্স পুরোপুরি ফেটে গেল।এথিরিয়নের দেহ নিস্তেজ থেকে ধীরে ধীরে নড়াচড়া শুরু করল। তার চোখ খুলে গেল, সেই মুহূর্তে জ্যাসপার বুঝতে পারল, যুদ্ধ শুরু হয়েছে।

জ্যাসপার এক মুহূর্তের জন্যও দেরি না করে দ্রুত আর দৃঢ়ভাবে নির্দেশ দিল “এখনই ল্যাব থেকে বের হতে আমাদের!” তাঁর কণ্ঠে কোনো আবেগ ছিল না, একেবারে নিঃশব্দ অথচ শক্তিশালী। তাঁর চোখের পলকও ফেলল না, মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে নিয়েছে।

ড.আর্থার, থারিনিয়াস, আলবিরা সবাই তৎক্ষণাৎ তার নির্দেশ অনুসরণ করল, দ্রুততার সাথে ল্যাব থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলো। এই সময় কিছুই আর বদলাবে না, সমস্ত কিছুর শেষের দিকে পৌঁছানো হয়ে গেছে।

এথিরিয়নের দুর্বল নিস্তেজ মানব দেহ, থারিনিয়াস তার কাঁধে তুলে ধরে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে ল্যাবের প্রতিটি কোণ থেকে। জ্যাসপার ছিল সেই একমাত্র,যার নজর সর্বত্র ছিল। তার দৃঢ় মনোভাব আর শারীরিক শক্তি একত্রে কাজ করছে, সে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়।

কিন্তু, একদিকে, ওয়াং লি, যিনি এই মুহূর্তে চিৎকার করছে,তার হাহাকার কোনও সীমানা মানে না। “আমাকে বাঁচাও!আমি…আমাকে ফেলে যেওনা প্লীজ!” ওয়াং লির গলা কাঁপছে, চোখে দুঃখ আর রাগ।

কিন্তু জ্যাসপারের দৃষ্টি তার দিকে একটুও তাকানোও ভুলে গিয়েছিল। তার চোখে কোনো দয়া বা করুণা ছিল না। তার ভেতরে ছিল এক ধরনের গ্ল্যাডিয়েটরীয় মনোভাব, যে জানে—শত্রুদের জন্য কোনো জায়গা নেই।

“ড্রাগন প্রিন্স জ্যাসপার অরিজিন কাউকে মাফ করেনা,” এক কঠোর স্বরে বলে উঠে জ্যাসপার।তার কথায় শেষ সিদ্ধান্ত ছিল—অনেকটা পাথরের মতো যে কোনো কিছুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিল। সে আর সময় নষ্ট করতে চাইছিল না। দুনিয়ার সব শত্রু আর দুশমনকেই এক অবিশ্বাস্য দ্রুততায় নির্মূল করতে চেয়েছিল।

জ্যাসপার আর তার দল ল্যাবের প্রাচীরের দিকে এগোচ্ছিল, চূড়ান্ত বিপদের মুহূর্তে, যখন একের পর এক দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। সময় আর খালি ছিল না, শুধুমাত্র এক অবিচল সিদ্ধান্তকে বাস্তবে পরিণত করার মুহূর্ত ছিল।

আলবিরা থারিনিয়াসের হাত ধরে দ্রুত চলছিল,তার চোখে এক ধরনের চিন্তা ছিল, কিন্তু এখন কোনো কিছু ভাবার সময় ছিল না। অবশেষে তারা ল্যাব থেকে বেরিয়ে এলো রাস্তায়।

এদিকে, ল্যাবের ভেতর থেকে একটা তীব্র বিস্ফোরণের মতো শব্দ এলো। পুরো স্থলটি কেঁপে উঠল। জ্যাসপার জানত, তার পরিকল্পনা অনুযায়ী এখনই প্রতিটি অংশ পুড়ে যাবে—সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে, আর যতটুকু প্রয়োজনীয় ছিল,
তাও বিলীন হয়ে যাবে। যেভাবে ধ্বংস হবে ল্যাব, সেভাবে প্রমাণগুলোও মুছে যাবে। আর সে জানত, এতে একাধিক সমস্যাও সৃষ্টি হবে, তবে যেহেতু এর ফলাফল জানানো সম্ভব নয়, তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া তাকে বাধ্য করেছিল।

ওয়াং লি এখনও চিৎকার করে যাচ্ছে, তাঁর যন্ত্রণা, তাঁর অক্ষমতা, সব কিছু ভেঙে পড়ছে। কিন্তু জ্যাসপার,থারিনিয়াস আলভিরা ডঃ আর্থার তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য নির্বিঘ্নে চলে যাচ্ছিল।তাদের পিছু নিয়ে আর কেউ নেই,শুধু নিঃশব্দ ধ্বংসের পেছনের কাহিনিই রয়ে গিয়েছিল।

এথিরিয়নের অচেতন দেহ গাড়ির ওপর রাখা হল, তার শ্বাস-প্রশ্বাস কঠিনভাবে চলছিল, শরীরের এক কোণে দুর্বলতা স্পষ্ট। জ্যাসপার, আলবিরা,থারিনিয়াস, আর ড.আর্থার সবাই আশপাশে দাঁড়িয়ে, একে অপরকে দেখে দ্রুত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করছিল। ততক্ষণে ল্যাবের ধ্বংসাবশেষে যে ঝুঁকি ছিল, তাও স্পষ্ট হয়ে গেছে।

ড.আর্থার, তার সব চিন্তা একত্রিত করে, গুরুতর স্বরে বলল, “ওর যে অবস্থা, ওর শক্তি নিস্তেজ হয়ে গেছে। ওকে রক্ষা করতে হলে, ওর ভেতরে ড্রাগন শক্তি স্থাপন করতে হবে।”

তারা সবাই চুপ, কিছুক্ষণ সময় নিল। জ্যাসপার মনের মধ্যে দ্রুত চিন্তা করতে থাকে—এই মুহূর্তে, যেভাবে সবকিছু বিপর্যস্ত তেমন পরিস্থিতিতে কি কিছু করা সম্ভব? ল্যাব, যার ভিতর থাকা সকল প্রয়োজনীয় উপকরণ পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেছে।যদি কিছু করতে হয়, তবে ভেনাসের ল্যাব ছাড়া আর কোথাও উপায় নেই।

থারিনিয়াস মাথা ঝাঁকালো, তার মুখে অবিশ্বাসের চিহ্ন, “কিন্তু ল্যাব তো আর নেই, আর যেভাবে সব কিছু ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানে যাওয়া অসম্ভব।”

ড.আর্থার তখনই শান্তভাবে বলল, “আমি জানি, ওকে আমাদের লন্ডনের ল্যাবে নিয়ে চলো।সেখানে উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে যা এথিরিয়নের শরীরে ড্রাগন শক্তি পুনঃস্থাপন করতে পারবে।”

জ্যাসপার অবিলম্বে তার সিদ্ধান্তে পৌঁছাল। তার চোখে তীক্ষ্ণ লক্ষ্য ছিল, তবে মনে কিছুটা দ্বিধা। “এটা অনেক সময়ের ব্যাপার। যদি আমরা এখনো রওনা দেই তাও পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যাবে।”

তখন, জ্যাসপার গভীরভাবে চিন্তা করে বলল, “আলবিরা, থারিনিয়াস,আমাদের হাতে এখন সময় কম। আমাদের এখন ড্রাগন রূপে লন্ডনে যেতে হবে।”

অবশেষে, যখন সময় ছিল একেবারে কাছাকাছি, জ্যাসপার,থারিনিয়াস, আর আলবিরা একসঙ্গে ড্রাগন রূপে পরিণত হলো। তাদের শক্তিশালী ড্রাগন দেহগুলি আকাশে বাজ পড়লো, পৃথিবী কাঁপিয়ে উঠল। জ্যাসপার তার বিশাল পিঠে এথিরিয়নের নিস্তেজ দেহটি নিল, আর থারিনিয়াস তার পিঠে ড.আর্থারকে সতর্কভাবে স্থান দিল।

“আমাদের দ্রুততার সাথে যেতে হবে,” জ্যাসপার বলল, তার তীক্ষ্ণ চোখে অদৃশ্য কোনো সংকেত ছিল। আকাশের বিশালতা তাদের নিচে কেমন অদৃশ্য হয়ে গেল। একে একে তারা খুব সতর্কতার সাথে আকাশে উড়তে শুরু করল, তাদের ড্রাগন দেহগুলি দ্রুত গতি নিয়ে ছুটে চলল।

তাদের গন্তব্য ছিল লন্ডন,আর সময় ছিল একেবারে কম।

শেষে, দীর্ঘ পথ পেরিয়ে, তারা ড.আর্থারের ল্যাবের সামনে পৌঁছাল। আকাশে অসীম গতি,পৃথিবীর সাথে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। যখন তারা আকাশ থেকে মাটিতে নেমে এল, তখন সব কিছু স্থির হয়ে গেল।

জ্যাসপার দ্রুত তার ড্রাগন রূপ থেকে মানব রূপে পরিণত হলো। সঙ্গী-সহ, তাদের রূপান্তরের মধ্যে এক মুহূর্তের জন্য আকাশে একটা অদ্ভুত নীরবতা বিরাজ করল। একে একে, থারিনিয়াস,আলবিরা, তাদের ড্রাগন রূপ থেকে মানব রূপে ফিরল।

“এখানে সবাই নিরাপদ,” ড.আর্থার বললেন, তাদের চারপাশে শান্তি ফিরিয়ে এনে। তার চোখে অসীম চিন্তা ছিল,কেননা তারা জানত, এই মুহূর্তের পরেও অনেক কিছু অপেক্ষা করছে। কিন্তু তবুও তারা এখন ল্যাবের সামনে,এই আশ্রয়ে পৌঁছাতে পেরেছিল,যেখানে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করবে রক্তের শক্তি ও জ্ঞানকে কাজে লাগানোর উপর।

ডঃ আর্থার সজাগ পদক্ষেপে বিশাল ল্যাবের দিকে এগিয়ে চলল, তার পদধ্বনিতে ল্যাবের নিরবতা ভঙ্গ হলো। একের পর এক স্বয়ংক্রিয় দরজা খুলে যায়, আর তাদের সামনে উন্মুক্ত হলো এক অবিশ্বাস্য প্রযুক্তির জগত। আধুনিক যন্ত্রপাতি, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার আর ন্যানো-মেশিনের সারি সব মিলিয়ে একটি অত্যাধুনিক গবেষণাগার, যেখানে ভবিষ্যতের চিকিৎসা ও শক্তির অগণিত গবেষণা চলমান।

এথিরিয়নের অবস্থা একেবারেই শোচনীয়। তার দেহ ছিল থমকে, শক্তি নিঃশেষিত, তার রক্ত স্রোতও অশক্ত হয়ে পড়েছে। সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত, তবে তার মধ্যে কিছু শক্তি এখনো লুকিয়ে ছিল। ডঃ আর্থার এক মুহূর্তের জন্য পেছনে ফিরে বললেন, “এথিরিয়নকে যদি বাঁচাতে হয়, তবে কোনো এক শক্তিশালী ড্রাগনের শক্তি তার মধ্যে প্রবাহিত করতে হবে। এটাই একমাত্র উপায়।”

জ্যাসপার তার অন্ধকার চোখে গভীর চিন্তায় মগ্ন হল। এথিরিয়নের জন্য একমাত্র উপায়, তার দেহে একটি শক্তিশালী ড্রাগনের শক্তির স্থানান্তর—তবে সেই শক্তি কোথা থেকে আসবে? তার মাথায় একটি দ্রুত চিন্তা আসলো, সে একাধিক বার চেষ্টা করেছে, কিন্তু তা কোনোভাবেই সহজভাবে সম্ভব নয়।

ডঃ আর্থারের চোখে এক ঝলক আশার আলো দেখা দিল। “আমার ল্যাবের উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে এটি করা সম্ভব। কিন্তু,এটা শুধুমাত্র সঠিক সময় ও শক্তি উপাদানের মাধ্যমে সম্ভব।”

জ্যাসপার কোনোমতে দাঁড়িয়ে তার শরীরের মধ্যে থেকে শক্তির তরঙ্গ অনুভব করতে শুরু করল। তার শরীরে অশান্তি চলছিল, কিন্তু সে জানত, এথিরিয়নকে বাঁচাতে এখন একমাত্র পথ এটাই। “আমি ট্রান্সফার করব,” জ্যাসপার গভীর কণ্ঠে বলল। “এথিরিয়নের মধ্যে আমার শক্তি প্রবাহিত করতে হবে।”

ডঃ আর্থার দ্রুত সরঞ্জাম আর ন্যানো-রোবটগুলি প্রস্তুত করার জন্য নির্দেশনা দিল। তিনি একটি শক্তিশালী “বায়ো-রিজেনারেশন চেম্বারের” দিকে নির্দেশ করলেন। এটি ছিল একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যা জীবন্ত কোষের গঠন পুনর্গঠন করতে পারে। চেম্বারের মধ্যে স্নাতক প্রযুক্তি আর শক্তিশালী সেলুলার মেশিন ছিল, যা অল্প সময়ের মধ্যে শক্তি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম।

জ্যাসপার ডঃ আর্থার‌ এথিরিয়নকে নিয়ে সেই চেম্বারে প্রবেশ করল। জ্যাসপার তার শরীরের শক্তি একত্রিত করতে শুরু করল। অদৃশ্য শক্তির তরঙ্গ বয়ে যাচ্ছিল তার শরীরের মধ্যে। এথিরিয়নের শরীরে প্রবাহিত হওয়ার জন্য শক্তির অণু-কণার প্রবাহ একত্রিত হচ্ছিল।এথিরিয়নের রক্তে প্রবাহিত শক্তি পেতে, একটি বিশেষ বায়ো-এনার্জি কন্ট্রোল সিস্টেম ব্যবহার করতে হবে।

এখন, যন্ত্রপাতিগুলি কাজ শুরু করল। একটি ক্রিস্টাল স্পিনার—যা শক্তির তরঙ্গ সঞ্চালন করবে—চেম্বারের মাঝখানে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ক্রিস্টালটির মধ্যে আলো পরিবর্তন হতে শুরু করল, যার ফলে শক্তির তরঙ্গ দ্রুত এথিরিয়নের রক্তে প্রবাহিত হতে শুরু করল। এথিরিয়নের কোষগুলি সংকুচিত হয়ে আবার প্রসারিত হতে লাগল, তার শরীরের মধ্যে শক্তির রূপান্তর শুরু হলো।

জ্যাসপার তার হাত বাড়িয়ে দিল, আর তার ড্রাগন শক্তি সরাসরি এথিরিয়নের ভেতরে প্রবাহিত হতে লাগল। এতে শক্তি তরঙ্গ একাধিক কোষের মধ্যে প্রবাহিত হতে শুরু করল আর তার শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকল। কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্যা ছিল—এথিরিয়নের শরীর যতই শক্তি গ্রহণ করুক, তার নিজস্ব শক্তির পরিমাণ এখনও অনেক কম ছিল।তাই সঠিক সমন্বয় প্রয়োজন ছিল।

ডঃ আর্থার একটি বিশেষ মেশিন ব্যবহার করলেন, যা এথিরিয়নের শরীরের প্রতিটি কোষের সাথে সঙ্গতি রেখে শক্তির ট্রান্সফার প্রক্রিয়া শুরু করল। মেশিনের ভিতর থেকে একটি আলোকিত তরঙ্গ এথিরিয়নের দেহের কোষগুলিতে প্রবাহিত হতে শুরু করল। তার রক্তে দ্রুত ন্যানো-রোবটগুলির প্রবাহ বৃদ্ধি পেল, যা শক্তির সঙ্গে তার শরীরের বিকিরণ আর পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করল।

এই প্রক্রিয়া চলাকালীন ,ড্রাগনের শক্তি ক্রিস্টালগুলি কনট্রোল করছিল শক্তির সঞ্চালন।একে একে, তারা শক্তির সম্পূর্ণ ধারায় প্রবাহিত হয়ে এথিরিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো পুনরুজ্জীবিত করতে শুরু করল। কয়েক মিনিটের মধ্যে এথিরিয়নের শরীরের মধ্যে শক্তির শক্তিশালী চাঞ্চল্য সৃষ্টি হতে লাগল।

জ্যাসপার ধীরে ধীরে মনোযোগীভাবে শক্তি সঞ্চালন করছিল, তার হাত দিয়ে শক্তির তরঙ্গ প্রবাহিত হচ্ছিল, আর এথিরিয়ন গভীর নিঃশ্বাস নিল। তার শরীরে শক্তির অনুভূতি ফিরে আসছিল, তার রক্ত আরও উত্তেজিত হচ্ছিল আর তার স্নায়ুতন্ত্র আবার সচল হচ্ছিল। এভাবে, জ্যাসপার শক্তির স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করল আর তাকে নতুন শক্তি দান করল।

এথিরিয়ন ধীরে ধীরে তার চোখ খুলল। প্রথমে তার চারপাশে সবকিছু ঝাপসা লাগছিল, তবে আস্তে আস্তে দৃশ্যগুলো পরিষ্কার হতে শুরু করল। তার শরীরে শক্তি ফিরে আসছিল, কিন্তু একেবারে প্রাকৃতিকভাবে নয়—একটি অন্য শক্তির ধারায়। সে অনুভব করল, কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু তার শরীরে এখনো অস্থিরতা বিদ্যমান।

ডঃ আর্থার, যিনি এথিরিয়নের দিকে নিবদ্ধ ছিলেন, স্নিগ্ধ কণ্ঠে বললেন, “তুমি এখন ভালো আছো, কিন্তু তোমার শরীর এখনো একেবারে সুস্থ হয়নি। তোমাকে আরও কিছুদিন ড্রাগন রূপে ফিরে যেতে বিরত থাকতে হবে, অন্যথায় তোমার শক্তি আবার নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে।”

এথিরিয়ন মাথা নাড়ল। সে বুঝতে পারছিল, যদিও তার শক্তি ফিরে এসেছে, তবুও পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো সময় লাগবে। তার শরীরের প্রতিটি কোষে নতুন শক্তি প্রবাহিত হচ্ছিল, কিন্তু তা স্থায়ী করতে তাকে কিছু সময় দিতে হবে।

এদিকে, জ্যাসপার তার শক্তির অতিরিক্ত প্রবাহের প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। তার শরীর ক্রমাগত দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল। সে জানতো যে এথিরিয়নের শরীরে শক্তি স্থানান্তর করা সহজ নয়, আর নিজেকে অনেক বেশি ক্ষতি করে ফেলেছে ,তার গা হালকা ছিল,তবে মাথায় অদ্ভুত ঝাপসা অনুভূতি হচ্ছিল, চারপাশটা ঘোরে ঘোরে চলে যাচ্ছে। শরীরে প্রচণ্ড তাপ অনুভব হচ্ছিল, তার নিজের শক্তি নিজেকেই ধ্বংস করে ফেলছে।

আযদাহা পর্ব ২৫

“এটা ঠিক নয়,” জ্যাসপার নিজেকে বলতে থাকল,“আমি ঠিক আছি। কিন্তু…” সে শব্দে শেষ করতে পারলো না। তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ একে একে কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছিল।

আযদাহা পর্ব ২৬ (২)